বিভিন্ন কারণে ওজন কমতে পারে, তবে ওজন কমার পেছনে ঘুরেফিরে ছয়টি কারণ সামনে আসে। চলুন সেগুলো জেনে নেই।
পর্যাপ্ত খাবার না খাওয়া
সুষম খাবার গ্রহণ করলে ওজন ঠিক থাকে, কিন্তু না করলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমে যায়। অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা, বুলেমিয়া নার্ভোসার মতো মানসিক রোগে যারা ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে ওজন কমে যেতে পারে। বিশেষত ২০ বছরের কাছাকাছি বয়সের মেয়েদের মধ্যে এ সমস্যা প্রকট। অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা হচ্ছে এমন ইটিং ডিসঅর্ডার, যাতে ব্যক্তি ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে খাদ্য গ্রহণ একদম কমিয়ে দেয়। বুলেমিয়া নার্ভোসা হচ্ছে অতিরিক্ত খেয়ে বমি করে ফেলা। এ দুটি সমস্যার কারণে শরীরের ওজন হঠাৎ করে অনেক কমে যায়। দুটি অবস্থাতেই মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
মানসিক চাপ ওজন কমায়
হঠাৎ ওজন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো মানসিক চাপ ও উদ্বেগ। কাজের চাপ বা ব্যক্তিগত জীবনের চাপ থেকে বের হতে না পারলে ওজন কমাসহ নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে মাথাঘোরা, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ইত্যাদি। বিষণ্নতায়ও হঠাৎ ওজন কমে যেতে দেখা যায়। এ ধরনের রোগীরা সবসময় বিষণ্ন ও উদ্বিগ্ন থাকেন। এদের ক্ষুধা কমে যায়; হজমে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে ওজন কমতে থাকে।
হরমোনজনিত রোগ
থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ ‘হাইপারথাইরয়েডিজম’ হলে ওজন কমে একদম শুকিয়ে যায় মানুষ। এসব রোগীর খাবারে রুচি ভালো থাকে এবং তারা বেশি খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমতে থাকে। থাইরয়েড হরমোন বেশি থাকার কারণে রোগীর শরীরের বিপাক ক্রিয়ার হার বেড়ে যায়। খাদ্য বেশি বিপাক হয়ে অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করে। ওজন কমার পাশাপাশি ক্ষুধা বেশি লাগা, গরম অনুভূত হওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয় হাইপারথাইরয়েডিজমে।
ডায়াবেটিস
হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিস। শিশু, যুবক ও ৩০ বছরের কম বয়সী মানুষের এ ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এ ডায়াবেটিসে ইনসুলিনের অভাবে শরীর শক্তি হিসেবে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ নিতে পারে না। শরীর তখন শক্তির জন্য জমা থাকা চর্বি ও মাংশপেশি ভাঙতে থাকে। সে জন্য ওজন কমে যায়।
দীর্ঘস্থায়ী অসুখ
হজমে গোলমাল বা অন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার কারণে ওজন কমে যেতে পারে। দীর্ঘদিনের ডায়রিয়া বা আমাশয়, আইবিএস, সিলিয়াক ডিজিজ, অন্ত্রের প্রদাহ, যকৃতের রোগ, অগ্ন্যাশয়ের রোগ ওজন কমার কারণ। আমাদের দেশে যক্ষ্মা রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। যক্ষ্মা ওজন কমার অন্যতম প্রধান কারণ। এ ছাড়াও কালাজ্বর, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এইডস, ফুসফুসের নানাবিধ সমস্যা, পারকিনসন্স ডিজিজেও ওজন কমে যায়।
ক্যানসার
যেকোনো ক্যানসারের প্রধানতম লক্ষণ হতে পারে হঠাৎ ওজন কমা। ফুসফুস, পাকস্থলি, অন্ন নালি, যকৃতের ক্যানসার, রক্তের ক্যানসারে দ্রুত ওজন কমে যেতে পারে। ক্যানসার কোষের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য শরীর সাইটোকিন নামের এক ধরনের রাসায়নিক নিঃসরণ করে। এ কারণে খাদ্যে রুচি কমে যায়; মাংসপেশি ক্ষয় হয়। সর্বোপরি ওজন কমে যায় অনেক দ্রুত।
আরও পড়ুন:রাজধানীর পশ্চিম ভাষানটেকে সম্প্রতি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হন একই পরিবারের ছয়জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন চারজন এবং বাকি দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
দেশের কোনো না কোনো জায়গায় এমন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুন লাগার ঘটনা সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে প্রায়ই। নানা ধরনের দুর্ঘটনার পরেও এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়ম গ্যাস) সিলিন্ডারগুলো বর্তমানে গ্যাস যোগানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সঠিক ব্যবহার না জানায় জীবনের জন্য এ প্রয়োজনীয় বস্তুটিই ভয়াবহ মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
দুর্ঘটনা এড়িয়ে বাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারের নিরাপত্তামূলক কিছু পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি। জেনে নেয়া যাক গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে ৮টি প্রয়োজনীয় সতর্কতা।
১. অনুমোদিত বিক্রেতা
এলপিজি সিলিন্ডারের সুষ্ঠু ব্যবহারের প্রথম শর্ত হচ্ছে সেটি কেনার জন্য সঠিক বিক্রেতাকে বাছাই করা। তাই সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে জাতীয়ভাবে স্বীকৃত একটি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা। তারপর তাদের সূত্র ধরে খুঁজে বের করতে হবে যে, নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের অনুমোদিত বিক্রেতা আছে কিনা। এ ক্ষেত্রে তাদের বিক্রয় পরবর্তী সেবা এবং গ্যাস রিফিল সেবা সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে।
এ ছাড়া সিলিন্ডার কেনার মুহূর্তে প্রধান দুটি বিষয় দেখে নিতে হবে।
- সিলিন্ডারে সেই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সিল রয়েছে কি না
- সিলিন্ডারটির সেফটি ক্যাপ সুরক্ষিত ভাবে লাগানো রয়েছে কি না
২. মেয়াদ থাকা গ্যাস সিলিন্ডার
একজন অনুমোদিত সিলিন্ডার সরবরাহকারী কখনোই মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করবেন না। গ্যাস সিলিন্ডার সাধারণত ন্যূনতম প্রতি ১০ বছরে প্রতিস্থাপন বা পুনরায় পরীক্ষা করা উচিত। অন্য তথ্যের সঙ্গে মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখটি সিলিন্ডারের বডিতেই লিপিবদ্ধ থাকে। প্রস্তুতের তারিখ থেকে ১০ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে সিলিন্ডারের গুণগত মান হারাতে থাকে। ফলে সেটি পুনরায় গ্যাস রিফিলের জন্য উপযুক্ত থাকে না।
৩. সিলিন্ডারকে সর্বদা উপরের দিকে মুখ করে রাখা
স্পষ্ট করে ভিন্ন কোনো নির্দেশনা না থাকলে এলপিজি সিলিন্ডার ওপরের দিকে মুখ করে সোজা অবস্থায় রাখা উচিত। উল্টো করে কিংবা যে কোনো একদিকে কাত করে রাখা যাবে না। মোট কথা এমনভাবে রাখতে হবে যেন সেটি স্থিরভাবে এক জায়গায় থাকতে পারে। এ সময় আশেপাশের কোনো কিছুর সঙ্গে সিলিন্ডারের যেন কোনো ধাক্কা না লাগে। খালি বা গ্যাস ভরা সিলিন্ডার, উভয় ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। এ অবস্থায় রাখলে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস লিক করে আগুন লাগার ঝুঁকি থাকে না।
৪. সিলিন্ডার স্থাপনের জায়গায় সঠিক বাতাস চলাচল
বদ্ধ জায়গায় জমা হওয়া এলপিজি ধোঁয়া বিপদের লক্ষণ। তাই সিলিন্ডারের সুরক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল। এর জন্য সিলিন্ডারটি রাখার জন্য যতটা সম্ভব উন্মুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ির যে জায়গাটি বেশি খোলামেলা সেখানে মাটির ওপর সমতলে রাখা যেতে পারে, তবে সরাসরি সূর্যালোক পড়ে এমন জায়গা থেকে দূরে রাখাই ভালো।
৫. সিলিন্ডার স্থাপনের জায়গাটির সুরক্ষা
আবদ্ধ এবং স্যাঁতসেঁতে জায়গায় সিলিন্ডার রাখা ঠিক নয়। বরং যেখানে বিশৃঙ্খলা কম এমন খোলামেলা, বিচ্ছিন্ন এবং পরিষ্কার শুষ্ক জায়গা নির্বাচন করা জরুরি। চুলার খুব কাছাকাছি তো রাখা যাবেই না, বরং লম্বা পাইপের সাহায্যে চুলা থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্বে সিলিন্ডারটিকে স্থাপন করতে হয়। যত বেশি দূরে রাখা যায় ততই নিরাপদ।
৬. কোনো ধরনের দাহ্য বস্তু সিলিন্ডারের সংস্পর্শে না আনা
কাগজ, অ্যারোসল, পেট্রল, পর্দা এবং রান্নার তেলের মতো দাহ্য বস্তু সর্বদা এলপিজি সিলিন্ডার থেকে দূরে রাখা উচিত। ছোট্ট আগুনের সূত্রপাত ঘটাতে পারে এমন সবকিছুই বর্জনীয়; এমনকি ধূমপানের জন্য ম্যাচের কাঠি বা দিয়াশলাইও।
৭. রান্নার সময় করণীয়
রান্না শুরু করার আধঘণ্টা আগে থেকেই রান্নাঘরের দরজা-জানালা খুলে দিতে হবে, এতে করে বাতাস চলাচল করতে পারবে। রান্নাঘর যথেষ্ট প্রশস্ত না হলে সিলিন্ডার রান্নাঘরে রাখা উচিত নয়। রান্না শেষে চুলার চাবি বন্ধ করতে কোনো মতেই ভুলে যাওয়া চলবে না। এ ছাড়া উচ্চ ভোল্টেজের ইলেক্ট্রনিক ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সিলিন্ডারের আশেপাশে রাখা যাবে না।
৮. নিয়মিত পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণ
এলপিজি সিলিন্ডারের সংযোগগুলো ক্ষয়ক্ষতি ও লিক জনিত যে কোনো লক্ষণের জন্য আগে থেকেই পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। আর একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে পরিদর্শন এ পরীক্ষার কাজে সহায়ক হবে।
এর বাইরেও অনেক সময় কোনো ফাটল চোখে পড়তে পারে বা গ্যাস লিকের মতো আশঙ্কাজনক কোনো শব্দ কানে আসতে পারে। এ সময় অবিলম্বে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে সিলিন্ডার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা আবশ্যক।
এ ছাড়া শুধু সিলিন্ডারই নয়, এর সঙ্গে ব্যবহৃত বিভিন্ন পার্টসগুলোর প্রতিও দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। এগুলোর মধ্যে আছে সিলিন্ডার রেগুলেটর, সংযোগ পাইপ, ভাল্ভ ক্যাপসহ নানাবিধ ছোট ছোট যন্ত্রাংশ।
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় বয়ে যাচ্ছে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সে সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় অনুভূত হচ্ছে ভ্যাপসা গরম। খুব প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলায় মানুষ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
তীব্র তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবীরা। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ভ্যানচালক সারিজুল হক বলেন, ‘এমুন তাপ সজজু করা কঠিন হয়ি পড়িচে। ভ্যান চালাতি গিয়ি সারা শরীল পুড়ি যাচ্চি। ছামায় গিয়িও কুনু লাব হচ্চি না। সব জায়গায় ভেপসা গরম।’
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, কয়েকদিন ধরে চু্য়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও আশপাশের অঞ্চলের ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। মঙ্গলবার তা তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। আরও কয়েকদিন এমন তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভ ও পাপমোচনের উদ্দেশ্যে অষ্টমী তিথিতে স্নান করার জন্য লাখো পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটেছে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদে। হিন্দু ধর্মীয় মতে, চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে জগতের সব পবিত্র স্থানের পুণ্য এসে ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়। এ সময় ব্রহ্মপুত্রের জল স্পর্শমাত্রই সবার পাপমোচন হয়। আর এ জলে স্নান করলে মোক্ষলাভ হয়।
মঙ্গলবার পবিত্র মন্ত্র উচ্চারণ শেষে স্নানকালে ফুল, ধান, দূর্বা, বেলপাতা, হরিতকি ইত্যাদি দেকতার উদ্দেশে নদের জলে অর্পণ করেন পুণ্যার্থীরা। এদিন ভোর ৪টা থেকে স্নানের লগ্ন শুরু হয়। আর পূণ্য স্নানের এই লগ্ন শেষ হয় বিকেল ৪টা ৫৬ মিনিটে।
আয়োজকরা জানান, লগ্ন শুরুর পর থেকেই গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কামারজানি বন্দর ও ফুলছড়ির উপজেলার অতিপরিচিত বালাসীঘাট ও তিস্তামুখঘাটে আসতে থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তরা। তবে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই সব স্থান পূর্ণার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে। লোকজ মেলার আয়োজনে এ স্নান উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়। দিনব্যাপী কামারজানি বন্দর, বালাসীঘাট ও তিস্তামুখঘাটের ব্রহ্মপুত্রের বালুচরে ঐতিহ্যবাহী অষ্টমী মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ছাড়াও সব ধর্মের বিভিন্ন বয়সের বিনোদনপ্রেমী হাজারো মানুষ অংশ নেন।
এ সময় ব্রহ্মপুত্র নদের বালাসীঘাটে পরিবারসহ ঘুরতে আসা বেসরকারি কোম্পারিতে চাকরিরত শামীম হায়দার বলেন, ‘আমার মেয়ে রিয়া মনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রী আর একমাত্র কন্যাকে নিয়ে মেলায় আসছি। পূজা-অর্চনা দেখলাম, মেলা ঘুরলাম, ভালো লাগল।’
নদে স্নান করতে আসা সবিতা রানী বলেন, ‘আজকের এই দিনে ব্রহ্মপুত্রে স্নান করলে ভগবান সব পাপ মোচন করে দেন। আমি প্রতি বছরই এই দিনে এখানে স্নানে আসি।’
এসময় জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে সবিতা বলেন, ‘দেশ ও দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে, ভগবানের কাছে সেই প্রার্থনা করেছি। এছাড়া সবার উপরে আমরা মানুষ। ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে যেন একে অপরের আত্মীয় হিসেবে বসবাস করতে পারি, সেটিও কামনা করেছি।’
স্নান উৎসব কমিটির সহ-সভাপতি তপন কুমার বলেন, ‘আজ সকাল থেকেই মহা অষ্টমী স্নানে অংশ নিতে ব্রহ্মপুত্র নদে লাখেরও বেশি পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটেছে। সড়ক ও নৌপথে নারী-পুরুষ পুণ্যার্থীরা স্নানে অংশ নিতে আসেন। স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে এ বছর ব্রহ্মপুত্র নদের বালুর ওপর লোকজ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলায় বাহারি পণ্য, শিশুদের খেলাধুলার হরেক রকম জিনিসপত্রসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীও পাওয়া যাচ্ছে।’
গাইবান্ধা শনি মন্দিরের পুরোহিত সুমন চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পঞ্জিকামতে চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে সনাতন ধর্মের নারী-পুরুষরা পাপমোচনের আশায় পবিত্র অষ্টমী স্নানে অংশ নেন। ভোর থেকেই বিপুল সংখ্যক হিন্দু পুণ্যার্থী ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান সেরে দেবীর পূজার্চনা করেন। এদিন পাপমোচনের প্রার্থনার পাশাপাশি সকলেই আমরা দেশ ও জাতীর মঙ্গল কামনাও করে থাকি।’
মারমাদের বর্ষবরণের উৎসবের নাম সাংগ্রাই। এ উসৎবের প্রধান আকর্ষণ জলকেলি। জলকেলির মাধ্যমে পুরনো বছরের সকল দুঃখ-কষ্ট, গ্লানি ধুয়ে-মুছে নতুন বছরকে বরণ করেন তারা।
জলকেলি উৎসবে বান্দরবানের মারমা শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠেছে এ খেলায়।
তবে এটি এখন শুধু মারমাদেরই নয়, বর্তমানে সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে সাংগ্রাই। পুরো জেলা শহরজুড়ে এ বছর চলল সাংগ্রাইয়ের জলকেলি। শিশু থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী এমনকি বয়স্করাও একে অপরের গায়ে জল ঢেলে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছেন।
সোমবার বিকেলে জেলা শহরের রাজার মাঠে জলকেলিতে অংশ নেওয়া তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে জল ঢেলে মৈত্রী জলবর্ষণ প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন।
জলকেলির উদ্ধোধন করেন বান্দরবানের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং। এ সময় তার সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এরপর কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে জলকেলি উৎসবে মেতে ওঠেন মারমা তরুণ-তরুণীরা। জলকেলির পাশাপাশি আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নেচে-গেয়ে অনুষ্ঠান মাতিয়ে তোলেন আদিবাসী শিল্পীরা।
রাতে পাড়া-মহল্লায় মারমা তরুণ-তরুণীরা রাত জেগে পিঠা তৈরি করে এবং ভোরে বিহারে বিহারে গিয়ে প্রবীণদের মিষ্টিমুখ করানোর মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পাহাড়ের বৈসাবি উৎসব।
জলকেলি দেখতে আশপাশের শত শত পাহাড়ি নারী-পুরুষ এবং দেশি পর্যটকরা ভিড় জমান। এ উৎসবে জলকেলি ছাড়াও পিঠা তৈরি, বুদ্ধমূর্তি স্নান, ক্যায়াং ক্যায়াংয়ে ছোয়াইং দান, হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়।
সাংগ্রাই উৎসবে জলকেলির পাশাপাশি আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নেচে-গেয়ে উপস্থিত দর্শকদের আনন্দ দেন পাহাড়ি শিল্পীরা। মারমা শিল্পীগোষ্ঠী ছাড়াও পাহাড়ের নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের পরিবেশনাও মুগ্ধ করে দর্শক-শ্রোতাদের।
জলকেলি উৎসবের উদ্ধোধনি অনুষ্ঠানে সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি বলেন, ‘সম্প্রীতির জেলা বান্দরবান। বাংলা নববর্ষের পাশাপাশি পার্বত্য জেলার সকল সম্প্রদায়ের লোকজন সাংগ্রাই উৎসব মিলেমিশে এবং শান্তিপুর্ণভাবে উৎসব উপভোগ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ধর্ম যার যার, তবে আনন্দ উৎসব আমাদের সবার। পাহাড়-বাঙালির মধ্যে যে সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে, তা অটুট থাক। আজকে দিনে সবার মঙ্গল কামনা করি।’
সৌদি আরবে কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী এবার (২০২৪ সালে) ১০ জিলহজ বা কোরবানির ঈদ হতে পারে জুন মাসের ১৬ তারিখ।
বাংলাদেশে সাধারণত সৌদি আরবের পরের দিন কোরবানির ঈদ পালন করা হয়। সে হিসাবে এখানে কোরবানির ঈদ পালিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে জুন মাসের ১৭ তারিখ। তবে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।
ধর্মমতে, মহান আল্লাহ মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানির নির্দেশ দেন। আদেশের পর তিনি সবচেয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানির সিদ্ধান্ত নেন। এতে আল্লাহ খুশি হন এবং হযরত ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়ে যায়। এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনে হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত পশু কোরবানি করে থাকেন।
ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে লম্বা ছুটি শেষ হয়েছে রোববার। সোমবার ছিল ছুটি শেষের প্রথম কর্মদিবস। রাজধানীর বাস ও রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে নগরে ফেরা মানুষের ভিড় বেড়েছে। তবে অফিস-আদালত এখনও স্বাভাবিক সময়ের চিত্র ফিরে পায়নি।
চিরচেনা রূপে ফেরেনি ঢাকা শহরও। রাস্তার পাশের বেশিরভাগ দোকান, শপিং মল বন্ধ। সোমবার রাজধানীর রাস্তায় খুবই কমসংখ্যক যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। যানজট তো দূরের কথা, নগরীর অধিকাংশ রাস্তাই ছিল ফাঁকা।
সোমবার সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি অফিসসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুললেও কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি ছিল কম। একইভাবে সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও ছিল হাতেগোনা।
ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোলাকুলির মাধ্যমে একে অপরকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়।
সকালে মালিবাগ, শান্তিনগর, গুলশান, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, মিরপুর ও শাহবাগ এলাকায় স্বল্পসংখ্যক বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও যানবাহনের জটলা দেখা গেছে কেবল বাস, লঞ্চ ও রেল স্টেশন ঘিরে।
বেসিরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে আবু রায়হান বললেন, ‘রাজধানীতে এখনও ঈদের আমেজ পুরো মাত্রায়। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। রাস্তায় কোনো যানজট বা বিশৃঙ্খলা নেই। রাজারবাগ এলাকা থেকে গুলশানে পৌঁছতে মাত্র ৬ মিনিট সময় লেগেছে। অথচ অন্য সময় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লাগে।’
সদরঘাটে নগরে ফেরা মানুষের ভিড়
রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সোমবার ঢাকামুখী মানুষের ভিড় দেখা যায়। লম্বা ছুটি শেষে কর্মমুখী মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করায় এদিন যাত্রীর চাপ ছিল লক্ষণীয়। তবে উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়নি।
সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের সবলঞ্চ ডেকে পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে ঘাটে ভেড়ে। ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়েও কিছু লঞ্চ ঢাকার এসে পৌঁছায়। চাঁদপুর, ভোলা, ইলিশা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলোও ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দেশের ৩১টি নৌপথে নিয়মিত ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। তবে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তা দ্বিগুণের বেশি করা হয়েছে। ঈদের আগে-পরের প্রায় ১৫ দিন ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭৫টিরও বেশি লঞ্চ যাতায়াত করেছে।
আগে ঢাকা থেকে ৪১টি নৌপথে লঞ্চসহ পণ্যবাহী বিভিন্ন নৌযান চলত। নদী খনন ও ড্রেজিংয়ে অনিয়মের কারণে ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলগামী ১০টি নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে।
সোমবার দুপুরের পর থেকে গ্রিন লাইন-৩ ও সন্ধ্যার পর পারাবত-৯, ১০, ১২ ও ১৮; মানামী, কুয়াকাটা-২, কীর্তনখোলা-২ ও ১০; সুরভী-৮ ও ৯; অ্যাডভেঞ্চার-১ ও ৯; সুন্দরবন-১২ লঞ্চসহ মোট ১৫টি লঞ্চ বরিশাল নদীবন্দর থেকে সদরঘাটে এসে পৌঁছায়।
মানামি লঞ্চের চালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এবার ঈদের আগে যেমন যাত্রীর চাপ ছিলো পরে তেমন হচ্ছে না। সরকারি ছুটি শেষ হওয়ায় অনেকেই এখন ঢাকা ফিরছে। তবে একসঙ্গে সবাই আসছে না। এজন্য উপচেপড়া ভিড় নেই।’
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী আকবর পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী থেকে ফিরেছেন ঢাকায়। তিনি বলেন, ‘এমভি টিপু-১৩ লঞ্চের টিকিট পেয়েছিলাম। তবে লঞ্চে অনেক মানুষের ভিড় ছিলো। ঠিকভাবে ঢাকায় আসতে পেরেছি এটাই অনেক।’
মনপুরা, হাতিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় এসেছে এমভি তাসরিফ-৮। লঞ্চটির কর্মী আনোয়ার মিয়া বলেন, ‘লঞ্চে পাঁচ-ছয়শ’ মানুষ এসেছে। ছুটি শেষ হওয়ায় মানুষ ঢাকায় ফিরঠে। আরামের যাত্রা লঞ্চ। এজন্য অনেকেই লঞ্চে করে আসেন।’
ভোলার চরফ্যাশন ও বেতুয়া থেকে ঢাকা এসেছে এমভি টিপু-১৩। লঞ্চটি ঘাটে ভিড়তেই দেখা যায় ডেকভর্তি মানুষ। অনেকে দাঁড়িয়েও এসেছেন।
ভোলা থেকে আসা যাত্রী মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘কাপড়ের দোকানে কাজ করি। ঈদের আগের দিনও খোলা ছিল। চাঁদ রাতে ঈদ করতে ঢাকা থেকে বাড়িতে গিয়েছিলাম। ছুটি শেষ, মার্কেট খুলবে। এজন্য চলে আসলাম।’
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বরিশাল অঞ্চলগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রী কমায় ঢাকার সদরঘাটের চেনা রূপ অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছিল। ঈদের ছুটির সঙ্গে ফিরেছে চেনা সেই ভিড়। তবে ঈদের পরে ঢাকার সদরঘাটে ভিড় বাড়লেও আগের মতো নেই বলে জানিয়েছেন লঞ্চ-সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সদরঘাটে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় থাকলেও ফিরতি যাত্রীর ভিড় ছিলো না। বরিশাল, ভোলার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা লঞ্চগুলোর কর্মীরা যাত্রীদের ডাকাডাকি করছিলেন। অল্পসংখ্যক যাত্রীই লঞ্চে উঠেছেন। বেশ কয়েকটি লঞ্চের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ডেকের সিট অধিকাংশই ফাঁকা। ভেতরে কিছু মানুষ বসে আছে। কেউ আবার কেবিন নিয়ে দরদাম করছেন।’
ডলার কোম্পানির ২৪টি লঞ্চের মালিক ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘আমাদের লঞ্চ আছে অনেক। কিন্তু সেই অনুপাতে যাত্রী নেই। তাই লঞ্চ কম ছাড়ছে। যেগুলো ছাড়ছে সেগুলোতে ভরেই যাচ্ছে। ঈদের পরও আমরা যাত্রীর চাপ আশা করেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি।’
লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘ঈদের আগে যাত্রীর চাপ বাড়ায় আশা পেয়েছিলাম। তবে ঈদের ছুটি শেষে যাত্রীর ভিড় নেই।’
সদরঘাটের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ঈদের পর যাত্রীর চাপ স্বাভাবিক রয়েছে। নিয়মিত লঞ্চগুলোই চলাচল করছে। অতিরিক্ত কোনো লঞ্চের প্রয়োজন পড়ছে না।’
টার্মিনাল এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সদরঘাট নৌ-থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, ‘আজ যাত্রীর চাপ আগের থেকে বেড়েছে। পুলিশ, র্যাবসহ আনসার সদস্যরা কাজ করছে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে তল্লাশিও করা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, ঈদ উপলক্ষে ১০, ১১, ১২ এপ্রিল ছিল সরকারি ছুটি। ১৩ এপ্রিল শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি এবং ১৪ এপ্রিল রোববার ছিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলা নববর্ষের ছুটি।
তবে ঈদে ঢাকার বাইরে যাওয়া সরকারি-বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের অনেকেই ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন। ফলে অফিস-আদালত, ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
স্কুল-কলেজও খুলবে আগামী সপ্তাহে। তারপরই চিরচেনা রূপে ফিরবে রাজধানী ঢাকা।
খাগড়াছড়িতে ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চেঙ্গী, ফেনী ও মাইনী নদীতে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে ফুল উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক ও প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’। ফুল বিঝুকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকে নদীর পাড়গুলো হাজারো তরুণ-তরুণীর মিলনমেলায় পরিণত হয়।
পাহাড়ি সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা হল্লা করে ফুল তুলে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে নদী-খালে ফুল উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে পুরাতন বছরের গ্লানি মুছে নতুন বছরের শুভ কামনায় নিজেদের পবিত্রতা কামনা করে। এছাড়া ফুল দিয়ে ঘরের প্রতিটি দরজার মাঝখানে মালা গেঁথে সাজানো হয়।
শুক্রবার চাকমা সম্প্রদায় ফুল বিজু পালন করছেন। শনিবার মূল বিজু আর পরেরদিন রোববার পহেলা বৈশাখ বা গজ্জাপয্যা পালন করবেন তারা। এ সময় ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন। একইসঙ্গে শনিবার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের হারিবৈসু, বিযুমা ও বিচিকাতাল পার্বন পালিত হবে ফুল বিজু, মূলবিজু ও বিচিকাতাল নামের নিজস্ব বৈশিষ্টে।
রোববার খাগড়াছড়িতে মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাইং উৎসবে ঐতিহ্যবাহী জলকেলি ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হবে বর্ষবরণের র্যালী। এসব উৎসবে আনন্দের আমেজ ছড়ায়।
চেঙ্গী নদীতে চাকমা সম্প্রদায়ের সঙ্গে ফুল উৎসর্গে সামিল হয়েছেন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ। বৈসাবি উৎসব দেখতে এসেছেন অনেক পর্যটকও।
১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উসব পালিত হয়ে আসছে। সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে যথাক্রমে ‘বৈসু’, ‘সাংগ্রাই’ এবং ‘বিজু’ নামে এ উৎসব পালন করে থাকেন। এ তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়।
চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়ের পাশাপাশি তঞ্চঙ্গ্যা, বম, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, ম্রো, খুমি, আসাম, চাক ও রাখাইনসহ ১৩ ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী তাদের ভাষা-সংস্কৃতি ও অবস্থানকে বৈচিত্র্যময় করে করে তুলতে প্রতি বছর চৈত্রের শেষ দিন থেকে বৈসাবি উৎসব পালন করে থাকে।
বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি-বাঙ্গালির মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও ঐক্য আরও সুদৃঢ় হোক এই প্রত্যাশা সকলের।
মন্তব্য