রসুন এমন একটি খাদ্য উপাদান, যার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। ঔষধি হিসেবে রসুনের রয়েছে অনন্য কিছু কার্যকারিতা। ফ্যাক্টি হেলথ সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে রসুনের আশ্চর্য কিছু গুণের কথা।
জানা যায়, রসুনে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিসেপটিক উপাদান। এ ছাড়া রসুন থেকে ভিটামিন সি, বি-৬, সেলেনিয়াম, কপার ও জিঙ্কের মতো উপাদানও পাওয়া যায়। চলুন রসুনের কিছু উপকারিতার কথা জেনে নেয়া যাক।
রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়
আপনার যদি সাধারণ জ্বর বা সর্দি-কাশিতে ভোগার সমস্যা থাকে, সে ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ওষুধ হলো খাবারে রসুন রাখা।
১২ সপ্তাহের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষ প্রতিদিন অন্তত ২.৫৬ গ্রাম রসুন খেয়েছেন, তারা এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হয়নি। এমনকি অন্যান্য সাধারণ অসুখ-বিসুখও তাদের আক্রান্ত করতে পারেনি।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যা সৃষ্টির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে উচ্চ রক্তচাপ। এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে রসুন ওষুধের ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত খাদ্যে রসুনের উপস্থিতি আপনার হৃদরোগসহ হাইপারটেনশনের মতো অন্যান্য সমস্যা দূরে রাখবে।
চুল পড়া কমায়
বিভিন্ন কারণে চুল পড়ার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। এর পেছনে খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশ অনেকাংশে দায়ী। এসব সমস্যা এড়াতে রসুন ব্যবহার করা যেতে পারে। নিয়ম করে চুলের গোড়ায় রসুনের পেস্ট লাগালে চুলের গোড়া মজবুত হওয়ার পাশাপাশি নতুন চুলও গজায়।
তেল হালকা গরম করে রসুন মিশিয়ে মাথায় মালিশ করলেও উপকার পাওয়া যাবে। তবে এসবের পর অবশ্যই শ্যাম্পু করা জরুরি।
খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
মানুষের দেহে খারাপ এবং ভালো দুই ধরনের কোলেস্টেরল থাকতে পারে। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া বিপদের লক্ষণ। তবে রসুন খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
কোলেস্টেরলজনিত সমস্যায় ভুগলে নিয়মিত রসুন খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।
ব্রণ থেকে মুক্তি দেয়
রসুনে প্রচুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিসেপটিক উপাদান থাকে। এসব উপাদান ব্রণের সমস্যা থেকে ত্বককে মুক্ত রাখে।
মুখভর্তি ব্রণ থাকলে রসুনের পেস্ট বানিয়ে তার ওপর লাগিয়ে রাখুন। সঙ্গে অল্প পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিলে উপকার পাওয়া যাবে।
মধু ও রসুনের এই পেস্ট ব্রণ উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস করে। পাশাপাশি দ্রুত ব্রণ শুকাতে সহায়তা করবে।
তারুণ্য ধরে রাখে
প্রতিদিন খালি পেটে এক কোয়া রসুন খান। এটিই হতে পারে আপনার তারুণ্য ধরে রাখার অন্যতম উপায়। রসুনের সঙ্গে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি বার্ধক্যজনিত সব সমস্যা থেকে শরীরকে মুক্ত রাখবে।
কল্পনা করুন, আপনি বছরের পর বছর ধরে একটি নির্দিষ্ট পথে হাঁটছেন। এ পথ আপনি ভালোভাবে চেনেন, পথও আপনাকে চেনে।
হঠাৎ সেই পথ বদলে নতুন একটি কঠিন রাস্তায় হাঁটা শুরু করলেন, যার জন্য আপনি প্রস্তুত নন। এ নতুন রাস্তা সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা নেই। কোথাও ভাঙা আছে, ডাকাত আছে, ময়লা পানি জমে আছে ইত্যাদি।
যেহেতু আপনি শুনেছেন কেউ একজন এ পথে গিয়েছে, আপনিও যাওয়া শুরু করলেন প্রস্তুতি ছাড়াই। ব্যাপারটাতে অনেক ঝুঁকি আছে, যা আপনি না নিলেও পারতেন।
আপনার শরীরও ঠিক তেমন। ওজন কমানোর প্রয়াসে, দীর্ঘদিনের কার্বোহাইড্রেটভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস থেকে হঠাৎ কিটো ডায়েটে চলে যান, এর নানান রকম কঠিন ঝুকি আছে। স্বাস্থ্য কমাতে জীবনটাই যদি হারিয়ে ফেলেন, সেটা কি ভেবে দেখেছেন?
কিটো ডায়েট মূলত উচ্চ ফ্যাট, কম কার্বোহাইড্রেট এবং মাঝারি প্রোটিননির্ভর খাদ্যাভ্যাস। এটা শরীরের জন্য কার্যকর হতে পারে, কিন্তু পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া এটি বিশাল ক্ষতির কারণও হতে পারে। একটু দেখা যাক ক্ষতিটা কীভাবে হতে পারে।
আপনি যখন কিটো ডায়েট শুরু করবেন, শরীরে কার্বোহাইড্রেট আকস্মিকভাবে হ্রাস পায়। শরীর তখন গ্লুকোজের পরিবর্তে কেটোন ব্যবহার করতে শুরু করে। এ রূপান্তরের প্রথম ধাপেই শরীরে দেখা দেবে ‘কিটো ফ্লু’। মানে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব এবং পেশির টান, শরীর যেন বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
শরীর শুধু শক্তির জন্যই নয়, হজমের প্রক্রিয়াতেও দীর্ঘদিনের অভ্যাসে অভ্যস্ত। কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি মানে হলো কম ফাইবার, যা কোষ্ঠকাঠিন্য, ফাঁপা পেট বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যার জন্ম দেয়। আপনার পরিপাকতন্ত্র, যা এতদিন ফলমূল, শস্য, আর শাকসবজি থেকে পুষ্টি পেয়েছে, হঠাৎ তা থেকে বঞ্চিত হয়ে হজমের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে।
কিটো ডায়েটের সীমাবদ্ধ খাবারের তালিকা শরীরে ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং বি ভিটামিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতি ঘটায়। দীর্ঘদিন এভাবে চললে শরীর দুর্বল হতে শুরু করে। হাড়ের ক্ষয়, ক্লান্তি আর ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা ধীরে ধীরে প্রকট হয়ে ওঠে।
কিটো ডায়েটের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো কিডনির ওপর চাপ। যদি প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাহলে কিডনি অতিরিক্ত নাইট্রোজেন বের করতে হিমশিম খায়। যারা আগে থেকেই কিডনি সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
আর হৃদরোগ? উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ যদি সুষম না হয়, তবে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।
কিটো ডায়েট শুধু শারীরিক নয়, মানসিক দিক থেকেও চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। আমরা সামাজিক জীব। খাবার নিয়ে আমাদের উৎসব আর বন্ধনের অনুভূতি জড়িত। কিটো ডায়েটের কঠোর নিয়ম এ সামাজিক সংযোগে একটি অদৃশ্য দেয়াল তুলে দেয়। এতে মানসিক চাপ, খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা, এমনকি খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে।
শরীর আর মন শুধু বর্তমানের সঙ্গে নয়, অতীতের অভ্যাসের সঙ্গেও যুক্ত। যখন দীর্ঘদিনের অভ্যাসকে হঠাৎ বদলে দেওয়া হয়, তখন শরীরের প্রতিক্রিয়া হতে পারে ধীরে ধীরে।
কিটো ডায়েট বন্ধ করার পর হঠাৎ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ শুরু করলে ওজন দ্রুত বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। শরীর পানি আর কার্বোহাইড্রেট ধরে রাখে, যা অতিরিক্ত চর্বি হিসেবে জমা হয়।
তাহলে সমাধান কী? এ পথ ধরতে হলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। কিটো ডায়েট হোক বা অন্য কোনো বড় পরিবর্তন, শুরু করার আগে শরীর আর মনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন জরুরি। ধীরে ধীরে কার্বোহাইড্রেট কমানো, সুষম ফ্যাট গ্রহণ করা এবং শরীরের সংকেতগুলো বোঝার মতো ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো ধীরে ধীরে এগিয়ে নিতে হবে সম্পূর্ণ রুপান্তরের আগে।
খাবার শুধুই শরীরের জন্য জ্বালানি নয়, এটি জীবনের অংশ। প্রতিটি পরিবর্তনে, বিশেষত এমন একটি চ্যালেঞ্জিং ডায়েটে, আপনার শরীর ও মনের চাহিদাকে সম্মান করা জরুরি।
জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখাই আসল বুদ্ধিমত্তা। আর এ ভারসাম্য আসে ধৈর্য আর সচেতনতার মাধ্যমে।
লেখক: হলিস্টিক হেলথ কোচ
ইমেইল: [email protected]
আরও পড়ুন:দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসে (এইচএমপিভি) আক্রান্ত নারী সানজিদা আক্তার মারা গেছেন।
মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র বৃহস্পতিবার এমন তথ্য নিশ্চিত করে।
তারা বলেন, ‘এইচএমপিভির একটা কেসই আমরা এ বছর পেয়েছি। এ রোগী গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মারা যান। শুধু এইচএমপিভির কারণে মারা গেছেন, তা মনে হচ্ছে না।
‘এর সঙ্গে আরও একটি অর্গানিজম পেয়েছি। এ ছাড়া তার অনেকগুলো জটিলতা ছিল। শুধু এইচএমপিভি ভাইরাসের কারণে তিনি মারা গেছেন এমনটি বলা যাবে না। এইচএমপিভি ভাইরাসে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
এ বিষয়ে দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ব্রিফ করবেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) রোববার জানায়, ভাইরাসটিতে একজন নারী আক্রান্ত হন, যার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায়।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘এইচএমপিভি নামক ভাইরাসটিতে প্রতি বছরই দু-চারজন রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন।’
চীনের উত্তরাঞ্চলে রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এতে আরেকটি মহামারির ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (সিডিসি)।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিয়াং বলেন, শীত মৌসুমে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগটির সংক্রমণ বেশি ঘটে। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার কমই ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এক বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর জানায়, চীনসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটি উদ্বেগজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে এ সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সেই সাথে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন: হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, গর্ভবতী নারী ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।’
পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এই রোগের সংক্রমণ দেখা গেছে। কিন্তু রোগটি যাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনা
১. শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে
২. হাঁচি-কাশির সময় বাহু/টিস্যু দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন
৩. ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন
৪. আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন
৫. ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুইতে হবে(অন্তত ২০ সেকেন্ড)
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ ধরবেন না
৭. আপনি জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন। প্রয়োজনে কাছের হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা রোববার জানান, বাংলাদেশের এক নারী এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এইচএমপিভি না, নিউমোনিয়ার কারণে তার স্বাস্থ্যের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন।
চীনের উত্তরাঞ্চলে রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এতে আরেকটি মহামারির ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় নাগরিকদের পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (সিডিসি)।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিয়াং জানান, শীত মৌসুমে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগটির সংক্রমণ বেশি ঘটে। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার কমই ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:দেশে প্রথমবারের মতো রিওভাইরাস শনাক্ত করেছে ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর)।
পাঁচজনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হলেও কারও অবস্থাই গুরুতর ছিল না।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, রিওভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই।
এ ছাড়া ২০২৪ সালে নিপা ভাইরাস লক্ষ্মণ নিয়ে আসা রোগীদের পরীক্ষা করে পাঁচজনের শরীরে এটি পাওয়া যায়।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন ইউএনবিকে বলেন, ‘এটা আমরা ২০২৪ সালে পেয়েছি। আক্রান্তদের মধ্যে কেউই গুরুতর অসুস্থ হননি। চিকিৎসার পর সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।’
শীতে খেজুরের কাঁচা রস পান করার পর প্রতি বছর অনেকেই নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আসেন। যে ৫ জনের শরীরে রিওভাইরাস পাওয়া গেছে, তারা সবাই নিপা ভাইরাস নেগেটিভ ছিল।
তাদের শনাক্ত করা হয় ২০২৪ সালে। সে সময় রোগটি তেমন বিস্তার লাভ করেনি। দেশে ওই পাঁচজনই প্রথম।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় আইইডিসিআরের নিয়মিত গবেষণার মাধ্যমে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:বিএসএমএমইউ ও বিসিপিএসের অধিভুক্ত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা পঞ্চাশ হাজার টাকা করার দাবিতে সোমবার দুপুর ১২টা থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন চিকিৎসকরা।
বর্তমানে অর্থাৎ জানুয়ারি মাস থেকে ট্রেইনি চিকিৎসকদের ৩০ হাজার টাকা করে ভাতা পাওয়ার কথা রয়েছে। তবে সোমবার সরকারের তরফ থেকে জুলাই মাস থেকে ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা মানেননি আন্দোলনরত ট্রেইনি চিকিৎসকরা।
ভাতা ৫০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে শাহবাগ অবরোধ করার আগে বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ডক্টর মুভমেন্ট ফর জাস্টিস-এর সভাপতি ডাক্তার জাবির হোসেন। সেই বৈঠকে প্রস্তাব করা হয় আপাতত ৩০ হাজার টাকা মাসিক ভাতা করার যে সিদ্ধান্ত সেটি মেনে নিতে। জুলাই মাস থেকে তাদের এই ভাতা ৩৫ হাজার করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
প্রতিনিধিরা আন্দোলনস্থলে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানান।
এরপর বিকেল ৪টার দিকে শাহবাগ মোড়ে এসে আন্দোলনরতদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিনিধি দল। এ সময় সবাই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। চিকিৎসকরা বলেন, জানুয়ারি মাস থেকেই ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করলে তারা অবরোধ ছেড়ে দেবেন। যতক্ষণ এটি করা না হবে ততক্ষণ অবরোধ না ছাড়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনরতরা।
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ সিলেটের পোস্টগ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তার আশানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এই দাবি শুনে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তবে আমাদের বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমাদের আন্দোলনস্থলে আসছেন। আমরা ওনার জন্য অপেক্ষা করে আছি।’
আরও পড়ুন:এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শনিবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম রোববার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুসারে, নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৯ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী।
চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ ও ৫১ দশমিক ২ শতাংশ নারী।
আর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট এক লাখ এক হাজার ১৬ জন। তাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ ও ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ নারী।
নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর ঐতিহ্যবাহী আবু সিনা ছাত্রাবাস ভেঙে নির্মাণ করা হয় সিলেট জেলা হাসপাতাল। নাগরিক সমাজের আপত্তি উপেক্ষা করে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ দায়িত্বশীলরা অনেকটা জোর করে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় প্রায় ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন এই হাসপাতাল।
২৫০ শয্যার এই হাসপাতালের নির্মাণকাজ ২০২৩ সালে শেষ হলেও এখন এটির দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ।
স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্টদের মতামত না নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করায় এই হাসপাতাল ভবনের দায়িত্ব নিতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা। ফলে হাসপাতাল কমপ্লেক্স বুঝিয়ে দেয়ার মতো কর্তৃপক্ষ পাচ্ছে না গণপূর্ত বিভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সিভিল সার্জন অফিসসহ কেউই এর দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছে না। ফলে হাসপাতাল চালু করা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। যদিও নির্মাণ কাজের শুরুতে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, এটি চালু হলে ওসমানী হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে। সিলেট অঞ্চলের রোগীরা এখান থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা নিতে পারবেন।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ৯৮ একর জায়গার ওপর এই জেলা হাসপাতাল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণপূর্ত অধিদপ্তর হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, ভবন নির্মাণসহ রংকরণের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। তবে ভবনে হাসপাতালের কোনো যন্ত্রপাতি আনা হয়নি। এর চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনীও দেয়া হয়নি।
নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক মওদুদ আহমদ জানান, তাদের কাজ শেষ। তারা ভবনটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাছে তুলে দিতে প্রস্তুত।
জানা গেছে, হাসপাতাল ভবন নির্মাণ শেষ হলেও ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জন কার্যালয় নাকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা পরিচালনা করবে, সেটি এখনও নির্ধারণ হয়নি। হাসপাতাল হস্তান্তরের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ না পাওয়ায় গণপূর্ত বিভাগ এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগ জানায়, ১৫ তলা হাসপাতাল ভবনে আটতলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রঙের কাজ, ইলেক্ট্রিক, টাইলস, গ্লাস, দরজা, জানালা লাগানোও সম্পন্ন। হাসপাতাল ভবনের বেসমেন্টে রয়েছে কার পার্কিং; প্রথম তলায় টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম; দ্বিতীয় তলায় আউটডোর, রিপোর্ট ডেলিভারি ও কনসালট্যান্ট চেম্বার; তৃতীয় তলায় ডায়াগনস্টিক; চতুর্থ তলায় কার্ডিয়াক ও জেনারেল ওটি, আইসিসিইউ, সিসিইউ; পঞ্চম তলায় গাইনি বিভাগ, অপথালমোলজি, অর্থোপেডিক্স ও ইএনটি বিভাগ এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় ওয়ার্ড ও কেবিন। এর মধ্যে আইসিইউ বেড ১৯টি, সিসিইউ বেড ৯টি এবং ৪০টি কেবিন রয়েছে।
জেলা গণপূর্ত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফর বলেন, ‘আমরা এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে দেব। বাই মিসটেক এখানে যেহেতু লোকাল অথরিটি পাওয়া যায়নি। সেহেতু আমরা অথরিটি নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘টেন্ডার সিডিউল, নকশাসহ কাগজপত্র সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগকে দেয়া হয়েছে। প্রতি তলায় ছাদ ঢালাইয়ের সময় তারা এসেছিল। এই হাসপাতালের জমি, ভবন, টাকা- সব দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়; আমরা শুধু কাজ করে দিচ্ছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে হাসপাতালটি পরিচালনা বা তদারকির কথা ছিল। আমরা মন্ত্রণালয়কে সেভাবেই চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব যখন মন্ত্রণালয়ে যায়, তখন গণপূর্ত বিভাগ আমাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেনি। শুনেছি, হাসপাতালের কাজ শেষ। এখন তারা আমাদের গছাতে চাচ্ছে। অথচ এখানে কী আছে না আছে- সেটি আমাদের জানা নেই। তাই এ অবস্থায় আমরা হাসপাতালের দায়িত্ব নিতে পারি না।
‘কারণ, আমাদের আগের পরিচালক (ডা. হিমাংশু লাল) এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে গেছেন মন্ত্রণালয়ে। তাতে তিনি লিখে যান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অগোচরেই সিলেটে অনেক স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। তারা যেন না বুঝে এসব স্থাপনার দায়িত্ব কোনোভাবেই না নেন।’
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘হাসপাতালের স্থাপত্য নকশা, কর্মপরিকল্পনা, সেবা প্রদানের জন্য সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় কক্ষের সুবিন্যাসকরণ ইত্যাদির কাগজপত্র সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালক অথবা ওসমানী হাসপাতালের পরিচালকের কাছে দাখিল করা হয়নি। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এটি বাসাবাড়ি নয়; আমাকে দায়িত্ব দিয়ে দিল আর নিয়ে নিলাম। এটি একটি হাসপাতাল। এটি নির্মাণে আমাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করা হয়নি।’
হাসপাতালটি নির্মাণের আগে কোনো মতামত নেয়া হয়নি জানিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘এভাবে হুট করে আমরা কোনো হাসপাতালেল দায়িত্ব নিতে পারি না। এই ভভনের অবকাঠামো হাসপাতালের উপযোগী কী না তাও আমাদের জানা নেই।
‘তাছাড়া ওসমানী হাসপাতালের অধীনে আরও কয়েকটি হাসপাতাল রয়েছে। সীমিত জনবল ও যন্ত্রপাতি নিয়ে এগুলো পরিচলানা করতেই আমরা হিমশিম খাচ্ছি। নতুন করে কোনো হাসপাতালের দায়িত্ব নেয়া এখন সম্ভব নয়।’
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সিলেট জেলা সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এমন ঠেলাঠেলি বন্ধ হোক। এখানে কারও স্বার্থ বা কোনো কুচক্রী মহল আছে কিনা, সেটি খুঁজে দেখা দরকার। এ প্রকল্প যখন পাস হয়, তখনই বলে দেয়া হয়েছে কারা পরিচালনা করবে। নির্মাণের পর কেউ দায় নিতে না চাওয়া অন্য অর্থ বহন করে।’
মন্তব্য