× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

জীবনযাপন
The good and the bad of winter
google_news print-icon

শীৎকারের ভালো-মন্দ

শীৎকারের-ভালো-মন্দ
প্রতীকী ছবি।
১৮ থেকে ৪৬ বছর বয়সী নারীদের নিয়ে ২০১১ সালে করা এক গবেষণায় দেখে গেছে, ৬৬ ভাগ নারী সঙ্গীর চরম মুহূর্ত দ্রুততর করতে শীৎকারের আশ্রয় নিয়েছেন। আর ৮৭ ভাগ এমনটি করেছেন সঙ্গীর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে।

কেন শীৎকার- এমন প্রশ্নের উত্তর সাধারণভাবে সহজ মনে হলেও, এর গভীরে যাওয়া প্রায় সবার জন্য অস্বস্তিকর এবং বেশ জটিল।

এটি কি সঙ্গিনীকে তীব্র আবেগের মুহূর্ত উপহার দেয়ার প্রকাশ্য স্বীকৃতি? অথবা যৌনতা নির্ভর সিনেমা বা পর্নোগ্রাফিতে যেমনটি দেখা যায়- তেমন উত্তেজনাপূর্ণ শারীরিক মিলনের ফলে এটি কি অর্গাজমের প্রকাশ? এটি কি আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, নাকি শীৎকারে চাপা পড়ে পরিপূর্ণ আনন্দের অনেক উপলক্ষ্য?

এমন অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া বেশ কঠিন। অনেকে আবার এমনটাও দাবি করেন, শীৎকারের পেছনে নারীর সহজাত উত্তেজনার পরিবর্তে পুরুষকে তুষ্ট করার প্রবণতাই বেশি দায়ী। সুইসাইড স্কোয়াড খ্যাত ব্রিটিশ অভিনত্রী কারা ডেলেভিন সম্প্রতি দাবি করেছেন, অর্গাজমের সময় চুপচাপ থাকাই বরং আনন্দের অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

এলেনটিউবের সিরিজ লেডি পার্টসের উপস্থাপক সারাহ হাইল্যান্ডকে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘যখন আপনি ঘনিষ্ঠতাকে আরও বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করেন এবং কোনো শব্দ করেন না, তখন অনুভূতির মাত্রা অনেক তীব্র হয়।’

অর্গাজমের সময় শব্দ করতে হবে এমন ধারণা এক সময়ে নিজের মধ্যেও ছিল উল্লেখ করে ডেলেভিন বলেন, ‘এক পর্যায়ে আমি শব্দ করা বন্ধ করে দেই এবং সেটি আসলেই ছিল দারুণ উপভোগ্য।’

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ভিত্তিক সাইট ভাইস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌনতার প্রচলিত ধারণায় নারীর কামোত্তেজক উচ্চস্বরকে প্রায় সব সমাজেই গুরুত্ব দেয়া হয়। ধরে নেয়া হয়, এটি ভালো অর্গাজমের বৈশিষ্ট্য। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর শীৎকার তাদের সঙ্গীর আত্মবিশ্বাসকে বাড়াতে সাহায্য করে এবং পরবর্তী সময়ে আবারও কাছাকাছি আসতে তাদের উৎসাহিত করে। আর এ জন্য আসল বা নকল দুই ধরনের অর্গাজমের ক্ষেত্রেই অনেক নারী সচেতন বা অবচেতনভাবে শীৎকারে অংশ নেন।

১৮ থেকে ৪৬ বছর বয়সী নারীদের নিয়ে ২০১১ সালে করা এক গবেষণায় দেখে গেছে, ৬৬ ভাগ নারী সঙ্গীর চরম মুহূর্ত দ্রুততর করতে শীৎকারের আশ্রয় নিয়েছেন। আর ৮৭ ভাগ এমনটি করেছেন সঙ্গীর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে।

একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ৩৬ বছর বয়সী বিদিশা দাস ভাইসকে বলেন, ‘আমি বিয়ের পর শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। খুব অল্প যে কয়েক বার আমরা মিলিত হতাম, আমি শীৎকারের ভান করতাম যেন সে (স্বামী) দ্রুত স্খলন ঘটাতে পারে। সবকিছু দ্রুত শেষ করে দিতে চাইতাম আমি।’

কিছু জায়গায় আবার যৌনমিলনের সময় উচ্চস্বরে আওয়াজ করা বেশ কঠিন। ভারতের নয়াদিল্লীর যৌন সম্পর্ক প্রশিক্ষক পল্লভি বার্নওয়াল ভাইসকে তার এক ক্লায়েন্টের গল্প বলেন। রেললাইনের পাশে ছোট একটি বাসায় থাকত ওই দম্পতি। একান্নবর্তী পরিবারে তাদের শোয়ার জায়গাটি একটি আধাস্বচ্ছ পর্দা দিয়ে আলাদা করা ছিল।

পল্লভি বলেন, ‘তারা চাইত শীৎকার করতে, কিন্তু সম্ভব ছিল না। একপর্যায়ে তারা একটি উপায় খুঁজে বের করে, নিজেদের অর্গাজমের সময় তারা ট্রেন যাওয়ার সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়। ওই এক মিনিটেই যা করার তারা করে নিত।’

পল্লভি মনে করেন, শব্দহীন যৌনতার কিছু সুবিধাও আছে। তার মতে, কয়েকটি ক্ষেত্রে এটি আপনার সঙ্গীর দেহ ও অনুভূতির নতুন কিছু দিক উন্মোচনে সাহায্য করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘চোখ বন্ধ করে যখন আপনি নীরবে আপনার সঙ্গীর আঙ্গুলের ছোঁয়া অনুভব করেন তখন ওই মুহূর্তটি আরও তীব্র হয়ে ওঠে। যৌনতা মানেই যে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কসরত তা কিন্তু নয়, অনেক সময় এটি শুধু সঙ্গীকে খুঁজে পাওয়ার বিষয়ও হতে পারে। একে অপরের দেহে ডুবে থেকে একেবারে সত্য কোনো কথোপকথনের উপলক্ষ্যও হতে পারে। আমরা অসংখ্য উত্তেজক স্থান খুঁজে বের করতে পারি, যা সাধারণত দ্রুত ও শীৎকারপূর্ণ যৌনতার সময় আমাদের মনোযোগের আড়ালে চলে যায়। নীরবতা একে অপরের শরীরকে খুঁজে নেয়ার ও অনুভব করার স্বাধীনতা দিতে পারে।’

তবে কিছু সংস্কৃতিতে শীৎকারের ভান করা এক ধরনের বিশুদ্ধতা এবং খাঁটি নৈতিকতার ধারণার সঙ্গে বিপজ্জনকভাবে জড়িত। নিজের বিয়ের প্রথম রাতে ‘শুদ্ধ’ প্রমাণের জন্য পল্লভিকে তাই যন্ত্রণাকাতর শব্দের ভান করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ভারতের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশে নারীর কুমারিত্ব বহু বছর ধরে বিশুদ্ধতা ও সচ্চরিত্রের পরিচায়ক।’

২২ বছরের ছাত্রী প্রজ্ঞা সিংয়ের মতে, শীৎকারের প্রত্যাশা অধিকাংশ সময়ই পুরুষের কাছ থেকে আসে, যদিও তারা এটা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন না। তিনি শব্দহীন যৌনতা পছন্দ করেন, কিন্তু এর ফলে সঙ্গী দ্বিধাগ্রস্ত হোক- এটাও চান না।

প্রজ্ঞা বলেন, ‘আমার সঙ্গী শব্দ পছন্দ করে। এটা আমাদের মধ্যে এক ধরনের যোগাযোগের মাধ্যম। আমি শব্দহীন যৌনমিলনের চেষ্টা করেছি, কিন্তু এতে তারা উত্তেজিত হননি। তারা শব্দ ও আমি নোংরা কিছু বলছি, এমন বিষয়টিকে পছন্দ করে। শব্দের অনুপস্থিতি তাদের কাছে পুরো বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তারা চিন্তায় থাকে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি কিনা।’

তবে পরিস্থিতি পুরুষের নিয়ন্ত্রণে বাইরে থাকলে তারা আবার নারীদের নিশ্চুপ রাখতেই তৎপর হয়।

প্রজ্ঞা বলেন, ‘পাশের রুমে অন্য কেউ থাকলে তারা আপনাকে চুপ করানোর চেষ্টা করবে। ফলে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নারীর শব্দ করা বা না করা পুরুষের উত্তেজিত হওয়ার একটি উপলক্ষ্য। কখন আপনি শব্দ করছেন আর কখন করছেন না, সেটি নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় পুরুষই থাকতে চায়।’

যৌনতার প্রশিক্ষক কারিশমা স্বরূপের মতে যেসব দেশে যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা নিষিদ্ধ সেখানে নীরব সেক্সের আরেকটা কারণ আছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি সংস্কৃতিতে বাস করি যেখানে আসলে সেক্স নিয়ে কথা বলা যায় না। আর নারীর উচ্চস্বরে কথা বলা বা উদ্ধত হওয়াটিকে অস্বস্তিকর হিসেবে দেখা হয়। যে কারণে শীৎকারকে নারীর আবেগের জায়গা ফিরে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মুক্তির অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবেও দেখা হয়।’

প্রচলিত ধারণা বা পর্নো সিনেমা দেখার কারণে শীৎকারকে ‘সঠিক’ হিসেবে অনেকে ধরে নিলেও স্বরূপের মতে, যৌনতায় কোনো নির্দিষ্ট একটি ধরনকে ‘উত্তম’ বলা ঠিক নয়।

তিনি বলেন, ‘যৌনতা নিয়ে আমাদের সবারই একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দিনশেষে কার সঙ্গে আপনি শীৎকার করছেন বা করছেন না সেটাই বিবেচ্য। দারুণ একটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি কেমন অনুভব করছেন সেটি শব্দ করে জানান দেয়া একটি ভালো উপায়। তবে নির্যাতনমূলক শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেখানে আবেগ একমুখী, সেখানে শব্দ করা বা না করায় বিশেষ কিছু আসে-যায় না, নির্যাতনই সেখানে শেষ কথা, যৌনতা নয়।’

আরও পড়ুন:
যৌনতার পর টাকা চেয়ে খুন হন শিপন
নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে যাচ্ছেন জাহানারা-জ্যোতিরা
আফগানিস্তান ছেড়ে পালাল কিশোরী ফুটবলাররা
ইয়াসমিন হত্যা: প্রতিবাদীদের খবর শুধু দিবসেই
মর্গে মৃত নারী ধর্ষণ: মুন্নার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

মন্তব্য

আরও পড়ুন

জীবনযাপন
The gender identity of the unborn child cannot be revealed

‘মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না’

‘মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না’
হাইকোর্টে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাখিল করা নীতিমালায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবরেটরি কোনো লেখা বা চিহ্ন বা অন্য কোনো উপায়ে শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না।

মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না মর্মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।

বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার এই নীতিমালা দাখিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আদালত এই নীতিমালার ওপর শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছে।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

দাখিল করা নীতিমালায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবরেটরি কোনো লেখা বা চিহ্ন বা অন্য কোনো উপায়ে শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে কোনোরকম বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না। সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো ডাক্তার, নার্স, পরিবার পরিকল্পনা কর্মী, টেকনিশিয়ান কর্মীদের নেতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে ট্রেনিং দেবে এবং নৈতিকতা ও পেশাগত আচরণ বিষয়ে ট্রেনিং দেবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে- হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো এ সংক্রান্ত সব ধরনের টেস্টের ডাটা সংরক্ষণে রাখবে। হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো ডিজিটাল ও প্রিন্ট মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা এবং কন্যাশিশুর গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন মেসেজ প্রচার করবে।

এর আগে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ রোধে নীতিমালা তৈরি করতে রুল জারি করে হাইকোর্ট।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রুল জারি করেছিলেন।

রুলে অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা তৈরি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

হাইকোর্টের ওই রুলের পর নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এর আগে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা ও লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিট করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

মন্তব্য

জীবনযাপন
Normal delivery method

নরমাল ডেলিভারির উপায়

নরমাল ডেলিভারির উপায় প্রতীকী ছবি
‘সকালে ব্রেকফাস্টটা অ্যাটলিস্ট সকাল ৮টায় করে নিতে হবে এবং দুপুরে দুই ঘণ্টা তাকে রেস্ট করতে হবে। আর রাতে অবশ্যই তাকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমি সবাইকে বলি রাত ১০টার মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া কমপ্লিট করে মোবাইলের ইন্টারনেটটা অফ করে ঘুমিয়ে যেতে হবে। তাহলে অন্তত ১১টা/১২টার মধ্যে ঘুম আসবে এবং সে সহজেই আট ঘণ্টা ঘুমের ব্যাপারটা এনশিউর করতে পারবে। লাইফস্টাইল চেঞ্জ অনেক বড় ব্যাপার।’

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সানজিদা হক (ছদ্মনাম)। প্রথম সন্তানকে গর্ভধারণের পুরোটা সময় শারীরিকভাবে ফিট অনুভব করেছেন তিনি। প্রসব বেদনা নিয়ে যেদিন হাসপাতালে গিয়েছেন, সেদিনও তার অবস্থা বেগতিক ছিল না, কিন্তু চিকিৎসক তাকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন।

এ কথা শুনে সানজিদার স্বামী অবাক হয়ে যান, কিন্তু প্রথম সন্তানকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে না চাওয়ায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে অস্ত্রোপচারে সম্মতি দেন। পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের মা হন সানজিদা। সেই থেকে এ নিয়ে আফসোসের শেষ নেই তার।

স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব বা নরমাল ডেলিভারির প্রবল ইচ্ছা থাকার পরও সানজিদার মতো অনেককে বাধ্য হয়ে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তারা যাতে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করতে পারেন, সে জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন পেইনলেস নরমাল ডেলিভারি ও ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার।

এক ভিডিওতে পরামর্শগুলো দিয়েছেন এ চিকিৎসক, যেগুলো তার ভাষায় নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো।

গর্ভাবস্থা অসুস্থতা নয়

অনেকে আমার কাছে জানতে চায় যে, ‘নরমাল ডেলিভারি হতে হলে আমাকে কীভাবে চলতে হবে?’ তো আমি সবার উদ্দেশে যে কথাগুলো বলি, সেটা হচ্ছে যে, একটি মেয়ে যখন কনসিভ (গর্ভধারণ) করে, তখন থেকেই আসলে তাকে সেভাবে তৈরি হতে হয় যে আমি একটা ন্যাচারাল ডেলিভারি প্রসেসে যাব।

এখনকার মেয়েদের মধ্যে আমি যে প্রবণতাটা দেখি, তা হলো তারা কনসিভটাকে মনে করে একটা অসুস্থতা। তারা মনে করে যে, আমি কনসিভ করেছি মানে আমি সিক। আমাকে সবসময় শুয়ে-বসে থাকতে হবে; আমাকে সবাই তুলে তুলে খাওয়াবে, আমি কোনো নড়াচড়া করব না, কোনো কাজকর্ম করব না।

ইভেন অনেকে পড়াশোনাও বন্ধ করে দেয়; কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। কেউ চাকরি-বাকরি করে থাকলে চাকরি ছেড়ে দেয়। মনে করে যে, আমি সবকিছু ছেড়ে বাসায় থাকব। কারণ আমি কনসিভ করেছি। এখানেই ভুল।

নরমাল ডেলিভারি হোক বা সি-সেকশন হোক, সেটা তো পরের কথা। প্রেগন্যান্সি কিন্তু একটা ন্যাচারাল প্রসেস। একটা মেয়ে যেমন ছোট থেকে বড় হবে, তার শারীরিক পরিবর্তন হবে, তেমনি কিন্তু একটা মেয়ের প্রেগন্যান্সিও হবে এবং এটা একটা ফিজিওলজিক্যাল (শরীরবৃত্তীয়) ব্যাপার।

জীবনযাপনে পরিবর্তনে

প্রেগন্যান্সি হলে তাকে একদম শুয়ে-বসে থাকা যাবে না। সংসারে স্বাভাবিক কাজগুলো সে করবে। তার পড়াশোনা সে চালিয়ে যাবে। তার অফিস, তার কলেজ সবকিছু সে চালিয়ে যাবে এবং সবচেয়ে বড় যেটা, তার লাইফস্টাইল তাকে চেঞ্জ করতে হবে। আগে যদি তার অভ্যাস থাকত মাঝরাতে ঘুমানো, দুপুরে ১২টায় ঘুম থেকে ওঠা, এই জিনিসগুলা চেঞ্জ করতে হবে। সারা রাত বসে বসে মোবাইল টেপা বা ফেসবুকিং করা, এই অভ্যাসগুলো তাকে চেঞ্জ করতে হবে। তাকে আর্লি মর্নিং ঘুম থেকে উঠতে হবে; সকালে অন্তত তাকে আধা ঘণ্টা হাঁটতে হবে।

সকালে ব্রেকফাস্টটা অ্যাটলিস্ট সকাল ৮টায় করে নিতে হবে এবং দুপুরে দুই ঘণ্টা তাকে রেস্ট করতে হবে। আর রাতে অবশ্যই তাকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমি সবাইকে বলি রাত ১০টার মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া কমপ্লিট করে মোবাইলের ইন্টারনেটটা অফ করে ঘুমিয়ে যেতে হবে। তাহলে অন্তত ১১টা/১২টার মধ্যে ঘুম আসবে এবং সে সহজেই আট ঘণ্টা ঘুমের ব্যাপারটা এনশিউর করতে পারবে। লাইফস্টাইল চেঞ্জ অনেক বড় ব্যাপার।

খাদ্যাভ্যাস

দ্বিতীয় হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। আমাদের মেয়েদের মাঝে খাবারের অভ্যাসটা কিন্তু খুবই বাজে একটা অভ্যাস। তাদের মধ্যে খুব প্রবণতা আছে ফাস্ট ফুড খাওয়ার; মন চাইলে বুফে খেতে যাওয়ার। এই জিনিসগুলো প্রেগন্যান্সিতে অ্যাভয়েড করতে হবে।

প্রেগন্যান্সিতে খাবারটা হবে ঘরে তৈরি এবং অবশ্যই ফ্রেশ খাবারটা এবং সে খাবারটা সময়মতো খাবে। খুব ভালো হয় যদি প্রেগন্যান্সির শুরুতেই একজন ডায়েটিশিয়ানের সাথে অ্যাটাচ হয়ে যায়। ডায়েটিশিয়ান তার বডি ওয়েট, হাইট ক্যালকুলেশন করে তাকে একটা আইডিয়াল ক্যালরি হিসাব করে তাকে একটা ডায়েট চার্ট দিল। সেই ডায়েট চার্টটা সে স্ট্রিক্টলি ফলো করে।

এমন অনেক প্যাশেন্ট আমি দেখেছি যে, ডায়েট চার্ট আমি ঠিকই দিই, কিন্তু ডায়েট চার্টটাও রেখে দেয়, সেই সঙ্গে তার সঙ্গে এক্সট্রা যে খাবারগুলো, তার মন চাইলে ফুচকা খেতে যাচ্ছে, মন চাইলে ফাস্ট ফুড খেতে যাচ্ছে। এই জিনিসগুলো সে করে ফেলে।

বাইরের খাবারের দুটি সমস্যা। একটা হচ্ছে অতিরিক্ত কিলোক্যালরি গেইন করে; খুব সহজেই মোটা হয়ে যায়। একটা স্টেজে এসে তার ডায়াবেটিস হয়; হাইপ্রেশার হয় এবং তখন আমাদের জন্য নরমাল ডেলিভারি অ্যালাউ করাটা অনেক কষ্টের হয়ে যায়। অ্যাকচুয়ালি প্রেগন্যান্সিটাই মানে ডেট পর্যন্ত যাওয়াটা অনেক কষ্টের হয়ে যায়।

হাঁটাচলা

এখনকার মেয়েদের মধ্যে আরেকটা ব্যাপার খুব বেশি দেখি আমি। মেয়েরা হাঁটে না; হাঁটতে চায় না। ঘরের মধ্যেও তারা হাঁটে না। জিজ্ঞেস করলে বলে যে, হাঁটলে গরম লাগে; হাঁটলে কষ্ট হয়, কোথায় হাঁটব, এ ধরনের নানা অ্যাক্সকিউজ।

আমি যেটা বলি যে, তোমাকে বাইরে গিয়ে, পার্কে গিয়ে দৌড়াইয়া হাঁটতে হবে না। তুমি ঘরের মধ্যে হাঁটো; তোমার রুমটার ভেতরে হাঁটো। যত ছোট রুমই হোক না কেন, ওর ভেতরে তুমি ১০ মিনিট হাঁটো। হেঁটে তুমি কিছুক্ষণ রেস্ট করে তোমার যদি একটানা হাঁটতে কষ্ট হয়। আবার ১০ মিনিট হাঁটো। তাইলে এই যে হাঁটাহাঁটির মধ্যেই থাকতে হবে।

লো কমোড ব্যবহার

আরেকটা টিপস আমি সবাইকে দিই। সেটা হচ্ছে যে আমাদের টয়লেট ব্যবহারটা। আমাদের সবার বাসায় কিন্তু এখন হাইকমোড ব্যবহার করে অভ্যস্ত। অনেকে ছোটবেলা থেকেই অভ্যস্ত। কারও পক্ষেই বাসার যে নিচু কমোড, সেই কমোডটাতে কিন্তু যাওয়া হয় না, কিন্তু প্রত্যেকের বাসায় একটা নিচু টয়লেট আছে।

আমি এ জন্য সবাইকেই বলি, তোমার প্রেগন্যান্সির শুরু থেকে অন্তত দিনে একবার টয়লেট করতে হলেও যদি ইউরিন করার জন্যও দরকার হয়, একবার হলেও সেই লো কমোড টয়লেটটাতে যাবে। এতে একটা ‍খুব ভালো কিন্তু পেলভিসের এক্সারসাইজ হয়।

মানসিক প্রস্তুতি

আর যেটা সবাইকে বলি যে, মানসিকভাবে প্রস্তুতি যে, আমি পারব। আমি কেন পারব না? সবাই পারলে আমিও পারব। আমার মা পেরেছে, আমার নানি পেরেছে। আমি কেন পারব না? এই জিনিসটা তাদের মনের মধ্যে আনতে হবে। আর মন থেকে এটা ফেলে দিতে হবে যে, চেষ্টা করে দেখব। না পারলে সি-সেকশন করে ফেলব।

অল্টারনেটিভটা মাথায় আনা যাবে না যে, না পারলে সি-সেকশন তো আছেই। অল্টারনেটিভটা আসাতে, অল্টারনেটিভটা ইজিলি এভেইলেবল হওয়াতে আমাদের নরমাল ডেলিভারির রেটটা অ্যাকচুলয়ালি এতখানি কমে গেছে।

আরেকটা হচ্ছে যে, আমি দেখেছি, আমার প্যাশেন্টদের মধ্যে যারা একদম ডেট পর্যন্ত, হয়তো ডেটের আগের দিন পর্যন্ত অফিস করেছে কিংবা কলেজ করেছে, ভার্সিটি করেছে। এমনও প্যাশেন্ট দেখেছি যে, আড়ংয়ে গিয়ে শপিং-টপিং করে দুই ঘণ্টা হেঁটে আসার পরে বাসায় লেবার পেইন উঠেছে। আমার এখানে আসার পর খুব ইজি, হয়তো বা দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যেই তার ডেলিভারি হয়ে গেছে।

এই জন্য অ্যাকটিভিটিটা খুব ইম্পরট্যান্ট যে, তাকে সবসময় চলাফেরার মধ্যেই থাকতে হবে। শুধু মুখে বলব আমি নরমাল ডেলিভারি করব, কিন্তু আমার ইচ্ছামতো খাব, আমি সারা দিন ঘরে এসি ছেড়ে নিজের রুমের ভেতরে শুয়ে থাকব, হয় মোবাইল বা ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকব। এ ধরনের লাইফস্টাইল মেন্টেইন করলে কিন্তু কোনোকিছুই পসিবল না। অ্যাকচুয়ালি একটা সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেওয়া পসিবল না, নিজেও শেষ পর্যন্ত সুস্থ থাকা সম্ভব না।

এ কারণেই এখন আমাদের মায়েদের মধ্যে হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস এগুলো খুব বেশি। দেখা যায় যে, আগে কখনোই ছিল না; প্রেগন্যান্সির মাঝখানের দিকে তারা এগুলোতে অ্যাটাক হচ্ছে।

আমি সবাইকেই বলব, লাইফস্টাইল চেঞ্জ করতে হবে, খাবারদাবারের হ্যাবিট চেঞ্জ করতে হবে। স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালাইয়া যেতে হবে। মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে যে, আমি অসুস্থ। মনে করতে হবে যে, হ্যাঁ এটা আমার লাইফের একটা পার্ট এবং এটাও একদমই ন্যাচারাল একটা প্রসেস। এটা আমাকে নিতে হবে এবং আমি অবশ্যই ন্যাচারাল ডেলিভারি ট্রাই করব। এটাতে প্রথম থেকে মেন্টালি ফিক্সড হতে হবে। তাহলেই সম্ভব।

আরও পড়ুন:
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা, যা জানা জরুরি

মন্তব্য

জীবনযাপন
Food list for pregnant women which is important to know

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা, যা জানা জরুরি

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা, যা জানা জরুরি গর্ভাবস্থায় খাবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পুষ্টির বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি। ছবি: সংগৃহীত
‘এ সময়টাতে অবশ্যই একজন মাকে তার পুষ্টির দিকে লক্ষ রাখতে হবে; তার শরীরের যত্ন নিতে হবে এবং কী খাওয়া উচিত বা কী খাবে না। এ ক্ষেত্রে আমি যদি বলি যে, আমরা সবসময় জেনে এসেছি, একজন মা যখন প্রেগন্যান্ট (গর্ভবতী) হন, সাথে সাথে তার খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেলতে হবে; তাকে অনেক বেশি খেতে হবে। কারণ তার সাথে এখন আরেকজন মানুষও আছে যে খাচ্ছে।’

ভেতরে একজন মানুষকে লালন করছেন। আপনার মতো তারও খাবারও দরকার, তবে সেটা কী পরিমাণে দরকার, তা নিয়ে আছেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ে নিজের খাবারের তালিকাটা কেমন হবে, তাও হয়তো জানা নেই।

গর্ভধারণের পর যাদের মধ্যে এমন সব সংশয় বা প্রশ্ন আছে, তাদের বেশ কিছু সমাধান দেয়ার চেষ্টা করেছেন বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান লাইফস্প্রিং লিমিটেডে কর্মরত নিউট্রিশনাল সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. মুনমুন জাহান।

এক ভিডিওতে গর্ভবতী মায়েদের করণীয় বিষয়গুলো ধাপে ধাপে তুলে ধরেছেন এ পুষ্টি মনোবিদ। সেসব পরামর্শ তার ভাষায় পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো।

গর্ভধারণের সময়টি প্রত্যেকটি মায়ের জন্য অনেক আনন্দের একটা সময়। পাশাপাশি মূল্যবান একটা সময়। প্রত্যেকটি মা-ই চেষ্টা করেন তার সন্তানের জন্য নিজেকে ভালো রাখতে এবং তার জন্যই আজকে আমরা একটু আলোচনা করব যে, গর্ভধারণের সময় একজন মায়ের আসলে ঠিক কীভাবে জীবনটা পার করা উচিত বা কী কী কাজ তার করা উচিত।

পুষ্টিতে নজর

এ সময়টাতে অবশ্যই একজন মাকে তার পুষ্টির দিকে লক্ষ রাখতে হবে; তার শরীরের যত্ন নিতে হবে এবং কী খাওয়া উচিত বা কী খাবে না। এ ক্ষেত্রে আমি যদি বলি যে, আমরা সবসময় জেনে এসেছি, একজন মা যখন প্রেগন্যান্ট (গর্ভবতী) হন, সাথে সাথে তার খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেলতে হবে; তাকে অনেক বেশি খেতে হবে। কারণ তার সাথে এখন আরেকজন মানুষও আছে যে খাচ্ছে।

এটা অবশ্যই ঠিক কথা, কিন্তু আমরা যদি প্রেগন্যান্সির টাইমটাকে তিন মাস, তিন মাস করে তিনটা ভাগে ভাগ করি, ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার, সেকেন্ডে ট্রাইমেস্টার, থার্ড ট্রাইমেস্টার, এভাবে আমরা লক্ষ করলে দেখব যে, প্রথম ট্রাইমেস্টার বা প্রথম তিন মাসে মায়ের ওজন যদি অতিরিক্ত পরিমাণে নাও বাড়ে, কোনো সমস্যা নেই। কারণ এই সময়টিতে অনেকেরই দেখা যায় বমি বমি ভাব আসে বা শরীরে যে হরমোনাল চেঞ্জ আসে, এটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সময় লেগে যায়।

কাজেই এই সময়টিতে আমরা খুব বেশি হতাশ হয়ে যাব না যে, আমার তো ওজন তেমন বাড়ল না। কাজেই তখন যদি আমরা একজনের খাবারই খাই, কিন্তু পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করি, মোর দ্যান এনাফ (যথেষ্টর চেয়ে বেশি)।

ওজন কতটুকু বাড়াব

আমরা যদি আমাদের প্রেগন্যান্সির পিরিয়ডের জার্নিটাকে দুই ভাগে ভাগ করি, একটা সময় হচ্ছে আমাদের শরীরে শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে; মায়ের শরীরে। আরেকটা সময় মায়ের শরীরের শক্তিটা ভেঙে যাচ্ছে।

প্রথম ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত মায়ের শরীরের শক্তিটা সঞ্চয় হতে থাকে। এর পরের সপ্তাহ, এর পরের সময়টিতে বা যদি আমরা বলি লাস্ট ট্রাইমেস্টারে যেটা হয়, মায়ের শরীরের শক্তি তখন ভাঙতে থাকে এবং তা শিশুর শরীরে গিয়ে জমা হতে থাকে। এভাবে আমরা যদি বলি যে, আমরা তাহলে সর্বমোট ওজন কতটুকু বাড়ানোর চেষ্টা করব?

যাদের আমাদের ওজনটা স্বাভাবিক থাকে, তাদের ওজন বাড়াতে হবে সাড়ে ১১ থেকে ১৬ কেজি পর্যন্ত। যারা আমরা ওভারওয়েট থাকি, তাদের ক্ষেত্রে আমাদেরকে এটা বাড়াতে হবে সাত থেকে সাড়ে ১১ পর্যন্ত। যারা ওবিস (স্থূল) থাকি আগে থেকেই, তাদের ক্ষেত্রে ওজনটা বাড়াতে হবে পাঁচ থেকে ৯ কেজি পর্যন্ত।

আমি যদি আরেকটু ভেঙে বলি যে, তাহলে প্রতি সপ্তাহে একজন মায়ের কতটুকু করে ওজন বাড়ানো উচিত সেকেন্ড এবং থার্ড ট্রাইমেস্টার থেকে? কারণ প্রথম ট্রাইমেস্টারে আমাদের ওই রকম ওজন বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। সেকেন্ড এবং থার্ড ট্রাইমেস্টার থেকে আমি যদি আবারও বলি, যারা আন্ডারওয়েট (যথেষ্ট ওজনের কম) থাকে, তাদেরকে ওজনটা বাড়াতে হবে প্রতি সপ্তাহে দশমিক ৫ কেজি (আধা কেজি) করে। তার পরবর্তীতে যাদের সাধারণ ওজন থাকে, তাদের বাড়াতে হবে দশমিক ৪২ কেজি করে (আধা কেজির কম)। যারা সাধারণত ওবিস, তাদের ক্ষেত্রে ওজনটি বাড়াতে হবে প্রতি সপ্তাহে দশমিক ২২ কেজি করে।

কী খেতে হবে

আমরা জানলাম যে, কখন আমাদের ওজনটা বাড়াতে হবে, কখন আমাদের বাড়তি খাবার খেতে হবে। এখন আমরা আসি আসলে আমাদেরকে কী খেতে হবে।

যদি প্রথমেই বলি যে, আমাদের অনেকেরই ধারণা থাকে যে, ভাতের পরিমাণটা একটু বেশি খেতে হবে। কারণ আমার শরীরে এখন আরেকজন নতুন ছোট্ট মানুষ আছে; তারও খাবারের প্রয়োজন, কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমরা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে হাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার খাই বা আমরা যদি খুব বেশি কার্বোহাইড্রেট (শর্করা) নিয়ে থাকি, এর ফলে যেটা হবে, আমাদের শিশুর ওজন বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত বেশি আসবে, যেটা পরবর্তীতে আমার শিশুর জন্য চাইল্ডহুড অনসেট মেটাবলিক সিনড্রোম বা ডায়াবেটিস বা অন্য রকমের পরবর্তী জীবনে আমার সন্তানকে এটা একটা সাফার করতে হবে। এ কারণে অবশ্যই আমরা কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাব, কিন্তু চেষ্টা করব লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার খেতে। আমরা একটু শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করব, আঁশজাতীয় শাকসবজি খাব আমরা।

আমরা আলু খেতে পারি। কোনো সমস্যা নেই। আলু কিন্তু বেশ ভালো একটা খাবার। অনেকে ভেবে থাকি যে, আলু হয়তো ওজন বাড়িয়ে দেবে, আমার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এটা আসলে ঠিক না। আমরা পরিমিত পরিমাণে আলু খেতে পারব বা অন্যান্য শাকসবজিও খেতে পারব; ফল খেতে পারব। আমরা ভাত এবং রুটিও কিন্তু খেতে পারব অল্প পরিমাণে। লাল চালের ভাত অথবা লাল আটার রুটি এ ক্ষেত্রে অনেক উপকারী।

প্রোটিনের ভূমিকা

প্রোটিন খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান এই প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডে। কী কারণে আমাকে প্রোটিনটি রাখতে হবে? কারণ প্রোটিন আমার সন্তানের শরীর গঠনের জন্য অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা রাখবে এবং এই ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে, ফার্স্ট ট্রাইমেস্টারে একজন মা এক গ্রাম পার ডে (প্রতিদিন) প্রোটিন নেবেন। সেকেন্ড ট্রাইমেস্টারে তিন গ্রাম পার ডে প্রোটিন নেবেন এবং থার্ড ট্রাইমেস্টারে নাইন গ্রাম পার ডে প্রোটিন উনাকে নিতে হবে।

ওভারঅল এ প্রোটিনটা কীভাবে পেতে পারি আমাদের খাবারে? আমরা ডিম খেতে পারি, আমরা দুধ খেতে পারি, আমরা মাছ খেতে পারি। মাছ খুবই উপকারী একটা খাবার যেটা কিনা আমার সন্তানের বুদ্ধি বাড়াতে বা মেধার বিকাশে অসাধারণ সাহায্য করবে। এ ছাড়াও আমরা দুধ বা দুধজাতীয় খাবারগুলো নিতে পারি বা আমরা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় মাংস খেতে পারি।

আমরা একটু চেষ্টা করব যে, চর্বিজাতীয় মাংসগুলো বাদ দিতে। যেটা আমাদের জন্য উপকারী থাকবে, আমরা ওই খাবারগুলোর ভেতরে খাওয়ার চেষ্টা করব।

দুধ এর মধ্যে খুবই ভালো একটা উপাদান, যেটা কিনা আমাদের প্রোটিনের সাপ্লিমেন্ট দেবে। পাশাপাশি আমাদের অন্য মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টের (অনুপুষ্টি) সাপ্লিমেন্টও দেবে। আমাদের এটাও লক্ষ রাখতে হবে যে, আমাদেরকে উপকারী ফ্যাট আমাদের শরীরে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে আমরা পাই। সেই ক্ষেত্রে আমরা বাদাম খেতে পারি এবং এটাও করত পারি, সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার কিংবা থার্ড ট্রাইমেস্টার থেকে আমরা একটা ফিশ অয়েল হয়তো খেতে পারি। এখানে একটা জিনিস আছে। ফিশ অয়েল আসলে আমরা কোনটা খাব?

আমরা চেষ্টা করব ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড খেতে। কারণ অনেক সময় এগুলোতে কিছু পার্থক্য থাকে। আমরা খেয়াল করি না, মোটাদাগে আমরা নিয়ে আসি অন্য একটা জিনিস, যেটা আমাদের প্রয়োজন নেই। তাই আমরা চেষ্টা করব ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সাপ্লিমেন্টটা যেন আমরা পেতে পারি, যেটা কিনা আবারও আমার বাচ্চার জন্য উপকারী হবে, আমার জন্যও উপকারী হবে।

অনুপুষ্টিতে মনোযোগ

আরেকটা ব্যাপার আমাদের অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে যে, এই সময় অবশ্যই আমরা এই ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টগুলো প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটের পাশাপাশি মাইক্রোনিউট্রয়েন্ট, এখন যেটা বলব, সেগুলোর দিকে আমাদেরকে মনোযোগী হতে হবে।

মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট আমাদের শরীরে আসলে খুব অল্প পরিমাণে দরকার হয়, ‍কিন্তু এই অল্প পরিমাণই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ এগুলোর একটির কমতি আমাদের সন্তানের জন্য অনেক বড় রকমের ঝুঁকি ডেকে নিয়ে আসবে।

আয়রন ও আয়োডিনযুক্ত খাবার

এ সময়ে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যে, আমাদের আয়রনযুক্ত খাবার খেতে হবে। আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই ক্যালসিয়াম এবং ফলিকযুক্ত খাবার খেতে হবে। আয়োডিনযুক্ত খাবার যদি না খাই, অবশ্যই আমার শরীরে রক্তশূন্যতার পাশাপাশি আমার সন্তানের বুদ্ধির বিকাশ বা তারও রক্তশূন্যতা দেখা যেতে পারে। কিছু সমস্যা অবশ্যই চলে আসবে।

আমরা হয়তো একটু গরুর কলিজা খেতে পারি বা আমরা কচুজাতীয় খাবার খেতে পারি। আমরা বাদাম খেতে পারি বা আমরা অন্যান্য যে খাবারগুলোর মাধ্যমে আয়রন পেতে পারি, সে খাবারগুলো আমাদের খাদ্যতালিকায় রাখব।

আয়োডিনযুক্ত খাবারের ভেতরে আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়ার চেষ্টা করব। বর্তমানে অনেকে আমরা স্বাস্থ্য সচেতন থাকি। এ কারণে আমরা পিংক সল্ট খাচ্ছি বা অন্য রকম কোনো সল্ট খাওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু এই প্রেগন্যান্সির সময়টাতে আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত আয়োডিনের সোর্সটা যেন আমার কাছে ভালোমতো থাকে। এ কারণে সহজলভ্য আয়োডিনযুক্ত লবণ যেটা, সেটা খাওয়ার চেষ্টা করব।

ক্যালসিয়াম

আমরা আরও চেষ্টা করব ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ার জন্য। ক্যালসিয়ামটা আমাদের শরীরে খুবই প্রয়োজন। কারণ আমার শরীরের ক্যালসিয়াম থেকেই কিন্তু আমার সন্তান ক্যালসিয়াম নিচ্ছে। সো আমার শরীরে যদি ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে, একটা পর্যায়ে আমার শরীর থেকে ক্যালসিয়ামটা ভেঙে ঠিকেই আমার সন্তানের শরীরে চলে যাবে। পরবর্তীতে আমার কোমর ব্যথা, আমার হাড়ক্ষয়, বিভিন্ন ধরনের রোগ একজন মাকে ভোগ করতে হয়। এ কারণে আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খুব বেশি পরিমাণে রাখতে।

আমরা ডিম খেতে পারি, আমরা দুধ খেতে পারি। বাট একান্তই যদি দেখা যায় যে, আমাদের বমি হচ্ছে, আমরা এগুলোর কোনোটাই খেতে পারছি না, আমরা সাপ্লিমেন্ট নিতে পারি আমাদের ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে। পাশাপাশি আমাদেরকে অবশ্যই ফলিকযুক্ত খাবার খেতে হবে।

আমাদের প্রেগন্যান্সির শুরু থেকে সাধারণত রিকমেন্ডেশন করা হয়ে থাকে যে, ফোর হানড্রেড মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড নিতে এবং আমাদের এই সময়টাতে সাইট্রাস (কমলা কিংবা লেবুজাতীয়) ফলগুলো যেগুলো থাকে, সাইট্রাস ফলগুলো আমরা একটু নেওয়ার চেষ্টা করব। বিভিন্ন রকমের ফল এবং শাকসবজির ভেতরে আমরা যদি আমাদের খাবারে মোটামুটি দিনে পাঁচবার করে ছোট ছোট অল্প অল্প করে একটু একটু খেতে থাকি, আমাদের কিন্তু ইজিলি এই যে, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলোর ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে।

ভিটামিন

আমাদের যেটা আরও বেশি প্রয়োজন হবে, আমাদের ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে যে, আমরা স্পেসিফিকলি ভিটামিন ডির ঘাটতিটা যেন আমাদের শরীরে না থাকে। আমরা রোদে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারি।

ইতোমধ্যেই আমি যে খাবারগুলো বলে দিয়েছি যে, আমরা অবশ্যই একটু রঙিন শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করব, ফল খাওয়ার চেষ্টা করব। ডিম বা দুধজাতীয় খাবার বা আমরা মাংস বা মাছ বা বাদাম বা আমরা হয়তো ফিশ অয়েল খাওয়ার চেষ্টা করছি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যেটা। ওভারঅল এই খাবারগুলোর ভেতরে আমরা যদি খাওয়ার চেষ্টা করি, আমরা নিজেরাই অনুভব করব যে, আমাকে বাড়তি হয়তো ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না, কিন্তু এই খাবারের কারণে আমার পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়ে যাচ্ছে এবং আমার শরীর সুস্থ থাকছে।

আরেকটা বিষয় আমাদেরকে যেটা লক্ষ রাখতে হবে, এই সময়টিতে আমরা যেন ফ্রোজেন ফুডগুলো, সেগুলো একটু অ্যাভয়েড করার চেষ্টা করি। অনেকেই দেখা যায় যে, সিজনের খাবারের বাহিরেও অন্য খাবার, যেটা ফ্রিজে দিনের পর দিন সংরক্ষণ করে রাখা, ওই রকম খাবার, হঠাৎ করে ক্রেভিং আসে, খেতে চায়। ওই একটা প্রবণতা আমাদের আছে। গর্ভবতী মা যা খেতে চায়, তাকে ওই সময় সাথে সাথে দিতে হবে। প্রয়োজন নেই।

আমাদেরকে যতটা সম্ভব বাসার খাবার খেতে এবং সুস্থ খাবার খেতে হবে; পরিষ্কার খাবার খেতে হবে, যেটার ফলে আমার শরীর ভালো থাকবে; আমার সন্তানও ভালো থাকবে।

পুরো ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করতে পারেন এই লিংকে

আরও পড়ুন:
লোকায়ত শাক, লৌকিক খাদ্যাভ্যাস
এশিয়ার সেরা স্ট্রিট ফুডের তালিকায় ‘ফুচকা’
চবিতে ‘সেরা খাদক’ নূর
ফুচকা নিষিদ্ধ হলো নেপালের এক শহরে
মুড়ি নিয়ে কেউ কিছু জানে না

মন্তব্য

জীবনযাপন
Brothers prostitution card is rolling on the pavement of Dhaka

ঢাকার ফুটপাতে গড়াচ্ছে ‘ভাই’দের দেহব্যবসার কার্ড

ঢাকার ফুটপাতে গড়াচ্ছে ‘ভাই’দের দেহব্যবসার কার্ড রাজধানীর শ্যামলীতে শিশুমেলার সামনের ফুটওভার ব্রিজে পড়ে থাকা দালালদের কার্ড। ছবি: নিউজবাংলা
ঢাকার প্রধান প্রধান সড়ক, ফুটপাত ও ফুটওভারব্রিজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় হাজারও ভিজিটিং কার্ড। সেগুলোতে বড় করে লেখা থাকে ‘... ভাই’। সঙ্গে মোবাইল ফোন নম্বর। নিচে লেখা- ১০০% নিরাপদ আবাসিক হোটেল। আপাতদৃষ্টিতে এটি আবাসিক হোটেলের বিজ্ঞাপনের কার্ড মনে হলেও ফোন করলেই বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। ফোনে আরেক প্রান্ত থেকে যিনি কথা বলেন তিনি যৌনকর্মীদের দালাল।

রাজধানী ঢাকার প্রধান প্রধান রাস্তা, ফুটপাত ও ফুটওভারব্রিজে পড়ে থাকে নানা রঙের অজস্র ভিজিটিং কার্ড। পথচলতি নগরবাসী অনেকে সেসব লক্ষ্য করেন, কেউবা দৃষ্টিই দেন না। তবে একটু লক্ষ্য করলেই চোখে পড়বে ব্যতিক্রমটা।

উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম- নগরীর প্রায় সব এলাকায় এসব কার্ডের দেখা পাওয়া যায়। তবে জনসমাগম বেশি হয় এমন এলাকার ফুটপাতে এসব কার্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেগুলোতে বড় করে লেখা থাকে ‘... ভাই’। সঙ্গে থাকে মোবাইল ফোনের একটি নম্বর। নিচের দিকে লেখা থাকে- ১০০% নিরাপদ আবাসিক হোটেল।

আপাতদৃষ্টিতে যে কেউ ধরে নেবে যে এটি কোনো আবাসিক হোটেলের বিজ্ঞাপনের কার্ড। তবে এসব ভিজিটিং কার্ডে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করলে বেরিয়ে আসে আসল রহস্যটা। ফোনে আরেক প্রান্ত থেকে যিনি কথা বলেন তিনি যৌনকর্মীদের একজন দালাল।

সরেজমিনে কারওয়ান বাজার, শ্যামলী, কলেজ গেট, মগবাজার, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, মতিঝিল, কমলাপুরসহ নগরীর জনবহুল প্রায় সব এলাকার প্রধান প্রধান সড়কের ফুটপাত ও ওভারব্রিজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এমন ভিজিটিং কার্ড পড়ে থাকতে দেখা গেছে। লাল, নীল, হলুদ, সাদা, সবুজ রংয়ের এসব ভিজিটিং কার্ডে সিরাজ ভাই, সিদ্দিক ভাই, নিরব ভাই, ডালিম ভাই, ইমরান ভাই, তুষার ভাইসহ অসংখ্য ভাইয়ের নাম ও ফোন নম্বর লেখা থাকে।

কারওয়ানবাজার এলাকার ফুটপাত থেকে এমন কিছু কার্ড কুড়িয়ে হাতে নিয়ে তাতে পাওয়া গেল বাদশা ভাই, ডালিম ভাই, ইমন ভাইসহ আরও অনেক নাম।

পেট্রোবাংলার ভবনের সামনে চায়ের দোকানি ফয়সাল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমিও ভাই অনেক দিন ধরেই ফুটপাতে এমন ভিজিটিং কার্ড পড়ে থাকতে দেখছি। আমারও আগ্রহ জাগে কার্ডগুলো কারা এখানে ফেলে রেখে যায় তা দেখতে। একদিন খেয়াল করলাম বোরকা পরা এক মেয়ে এমন বেশকিছু কার্ড আমার দোকানের পাশের ফুটপাতে ফেলে দ্রুত হাঁটা শুরু করলো। পেছন থেকে ডাক দিলে ওই মহিলা হাঁটার গতি বাড়িয়ে কেটে পড়লো।’

তিনি জানালেন, আগে ফুটপাতে এই কার্ড কম দেখা যেতো। এখন প্রায় প্রতিদনই যেন কার্ডের সংখ্যা বাড়ছে। কোনো কোনো দিন ওরা দুই-তিনবার করে এসে এসব কার্ড ফেলে রেখে যায়। কিন্তু সারাক্ষণ তাকিয়ে না থাকলে ওদের চেনা বা ধরা মুশকিল।

কারওরান বাজার এলাকার ফুটপাত থেকে ‘ডালিম ভাই’ নামের একটি কার্ড হতে নিয়ে সেখানে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন দেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক।

সঙ্গে সঙ্গে ফোনের ও প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘আপনার জন্য আমরা কী কী সেবা দিতে পারি স্যার? আমাদের এখানে সব ধরনের ফ্যাসালিটি আছে।’

কী ধরনের সুবিধা আছে- এমন প্রশ্নে ওই ব্যক্তি উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘ঘণ্টায় নাকি নাইট করবেন? আমাদের এখানে সবই আছে ভাই। এটা আমাদের আবাসিক হোটেল। এখানে কোনো রিক্স (রিস্ক) নাই।’

ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঠিকানা দেওয়ার কোনো নিয়ম নাই। আপনি শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে এসে এই নম্বরে ফোন দিলেই হবে। আমরা আপনাকে নিয়ে আসব। আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই ভাই। থানা পুলিশ থেকে স্থানীয় সবাইকে আমাদের ম্যানেজ করা।

‘আমাদের এখানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ভালো মেয়ে আছে। আপনাকে ১৪-১৫টা দেখাবো। এর মধ্যে আপনি আপনারটা বেছে নিবেন। আমাদের রেট ঘণ্টায় ১৫শ’ আছে, ২ হাজারও আছে। আর নাইট করলে সাড়ে ৩ হাজার আছে, আবার ৪ হাজার টাকারও মেয়ে আছে। আমরা এখানে ২৪ ঘণ্টাই সার্ভিস দেই।’

ঢাকার ফুটপাতে গড়াচ্ছে ‘ভাই’দের দেহব্যবসার কার্ড
শ্যামলী শিশুমেলার সামনে ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়িতে পড়ে আছে অজস্র কার্ড। ছবি: নিউজবাংলা

শ্যামলীর শিশুমেলার সামনের ফুটওভারব্রিজের ওপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে এমন শত শত ভিজিটিং কার্ড। তবে কারা এই ভিজিটিং কার্ড ফেলে রেখে যায় সেটা বলতে পারেননি ওভারব্রিজের ওপর বসা ভ্রাম্যমাণ দোকানদাররা।

এখানে মাস্ক বিক্রেতা মোস্তাফিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল ৭-৮টার দিকে যখন আমি এখানে দোকান বসাই তখন এই ব্রিজে ভিজিটিং কার্ডের জ্বালায় হাঁটা যায় না। কারা যেন সকালে শত শত কার্ড ছিটিয়ে রেখে যায়। আমিসহ এখানকার দোকানদাররা প্রতিদিন সকালে এসে প্রথমেই ঝাড়ু দিয়ে এই কার্ড পরিষ্কার করি।’

এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজ বলেন, ‘বিভিন্ন বয়সের মানুষ এগুলো ছিটিয়ে দ্রুত চলে যায়। তবে তাদের বেশিরভাগই ২০-২৫ বছরের ছেলেপেলে। প্রথমে ওরা এখানে আসে, কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে যখন লোকজন কম থাকে তখন পকেট থেকে মুঠিভর্তি কার্ড নিয়ে পুরো ওভারব্রিজে ছিটিয়ে চলে যায়। দিনের বেলায়ও দুই-একবার ওরা এখানে কার্ড ফেলে যায়। মাঝে মাঝে বোরকা পরে মেয়েরাও এসে এই কার্ড ছিটিয়ে যায়।’

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো খারাপ কাজের জন্য ফেলে রাখে ভাই। এইসব যৌনকর্মীর দালালদের নম্বর। আবার কিছু কিছু যৌনকর্মী নিজেও এই ভিজিটিং কার্ডে থাকা নম্বর ব্যবহার করে।’

ওভারব্রিজের নিচে আগারগাঁওয়ের রাস্তায় বাদাম বিক্রি করেন আব্দুর রহমান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে এই কার্ড কম দেখা যেতো। কিন্তু এখন আপনি যেখানেই তাকাবেন এই কার্ড দেখতে পাবেন। গতকাল দেখি বোরকা পরা এক মহিলা এই ফুটপাতে আর ওভারব্রিজে কার্ড ছিটিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি ডাক দিলে দ্রুত সে দৌড়ে চলে যায়।’

‘এ ধরনের হোটেল ঢাকা শহর জুড়েই আছে। এই এলাকায়ই ৭টি হোটেল আছে যেগুলোতে দেহব্যবসা চলে। এর মধ্যে গাবতলী এলাকায় আছে ৫টি- নিউ আগমন হোটেল, হোটেল যমুনা, নিউ বলাকা হোটেল, রজনীগন্ধা হোটেল ও স্বাগতম হোটেল। আর টেকনিক্যাল এলাকায় আছে ধানসিঁড়ি হোটেল ও বানাম সিটি হোটেল।

শ্যামলী ওভারব্রিজের ওপর থেকে তুষার ভাই লেখা একটি কার্ডের নম্বরধারীর কথা হয় নিউজবাংলার সঙ্গে। ফোন করা মাত্র ওপাশ থেকে বলা হয়, ‘তুষার ভাই বলছি। আপনার জন্য আমরা কী সেবা দিতে পারি?’

এটা কী ধরনের আবাসিক হোটেল জানতে চাইলে ওপাশ থেকে বলা হয়, ‘শটে আছে, ঘণ্টায় আছে, নাইট আছে। আপনি কিভাবে নিবেন? আমাদের এখানে শটে ৫৫০ টাকা, ঘণ্টায় ১৮ শ থেকে ২৫ শ টাকা। আর নাইট ৩ হাজার আছে, ৪ হাজার আছে। আমাদের এখানে ভালো ঘরের পড়াশুনা করা মেয়েরা আছে। আপনার পছন্দ হবে।’

আপনার ভিজিটিং কার্ডটা আমি শ্যামলী থেকে পেয়েছি। কিন্তু এখানে হোটেলের কোনো ঠিকানা নেই। এমন প্রশ্নের জবাবে ফোনের ওপাশ থেকে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আপনি শ্যামলী থেকে একটা বাসে উঠে গাবতলী বাস টার্মিনালের এক নম্বর গেটের বিপরীত পাশে এসে এই নম্বরে কল দিয়েন। আমি আপনাকে নিয়ে আসব।’

এই তুষার ভাইয়ের কথার সূত্র ধরে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় অনুসন্ধান চালায় নিউজবাংলা। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে পর্বত সিনেমা হলের পাশে দেখা মেলে এ ধরনের ভিজিটিং কার্ড হাতে এক ব্যক্তিকে। তিনি ফুটপাত ধরে হাঁটা সাধারণ মানুষের হাতে গুঁজে দিচ্ছিলেন একটি করে ভিজিটিং কার্ড।

প্রথমে কাস্টমার ও পরে এক পর্যায়ে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা হয় ওই ব্যক্তির সঙ্গে।

নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, ‘ভাই, এই কার্ডে আমার যে নাম আছে সেটা নকল। এই নাম মিডিয়ায় দিলে আমার লাইনের (ব্যবসায়িক) লোক চিনে ফেলবে। আর আসল নাম দিলে আমার পরিবার চিনে ফেলবে। এগুলো পেটের দায়ে করছি। আগে কাপড়ের দোকানে কাজ করতাম। চাকরি চলে গেলে এই কাজে জড়িয়ে পড়ি।’

‘আমি ভিজিটিং কার্ড রাস্তায় ছিটাই না। রাস্তায় ছিটালে পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমি মানুষের হাতে হাতে কার্ড দিই। এই কার্ড দিলে হোটেল মালিক আমাকে দিনে ৭০০ টাকা দেয়। এছাড়া আমার কার্ডের নম্বর থেকে আসা কাস্টমার কাজ শেষে আমাকে বকশিস দেয়। সব মিলে মাসে আমার ৩০-৩৫ হাজার থাকে।

‘আমাদের হোটেল মালিক সব কিছু ম্যানেজ করে চলেন। তাই কোনো ঝামেলা হয় না। মাসিক টাকা দিয়ে থানা-পুলিশ, নেতা-গুতা সব হাতে রাখেন তিনি।’

দেহব্যবসায়ীর এই দালাল আরও বলেন, ‘এ ধরনের হোটেল ঢাকা শহর জুড়েই আছে। এই এলাকায়ই ৭টি হোটেল আছে যেগুলোতে দেহব্যবসা চলে। এর মধ্যে গাবতলী এলাকায় আছে ৫টি- নিউ আগমন হোটেল, হোটেল যমুনা, নিউ বলাকা হোটেল, রজনীগন্ধা হোটেল ও স্বাগতম হোটেল। আর টেকনিক্যাল এলাকায় আছে ধানসিঁড়ি হোটেল ও বানাম সিটি হোটেল।

‘এছাড়া অনেকে বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে অস্থায়ীভাবে দেহব্যবসা চালায়। আর মিরপুর, মগবাজার, পল্টন, যাত্রাবাড়ীসহ পুরো ঢাকা শহরে এ ধরনের হোটেল বা বাসাবাড়ি আছে শত শত। সংখ্যাটি হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।’

গাবতলীর এসব হোটেল মালিক কোনো বোর্ডার না থাকলেও কেবল দেহব্যবসা করে মাসে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করে বলে দাবি করেন এই দালাল। তিনি বলেন, ‘প্রতিটা হোটেলেরই ২০-২৫টি নিজস্ব মেয়ে থাকে। এরা সারাদিনই হোটেলেই থাকে। এছাড়া প্রতিটি হোটেলেরই নিজস্ব কিছু দালাল থাকে। তারা কিছু মেয়ে সরবরাহ করে।

‘দালাল এমনকি মেয়েরাও কাস্টমার এনে দেয়। আর প্রতিটি হোটেলেই আমার মতো ৬-৭ জন লোক থাকে যারা ভিজিটিং কার্ড দিয়ে প্রতিদিন কিছু না কিছু কাস্টমার এনে দেয়।

‘তাছাড়া কাস্টমারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলে তাদের হোম সার্ভিসও দেই। মানে তাদের (কাস্টমার) দেয়া ঠিকানায় মেয়ে পাঠিয়ে দিই। আমাদের এই এলাকা দারুস সালাম থানার আন্ডারে। আমাদের হোটেল মালিক সব কিছু ম্যানেজ করে চলেন। তাই কোনো ঝামেলা হয় না। মাসিক টাকা দিয়ে থানা-পুলিশ, নেতা-গুতা সব হাতে রাখেন তিনি।’

গাবতলী এলাকা মিরপুরের দারুস সালাম থানাভুক্ত এলাকা। থানার ওসি শেখ আমিনুল বাসার এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এই থানায় নতুন এসেছি। তাই এ ধরনের আবাসিক হোটেল বিষয়ে আমার কাছে তথ্য নেই। তবে আমি মাঝে মাঝেই গাবতলী এলাকার বিভিন্ন হোটেলে ফোর্স পাঠাই। আমাদের পুলিশ সদস্যরা খারাপ কিছু পেলে আমাকে জানানোর কথা। তবে তারা এখনও তেমন কিছু পায়নি।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এ কে এম হাফিজ আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের ভিজিটিং কার্ড ফেলে অনৈতিক ব্যবসার বিষয়টি আমি এখনও পুরোপুরি অবগত নই। মনে হচ্ছে এই অনৈতিক ব্যবসার এটি নতুন কোনো ফাঁদ। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। ঘটনা সত্য হলে আমরা অবশ্যই অ্যাকশনে যাব।’

মন্তব্য

জীবনযাপন
The trend of suicide is increasing in India due to the trap of sex

অনলাইন যৌনতার ফাঁদে সর্বনাশ

অনলাইন যৌনতার ফাঁদে সর্বনাশ প্রতীকী ছবি
একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ভিডিও কল পান শ্যাম। শার্ট খুলে শ্যাম ফোনের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কলটা রিসিভ করেন। কয়েক সেকেন্ড পর পর্দায় এক নগ্ন যুবতী হাজির হন। যুবতী তার নগ্ন দেহ হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। তারপর কলটা কেটে যায়।

উত্তর ভারতের প্রয়াগরাজ শহরের ট্রাক চালক শ্যাম (ছদ্দনাম)। স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ায় ছয় মাস ধরে যৌন সম্পর্ক করতে পারছেন না তিনি। ভীষণ অস্থিরতায় ভুগছিলেন, এমন সময় ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের এক বিজ্ঞাপন দেখে পুলকিত হয়ে যান শ্যাম।

দেরি না করে গোলাপী থিমের ওয়েবসাইটে ঢোকেন শ্যাম। সেখানে তাকে ৪ হাজার ভারতীয় রুপি জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছিল।

বাড়ির পাশের ব্যাংকে অর্থ জমা দিয়ে শ্যাম বাড়ি ফিরেই ওয়েবসাইটে ঢোকেন। কিন্তু এবার সেবা দেয়ার জন্য আরও অর্থ চাওয়া হয়। বলা হয়, কেবল সাইবার-সেক্সের একটি সেশনের জন্য ৬ হাজার রুপি জমা দিতে হবে। সেই অর্থও দেন শ্যাম। তারপর তাকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি ভিডিও কলের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়।

কয়েক ঘণ্টা পর একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ভিডিও কল পান শ্যাম। শার্ট খুলে শ্যাম ফোনের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কলটা রিসিভ করে। কয়েক সেকেন্ড পর পর্দায় এক নগ্ন যুবতী হাজির হন। যুবতী তার নগ্ন দেহ হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। তারপর কলটা কেটে যায়।

হঠাৎ লাইন কেটে যাওয়ায় বিরক্ত হন শ্যাম। কল কেন কেটে গেল তা বোঝার আগেই ওই নম্বর থেকে একটা হোয়াটঅ্যাপ মেসেজ আসে তার মোবাইলে। সঙ্গে ছিল কিছুক্ষণ আগের সেই ভিডিও কলের রেকর্ডিং।

মেসেজে বলা হয়, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৫ হাজার রুপি জমা দিন। নয়তো এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যাবে।’

২০ হাজার রুপি বেতনে চাকরি করেন শ্যাম। এই অর্থ দিয়ে চার সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। শ্যাম হিসাব করে দেখেন, সব খরচ বাদ দিয়ে এই ১৫ হাজার রুপি জমাতে তার ১০-১২ মাস লেগে যাবে।

শ্যাম বলেন, ‘আমার আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল। এ কারণে ছেলের টিউশনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করছিলাম, তাতে হাত দিতে বাধ্য হই।

‘তারপরের কয়েদিন স্বস্তিতে ছিলাম। একদিন আবার কল আসে। এসএমএসে আমাকে এবার ৩০ হাজার রুপি দিতে বলে। শেষ পর্যন্ত বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে সে অর্থ দিই।’

অনলাইন যৌনতার ফাঁদে সর্বনাশ

ভারতে অনলাইন যৌন নির্যাতনের শিকারের সংখ্যা আশংকাজনকহারে বাড়ছে। শ্যাম সেই দলের একজন।

অনলাইন সেক্সটর্শন স্ক্যামের পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও, ২০২১ সালে ভারতে ৫২ হাজার ৯৭৪টি সাইবার ক্রাইমের রেকর্ড আছে পুলিশের কাছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৯ সালের চেয়ে সংখ্যাটা ৪৪ হাজার ৭৩৫ বেশি৷

ভারতের তথ্য-প্রযুক্তি আইন ২০০০ এর ধারা ৬৭ এর অধীনে এ সংক্রান্ত ১৩ হাজার ১৯৬টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ আইনে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অশ্লীল কিছু প্রকাশ বা বিতরণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ধরা হয়।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তথ্য-সংগ্রহের সীমাবদ্ধতা এবং সামাজিক চাপের ভয়ে অনলাইনে যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো চেপে যায় বেশিরভাগ মানুষ।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রক্ষিত ট্যান্ডন বলেন, ‘এই প্রতারণাগুলো কোভিডের সময় বেশি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কারণ ওই সময় বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতে থাকতেন এবং অনলাইনে বেশি সময় কাটাতেন।

‘স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেটের অপ-ব্যবহারও বাড়ছে।’

অনলাইন যৌনতার ফাঁদে সর্বনাশ

স্ট্যাটিস্টা বলছে, ভারতে ৯৩২ মিলিয়নেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, যা চীন ছাড়া অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। স্ট্যাটিস্টার ধারণা, এই সংখ্যা ২০৪০ সালের মধ্যে দেড় বিলিয়ন ছাড়াবে।

যেসব মানুষ একাকী কিংবা যৌন সম্পর্কহীন জীবনে আটকে আছেন তাদের পাশাপাশি অল্পবয়সী প্রাপ্তবয়স্করা (যৌনতায় মুখিয়ে যারা) সেক্সটর্শনের ঝুঁকিতে আছেন। অনেক বয়স্ক ব্যক্তিরাও এই জালে আটকা পড়েন।

এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ডিভাইস চালাতে অদক্ষ লোকজনকে সহজেই বোকা বানাতে পারে প্রতারকরা। ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে সামাজিক মিডিয়া, ডেটিং অ্যাপস, স্প্যাম টেক্সট মেসেজ এবং অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতারণা করে থাকেন তারা।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় নারীর ছবি ব্যবহার করে তৈরি প্রোফাইল থেকে শিকারকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট বা মেসেজ দেয়া হয়। প্রতারকরা শিকারের অন্য বন্ধুদেরও সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। এতে ভুয়া প্রোফাইলটি নিয়ে সন্দেহ অনেকটায় কমে যায়।

ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টেলিগ্রাম গ্রুপে বা জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এবং ফোরামে প্রতারকরা তাদের সাইটের লিংক পোস্ট করে থাকেন। কিছু ক্ষেত্রে তারা পর্নোগ্রাফিক ভিডিও বা যৌনকর্মীর ছবি ব্যবহার করেন।

বিশেষজ্ঞরা এই কৌশলটিকেও কার্যকর বলে মনে করছেন। আকর্ষণীয় কন্টেন্টের কারণে এগুলো দীর্ঘসময় মানুষ দেখে। এতে অনলাইন থেকে পোস্টকারী ভালো অর্থ উপার্জন করে।

যুক্তরাজ্যের সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম সোফোসের একটি সমীক্ষা বলছে, ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেক্সটর্শন স্প্যাম মেসেজের মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ ডলার আয় করেছে পোস্টকারীরা।

কিছু প্রতারক তাদের ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা তোলার জন্য পুলিশের ছদ্মবেশ ধারণ করে বলে জানা গেছে।

রাজস্থানের নাগৌরের প্লাম্বার অজয় (ছদ্দনাম) মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার রুপি আয় করেন। তিনি বলেন, ‘একজন নিজেকে ভারতীয় পুলিশ সার্ভিসের (আইপিএস) সদস্য পরিচয় দিয়ে বলেন, ফেসবুকে যৌন কেলেঙ্কারিতে নাকি আমি জড়িত। ৬০ হাজার টাকার জন্য তিনি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেন।

‘দ্বিতীয় দিনে আমি ওই নম্বরটি ব্লক করে দিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েক ঘন্টা পর ট্রুকলারে (কলার শনাক্তকরণ অ্যাপ্লিকেশন) ‘শ্যাম আইপিএস’ নামে একটি অজানা নম্বর থেকে কল পাই।

‘তিনি আমাকে বিষয়টি টাকার বিনিময়ে রফাদফার প্রস্তাব দেন। বলেছিলেন, তা না করলে চার বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে আমার। পরে স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কাউন্সেলরের সঙ্গে পরামর্শ করে ​​নম্বরটি ব্লক করে দিই।’

ভুক্তভোগীদের ওপর যৌন নির্যাতনের প্রভাব কেবল অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যে সমাজে যৌনতা নিয়ে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা, সেখানে ভুক্তভোগীর মানসিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

প্রয়াগরাজের ট্রাক চালক শ্যাম বলেন, ‘চলতি মাসের শুরুতে প্রতারণার শিকার হওয়ার পর থেকে আমি রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারিনি। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ভয় তো ছিলই। পাশাপাশি স্ত্রীর কাছে বিষয়টা ফাঁস হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় থাকতাম।

‘একবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলাম। তবে সন্তানের কথা ভেবে ফিরে আসি। আয়-রোজগারও বেশি ছিল না। মানসিক যন্ত্রণায় জীবন নরক হয়ে গিয়েছিল।’

‘মনস্তাত্ত্বিক খেলা’

জয়পুর পুলিশের সাইবার ক্রাইম কনসালট্যান্ট মুকেশ চৌধুরী বলেন, ‘প্রতারকরা ভুক্তভোগীদের ‘অতিরঞ্জিত’ ভয়ের পাশাপাশি ভারতের সাইবার আইনের দুর্বলতায় সুযোগ নেয়।

‘ভিডিও ছড়ানোর ভয় একটি মনস্তাত্ত্বিক খেলা। খুব কম ক্ষেত্রেই ভিডিও অনলাইনে পোস্ট করা হয়। কারণ প্রতারকরা জানেন, এটা করলে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তারা ফেঁসে যাবেন। এসব ক্ষেত্রে অপরাধীরা মানুষের ভয় নিয়ে নিষ্ঠুর এক খেলায় মেতে উঠেন।’

সামাজিক ভয়ে অনেক ভুক্তভোগী পুলিশের পরিবর্তে এনজিওর সাহায্য নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কারণ এতে পরিচয় গোপন থাকার নিশ্চয়তা বেশি।

ভারতের প্রথম সাইবার ক্রাইম এনজিও সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মিলিন্দ আগরওয়াল বলেন, ‘অধিকাংশ ভুক্তভোগী আমাদের কাছে বানোয়াট গল্প নিয়ে আসে। সম্মানহানির ভয়ে তারা পুলিশের কাছে যেতে চায় না।

‘শুরুতে আমরা তাদের বোঝাই ফুটেজ অনলাইনে পোস্ট করা হবে না। দ্বিতীয়ত, আমরা তাদের অ্যাকাউন্ট বা নম্বর আগামী দুই থেকে তিন দিনের জন্য ব্লক করতে বলি। অজানা কল বা মেসেজের উত্তর দিতে না বলি। বহিরাগতদের সঙ্গে যোগাযোগের খবর আমাদের জানাতে বলি।

‘প্রতারকরা দুই থেকে তিন দিন আপনাকে অনুসরণ করবে। তারপর থেমে যায়। এই কৌশলটি প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাজ করেছে।’

অনলাইন যৌনতার ফাঁদে সর্বনাশ

ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) বলছে, সাইবার ক্রাইম মামলার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে অভিযোগ গঠন হয়।

পুলিশের উদাসীনতা, সঠিক প্রশিক্ষণ এবং ফরেনসিক সংস্থানগুলোর ঘাটতির কারণে এসব ঘটনায় বিচার কম হয় বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

আগরওয়াল বলেন, ‘আপনি যদি একজন সাধারণ মানুষ হন, তবে কেবল হুমকির অভিযোগ নিয়ে আসলে পুলিশ তা নথিভুক্ত করবে না। অনলাইনে ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ভিন্ন কথা।

‘প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না।’

প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে সাইবার ক্রাইম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট আইনটি প্রায় ২০ বছরের পুরনো; কেবল একবার এটির সংশোধন হয়েছে।

মধ্যপ্রদেশের হাইকোর্টের আইনজীবী শশাঙ্ক তিওয়ারি বলেন, ‘প্রযুক্তির উন্নতির কারণে কম্পিউটার প্রোগ্রাম এবং নেটওয়ার্কের শক্তি বাড়ছে। এই অগ্রগতির সঙ্গে সাইবার ক্রাইমও বাড়ছে। এ ধরনের অপরাধ কমাতে অবশ্যই কঠোর শাস্তির আইন করতে হবে।’

স্টেট ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল শরৎ কবিরাজ বলেন, ‘রাজস্থান যৌন নির্যাতনের একটি হটস্পট। তাই আমরা অন্যান্য রাজ্যের পুলিশকে সহায়তা প্রদানের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছি।

‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আন্তঃরাজ্য সাইবার ক্রাইম ব্যবস্থাও বাস্তবায়ন করেছে। অপরাধীরা মূলত সিস্টেমের দুর্বলতাকে কাজে লাগায়। তাই সিম কার্ড ইস্যু করা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং গ্রাহককে জানার পদ্ধতিগুলো কঠোর করা উচিত।’

সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌন নির্যাতনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হওয়া এড়াতে ভারতকে অবশ্যই আইন সংস্কার করতে হবে। পুলিশিং ব্যবস্থাকে আধুনিক করতে হবে এবং যৌনতার সঙ্গে জড়িত ‘সামাজিক ট্যাবু’ দূর করতে হবে।

শ্যাম এবং অজয়ের মতো ভুক্তভোগীরা এখনও মনে করেন, তাদের কাছে আইনি কোনো উপায় নেই। এনজিওগুলোর কাউন্সেলিং-ই তাদের একমাত্র ভরসা।

অজয় বলেন, ‘আমার মতো একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে কেন তারা বেছে নিল? সিস্টেমের কাছে আমি কোনো বিষয় না হলেও, সমাজের কাছে আমি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।’

মন্তব্য

জীবনযাপন
Sex outside of marriage is prohibited in Indonesia

ইন্দোনেশিয়ায় বিয়েবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ

ইন্দোনেশিয়ায় বিয়েবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ নতুন আইনের প্রতিবাদে সোমবার জাকার্তায় বিক্ষোভ করছেন একদল তরুণ। ছবি: সংগৃহীত
আইনটি স্থানীয়দের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ায় বাস করা বিদেশি এমনকি বালির মতো জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।

ইন্দোনেশিয়ায় নিষিদ্ধ হলো বিয়েবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক। এই অপরাধে কেউ দোষী প্রমাণিত তার সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। যদিও এটি কার্যকর হতে অন্তত ৩ বছর সময় লাগবে। দেশটির পার্লামেন্টে মঙ্গলবার সংক্তান্ত একটি আইনের পাশাপাশি ৬০০টির বেশি আইন অনুমোদন পায়।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দোনেশিয়ায় ধর্মীয় রক্ষণশীলতার উত্থান হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আইনটি করা হলো। তবে আইনটিকে মানবাধিকারের জন্য একটি ‘বিপর্যয়’ এবং পর্যটন ও বিনিয়োগের ওপর একটি সম্ভাব্য আঘাত হিসেবে দেখছেন সমালোচকরা।

চলতি সপ্তাহে জাকার্তায় পার্লামেন্টের বাইরে তরুণদের কয়েকটি দল এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন আইনটি আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

আইনটি স্থানীয়দের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ায় বাস করা বিদেশি এমনকি বালির মতো জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।

বিয়েবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের পাশাপাশি ‘লিভিং টুগেদারও’ নিষিদ্ধ হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। কেউ এই অপরাধ করলে তার সর্বোচ্চ ৬ মাসের জেল হতে পারে।

পশ্চিম জাভার ডেপোকের বাসিন্দা আজেং। ২৮ বছরের এই মুসলিম নারী বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে আমি সঙ্গীর সঙ্গে একসঙ্গে থাকছি। নতুন আইনের ফলে এখন ভয় লাগছে।

‘নতুন আইনে পরিবারের কেউ একজন পুলিশে অভিযোগ করলে আমরা দুজনেই জেলে যেতে পারি। যদি পরিবারের কারও সঙ্গে আমার ঝামেলা হয় আর সে যদি আমাকে আমাকে জেলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কি করব?

‘আমি মনে করি বিয়ের বাইরে একসঙ্গে থাকা কিংবা যৌন সম্পর্ক করা কোনো অপরাধ নয়। আমার ধর্মে এটাকে পাপ বলে মনে করা হয়। তবে ফৌজদারি আইন একটি নির্দিষ্ট ধর্মের ভিত্তিতে হওয়া উচিত না।’

আজেং জানান, ২০১৯ সালে যখন আইনটির প্রথম প্রচার হয়েছিল, তখন দেশব্যাপী শুরু হওয়া বিক্ষোভে তিনিও অংশ নিয়েছিলেন।

মন্তব্য

জীবনযাপন
Asexual American women fear pregnancy

গর্ভধারণের শঙ্কায় যৌনতাবিমুখ আমেরিকান নারীরা

গর্ভধারণের শঙ্কায় যৌনতাবিমুখ আমেরিকান নারীরা
আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট গত জুনের শেষ দিকে আলোচিত এক রায় দেয়ার পর তৈরি হয়েছে এমন অবস্থা। ওই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে দেশটিতে বিদ্যমান গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করে দেয়।

অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিপজ্জনক গর্ভধারণের ভয় আমেরিকার নারীদের ক্রমশ যৌনতাবিমুখ করে তুলছে। গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার আদালত বাতিল করার পর তৈরি হয়েছে বহুমাত্রিক ভীতি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন যৌনতা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা।

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিসৌরিতে একসঙ্গে থাকা দুই তরুণী সম্প্রতি তাদের বেডরুমে পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। পুরুষ আমন্ত্রণ পেলে তারা গর্ভবতী হতে পারেন, এমন শঙ্কা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে দুজনকে।

ফ্লোরিডার অনেক নারী এই ভয়ে চূড়ান্ত যৌনমিলন থেকে সরে এসেছেন অথবা যৌনতার মাত্রা কমিয়ে দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্কে থাকা নারীও আছেন।

উইসকনসিনের

কিছু নারী তাদের সম্ভাব্য সঙ্গীদের সঙ্গে যৌনতায় অংশ নেয়ার আগে বন্ধ্যত্বের অস্ত্রোপচার (ভ্যাসেকটমি) করতেও বলছেন ।

সারা দেশের যৌন থেরাপিস্টদের কাছ থেকে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে যৌনতা, ডেটিং এবং ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে মানুষের বদলে যাওয়া দৃষ্টিভঙ্গির এগুলো সামান্য কিছু উদাহরণমাত্র।

আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট গত জুনের শেষ দিকে আলোচিত এক রায় ঘোষণার পর তৈরি হয়েছে এমন অবস্থা। ওই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে দেশটিতে বিদ্যমান গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করে দেয়

এর আগে ১৯৭৩ সালে ঐতিহাসিক রো বনাম ওয়েড মামলায় আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতকে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে রায় দিয়েছিল। তবে এ নিয়ে বিতর্ক চলে কয়েক দশক ধরে। এরপর গত ২৪ জুন সুপ্রিম কোর্ট নতুন এক রায়ে বলেছে, গর্ভপাতকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।

উচ্চ আদালতের আগের রায় ‘অবশ্যই বাতিল করতে হবে’ উল্লেখ করে বিচারকরা বলেন, কারণ সেটি ছিল ‘ভয়াবহ ভুল’, ‘দুর্বল যুক্তির’ এবং ‘বিচারিক কর্তৃত্বের অপব্যবহার’।

নতুন এই রায়ের পর অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির কিনসে ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ম্যাচের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. জাস্টিন গার্সিয়া বলছেন, ‘আমাদের সবার শয্যার ওপর এখন বিপদঘণ্টা বাজছে।’

একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বা বিপজ্জনক গর্ভাবস্থার ভয় সঙ্গীর সঙ্গে আপনার বন্ধনকে আলগা করে দেয়। এই ভয় মানুষজনের মধ্যে কেবল বেডরুমকেন্দ্রিক ভীতির জন্ম দয় না, সেখানে দুজনের ভালো সময় কাটানোকেও কঠিন করে তোলে।

একাকী জীবনযাপন করা পাঁচ হাজারের বেশি আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্কের ওপর ম্যাচ পরিচালিত একটি জরিপের ফল গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। এতে অংশ নেয়া প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের রায় তাদের যৌন জীবন বদলে দিয়েছে, ২০ শতাংশ বলেছেন আদৌ আর যৌনতায় অংশ নেবেন কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্ত। উত্তরদাতাদের ২৭ শতাংশ বলছেন যৌনমিলন নিয়ে তারা অনেক বেশি দ্বিধায় ভুগছেন।

এমনকি ডেটে যেতে ভয় পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ১৩ শতাংশ উত্তরদাতা। জরিপকারী প্রতিষ্ঠার ম্যাচ-এর হিসাবে আমেরিকায় অবিবাহিতের সংখ্যা ৭ কোটি ৫০ লাখের বেশি। তাদের মধ্যে এক কোটির ডেটিং অভ্যাসে পরিবর্তন ঘটাতে পারে সুপ্রিম কোর্টের রায়।

পরিস্থিতি নিয়ে সেক্স থেরাপিস্ট লেক্সক্স ব্রাউন-জেমস ভীষণ উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘আমি এমন ক্লায়েন্ট পাচ্ছি যিনি বাস্তবে বহুগামী, কিন্তু এখন আর গর্ভবতী হওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।’

উইসকনসিনের সেক্স থেরাপিস্ট ম্যাডেলিন এস্পোসিটো-স্মিথ বলেন, ‘যৌনতা হলো মানুষের সবচেয়ে দুর্বলতম সময়ে ঘটা ক্রিয়ার একটি। এ সময়ে ভীতিতাড়িত হলে কামোত্তেজনা চরমে পৌঁছানো অসম্ভব।

‘এ সময়ে গর্ভধারণের শঙ্কা ভর করলে এবং গর্ভাবস্থার পরিণতি নিয়ে ভাবতে হলে সঙ্গীর সঙ্গে আপনার নিবিড় মিলন ঘটা কঠিন।’

আরও পড়ুন:
পুরুষের সমকামিতা বৈধতা পাচ্ছে সিঙ্গাপুরে
পাথরকে ‘সেক্সটয়’ বানিয়ে বানরের স্বমেহন
ভারতবর্ষজুড়ে এত নাভিপ্রীতির কী কারণ?
নারীর অর্গাজম বঞ্চনায় হলিউড, বিজ্ঞানের দায়
যৌন জীবনে প্রভাব ফেলছে জলবায়ু

মন্তব্য

p
উপরে