ভারতীয় উপমহাদেশে তান্ত্রিক যৌনতার ইতিহাস বহু পুরোনো। বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে আধুনিক সময়ে এ ধরনের যৌনাচার নিয়ে বিতর্কের অভাব নেই। আধ্যাত্মিকতার আড়ালে ধর্মগুরু বা তান্ত্রিক সাধকেরা এই যৌনতাকে নিজের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যবহার করেন- এমন অভিযোগ অসংখ্য।
এর পরও তান্ত্রিক যৌনতা নিয়ে আগ্রহ আছে অনেকের। পশ্চিমা দেশে এটি নিয়ে গবেষণা-অনুসন্ধান চলছে নিয়মিত। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ভাইস সম্প্রতি এই তান্ত্রিক যৌনতার বিভিন্ন দিক নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। সেটি অনুবাদ করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
তান্ত্রিক যৌনতার জগতের সঙ্গে প্রেম ভিসমাইয়ের পরিচয় বছর দশেক আগে। ভারতের রহস্যের রাজধানী হিসেবে খ্যাত ঋষিকেষে এক ট্র্যান্স পার্টিতে তিনি প্রথম এ সম্বন্ধে জানতে পারেন। ৪৫ বছরের এ তন্ত্র শিক্ষক বলেন, “ওখানে আমাকে একজন মা আনন্দ সারিতার বই ‘ডিভাইন সেক্সুয়ালিটি: দ্য জয় অফ তন্ত্র’ সম্পর্কে জানান। আমার জন্য ওটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট।”
সে সময়টিতে দ্রুত বীর্যপাত নিয়ে ভিসমাই হতাশায় ভুগছিলেন।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমার প্রচণ্ড হতাশা ছিল। তবে তন্ত্র চর্চার পর আমি এই সমস্যা কাটিয়ে উঠি এবং নিজের যৌন জীবনকে উপভোগ করতে শুরু করি। তান্ত্রিক যৌনতায় বহুগামিতা ও উদ্দাম অর্জির (সংঘবদ্ধ বুনো যৌনাচার) বিষয়টি থাকলেও এগুলোই শেষ কথা নয়। আদতে এটি নিজের পথ খুঁজে পেতে নিজের ওপরেই ভরসা রাখার অন্যতম উপায়।’
পশ্চিমে অনেকের কাছে ‘তন্ত্র’ শব্দটি ৭-৮ ঘণ্টা অবিরত যৌনাচারের ধারণা তুলে ধরে। তবে এই চর্চা হাজার বছর ধরে হিন্দু ও বৌদ্ধ মতাদর্শে চলে আসছে এবং এর আরও অনেকগুলো দিক রয়েছে।
অক্সফোর্ড রিসার্চ এনসাইক্লোপিডিয়া অফ রিলিজিয়নের মতে, তন্ত্র এমন একটি পদ্ধতি যার মাঝে নানা ধরনের গূঢ়, আধ্যাত্মিক ও যৌন শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত। এতে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের মিশেল রয়েছে এবং আমাদের মুক্তির উপলব্ধি থেকে আনন্দ, হেডোনিজম (আনন্দকে উচ্চমার্গে পৌঁছানো সংক্রান্ত বিদ্যা) ও মৃত্যু পর্যন্ত সবকিছুর সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। তন্ত্রের বিশাল জগতে যৌনতা একটি বিশেষ অংশ।
৪০ বছর বয়সী তন্ত্র শিক্ষক মোহিনী শ্রীসতীর মতে, প্রচলিত ধারণার বাইরে বেরিয়ে তান্ত্রিক যৌনতাকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এটা আসলেই জাদুকরী ও পরমাকাঙ্ক্ষিত (এক্সোটিক)। তান্ত্রিক যৌনতা হচ্ছে ধ্যানমূলক যৌনতা। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ, বিছানায় নিজের সৃষ্টিশীলতা, শিশুকাল থেকে শিখে আসা যৌনতা ও ধর্মীয় বিষয়গুলো ভুলে যাওয়া এবং নিজের যৌন শক্তিকে ঐশ্বরিক শক্তির সঙ্গে যোগাযোগের একটু মাধ্যম হিসেবে শ্রদ্ধা করার মতো বিষয়গুলোর চর্চা করা হয়।’
মননশীলতার চর্চা থেকে শুরু করে সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা যোগাযোগের মাধ্যমে ইন্দ্রিয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া পর্যন্ত, যৌনতায় ধ্যানশীল, ধীরগতি আনার ধারণাটি তান্ত্রিক যৌনতার কেন্দ্রীয় নীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ভারতীয় উপমহাদেশে তান্ত্রিক যৌনতার ইতিহাস বহু সহস্রাব্দের ও প্রাচীন বৌদ্ধ এবং হিন্দু গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রিটেনের ইন্ডোলজিস্ট (ভারত বিশেষজ্ঞ) জেফ্রি স্যামুয়েল তার বই ‘অরিজিনস অফ ইয়োগা: ইন্ডিজ রিলিজিয়নস টু দ্য থার্টিন্থ সেঞ্চুরি’তে তান্ত্রিক যৌনতাকে ‘সেক্সুয়াল ইয়োগা’ বলে অভিহিত করেছেন, যা তৃতীয় ও পঞ্চম শতাব্দীতে বহুল প্রচলিত ছিল। হিন্দুদের অন্যতম গ্রন্থ উপনিষদেও এ সম্বন্ধে বলা হয়েছে।
তিব্বতের লামা থুবটেন ইয়েশে তার লেখা ‘ইন্ট্রোডাকশন টু তান্ত্রা: দ্য ট্র্যান্সফরমেশন অফ ডিজায়ার’ বইয়ে বলেছেন, তান্ত্রিক যৌনতার মূল ধারণাটি হলো, ‘আকাঙ্ক্ষাগুলোকে পরিপূর্ণ রূপ দেয়া।’
তার মতে, দ্বিতীয় শতাব্দীতে তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্মের অন্তর্ভুক্ত একই ধরনের ভাবনা থেকে এর জন্ম।
ভাইসের প্রতিবেদনে তান্ত্রিক যৌনতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
নকল গুরু থেকে সাবধান
অন্যান্য রহস্যময় ও উত্তুঙ্গ বিষয়ের মতো তান্ত্রিক যৌনতা নিয়েও ব্যবসার পরিমাণ কম নয়। অনেক ‘গুরু’ আছেন যারা বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত অর্থ হাতাতে আগ্রহী। দিল্লির ৩৯ বছর বয়সী যৌনতার প্রশিক্ষক পল্লভি বার্নওয়াল জানান, তান্ত্রিক যৌনতা শিখতে গিয়ে তিনি প্রায় যৌন হয়রানির মুখে পড়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘খুব জনপ্রিয় একজন গুরু ছিলেন। তিনি প্রথম অনলাইন অডিও সেশনে আমাকে আত্ম-সুখের পদ্ধতি হিসেবে বিশেষ এক ধরনের মাস্টারবেশন শেখাতে চান। কয়েক মিনিট পরই আমার অবস্থা জানতে ক্যামেরা অন করতে বলেন।’
বার্নওয়ালের মতে, ভারতের মতো দেশ যেখানে যৌনতা নিয়ে কথা বলা এখনও সহজ নয়, সেখানে এ ধরনের চর্চার ক্ষেত্রে কারও দুর্বলতার সুযোগ নেয়ার মতো অনেকেই আছেন।
তিনি যোগ করেন, ‘একজন সত্যিকারের গুরু কখনোই আপনাকে নগ্ন হয়ে নিজেকে সমর্পণ করতে বলবে না। তান্ত্রিক যৌনতা বোঝার জন্য কোনো গুরুর শয্যাসঙ্গী হতে হবে না।’
ধীরস্থির ও সৃষ্টিশীল হোন
এক দশক ধরে তান্ত্রিক যৌনতার চর্চা করা শ্রীসতীর মতে, দ্রুত সবকিছু করে আপনাকে অর্গাজম অনুভব করতে হবে- এমন ধারণা তন্ত্রর আদর্শের বিপরীত।
তিনি বলেন, ‘তান্ত্রিক যৌনতায় জোর করে বীর্যপাত বা অনুপ্রবেশের কোনো ধারণা নেই। একজন আরেকজনের চোখের দিকে তাকিয়ে বীর্যপাত না ঘটিয়েই অর্গাজমের অনুভূতি পেতে পারেন। মূল বিষয়টি হচ্ছে শুধু যৌনাঙ্গ দিয়ে নয়, ভিন্ন ভিন্ন অর্গাজমের শীর্ষবিন্দুগুলোকে উপভোগ করা।’
অনেকেই ভাবেন, তান্ত্রিক যৌনতার উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্গাজম দীর্ঘায়িত করা, তবে সেটা ঠিক নয়।
শ্রীসতীর বলেন, ‘তেমন হলে বিষয়টি দাঁড়ায় যে দেরিতে অর্গাজম করানোটাই মূল চ্যালেঞ্জ, আর এই চ্যালেঞ্জে আপনাকে জিততে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনার দেহ একেবারে অনমনীয় হয়ে পড়বে।’
ভিসমাইয়ের মতে, যে স্থানে আপনি ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন তাকে ‘শক্তি ও নিরাময়ের ঐশ্বরিক স্থান’ হিসেবে বিবেচনা করাও গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টিকে আরও চটকদার করে তোলার জন্য তিনি পরামর্শ দেন মোমবাতি, ফুল ও হালকা মিউজিক ব্যবহার করতে।
তিনি বলেন, ‘সাদা ও জ্বলজ্বলে লাইট, মোবাইল চার্জার, বিপ করা ঘড়ি বা টাইমার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। তন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনার সমস্ত চেতনাকে যৌনতায় নিয়ে আসা এবং এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের উপদ্রব যেন না আসে।’
সঠিক শক্তি নির্বাচন করা
২৯ বছর বয়সী তন্ত্র শিক্ষক আলেসান্দ্রো দি বেনেদিত্তো বলেন, ‘নিজের শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং নিজের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একাত্ম হওয়াটাই তান্ত্রিক যৌনতার মূলমন্ত্র। কারও সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগে আপনার তার সঙ্গে সংযুক্ত হতে হবে। তার চোখের দিকে তাকান, তাকে বোঝার চেষ্টা করুন ও হাত ধরুন।’
কারও সঙ্গে দেখা হওয়ার পর যদি মনে হয় ছন্দ মিলছে না, তাহলে বেনেদেত্তোর পরামর্শ হলো, সময় নষ্ট না করে এগিয়ে যাওয়া।
তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি আপনার সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করলে এবং একই সঙ্গে অগ্রসর হতে চাইলে আপনি সম্পর্কটি নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে পারেন।’
নিঃশ্বাস ও শব্দ নিয়ে পরীক্ষা করা
তান্ত্রিক যৌনতা শক্তির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করে। আর তাই শ্রীসতীর পরামর্শ, অভিজ্ঞতার সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য নিঃশ্বাস ও শব্দ নিয়ে খেলতে।
তিনি বলেন, ‘এর অনেক উপায় আছে। কান্না হোক, হাহাকার হোক বা ভিন্ন ভিন্ন পজিশন হোক, নিজেকে ওই মুহূর্তে একেবারে উন্মুক্ত করে দিয়ে অভিজ্ঞতা নিতে হবে। অবস্থান, নিঃশ্বাস ও শব্দ নিয়ে নিরীক্ষা করতে হবে।’
শ্রীসতীর মতে, তান্ত্রিক যৌনতায় শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে নিঃশ্বাস খুব গুরুত্বপূর্ণ এক অস্ত্র।
তিনি বলেন, ‘নারীদের কল্পনা করতে হবে, আপনি আপনার যৌনতার চক্র থেকে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন এবং হৃদয় চক্র দিয়ে তা ছাড়ছেন। পুরুষদের জন্যও ঠিক একই ব্যাপার। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে যৌন শক্তির প্রতিটি ক্ষুদ্রাংশকে আপনার ভেতরে প্রবাহিত করা। আপনার দেহের প্রতিটি বিন্দু ভালোবাসার কাজে নিযুক্ত, আর তাই এটি আপনার পূর্ণ দৈহিক অর্গাজমে সাহায্য করে।’
তান্ত্রিক যৌনতায় বলা হয়ে থাকে, যৌনতা বা পবিত্রতার চক্র নাভির নিচে অবস্থিত, আর হৃদয় চক্র অবস্থিত হৃৎপিণ্ডে। নিজের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসকে এ চক্রগুলোর ভেতরে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার কল্পনা আপনার অভিজ্ঞতাকে পূর্ণতা দেবে।
শৈশবের শিক্ষাকে ভুলে যাওয়া
২৮ বছর বয়সী বিজনেস অ্যানালিস্ট আনন্দ কুমার বছর দুয়েক ধরে তান্ত্রিক যৌনতার চর্চা করছেন। তিনি জানান, লজ্জা ও আত্মসম্মান বিষয়ে পাওয়া শৈশবের শিক্ষা ভুলতে গুরুর সঙ্গে তাকে বাড়তি কাজ করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় আমার দেহকে একটা রাজনৈতিক ক্ষেত্র হিসেবে দেখে এসেছি, যার সঙ্গে অসংখ্য শর্ত জড়িত ছিল। আমার দেহের রোমশভাবের কারণে ছোট ভাইবোনেরা আমাকে খ্যাপাত। আমি বহু বছর এ নিয়ে বিরক্ত ছিলাম। তবে তান্ত্রিক যৌনতা আমাকে নিজ দেহকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।’
শ্রীসতী বলেন, ‘ছোটকালে নিজের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করলেও মা-বাবারা লজ্জা দেন। যে কারণে অনেকেই বড় হওয়ার পর মাস্টারবেশন বা আত্ম-সুখের অন্য কোনো প্রক্রিয়ার পরই অপরাধবোধে ভোগেন।’
শ্রীসতীর মতে, তান্ত্রিক যৌনতার অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে মানসিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা বিষয়গুলোকে ভুলে যাওয়া।
আসন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
বার্নওয়াল তান্ত্রিক যৌনতার সময় ‘ইয়াব-ইউম’ আসন পছন্দ করেন। এ অবস্থানে নারী তার সঙ্গীর কোলে বসে পা দিয়ে পুরুষকে শক্তভাবে পদ্মফুলের মতো আঁকড়ে ধরেন। ঐতিহ্যগতভাবে এটাই এ আসনের বর্ণনা, তবে যেকোনো লিঙ্গের সঙ্গীর সঙ্গেই এটি করা যেতে পারে।
বার্নওয়াল বলেন, ‘এ আসনে আপনার সঙ্গীর চক্রের সঙ্গে আপনার চক্র একেবারে মিলে যায়। শারীরিকভাবে আপনারা একে অপরের কপাল, হৃদয় ও যৌনাঙ্গ স্পর্শ করছেন। এ ঘনিষ্ঠ সংযোগ সারা শরীরে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।’
ভিসমাই যোগ করেন, তান্ত্রিক যৌনতায় কোনো ধরনের ‘অ্যাক্রোবেটিক পজিশন’ নেই। পুরো প্রক্রিয়াটাই নিজের মনের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেহের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার বিষয়।
তিনি বলেন, ‘ওশোকে (বিতর্কিত আধ্যাত্মিক গুরু) এক আলোচনায় বলতে শুনেছি যে শরীর তার পছন্দের অবস্থান নিজেই খুঁজে নেবে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভালোবাসার মধ্যে শান্তি ও প্রার্থনার ধারণা নিয়ে আসা। এটা এমন কোনো যান্ত্রিক বিষয় নয় যে সবগুলো শর্ত পূরণ করতেই হবে।’
আরও পড়ুন:সারা দেশে গত পাঁচ দিন ধরে ইন্টারনেটে ধীরগতি পাচ্ছেন গ্রাহকরা। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় স্থাপিত সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগে এই বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি)। তবে সহসাই ইন্টারনেটের স্বাভাবিক গতি ফিরছে না। ধীরগতির এই পরিস্থিতি চলতে পারে আরও এক মাস।
বিএসসিপিএলসি বলছে, ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় সমুদ্রের তলদেশে ফাইবার ক্যাবল কাটা পড়েছে। সেখানে মেরামতের কাজ চলছে। মেরামত শেষ হতে পাঁচ সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মে মাসের শেষ নাগাদ সংযোগ স্বাভাবিক হতে পারে।
জানা গেছে, ১৯ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে সারা দেশে ইন্টারনেটে ধীরগতি দেখা দেয়। বিএসসিপিএলসি জানতে পারে সিঙ্গাপুরে জলসীমায় কোথাও ফাইবার ক্যাবল কাটা পড়েছে।
পরে আরও অনুসন্ধানে জানা যায় সিঙ্গাপুর নয়, ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় সমুদ্রের তলদেশে ক্যাবল ‘ব্রেক’ করেছে। এতে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের (সিমিউই-৫) সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
বিএসসিপিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহমেদ জানান, সিমিউই-৫ (দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল) দিয়ে বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথড সরবরাহ হয়। সেটা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (চালনা ও রক্ষণ) সাইদুর রহমান জানান, মূলত ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্র এলাকায় সিমিউই-৫ ক্যাবলটি ব্রেক করেছে। তারা এটা মেরামতে কাজ করছে। আগামী মাস অর্থাৎ, মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শেষ অথবা চতুর্থ সপ্তাহ নাগাদ কাজ শেষ হতে পারে।
ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) মহাসচিব নাজমুল করিম ভুঁইয়া চাহিদা অনযায়ী ব্যান্ডউইথড সরবরাহে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যতদূর জেনেছি, এখনও কাজ শুরুই হয়নি। কনসোর্টিয়ামের কোনো জাহাজ না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। জাহাজ পাওয়ার পর হয়তো কাজ শুরু হবে। তার মানে আমরা একটা বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি।’
নাজমুল করিম আরও বলেন, ‘গত ৪-৫ দিন ধরে গ্রাহকরা আমাদের অনবরত ফোন করছেন, খোঁজ নিচ্ছেন। ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে সফটওয়্যার নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা বিপাকে পড়েছেন। ফ্রিল্যান্সাররাও এ নিয়ে আতঙ্কিত। সরকার এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা আমাদের।’
এক হাজার ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথড সরবরাহ করা দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগ এখন পুরোপুরি বন্ধ। শুধু প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে ৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথড সরবরাহে রয়েছে। এত বিশালসংখ্যক গ্রাহকের ইন্টারনেট সেবা তাহলে কীভাবে চলছে- এমন প্রশ্ন অনেকের।
বিএসসিপিএলসি সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মোট ব্যান্ডউইথডের ব্যবহার পাঁচ হাজার জিবিপিএসের বেশি। এর অর্ধেকেরও বেশি প্রায় ২ হাজার ৭০০ জিবিপিএস আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) লাইসেন্সের মাধ্যমে আসে, যা ভারত থেকে স্থলপথে ব্যান্ডউইথড আমদানি করতে ব্যবহৃত হয়।
বাকি দু’হাজার ৪০০ জিবিপিএসের মতো ব্যান্ডউইথড সরবরাহ করে বিএসসিপিএলসি। দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এই ব্যান্ডউইথড সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য-পশ্চিম ইউরোপ-৪ (সিমিউই-৪) কনসোর্টিয়ামের সদস্য। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হয়েছিল। এর ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজারে। এটি প্রায় ৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথড সরবরাহ করে থাকে।
অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সিমিউই-৫ ঢুকেছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা হয়ে। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় হাজার ৬০০ জিবিপিএস। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যান্ডউইথড প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে শিফটিং হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিএসসিপিএলসির মহাব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিকল্প অনেক উপায় রয়েছে। সেগুলো কার্যকর করা হচ্ছে। যদিও সব বিকল্প উপায় পুরোপুরি এখনও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এমনকি প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল যেটি সিমিউই-৪ নামে পরিচিত, সেটির পুরো ব্যান্ডউইথড বহনের সক্ষমতা রয়েছে। তবে এজন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বাড়তি খরচ দিতে হবে। এটা ছাড়া আরও কিছু বিকল্প রয়েছে। সেগুলো নিয়েও কাজ চলছে।’
আরও পড়ুন:দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের (সিমিউই-৫) সংযোগ সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার রাত ১২টার পর এই সমস্যা শুরু হয়েছে। এর ফলে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানসহ গ্রাহকেরা ইন্টারনেটে ধীরগতি পাচ্ছেন।
এর আগে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল এক ঘণ্টা বন্ধ থাকার কথা বলেছিল বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল পিএলসি।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, শুক্রবার রাত ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কুয়াকাটায় দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল (সিমিউই-৫) রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলবে। এ সময় দেশের ইন্টারসেবায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যান্ডউইডথ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি) জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরে ফাইবার কেবল ‘ব্রেক’ করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহমেদ বলেন, সিমিউই-৫ দিয়ে দেশে ১ হাজার ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ হয়। কিন্তু এর পুরোটাই এখন বন্ধ আছে। আমরা চেষ্টা করছি, সিমিউই-৪ (প্রথম সাবমেরিন কেবল) দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করতে। সিঙ্গাপুরে ফাইবার কেবল ব্রেক করায় বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দেশে একই অবস্থা তৈরি হয়েছে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, ‘গ্রাহকেরা ফোন করে ইন্টারনেট সেবায় ধীরগতির অভিযোগ করছেন।’
আরও পড়ুন:সংবাদ ও রাজনৈতিক বিষয়বস্তুকে ভবিষ্যতে কম গুরুত্ব দেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য ফেসবুকে খবর প্রচার বন্ধ করবে মেটা। গত বছর যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিতে ফিচারটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
ফেসবুকে ২০১৯ সালে চালু হওয়া নিউজ ট্যাবটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি ছোট ও স্থানীয় প্রকাশনার শিরোনামগুলোও ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহার করেছে।
মেটা বলছে, ব্যবহারকারীরা সংবাদ নিবন্ধের লিংক দেখতে সক্ষম হবেন। সংবাদ সংস্থাগুলো তাদের লেখা ও ওয়েবসাইট লিঙ্ক পোস্ট ও প্রচার করতে পারবে, যেমন অন্য কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা ফেসবুকে করতে পারে।
ভুল তথ্য কীভাবে ছড়ানো হয় এবং এটি রাজনৈতিক মেরুকরণে অবদান রাখে কি না, তা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে সমালোচনার পর মেটা তার প্ল্যাটফর্মগুলোতে সংবাদ ও রাজনৈতিক উপাদান কমানোর চেষ্টার পর এই পরিবর্তন আসছে।
মেটার মুখপাত্র ড্যানি লিভার বলেছেন, ‘এই পরিবর্তন গ্রাহকের ফলো করা অ্যাকাউন্টের পোস্টে প্রভাব ফেলবে না। এটি সিস্টেমের সুপারিশগুলোকে প্রভাবিত করবে এবং ব্যবহারকারীরা যদি আরও চায়, তবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
‘ঘোষণাটি এমন সময় আসছে, যখন ব্যবহারকারীরা বছরের পর বছর আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল যে, আমরা কীভাবে রাজনৈতিক বিষয়বস্তুগুলো পরিচালনা করি তার উপর ভিত্তি করে।’
মেটার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিউজ ট্যাবে এই পরিবর্তন তাদের ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ক এবং ভুল তথ্যের পর্যালোচনায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে ভুল তথ্য প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েই গেছে। বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতা চলছে।
কর্নেল ব্রুকস স্কুল অফ পাবলিক পলিসির টেক পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও প্রযুক্তি বিষয়ক নীতি গবেষক সারাহ ক্রেপস বলেছেন, ‘ফেসবুক নিজেকে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে মনে করে না, এটি চালান প্রযুক্তিবিদরা। তারপর হঠাৎ তারা এ বিষয়ে মূল্যায়ন শুরু করে এবং নিজেদের রাজনীতিতে নিমজ্জিত দেখতে পান। ফলে তারা নিজেরাই শিরোনাম হয়ে ওঠেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এই বছর অনেকগুলো বড় নির্বাচন আসছে। ফলে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ফেসবুক রাজনীতি থেকে আরও এক ধাপ দূরে সরে যাচ্ছে। অসাবধানতাবশত নিজেরাই যাতে রাজনৈতিক শিরোনাম হয়, তার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত।’
পয়েন্টারের মিডিয়া বিশ্লেষক রিক অ্যাডমন্ডস বলেন, ‘নিউজ ট্যাবের বিলুপ্তি সংবাদ সংস্থাগুলোর জন্য আশ্চর্যজনক নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের ওয়েবসাইটগুলোতে ফেসবুক ট্র্যাফিক হ্রাস পাচ্ছে। ফলে সংস্থাগুলোকে দর্শকদের আকৃষ্ট করার অনুসন্ধান ও নিউজলেটারের মতো অন্যান্য উপায়গুলোতে মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত করছে।’
অ্যাডমন্ডস বলেন, ‘আমি বলব আপনি যদি খেয়াল করতেন, তাহলে আপনি দেখতে পেতেন যে, এটি আসছে। তবে এটি সংবাদ ব্যবসার জন্য আরও একটি দুঃসংবাদ।’
মেটা জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীরা তাদের ফেসবুক ফিডে যা দেখেন, তার চেয়ে তিন শতাংশেরও কম সংবাদ তৈরি হয়। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক সংবাদ ব্যবহারকারীর সংখ্যা গত বছর ৮০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে।
তবে ২০২৩ সালের পিউ রিসার্চ স্টাডি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের অর্ধেক অন্তত মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে খবর পান। ফেসবুকের মতো একটি প্ল্যাটফর্ম অন্যান্য মাধ্যমকে সেখানে ছাড়িয়ে গেছে।
পিউ জানিয়েছে, প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের মধ্যে তিনজন বলেছেন যে, তারা নিয়মিত ফেসবুক থেকে খবর পান এবং ১৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক বলেছেন যে, তারা নিয়মিত ইনস্টাগ্রাম থেকে খবর পান। এ দুই মাধ্যমেরই মালিকানা মেটার।
ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা সম্প্রতি ব্যবহারকারীদের অনুসরণ করেন না, এমন অ্যাকাউন্টগুলোতে পোস্ট করা রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর ‘সক্রিয়ভাবে’ সুপারিশ করা বন্ধ করার জন্য অ্যাপটির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কারণ, ফিল্টার বন্ধ করার অপশন সবসময় ইউজার সেটিংসে থাকলেও মেটা যে এই পরিবর্তন করেছে তা অনেকেই জানতেন না।
আরও পড়ুন:ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বাধীন মেটার প্ল্যাটফর্মগুলো স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব এবং অ্যামাজন ব্যবহারকারীদের তথ্য গোপনে নজরদারি করছে বলে অভিযোগ করে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চের বরাত দিয়ে বুধবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুক ২০১৬ সালে ‘ঘোস্টবাস্টারস’ নামে একটি গোপন প্রজেক্ট চালু করেছিল যাতে স্ন্যাপচ্যাট ও এর সার্ভার ব্যবহারকারীদের মধ্যে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক এনক্রিপ্ট এবং ডিক্রিপ্ট করা যায়।
স্ন্যাপচ্যাটের ভূতের (ঘোস্ট) মতো লোগোর সঙ্গে মিল রেখে ফেসবুক এটির নাম দিয়েছে ‘প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারস’।
আদালতের নথি অনুসারে, ঘোস্টবাস্টারস প্রজেক্টটি স্ন্যাপচ্যাটের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন ও ব্যবহারকারীর আচরণ বোঝার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
নথিতে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করা সে সময়ের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক ইমেইলগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১৬ সালের জুনে মার্ক এমন একটি ইমেইলে বলেন, স্ন্যাপচ্যাট তাদের সিস্টেম এনক্রিপট (যে পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য গোপন কোডে রূপান্তরিত হয় যা তথ্যের প্রকৃত অর্থ লুকিয়ে রাখে) করার কারণে অ্যাপটির অভ্যন্তরীণ কোনো তথ্য ফেসবুকের কাছে নেই।
তাই তাদের সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে একটি নতুন উপায় বের করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন মার্ক। এর জন্য একটি কাস্টম সফটওয়্যার তৈরির কথা জানান তিনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে ফেসবুকের প্রকৌশলীরা ঘোস্টবাস্টারস তৈরি করেন। পরে অ্যামাজন এবং ইউটিউবকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রকল্পটি প্রসারিত করা হয়ে।
ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতের তথ্য অনুসারে, ফেসবুকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের একটি দল এবং প্রায় ৪১ জন আইনজীবী প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারে কাজ করেছেন, তবে ফেসবুকের কিছু কর্মী এ প্রকল্পের বিপক্ষে ছিলেন। তারা এটি নিয়ে তাদের উদ্বেগও প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন:শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ইনফিনিক্স তাদের নতুন স্মার্টফোন লাইনআপে যুক্ত করেছে যুগান্তকারী নতুন ফিচার ‘ম্যাগচার্জ’।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার এফ-ওয়ান ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক আয়োজনে নতুন নোট ৪০ সিরিজ উদ্বোধন করে করে ব্র্যান্ডটি। সেই আয়োজনেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ম্যাগনেটিক চার্জিং ফিচারের যাত্রা শুরুর কথা জানায় ইনফিনিক্স।
ম্যাগচার্জের মতো চার্জিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বাজারে এই প্রথম। এ প্রযুক্তি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে আশা করছে ইনফিনিক্স।
ম্যাগনেটিক চার্জিংয়ের সুবিধাজনক ব্যবহার নিশ্চিত করতে নোট ৪০ সিরিজের সঙ্গে আছে ইনফিনিক্সের ম্যাগকিট। এ কিটে ফোনের ব্যাককাভার হিসেবে দেয়া হয়েছে ম্যাগকেস। এর সঙ্গে আরও আছে ম্যাগনেটিক চার্জিং প্যাড ম্যাগপ্যাড এবং ম্যাগনেটিক পাওয়ার ব্যাংক ম্যাগপাওয়ার।
ইনফিনিক্সের নতুন নোট ৪০ সিরিজের নোট ৪০, নোট ৪০ প্রো, নোট ৪০ প্রো ফাইভজি এবং অত্যাধুনিক নোট ৪০ প্রো+ ফাইভজি স্মার্টফোনগুলোতে পাওয়া যাবে ম্যাগচার্জ ফিচারটি।
এবারের সিরিজটিতে দেয়া হয়েছে ইনফিনিক্সের অল-রাউন্ড ফাস্টচার্জ ২.০ প্রযুক্তি, ১০০ ওয়াট পর্যন্ত মাল্টি-স্পিড ফাস্টচার্জ এবং ২০ ওয়াটের ওয়্যারলেস ম্যাগচার্জ। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চার্জিং মোড ব্যবহার করতে একটি কাস্টম চিপ দেয়া হয়েছে এ সিরিজের ফোনগুলোতে।
উন্নত ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতার জন্য নোট ৪০ সিরিজে আছে ১২০ হার্টজের প্রাণবন্ত থ্রিডি-কার্ভড অ্যামোলেড ডিসপ্লে। প্রধান ক্যামেরা হিসেবে সিরিজটিতে আছে ওআইএস সাপোর্টসহ শক্তিশালী ১০৮ মেগাপিক্সেলের সুপার-জুম ক্যামেরা সিস্টেম। এ ছাড়াও ফোনের পেছনের অংশ থেকে বিশেষ ধরনের লাইটিংয়ের জন্য এতে যুক্ত করা হয়েছে অ্যাকটিভ হ্যালো লাইটিংয়ের মতো এআই প্রযুক্তি।
ইনফিনিক্সের নতুন এ স্মার্টফোন সিরিজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রোডাক্ট ডিরেক্টর উইকি নিইয়ে বলেন, ‘ইনফিনিক্স নোট ৪০ সিরিজ বাজারে আনার মাধ্যমে চার্জিং প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। চার্জিংয়ের অভিজ্ঞতাকেই বদলে দেবে এই সিরিজ। ‘এ ছাড়াও আমাদের নিজস্ব চিপ চিতা এক্স১-এর মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে অলরাউন্ড ফাস্টচার্জ। এখন এতে আছে মাল্টি-স্পিড চার্জিং এবং এক্সট্রিম টেম্পারেচার চার্জিংয়ের মতো ফিচার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবনী ম্যাগচার্জ অ্যাক্সেসরি কিট ফোন ব্যবহারকারীদের দেবে নিরবচ্ছিন্ন চার্জিং ইকোসিস্টেম। এসব অগ্রগতির ফলে ব্যবহারকারীরা সারা দিন যেকোনো পরিস্থিতি ও আবহাওয়ায় পাওয়ারড-আপ থাকতে পারবেন।’
গত বছর অল-রাউন্ড ফাস্টচার্জ প্রযুক্তিসহ নোট ৩০ সিরিজ বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে আসে ইনফিনিক্স। সিরিজটিতে আছে ৬৮ ওয়াটের ওয়্যারড চার্জিং এবং ১৫ ওয়াটের ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাদার বোর্ডে সরাসরি চার্জ নেয়ার জন্য এতে আছে বাইপাস চার্জিং এবং আইফোন সেভার হিসেবে পরিচিত ওয়্যারলেস রিভার্স চার্জিং প্রযুক্তি।
চার্জিং, লুক ও পারফরম্যান্সে অভূতপূর্ব আপডেট নিয়ে এখন বাংলাদেশের বাজারে আসার অপেক্ষায় আছে নোট ৪০ সিরিজ। নতুন এ নোট সিরিজের জন্য শুরু হয়ে গেছে প্রি-বুকিংও।
আরও পড়ুন:প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবী পাল্টাচ্ছে প্রতিদিন। বর্তমান সময়ে যেকোনো কাজ, শিক্ষা কিংবা বিনোদনের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ল্যাপটপের ব্যবহার। আধুনিক জীবনের সব রকমের প্রয়োজন মেটাতে ক্রমাগত আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে এসব ডিভাইস।
ফলে যত বেশি কাজ, তাপও উৎপন্ন হচ্ছে সেই হারে। এই তাপ কমাতে সাধারণত পোর্টেবল কুলিং ফ্যান ব্যবহার করা হয়। এভাবে বাহ্যিক তাপ কমানো গেলেও ল্যাপটপের ভেতরে আটকে পড়া তাপ নিয়ে চিন্তা থেকেই যায়।
তবে ল্যাপটপেই যদি একটি শক্তিশালী কুলিং সিস্টেম থাকে, তাহলে বাহ্যিক কুলিং ফ্যানের আর প্রয়োজন হয় না। বিষয়টি মাথায় রেখে গত বছর ইনবুক সিরিজের এক্স২ ল্যাপটপ বাজারে আনে ইনফিনিক্স। এই ল্যাপটপের ভেতরে আছে আইস স্টর্ম ১.০ নামক কুলিং প্রযুক্তি। এটি ল্যাপটপে একটি আদর্শ তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্যে করে। আইস স্টর্ম কুলিং সিস্টেম তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে মিলিটারি-গ্রেডের বায়ু চলাচল ব্যবস্থা। গেমিংসহ অন্যান্য কাজ কিংবা বিনোদনের সময় যা নিঃশব্দে পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে।
ইনফিনিক্সের এই প্রযুক্তিটি ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেমের গুরুত্ব তুলে ধরে। ল্যাপটপ কিংবা এর ব্যবহারকারী, উভয়ক্ষেত্রেই এর প্রভাব রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক, কীভাবে কার্যকর কুলিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের কাজে আসে এবং এর মাধ্যমে কী কী সমস্যার সমাধান হয়?
পারফরম্যান্স
ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে প্রথম সমস্যা হয় এর পারফরম্যান্সে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ল্যাপটপের কাজের মান ও গতি কমে যায় এবং ল্যাগ সৃষ্টি হয়। একে থার্মাল থ্রটলিং বলে। কার্যকর কুলিং সিস্টেম দ্রুত এই তাপমাত্রা কমিয়ে এনে নিরবচ্ছিন্নভাবে উন্নত পারফরম্যান্সের লেভেল বজায় রাখতে পারে। ফলে মাল্টিটাস্কিং করা সহজ হয়, সফটওয়্যারগুলো দ্রুত কাজ করে এবং ব্যবহারকারীদের সামগ্রিক অভিজ্ঞতাও ভালো হয়।
স্থায়িত্ব ও জীবনকাল
ল্যাপটপের সিপিউ ও জিপিউ’র মতো অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলো বেশ তাপ সংবেদনশীল। সময়ের সঙ্গে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এসব উপাদানের ক্ষতি হয়। এতে ডিভাইসের নির্ভরযোগ্যতা কমে যায় এবং জীবনকালও সংক্ষিপ্ত হয়ে আসে। এক্ষেত্রে একটি ভালো কুলিং সিস্টেম দক্ষতার সঙ্গে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে অকালে হার্ডওয়্যার নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এমন সক্রিয় ব্যবস্থা ল্যাপটপের জীবনকাল বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের আর্থিক লোকসানও কমিয়ে আনে।
পরিবেশবান্ধব
তাপমাত্রা বেশি হলে ফ্যানকে আরও বেশি কাজ করতে হয়, ফলে আরও বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। ল্যাপটপে সার্বক্ষণিক ফ্যানের ব্যবহার কমিয়ে কার্যকরভাবে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে উন্নত কুলিং সিস্টেম। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়, বিদ্যুৎ বিল কমে আসে এবং পরিবেশের সুরক্ষা হয়।
স্বস্তি এবং স্বাস্থ্য
ডিভাইসের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ল্যাপটপ ব্যবহার করা খুবই অস্বস্তিকর। বিশেষভাবে, যখন কোলের উপর রেখে ব্যবহার করতে হয় তা অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তোলে। দীর্ঘ সময় এভাবে ল্যাপটপ ব্যবহার করলে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ত্বক পুড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও, ফ্যান অতিরিক্ত শব্দ করলে তা ব্যবহারকারীর মনোযোগেও বিঘ্ন ঘটায়। ল্যাপটপ ঠান্ডা রেখে নিঃশব্দে কার্যক্রম বজায় রাখার মাধ্যমে এসব ঝুঁকি কমিয়ে আনে আইস স্টর্ম ১.০-এর মতো অত্যাধুনিক কুলিং সিস্টেমগুলো।
তাই ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেম শুধু ডিভাইসের পারফরম্যান্স ও জীবনকালের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং ব্যবহারকারীর স্বস্তি, সুস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্যও এটি জরুরি।
ইনফিনিক্সের ইনবুক সিরিজের এক্স২ এবং ওয়াই২ প্লাস ল্যাপটপ দেশজুড়ে রায়ানস, স্টারটেক ও দারাজের মতো অনুমোদিত রিটেইলারদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে। ১৪ থেকে ২০ মার্চ রায়ানস-এর ব্র্যান্ড উইক চলাকালীন ইনফিনিক্স ল্যাপটপ কিনলেই ক্রেতারা পাবেন একটি পাওয়ার ব্যাংক, একটি মাউস প্যাড এবং ১০০০ টাকার শপিং ভাউচার।
আরও পড়ুন:হঠাৎ করেই যেন রাতের অন্ধকার নেমে এসেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারীদের জীবনে। আচমকা বিভ্রাটে পড়ে ভীত হয়ে পড়েন অনেকে।
তবে শেষ পর্যন্ত জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নন, বরং ক্ষতির মুখে পড়েছিল কর্তৃপক্ষ। আর এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সময়ও নিতে হয়েছে বেশ।
এমন অবস্থায় ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম বন্ধ থাকায় কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে মূল প্রতিষ্ঠান মেটা, তা নিয়ে সূত্রের বরাতে তথ্য দিয়েছে সংবাদ প্রতিদিন।
প্রতিবেদন বলছে, প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বিভ্রাটে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে মেটা। সবমিলিয়ে ৩ বিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে আচমকাই অকেজো হয়ে পড়ে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ইউজারদের অ্যাকাউন্ট নিজে থেকেই লগ আউট হয়ে যায়।
পরে অবশ্য এক্সে এসে মার্ক জাকারবার্গ জানান, সার্ভার ডাউন। সেই কারণেই কাজ করছে না মেটার দুই প্ল্যাটফর্ম। তবে দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।
এর পরই মাস্ককে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, ইলন মাস্কও অবাক হয়ে যাবেন এই ভেবে যে এক্স হ্যান্ডেলে আচমকা এত ভিড় কেন?
পাল্টা জবাব দিয়েছেন এক্সের মালিক মাস্কও। তিনি লেখেন, এই প্ল্যাটফর্মে এই ধরনের মেসেজ লেখা যাচ্ছে, সবাই তা দেখতে পাচ্ছে। কারণ আমাদের সার্ভার খুব ভালো চলছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য