এক নাপিত। তার সঙ্গে এক জোলার খুব ভাব। নাপিত লোককে কামাইয়া বেশি পয়সা উপার্জন করিতে পারে না। জোলাও কাপড় বুনিয়া বেশি লাভ করিতে পারে না। দুইজনেরই খুব টানাটানি। আর টানাটানি বলিয়া কাহারো বউ কাহাকে দেখিতে পারে না। এটা কিনিয়া আন নাই, ওটা কিনিয়া আন নাই বলিয়া বউরা দিনরাতই শুধু মিটির মিটির করে। কাঁহাতক আর ইহা সহ্য করা যায়।
একদিন জোলা যাইয়া নাপিতকে বলিল, ‘বউয়ের জ্বালায় আর তো বাড়িতে টিকিতে পারি না।’
নাপিত জবাব দিল, ‘ভাইরে! আমারও সেই কথা। দেখ না আজ পিছার বাড়ি দিয়া আমার পিঠের ছাল আর রাখে নাই।’
জোলা জিজ্ঞেস করে, ‘আচ্ছা ভাই, ইহার কোনো বিহিত করা যায় না?’
নাপিত বলে, ‘চল ভাই, আমরা দেশ ছাড়িয়া বিদেশে চলিয়া যাই। সেখানে বউরা আমাদের খুঁজিয়াও পাইবে না; আর জ্বালাতনও করিতে পারিবে না।’
সত্যি সত্যিই একদিন তাহারা দেশ ছাড়িয়া পালাইয়া চলিল।
এ দেশ ছাড়াইয়া ও দেশ ছাড়াইয়া যাইতে যাইতে তাহারা এক বিজন বন-জঙ্গলের মধ্যে আসিয়া পড়িল। এমন সময় হালুম হালুম করিয়া এক বাঘ আসিয়া তাদের সামনে খাড়া। ভয়ে জোলা তো ঠিরঠির করিয়া কাঁপিতেছে।
নাপিত তাড়াতাড়ি তার ঝুলি হইতে একখানা আয়না বাহির করিয়া বাঘের মুখের সামনে ধরিয়া বলিল, ‘এই বাঘটা তো আগেই ধরিয়াছি। জোলা! তুই দড়ি বাহির কর-সামনের বাঘটাকেও বাঁধিয়া ফেলি।’
বাঘ আয়নার মধ্যে তার নিজের ছবি দেখিয়া ভাবিল, ‘এরা না জানি কত বড় পালোয়ান। একটা বাঘকে ধরিয়া রাখিয়াছে। আবার আমাকেও বাঁধিয়া রাখিতে দড়ি বাহির করিতেছে।’ এই না ভাবিয়া বাঘ লেজ উঠাইয়া দে চম্পট।
জোলা তখনো ঠিরঠির করিয়া কাঁপিতেছে। বনের মধ্যে আঁধার করিয়া রাত আসিল। ধারেকাছে কোনো ঘরবাড়ি নাই। সেখানে দাঁড়াইয়া থাকিলে বাঘের পেটে যাইতে হইবে। সামনে ছিল একটা বড় গাছ। দুইজনে যুক্তি করিয়া সেই গাছে উঠিয়া পড়িল।
এদিকে হইয়াছে কি? সেই যে বাঘ ভয় পাইয়া পালাইয়া গিয়াছিল, সে যাইয়া আর সব বাঘদের বলিল, ‘ওমুক গাছের তলায় দুইজন পালোয়ান আসিয়াছে। তাহারা একটা বাঘকে ধরিয়া রাখিয়াছে। আমাকেও বাঁধিতে দড়ি বাহির করিতেছিল। এই অবসরে আমি পালাইয়া আসিয়াছি। তোমরা কেহ ওই পথ দিয়া যাইও না।’
বাঘের মধ্যে যে মোড়ল- সেই জাঁদরেল বাঘ বলিল, ‘কীসের পালোয়ান? মানুষ কি বাঘের সঙ্গে পারে? চল, সকলে মিলিয়া দেখিয়া আসি।’
জঙ্গি বাঘ-সিঙ্গি বাঘ-মামদু বাঘ-খুঁতখুঁতে বাঘ-কুতকুতে বাঘ-সকল বাঘ তর্জন-গর্জন করিয়া সেই গাছের তলায় আসিয়া পৌঁছিল। একে তো রাত আন্ধারী, তার উপরে বাঘের হুংকারি-অন্ধকারে জোড়া জোড়া বাঘের চোখ জ্বলিতেছে। তাই না দেখিয়া জোলা তো ভয়ে ভয়ে কাঁপিয়া অস্থির।
নাপিত যত বলে, ‘জোলা! একটু সাহসে ভর কর!’ জোলা ততই কাঁপে। তখন নাপিত দড়ি দিয়া জোলাকে গাছের ডালের সঙ্গে বাঁধিয়া রাখিল।
কিন্তু তাহারা গাছের মগডালে আছে বলিয়া বাঘ তাহাদের নাগাল পাইতেছে না। তখন জাঁদরেল বাঘ আর সব বাঘদের বলিল, ‘দেখ তোরা একজন আমার পিঠে ওঠ-তার পিঠে আরেকজন ওঠ-তার পিঠে আরেকজন ওঠ-এমনি করিয়া উপরে উঠিয়া হাতের থাবা দিয়া ওই লোক দুটিকে নামাইয়া লইয়া আয়।’ এইভাবে একজনের পিঠে আরেকজন-তার পিঠে আরেকজন করিয়া যেই উপরের বাঘটি জোলাকে ছুঁইতে যাইবে, অমনি ভয়ে ঠিরঠির করিয়া কাঁপিতে কাঁপিতে দড়িসমেত জোলা তো মাটিতে পড়িয়া গিয়াছে। উপরের ডাল হইতে নাপিত বলিল, ‘জোলা! তুই দড়ি দিয়া মাটির উপর হইতে জাঁদরেল বাঘটিকে আগে বাঁধ, আমি উপরের দিক হইতে একটা একটা করিয়া সবগুলি বাঘকে বাঁধিতেছি।’
এই কথা শুনিয়া নিচের বাঘ ভাবিল আমাকেই তো আগে বাঁধিতে আসিবে। তখন সে লেজ উঁচাইয়া দে দৌড়-তখন এ বাঘের উপরে পড়ে ও বাঘ, সে বাঘের উপরে পড়ে আরেক বাঘ।
নাপিত উপর হইতে বলে, ‘জোলা মজবুত করিয়া বাঁধ-মজবুত করিয়া বাঁধ। একটা বাঘও যেন পালাইতে না পারে।’ সব বাঘই তখন পালাইয়া সাফ।
বাকি রাতটুকু কোনো রকমে কাটাইয়া পরদিন সকাল হইলে জোলা আর নাপিত বন ছাড়াইয়া আরেক রাজার রাজ্যে আসিয়া উপস্থিত হইল।
রাজা রাজসভায় বসিয়া আছেন। এমন সময় নাপিত জোলাকে সঙ্গে লইয়া রাজার সামনে যাইয়া হাজির। ‘মহারাজ প্রণাম হই!’
রাজা বলিলেন, ‘কি চাও তোমরা?’
নাপিত বলিল, ‘আমরা দুইজন বীর পালোয়ান। আপনার এখানে চাকরি চাই।’
রাজা বলিলেন, ‘তোমরা কেমন বীর তা পরখ না করিলে তো চাকরি দিতে পারি না? আমার রাজবাড়িতে আছে দশজন কুস্তিগির, তাহাদের যদি কুস্তিতে হারাইতে পার তবে চাকরি মিলিবে।’
নাপিত বলিল, ‘মহারাজের আশীর্বাদে নিশ্চয়ই তাহাদের হারাইয়া দিব।’
তখন রাজা কুস্তি—পরখের একটি দিন স্থির করিয়া দিলেন। নাপিত বলিল, ‘মহারাজ!’ কুস্তি—দেখিবার জন্য তো কত লোক জমা হইবে। মাঠের মধ্যে একখানা ঘর তৈরি করিয়া দেন। যদি বৃষ্টি-বাদল হয়, লোকজন সেখানে যাইয়া আশ্রয় লইবে।’
রাজার আদেশে মাঠের মধ্যে প্রকাণ্ড খড়ের ঘর তৈরি হইল। রাতে নাপিত চুপি চুপি যাইয়া তাহার ক্ষুর দিয়া ঘরের সব বাঁধন কাটিয়া দিল। প্রকণ্ড খড়ের ঘর কোনো রকমে থামের উপরে খাড়া হইয়া রহিল।
পরদিন কুস্তি— দেখিতে হাজার হাজার লোক জমা হইয়াছে। রাজা আসিয়াছেন-রানি আসিয়াছেন-মন্ত্রী, কোটাল, পাত্রমিত্র কেহ কোথাও বাদ নাই।
মাঠের মাঝখানে রাজবাড়ির বড় বড় কুস্তিগিররা গায়ে মাটি মাখাইয়া লড়াইয়ের সব কায়দা ইস্তেমাল করিতেছে।
এমন সময় কুস্তিগিরের পোশাক পরিয়া নাপিত আর জোলা মাঠের মাঝখানে উপস্থিত। চারদিকের লোকে তাহাদের দেখিয়া হাততালি দিয়া উঠিল।
নাপিত তখন জোলাকে সঙ্গে করিয়া লাফাইয়া একবার এদিকে যায় আবার ওদিকে যায়। আর ঘরের একেকখানা চালা ধরিয়া টান দেয়। হুমড়ি খাইয়া ঘর পড়িয়া যায়। সভার সব লোক অবাক।
রাজবাড়ির কুস্তিগিররা ভাবে, ‘হায় হায়, না জানি ইহারা কত বড় পালোয়ান। হাতের একটা ঝাঁকুনি দিয়া এত বড় আটচালা ঘরখানা ভাঙিয়া ফেলিল। ইহাদের সঙ্গে লড়িতে গেলে ঘরেরই মতো উহারা আমাদের হাত-পাগুলোও ভাঙিয়া ফেলিবে। চল আমরা পালাইয়া যাই।’
তাহারা পালাইয়া গেলে নাপিত তখন মাঠের মধ্যখানে দাঁড়াইয়া বুক ফুলাইয়া রাজাকে বলিল, ‘মহারাজ! জলদি করিয়া আপনার পালোয়ানদের ডাকুন। দেখি! তাহাদের গায়ে কত জোর।’
কিন্তু কে কার সঙ্গে কুস্তি করে? তাহারা তো আগেই পালাইয়াছে। রাজা তখন নাপিত আর জোলাকে তার রাজ্যের সেনাপতির পদে নিযুক্ত করিলেন।
সেনাপতির চাকরি পাইয়া জোলা আর নাপিত তো বেশ সুখেই আছে। এর মধ্যে কোথা হইতে এক বাঘ আসিয়া রাজ্যে মহা উৎপাত লাগাইয়াছে। কাল এর ছাগল লইয়া যায়, পরশু ওর গরু লইয়া যায়, তারপর মানুষও লইয়া যাইতে লাগিল।
রাজা তখন নাপিত আর জোলাকে বলিলেন, ‘তোমরা যদি এই বাঘ মারিতে পার, তবে আমার দুই মেয়ের সঙ্গে তোমাদের দুইজনের বিবাহ দিব।’
নাপিত বলিল, এ আর এমন কঠিন কাজ কী? তবে আমাকে পাঁচ মণ ওজনের একটি বড়শি আর গোটা আষ্টেক পাঁঠা দিতে হইবে।’
রাজার আদেশে পাঁচ মণ ওজনের লোহার বড়শি তৈরি হইল। নাপিত তখন লোকজনের নিকট হইতে জানিয়া লইল, কোথায় বাঘের উপদ্রব বেশি, আর কোন সময় বাঘ আসে।
তারপর নাপিত সেই বড়শির সঙ্গে সাত-আটটি পাঁঠা গাঁথিয়া এক গাছি ‘লোহার শিকলে সেই বড়শি আটকাইয়া একটা গাছের সঙ্গে বাঁধিয়া রাখিল। তারপর জোলাকে সঙ্গে লইয়া গাছের ডালে উঠিয়া বসিয়া রহিল।
অনেক রাতে বাঘ আসিয়া সেই বড়শিসমেত পাঁঠা গিলিতে যাইয়া বড়শিতে আটকাইয়া গিয়া তর্জন-গর্জন করিতে লাগিল। সকাল হইলে লোকজন ডাকিয়া নাপিত আর জোলা লাঠির আঘাতে বাঘটিকে মারিয়া ফেলিল।
রাজা ভারি খুশি। তারপর ঢোল-ডগর বাজাইয়া নাপিত আর জোলার সঙ্গে তাহার দুই মেয়ের বিবাহ দিয়া দিলেন। বিবাহের পরে বউ লইয়া বাসরঘরে যাইতে হয়। জোলা একা বাসরঘরে যাইতে ভয় পায়। নাপিতকে সঙ্গে যাইতে অনুরোধ করে।
নাপিত বলে, ‘বেটা জোলা! তোর বাসরঘরে আমি যাইব কেমন করিয়া? আমাকেও তো আমার বউয়ের সঙ্গে ভিন্ন বাসরঘরে যাইতে হইবে। তুই কোনো ভয় করিস না। খুব সাহসের সঙ্গে থাকবি।’ এই বলিয়া জোলাকে বাসরঘরের মধ্যে ঠেলিয়া দিল।
বাসরঘরে যাইয়া জোলা এদিকে চায়-ওদিকে চায়। আহা-হা কত ঝাড়-কত লণ্ঠন ঝিকিমিকি জ্বলিতেছে। আর বিছানা ভরিয়া কত রঙের ফুল। জোলা কোথায় বসিবে তাহাই ঠিক করিতে পারে না। তখন অতি শরমে পাপোশখানার উপর কুচিমুচি হইয়া বসিয়া জোলা ঘামিতে লাগিল।
কিছুক্ষণ বাদে হাতে পানের বাটা লইয়া, পায়ে সোনার নূপুর ঝুমুর ঝুমুর বাজাইয়া পঞ্চসখী সঙ্গে করিয়া রাজকন্যা আসিয়া উপস্থিত। জোলা তখন ভয়ে জড়সড়। সে মনে করিল, হিন্দুদের কোনো দেবতা যেন তাহাকে কাটিতে আসিয়াছে। সে তখন তাড়াতাড়ি উঠিয়া রাজকন্যার পায়ে পড়িয়া বলিল, ‘মা ঠাকরুন। আমার কোনো অপরাধ নাই। সবই ওই নাপিত বেটার কারসাজি।’
রাজকন্যা সবই বুঝিতে পারিল। এ কথা রাজার কানেও গেল। রাজা তখন জোলা আর নাপিতকে তাড়াইয়া দিলেন। নাপিত রাগিয়া বলে, ‘বোকা জোলা। তোর বোকামির জন্য এমন চাকরিটা তো গেলই-সেই সঙ্গে রাজকন্যাও গেল।’
জোলা নাপিতকে জড়াইয়া ধরিয়া বলিল, ‘তা গেল-গেল! চল ভাই, দেশে যাইয়া বউদের লাথিগুঁতা খাই। সে তো গা-সওয়া হইয়া গিয়াছে। এমন সন্দেহ আর ভয়ের মধ্যে থাকার চাইতে সে-ই ভালো।
আরও পড়ুন:গভীর বনের ধারে গাছগাছালি আর ঝোপঝাড়ে ঘেরা একটি পুকুর। সেই পুকুরে বাস করে এক কচ্ছপ, আর বড় একটি গাছের গোড়ার গর্তে এক শেয়াল। দুজনের মধ্যে ভারি বন্ধুত্ব।
এক দিনের কথা। তারা সুখ-দুঃখের গল্প করছিল। সেই মুহূর্তে আচমকা সেখানে লাফিয়ে পড়ল এক গেছো বাঘ। ক্ষিপ্রগতির ধূর্ত শেয়াল বাউলি মেরে সটকে পড়ল। কিন্তু চাকা লাগানো গোল চাকতির মতো কচ্ছপ তো গড়াতে গড়াতে পুকুরের দিকে যেতেই তার ওপর হামলে পড়ে গেছো বাঘ। পা দিয়ে তাকে চেপে ধরে ঘাড় মটকাতে গিয়ে দেখে ভারি বজ্জাত আর কৌশলী তার শিকার। ঘাড় নেই, গলা আছে—তবে সুরুত করে তাকে শরীরের ভেতর লুকিয়ে ফেলে।
কী করে কচ্ছপটাকে খাবে, বাঘ তার কোনো কায়দা করতে পারে না। কচ্ছপের পিঠের আবরণ এত শক্ত যে তাতে দাঁত ফোটে না। নখ বসে না। কোনো রকমে জুত করতে না পেরে বাঘ এদিক-ওদিক তাকায়। উপায় খোঁজে। শেয়াল তখন আপন ডেরার নিরাপদ আশ্রয় থেকে মুখ বার করে একটু ফেচকি হাসে।
তারপর বলে, ‘মামা, তুমি এক নচ্ছার জীবকে ধরেছ। এ জিনিস খেতে ভালো, একেবারে মুরগির মাংসের স্বাদ পাবে। তবে কিনা ওই খোসা নরম করার কায়দাটা না জানলে শত চেষ্টা করেও জিহ্বার সুখ পাবে না।’
বাঘ বলে: ভাগ্নে, জলদি বলনা ছাই, এই জিনিস খাওয়ার কায়দাটি কী? আমার আর তর সইছে না।
শেয়াল: ওই জিনিসের খোসা নরম করার একটাই উপায়। ওকে পানিতে ফেলে দাও। খানিকক্ষণ ভিজলে খোসা নরম হয়ে ভেসে উঠবে। তখন টেনে এনে মজাসে খাও।
বোকা বাঘ তাই করে। কচ্ছপ দ্রুত জলে মিলিয়ে যায়।
শেয়াল বলে: মামা, বসে বসে অপেক্ষা করো। তোমার খাবার তৈরি হয়ে ভেসে উঠবে।।
শেয়াল বন্ধুকে বাঁচাতে পেরে খুব খুশি।
গিন্নিকে বলে: বউ, একটু সরষের তেল দে। নাকে দিয়ে ঘুমাই। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দেব আর বোকা বাঘের পিণ্ডি চটকাব।
আরও পড়ুন:খোকা বাবুর রুমটা খুবই এলোমেলো। নানা জিনিসপত্র এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এখন সে জুতা পরে বাইরে খেলতে যাবে, কিন্তু একটি জুতা পাওয়া যাচ্ছে না। জুতাটা ঘরেই আছে, কিন্তু চোখে পড়ছে না। তুমি কি খোকাবাবুকে জুতাটা খুঁজে দিতে পারবে?
আমার মনে হয় পারবে।
তাহলে শুরু করে দাও।
সময় মাত্র এক মিনিট।
বন্ধুরা, চাইলে তোমরাও কুইজ বানিয়ে আমাদের কাছে পাঠাতে পারো। কুইজের সঙ্গে অবশ্যই তোমার নাম, স্কুলের নাম, কোন ক্লাসে পড় এবং আব্বু বা আম্মুর ফোন নম্বর দেবে।
পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]
উত্তর দেখে নাও নিচের ছবিতে।
ভারতের উত্তর প্রদেশে ১৫২৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন বীরবল। মূল নাম মহেশ দাস হলেও বীরবল নামেই তিনি পরিচিত। মোগল সম্রাট আকবরের দরবারে অন্যতম সভাসদ ছিলেন। চতুরতার জন্যই বীরবল মূলত সবার কাছে সুপরিচিত। ১৫৫৬-১৫৬২ সালের দিকে কবি ও গায়ক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে পরবর্তী সময়ে সম্রাটের অত্যন্ত কাছের মানুষে পরিণত হন এবং নানা সেনা অভিযানে অংশ নেন। মজার মজার কাণ্ড ঘটানোর জন্য তিনি বিখ্যাত। চলো তার কয়েকটি ঘটনা শুনি।
-
কাকের সংখ্যা
একদিন আকবর ও বীরবল বসে গল্প করছিলেন। হঠাৎ আকবর প্রশ্ন করলেন, ‘দিল্লি শহরে কত কাক আছে বলতে পার বীরবল?’ অদ্ভুত প্রশ্নটি শুনে বীরবল বললেন, ‘জাঁহাপনা, বর্তমান শহরে ৯ লাখ ৯ হাজার ৯৯৯টি কাক আছে। আপনার যদি সন্দেহ হয় তাহলে নিজে অথবা অন্য লোক দিয়ে গুনে দেখতে পারেন। যদি দেখেন, এই সংখ্যা থেকে কিছু কম কাক আছে তাহলে বুঝবেন দিল্লির আশপাশে বন্ধুদের সঙ্গে তারা বেড়াতে গেছে। আবার যদি দেখেন ওই সংখ্যা থেকে বেশি কাক আছে, তাহলে বুঝবেন তাদের বন্ধুরা বা আত্মীয়রা অন্য এলাকা থেকে বেড়াতে এসেছে!’
বীরবলের উত্তর শুনে আকবর নির্বাক হয়ে রইলেন। তিনি আর বীরবলকে কাকের সংখ্যা সম্পর্কে কোনো উচ্চবাচ্যই করলেন না।
-
সীমাহীন রাজ্য
সম্রাট আকবর একবার কোনো কারণে তার তিন মন্ত্রীর ওপর ভায়ানক ক্ষেপে গেলেন। আদেশ করলেন, ‘তোমরা অবিলম্বে আমার রাজ্য ছেড়ে চলে যাবে। যদি আর কোনো দিন তোমাদের দেখি, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে।’ মন্ত্রীত্রয় অনেক কাকুতি-মিনতি করল শাস্তি মওকুফের জন্য। কিন্তু সম্রাট অনড়।
ভীষণ বিপদে পড়ল তিন মন্ত্রী। পরিবার-পরিজন রেখে কোথায় যাবে? তাদের দুরবস্থা দেখে বীরবল বললেন, ‘আপাতত আপনাদের কোনো উপায় নেই। তবে আপনারা আমার কথা শুনলে শেষতক রেহাই পেতে পারেন।’
তারা সানন্দে রাজি হয়ে গেল। বীরবল তাদের কিছুদিনের জন্য দিল্লীর আশপাশে লুকিয়ে থাকতে বললেন। আর কয়েক মাস পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিলেন।
প্রায় বছরখানেক পর একরাতে মন্ত্রী তিনজন লুকিয়ে বীরবলের কাছে এলো। বীরবল কিছু বুদ্ধি শিখিয়ে তাদের বিদায় করলেন।
পরদিন সম্রাট আর বীরবল বাগানে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। এমন সময় সম্রাট দেখলেন, একটি গাছের ডালে তিনজন লোক হাত শূন্যে মেলে বসে আছে। এগিয়ে গিয়ে দেখলেন এরা আর কেউ নয়, নির্বাসিত সেই তিন মন্ত্রী। তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের নিচে নেমে আসার নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, ‘তোমাদের এত বড় সাহস, আমার আদেশ অমান্য করেছ! এ মুহূর্তে তোমাদের প্রাণদণ্ড দেয়া হবে।’
মন্ত্রী তিনজন হাঁটু গেড়ে সম্রাটের সামনে বসে পড়ে বলল, ‘জাঁহাপনা, আমরা আপনার আদেশ অমান্য করিনি। আপনি নির্দেশ দেয়ার পরপরই আমরা বেরিয়ে পড়ি। উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম সব দিকেই গিয়েছি। অনেক শহর বন্দর পার হয়েছি। তবু আপনার রাজ্যসীমা অতিক্রম করতে পারিনি। আমাদের মনে হয়েছে মহামান্য সম্রাটের রাজ্য সীমাহীন। তাই ঠিক করেছি আকাশে উড়াল দেব। গাছে উঠে শূন্যে হাত বাড়িয়ে আমরা সে চেষ্টাই করছিলাম।’
সম্রাট বুঝতে পারলেন এটা আসলে বীরবলের বুদ্ধি। তিনি মন্ত্রী তিনজনকে ক্ষমা করে দিলেন। আর বীরবলকে করলেন পুরস্কৃত।
প্রায় ৯,০০০ বছর আগে প্রাচ্যের কৃষকরা সর্বপ্রথম বন্য বিড়ালকে পোষ মানাতে সক্ষম হন। তারই কয়েক শ বছর পর মিসর ছাড়িয়ে সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে বিড়াল ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে শুধু অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ ব্যতীত সর্বত্রই বিড়াল দেখা যায়। চলো, আজ বিড়াল সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই।
-
১. মানুষের শরীরে ২০৬টি হাড় আছে। বিড়ালের শরীরে কয়টি হাড় আছে জানো? ২৩০ থেকে ২৫০টি। যে বিড়ালের লেজ যত বড়, তার শরীরে হাড়ও তত বেশি।
২. বিড়ালের দাঁত ৩০টি। তবে বিড়াল ছানার দাঁত একটু কম, ২৬টি।
৩. বিড়াল ঘণ্টায় ৪৮ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে।
৪. বিড়াল যেকোনো জিনিসের ঘ্রাণ নেয় তার মুখ দিয়ে। তারা যখন কোনো কিছু শোঁকে, তখন তাদের মুখ কিছুটা খুলে যায়, নাক কিছুটা কুঁচকে যায় এবং ওপরের ঠোঁট পিছিয়ে আসে। এই পদ্ধতিটিকে বলা হয় 'ফ্লেমেন' রেসপন্স।
৫. বিড়াল দিনে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুমায়। বিড়াল কিন্তু ঘুমের মধ্যে আমাদের মতো স্বপ্নও দেখে।
৬. সবচেয়ে লম্বা বিড়ালটির দৈর্ঘ ছিল সাড়ে ৪৮ ইঞ্চি। ওর নাম ছিল মাইমেন্স স্টুয়ার্ট গিলিগান। ২০১৩ সালে সে মারা যায়।
৭. ১৯৬৩ সালের ১৮ অক্টোবর ফেলিসেট নামের একটি বিড়ালকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল।
৮. প্রাচীন মিসরে কারও পোষা বিড়াল মারা গেলে পরিবারের সদস্যরা ভ্রু কামিয়ে ফেলত।
৯. একমাত্র বিড়ালই সমুদ্রের লবণাক্ত পানি খেতে পারে। তারা লবণ ফিল্টার করে শুধু পানিটা খেয়ে নেয়।
১০. বিড়াল কখনওই মিষ্টি জিনিসের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে না। কারণ তাদের টেস্ট রিসেপ্টারে মিউটেশন করার ফলে মিষ্টি খেলে তারা বুঝতে পারে না।
১১. বিড়াল অন্ধকারেও দেখতে পারে। মানুষ যে আলোতে দেখতে পায়, তার ৬ ভাগের ১ ভাগ আলোতেও বিড়ালের দেখতে অসুবিধা হয় না। তাই বিড়াল রাতের বেলা সহজেই হাঁটাচলা করতে পারে।
আরও পড়ুন:সুন্দর একটি বন। বনের পাতাগুলো বেশির ভাগই হলুদ । তবে সবুজ পাতাও আছে। এই পাতার ফাঁকে খেলা করছে একঝাঁক কাঠবিড়ালি আর পাখি।
তোমাদের কাজ হলো, এখানে কতগুলো কাঠবিড়ালি আছে তা খুঁজে বের করা।
খুব সহজ কাজ, তাই না?
তাহলে দেরি না করে শুরু করে দাও।
সময় মাত্র এক মিনিট।
কয়টি কাঠবিড়ালি পেলে, এই ঠিকানায় মেইল করে জানিয়ে দিও।
ই-মেইল: [email protected]
বন্ধুরা, চাইলে তোমরাও কুইজ বানিয়ে আমাদের কাছে পাঠাতে পারো। কুইজের সঙ্গে অবশ্যই তোমার নাম, স্কুলের নাম, কোন ক্লাসে পড় এবং আব্বু বা আম্মুর ফোন নম্বর দেবে।
পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]
আরও পড়ুন:তোমরা কী প্রজাপতি দেখেছ?
রঙিন ডানায় ভেসে ওরা ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায়। দেখতে খুব সুন্দর লাগে।
আজ আমরা টয়লেট পেপার রোল দিয়ে সেই প্রজাপতি বানাব। কাজটা খুব সহজ। চলো তাহলে শুরু করে দেই।
-
যা যা লাগবে
টয়লেট পেপার রোল
রঙিন কাগজ
রঙিন বোতাম
বোতল ক্লিনার
গুগল চোখ
কালো মার্কার পেন
কাঁচি ও আঠা
-
১. প্রথমে টয়লেট পেপার রোলটাকে রঙিন কাগজ দিয়ে মুড়ে ফেলি। চাইলে রঙিন মার্কার পেন দিয়ে এঁকেও কাজটা করা যায়।
-
২. রঙিন কাগজে প্রজাপতির ডানা এঁকে ফেলি। প্রতিটি রোলের জন্য দুটি করে ডানা লাগবে।
-
৩. ডানাগুলোকে কাঁচি দিয়ে কেটে নেই।
-
৪. প্রতিটি ডানায় রঙিন বোতাম লাগিয়ে নেই। বোতাম লাগানোর জন্য আঠা ব্যবহার করতে হবে।
-
৫. বোতল পরিষ্কার করার ব্রাশ থেকে কিছু অংশ ভেঙে নেই, যেন সেটা দিয়ে প্রজাপতির অ্যান্টেনা বানানো যায়।
-
৬. অ্যান্টেনাটিকে রোলের ভেতরের দিকে লাগিয়ে নেই। রোলের ওপরের দিকে গুগল চোখ আঠা দিয়ে লাগিয়ে একটু নিচে মুখ আঁকি।
-
৭. এবার রোলের পেছনে প্রজাপতির ডানা লাগিয়ে দেই। সে জন্য আঠা ব্যবহার করতে হবে। ব্যস, হয়ে গেল আমাদের রঙিন প্রজাপতি।
-
বন্ধুরা, চাইলে তোমরাও এটা-সেটা বানিয়ে আমাদের কাছে পাঠাতে পারো। সঙ্গে অবশ্যই তোমার নাম, স্কুলের নাম, কোন ক্লাসে পড় এবং আব্বু বা আম্মুর ফোন নম্বর দেবে।
পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]
আরও পড়ুন:এক শিক্ষক তার সাত বছরের ছাত্র কাযিমকে জিজ্ঞেস করলেন, 'আমি যদি তোমাকে একটি আপেল, আরও একটি এবং আরও একটি আপেল দিই, তাহলে তোমার কাছে মোট কতটি আপেল হবে?'
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কাযিম আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দিল, 'চারটি!'
কাযিমের উত্তর শুনে শিক্ষক হতাশ হলেন। মনে মনে ভাবলেন, 'কাযিম বোধহয় আমার কথা ঠিকমতো বুঝতে পারেনি।'
তিনি আবার বললেন, 'কাযিম…মনোযোগ দিয়ে শোনো। যদি তোমাকে একটি আপেল, আরও একটি আপেল এবং আরও একটি আপেল দিই, তাহলে তোমার কাছে মোট কতটি আপেল হবে?'
একই প্রশ্ন করায় কাযিম একটু বিরক্ত হলো। সে আবার আঙুলে গুনে বলল, 'চারটি।'
শিক্ষক আবার হতাশ হলেন। তার মনে পড়ল, কাযিম স্ট্রবেরি পছন্দ করে। তিনি এবার স্ট্রবেরি দিয়ে প্রশ্নটা করার সিদ্ধান্ত নিলেন, 'আমি যদি তোমাকে একটি স্ট্রবেরি, আরও একটি স্ট্রবেরি এবং আরও একটি স্ট্রবেরি দিই, তাহলে তোমার কাছে মোট কতটি স্ট্রবেরি হবে?'
আবার আঙুলে গুনতে শুরু করল কাযিম। শেষে বলল, 'তিনটি?'
এবার শিক্ষক খুশি হলেন। তার মুখে জয়ের হাসি দেখা দিল। এবার তিনি আপেল দিয়ে আবার সেই অঙ্কটি করতে বললেন, 'এখন আমি যদি তোমাকে একটি আপেল, আরও একটি আপেল এবং আরও একটি আপেল দিই, তাহলে তোমার কাছে মোট কতটি আপেল হবে?'
কাযিম ঝটপট উত্তর দিল, 'চারটি!'
শিক্ষক আবার বিস্মিত এবং হতাশ হয়ে পড়লেন। বিরক্ত কণ্ঠে জানতে চাইলেন, 'কীভাবে কাযিম?'
কাযিম বলল, 'আপনি তিনটি আপেল দিলেন আর আমার ব্যাগে আগে থেকেই একটি আপেল আছে। সব মিলিয়ে আমার কাছে চারটি আপেল হবে।'
আরও পড়ুন:
মন্তব্য