যত হালফ্যাশনের পোশাকই বাজারে আসুক না কেন, ঈদের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া পোশাক এখনও পাঞ্জাবিই। ঈদের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে ঈদ কেনাকাটায় পাঞ্জাবির বেচাকেনা চলছে জমজমাট।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পুরুষ ক্রেতারা প্রয়োজন অনুযায়ী যে ধরনের পোশাকই কিনুক না কেন, একক পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবির বিক্রিই সর্বাধিক। দিনের বেচাকেনা শুরুর পর মাঝরাত পর্যন্ত পাঞ্জাবির ক্রেতার ভিড় লেগে থাকে।
বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, ঈদের বাজারে প্রায় পাঁচ কোটি পিস নতুন পাঞ্জাবির সরবরাহ দরকার। রাজধানীতে এই পোশাকটির সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছে পাঞ্জাবির কয়েকটি পাইকারি মার্কেট।
পাঞ্জাবির সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রাজধানীর সদরঘাটের শরিফ মার্কেট। রাজধানীর পাঞ্জাবির চাহিদার ৭০ শতাংশ এককভাবে সরবরাহ করেন এই মার্কেটের সাড়ে তিন শতাধিক বিক্রেতা। বাকি ২০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে গুলিস্তানের পীর ইয়েমেনি মার্কেট ও মালিবাগ এলাকার আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স।
বাকি ১০ শতাংশ সরবরাহ আসে বিচ্ছিন্নভাবে। এর মধ্যে আছে সায়েন্স ল্যাবরেটরিসংলগ্ন মিরপুর রোড ও এলিফ্যান্ট রোডের পাঞ্জাবির কিছু পাইকারি দোকান। এদের অনেকেরই নিজস্ব পোশাক কারখানা রয়েছে অথবা কোনো পোশাক কারখানার সঙ্গে তারা চুক্তিবদ্ধ।
এর বাইরে ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিও হচ্ছে কিছু পাঞ্জাবি।
যেভাবে ঈদের পাঞ্জাবি ছড়ায় সারা দেশে
পাইকারি বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা বছর এসব পাইকারের ব্যবসা চললেও তাদের মূল লক্ষ্য থাকে ঈদকেন্দ্রিক বাজার। এটা তাদের সারা বছরের ব্যবসার নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে। ঈদ সামনে রেখে তাদের সবার থাকে আগাম বিনিয়োগ প্রস্তুতি।
সদরঘাটের শরিফ মার্কেট, গুলিস্তানের পীর ইয়েমেনি মার্কেট ও মালিবাগের আয়েশা কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পাঞ্জাবির পাইকারি ব্যবসার তিনটি শ্রেণি আছে। এর মধ্যে ছোট পাইকাররা সাধারণত ৬০-৭০ লাখ টাকা, মাঝারি পাইকার দেড় থেকে আড়াই কোটি টাকা এবং বড় পাইকাররা ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঈদকেন্দ্রিক অতিরিক্ত পুঁজি খাটান।
এ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সূত্রমতে, এবার স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় রেখে শরিফ মার্কেটের সাড়ে তিন শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সাড়ে তিন কোটি পিস পাঞ্জাবি সরবরাহের লক্ষ্য রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা সেই লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।
ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি সম্পর্কে এলবি গার্মেন্টসের মালিক ও শরিফ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান জানান, রোজার এক মাস আগে থেকেই শরিফ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের থাকে বাড়তি প্রস্তুতি। ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য আবহাওয়ার তারতম্যের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হয়।
অভিজ্ঞ সব ডিজাইনারের মাধ্যমে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো পাঞ্জাবির নকশা করায়। কোন কাপড় এই সময়ে আরামদায়ক হবে, সেই কাপড়ের সঙ্গে কোন ডিজাইন, রং এবং কারুকাজ মানানসই হবে তারও থাকে পরিকল্পনা। একই সঙ্গে ক্রেতার বাড়তি চাহিদা সামলাতে দোকানগুলোতেও নিয়োগ দেয়া হয় বাড়তি কর্মচারী।
সব মিলিয়ে শবেবরাতের আগেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করে কারখানা পর্যায়ে উৎপাদন শুরু হয় এবং শোরুমে পণ্য আসতে শুরু করে।
অন্যদিকে সারা দেশ থেকে তাদের নিয়মিত ক্রেতারাও (খুচরা বিক্রেতা) আসতে থাকেন। সাধারণত ২০-২২ রোজার মধ্যেই শরিফ মার্কেটের পাইকারি পর্যায়ের বিক্রি শেষ হয়ে যায়।
শরিফ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা ও ‘পোলাইট পাঞ্জাবি’র কর্ণধার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের প্রডাক্ট যায়। এবার ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান ক্যাটস আই এবং আর্টিসট্রিতে গেছে আমাদের সরবরাহ করা পাঞ্জাবি।
‘শুধু আমরাই নই, শরিফ মার্কেট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত পাঞ্জাবি শোভা পাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মার্কেট থেকে শুরু করে বসুন্ধরা শপিংমল ও যমুনা ফিউচার পার্কের বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানের শোরুমেও। খুচরা বিক্রেতারা স্টক শেষ হওয়ামাত্র আবার আসছেন এবং বড় ধরনের লট নিয়ে যাচ্ছেন।’
গুলিস্তানের পীর ইয়েমেনি মার্কেটের পাইকারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ক্লাসিক পাঞ্জাবি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক মো. হাসান বলেন, ‘সারা দেশ থেকে আসা পাইকারি ক্রেতাদের পাশাপাশি সামর্থ্যবান ক্রেতারাও জাকাতের জন্য পাইকারি দামে এখানে পাঞ্জাবি কিনতে আসেন। তারাও বড় লটে পাঞ্জাবি কেনেন।’
পীর ইয়েমেনি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, এখানে পাঞ্জাবির দোকানের সংখ্যা ১০৪টি। সব দোকানই পাইকারি বিক্রেতা। আবার তারা খুচরাও বিক্রি করেন। এতে অন্য যেকোনো মার্কেটের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম দামে খুচরা ক্রেতারা তাদের বাজেট অনুযায়ী পছন্দের পাঞ্জাবিটি কিনতে পারেন।
কোথায় কেমন দাম
সাধারণত সারা দেশের খুচরা বিক্রেতারাই পাইকারি মার্কেটের ক্রেতা। স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে রাজধানীসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিক্রেতারা পাইকারি দামে পাঞ্জাবি কেনার জন্য আসেন এসব পাইকারি মার্কেটে।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, এবার পাইকারি মার্কেটে পাঞ্জাবির সর্বনিম্ন দাম ২৫০ টাকা। সর্বোচ্চ ১৩ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবিও পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ পাইকারি দামই ৪৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
পাইকাররা জানান, পাইকারি দরে ৪৫০ টাকায় যে পাঞ্জাবি তারা বিক্রি করছেন, সেটা রাজধানীর নিউ মার্কেটে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায় এবং যমুনা ফিউচার পার্ক-বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের বিভিন্ন শোরুমে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকার ওপরে।
বর্তমানে রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, ইস্টার্ন প্লাজা, নিউ মার্কেট, সায়েন্সল্যাব, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর, রাজধানী সুপার মার্কেটে মানভেদে দেড় হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকার পাঞ্জাবিই বেশি চলছে। তবে নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুমে কাপড়ের মানভেদে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবিও বিক্রি হচ্ছে।
পীর ইয়েমেনি মার্কেটের পাইকারি বিক্রেতা মো. আজাদুর রহমান জানান, ৩০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবি বেশি চলছে।
একই মার্কেটের আল হাবিব পাঞ্জাবি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. মৃণাল জানান, সর্বনিম্ন ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত খুচরা দামে তারা পাঞ্জাবি বিক্রি করছেন।
তরুণদের পছন্দ ফিটিং পাঞ্জাবি
এবার ঈদে বাজারে এসেছে তুলা, রেশম, লিনেন, সিল্ক বিভিন্ন রকম সুতার তৈরি পাঞ্জাবি। আছে সলিড সাদা রঙের পাঞ্জাবিও।
বাজারে আসা এসব পাঞ্জাবির নামও বাহারি। যেমন ডিজিটাল প্রিন্ট, বঙ্গবন্ধু ধুতি, কটন প্রিন্ট, সফট কটন, সুলতানের কটন, টিজি মটকা, শাহজাদা, অরবিন্দ, কারচুপি কাজ, মসুরি প্রিন্ট, পেঁয়াজ কটন, ইন্ডিয়ান অরেঞ্জ ক্রাশ, টিস্যু কাতান নেট, ইয়াগ রোলেক্স, কাশ্মীর সিল্ক, দুলহান, টু পিস, থ্রি পিস, ফোর পিস, বম্বে সিল্ক, অল বডি কারচুপির কাজ, কারচুপির নকশা, রাজশাহী সিল্ক এবং তসর।
এ ছাড়া লাল ও কালো রঙের কনট্রাস্ট সুতি, নেভি ব্লু অল ওভার স্ক্রিন, রেড স্ক্রিন প্রিন্টেড, ধুপিয়ান সিল্ক মেনজ পাঞ্জাবিও রয়েছে।
দোকানিদের তথ্য অনুযায়ী, সর্বাধিক বিক্রি হওয়া পাঞ্জাবির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের সেমি লং সুতির প্রিন্ট করা একরঙা সাদা পাঞ্জাবি। তবে তরুণরা বেশি কিনছে নিয়মিত ফিট লম্বা পাঞ্জাবি, স্টাইলিশ পাঞ্জাবি, ফ্যাশনেবল সিল্ক পাঞ্জাবি।
মালিবাগ আয়েশা কমপ্লেক্সের কোয়ালিটি ফ্যাশনের মালিক মো. ফররুখ আহমেদ বলেন, ‘গরম বেশি। ক্রেতারা আরামদায়ক পাঞ্জাবি চান। এ কারণে তারা বিভিন্ন রঙের প্রিন্টেড ও এমব্রয়ডারি করা সুতি পাঞ্জাবিই বেশি কিনছেন। তবে তারা ফিটিং চাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া গারো লাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে গারো জনগোষ্ঠীর ওয়ানগালা উৎসব। রোববার সকালে ওয়ানগালা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে গারো সম্প্রদায়ের দিনব্যাপী এই উৎসবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় গারো জনগোষ্ঠী তাদের নতুন ফসল সৃষ্টিকর্তার নামে উৎসর্গ করেন।
ওয়ানগালা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি এলাকায় একসময় জুম চাষের মাধ্যমে বছরে মাত্র একটি ফসল ফলতো। তখন ওই জুম বা ধান ঘরে তোলার সময় গারোদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজং’-কে উৎসর্গ করে এ উৎসবের আয়োজন করা হতো।
মূলত গারোরা ছিল প্রকৃতিপূজারী। সময় পরিক্রমায় গারোরা ধীরে ধীরে খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে পালন করা হয়। এক সময় তারা তাদের শস্য দেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ‘ওয়ানগালা’ পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশু খ্রীষ্টকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করে থাকেন।
ওয়ানগালা উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালাউদ্দিন বিশ্বাস, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য প্রীতম দাস প্রমুখ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়ায় আদিবাসী খাসি (খাসিয়া) সম্প্রদায়ের ১২৫তম বর্ষবিদায় ও ১২৬তম নতুন বছরকে বরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খাসিদের আয় ও জীবিকার প্রধান উৎস পান চাষ। চলতি মৌসুমে পানের ব্যবসা মন্দা ও আর্থিক সংকটের কারণে ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ আয়োজন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছিল খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল। তবে পরবর্তীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় বেশ আড়ম্বরের সঙ্গেই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের আয়োজনে শনিবার আদিবাসী খাসিদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘সেং কুটস্নেম' অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবকে ঘিরে পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
সরেজমিনে দেখা যায়, ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উপলক্ষে নানা রঙের পোশাক পরে খাসিরা নাচগান, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। মাঠের এক পাশে খাসিদের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মেলা বসে। মাঠের একপাশে সুপারি গাছের পাতা দিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়। তবে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় আয়োজন কিছুটা কম ছিল। কারণ একেবারে শেষ সময়ে এসে প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছরের ২৩ নভেম্বর মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সম্প্রদায়ের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। খাসিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সাজসজ্জায় সেজে নেচে–গেয়ে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন।
‘সেং কুটস্নেম’ উৎসবের দিন সবাই মিলে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে আনন্দে নিজেদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন।
অনুষ্ঠানস্থলে মাঠ জুড়ে মেলা বসে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়ারা পোশাক, পান, তীর, ধনুক, বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন।
এই উৎসবে সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন।
হেলেনা পতমী বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর আমাদের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠানটি করে আসছি। অনুষ্ঠানটি ঘিরে আমরা খাসি সম্প্রদায়ের সবাই একসঙ্গে জমা হয়ে উৎসবে মেতে উঠি।’
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমরা অনুষ্ঠানটি করতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা সেং কুটস্নেম আয়োজন করি।’
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন, ‘সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন। দেশ–বিদেশের পর্যটকেরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন। খাসি সেং কুটস্নেম বা বর্ষবিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব।’
আরও পড়ুন:নাচ-গানের মধ্যদিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে শেষ হয়েছে মণিপুরীদের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা।
শনিবার ভোরে এ আয়োজনের সমাপ্তি হয়েছে। কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে রাসনৃত্যের বর্ণিল এই উৎসব উপভোগ করেছেন দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ।
শুক্রবার দুপুর ১টায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কমলগঞ্জে হাজির হন নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা পেশার মানুষ। তাদের পদচারণায় সকাল থেকে মুখর হয়ে ওঠে মণিপুরী পাড়াগুলো। শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আয়োজনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
উপজেলার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপ মাঠে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, আদমপুরের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স মাঠে মণিপুরী মী-তৈ সম্প্রদায়ের আয়োজনে হয়েছে মহারাসোৎসব।
রাস উৎসব ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। বসেছিল রকমারি আয়োজনে বিশাল মেলা।
মাধবপুর (শিববাজার) জোড়ামণ্ডপ মাঠে মণিপুঈ মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ১৮২তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে আদমপুর গ্রামে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ও মী-তৈ মণিপুরীদের ৩৯তম আলাদা উৎসব হয়েছে।
মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, ‘মাধবপুর জোড়ামণ্ডপ রাসোৎসব এ বিভাগের মধ্যে ব্যতিক্রমী আয়োজন। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে। বর্ণময় শিল্পসমৃদ্ধ বিশ্বনন্দিত মণিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবে সবার মহামিলন ঘটে।
‘মণিপুরীদের রাসলীলার অনেক ধরন। নিত্যরাস, কুঞ্জরাস, বসন্তরাস, মহারাস, বেনিরাস বা দিবারাস। শারদীয় পূর্ণিমা তিথিতে হয় বলে মহারাসকে মণিপুরীরা পূর্ণিমারাসও বলে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই উৎসব উপলক্ষে প্রায় ২০ দিন ধরে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করেছি আমরা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন ছিল উৎসবের নিরাপত্তায়।’
আরও পড়ুন:রাখাল নৃত্যের মধ্য দিয়ে শুক্রবার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা শুরু হয়েছে।
দুপুরে তুমুল আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনির মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ ও তার সখী রাধার লীলাকে ঘিরে এ উৎসব শুরু হয়।
শিশুদের রাখাল নৃত্য পরিবেশ করতে দেখা যায়। ভক্তরা নৃত্যরত শিল্পীদের বাতাসা ও টাকা উপহার দেন।
উৎসব উপলক্ষে নানা ঐতিহ্যবাহী সাজে মেতেছে মণিপুরীপাড়া। মূল রাসলীলা রাত ১১টা থেকে শুরু হয়ে পরের দিন ভোর পর্যন্ত চলবে।
বাঁশ ও কাগজ কেটে বিশেষ কারুকাজে রাসের মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। মণ্ডপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বসেন রাসধারী বা রাসের গুরু, সূত্রধারী ও বাদকরা। পাশাপাশি তিনটি মণ্ডপে তরুণীরা রাসলীলায় অংশ নিয়ে থাকেন।
রাসের সাধারণ ক্রম হচ্ছে সূত্রধারী কর্তৃক রাগালাপ ও বন্দনা, বৃন্দার কৃষ্ণ আবাহন, কৃষ্ণ অভিসার, রাধা ও সখীদের অভিসার, রাধা ও কৃষ্ণের সাক্ষাৎ ও মান-অভিমান, ভঙ্গীপারেং, রাধার কৃষ্ণ-সমর্পণ, যুগলরূপ প্রার্থনা, আরতির মতো বিষয়গুলো।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে বেলা ১টা থেকে শুরু হয় গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাত ১১টায় জোড়া মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা।
এবার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে ১৮২তম রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরী মৈতেই সম্প্রদায়ের আয়োজনে ৩৯তম রাসোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রাসোৎসবকে ঘিরে মাধবপুর ও আদমপুরের মণ্ডপগুলো সাজানো হয়েছে সাদা কাগজের নকশার নিপুণ কারুকাজে। করা হয়েছে আলোকসজ্জাও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
রাসোৎসবকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জ মণিপুরী সংস্কৃতির এক বিশাল মিলনমেলায় পরিণত হয়।
মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, ‘এবার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে ১৮২তম মহারাসলীলা উপলক্ষে বিকাল সাড়ে তিনটায় শুভেচ্ছা বিনিময় ও প্রদীপ প্রজ্বালনে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন।’
আরও পড়ুন:প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে রোববার শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
সকালে দর্পণ-বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। পরে বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। বিদায়ের করুণ ছোঁয়ায় রাজধানীতে একে একে বুড়িগঙ্গা নদীতে বিসর্জন দেয়া হয় প্রতিমা। একই সময় রাজধানীর উপকণ্ঠে তুরাগ নদেও চলে বিসর্জন।
প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সড়কে ব্যাপকসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি নদীতে ছিল নৌপুলিশের টহল। ফায়ার সার্ভিসের টিমও দায়িত্ব পালন করে।
এদিকে দুপুরে পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বের হয় বর্ণাঢ্য বিজয়া শোভাযাত্রা। বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে দুপুর গড়াতেই ভক্তরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পূজামণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করেন পলাশীর মোড়ে।
পরে শত শত ট্রাক প্রতিমা নিয়ে সদরঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয়। ঢাকেশ্বরী থেকে শুরু করে বিজয়া শোভাযাত্রাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, হাইকোর্ট, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, গোলাপ শাহ মাজার, কোর্ট এলাকা হয়ে সদরঘাটে পৌঁছে। রাস্তায়, বিভিন্ন ভবনে পুলিশ ছিল সতর্কাবস্থায়। রাস্তার পাশে দর্শনার্থীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হলেও ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিমাটি রেখে দেয়া হয়। তবে এখানে পূজার কাজে ব্যবহৃত দেবীর ফুল, বেলপাতা ও ঘট বিসর্জন দেয়া হয়।
প্রথা অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে জল এনে (শান্তিজল) মঙ্গলঘটে নিয়ে তা আবার হৃদয়ে ধারণ করা হয়। আগামী বছর আবার এই শান্তিজল হৃদয় থেকে ঘটে, ঘট থেকে প্রতিমায় রেখে পূজা করা হবে।
রামকৃষ্ণ মিশনে সন্ধ্যা আরতির পর মিশনের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। এরপর ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ ও মিষ্টিমুখ করেন।
সারা দেশে এ বছর ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ছিল ২৫২টি। এসব মণ্ডপে শারদীয় উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজা উদযাপন কমিটিও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মণ্ডপে মণ্ডপে লাগানো হয় সিসিটিভি ক্যামেরা। স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি করা হয় মণ্ডপ পাহারার জন্য।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসমতে- মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি, কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য।
চণ্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠী তিথিতে ‘আনন্দময়ীর’ আগমনে ৯ অক্টোবর দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। পরবর্তী ৫ দিন রাজধানীসহ দেশব্যাপী পূজামণ্ডপগুলোতে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুর্গোৎসব।
দেবী দুর্গা এ বছর মর্ত্যে আগমন করেন দোলা বা পালকিতে চড়ে। দেবীর এই আগমনের ফলাফল হবে মড়ক, যা শুভ ইঙ্গিত নয়। এ ছাড়াও দেবী স্বর্গে ফিরে যাবেন ঘোটক বা ঘোড়ায় চড়ে।
শাস্ত্রমতে, দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হয়। ঘোটকে গমন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খল অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। এটি যুদ্ধ-বিগ্রহ, আশান্তি, বিপ্লবের ইঙ্গিতবহ।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী ফিরে গেলেন স্বর্গলোকের কৈলাসে স্বামীর ঘরে। পরের বছর শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণীতে, যা তার বাবার গৃহ।
আরও পড়ুন:স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আসন্ন দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রীশ্রী রমনা কালীমন্দির পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ইতোমধ্যে আট দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
তাছাড়া দুর্গাপূজায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র্যাব ও আনসারের পর্যাপ্ত সদস্যের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী মোতায়েন থাকবে। কোথাও কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তথ্য পেতে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এবার সব পূজামণ্ডপে পূজা উদযাপন কমিটির মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবকদের রাত ৩টার পর পূজামণ্ডপে পাওয়া যায় না। এবার কোনো স্বেচ্ছাসেবক কোনো পূজামণ্ডপ ছেড়ে যাবেন না। তারা ২৪ ঘন্টাই দায়িত্ব পালন করবেন। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করবেন। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করতে সুবিধা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ অনেক কিছুই বলছে- সেটা আপনারা জানেন। আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা সত্যি ঘটনা মিডিয়ায় তুলে ধরবেন। আমরা সত্যি ঘটনা সবাইকে জানাতে চাই।’
হিন্দুদের নিয়ে বছরের পর বছর যে নীলনকশা ও ষড়যন্ত্র হচ্ছে সেগুলো বন্ধ হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনারাই আমাদের সাহায্য করতে পারেন। আপনারা বিষয়টি জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারেন। অনুরোধ করবো, আপনারা সবসময় সত্যিটা প্রকাশ করবেন। যদি কোথাও আমাদের ঘাটতি থাকে, সেটা আমরা ঠিক বা পূরণ করে নেব। ভুল থাকলে সংশোধন করে নেব।’
বিগত ১৫ বছরে রামু ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও সহিংস ঘটনার বিচার হয়নি। সেসব ঘটনার পুনঃতদন্ত ও বিচার হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। বর্তমান সরকার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে।’
পরিদর্শনকালে শ্রীশ্রী রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম পূজা পরিচালনা পরিষদের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস ও সদস্য সচিব বিশ্বজিৎ ভদ্রসহ মন্দিরের পূজা পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে ৯ অক্টোবর বুধবার। শুভ মহালয়ায় দেবীর আবাহন শেষে মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে দেবী বরণের প্রস্তুতি। প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। চলছে রং-তুলির আঁচড় শেষে প্রতিমা মণ্ডপে নেয়ার প্রস্তুতি।
দুর্গোৎসবে মন্দিরে আগত দর্শনার্থীদের নজর কাড়তে সাজসজ্জায় নানা উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন মন্দিরে চলছে থিমভিত্তিক সাজসজ্জার কাজ। সারাদেশে বইছে উৎসবের আমেজ। সায়ংকালে ধূপের ধোঁয়া, ঢাক-ঢোল, উলুধ্বনি আর কাঁসর-মন্দিরার সঙ্গে ভক্তিমন্ত্রে মেতে ওঠার অপেক্ষায় পূজামণ্ডপ।
সরকারি হিসাবে এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। বুধবার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসব। এরপর মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও ১৩ অক্টোবর রোববার দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবের।
কৈলাশ থেকে এ বছর দেবী দুর্গা মর্ত্যে আগমন করবেন দোলায় চড়ে। আর স্বর্গলোকে ফিরে যাবেন ঘোড়ায় চড়ে।
সরেজমিনে রাজধানীর ভিন্ন মন্দিরে দেখা গেছে, বরাবরের মতোই পূজার জোর প্রস্তুতি চলছে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা কালি মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, লালবাগ ঋষিপাড়া মন্দির, রাজারবাগ কালিমন্দির, শাঁখারি বাজার মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরে।
রং-তুলির কাজে দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ ফুটিয়ে তোলায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পীরা। তাদের নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় কৃত্রিম জীবন পাবেন দেবী দুর্গা, শিব, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুরসহ অন্যান্য প্রতিমা।
কোনো কোনো প্রতিমায় পরানো হচ্ছে শাড়ি, হাতের বালাসহ নানা গহনা। পাশাপাশি আলোকসজ্জা, প্যান্ডেল তৈরি, মণ্ডপ ও তার আশপাশে সাজসজ্জার কাজসহ নানা কাজে ব্যস্ত পূজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। দুর্গোৎসব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবম্বীদের মধ্যে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। কেউ কেউ কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
পূজাকে সামনে রেখে সারা দেশে জেলা প্রশাসন প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে। পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকার তার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
রমনা কালি মন্দিরের পুরোহিত হরিচাঁদ চক্রবর্তী জানান, আগামী ৯ অক্টোবর সকাল ৮টা ৪৪ মিনিটের মধ্যে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ করতে হবে। শায়ণকালে দেবীর অধিবাস ও আমন্ত্রণ। ১০ অক্টোবর সকাল ৭টা ৫৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের মধ্যে দেবীর মহাসপ্তমী পূজা শেষ করতে হবে।
১১ অক্টোবর সকাল ৬টা ৫২ মিনিটের মধ্যে মহাষ্টমী পূজা ও ৬টা ৫২ মিনিটে আরম্ভ হবে কুমারী পূজা। পরে ৭টা ৪১ মিনিটের মধ্যে সন্ধী পূজা শেষ করতে হবে। ওইদিনই সকাল ৭টা ৪১ মিনিট পর মহানবমী আরম্ভ ও ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর বিহিত পূজা শেষ করতে হবে।
১২ অক্টোবর ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর বিহিত অধিক পূজা শেষ করতে হবে। একই দিন সকাল ৭টা ৩৭ গতে পূর্বাহ্নের মধ্যে দশমী পূজা সমাপনান্তে বিসর্জন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, পূজার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। সারা দেশেই কেন্দ্রীয় ও প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে পূজার। ইতোমধ্যে আমরা সারাদেশে নির্দেশনা দিয়েছি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে পূজা করার জন্য। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে পূজার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে।
ইতোমধ্যে সরকারের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। সেখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ আইজিপি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, পূজাকে ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিরাপত্তায় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সবার মধ্যে আস্থার মনোভাব রয়েছে। আশা করছি, শারদীয় দুর্গোৎসবে কোনো সমস্যা হবে না।
মন্তব্য