সবাই আমরা (ব্লেস, অর্পণ, অঞ্চিত, অমিত, বৃষ্টি আর আমি) পৌঁছে গেছি কমলাপুর রেলস্টেশনে। ট্রেন ছাড়ার কথা রাত পৌনে ১১টায়। যেকোনো সময় প্ল্যাটফর্মে ট্রেন এসে পড়তে পারে। সময় ঘনিয়ে আসছে অথচ প্রিমার দেখা এখনও নেই। আমরা অস্থির অপেক্ষায়। অন্যদিকে প্রিমা রাইড শেয়ারের মোটরবাইকে অলিগলি, চিপাচাপার ফাঁক গলে প্রাণান্ত চেষ্টায় আসছে। বৃহস্পতিবারের যানজটও একটা ব্যাপার মনে হয়। যারপরনাই প্রিমা এলেও ট্রেন এলো ১১টা ৫০-এ, ছাড়ল ১২টা ২০-এ। পঞ্চগড় এক্সপ্রেস।
আমরা যাচ্ছি সর্ব-উত্তরের জেলায়। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেলে দেখব, না হলে নাই। ঢাকায় থেকে শরীর ও মনে যে ক্লেদ জমেছে, তা ঝেরে ফেলতে চাই। এই তো কয়েক সপ্তাহ আগেই নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে ট্রেকিং করলাম। মনে হয় এক যুগ পর আরামের ভ্রমণ দিতে চলছি আমি। রাতভর বিচিত্র সব ঘটনা ঘটল।
ট্রেনে উঠে অমিতের কুম্ভকর্ণের ঘুম। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে আবু নামে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক কিশোর উঠল। সেকি কাণ্ডকীর্তি তার। সবার সঙ্গেই তার কুশল বিনিময় করতে হবে। সঙ্গে থাকা খাবার ভাগ করে খাবে। তার বোচকার বিভিন্ন জিনিস একাধিক সিটের নিচে রাখতে হবে, আরও কত কী!
আর ট্রেনের সিটের কথা নাই বলি। কোনোটা লক্কড়ঝক্কড়, কোনোটা পিছে হেলানো যায় না। কোনোটা একবার হেলে গেলে সোজা হয় না। সিটের ওপরের ফ্যানগুলো ধুলাজমা, ঘোরে তো ঘোরে না। টয়লেট একটা ভালো তো দুইটা খারাপ। পানি নেই। সিটের পাশের জানালা খোলে না, খুললে বন্ধ হয় না। আসলেই রেল খাত খুব অবহেলিত এ দেশে।
যমুনা নদী! বর্ষা শেষের মৌসুম হলেও অকালেই বুড়িয়ে যাওয়া খটখটে কলেবর তার। মানুষ এমন এক প্রাণী, যে প্রকৃতির ক্ষতি বৈ ভালো কিছু করে না। এই প্রাণীর ক্রমশ যান্ত্রিক আর প্রকৃতি-দূরবর্তী আচরণ এর জন্য দায়ী।
এসব ভাবতে ভাবতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। বাইপাসের অন্তর্বর্তী সময় পার হয়ে ট্রেন ছাড়ার সময় এক কিশোর বাইরে থেকে লাফ দিয়ে জানালা দিয়ে যাত্রীদের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টায় তৃতীয়বার ও তৃতীয় যাত্রীর বেলায় সফল হলো। শুরু থেকেই সব যাত্রী উচ্চবাচ্য করলেও ট্রেনে থাকা পুলিশ সদস্যদের এমন ভাব, যেন কিছুই হয়নি।
প্রায় ভোর। বাকি সব ঘুমে। আমরা এখন নাটোর স্টেশনে। কৃষ্ণপক্ষের হলদে বাঁকা চাঁদ ডুবি ডুবি করছে। সকাল পর্যন্ত দরজায় দাঁড়িয়ে কয়েকজন গল্পের ঝাঁপি খুলে বসলাম। বিষয়? ভ্রমণ, প্রকৃতি, রাষ্ট্র, সমাজ, উন্নয়ন- এসব আর কি। পথ আরও বাকি, তাই ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। বেড়ানোর সময় সঞ্চিত শক্তিই ভরসা, তবে মনের জোর শয়ে শয়ে।
সকাল ১০টা ২০। বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশন, পঞ্চগড়। স্টেশনের কাউন্টারে ফিরতি টিকিট কাটার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। পরে শুনলাম চাহিদা ও সিন্ডিকেটের কারণে এ হাল। দেরি না করে একটা ভ্যান নিয়ে শহরের মৌচাক হোটেল ও রেস্তোরাঁয় নাশতার অর্ডার দিয়ে আমি আনিস ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম বাইরে। আনিস ভাই তেঁতুলিয়ায় তার বন্ধু কাজী মোকসেদের গেস্ট হাউস স্বপ্নতে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোতে জায়গা হয়নি, আগে থেকেই ভিআইপিদের বুকিং।
যাই হোক, আমাকে দেখে আনিস ভাই অবাক। শুধালেন, ‘আপনি এখানে কেন? মজুমদার জুয়েল ভাই কই?’
এ কথা শুনে আমিও অবাক হয়ে হাসলাম কিছুক্ষণ। আনিস ভাই ভেবেছিলেন, তার সাবেক সহকর্মী মজুমদার জুয়েল ভাইয়ের যাবার কথা পঞ্চগড়ে। নাশতা চা-পর্ব সেরে চৌরাস্তার মোড় থেকে তেঁতুলিয়াগামী বাসে ওঠার আগে আমার বর্তমান সহকর্মী লুৎফর ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো। ঘণ্টাখানেকেরও কম সময়ে তেঁতুলিয়ার বিখ্যাত তেঁতুলগাছের (যার নামে তেঁতুলিয়া নামকরণ) সামনে নামলাম। মোকসেদ ভাইয়ের পাঠানো ভ্যানচালক শহীদুল আমাদের নিয়ে গেল স্বপ্নতে। কোনো রকমে ফ্রেশ হয়েই ছুট।
ডাকবাংলোতে ঢোকার মুখে গিটার হাতে একটা ব্যাঙের ভাস্কর্য, অর্পণ বলছিল এটা নাকি স্বপ্নীল (স্বপ্নীল গিটার বাজিয়ে গান করে, ভাল গায়, এবার সে আসতে পারেনি)। ভেতরে সম্মানিত পর্যটকরা পদধূলি দিচ্ছেন। দ্রুত পা চালিয়ে মহানন্দায় নামলাম। ওপাশে ভারত, কাঁটাতার আর বিএসএফের সতর্ক পাহারা স্পষ্টত দৃশ্যমান। আমরা দেখলাম আর ভাবলাম এই আন্ত নদী নিয়ন্ত্রণের জটিল রাজনীতির ব্যাপার-স্যাপার, নদীদূষণ, যথেচ্ছাচারী অথচ পেট-সংসার চালানো পাথরজীবীদের।
এই যখন অবস্থা ততক্ষণে বিকেল, আলোকচিত্রী অমিতের ক্যামেরার চোখও খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে। ওদিকে কবির আকন্দ ভাই কল দিচ্ছিলেন বারবার। আমার ক্যাম্পাসের (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) বড় ভাই। তিনি কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটের সহকারী ব্যবস্থাপক। ওনাদের প্রতিষ্ঠানের অবকাশ যাপন কেন্দ্র আনন্দধারায় যেন বেড়িয়ে যাই।
এবার সারথি অটোচালক সোহেল। সে সব চেনে। বাপ-দাদার বাড়ি ফরিদপুরে ছিল। পরে এখানে এসে বসতি করে। আনন্দধারা বৈচিত্র্যময়! হরেক জাতি-প্রজাতির পাখপাখালি। বিভিন্ন উপমহাদেশের নিজস্ব ধাঁচের একেকটা বাড়ি। নালার ওপর দিয়ে সেতু। নালার কিনারা ধরে পাকা বাঁধাই (পানিপ্রবাহ কি ক্ষতিগ্রস্ত হলো?)। এই কেন্দ্রে সহজে থাকা যায় না। সম্ভব তবে বেশ ওপর মহলের তদবির লাগে। শুধু দেখতে চাইলেও ভেতরের উচ্চপদস্থ কারও পরিচিত হতে হয়। ফেরার সময় মহানন্দার পাড়ে কাশফুলের সমাহার দেখে অমিত ভাবছিল, পরদিন সকালে ছবি তুলবে, তোলা হয়নি পরে অবশ্য।
সকালে নাশতার পর সারা দিন কিছু খাওয়া হয়নি। সন্ধ্যা সন্ধ্যায় তেঁতুলিয়া বাজারে পেটচুক্তি খাই। রেস্ট হাউসে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ছাদে উঠে তুমুল আড্ডা, গান, হাসাহাসি, আনন্দের ফোয়ারা। রাত আরও গভীর হলে মহানন্দার হাতছানিতে সম্মোহিতের মতো সাড়া দিই। আরামে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম নদীর পাড়ে, পোলাপান ডেকে তুললে ফিরে আসি বিশ্রামঘরে।
বেলা করে ঘুম ভেঙে সবার মাথা খারাপ। দ্রুত পরিষ্কার হয়ে নাশতা সেরে সোহেলের অটোতে চড়ে প্রথমে শিশুস্বর্গ বিদ্যানিকেতন। স্কুলটি প্লেগ্রুপ থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত। কবির ভাই দেখাশোনা করেন। তার বন্ধুর মায়ের নামে এই প্রতিষ্ঠান। ভিন্ন ধাঁচের অবকাঠামোতে তৈরি, ‘ফুলের বাগানে শিশুরাই ফুল’ স্লোগানসমেত স্কুলটার শিশু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা কিছুক্ষণ সময় কাটাই। তারাও আনন্দিত। করোনায় শিক্ষাজীবনের বেশ ক্ষতি হয়ে গেল!
এবার গন্তব্য বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। পর্যটকদের ভিড়, কেউই শূন্য বিন্দুতে যেতে পারছেন না। জেলা পুলিশ সুপার এসেছেন, কী সব করছেন। সময়টা কাজে লাগিয়ে আমরা পাশেই কাঁচা রাস্তা ধরে মহানন্দার পাড়ে শতবর্ষী বটগাছ দেখতে যাই। বিশাল দেহের বিশাল সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মেলে শতবর্ষব্যাপী গাছ আগলে রেখেছে সময়, প্রাণিকূল। গাছেরও কি সীমানা হয়? হয়তো। অন্য প্রাণীদেরও হয়, কিন্তু মানুষের মতো প্যাঁচালো হয় না। বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিয়ে চলে আসি শূন্য বিন্দুর কাছে। এবার যাওয়া যাবে। ভিসা ছাড়া দাগের ওপাশে অর্থাৎ ভারতে যতটুক যাওয়া যায়, ততটুক গিয়েও কী বিপুল উচ্ছলতা মানুষের!
আমরা ফিরি। যাচ্ছি কবির ভাইয়ের দায়িত্বের আওতাধীন চা-বাগান দেখতে, যা নাকি ভারতে পড়েছে। বাগান দেখার আগে কবির ভাই আমাদের লেমন গ্রাস টি দিয়ে আপ্যায়ন করেন।
উদরপূর্তি সেরে আরেক দফা ডাকবাংলোর কাছে মায়াময়ী মহানন্দার পাড়ে। একটু পরই দলের ৪ জন চলে যাবে ঢাকায়। চলেও যায়। আমরা বাকিরা সোহেলকে নিয়ে আবারও মহানন্দার পাড়ে, তবে এবার পুরোনো বাজারের কাছে। ভারতের কাঁটাতারের ওপর স্থাপিত আলোতে দৃষ্টি ঘোলা হয়। আমরা পরিত্যক্ত ভাঙা এবং অনেক পুরোনো একটি মন্দির ঘুরে দেখি। সেখানে যাবার সময় স্থানীয় এক মধ্যবয়স্কা বলছিলেন যে, রাত করে মেয়েদের ওই মন্দিরে যেতে বারণ। আমরা শুনিনি। শুনব কেন?
রাতে খেয়ে রেস্ট হাউসে ফিরে এসে বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি সবাই। কথা ছিল আরেকবার মহানন্দার পাড়ে যাব, হলো না। সকালে তুমুল বৃষ্টি। তাকে সঙ্গী করেই পঞ্চগড় শহরে যাই। ঢাকাগামী বাসের টিকিট কেটে, সুজানাদির বাড়িতে ব্যাগ রেখে, পাগলুতে (তেলচালিত ত্রিচক্রযান) চড়ে যাই বড়শশী, গন্তব্য বোদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির। এই মন্দিরও অনেক আগের।
মোট ৫১টি মহাপীঠের মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ৮টি। তার মধ্যে একটি এই বোদেশ্বরী। আরেকটি আমি সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথে দেখেছি। মহাপীঠের বর্ণনা পাঠক আপনারা গুগল থেকেই জানতে পারবেন। পীঠের মূল মন্দিরটা পার্বতীর (দুর্গা), সাথে পরে নতুন করে আরও দুটি মন্দির (শিব ও বিষ্ণুর) হয়েছে। সেগুলোর গায়ে মন্দিরগুলোর উন্নয়নে অর্থদাতাদের নাম উল্লেখ করা। সীতাকুণ্ডেও দেখেছি সিঁড়িগুলোতে দাতাদের নাম।
বেশ জায়গা নিয়ে গাছপালা ও পুকুরসমেত এই বোদেশ্বরী মন্দির। দেখভালে পূজারি ও ভক্তরা থাকেন প্রাঙ্গণে। রয়েছে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম কেন্দ্র। দেখলাম পাশেই নতুন প্রতিমা রাঙানো হচ্ছে। ক’দিন বাদেই দুর্গাপূজা। মানুষ মেতে উঠবে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা আর উৎসবে। একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক বিষফোঁড়ার আতঙ্ক তো রয়েছেই। আমরা বের হয়ে আসি। ফিরতি পথে ঐতিহ্যবাহী কাজলদিঘিতে থামি। স্থানীয়রা জানান, তারা এটা ছুঁতেই পারেন না, সরকারি নিলামে প্রভাবশালীরা মাছচাষ করেন।
পঞ্চগড় শহরে ফিরে লো ব্লাড প্রেসারে প্রিমা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তাকে সুজানাদির বাড়িতে নিয়ে গেলে বাড়ির লোকজন যত্নআত্তি বাসের সময় এসে যায়। রাত ৮টায় বাস ছাড়ে। যানজট ঠেলে ঢাকায় পৌঁছাই ১৪ ঘণ্টা পর। ফেরার সময় মনটা বেশ খারাপ হয়। আমার এখনও কোথাও বেড়াতে গেলে ফেরার সময় মন খারাপ হয়।
আরও পড়ুন:দিনভর রোজা রেখে ইফতারে দরকার হয় পুষ্টিকর কিছু। পিনাট বাটার স্মুদিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। তাই ইফতারে রাখতে পারেন পিনাট বাটারের মজাদার স্মুদি। এনডিটিভি ফুডের পিনাট বাটার স্মুদির রেসিপি তুলে ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।
উপকরণ (এক কাপ পরিমাণ)
১. ১টি কলা
২. ১ কাপ দুধ
৩. ২থেকে ৩ টেবিল চামচ পিনাট বাটার
পিনাট বাটার যদি চিনি ছাড়া হয়,সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত চিনি বা মধু দিতে হবে স্বাদমতো।
প্রস্তুত প্রণালি
টুকরো করে রাখা কলা, দুধ, পিনাট বাটার একটি ব্লেন্ডারে দিয়ে মসৃণ না হওয়া পর্যন্ত ব্লেন্ড করুন। তারপর গ্লাসে স্মুদি ঢেলে বরফ কুচি দিয়ে মনমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
চাইলে বাড়িতেও পিনাট বাটার বানিয়ে নিতে পারেন। এর জন্য প্রয়োজন হবে তিন থেকে চারটি উপকরণ। চিনা বাদাম, বাটার অথবা অভিল অয়েল ও মধু ও সামান্য লবণ।
পিনাট বাটার যেভাবে বানাবেন
বাদাম দুই থেকে তিন মিনিট ওভেনে বেক করে নিন অথবা চুলায় হালকা ভেজে নিন। এরপর ব্লেন্ডারে সব উপকরণ দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন।
আরও পড়ুন:অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় ত্রুটি এবং ভোক্তা অধিকার আইন অমান্য করার দায়ে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে অভিযান চালিয়ে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ ৮১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হোটেল লং-বিচ ও হোটেল সী-প্যালেসের মতো অভিজাত হোটেলও রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে এসব অভিযান চালানো হয় বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন।
তিনি জানান, পর্যটন শহর কক্সবাজারকে অগ্নি-দুর্ঘটনা থেকে এবং পর্যটকদের নিরাপদ রাখতে জেলা প্রশাসনের দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে দুটি দল মঙ্গলবার দুপুর থেকে হোটেল-মোটেল জোনে অভিযান চালায়। এ সময় আবাসিক হোটেলগুলোতে অগ্নি-নির্বাপন ব্যবস্থা যথাযথভাবে অনুসরণ না করা এবং রেস্তোরাঁয় মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করাসহ নিরাপদ খাদ্য পরিবেশনে ব্যত্যয়ের দায়ে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৮১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এডিএম বলেন, ‘জরিমানা আদায় করা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অগ্নি-প্রতিরোধক দরজার বিপরীতে কাঠের দরজা, অকেজো স্মোক ডিটেক্টর, অপর্যাপ্ত ফায়ার এক্সটিংগুইশার, হোটেলের আয়তন অনুপাতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স চূড়ান্ত সনদ না থাকা এবং রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করার পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য পরিবেশনে ত্রুটির প্রমাণ মিলেছে।
‘এসব কারণে অভিজাত হোটেল লং বিচকে এক লাখ টাকা, হোটেল সী প্যালেসকে ৫০ হাজার, হোটেল কল্লোলকে ৫০ হাজার, হোটেল মিডিয়াকে ১০ হাজার, কাচ্চি ডাইন রেস্তোরাঁকে ২০ হাজার এবং হোটেল মিডিয়ার রেস্তোরাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া হোটেল মিডিয়ার পাশে অনুমোদনহীন একটি ক্ষুদ্র দোকানকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ইয়ামিন হোসেন আরও জানান, দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ত্রুটিগুলো দ্রুত কাটিয়ে উঠতে নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি সতর্কও করা হয়েছে। প্রশাসনের এই অভিযান আরও কয়েকদিন চলবে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের রামুর ঐতিহাসিক রাংকুট বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার সফরে আসা ৩৪ কূটনীতিক।
বুধবার সকালে রাংকুট বৌদ্ধ বিহারে এসে পৌঁছালে কূটনীতিকদের স্বাগত জানান বিহারাধক্ষ্য জ্যোতিসেন মহাথেরো।
তিনি জানান, এ সময় দুই হাজার ৩০০ বছরের পুরোনো মহামতি বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থান দেখে মুগ্ধ হন অতিথিরা। সেইসঙ্গে সম্রাট অশোক, চীনা পর্যটক হিউয়েন সাংয়ের আবক্ষ মূর্তিসহ বৌদ্ধ পুরাকীর্তি দেখে অভিভূত হন। অতিথিরা বিহারের বিভিন্ন দিক ঘুরে দেখেন।
পরিদর্শনকালে কক্সবাজার অঞ্চলের বৌদ্ধ ইতিহাস, স্থাপনা এবং সমুদ্র সৈকত- সব মিলিয়ে অপার পর্যটন সম্ভাবনাকে তোলে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার আশ্বাস দেন কূটনীতিকরা।
কূটনীতিকদের আগমনে বিহারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলি দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হয়।
পরে তারা সমুদ্র সৈকতের লাবনীর ট্যুরিস্ট মার্কেটে যান। সেখানে ঝিনুকের দোকানসহ অন্যান্য হস্তশিল্প পণ্যের দোকান পরিদর্শন করেন।
এ সময় জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে ২৪ দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মিশন প্রধানসহ ৩৪ জন কূটনীতিক রেলে চড়ে কক্সবাজার যান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘অ্যাম্বাসেডরস আউট রিচ’ প্রোগ্রামের আওতায় যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, কোরিয়া, ইতালি, ডেনমার্ক, কসোভো, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, ভ্যাটিকান, ভুটান, স্পেন, আর্জেন্টিনা, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মিশর, ফ্রান্সের মিশন প্রধানসহ এফএও, আইইউটি ও একেডিএন-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার কূটনীতিকরা দুদিনের সফরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার যান।
বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টকে ‘বঙ্গবন্ধু বীচ’ এবং সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের মাঝখানের খালি জায়গাটি ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা বীচ’ নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সোমবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. সাহেব উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘মুক্তিযুদ্ধা সংসদ কমান্ডের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান মিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে একাদশ জাতীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা বীচকে ‘বঙ্গবন্ধু বীচ’ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সুগন্ধা বীচ ও কলাতলী বিচের মাঝখানের খালি জায়গা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা বীচ’ নামকরণ করা হলো। একইসঙ্গে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেয়া হলো।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এখানে জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের এটি বাস্তবায়নে আদেশ দেয়া হয়েছে।’
মিয়ানমার সীমান্তে চলমান উত্তেজনার কারণে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে নৌ-রুটে ভ্রমণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আগামী শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) থেকে কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ করা যাবে না।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ইয়ামিন হোসেন।
তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে সেন্টমার্টিনে নৌ-রুটে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।’
এর আগে সকালে বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত এবং তৎসংলগ্ন বিওপি পরিদর্শনকালে বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুল জামান সিদ্দিকী ওই রুটে ভ্রমণ বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন।
শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭তম। সে হিসাবে চলতি ২০২৪ সালের শুরুতে গত বছরের তুলনায় অবস্থানটা এক ধাপ কমেছে। বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক-স্বীকৃত পাসপোর্ট রেটিং, হেনলি সূচকে বাংলাদেশের এমন অবস্থান জানানো হয়েছে।
মূলত আগাম ভিসা ছাড়াই পাসপোর্টধারীরা কতগুলো দেশে প্রবেশ করতে পারে, তার ওপর ভিত্তি করে হেনলি সূচক প্রস্তুত করা হয়। ১০৫টি দেশে ভ্রমণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এই র্যাঙ্কিং প্রকাশ করা হয়।
বিদেশ ভ্রমণে ইচ্ছুক অধিকাংশ বাংলাদেশির ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা সংগ্রহ করাটা বড় ঝক্কির ব্যাপার। ভিসা পাওয়ার এই ধকল সামলাতে গিয়ে অনেকে মাঝপথেই দেশের বাইরে ভ্রমণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অন্যদিকে এসব ঝামেলা নিমেষে উধাও হয়ে যায়, যখন সেই ভিসা করার কোনও বাধ্যবাধকতা থাকে না।
উদ্ভূত অবস্থায় প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে বাংলাদেশি পাসপোর্টে আগাম ভিসা ছাড়া দুনিয়ার কোন কোন দেশ ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা কোন দেশগুলোতে অন-অ্যারাইভাল ভিসায় যেতে পারবেন।
ভিসা ছাড়াই যাওয়া যাবে যেসব দেশে
বিভিন্ন দেশের অভিবাসন ব্যবস্থার সবচেয়ে আকর্ষণীয় কার্যনীতি হচ্ছে ভিসা-মুক্ত প্রবেশ। যেখানে বিদেশে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকের আগে থেকে কোনও রকম ভিসা-প্রাপ্তির প্রয়োজন পড়ে না। এই নিয়মে ভ্রমণরতদের ভিসা ফি দিয়ে কোনও ধরনের আনুষ্ঠানিক ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় না।
ঘুরে বেড়ানো বা ব্যবসা; যে কোনও উদ্দেশ্যেই এই সুবিধা নেয়া যায়। তবে এভাবে গন্তব্যের দেশটিতে অবস্থান করার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে, যা বিভিন্ন দেশের জন্য বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
হেনলি পাসপোর্ট সূচক অনুসারে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা ২২টি দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন। এই দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের নিজ দেশের ভেতরে থেকে ভিসাপ্রাপ্তির জন্য অগ্রিম আবেদন করতে হবে না। এমনকি বিমানবন্দর পেরিয়ে সেই দেশগুলোতে প্রবেশের সময়ও কোনও ধরনের আনুষ্ঠানিক অনুমতির প্রয়োজন হবে না।
এই অভিবাসন নীতিতে ভ্রমণকারীকে গন্তব্যের দেশে প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে ভিসা দেয়া হয়। এই ভিসা প্রদানের জায়গাটি হতে পারে সমুদ্র বন্দর, স্থল চেকপয়েন্ট অথবা বিমানবন্দর। এই প্রবেশাধিকার প্রাপ্তির জন্য তাদেরকে যাত্রা শুরুর আগে নিজেদের দেশে থাকা অবস্থায় কোনও আবেদন করতে হয় না।
অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া দেশগুলো হলো- বাহামাস, বার্বাডোস, ভুটান, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, কুক দ্বীপপুঞ্জ, ডমিনিকা, ফিজি, গ্রেনাডা, হাইতি, জ্যামাইকা, কিরিবাতি, লেসোথো, মাদাগাস্কার, মাইক্রোনেশিয়া, মন্টসেরাট, নিউয়ে, রুয়ান্ডা, সেন্ট কিটস ও নেভিস, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস, গাম্বিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং ভানুয়াতু।
মাদাগাস্কার, রুয়ান্ডা এবং ভানুয়াতু গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশিদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা চালু রেখেছিল। আর ওশেনিয়া মহাদেশের দ্বীপ দেশ কিরিবাতি এ বছর এই তালিকায় নতুন সংযোজন।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ৬ মাস মেয়াদে ফ্রি ভিসায় থাকা যাবে বার্বাডোস, ডোমিনিকা, জ্যামাইকা এবং মন্টসেরাটে।
ফিজিতে ভ্রমণ করার জন্য বরাদ্দ রয়েছে সর্বোচ্চ ৪ মাস। ৯০ দিনের মেয়াদে অবস্থান করা যাবে কিরিবাতি, সেন্ট কিটস ও নেভিস এবং লেসোথোতে। আর বাহামা, গ্রেনাডা ও হাইতিতে অবস্থানের সময়সীমা তিন মাস।
এছাড়া কুক আইল্যান্ডসে ফ্রি ভিসার মেয়াদ ৩১ দিন; গাম্বিয়া, মাইক্রোনেশিয়া, রুয়ান্ডা, ভানুয়াতু ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস এবং ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনসে ৩০ দিন; ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে ৩০ থেকে ৯০ দিন এবং মাদাগাস্কারে সবচেয়ে কম মাত্র ১৫ দিন অবস্থান করা যাবে।
বিনা ফি-তে অনঅ্যারাইভাল ভিসা
কোনও কোনও দেশে প্রবেশের সময় অন-অ্যারাইভাল ভিসার জন্য ফি দিতে হয়। হেনলি পাসপোর্ট সূচক অনুসারে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে ১৮টি দেশে বিনা ফিতে প্রবেশ করতে পারবে।
এই দেশগুলো হলো- বলিভিয়া, বুরুন্ডি, কম্বোডিয়া, কেপ ভার্দে দ্বীপপুঞ্জ, কমোরো দ্বীপপুঞ্জ, জিবুতি, গিনি-বিসাউ, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, মোজাম্বিক, নেপাল, সামোয়া, সেশেলস, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, তিমুর-লেস্তে, টোগো ও টুভালু।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় অর্থাৎ ৯০ দিন ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে গিনি-বিসাউ, নেপাল ও বলিভিয়ায়। সামোয়া ও সেশেলসে থাকা যাবে ৬০ দিন। কমোরো আইল্যান্ডসে অবস্থানের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসার মেয়াদ ৪৫ দিন। জিবুতি ও মৌরিতানিয়ায় থাকা যাবে ৩১ দিন।
এছাড়া মালদ্বীপ, কেপ ভার্দে, সোমালিয়া, মোজাম্বিক, সিয়েরা লিওন, তিমুর-লেস্তে এবং কম্বোডিয়া বেড়ানোর জন্য পাওয়া যাবে ৩০ দিন, যেখানে বুরুন্ডি এবং টুভালুর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে এক মাসের কথা। আর আফ্রিকার দেশ টোগোতে অবস্থানের জন্য পাওয়া যাবে মাত্র ১৫ দিন।
ইটিএ প্রয়োজন হবে যেসব দেশে
ইলেক্ট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন (ইটিএ) মূলত ইলেক্ট্রনিকভাবে তথা অনলাইনে একজন ভ্রমণকারীর পাসপোর্টের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত থাকে। এক কথায় এটিও একটি ভিসা ফ্রি প্রবেশাধিকার। ডিজিটাল অনুমতিটি দেশের ভেতরে থেকে ঘরে বসেই অনলাইনে নিবন্ধন করার মাধ্যমে নিয়ে নেয়া যায়।
এমনকি এর জন্য আবেদনকারীকে সশরীরে নিজ দেশের অভিবাসন সেন্টারে উপস্থিত হওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। যে দেশে ইটিএ কার্যকর আছে সে দেশের অভিবাসন বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ইগয়ে সহজেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়।
চলতি বছরে দুটি দেশে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইটিএ প্রয়োজন হবে- শ্রীলঙ্কা ও কেনিয়া।
আগে শুধু শ্রীলঙ্কা থাকলেও এ বছরই ইটিএ সেবা নিয়ে নতুন সংযোজন হলো কেনিয়া। এখন থেকে এই ডিজিটাল ছাড়পত্রের মাধ্যমে সব বিদেশি নাগরিক ৯০ দিনের জন্য কেনিয়াতে প্রবেশ করতে পারবে।
আর শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে এই অনুমতির সময়সীমা প্রাথমিকভাবে শ্রীলঙ্কায় প্রবেশের তারিখ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত। এই সিঙ্গেল এন্ট্রির পাশাপাশি শ্রীলঙ্কায় ডাবল এন্ট্রির জন্যও ইটিএ রয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকরা ইটিএ ইস্যু করার তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে দু’বার শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ করতে পারবেন।
অনুমোদন একবার হয়ে যাওয়ার পর ভিসাপ্রাপ্ত ব্যক্তি শ্রীলঙ্কায় প্রবেশের সময় যে কোনো চেকপয়েন্ট অনায়াসেই অতিক্রম করতে পারবেন।
হেনলি পাসপোর্ট সূচক অনুযায়ী ভিসা ছাড়া, অন-অ্যারাইভাল এবং ইটিএ সব মিলে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা মোট ৪২টি দেশ ভ্রমণ করতে পারবে। তবে পাসপোর্টের মেয়াদ ন্যূনপক্ষে ছয় মাস থাকতে হবে। সূত্র: ইউএনবি
আরও পড়ুন:২০২৪ সালে শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে গত বছরের তুলনায় এক ধাপ কমেছে বাংলাদেশের অবস্থান। বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক-স্বীকৃত পাসপোর্ট রেটিং, হেনলি সূচকে ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবস্থান ৯৭তম।
একই সূচক নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থান রয়েছে উত্তর কোরিয়া। তাদের অবস্থানও ৯৭তম।
মূলত আগাম ভিসা ছাড়াই পাসপোর্টধারীরা কতগুলো দেশে প্রবেশ করতে পারে, তার ওপর ভিত্তি করে হেনলি সূচক প্রস্তুত করা হয়। এখানে ১০৫টি দেশে ভ্রমণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে র্যাঙ্কিং প্রকাশ করা হয়।
২০২৪ সালের হেনলি পাসপোর্ট সূচক অনুসারে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে ৪২টি দেশে ভিসামুক্ত বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে বলে সিএনএনের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।
এ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় দেশ নেপালের অবস্থান ৯৮তম, পাকিস্তান রয়েছে ১০১-তে এবং আফগানিস্তান ১০৪-এ।
মালদ্বীপের অবস্থান বেশ উপরে। সূচকে তারা রয়েছে ৫৮তম স্থানে। ৯৪টি দেশে তাদের ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে দেশটির পাসপোর্টধারীদের, যা দেশটিকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের অধিকারী করেছে। এ ছাড়া সূচকে ভারত, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কার পাসপোর্টের অবস্থান যথাক্রমে ৮০, ৮৭ এবং ৯৬তম।
এদিকে ২০২৪ সালে এসে ছয়টি দেশের নাগরিকরা ১৯৪টি দেশে ভিসা-মুক্ত বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে। এ দেশগুলো হচ্ছে- ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, সিঙ্গাপুর ও স্পেন।
অন্যদিকে তালিকার তলানির পাঁচটি দেশ হচ্ছে- ইয়েমেন, পাকিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য