খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল বর্গি এলো দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাজনা দেবো কিসে?
ধান ফুরাল, পান ফুরাল, খাজনার উপায় কী?
আর ক’টা দিন সবুর করো, রসুন বুনেছি।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে ব্যাংকিং খাতে রিজার্ভ চুরি, হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক ও এস আলম গ্রুপের ঋণ জালিয়াতিসহ ব্যাপক লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাংক খাত ‘ধ্বংসের’ অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এসব অভিযোগের অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনজন সাবেক গভর্নরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক-বর্তমান ১৯ কর্মকর্তা এবং দুজন ভারতীয় কর্মকর্তার নথি তলব করে ফের চিঠি পাঠিয়েছে দুদক।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ব্যাংকিং খাতে ঘটে যাওয়া এসব বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত জুনে প্রথম দফায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদারের নথিসহ ২৩ ধরনের নথি চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তবে সে দফায় কাঙ্ক্ষিত তথ্য না মেলায় গত সেপ্টেম্বরে কমিশন তৃতীয়বারের মতো আবার নথি তলব করে।
এই তলবকৃত নথির তালিকায় রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর টেকনিক্যাল দায়িত্বে থাকা দুজন ভারতীয় কর্মকর্তার নথিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে এখনও সব নথিপত্র হাতে পায়নি বলে জানিয়েছে দুদক।
জানা গেছে, সম্প্রতি গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তাদের প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট নম্বর, দায়িত্বের পরিধি এবং অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
যাদের নাম তালিকায় রয়েছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই ২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা, নীতি শিথিলতা এবং অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে তদন্ত চলছে। দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার। রিজার্ভ চুরির সময় গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন ড. আতিউর রহমান, যিনি একই বছরের ১৫ মার্চ পদত্যাগ করেন।
এছাড়া সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, আবু হেনা মো. রাজী হাসান, এসএম মনিরুজ্জামান, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের, আহমেদ জামাল এবং বিএফআইইউয়ের সাবেক প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের সম্পর্কেও তথ্য চাওয়া হয়েছে। সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহার নামও রয়েছে এ তালিকায়।
বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক (যিনি সম্প্রতি এক মাসের নোটিশে পদত্যাগ করেছেন) এবং আইসিটি বিভাগের দেবদুলাল রায়। আরও আছেন কমন সার্ভিস বিভাগ-২-এর পরিচালক মো. তফাজ্জল হোসেন, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স কাউন্সিলের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ এবং আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তা মসিউজ্জামান খান ও রাহাত উদ্দিন।
দুদকের চিঠিতে মসিউজ্জামানের নাম দুইবার এসেছে—একবার অতিরিক্ত পরিচালক, আবার উপপরিচালক হিসেবে—যা একই ব্যক্তিকে নির্দেশ করে বলে জানা গেছে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় নেওয়া দুই কোটি ডলার ফেরত আসে এবং ফিলিপাইন থেকে প্রায় দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এখনো প্রায় ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধারের প্রক্রিয়া ফিলিপাইনের আদালতে চলছে।
রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা ও ছাড়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যাংকের চারটি বিভাগ—ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট, আইটি, পেমেন্ট সিস্টেম এবং অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং—এই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। দুদকের চিঠিতে আরও দুটি ভারতীয় নাগরিকের তথ্য চাওয়া হয়েছে—নীলা ভান্নান ও রাকেশ আস্তানা। নীলা ভান্নান রিজার্ভ চুরির আগে ‘সুইফট’ সংযোগ স্থাপনের কাজ করেছিলেন, আর রাকেশ আস্তানা চুরির পর নিরাপত্তা ভেদ সংক্রান্ত তদন্তে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানের আমলে।
এদিকে গতকাল সোমবার আলাদা এক অনুসন্ধানে দুদক চট্টগ্রামের বন সংরক্ষক ড. মোল্যা রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে এক দিনেই ৭৭ জন কর্মচারীকে বদলি করার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
গেল ফেব্রুয়ারিতে অভিযান চালিয়ে দুদক রেজাউল করিমের নামে লালমাটিয়ায় ৭ কোটি টাকার দুটি ফ্ল্যাট, ধানমন্ডিতে স্ত্রীর নামে ৫ কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট এবং সাতক্ষীরার তালা থানায় জমি কেনার প্রাথমিক দুর্নীতির উপাদান খুঁজে পেয়েছিল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে লন্ডন থেকে তার দেশে ফেরা, আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতাকর্মীদের বিচার, বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রীক রাজনীতিসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে তিনি প্রতিপক্ষ কোনো রাজনৈনিতক দলকে সরাসরি কোনো আক্রমণ করেননি, বরং রাজনীতিতে ইতিবাচক ও গঠনমূলক ধারা চালুর বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা চাই, দেশের রাজনীতি হোক প্রতিযোগিতামূলক কিন্তু তা যেন হয় নীতিনিষ্ঠ ও ভদ্রতার সীমার মধ্যে। জনগণের আস্থা ফিরে পেতে হলে রাজনীতিতে ঘৃণা নয়, সহযোগিতা ও দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিতে হবে।
সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেন, ‘আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে যে প্রত্যাশিত নির্বাচন জনগণ চাইছে, সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে জনগণের সঙ্গে, জনগণের মাঝেই থাকব। কিছু সঙ্গত কারণে হয়তো ফেরাটা হয়ে উঠেনি এখনো। তবে সময় তো চলে এসেছে মনে হয়। দ্রুতই ফিরে আসব।’
তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচনের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক কর্মীর ওতপ্রোত সম্পর্ক। ‘কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকব?’
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে তার অনুপস্থিতি শুধুমাত্র শারীরিক। ‘ফিজিক্যালি হয়তো আমি এই দেশে (যুক্তরাজ্য) আছি, কিন্তু মন মানসিকতা, সবকিছু মিলিয়ে তো আমি গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশেই রয়ে গিয়েছি।’
নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘জ্বি… ইনশাআল্লাহ।’
প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, এমন প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, ‘এটি তো আমার সিদ্ধান্ত না, এটি সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়ন বাছাই কৌশল প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা কখনোই পেশিশক্তি, টাকার প্রভাব বা পারিবারিক বিবেচনায় প্রার্থী মনোনয়ন দিইনি, ভবিষ্যতেও দেব না। মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিই, সেটি হলো—প্রার্থী যেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সমস্যা সম্পর্কে জানেন, মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা থাকে এবং ওই এলাকার জনগণের কল্যাণে কাজ করার সক্ষমতা রাখেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এমন একজন প্রার্থী, যার সঙ্গে এলাকার তরুণ, নারী, মুরুব্বি, ছাত্রছাত্রী—সব শ্রেণির মানুষের যোগাযোগ আছে। যার প্রতি মানুষের আস্থা ও জনসমর্থন রয়েছে। জনগণের সমর্থন যার সঙ্গে থাকবে, তাকেই আমরা প্রাধান্য দেব।’
তৃণমূলের মতামতের গুরুত্ব সম্পর্কেও কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের মতামত অবশ্যই আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। গণতন্ত্রে বিভিন্ন মত থাকা খুবই স্বাভাবিক। কোনো এলাকায় ৫০ জনের মধ্যে ৩০ জন একটি মত দেবে, ১৫ জন আরেকটি মত দেবে—এটাই স্বাভাবিক। আমরা যেখানে মেজরিটির মত পাই সেটিকেই গুরুত্ব দিই।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা কিন্তু দলের নেতৃত্ব নির্বাচন করছি না বরং এমন একজনকে বেছে নিতে চাইছি, যিনি শুধু দলের নয়, দলমত নির্বিশেষে এলাকার অধিকাংশ মানুষের সমর্থন পান। কারণ নির্বাচনে শুধু দলীয় সমর্থন যথেষ্ট নয়—জনগণের অংশগ্রহণই এখানে মুখ্য।’
গণমাধ্যমের সঙ্গে তিনি কেন দীর্ঘ সময় কথা বলেননি, জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, ‘ব্যাপারটা বোধহয় এরকম নয়, একটু ভিন্ন। আসলে আমি কথা ঠিকই বলেছি। দীর্ঘ ১৭ বছর এখানে আছি এই দেশে, প্রবাস জীবনে। আমার ওপর যখন দলের দায়িত্ব এসে পড়েছে, তারপর থেকে আমি গ্রামে-গঞ্জে আমার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ, সবার সঙ্গে কথা বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় কোর্ট থেকে রীতিমতো একটি আদেশ দিয়ে আমার কথা বলার অধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমি যদি গণমাধ্যমে কিছু বলতে চাইতাম, হয়তো গণমাধ্যমের ইচ্ছা ছিল ছাপানোর, গণমাধ্যম সেটি ছাপাতে পারত না।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমি কথা বলেছি, সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন পন্থায় আমি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি, আমি ইনশাল্লাহ পৌঁছেছি মানুষের কাছে। কাজেই গণমাধ্যমে যে কথা বলিনি তা, না। আমি কথা বলেছি, হয়তো আপনারা তখন কথা নিতে পারেননি, অথবা শুনতে পারেননি। ইচ্ছা থাকলেও ছাপাতে পারেননি হয়তো প্রচার করতে পারেননি। কিন্তু আমি বলেছি আমি থেমে থাকিনি।’
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে হাইকোর্ট তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপের নির্দেশ দেন। পরের দিন, হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ সরকারকে আদেশ দেন, দেশে না ফেরা পর্যন্ত তার বক্তব্য ছাপানো, ইলেকট্রনিক বা সামাজিক মাধ্যমে প্রচার বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
গত বছরের ২২ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর হাইকোর্ট সব ধরনের মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
এক-এগারো বলে পরিচিত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কন্যা জায়মা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে যান।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, অনুপস্থিত থাকায় তিনি পাঁচটি ভিন্ন মামলায় তাকে দণ্ড দেওয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে প্রায় ১০০টি মামলা দায়ের করা হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো পেন্ডিং মামলা নেই।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ব্যাপারে আপনার, আপনাদের বা বিএনপির অবস্থানটা কী জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, আমি ১৭ বছর যাবত প্রবাস জীবনে আছি। তথাকথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় যেই শারীরিক নির্যাতন আমার ওপর হয়েছিল, তারপরে চিকিৎসার জন্য আমি এই দেশে আসি।
তিনি বলেন, আমি যখন এখানে আসি, আমার ছোট ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম। আমার সুস্থ মাকে আমি রেখে এসেছিলাম। একটি ঘর রেখে এসেছিলাম। যে ঘরে আমি এবং আমার ছোট ভাই বড় হয়েছি, যেই ঘরে আমার বাবার স্মৃতি ছিল, যে ঘরে আমাদের দুই ভাইয়ের সন্তানরা জন্মগ্রহণ করেছিল। যে ঘরে আমার মায়ের বহু স্মৃতি ছিল।
সেই স্মৃতিগুলোকে ভেঙে-চুড়ে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম সেই ভাই এখন আর নেই। যে সুস্থ মাকে রেখে এসেছিলাম, সেই সুস্থ মা এখন সুস্থ নেই। শুধু অসুস্থই নন, তার ওপরে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনও করা হয়েছে, বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার পরিবারের যে কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। এটিকে আপনারা কাহিনী বলুন, বা সংগ্রাম বলুন—যেটাই বলুন না কেন, এটি শুধু আমার কাহিনী না, বা আমার পরিবারের কাহিনী না। এ রকম কাহিনী বাংলাদেশের শত না, হাজার হাজার পরিবারের।
যে পরিবারের বাবা, যে পরিবারের ভাই, যে পরিবারের স্বামী তার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দায় মারা গেছে, তা না হলে হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় জেলের ভেতরে মারা গেছে, সহায়-সম্পত্তি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে—এই সব অন্যায়, এই সব হত্যা, এই সব নির্যাতনের জন্য যারা দায়ী, যারা এসবের হুকুম দিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিচার হতে হবে।
এটি প্রতিশোধের কোনো বিষয় নয়। এটি ন্যায়ের কথা। এটি আইনের কথা। অন্যায় হলে তার বিচার হতে হয়। কার সম্পর্কে কী মনোভাব সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, যোগ করেন তিনি।
এখানে একটি বিষয় আলোচনায় এসেছে যে, যারা অপরাধী তাদের বিচার হবে। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারা-না পারার প্রশ্নে বিএনপিরও অনেক নেতা অনেক সময় বলেছেন যে, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে তারা নন। এখন নির্বাচনও সামনে আসছে। ফলে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না সে ধরনের একটা প্রশ্নও আসছে। সেই জায়গায় বিএনপির অবস্থানটা কী হতে পারে—জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, দল হিসেবে তারা যদি অন্যায় করে থাকে, তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। দেশের আইন সিদ্ধান্ত নেবে।
আদালতের বিষয়টি মনে করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল হিসেবে যদি অন্যায় হয়ে থাকে, তাহলে তাই হবে। সোজা কথায় অন্যায়কারীর বিচার হতে হবে। সেটি ব্যক্তি হোক, সেটি দলই হোক। যারা জুলুম করেছে, তাদের তো বিচার হতে হবে। সেটি ব্যক্তিও হতে পারে। সেটি দলও হতে পারে।
আওয়ামী লীগের বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকা উচিত কি না—প্রশ্নের জবাবে ব্যক্তিগত মত জানিয়ে তিনি বলেন, আমার মনে হয়, আপনার কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছিলাম যে, আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এবং বিভিন্ন সময় বলিও, আমরা বিএনপি যারা করি, আমাদের রাজনৈতিক সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস করতে চাই, যে দলের ব্যক্তিরা বা যে দল মানুষ হত্যা করে, মানুষ গুম করে, মানুষ খুন করে, দেশের মানুষের অর্থ-সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে, জনগণ তাদের সমর্থন করতে পারে বলে আমি মনে করি না।
জনগণ যদি সমর্থন না করে, কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক সংগঠনকে তাদের টিকে থাকার তো কোনো কারণ আমি দেখি না। যেহেতু জনগণের শক্তিতে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সিদ্ধান্তে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সিদ্ধান্তের ওপরে আমরা আস্থা রাখতে চাই। এ বিষয়ে সবচেয়ে বড় বিচারক আমি মনে করি জনগণ, যোগ করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। এর জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বীকৃত যে নিয়ম ও আইন রয়েছে, তার মধ্যে থেকে যদি কেউ রাজনীতি করে, সেটা করার অধিকার অবশ্যই সবার আছে। বিএনপি সবসময় বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। কাজেই, বিষয়টিকে আমরা এভাবেই দেখি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই সবাই রাজনীতি করুক। দেশের আইন ও নিয়ম মেনে যে কেউ রাজনীতি করলে, সেটিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।’
একসময় জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক জোট ছিল—এ বিষয়টি উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের বিরোধী ভূমিকাকে সামনে এনে তার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাওয়া হলে তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত ১৭ বছরে গুম-খুন যারা করেছে, তার জবাবদিহি যেমন তাদের করতে হবে, তেমনি ’৭১ সালে কেউ যদি বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে থাকে, তার জবাবও তাদেরই দিতে হবে। সেটা তো আমি দিতে পারব না।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, যে সরকার এখন দেশের জনগণের ওপর জুলুম করছে, গুম-খুন চালাচ্ছে, লুটপাট করছে—সেই শাসনের অবসানই এখন প্রধান লক্ষ্য।’
গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ কে তা নিয়েও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন তারেক রহমান। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আপনার ভূমিকা নিয়ে অনেক আলোচনা আছে। এটি মোটামুটি সব পক্ষই স্বীকার করে। সেই সময়ে আপনার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। আবার আপনার দলের কিছু নেতা বা সমর্থক এই অভ্যুত্থানের একমাত্র মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আপনাকে আখ্যা দিয়েছেন। আপনি কি নিজেকে এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখেন?
তখন তারেক রহমান বলেন— না, আমি অবশ্যই এই জুলাই আন্দোলনে নিজেকে কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। এই ৫ আগস্টের আন্দোলন, যা জুলাই আন্দোলন হিসেবে বিখ্যাত বা সবার কাছে গৃহীত, এটি সফল হলেও এর প্রেক্ষাপট বহু বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা—চাই তা বিএনপি হোক বা অন্য রাজনৈতিক দল—বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছে। বিভিন্নভাবে তাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে। আমি মনে করি, জুলাই-আগস্ট মাসে জনগণ সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে।
তারেক রহমান বলেন, শুধু কি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই সেদিন মাঠে ছিলেন? অবশ্যই নয়। আমরা দেখেছি, সেদিন মাদরাসার ছাত্ররাও আন্দোলনের মাঠে ছিলেন। আমরা দেখেছি, গৃহিণীরাও রাস্তায় নেমে এসেছেন। আমরা দেখেছি, কৃষক, শ্রমিক, সিএনজিচালক, ছোট দোকান কর্মচারী, দোকান মালিক থেকে গার্মেন্টস-কর্মী পর্যন্ত—সবাই অংশগ্রহণ করেছেন। আমরা দেখেছি, সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মীরাও আন্দোলনে নেমে এসেছেন। এমন অনেক সাংবাদিক, যারা স্বৈরাচারের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তারা সম্পৃক্ত হয়েছেন আন্দোলনে। কাজেই কারো ভূমিকাকে আমরা ছোট করে দেখতে চাই না। খাটো করে দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সমাজের দল-মত-নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের অবদান আছে। এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড কোনো দল, কোনো ব্যক্তি নয়। এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।
রাঙামাটিতে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৯ শিশু পাবে টাইফয়েড টিকা। সোমবার দুপুরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সিভিল সার্জন ডা: নূয়েন খীসা এমন তথ্য জানান।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৪৯টি ইউনিয়নের এক হাজার ২২২টি কেন্দ্রের মাধ্যমে এক লাখ ১১ হাজার ৯৪১টি বিদ্যালয় এবং ৪২ হাজার ৮০৩টি এলাকার শিশু যারা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি বা লেখা-পড়া করে না এমন শিশুকেও টিকা প্রদান করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সিভিল সার্জন বলেন, চলতি মাসের ১২ অক্টোবর থেকে ১৮ কার্যদিবস পর্যন্ত এ টিকাদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রাক- প্রাথমিক থেকে ৯ ম শ্রেণী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কমিউনিটির ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে টিকাদানের কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
এ সময় রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি আনোয়ার আল হক, সিনিয়র সহ- সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল, সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. প্রতীক সেন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খোকন চাকমা।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার শাকুয়াই ইউনিয়নের বালিজুড়ি এলাকার অর্ধশতাধিক কৃষক পরিবারের বাড়িঘর রক্ষায় কৃষকদের ব্যক্তিগত জায়গা থেকে বালু নিলাম প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
সোমবার দুপুরে উপজেলার বালিজুড়ি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ব্যানারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
বালিজুড়ি গ্রামের সৈয়দ সুলতান বলেন, আমাদের জমিতে ডকুমেন্ট করে বালু রাখার জন্য তখন অনুমতি দিয়েছিলাম। তৎকালীন পার্শ্ববর্তী ফুলপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউল করিম রাছেল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে নদী খননকারী প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের নিয়ে আমাদের সাথে কথা বলেন। সেসময় বলা হয় নদীর বালু ফেলার জন্য জায়গা দিলে আমাদের বাড়িঘর নদী ভাঙন ও পানি ওঠা থেকে রক্ষা পাবে। আমরা লিখিতভাবে তখন বালু ফেলার অনুমতি দেই। প্রায় ৩ বছর হলো আমরা এর সুফল ভোগ করছিলাম। এখন বন্যায় আমাদের ঘরে পানি ওঠে না। বৃষ্টির পানি উঠলে আমরা সেই বালু রাখার জায়গাতে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারি। কিন্তু কিছুদিন আগে প্রশাসন আমাদের জমিতে রাখা বালু নিলামে বিক্রি করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শহিদুল ইসলাম বলেন, বালিজুড়ি গ্রামের অংশটি ৩ নদীর মোহনায় অবস্থিত। একদিকে কংশ ও খড়িয়া নদী। অন্যদিকে বটকালী খাল। ফলে প্রতিবছর বন্যায় আমাদের এলাকাটির বাড়িঘরে ঢলের পানি এসে ব্যাপক ক্ষতি হতো। তবে ৩ বছর আগে আমরা আমাদের ফসলি জমিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বালু রাখার অনুমতি দেই। নইলে নদী খননের বালু ফেলার জায়গা ছিলনা। বালু রাখার ফলে এখন কংস নদীর ভাঙন থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। কিন্তু আমরা হঠাৎ জানতে পারি এই বালু নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হবে। নদী থেকে উত্তোলনকৃত বালু নিলামের আগেই আমরা লিখিতভাবে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগকে অবগত করেছিলাম। কিন্তু জনগনের কষ্টের কথা চিন্তা না করে প্রশাসন বালু নিলাম দিয়েছেন।
স্থানীয় হাজি এমদাদ হোসেন বলেন, এখানে কখনো প্রশাসন থেকে কেউ না এসেই এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা না করে বালু নিলাম দিয়েছে। যদি বালু নিয়ে যায় তাহলে আমরা এলাকার সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে আবারো নদীর পানি উঠে যাবে। নদীর পাড় ভেঙে বিলিন হয়ে যাবে এই গ্রাম। আমরা আশা করবো প্রশাসন সরজমিনে এসে তদন্ত করে নিলাম বাতিল করবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলীনূর খান বলেন, নিয়ম মেনেই আমরা বালু নিলাম করেছি। তবে এ বিষয়ে নিলামের আগে আমাদের কেউ আপত্তি জানায়নি। যদি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ আসে তাহালে আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিব।
বরগুনার আমতলী উপজেলায় বিএনপির মিছিলে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার আমতলী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাহাত প্যাদা বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করলে ওই রাতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- আমতলী উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির, এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত রসুল অপু।
জানা যায়, গত বছর ২২ অক্টোবর রাতে আমতলী সরকারি কলেজের সামনে থেকে পৌর, উপজেলা ও কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি উপজেলা সড়কের কার্তিক মণ্ডলের বাড়ির সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন।
এ ঘটনায় প্রায় এক বছর পর ছাত্রদল নেতা রাহাত প্যাদা বাদী হয়ে সোমবার ৬৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে আমতলী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার ভিত্তিতে রাতে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের ওই তিন নেতাকে নিজ নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, বিএনপির মিছিলে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সোমবার সকালে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সাধারণ কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আজ সোমবার রিয়াদে স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এই চুক্তিকে দুই দেশের মধ্যে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও অভিবাসন ব্যবস্থার ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং সৌদি আরব সরকারের পক্ষে মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বলে আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরের ইতিহাসে এটাই প্রথমবারের মতো সাধারণ কর্মী নিয়োগ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি। এর আগে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো হতো অনানুষ্ঠানিকভাবে। ১৯৭৬ সালে প্রথম বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে কাজ করছেন, যা বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
এর আগে, ২০১৫ সালে গৃহকর্মী নিয়োগ এবং ২০২২ সালে দক্ষতা যাচাই ও স্বীকৃতি সংক্রান্ত দুটি বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে সাধারণ কর্মী নিয়োগে এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক চুক্তি, যা প্রবাসী কর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার দিক থেকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এখন বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে দক্ষ, আধা-দক্ষ ও সাধারণ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ, দক্ষতা যাচাই, নিরাপদ অভিবাসন ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। পাশাপাশি নিয়োগকর্তা ও কর্মীর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক, আকামা নবায়ন, এবং সময়মতো এক্সিট ভিসা প্রদানের বিষয়গুলো আরও সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়িত হবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ড. আসিফ নজরুল সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, যেন কর্মীদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে, আকামা নবায়নের দায়িত্ব নিয়োগকর্তারা যথাযথভাবে পালন করে এবং দেশে ফেরত যেতে ইচ্ছুক কর্মীরা যেন দ্রুত এক্সিট ভিসা পায়।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী প্রেরণের আগে আমরা প্রশিক্ষণ ও স্কিল সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করব। এর মাধ্যমে সৌদি আরব আরও গুণগত শ্রমশক্তি পাবে।’
জবাবে সৌদি মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার অংশীদার। এই চুক্তি শুধু নিয়োগ নয়, মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।’
তিনি কর্মী কল্যাণ, দক্ষতা উন্নয়ন, এবং আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে উভয় দেশের মন্ত্রণালয়কে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন।
এছাড়াও বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগে প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, কর্মী নিয়োগে ডিজিটাল যাচাইকরণ ব্যবস্থা চালু, নারী কর্মীদের সুরক্ষা এবং অবৈধ দালাল চক্র দমনে যৌথ মনিটরিং সিস্টেম গড়ে তোলার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দেলওয়ার হোসেন, মিশন উপপ্রধান এস. এম. নাজমুল হাসান, শ্রম কাউন্সেলর মুহাম্মাদ রেজায়ে রাব্বী, সৌদি মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ দুই দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই চুক্তি কার্যকর হলে সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা আগামী দুই বছরের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ২৭ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত আছেন, যারা বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান।
চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীরা দক্ষতা অনুযায়ী ভালো বেতন, উন্নত কর্মপরিবেশ, চিকিৎসা ও আবাসন সুবিধা পাবেন। একই সঙ্গে কর্মীদের জন্য একটি যৌথ অনলাইন ডেটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে, যেখানে নিয়োগ ও কর্মচুক্তির তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।
এই ঐতিহাসিক চুক্তিকে কেন্দ্র করে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ সরকার। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দক্ষ কর্মী রপ্তানি শুধু রেমিট্যান্স বাড়াবে না, এটি বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে।’ সূত্র: বাসস
পরশুরামের রিকশাচালক সাগর আহমেদের ছেলে সাহাব উদ্দিন বলেন, আমি ১২০ টাকায় আবেদন করে পুলিশে চাকরি পেয়েছি, কাউকে কোনো উৎকোচ (ঘুষ) প্রদান করতে হয়নি। এ জন্য তিনি পুলিশ সুপারসহ জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। সিএনজি চালক ইকবাল হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার পিতা সিএনজি চালক। আমি অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। আমার ঘুষ দেওয়ার মতো অর্থ নেই, পুলিশে স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ায় আমি উত্তীর্ণ হয়েছি।
কৃষক আব্দুল মতিন ছেলে আবু বকর ছিদ্দিক জানান, তারা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে একটি কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদন করেন। মাত্র ১২০ টাকা ফি’তে অনলাইনে আবেদন করে কনস্টেবল পদে সুযোগ পেয়ে যাবেন, তা তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। তিনি বলেন, যদিও আগে বিভিন্ন লেনদেনের কথা শোনা যেত। কিন্তু আমরা কোনো ধরনের লেনদেন ছাড়াই চাকরি পেয়েছি। আমাদের এই আনন্দ বলে বোঝানোর মতো না।’
গত শনিবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ লাইনের গ্রিল শেডে পুলিশে কনস্টেবল পদে চুড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ২০ জন রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে মৌলিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশে যাওয়ার পূর্বে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
পুলিশ সুপার বলেন, আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছি। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের কাউকে এক টাকাও দিতে হয়নি। তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২০জনের কাছে সরাসরি জানতে চান- কাওকে টাকা দিয়েছে কি না, তারা সবাই জানায়, কাউকে টাকা দিতে হয়নি।
পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণদের উদ্দেশে বক্তব্যে বলেন, আপনারা সবাই চাকরি জীবনে সততার সাথে চাকরি করবেন। মানুষকে সেবা দিবেন। আপনারা পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন। উত্তীর্ণ ২০ জনকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন পুলিশ সুপার।
মন্তব্য