শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্মিত হলো সিসিমপুরের বিশেষ কিছু পর্ব।
উদ্যোগের অংশ হিসেবে সিসিমপুরের জনপ্রিয় ১৩টি পর্বে শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের উপযোগী করে সাইন ল্যাঙ্গুগুয়েজ তথা ইশারা ভাষা যুক্ত করে নতুনভাবে তৈরি করেছে সিসিমপুরের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ (এসডব্লিউবি)।
সিসিমপুরের পর্বগুলোকে ইশারা ভাষায় রূপান্তরে সহযোগিতা করেছে শ্রবণপ্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নে কাজ করা সংগঠন সোসাইটি অব দ্য ডেফ অ্যান্ড সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজার্স (এসডিএসএল)।
২৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডে। এই দিন থেকে সাইন ল্যাঙ্গুগুয়েজে নির্মিত সিসিমপুরের বিশেষ পর্বগুলো সিসিমপুরের সোশ্যাল ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে ধারাবাহিকভাবে প্রচার শুরু হবে, যা পরবর্তী পর্যায়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও প্রচার হবে।
বিশেষ এই উদ্যোগ সম্পর্কে সিসিমপুরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘সিসিমপুরের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর কাছে পৌঁছানো। তারই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই আমরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সিসিমপুরের ১০টি গল্পের বই ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করেছি ও শিশুদের মাঝে বিতরণ করেছি। এবার শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নিয়ে আসছি ১৩ পর্বের বিশেষ সিসিমপুর।
‘ধারাবাহিকভাবে পর্বের সংখ্যা বাড়ানোর ইচ্ছে আছে আমাদের। আমাদের টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ ও অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য ইউএসএআইডি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই।’
প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য এখন জলজ প্রাণী, খাদ্য চেইন ও মানুষের জীবনের জন্য বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় বর্জ্যগুলোর খাল, নালা, নদী হয়ে সর্বশেষ আশ্রয় হচ্ছে সমুদ্রে।
প্লাস্টিকের মতো অপচনশীল উপকরণের দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা, মাটির উর্বরতা হ্রাস, সামুদ্রিক মাছ ও প্রানীর জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টিকে গুরত্ব দিয়ে প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য ব্যবহারে আরও বেশী সংযমী, সচেতন ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বনে জনগনকে উদ্ভুদ্ধ করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও দাতব্য সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন আয়োজন করেছে ‘প্লাস্টিক সমুদ্র’ শিরোনামে ভিন্নধর্মী এক প্রদর্শনী।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে আয়োজিত এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ শাহীন ইমরান।
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে শীতের মৌসুমে সারা দেশ থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন। এই সময়ে পর্যটকরা যেন যেখানে সেখানে প্লাস্টিক না ফেলেন এবং প্লাস্টিক রিসাইকেল নিয়ে সচেতন হন সেক্ষেত্রে এই আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
বিদ্যানন্দের বোর্ড মেম্বার মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন জানান, কক্সবাজার সৈকতের বালির ওপর নির্মিত পাঁচটি ভাস্কর্য দিয়ে দেখানো হয়েছে মানুষের আবাসস্থল, সেটা হোক বাসাবাড়ী কিংবা আবাসিক হোটেল। সেখান থেকে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফোয়ারার আকারে বেরিয়ে ভূমিতে, জলাশয়ে তথা সমুদ্রে গিয়ে পড়ে এবং জাহাজের মতো ভাসতে থাকে। সামুদ্রিক মাছ, প্রাণী, গাংচিল (পাখিদের প্রতিনিধি) তাদের খাবার মনে করে তা গলাদকরণ করে, যা পরবর্তীতে হজম হয়না। ফলে অকালে মারা যায় নিষ্পাপ প্রাণী ও পাখিগুলো।
‘বড় বড় প্লাস্টিকের টুকরো ও পরিত্যক্ত জালে আটকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কাছিমের মৃত্যু হয়। মরে পড়ে থাকা মাছ কিংবা গাংচিলের পেটে ছোট ছোট প্লাস্টিকের বোতল আর টুকরোগুলো বলে দেয় আমাদের অসচেতনভাবে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক সামগ্রীর দূষণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থান। ফলে নির্মমভাবে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের জীববৈচিত্র্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই কাজটি করার ক্ষেত্রে উপকরণ হিসেবে নানা ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করে মুলত দর্শকদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে চেষ্টা করা হয়েছে নীরবে আমাদের অগোচরে, অজান্তে প্লাস্টিক কীভাবে মানুষের ক্ষতিসাধন করে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সমাজের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা ও ভাগ্য পরিবর্তনে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে নানা রকম সৃজনশীল উদ্যোগ নিয়ে থাকে।’
আরও পড়ুন:সিলেটের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া। খাসিয়া উপজাতির মানুষদের বসবাস এখানে। খাসিয়া পুঞ্জির শিশুদের শিক্ষার জন্য দীর্ঘদিন থেকে এখানে চাহিদা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী জানান, স্কুলের জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কাছে বেশ কয়েকবার গেলেও পাত্তা দেননি কেউই।
বৃহস্পতিবার খাসিয়া পুঞ্জির শিশুদের শিক্ষার এ সমস্যা সমাধানে ৪ জন বিদেশী বন্ধুর সহায়তায় নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় উদ্বোধন করেন একজন বাংলাদেশী ইউটিউবার।
ইউটিউবভিত্তিক চ্যানেল ইনফো হান্টারের (Info Hunter) প্রতিষ্ঠাতা সাকিবুর রহমান তার ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে খাসিয়াপুঞ্জির শিশুদের পড়াশোনার দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রচারের পর ওই ভিডিও দেখে শিশুদের পড়াশোনার দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসেন জার্মান, লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪ ব্যক্তি। তাদের সহায়তায় লাউয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জির শিশুদের পড়াশোনার সমস্যার দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটে।
বৃহস্পতিবার সকালে অতিথিদের নিয়ে স্কুলটি উদ্বোধন করা হয়। ৪০ জন শিক্ষার্থী ও দুইজন শিক্ষক নিয়ে চালু হয় এই স্কুল। শিক্ষকদের মধ্যে ১ জন খাসিয়া ভাষা ও ১ জন বাংলা ভাষায় পাঠদান করাবেন শিক্ষার্থীদের।
প্রাথমিক বিদ্যালয়টির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইনফো হান্টারের প্রতিষ্ঠাতা সাকিবুর রহমান, ব্যবসায়ী সৈয়দ ইশতিয়াক বাবেল, আসাদুর রহমান, খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী, প্রচার সম্পাদক সাজু মার্ছিয়াং প্রমুখ।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের প্রচার সম্পাদক সাজু মার্ছিয়াং জানান, এলাকায় যেই বিদ্যালয়টি ছিল, তা দূরে হওয়ায় বাচ্চাদের পড়াশোনা করানো এলাকাবাসীর জন্যে কষ্টকর ছিল। তারা শিশুদেরকে একদিন স্কুলে নিয়ে গেলে বাকি ৫ দিন নিয়ে যেতে পারতেন না। স্কুল দূরে হওয়ায় ও অর্থনৈতিক সংকট থাকায় শিশুদের বিদ্যালয়ে নেয়া ছিল কঠিন।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ইনফো হান্টার চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাতা সাকিবুর রহমান ভাই আমাদের স্কুলের সমস্যা নিয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। এত দেশে-বিদেশে অনেকে আমাদের সমস্যা জানতে ও বুঝতে পারেন। সাকিবুর ভাইয়ের কারণে আজ আমরা স্কুলটি পেলেম। আমাদের কষ্টের অবসান ঘটলো।’
নব নির্মিত এই স্কুলের দুইজন শিক্ষক সামসুন্নাহার ও এলটি।
সামসুন্নাহার বলেন, ‘এখানে বেসরকারি স্কুলটি হওয়ার পর আমাদের নিয়োগ দিয়েছে স্থানীয় খাসিয়া পুঞ্জির নেতৃবেৃন্দরা। আমরা দুইজন শিক্ষক পাঠদান করাবো। একজন বাংলা ও একজন খাসি ভাষার ওপড় ক্লাস নেব।’
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী বলেন, ‘স্কুলের জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনেকবার গিয়েছি। কেউ পাত্তা দেননি। আজ সাকিবুর ভাইয়ের মাধ্যমে আমাদের বাচ্চারা স্কুল পেয়েছে। উনাকে খাসিয়া পুঞ্জির সবার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে এ বিষয়ে কথা হয় ইনফো হান্টারের প্রতিষ্ঠাতা সাকিবুর রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন আমার ইউটিউব ও ফেসবুক পেজে এ স্কুলের ভিডিও আপলোড দেই, তখন লাখ লাখ মানুষ তা দেখে। তাদের দীর্ঘদিনের চাহিদা ১টা প্রাথমিক স্কুলের। পরে ভাবলাম একটা স্কুলের ব্যবস্থা করে দেব। আমার ভিডিও দেখে অনেকে সাড়া দেন। এর মধ্যে ৪ জনের সহযোগীতায় আমি স্কুলের ব্যবস্থা করে দেই। তাদের দীর্ঘদিনের সমস্যার কিছুটা হলেও অবসান ঘটলো। স্কুলটা করতে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা লেগেছে। সব টাকাই বিদেশী ৪ জন বন্ধুর মাধ্যমে পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য পুঞ্জিগুলোকে এভাবে সহযোগিতা করব বলে আশা করছি। আমার মানবিক ভাইদের সহযোগিতায় এই কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করে যাব, যাতে সবার উপকার হয়।’
দেশের সবচেয়ে উন্নত স্থান গুলশান, বারিধারা, বনানী জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘এসব অভিজাত এলাকার বাসা বাড়ির পয়োবর্জ্য ফেলা হচ্ছে লেকে। এটা দেখলেই সবচেয়ে বেশি দুঃখ লাগে, কষ্ট লাগে।’
মেয়র আতিক বলেন, ‘ঢাকার লেকে এখন মাছের বদলে মশার চাষ হচ্ছে। যখন দেখি ঢাকায় মাছ চাষের জায়গা নেই, এটা দেখে কষ্ট লাগে। বারিধারা, গুলশান লেকে পয়োবর্জ্য ফেলা হচ্ছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, এসব এলাকার পয়োবর্জ্যের লাইন লেকে দেয়া হয়েছে। আমি ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি এসব লাইন কেটে দিতে। এ বিষয় অভিযান চলছে, আগামীতে আরও কঠোরভাবে এই অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
রোববার রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচের লেকে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে কুড়িল লেকে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মৎস্য অধিদপ্তর।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘নগরের প্রতিটি বাড়িতে সেফটি ট্যাংক থাকতে হবে। আপনারা হয়তো ভাবছেন, সেপটিক ট্যাংকে পয়োবর্জ্য শুকিয়ে গেলে কে নিয়ে যাবে? আমি বলতে চাই এগুলো আমরা নিজ দায়িত্ব সংগ্রহ করব এবং ল্যান্ডফিলে নিয়ে ফেলব।’
‘ঢাকার লেকের পানি এতটাই দূষিত যে কোনো মাছ সেখানে বাঁচতে পারে না। মাছ ছাড়লেও মরে ভেসে ওঠে। এসব নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। বাসা মালিকরা যে যার মতো করে পয়োবর্জ্যের লাইন দিয়ে দিচ্ছেন। দখল করছেন, নানান বর্জ্য ফেলে দূষিত করছেন লেক। তবে এসব আর হতে দেয়া যাবে না। সুন্দর পরিবেশের এক ঢাকা গড়তে আমরাসহ প্রতিটি নাগরিককে যার যার জায়গা থেকে সচেতন হয়ে খাল দখল, দূষণ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে।’
সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করে দিয়েছেন। এসব উন্নয়ন গোল্ড ফিশের মতো ভুলে গেলে হবে না। এগুলো নিয়ে কথা বলতে হবে, সবাইকে এসব জানাতে হবে।’
‘প্রধানমন্ত্রী একজন দূরদর্শী নেতা। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে রয়েছে। অন্যান্য মাছ চাষেও সাফল্য অর্জন করে চলেছে।’
স্থানীয় কাউন্সিলর ইসহাক আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মৎস্য অধিদপ্তর এবং ডিএনসিসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:আমরা সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। চারপাশে মানুষের দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ দেখার ফুরসত নেই! সবকিছু থেকে গা বাঁচিয়ে চলাটাই হয়ে উঠেছে বাস্তবতা। তারপরও এই সমাজে কিছু মানুষ মানবতার সেবায় কাজ করে চলেছেন। তাদেরই একজন অমলেন্দু কুমার দাশ।
সিলেটের মৌলভীবাজারের বাসিন্দা অমলেন্দুর মানবিক কাজের ধরনটি অবশ্য আর দশজনের সঙ্গে মেলানো যাবে না। বিদেশের মাটিতে কারাবন্দি থাকা স্বজনকে মুক্ত করে তিনি হাসি ফুটিয়েছেন শত শত পরিবারে। আর সে সুবাদে আজ তার পরিচিতি ‘মানবিক মানুষ’ হিসেবে। ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ও বলেন অনেকে।
ভারতের কারাগারে বন্দি তিন শতাধিক বাংলাদেশিকে দৌড়ঝাঁপ করে মুক্ত করে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অমেলেন্দু দাশ। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি থাকা ভারতের ১৯ নাগরিককে মুক্ত করে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। আর এসব কাজ তিনি করেছেন স্বেচ্ছায় এবং নিজের বেতনের টাকা খরচ করে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার দক্ষিণ বাড়ন্তি গ্রামে অমলেন্দু কুমার দাশের জন্ম। তিনি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। চাকরিটা তার জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। তবে এর বাইরে তার কর্মক্ষেত্রের ব্যাপ্তি বিশাল। সরকারি চাকরির পাশাপাশি তিনি নানামুখী মানবিক কাজে নিজেকে যুক্ত করে রেখেছেন। লোকসাহিত্য ও গবেষণাধর্মী লেখালেখিসহ লোকজ সংস্কৃতি রক্ষায়ও তিনি নিরলস কাজ করে চলেছেন।
অমলেন্দু কুমার জানান, ২০১৭ সাল থেকে অদ্যাবধি তিন শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতের বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্ত করে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। মানবিক এসব কাজের পেছনে রয়েছে এক বৃদ্ধা মায়ের চোখের জল, অনেক বন্দির করুণ কাহিনী ও নীরব চাহনি।
ভারতের আসামের পাথারকান্দির জয়ন্তী বিশ্বাস ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। কিন্তু অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তিনি। আদালত এক মাসের কারাদণ্ড দিলে তাদেরকে মৌলভীবাজার কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে সাজার মেয়াদ শেষ হলেও নানা প্রশাসনিক জটিলতায় মা ও ছেলে কারামুক্ত হয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় আসামের এমএলএ কৃষ্ণেন্দু পালের অনুরোধে অমলেন্দু দাশ প্রায় দুই মাস সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দৌঁড়ঝাপ করে তাদের মুক্তির আদেশ হাতে পান।
অবশেষে ১৬ মাসের বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে মা ও ছেলে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে সক্ষম হন। নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সময়টাতে তাদের সেই আনন্দের বাঁধভাঙা কান্না হৃদয় ছুয়ে যায় অমলেন্দুর। আর মা-ছেলের ঘরে ফেরার সেই আনন্দ তাকে এমন মানবিক কাজে উদ্যোগী হতে উৎসাহিত করে।
অমলেন্দু পরবর্তী সময়ে মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলা কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি থাকা ভারতীয় নাগরিকদের খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। কাগজপত্র ঘেঁটে তিনি দেখতে পান, এখানে আটক ভারতীয় নাগরিকদের অনেকেরই কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও যথোপযুক্ত উদ্যোগে অভাবে তারা এখানে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।
নানা স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে প্রশাসনিক ঝামেলা মিটিয়ে তিনি এসব ভারতীয় নাগরিককে নিজ দেশে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এই বন্দিদের অনেকেই ১৪ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি ছিলেন।
এবার ভারতের কারাগারে বন্দি বাংলাদেশিদের মুক্ত করে আনার পালা। তবে শুরুতে এসব বিষয় অমলেন্দুর দাশের অনেকটা অজানাই ছিল।
ভারতীয় নাগরিকদের কারামুক্ত করে নিজ দেশে পাঠাতে অমলেন্দু দাশের এই মহতী কাজ মিডিয়াতে প্রচার হলে ভারতেও সেসব খবর ব্যাপক প্রচার পায়। সেখানকার কয়েকজন সংবাদকর্মী ও সমাজসেবক অমলেন্দু কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান যে আসামের বিভিন্ন কারাগারে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।
এমন খবর পাওয়ার পরপরই মানবিক বোধ থেকে তৎপর হয়ে ওঠেন অমলেন্দু। উভয় দেশের আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনে শুরু করেন দৌড়ঝাঁপ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি বাংলাদেশের তিন শতাধিক নাগরিককে কারামুক্ত করে দেশে আনার ব্যবস্থা করেন। তাদেরকে ফিরিয়ে দেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটানো স্বজনদের কাছে।
মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা অমলেন্দু কুমার দাশ বলেন, ‘মানবিক তাগাদা থেকে সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় আমি এসব কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। নিজের চাকরির বেতনের টাকার একটা অংশ খরচ করে আমি কাজগুলো করে চলেছি।
‘বিপদাপন্ন মানুষগুলোর কান্না এবং বিপদমুক্তির পর তাদের মধ্যে যে আনন্দ ও স্বস্তি আমি দেখতে পাই সেটাই আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। আর তা আমাকে এসব সব কাজে প্রেরণা যোগায়।’
অসহায় বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুবাদে অমলেন্দু দাশ সাধারণ মানুষের কাছে মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। আর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর চোখে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘মহামানব’।
প্রসঙ্গত, এযাবৎকালের সবচেয়ে দর্শকনন্দিত টিভি অনুষ্ঠানগুলোর একটি ‘ইত্যাদি’তে হৃদয়ছোঁয়া মানবিক প্রতিবেদনে রয়েছে অমলেন্দুর মহৎ কাজগুলো। এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে নেত্রকোণায়, যা প্রচার হবে ২৯ সেপ্টেম্বর।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বিসিএস অফিসার্স ফোরাম এই বিদ্যায়তনের স্নাতক চূড়ান্ত পর্ব পরীক্ষায় সব বিভাগের শীর্ষস্থান অধিকারী ৪০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও সনদ প্রদান করেছে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশন কক্ষে এই বৃত্তি ও সনদ দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. নুরুল আলম।
সভাপতিত্ব করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং ফোরামের সভাপতি ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি-ডিসি ও ফোরাম সাধারণ সম্পাদক মো. আ. আহাদ স্বাগত বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন। তিনি বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং ভবিষ্যতে এই বৃত্তির পরিধি বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরও বক্তব্য দেন সাবেক কর কমিশনার ও ফোরামের কোষাধ্যক্ষ বজলুল কবির ভূইয়া, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগের মোট ৪০ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে এককালীন ২০ হাজার টাকার চেক ও একটি সম্মাননা সনদ দেয়া হয়।
বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জুবফকে ধন্যবাদ জানান এবং আগামীতে অনুরূপ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সংকল্প ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সরকারি তিতুমীর কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন।
আরও পড়ুন:দেশের প্রথম একক শিল্পমেলা ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভান্সড কম্পোনেন্টস অ্যান্ড টেকনোলজি (এটিএস) এক্সপো-২০২৩’ শেষ হয়েছে।
তিন দিনব্যাপী এই শিল্পমেলার আয়োজনে ছিল ওয়ালটন। দেশি-বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই আয়োজন। সার্বিকভাবে সফলতা পেয়েছে এটিএস এক্সপো।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর কুড়িলে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) হল-১ এ আয়োজিত ‘এটিএস এক্সপো-২০২৩’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে এমন তথ্য জানায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন।
এটিএস এক্সপো’র সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ভাইস-চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ওয়ালটন লাসভেগাসের ফেয়ারে অংশগ্রহণ করেছে, জার্মানিতে পণ্য রপ্তানি করেছে। এসব সংবাদ যখন শুনি তখন খুব গর্ববোধ করি। আগে ভাবতাম জাপান, চীন এসব দেশ টেকনোলজি পণ্য ও কম্পোনেন্টস তৈরি করতে পারবে; আমরা পারবো না।
‘কিন্তু এটিএস এক্সপোতে ওয়ালটন তথা বাংলাদেশও ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্ট ও টেকনোলজি পণ্য তৈরির সক্ষমতা দেখিয়েছে। ওয়ালটনের সামনে এগিয়ে যাওয়ার বিশাল ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ওয়ালটন এই এক্সপোতে সেই ক্ষমতা দেখালো। জাপান, জার্মানি, আমেরিকা, ভারত- সব দেশের সঙ্গে সমানতালে বাংলাদেশকে সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে নেয়ার অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ওয়ালটন।’
এটিএস এক্সপোতে চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ২১টি স্টলে ওয়ালটনের তৈরি আন্তর্জাতিক মানের ৫০ হাজারেরও বেশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস, কম্পোনেন্টস, সার্ভিসেস ও টেস্টিং ফ্যাসিলিটিস প্রদর্শন করা হয়।
এসবের অধিকাংশই প্রায় সব ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধাপে প্রধান কাঁচামাল ও কম্পোনেন্টস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আমদানি বিকল্প গুণগতমানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস, কম্পোনেন্টস ও টেস্টিং সলিউশনস প্রদানের মাধ্যমে আমদানিনির্ভরতা হ্রাসের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও দেশীয় শিল্পের ক্ষমতায়নে অবদান রাখবে ওয়ালটন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য