জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী হিসেবে কনডমের জনপ্রিয়তা পৃথিবীব্যাপী হলেও বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের কারণে এর স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে। কনডমের পাশাপাশি আরও বেশকিছু যৌনসামগ্রীতে শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হন নারীরা। এমন অবস্থায় অনেক দেশেই জনপ্রিয় হচ্ছে অর্গানিক পণ্য। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এর ব্যবহার বাড়ছে। এমনকি সামাজিক ট্যাবু ও সমালোচনা উপেক্ষা করে অর্গানিক যৌনপণ্য উৎপাদক হিসেবে এগিয়ে আসছেন নারীরাও। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ভিত্তিক সাইট ভাইস ভারতের তিন নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে বিশ্লেষণ করেছে নারীদের জন্য বিশেষায়িত যৌন সুরক্ষা সামগ্রীর চাহিদা, ব্যবহার ও উপকারিতার বিভিন্ন দিক। প্রতিবেদনটি অবলম্বনে লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
কোমাল বালদওয়া বহুবার বাজারে প্রচলিত কনডম ব্যবহার করেছেন। তবে ব্যবহারের পরের ব্যথাটি তাকে স্বামীর সঙ্গে সময় কাটানো অন্তরঙ্গ মুহূর্তটিকে ভুলিয়ে দেয়।
৩৯ বছর বয়সী কোমাল বলেন, ‘সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করার সময় আমার স্বামী কনডম ব্যবহার করতেন না, তখন সব ঠিকঠাক থাকত। তবে এর আগে-পরের সময়গুলোতে কনডম ব্যবহারের পর যৌনাঙ্গে ব্যথা ও জ্বলুনি আমার পাগল করে তুলত।’
ভারতের হায়দরাবাদ শহরের বাসিন্দা ও দুই সন্তানের জননী কোমাল বাজারে সহজলভ্য কনডম সব শেষ ব্যবহার করেছেন অনেকদিন আগে। তবে এখনও ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে যৌনাঙ্গে চুলকানি, শুষ্কতা ও মূত্রনালীতে সংক্রমণ।
এসব জটিলতা নিয়ে কোমাল গাইনোকলজিস্ট ও চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়েছেন। তবে তাদের পরামর্শগুলো ছিল আপত্তিকর।
কোমাল বলেন, ‘আমাদের এক পারিবারিক চিকিৎসক এতোটা রক্ষণশীল ভাবে বিষয়টা দেখছিলেন যে, আমি তার কাছে যাওয়া বন্ধ করে দেই। একজন আমাকে এও বলেছেন, আমি আরেক শহর থেকে আসার কারণে নাকি বাবা-মাকে মিস করছি। আরেকজন আমাকে বলেছেন, আমার হেলুসিনেশন হচ্ছে, ব্যথাটি আসলে আমার মাথায়। অনেকে কনডম নিয়ে কথা বলতেই চাচ্ছিলেন না। তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বা আরও সন্তান নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন।’
এটা ২০১৫ সালের কথা। চিকিৎসকদের অবজ্ঞার মুখে পড়া কোমাল এরপর পড়াশোনা করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্গানিক কনডমের কথা জানতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘আমি জানতে পারি, পাঁচ মিনিটের অতিরিক্ত আনন্দের জন্য আমাদের দেহে কেমিক্যাল প্রবেশ করানোর কোনো দরকার নেই।’
কোমাল এরপর ২০১৯ সালে ভারতে প্রথম পুরুষের জন্য ‘ব্লু’ নামের অর্গানিক কনডম তৈরি শুরু করেন।
প্রচলিত কনডম ব্যবহারের কারণে ভারতে কত নারী অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হন তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই, তবে কোমালের মতো অসংখ্য নারীর অভিজ্ঞতা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে আছে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও কনডম ব্যবহারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। এর ফলে ডার্মাটাইটিস (চর্মরোগ) এমনকি গ্যাংগ্রিন বা পুরুষাঙ্গে পচনও ধরতে পারে।
ভারতের মতো একটি দেশ মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তেমন নেই। এমন একটি দেশে কোমালের একটি কনডম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি অনেকের কাছেই ছিল চমক, বিশেষ করে তার কাছের মানুষের জন্য।
তিনি বলেন, ‘সবাই অস্বস্তিতে ছিলেন। সবাই আমাকে সমাজকে উচ্ছন্নে নেয়ার জন্য দায়ী ভাবছিল, কিন্তু আমি পিছু হটিনি।’
কনডমের ইতিহাস বেশ আকর্ষণীয়, তবে সমস্যা জর্জরিত। পাঁচ হাজার বছর আগে ক্রিটের রাজা মিনোসকে ধরা হয় কনডমের প্রথম ব্যবহারকারী। কথিত আছে, তার কনডমটি এতোটাই বিষাক্ত ছিল যে এর কারণে তার অনেক উপপত্নী মারা যান। পরে দেখা যায়, দোষটি ক্রিটের নয়, বরং ছাগলের মূত্রনালীতে তৈরি কনডমের কারণেই এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
কনডম প্রযুক্তি এখন অনেক উন্নত। বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার কোটি আধুনিক কনডম বিক্রি হয়েছে। এর কারণে সামাল দেয়া গেছে এইডসের মতো অনেক যৌন রোগের মহামারি।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে, কনডমকে সাধারণত সরকারি পরিবার পরিকল্পনার সঙ্গে বা বাণিজ্যিকভাবে আনন্দদানের সঙ্গে সম্পৃক্ত পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাণিজ্যিক পর্যায়ে এর প্রচারের ক্ষেত্রে অনেকটা পর্নো সিনেমার মতো বানানো বিজ্ঞাপন চিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
ব্যবহার বাড়ানোর প্রচার চললেও, ভারতে এখনও কনডমের ব্যবহার ভয়াবহ মাত্রায় কম। মাত্র ৫.৬ শতাংশ মানুষ এটি ব্যবহার করেন। চলতি বছরের শুরুতে করা ভারতের প্রথম কনডমোলজি রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৮০ শতাংশ পুরুষ শেষবার তাদের সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের সময় কোনো ধরনের জন্মনিরোধক ব্যবহার করেননি।
বিয়ের আগে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাত্র সাত শতাংশ নারী ও ২৭ শতাংশ পুরুষ কনডম ব্যবহার করেছেন। নারীদের তিন শতাংশ ও পুরুষের ১৩ শতাংশ সবসময়ই কনডম ব্যবহার করেন।
ভারতে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ ও যৌন পরিবাহী সংক্রমণের হার অনেক বেশি। কনডমোলজি রিপোর্টে দেখা গেছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পণ্য কেনা ও ব্যবহার করার প্রধান বাধা হলো অ-বৈবাহিক পরিস্থিতিতে যৌনতা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এবং সামাজিক রক্ষণশীলতা।
আরেকটি গবেষণায় দেখে গেছে, বিশ্বের ৭৭০ কোটি জনসংখ্যার ৪.৩ শতাংশের রাবারজাতীয় পদার্থে অ্যালার্জি আছে। এমন প্রেক্ষাপটে, কনডমের ব্যবহারজনিত স্বাস্থ্যগত জটিলতা, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব বিভিন্ন দেশে আলোচিত হচ্ছে।
কোমাল বালদওয়া ২০১৯ সালে ভারতে এই খাতে একজন পথিকৃত হয়ে ওঠেন। তিনি শুধু নারী স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করার বিষয় তুলে ধরেননি, একইসঙ্গে পুরুষ-শাসিত এই খাতে নারীর জন্য বাধাও ভেঙে দিতে চেয়েছেন।
কোমাল বলেন, ‘আমি দেশের সব কনডম প্রস্তুতকারকের কাছে গিয়েছি। তারা বিষয়টি নিয়ে একেবারেই স্বস্তিতে ছিলেন না। আমাকে তারা বলেছেন, এই পণ্যটি আমার জন্য নয় এবং এই শিল্পে নারীদের কোনো জায়গা নেই।’
তবে তিনি শেষ পর্যন্ত এক প্রস্তুতকারক খুঁজে পান, যারা তাকে সাহায্য করতে রাজি হয়। তারপর থেকে এগিয়ে যাচ্ছেন কোমাল, তার কোম্পানির গ্রাহক এখন প্রায় ৩০ হাজার।
তবে কোমালের এই বিপ্লব ভারতে ১ হাজার ৫২১ কোটি রুপির (প্রায় ১ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা) কনডম শিল্পের সাগরে এক ফোঁটা জলের মতো। তিনি শুরু করার পর আরও অনেকে চেষ্টা করছেন এবং সফলতার মুখও দেখছেন।
নয়া দিল্লির কনজিউমার সাইকোলজি ও আইনের পড়াশোনা করা অরুনা চাওলা কয়েক মাস আগে অর্গানিক কনডম কোম্পানি ‘সালাদ’ চালু করেন। শুধু স্বাস্থ্যগত কারণ নয়, চাওলার এই উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার প্রধান কারণগুলোর একটি হল, বেশিরভাগ নারী কনডম কেনেন না।
২৬ বছর বয়সী চাওলা বলেন, ‘আমার মা কখনও কেনেননি। আমার পরিবারের কোনো নারী কখনও কেনেননি।’
তিনি বলেন, “কনডমের বাণিজ্যিকীকরণের পুরোটাই আনন্দদানকে ঘিরে। বিজ্ঞাপনগুলো মজার ও বুদ্ধিদীপ্ত হলেও এগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি এখনও পুরুষের ‘শক্তিমানতাকেন্দ্রিক’। কনডমকে এখানে জরুরি বা গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হিসেবে দেখা হয় না। এটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত পুরুষের হাতে, কিন্তু বিরূপ প্রতিক্রিয়ার অধিকাংশই পড়ে নারীর ওপর।"
চাওলা ও কোমাল দুজনেই নিশ্চিত করেন, তাদের পণ্য সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি, যা সরাসরি এসেছে বনাঞ্চল থেকে। এতে অপচয় হয়েছে খুব কম এবং কোনো প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা করা হয়নি।
সাচি মালহোত্রা দ্যাট স্যাসি থিং নামের একটি ভেষজভিত্তিক যৌনতার পণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার প্রতিষ্ঠান লিউব, পিউবিক হেয়ার অয়েল ও সব লিঙ্গের জন্য আন্ডারওয়্যার ধোয়ার ডিটারজেন্ট তৈরি করে।
৩০ বছর বয়সী মালহোত্রা বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলো নারীর জন্য পণ্য তৈরির দাবি করলেও, সেগুলো শেষ পর্যন্ত পুরুষকে তুষ্ট ও নারীর নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। আনন্দের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটছে।
‘নারীর যৌনাঙ্গের সুস্থতার বিষয়টিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। যেসব লিউব ব্যবহার করা হয় সেগুলোর অধিকাংশ ফ্লেভারযুক্ত, আঁঠালো এবং ঘন ও কৃত্রিম চিনি জাতীয় দ্রব্য মেশানো। যেটি যৌনাঙ্গের পিএইচ লেভেলকে নষ্ট করে এবং চুলকানি, র্যাশ ও ইস্ট ইনফেকশনের জন্ম দেয়।’
১৫ বছর বয়স থেকে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে (পিসিওএস) আক্রান্ত নারী হিসেবে মালহোত্রা ভালো করেই জানতেন, এসব শারীরিক সমস্যা নিয়ে কথা বলাটা কতটা অস্বস্তিকর। তিনিও যৌনাঙ্গের শুষ্কতা, পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা ও শারীরিক মিলনের সময় ব্যথা অনুভব করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার শরীরের জন্য ভালো ও উপকারী পণ্য খুঁজতে গিয়ে দেখি, সে ধরনের কিছু নেই। অধিকাংশ যৌনতাভিত্তিক পণ্যের ব্র্যান্ডগুলো পুরুষ দ্বারা পরিচালিত। এ কারণে তারা শুধু পুরুষের উপভোগের জন্য পণ্য তৈরি করে। আমি জানি না, নারীর যৌনাঙ্গের জন্য কোনটি ভালো সেটি পুরুষ কীভাবে ঠিক করে!’
ভারতের মতো একটি দেশে নারীর মুখ থেকে এ ধরনের কথা বের হওয়া খুব সহজ ঘটনা নয়।
কোমাল জানান, ব্লু উদ্বোধন করার পরের কয়েক মাসে অনলাইনের তার ওপর অবিশ্বাস্য আক্রমণ চালানো হয়েছে। তিনি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো একপর্যায়ে ‘প্রাইভেট’ করে দিতে বাধ্য হন।
তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু আক্রমণ আমাকে ভেঙে দিয়েছিল। তবে পরিবার ও সমর্থকদের কাছ থেকে বরাবরই সমর্থন পেয়েছি।’
চাওলাকেও তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো ‘প্রাইভেট’ করতে হয়েছে। তিনি যোগ করেন, এই ২০২১ সালেও অনেক ভারতীয় মনে করেন, কনডমের মতো বিষয় নিয়ে কথা বলা মানে যৌনসঙ্গী পাওয়ার অনুরোধ জানানোর মতো কোনো বিষয়।
তিনি বলেন, ‘আমি যদি যৌনতা নিয়ে কথা বলি তাহলে নিশ্চিতভাবেই ইনবক্সে পুরুষাঙ্গের কিছু ছবি পাব। নারী হিসেবে এই বাড়তি লড়াইটুকুও আমাকে করতে হচ্ছে।’
অন্যদিকে মালহোত্রা বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিকতা ও সহজাত নারী বিদ্বেষ আমাদের সমাজের অত্যন্ত গভীরে চলে গেছে। অধিকাংশ নারীকে বিশ্বাস করানো হয়েছে, ব্যথা পাওয়া যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি স্বাভাবিক বিষয় অথবা পুরুষ সঙ্গীর উপভোগের জন্য নিজের আনন্দকে ত্যাগ করতে হবে।’
তবে এই তিন নারীই সমাজ বদলানোর বিষয়ে আশাবাদী। চাওলা জানান, তিনি একজন পরামর্শককে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যৌন শিক্ষা শুরু করার জন্য কাজ করছেন।
কোমালও আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমার কয়েকজন গ্রাহক বলেছেন, তারা পর্নো সিনেমা থেকে যৌনশিক্ষা পেয়েছেন। তবে এখন তারা তাদের সঙ্গীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভালো কোনো বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করতে চান।’
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে হুয়াওয়ে নারী কর্মীদের জন্য একটি স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করেছে।
ঢাকায় হুয়াওয়ের সাউথ এশিয়া রিপ্রেজেনটেটিভ অফিসে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
এ বিশেষ উদ্যোগ কর্মীদের সুস্থতা ও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে হুয়াওয়ের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই কর্মশালার লক্ষ্য ছিলো নারী কর্মীদের ইউরিনারি হেলথের ওপর কাউন্সেলিং প্রদান করা। কাউন্সেলিংয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই), যা নারীদের একটি সাধারণ সমস্যা।
ইউনাইটেড হসপিটালের চিকিৎসক সরকার কামরুন জাহান ঝিনুক এ সমস্যার ঝুঁকি, লক্ষণ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও চিকিৎসার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্টের ইনফেকশন জীবনযাপনের কিছু সাধারণ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রচুর পরিমাণে পানি পান, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, আটসাট পোশাক পরিহারের মাধ্যমে আর্দ্রতা ও ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে ইউটিআই হওয়ার সম্ভাবনা কমানো সম্ভব।’
হুয়াওয়ের এইচআর ডিরেক্টর লিনজিয়াও এ কর্মশালার সূচনা করেন। হুয়াওয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
লিনজিয়াও বলেন, “হুয়াওয়েতে আমরা কর্মদক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। একজন কর্মী পুরুষ বা নারী যাই হোক না কেন, আমরা তাকে তার দায়িত্বশীলতা ও কর্মদক্ষতার মানদণ্ড দিয়েই বিচার করি। আমরা দেখেছি যে, পুরুষ এবং নারী উভয়ই দক্ষতার সাথে কাজ করতে সক্ষম। হুয়াওয়ের কর্মীদের সুস্থতার দিকেও আমরা মনোযোগ দিয়ে থাকি।
‘তাই আমাদের কর্মীদের জন্য ওপিডি ও আইপিডি বিমার সুবিধা রয়েছে। আমরা কর্মীদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালারও আয়োজন করি। আজকের কর্মশালা নারী কর্মীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।’
হুয়াওয়ের ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানটি অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে কর্মক্ষেত্রে বায়ু, পানি ও খাবারের গুণমান পরীক্ষা করার মতো উদ্যোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করে। এ ছাড়া হুয়াওয়ের পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিয়ষক নীতি অনুযায়ী নিয়মিত ফায়ার ড্রিলসেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সম্প্রতি নারীদের ওপর যে জঘন্য হামলার খবর আসছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের সম্পূর্ণ বিপরীত।
তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা আমাদের সকল শক্তি প্রয়োগ করব।'
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা মিলে যে অসাধ্য সাধন করেছে, তার সম্মুখসারির ভূমিকায় ছিল এ দেশের নারীরা। ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতী অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়েছিল আমাদের মেয়েরা।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ও অংশগ্রণকারী ও আহত নারীদের স্মরণ করে তাদের দ্রুত সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন কামনা করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে থাকলেও আমাদের সমাজে এখনও অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা পিছিয়ে আছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকার সবসময় সচেষ্ট। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ চলমান।
‘দুস্থ মায়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, কর্মজীবী নারীদের থাকার হোস্টেল, ডে কেয়ার সেন্টার সুবিধাসহ নানান ধরনের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে। এ সংক্রান্ত আরও উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা চলছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। অনেক সময় নারীরা নির্যাতনের শিকার হলেও তারা বুঝতে পারেন না কোথায় অভিযোগ জানাবেন। নারীরা যেন তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন, সে জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।
‘আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছি। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কাজও আমরা হাতে নিয়েছি। আমরা একটি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন করেছি। তারাও তাদের সুপারিশগুলো দেবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মেয়েরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শত বাধা পেরিয়ে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখছে।’
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ে ও নারীর ক্ষমতায়ন ও সমর্থন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণী ও নারীরা তাদের চারপাশের মানুষদের কাছ থেকে ক্ষমতায়ন ও সমর্থন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। প্রত্যেক নারীকেও পুরুষের সমান মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সুযোগ পাওয়া উচিত।’
তিনি উল্লেখ করেন, তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনজন অসাধারণ ব্যক্তি হলেন তার মা, স্ত্রী ও কন্যা।
তারেক রহমান ফেসবুক পেজে স্ত্রী জোবাইদা রহমান, মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবিও শেয়ার করেন।
পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমি সবসময় তাদের জন্য প্রতিটি সুযোগ, সাফল্য এবং সুখ চেয়েছি। আমি নিশ্চিত যে আপনারা যারা এটি পড়ছেন তাদের অনেকেরই একই অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি আবারও দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের মতো আমাদেরও উচিত একটি ন্যায়পরায়ণ, সহিষ্ণু ও শ্রদ্ধাশীল সমাজ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া, যেখানে ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সব মেয়ের ছেলেদের সমান সুযোগ থাকা উচিত এবং তাদের বাড়ির বাইরে পা রাখা উচিত। হয়রানি ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যবহার করা উচিত এবং নির্ভয়ে তাদের কণ্ঠস্বর প্রকাশের সুযোগ নেওয়া উচিত।’
তারেক রহমান আরও বলেন, “বিএনপির নীতি প্রণয়নে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত সমাজে নারীর অব্যবহৃত সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয়, যেখানে দলের ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ঋণ, তরুণীদের শিক্ষার জন্য অ্যাকাডেমিক ও বৃত্তিমূলক প্রকল্পের মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
উপসংহারে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একসঙ্গে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করি।’
আরও পড়ুন:নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম নির্ধারক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে শুক্রবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম নির্ধারক হচ্ছে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আসুন, আমরা নারীদের প্রতি উগ্রতা, বিদ্বেষ এবং অশ্রদ্ধামূলক সকল আচরণকে না বলি এবং এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা সুসংহত করার জন্য আহ্বান জানাই।’
গত ১৫ বছরে হাজার হাজার পুরুষ, নারী গুম, খুন, অত্যাচারিত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে অমানবিক সংগ্রাম করেছে ওই পরিবারগুলোর নারীরা। জুলাইতেও আন্দোলনের শুরু এই বাংলাদেশের নারীদের হাতেই। শহীদ হয়েছে আমাদের সন্তানরা, ছোট শিশুকন্যাও। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্ট্রান, বৌদ্ধ, সকলেই এই আন্দোলনের শরিক।’
মির্জা ফখরুল আশা করেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়াই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ লক্ষ্য থাকবে। লিঙ্গ, বয়স, পেশা নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিক যেন রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করে, এমন বাংলাদেশই আমাদের কাম্য। বাড়ি থেকে রাস্তায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে, অফিসে, সর্বত্র তাদের আত্মসম্মানকে মূল্যায়ন করা উচিত।’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আজকের ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে উগ্রবাদের কোনো জায়গা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীরা আমাদের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির অংশীদার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে আসুন আমাদের অগ্রগতি দ্রুততর করতে পদক্ষেপ নিই।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেছেন, দেশের সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে কাজ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে শিরীন হক বলেন, ‘আমাদের মূল ধারা হবে সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যের নিরসন এবং নারী-পুরুষের জেন্ডার বৈষম্য কমাতে কাজ করতে হবে। নারীর উন্নয়ন বিকাশে বাধাগুলো নিয়ে বিষয় চিহ্নিত করা।
‘অন্য সকল সংস্কার কমিশনে নারী অধিকারের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। ক্রান্তিকালে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতির জন্য কাজ করার সর্বোত্তম সুযোগ।’
অনুষ্ঠানে সমাজে যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং জলবায়ু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও সবুজায়ন এবং ক্রীড়াঙ্গনে নারী নেতৃত্ব বিকাশে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিন ক্যাটাগরিতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের তিনজনকে ‘নাসরীন স্মৃতিপদক ২০২৫’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর পদক গ্রহণ করেন ডনাইপ্রু নেলী, রিনা খাতুন ও আফরোজা খন্দকার।
দিবস উদ্যাপন আয়োজনে নারীদের সাফল্য প্রদর্শন ও পুরস্কার প্রদানসহ ছিল আলোচনা সেশন।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় এ আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা। ওই সময় দেশের সব ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তাদের একজন বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়নে সামগ্রিক চিত্রের অগ্রগতি হলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। এখনও অনেক পিছিয়ে আছেন নারীরা। ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে বিভিন্ন স্তরের নারীদের সামনে থাকা কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণকে উৎসাহিত করাসহ নারী ও কন্যাশিশুরা যেন সমান সুযোগ পায় এবং উন্নতি করতে পারে, সে লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে পদক্ষেপের গতি বাড়াতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের কথা স্বীকার করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘নারীদের অগ্রগতিতে পেছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কারা করছে, কেন করছে সেটা বের করা দরকার। জুলাইয়ের আন্দোলনে মেয়েরাই রোকেয়া হল থেকে সবার আগে বের হলো। কিন্তু পরে এত দ্রুত মেয়েরা সরে গেল কেন?
‘জায়গা কেউ ইচ্ছে করে ছেড়ে দেয়নি। চাপ সৃষ্টি করে জায়গা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। মেয়েদের পেছনে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে।
‘আমরা দেখেছি আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নারীরা দারুণ সাহস দেখিয়েছে। এত তাড়াতাড়ি মেয়েদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে আশা করিনি।’
নারীদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে কমিউনিটি উন্নয়নে একশনএইড কীভাবে অবদান রেখে চলেছে তা তুলে ধরেন ফারাহ কবির।
তিনি বলেন, ‘দেশের নারীদের অগ্রগতিতে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে চলেছে একশনএইড বাংলাদেশ। নারী সুরক্ষা, অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবস্থান ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সমানাধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছি আমরা। আমরা চাই, নারী ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে আরও গতি আসুক।’
ওই সময় নারী উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম রোকেয়া এ দেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ। নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
‘বেগম রোকেয়ার জীবন ও তার আদর্শ বাস্তবায়ন এদেশের নারী সমাজকে আলোকিত ও আত্মনির্ভরশীল করতে প্রেরণা যোগাবে।’
মন্তব্য