ব্রিটিশ সুপার মডেল নাওমি ক্যাম্পবেল মা হয়েছেন সম্প্রতি। নতুন মা হওয়ার পরও আগের মতোই ব্যস্ত ৫১ বছর বয়সী এ তারকা। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মিলান, লন্ডন, প্যারিসের নামিদামি সব ফ্যাশন শো। কাজ করছেন বিশ্বসেরা ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে। ৯ মাস বয়সী মেয়েকে সামলে নাওমি কীভাবে পেশাগত কাজ সমানতালে করে যাচ্ছেন, সেটি জানতেই তার মুখোমুখি হয়েছিল বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ভোগ। ভোগে নাওমি ক্যাম্পবেলের ব্যস্ত দিনলিপি নিয়ে লিখেছেন সারাহ হ্যারিস। আর সেটি অবলম্বনে নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
নাওমি দেরি করে ফেলেছেন। ৩৪ দিন, ২ ঘণ্টা, ১৫ মিনিট দেরি। ঠিক এতটা সময় আগে তার সঙ্গে আমাদের দেখা হওয়ার কথা ছিল। এখন যখন দেখা হচ্ছে, তখন নাওমি কাতার থেকে লন্ডনগামী এক ফ্লাইটে। আমাদের জন্য তিনি নিজের ব্যস্ত ও কোলাহলপূর্ণ জীবন থেকে এটুকু সময়ই বরাদ্দ করতে পেরেছেন। বিমানের ওয়াই-ফাইয়ের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে আমাদের। এ কারণে তার সঙ্গে ভিডিও কল করাও সম্ভব হয়নি।
তবে আমাদের ফটোগ্রাফার স্টিভেন মেইজেল ভোগের জন্য তার যে ফটোশুট করেছেন, সেসব ছবি দেখার পর নাওমিকে আমার সামনাসামনি না দেখলেও চলবে। ৫১ বছর বয়সেও নাওমি এক দেবীর মতো। নিঁখুত ত্বক, অসাধারণ চুল ও অবিশ্বাস্য চেকনাই ধারালো দেহ।
বিমান থেকে কথা বলার সময় যে বিষয়টি সার্বক্ষণিক বোঝা গেছে তা হলো, ৯ মাসের মেয়েকে নিয়ে কথা বলার সময় তার মাতৃত্ববোধ। নাওমির মেয়ে তার সঙ্গেই ছিল এবং অবাক করার মতো বিষয় হলো, আমাদের কলের সময় সে একদম চুপচাপ ছিল।
নাওমি গর্বভরে বললেন, ‘আমি খুব ভাগ্যবান যে ও আমার সঙ্গে ঘুরতে ভালোবাসে। টেক-অফ বা ল্যান্ডিংয়ের সময় এতটুকু বিরক্ত করে না। খুব ভালো মেয়ে। ঠিকঠাক ঘুমায়। একেবারেই কান্নাকাটি করে না। বয়সের তুলনায় ও খুবই বুদ্ধিমান। কিছুদিন হলো হাত নাড়ানো শিখেছে। খুবই মজার। অনেক হাসে। আর অল্প কয়দিনের মধ্যেই কথা বলা শুরু করবে।
‘আমার মনে হয় হামাগুড়ি দেয়ার আগেই সে হাঁটা শুরু করবে। ওর এরই মধ্যে ছয়টি দাঁত উঠে গেছে। দাঁত নিয়েও একদম কোনো বিরক্ত করে না।’
সত্যিই আদর্শ ও একটা শিশু। এক সুপার মডেলের আদর্শ শিশু।
২০২১ সালের মে মাসে নাওমি তার ও ছোট কন্যাশিশুর ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে মা হওয়ার ঘোষণা দেন। ছবিতে মেয়ের ছোট্ট তুলতুলে পা নিজের হাতে ধরে রেখেছিলেন। মেয়ের জন্মের বিস্তারিত এখনও কাউকে জানাননি তিনি।
এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি নিশ্চিত করেন, ‘ও দত্তক নেয়া নয়। ও আমার মেয়ে।’
বাকিটুকু নিজের বইয়ে বিস্তারিত লিখবেন বলে জানান নাওমি। বইয়ের কাজ এখনও শুরু করেননি, মেয়ের নামও কাউকে জানাননি। খুব কম মানুষই জানতেন, নাওমি মাতৃত্বের পরিকল্পনা করছেন।
তিনি বলেন, ‘ওর জন্মের খবর জানতেন এমন মানুষের সংখ্যা একবারে হাতেগোনা। তবে ও আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সেরা বিষয়।’
নাওমি তার জীবনের আনন্দের এ উৎসকে ভোগের প্রচ্ছদে নিয়ে এসেছেন। ক্যামেরার সামনে শিশুটি ছিল একেবারে স্বাভাবিক।
নাওমি বলেন, ‘ও আলো খুব পছন্দ করে। সবার দিকে তাকাচ্ছিল। ও মানুষের চোখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। সবকিছু বোঝার চেষ্টা করে।’
অবাক করার মতো বিষয় ছিল, স্টিভেন মেইজেল তার অন্যতম কাছের বন্ধু ও সহকর্মী। নাওমি তাকে ১৬ বছর বয়স থেকে চেনেন। তবে এবার তার সঙ্গে ভোগের ফটোশুট করার সময় নাওমি নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘স্টিভেনের সঙ্গে কাজ করতে গেলে আমি সব সময় নার্ভাস হয়ে পড়ি। আমি অনেক বেশি মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করি। চেষ্টা করি নতুন কিছু একটা ঘটাতে। স্টিভেনের চোখে নতুন কিছু পড়তে এবং তার নির্দেশনা বুঝে শতভাগ দিতে আমি চেষ্টা করি।’
১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্কে প্রথম দেখা দুজনের। সে স্মৃতি এখনও নাওমির মনে উজ্জ্বল।
তিনি বলেন, ‘আমি অ্যাপলো স্টুডিওতে ঢোকার পরই তাকে দেখি। সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হয় মানুষটা কী দারুণ! সে সত্যিই ভেতরে ও বাইরে একজন সুন্দর মানুষ। খুব বুদ্ধিমান ও সপ্রতিভ। স্টিভেন আমার কাছে পরিবারের মতো।’
চলতি মৌসুমে নাওমি প্যারিস, মিলান ও লন্ডনে ভারসাচে, আলেক্সান্ডার ম্যাককুইন, বালমেইন ও ল্যানভিনের হয়ে র্যাম্প করেছেন। এখনও ফ্যাশন শোতে অংশ নেয়া উপভোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি এখনও মজা পাই, কিন্তু খুব নার্ভাস লাগে! আমার বয়স এখন ৫১। আর আমি যে মেয়েগুলোর সঙ্গে র্যাম্পে হাঁটছি তাদের বয়স ১৮।’
অতীত বা বর্তমানে কেউ-ই নাওমির মতো র্যাম্পে হাঁটেননি। পুরোটাই যেন তার নখদর্পণে। আগের দিনের সঙ্গে এখনকার সময়ের তুলনাও করলেন এ সুপার মডেল। নিজের স্বর্ণযুগের বান্ধবী ও প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য তিন সুপার মডেল লিন্ডা এভানজেলিস্তা, সিন্ডি ক্রওফোর্ড ও ক্রিস্টি টার্লিংটনের কথা বললেন নাওমি।
বলেন, “অবশ্যই এখনও ভালো লাগে। বিশেষ করে যখন আমার বান্ধবীদের সঙ্গে অংশ নিচ্ছি। একই সঙ্গে এ বয়সে তরুণদের সঙ্গে অংশ নিতে পারাটা দারুণ। তবে বেশ কয়েকটি শোতে আমার মনে হয়েছে আমি ওদের বলি, ‘আরে মেয়ে! কী করছ! দ্রুত হাঁটো। এত ধীরে হাঁটছ কেন?’ তবে আমার সময়টা আনন্দময় ছিল। আমরা হাসাহাসি করেছি। আমাদের ব্যক্তিত্বের দিকগুলো তুলে ধরতে পেরেছি।”
নাওমি, লিন্ডা, সিন্ডি ও ক্রিস্টি এ চার গ্ল্যামারাস, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও জেনেটিক্যালি নিখুঁত নারী তাদের সময়ে ফ্যাশনকে পাল্টে দিয়েছিলেন। তাদের অবস্থান ও খ্যাতি এত শক্তিশালী ছিল যে, বিখ্যাত যে সব ব্র্যান্ডের জন্য তারা কাজ করতেন সেগুলোর চেয়ে তাদের নাম অনেক সময় বড় হয়ে উঠত।
নাওমি বলেন, ‘অবিশ্বাস্য একটা সময় ছিল। আমরা অনেক কষ্ট করেছি। যত শো থাকুক, যতবারই পোশাক বদলাতে হোক না কেন, আমরা কখনও বলিনি যে ক্লান্ত লাগছে। আমরা সবাই কাজটিকে ভালোবাসতাম এবং একে অপরকে চাঙা রাখতাম।
‘এমন সময় ছিল যখন একদিনে আমরা আটটি শো করেছি। এরপর সন্ধ্যায় ডিজাইনারের সঙ্গে উদযাপন করেছি। আমি ভাবি, এখনকার মডেলরা আমাদের সঙ্গে পেরে উঠতেন কিনা।’
তিন দশকের বেশি সময় পর তারা এখনও বন্ধু। নাওমি জানালেন, তাদের একটা চ্যাট গ্রুপ আছে। তার মেয়ে যখন মাত্র কয়েক দিনের তখন সিন্ডি ক্রওফোর্ড প্রথম দেখা করেন। ক্রিস্টি টার্লিংটনের সঙ্গে নাওমির মেয়ের দেখা হয় যখন ওর বয়স সপ্তাহ দুয়েক। আর লিন্ডা এভানজেলিস্তা এখনও ওকে দেখেননি।
এই চারজন এখন কাজ করছেন অ্যাপল টিভি প্লাসের ডকুমেন্টারি সিরিজ ‘দ্য সুপারমডেলস’ নিয়ে। এর পরিচালক অস্কারজয়ী পরিচালক বারবারা কোপল। সিরিজে এই চার মডেলের ৯০ দশকের রাজত্ব মনে করিয়ে দেয়া হবে। রন হাওয়ার্ডের সঙ্গে চারজনই সিরিজটির নির্বাহী প্রযোজকের ভূমিকায় আছেন।
সিরিজ নিয়ে নাওমি বলেন, ‘এটা আমাদের চার জনের জীবন, ক্যারিয়ার, নারীত্ব ও মাতৃত্ব নিয়ে। মডেল হিসেবে আমাদের নিজের ইমেজের স্বত্ব আমাদের কাছে থাকে না। যে কারণে আমাদের নিজেদের মতো করে নিজেদের গল্প বলতে পারাটা আনন্দের।’
দক্ষিণ লন্ডনের স্ট্রেদমে নারীবেষ্টিত পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন নাওমি। তার মা ভ্যালেরি মরিস-ক্যাম্পবেল একজন নৃত্যশিল্পী ছিলেন, যিনি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পারফরম করতেন।
নাওমি জানান, তার বেড়ে ওঠার সময় পারিবারিক সহায়তা পেয়েছেন। খালারা তাকে মিলান ও প্যারিসে বিভিন্ন কাজের জন্য উৎসাহ দিতেন। পরিবারের প্রধান ছিলেন তার প্রিয় নানি জ্যামাইকান।
তিনি বলেন, ‘নানিই আমাকে রান্না করা ও ঘর পরিষ্কারের কাজ শিখিয়েছেন। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর আমার জুতা ও নাচের পোশাক পরিষ্কার করতাম। শৃঙ্খলা আমার মতে খুবই জরুরি। আমার বেড়ে ওঠার সময় সেটা ছিল এবং আমিও এ রকমটাই চাইব।’
তিনি ১২ বছর বয়স পর্যন্ত বারবারা স্পিক স্টেজ স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেখানে নাচ ও নাটক ছাড়াও বক্তৃতা দেয়ার প্রশিক্ষণ পান। এক কথায়, যে ধরনের শিক্ষা একটি তরুণ মেয়েকে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক শিল্পে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে সেগুলো তিনি পান এ স্কুলে।
নাওমি বলেন, ‘আমি দৃঢ়চেতা নারীদের পরিবার থেকে এসেছি। পরিবার ও আমার স্কুলে শিখেছি, কীভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হয় এবং নিজের অধিকারের জন্য ঘুরে দাঁড়াতে হয়।’
সামাজিক বিভিন্ন বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিবেদিত থাকা, নিজের ও অন্যদের পক্ষে দ্বিধাহীনভাবে কথা বলা, পরিবর্তনের শক্তি হয়ে ওঠা এবং বৈচিত্র্যহীনতার অভাবে ভুগতে থাকা একটি শিল্পে কৃষ্ণাঙ্গদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পক্ষে তার দীর্ঘদিনের ভূমিকার পেছনে কারণও এটি।
৯০-এর দশক থেকেই অচেনা ডিজাইনার ও ফ্যাশন পত্রিকার সম্পাদকদের বিষয়ে তিনি কোনো বাছবিচার করতেন না। নাওমি বলেন, ‘যারাই ফোন ধরতেন তাদেরই কল দিতাম। কোনো অভিযোগ করার জন্য নয়, মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্য।’
তিনি নিজে থেকেই জানান, তার কোম্পানি উইমেন ম্যানেজমেন্টের এজেন্ট আকিম রাসুল একজন কৃষ্ণাঙ্গ। রাসুলের সঙ্গে মিলে নেওমি চান আফ্রিকা, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো নতুন বাজারগুলোর উদীয়মান তরুণ প্রতিভাবাদের সঙ্গে কাজ করতে। তাদের জন্য একটা প্ল্যাটফরম তৈরি করতে চান তিনি।
আডুট আকেচ ও উগবাদ আবদির মতো এখনকার দারুণ সফল কৃষ্ণাঙ্গ মডেলদের কাছে তিনি অনেকটা মাতৃসুলভ এক ব্যক্তিত্ব। আকেচ ও আবদির মতো আফ্রিকান মডেলরা বর্তমানে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। একই সঙ্গে তারা সৌন্দর্যের ধারণাও বদলে দিচ্ছেন।
নাওমির কী ধারণা? তাদের সময়ে এমন পরিবর্তন সম্ভব ছিল?
উত্তরে তিনি বলেন, ‘সবার যাত্রাপথ লেখা থাকে। আমার যাত্রা এটা, এভাবেই এটা লেখা ছিল। তবে হ্যাঁ, অনেকবারই এমন হয়েছে, আমি র্যাম্পে হেঁটেছি কিন্তু আমাকে বিজ্ঞাপনে পরে আর নেয়া হয়নি। তখন কষ্ট পেতাম। অনেক কষ্ট পেতাম। এগুলোকে আমাদের টপকে এগিয়ে যেতে হবে। এখনকার মতো তখন যদি আমি সমর্থন পেতাম তাহলে দারুণ হতো। তবে এখন যা হচ্ছে সেটার জন্য আমি গর্বিত।
‘ভিন্নতা দেখতে পেয়ে আমি গর্বিত। তবে আমি আন্তরিকভাবেই বলছি, আমরা এখন কোনো ট্রেন্ড তৈরির চেষ্টায় নেই। অনেক কোম্পানিই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে, কারণ তারা আলোচনার বাইরে থাকতে চায় না। আমি বলব, এভাবে কাজ করার দরকার নেই। এটা যে সঠিক সেটা বুঝে কাজ করা উচিত। সেটি অর্জনে এখনও দীর্ঘ পথ বাকি।’
আগের মতোই নাওমি কাজের ক্ষেত্রে নিরলস। গত সেপ্টেম্বরে, তিনি দ্য কুইন্স কমনওয়েলথ ট্রাস্টের বৈশ্বিক দূতের দায়িত্ব নেন। তার কাজের মধ্যে রয়েছে দাতব্য সংস্থাটির তহবিল সংগ্রহের চেষ্টাকে সাহায্য করা এবং এর তরুণ অধিকারকর্মীদের প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা।
নাওমি এ প্রসঙ্গে বলেন, “ম্যান্ডেলা আমাকে একটি কথা বলেছিলেন, সেটি আমি সবসময় মনে রাখি। তিনি বলেছিলেন, ‘তখনই ঘুমাব যখন আমি চলে যাব। যতক্ষণ বেঁচে আছি ও শক্তি আছে আমি কাজ করে যাব।”
মা হওয়ার পর নাওমি কাজ করার নতুন উদ্যোম ও শক্তি পাচ্ছেন বলে জানালেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের সমর্থক। যে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতি আমার সমর্থন আছে। এ সমস্যাগুলো যতদিন ধরে আছে আমি তার চেয়ে বেশিদিন ধরে এ নিয়ে কথা বলছি। আমার জন্য এটি নতুন কিছু নয়।’
জীবনে সন্তান আসার পর এই পরিবর্তনগুলো ঘটানোর জন্য আরও কারণ খুঁজে পাচ্ছেন নাওমি।
বলেন, ‘আমি জানতাম কোনো একদিন মা হব। আমি ভাবতেও পারিনি বিষয়টি এত আনন্দের। আমি জানি, ওকে পেয়ে আমি কতটা ভাগ্যবান।’
নাওমির উদ্যোম এতটাই যে, তার ও তার মেয়ের মধ্যে যে ৫০ বছরের ব্যবধান সেটি একেবারেই বোঝা যায় না। নাওমি মাত্র কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়েই তরতাজা থাকতে পারেন ও কর্মশক্তির দিক থেকে হয়ত এখনও ২০ বছর বয়সী যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারেন। তিনি এখন তার বয়সী সব বন্ধুদের বলছেন, সন্তান গ্রহণ করতে।
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের সবাইকে বলেছি, সন্তান নিয়ে নাও। এত চিন্তা করো না।’
নাওমির মেয়ে তার সঙ্গে সব জায়গায় যায়। বড়দিন তারা উদযাপন করেছেন পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণ ফ্রান্সে। নিউ ইয়ার্স ইভে তারা দুজন গেছেন কাতারে, তারপর কয়েক দিনের জন্য লসএঞ্জেলেসে যাওয়ার আগে কয়েক ঘণ্টার জন্য লন্ডন ও প্যারিস গেছেন।
নাওমি প্যারিসে অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন, তবে সেখানে লুই ভুইতনের হয়ে ছেলেদের জন্য করা ভার্জিল আবলোর শেষ শোতে র্যাম্পে অংশ নেন। নাওমি ও তার মেয়ে আসলে কোথায় বাস করেন জানতে চাইলে তার তড়িৎ উত্তর, ‘আমরা বিশ্ব নাগরিক!’
তিনি এখন এই মুহূর্তগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাইছেন। নাওমি জানেন, তার মেয়ে স্কুলে পড়া শুরু করলে এই স্বতঃস্ফূর্ততা ও স্বাধীনতা শেষ হয়ে যাবে।
নাওমি ‘এক অসাধারণ ন্যানি’ পেয়েছেন, যিনি তার মেয়ের জন্মের দিন থেকে তার সঙ্গে আছেন। মেয়ের সেই ন্যানি দুজনের এই পুরো বিশ্বে ইয়ো-ইয়োর মতো ঘুরে বেড়ানোকে সহজ করে তুলেছেন। এই ন্যানিকে খুঁজে পেতে নাওমিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করতে হয়নি। এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সুপারিশে তিনি তাকে নিয়োগ দেন।
নাওমি তার মেয়ের চোখ দিয়ে নিজের জীবনকে উপভোগ করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আবার একটা বাচ্চার মতো হয়ে গেছি। নার্সারি রাইমস পড়ছি আবার, কত ধরনের নতুন খেলনা আছে সেগুলো শিখছি এবং সেগুলো দিয়ে খেলছি! কত ধরনের যে পুতুল আছে! এত কিছু আছে যা আমি আগে কখনও ভাবিনি।’
তিনি জানান, তার মেয়ে মিউজিক বক্স পছন্দ করে। ও বিভিন্ন রঙ, আকার এবং নকশা নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। এছাড়া বাচ্চাদের জামা-কাপড় তো আছেই! শিগগির তার মেয়ে জামার সংখ্যার দিক দিয়ে মায়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।
নাওমি বলেন, ‘ওর ক্লজেটে খুব সুন্দর সুন্দর কিছু জামা আছে। আমার বন্ধু ও ডিজাইনাররা ওকে সেগুলো উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে। অবাক করার মতো ব্যাপার, শিশুরা কত তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে! তাই না?’
নাওমির নিজের কাছেও রয়েছে আলাইয়া, শ্যানেল, ভারসাচের মতো ব্র্যান্ড। এগুলো নিয়ে তিনি নতুন একটি প্রজেক্ট শুরু করতে যাচ্ছেন। আপাতত এটুকুই শুধু জানালেন।
নাওমি ফোন কেটে দেয়ার আগে আগে তাকে জিজ্ঞাসা করি, মা হওয়ার পর সবচেয়ে বড় চমক কী ছিল?
বিনাদ্বিধায় তিনি উত্তর দেন, ‘সবার আগে আমার মেয়ে। আমি এখন যা করি, তার জন্যই করি- এটাই। এটা সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ, তাই না?’
আমি জিজ্ঞাসা করি, ‘ও কি আরও চায়?’
নাওমি হাসিতে দমকে উঠে উত্তর দেন, ‘অবশ্যই। কেন চাইবে না?’
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে হুয়াওয়ে নারী কর্মীদের জন্য একটি স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করেছে।
ঢাকায় হুয়াওয়ের সাউথ এশিয়া রিপ্রেজেনটেটিভ অফিসে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
এ বিশেষ উদ্যোগ কর্মীদের সুস্থতা ও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে হুয়াওয়ের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই কর্মশালার লক্ষ্য ছিলো নারী কর্মীদের ইউরিনারি হেলথের ওপর কাউন্সেলিং প্রদান করা। কাউন্সেলিংয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই), যা নারীদের একটি সাধারণ সমস্যা।
ইউনাইটেড হসপিটালের চিকিৎসক সরকার কামরুন জাহান ঝিনুক এ সমস্যার ঝুঁকি, লক্ষণ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও চিকিৎসার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্টের ইনফেকশন জীবনযাপনের কিছু সাধারণ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রচুর পরিমাণে পানি পান, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, আটসাট পোশাক পরিহারের মাধ্যমে আর্দ্রতা ও ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে ইউটিআই হওয়ার সম্ভাবনা কমানো সম্ভব।’
হুয়াওয়ের এইচআর ডিরেক্টর লিনজিয়াও এ কর্মশালার সূচনা করেন। হুয়াওয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
লিনজিয়াও বলেন, “হুয়াওয়েতে আমরা কর্মদক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। একজন কর্মী পুরুষ বা নারী যাই হোক না কেন, আমরা তাকে তার দায়িত্বশীলতা ও কর্মদক্ষতার মানদণ্ড দিয়েই বিচার করি। আমরা দেখেছি যে, পুরুষ এবং নারী উভয়ই দক্ষতার সাথে কাজ করতে সক্ষম। হুয়াওয়ের কর্মীদের সুস্থতার দিকেও আমরা মনোযোগ দিয়ে থাকি।
‘তাই আমাদের কর্মীদের জন্য ওপিডি ও আইপিডি বিমার সুবিধা রয়েছে। আমরা কর্মীদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালারও আয়োজন করি। আজকের কর্মশালা নারী কর্মীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।’
হুয়াওয়ের ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানটি অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে কর্মক্ষেত্রে বায়ু, পানি ও খাবারের গুণমান পরীক্ষা করার মতো উদ্যোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করে। এ ছাড়া হুয়াওয়ের পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিয়ষক নীতি অনুযায়ী নিয়মিত ফায়ার ড্রিলসেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সম্প্রতি নারীদের ওপর যে জঘন্য হামলার খবর আসছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের সম্পূর্ণ বিপরীত।
তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা আমাদের সকল শক্তি প্রয়োগ করব।'
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা মিলে যে অসাধ্য সাধন করেছে, তার সম্মুখসারির ভূমিকায় ছিল এ দেশের নারীরা। ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতী অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়েছিল আমাদের মেয়েরা।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ও অংশগ্রণকারী ও আহত নারীদের স্মরণ করে তাদের দ্রুত সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন কামনা করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে থাকলেও আমাদের সমাজে এখনও অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা পিছিয়ে আছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকার সবসময় সচেষ্ট। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ চলমান।
‘দুস্থ মায়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, কর্মজীবী নারীদের থাকার হোস্টেল, ডে কেয়ার সেন্টার সুবিধাসহ নানান ধরনের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে। এ সংক্রান্ত আরও উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা চলছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। অনেক সময় নারীরা নির্যাতনের শিকার হলেও তারা বুঝতে পারেন না কোথায় অভিযোগ জানাবেন। নারীরা যেন তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন, সে জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।
‘আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছি। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কাজও আমরা হাতে নিয়েছি। আমরা একটি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন করেছি। তারাও তাদের সুপারিশগুলো দেবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মেয়েরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শত বাধা পেরিয়ে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখছে।’
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ে ও নারীর ক্ষমতায়ন ও সমর্থন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণী ও নারীরা তাদের চারপাশের মানুষদের কাছ থেকে ক্ষমতায়ন ও সমর্থন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। প্রত্যেক নারীকেও পুরুষের সমান মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সুযোগ পাওয়া উচিত।’
তিনি উল্লেখ করেন, তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনজন অসাধারণ ব্যক্তি হলেন তার মা, স্ত্রী ও কন্যা।
তারেক রহমান ফেসবুক পেজে স্ত্রী জোবাইদা রহমান, মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবিও শেয়ার করেন।
পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমি সবসময় তাদের জন্য প্রতিটি সুযোগ, সাফল্য এবং সুখ চেয়েছি। আমি নিশ্চিত যে আপনারা যারা এটি পড়ছেন তাদের অনেকেরই একই অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি আবারও দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের মতো আমাদেরও উচিত একটি ন্যায়পরায়ণ, সহিষ্ণু ও শ্রদ্ধাশীল সমাজ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া, যেখানে ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সব মেয়ের ছেলেদের সমান সুযোগ থাকা উচিত এবং তাদের বাড়ির বাইরে পা রাখা উচিত। হয়রানি ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যবহার করা উচিত এবং নির্ভয়ে তাদের কণ্ঠস্বর প্রকাশের সুযোগ নেওয়া উচিত।’
তারেক রহমান আরও বলেন, “বিএনপির নীতি প্রণয়নে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত সমাজে নারীর অব্যবহৃত সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয়, যেখানে দলের ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ঋণ, তরুণীদের শিক্ষার জন্য অ্যাকাডেমিক ও বৃত্তিমূলক প্রকল্পের মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
উপসংহারে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একসঙ্গে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করি।’
আরও পড়ুন:নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম নির্ধারক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে শুক্রবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম নির্ধারক হচ্ছে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আসুন, আমরা নারীদের প্রতি উগ্রতা, বিদ্বেষ এবং অশ্রদ্ধামূলক সকল আচরণকে না বলি এবং এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা সুসংহত করার জন্য আহ্বান জানাই।’
গত ১৫ বছরে হাজার হাজার পুরুষ, নারী গুম, খুন, অত্যাচারিত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে অমানবিক সংগ্রাম করেছে ওই পরিবারগুলোর নারীরা। জুলাইতেও আন্দোলনের শুরু এই বাংলাদেশের নারীদের হাতেই। শহীদ হয়েছে আমাদের সন্তানরা, ছোট শিশুকন্যাও। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্ট্রান, বৌদ্ধ, সকলেই এই আন্দোলনের শরিক।’
মির্জা ফখরুল আশা করেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়াই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ লক্ষ্য থাকবে। লিঙ্গ, বয়স, পেশা নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিক যেন রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করে, এমন বাংলাদেশই আমাদের কাম্য। বাড়ি থেকে রাস্তায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে, অফিসে, সর্বত্র তাদের আত্মসম্মানকে মূল্যায়ন করা উচিত।’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আজকের ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে উগ্রবাদের কোনো জায়গা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীরা আমাদের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির অংশীদার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে আসুন আমাদের অগ্রগতি দ্রুততর করতে পদক্ষেপ নিই।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেছেন, দেশের সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে কাজ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে শিরীন হক বলেন, ‘আমাদের মূল ধারা হবে সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যের নিরসন এবং নারী-পুরুষের জেন্ডার বৈষম্য কমাতে কাজ করতে হবে। নারীর উন্নয়ন বিকাশে বাধাগুলো নিয়ে বিষয় চিহ্নিত করা।
‘অন্য সকল সংস্কার কমিশনে নারী অধিকারের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। ক্রান্তিকালে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতির জন্য কাজ করার সর্বোত্তম সুযোগ।’
অনুষ্ঠানে সমাজে যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং জলবায়ু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও সবুজায়ন এবং ক্রীড়াঙ্গনে নারী নেতৃত্ব বিকাশে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিন ক্যাটাগরিতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের তিনজনকে ‘নাসরীন স্মৃতিপদক ২০২৫’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর পদক গ্রহণ করেন ডনাইপ্রু নেলী, রিনা খাতুন ও আফরোজা খন্দকার।
দিবস উদ্যাপন আয়োজনে নারীদের সাফল্য প্রদর্শন ও পুরস্কার প্রদানসহ ছিল আলোচনা সেশন।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় এ আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা। ওই সময় দেশের সব ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তাদের একজন বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়নে সামগ্রিক চিত্রের অগ্রগতি হলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। এখনও অনেক পিছিয়ে আছেন নারীরা। ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে বিভিন্ন স্তরের নারীদের সামনে থাকা কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণকে উৎসাহিত করাসহ নারী ও কন্যাশিশুরা যেন সমান সুযোগ পায় এবং উন্নতি করতে পারে, সে লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে পদক্ষেপের গতি বাড়াতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের কথা স্বীকার করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘নারীদের অগ্রগতিতে পেছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কারা করছে, কেন করছে সেটা বের করা দরকার। জুলাইয়ের আন্দোলনে মেয়েরাই রোকেয়া হল থেকে সবার আগে বের হলো। কিন্তু পরে এত দ্রুত মেয়েরা সরে গেল কেন?
‘জায়গা কেউ ইচ্ছে করে ছেড়ে দেয়নি। চাপ সৃষ্টি করে জায়গা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। মেয়েদের পেছনে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে।
‘আমরা দেখেছি আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নারীরা দারুণ সাহস দেখিয়েছে। এত তাড়াতাড়ি মেয়েদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে আশা করিনি।’
নারীদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে কমিউনিটি উন্নয়নে একশনএইড কীভাবে অবদান রেখে চলেছে তা তুলে ধরেন ফারাহ কবির।
তিনি বলেন, ‘দেশের নারীদের অগ্রগতিতে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে চলেছে একশনএইড বাংলাদেশ। নারী সুরক্ষা, অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবস্থান ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সমানাধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছি আমরা। আমরা চাই, নারী ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে আরও গতি আসুক।’
ওই সময় নারী উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম রোকেয়া এ দেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ। নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
‘বেগম রোকেয়ার জীবন ও তার আদর্শ বাস্তবায়ন এদেশের নারী সমাজকে আলোকিত ও আত্মনির্ভরশীল করতে প্রেরণা যোগাবে।’
মন্তব্য