× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

অনুসন্ধান
NewsBangla Podcast Episode 1 Murder of Dr Sabira surrounded by mystery for 6 months
google_news print-icon

যে রহস্যের কিনারা নেই

যে-রহস্যের-কিনারা-নেই-
৩১ মে ২০২১। সকালবেলা আচমকা বদলে যায় গোটা ভবনের দৃশ্য। তিন তলার ফ্ল্যাটে নিজ কক্ষের দরজা ভেঙে ডা. সাবিরার নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কক্ষের বিছানার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে ছিল রক্তাক্ত মরদেহ। গলা ও পিঠে ছুরির আঘাত। সেই হত্যার ৮ মাসে কোথায় আছেন তদন্তকারীরা?

ঢাকার কলাবাগান।

ফার্স্ট লেনের ৫০/১ নম্বর বাড়ি। পাঁচ তলা এই ভবনের প্রতিটি তলায় দুটি করে ফ্ল্যাট। তিন তলায় সিঁড়ির বাম পাশের ফ্ল্যাটে মাস পাঁচেক হলো ভাড়া থাকেন কাজী সাবিরা রহমান লিপি।

২০২১ সালের শুরুতে ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নেন গ্রিন লাইফ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট চিকিৎসক সাবিরা। ৪৭ বছর বয়সী ডা. সাবিরার স্বামী-সন্তান থাকেন অন্য বাসায়।

বাসা ভাড়া নেয়ার মাসখানেক পর বাসার একটি কক্ষ সাবলেট দেন তিনি। প্রথম সাবলেট নেয়া তরুণী ছিলেন এক মাস। এরপর মাস চারেক আগে ওঠেন কানিজ সুবর্ণা নামের আরেক তরুণী।

৩১ মে ২০২১। সকালবেলা আচমকা বদলে যায় গোটা ভবনের দৃশ্য। তিন তলার ফ্ল্যাটে নিজ কক্ষের দরজা ভেঙে ডা. সাবিরার নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কক্ষের বিছানার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে ছিল রক্তাক্ত মরদেহ। গলা ও পিঠে ছুরির আঘাত।

সারা ঘরে তখন আগুনের ধোঁয়া। মরদেহের সালোয়ার-কামিজ পুড়ে গেছে, বিছানার চাদরও পুড়েছে অনেকটা। তবে দরজা ভেঙে পুলিশ যখন ভেতরে ঢোকে, ততক্ষণে আগুন নিভে গেছে, কেবল ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন চারদিক।

যে রহস্যের কিনারা নেই
কলাবাগান ফার্স্ট লেনের এই বাড়িতে থাকতেন ডা. সাবিরা। ছবি: নিউজবাংলা

সাবিরার পাশের কক্ষে সাবলেট থাকা তরুণী সুবর্ণার ভাষ্য, সেদিন ভোর ৬টার দিকে তিনি ধানমন্ডি লেকে হাঁটতে বের হন। এ সময় সবকিছু ছিল স্বাভাবিক। সাবিরার কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় তিনি স্বাভাবিকভাবে অন্য দিনের মতোই সকালে বেরিয়ে যান। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এটাই ছিল সুবর্ণার ভোরের রুটিন।

সুবর্ণা ফ্ল্যাটের প্রধান দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে যান। বাড়ি ছাড়ার সময় প্রধান ফটক খুলে দেন দারোয়ান রমজান। এর তিন ঘণ্টা পর সকাল ৯টার দিকে বাসায় ফেরেন সুবর্ণা। নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকেই দেখতে পান ধোঁয়া। সাবিরার কক্ষের বন্ধ দরজার নিচ দিয়ে আসা ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে ড্রয়িংরুমেও।

যে রহস্যের কিনারা নেই
ডান দিকের কক্ষে থাকতেন ডা. সাবিরা, বাম পাশে থাকতেন সুবর্ণা। ছবি: নিউজবাংলা

তখন সকাল প্রায় সাড়ে ৯টা। হতভম্ব সুবর্ণা ফোন করে ডেকে আনেন দারোয়ান রমজানকে। ছুটে আসেন ভবনটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা সামিয়া রহমানসহ আশপাশের অনেকে।

এই ভবনের মালিক মাহবুবুল ইসলাম একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, থাকেন মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায়। আর ভবন দেখভালের দায়িত্বে থাকা সামিয়া থাকেন পাশের আরেকটি ভবনে।

ডা. সাবিরার কক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে সকাল ১০টার দিকে খবর দেয়া হয় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে। তারা এসে দরজা ভেঙে উদ্ধার করে সাবিরার নিথর দেহ।

কীভাবে এই মৃত্যু? ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যে কী ঘটেছিল ওই কক্ষে? খুনি কীভাবে ঢুকল, কীভাবেইবা বেরিয়ে গেল সবার অগোচরে? হত্যার মোটিভ কী? সাবিরার গলায় ও পিঠে ছুরির আঘাত থাকলেও সেই ছুরিটি কোথায়?

ঘটনার প্রায় আট মাস পরেও এসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ বদল হয়েছে তিনবার, কিন্তু রহস্যের জাল ছিন্ন হয়নি এখনও।

ঘটনার দুদিন পর অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন ডা. সাবিরার মামাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার জুয়েল। মামলা নম্বর ১/৯৪। এর পরেই প্রথম তদন্ত শুরু করে কলাবাগান থানা পুলিশ। পাশাপাশি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও নামে তদন্তে।

তবে রহস্যের জট না খোলায় মামলাটি এরপর চলে যায় পিবিআইয়ের কাছে।

ডা. সাবিরা হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে কেন এই দীর্ঘসূত্রতা, তা অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বনি আমিন বিশ্লেষণ করেছেন ঘটনার আগে-পরের বিভিন্ন দিক।

ঘটনার দিন পুলিশের বিশেষ ইউনিট ক্রাইম সিনের ধারণা ছিল, ডা. সাবিরার মৃত্যু হয় মরদেহ পাওয়ার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে, মধ্যরাতে। তাহলে প্রশ্ন হলো, সাবলেট থাকা সুবর্ণা কেন তা জানতে পারেননি, না কি তিনি জানতেন?

আবার সুবর্ণার দাবি ধানমন্ডি লেকে হেঁটে বাসায় ফিরে আগুনের ধোঁয়া দেখতে পান। তাহলে ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যে আগুন লাগাল কে? মৃত মানুষের পক্ষে তো আর আগুন লাগানো সম্ভব নয়!

ডাক্তার সাবেরার মরদেহের গলায় ও পিঠে ছিল ছুরির আঘাতের চিহ্ন। তার মানে, এটি আত্মহত্যা নয়। ছুরিটি না পাওয়ায় হত্যার বিষয়টি নিয়ে মোটামুটি নিশ্চিত তদন্তকারীরা। কিন্তু খুনি কে?

সাবিরা রহমান দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন, সেদিক থেকে কোনো ঝামেলা ছিল কি না, খুঁজেছে নিউজবাংলা।

মাস চারেক সাবলেট থাকা সুবর্ণাকে বাসার তত্ত্বাবধায়ক ও দারোয়ানের কাছে নিজের বোনের মেয়ে হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সাবিরা। ঘটনার পর জানা যায়, তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। আবার বাসার তত্ত্বাবধায়ক থেকে শুরু করে সবাই জানত কানিজ সুবর্ণা একজন মডেল। কিন্তু কানিজ সুবর্ণার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি মডেলিংয়ের সঙ্গে জড়িত নন। প্রশ্ন হলো, তারা দুজনেই কেন মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করলেন?

ডাক্তার সাবিরা ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন গত বছরের জানুয়ারিতে। পরের মাসেই সাবলেট হিসেবে উঠেছিলেন আরেক তরুণী। স্কুলশিক্ষক পরিচয় দেয়া সেই তরুণী সাবলেট ছিলেন এক মাস। পরের মাসে ওই ফ্ল্যাটে আসেন সুবর্ণা।

কলাবাগানের বাসাটি ভাড়া নেয়ার আগে ডা. সাবিরা থাকতেন একই এলাকার বশিরউদ্দীন রোডের আরেকটি ফ্ল্যাটে। ৭/২ নম্বর ভবনের বাড়িওয়ালা ফজলুল হকের ফ্ল্যাটে এক কক্ষ ভাড়া নিয়ে একাকী থাকতেন এই চিকিৎসক।

ডা. সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী সাবেক ব্যাংকার শামসুদ্দিন আজাদ। তিনি তার প্রথম স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে থাকেন শান্তিনগরের বাসায়।

ডা. সাবিরার প্রথম স্বামীর নাম ডা. ওবায়দুল্লাহ। ২০০৩ সালে ওবায়দুল্লাহ মারা যাওয়ার পর ২০০৬ সালে তিনি বিয়ে করেন শামসুদ্দিন আজাদকে।

সাবিরা কলাবাগানের বশিরউদ্দীন রোডে একাকী বাসা ভাড়া নেয়ার আগে থাকতেন গ্রিন রোডে মায়ের বাসায়। সেখানে তার প্রথম পক্ষের সন্তান আহমেদ তাজওয়ার এবং দ্বিতীয় পক্ষের মেয়েও থাকেন।

স্বামী-সন্তান এমনকি মায়ের বাসা ছেড়ে ডা. সাবিরা কেন একাকী বাসা ভাড়া নিলেন- সেই প্রশ্নের জবাবও খুঁজেছে নিউজবাংলা।

তার আগে চলুন একবার ঘুরে আসি কলাবাগানের যে ফ্ল্যাটে ডা. সাবিরা খুন হন, সেখানে।

রাজধানীর কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড। কলাবাগান ফার্স্ট লেনের পাকা সড়কটি ধরে ৩৩৫ কদম হাঁটলে বাঁ পাশে চোখে পড়ে ৫০ নম্বর বাসা। এই বাসার পাশ দিয়ে একটি গলি। সেই গলি দিয়ে ঢুকতেই দ্বিতীয় বাসাটির নম্বর ৫০/১। এই ভবনের তৃতীয় তলায় থাকতেন ডা. সাবিরা রহমান।

যে রহস্যের কিনারা নেই
কলাবাগান ফার্স্ট লেনের সড়ক। ছবি: নিউজবাংলা



প্রধান ফটকে নক করতেই বেরিয়ে আসেন দারোয়ান রমজান। ডা. সাবিরার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলে যান ঘটনাপ্রবাহ।

ঘটনার আগের দিন ৩০ মে ২০২১। রাত ১০টায় বাসায় ঢোকেন ডা. সাবিরা। সাবলেট থাকা সুবর্ণা বাসায় ফেরেন আরও আগে।

বাসার নিয়ম অনুযায়ী, রাত ১১টায় প্রধান গেট বন্ধ হয়। তবে সেদিন রাত ১১টায় গেট বন্ধ হয়নি। কারণ পাশের বাসার তত্ত্বাবধায়ক সামিয়া দারোয়ান রমজানকে পাঠিয়েছিলেন ধানমন্ডিতে তার ব্যক্তিগত কাজে। রমজান কাজ শেষ করে কলাবাগানে ফিরতে রাত প্রায় সাড়ে ১২টা বেজে যায়।

মধ্যরাতে ফিরে প্রধান ফটকসহ ছাদের গেট বন্ধ করেন রমজান। এরপর ঘুমিয়ে যান তিনি।

৩১ মে সকাল ৬টা। ঘুম থেকে উঠে সুবর্ণার জন্য গেট খুলে দেন রমজান।

এরপর নিজের কিছু কাজ সেরে রমজান বাজারে যান, সেখান থেকে বাসায় ফেরেন সকাল ৯টার দিকে। এর কিছু আগেই বাসায় ফেরেন সুবর্ণা।

কিছুক্ষণ পর সুবর্ণা রমজানকে ফোন করে তিন তলায় ডাকেন। রমজান গিয়ে দেখতে পান ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরুমে সুবর্ণা পায়চারি করছেন আর মোবাইলের বাটন টিপছেন। এ সময় সাবিরার রুম থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়।

রমজান নেমে পাশের বাসায় গিয়ে ভবনের তত্ত্বাবধায়ক সামিয়াকে ডেকে আনেন। এরপর খবর দেয়া হয় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে। পরে দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয় ডা. সাবিরার মরদেহ।

ডা. সাবিরা হত্যার আগে ওই ভবনে কোনো সিসিটিভি ছিল না। তবে এখন বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। ভবনের আশপাশে কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করেছে পুলিশ।

ভবনের প্রধান ফটকের পরেই গ্যারেজ। গ্যারেজটির দুই পাশের ওয়াল ডিঙিয়ে কেউ যাতে ভেতরে ঢুকতে না পারে সে জন্য রয়েছে রডের তৈরি বেড়া। তাই এদিক দিয়ে কারও ভেতরে ঢোকার সুযোগ নেই।

ভবনের পাশ দিয়ে বেয়ে তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে ঢুকতে গেলে জানালার গ্রিল ভাঙতে হবে। সে ধরনের কোনো আলামত পায়নি পুলিশ। এর অর্থ, খুনি ঢুকেছে এবং বেরিয়েছে ভবনের প্রধান ফটক দিয়েই।

তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায় সাবিরার ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ। অনুসন্ধানের স্বার্থে চাবি পুলিশের কাছে।

তবে এই বাসার সব ফ্ল্যাট একই ধরনের। সাবিরা হত্যার পর ভবনের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ারা একে একে চলে গেছেন। ভবনের এসব ফ্ল্যাটের সবগুলো এখনও ফাঁকা।

যে রহস্যের কিনারা নেই
ডা. সাবিরা কলাবাগানের এই ভবনে থাকতেন। ছবি: নিউজবাংলা

ডা. সাবিরার ফ্ল্যাটের ঠিক ওপরের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে গিয়ে এর নকশা পর্যবেক্ষণ করেছেন নিউজবাংলার বনি আমিন।

দেখা গেছে, দুই রুম, এক ড্রইং আর এক কিচেনের ফ্ল্যাটে থাকতেন ডা. সাবিরা রহমান। ফ্ল্যাটে ঢুকতেই সোজাসুজি রুমে থাকতেন সুবর্ণা আর ডান পাশেরটিতে থাকতেন সাবিরা।

প্রতিটি কক্ষের দরজার লক ভেতর থেকে বন্ধ করা যায়। তবে বাইরে থেকে চাবি ঘুরিয়ে খোলা সম্ভব। ফ্ল্যাটের প্রধান দরজার লকেও একই ব্যবস্থা। ফলে এমন হতে পারে সাবিরাকে হত্যার পর ভেতর থেকে লক করে দরজা টেনে বেরিয়ে গেছে খুনি।

সাবিরা হত্যার পর থেকে পুলিশের বিধিনিষেধের মধ্যে আছেন ওই ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকা সুবর্ণা। সাবিরা সুবর্ণাকে আত্মীয় পরিচয় দিলেও তিনি বলছেন, সাবিরা তার পূর্বপরিচিত নন। সুবর্ণা ওই বাসায় উঠেছিলেন টুলেট বিজ্ঞাপন দেখে।

সুবর্ণা গ্রিন রোড এলাকায় ছিলেন চার বছর। পড়াশোনা করছিলেন সেখানকারই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুবর্ণা বলছেন, তিনি সাবিরার কাছে শিক্ষার্থী পরিচয়ই দিয়েছিলেন।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সুবর্ণাকে মডেল হিসেবে বলা হলেও তার দাবি, ওইভাবে তিনি মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত নন। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজে পার্টটাইম কাজ করতেন।

টুলেট দেয়ার সময় সুবর্ণাকে ডা. সাবিরা বলেছিলেন, তার স্বামী বিদেশ থাকেন। তবে পরে সুবর্ণা জানতে পারেন, ডা. সাবিরার স্বামী থাকেন ঢাকার শান্তিনগরে। সাবিরা কোনো ধরনের মানসিক চাপ বা ব্যক্তিগত জটিলতার মধ্যে ছিলেন কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানেন না বলে দাবি করছেন সুবর্ণা।

সাবিরা রহমান কলাবাগানের ৫০/১ নম্বর বাসায় ওঠার আগে থাকতেন একই এলাকার বশিরউদ্দীন রোডের একটি ভবনে। সেই ভবনের মালিক ফজলুল হক জানান, সাবিরার সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্ক ভালো ছিল না। দুই সন্তান নানির ভক্ত হওয়ায় মায়ের সঙ্গে দূরত্ব ছিল।

ফজলুল হক বলছেন, দ্বিতীয় স্বামী শামসুদ্দিন আজাদের সঙ্গে ডা. সাবিরার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। শামসুদ্দিন-সাবিরার ঘরে যে মেয়েসন্তান আছে তার খরচ দিতেন শামসুদ্দিন। তবে প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও তার সন্তান পছন্দ করতেন না বলে সাবিরা আলাদা থাকতেন। এসব বিষয় নিয়ে মানসিক কষ্টে ভুগছিলেন সাবিরা। প্রায়ই কান্নাকাটি করতেন।

তবে সাবিরার প্রথম পক্ষের সন্তান আহমেদ তাজওয়ারের দাবি, মায়ের সঙ্গে তাদের কোনো টানাপোড়েন ছিল না। সাবিরার প্রথম ও দ্বিতীয় পক্ষের দুই সন্তান তার মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন। এ জন্যই দুই সন্তান নানির কাছে আছেন।

তাজওয়ারের দাবি, করোনা সংক্রমণ শুরুর পর সন্তানদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই সাবিরা আলাদা বাসায় থাকতে শুরু করেন।

ডা. সাবিরা ছেলেকে কানাডা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই খরচ জোগাড় করতে তিনি নিজের গহনা বিক্রি করেন বলে জানান তাজওয়ার। তবে তিনি এও বলছেন, একসঙ্গে থাকলে কিছু মনোমালিন্য হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সে ধরনের কিছু ঘটনা তাদের পরিবারেও ঘটেছে।

অর্থ হাতিয়ে নিতে ডা. সাবিরাকে খুন করা হতে পারে এমন ধারণার পক্ষে নন তাজওয়ার। তিনি বলছেন, ‘তেমন ঘটনা ঘটলে অন্য কারও তো টাকা পাওয়ার কথা নয়। সব টাকা তো আমারই থাকবে।‘

ডা. সাবিরার বাসায় সুবর্ণা চার মাস সাবলেট থাকলেও তাজওয়ার বলছেন, তিনি কখনও সুবর্ণার নামও শোনেননি, মায়ের বাসায় গেলেও কখনও তাদের কথা হয়নি।

সৎবাবার সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না বলেও দাবি করছেন তাজওয়ার।

ডা. সাবিরার বিষয়ে তথ্য জানতে তার দ্বিতীয় স্বামী শামসুদ্দিন আজাদের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পায়নি নিউজবাংলা।

ডা. সাবিরা ছিলেন গ্রিন লাইফ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট চিকিৎসক। সহকর্মীরা বলছেন, কর্মক্ষেত্রে তার সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। তিনি নিয়মিত নামাজ-রোজা করতেন। ছিলেন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।

ডা. সাবিরার ফ্ল্যাটে গৃহকর্মীর কাজ করতেন শাপলা আক্তার। ভবনের দারোয়ান রমজান বলছেন, ২০২১ সালের শুরু থেকেই শাপলা ওই ফ্ল্যাটে কাজ করেন। শুরুতে সকাল-বিকেল কাজ করলেও মাস খানেক পর থেকে তিনি দুপুরের পর এক বেলা কাজে আসতেন।

রমজানের তথ্য বলছে, খুনের ঘটনার আগের দিন কাজে আসেননি শাপলা। এর কারণ নিউজবাংলা জানতে পারেনি।

ডা. সাবিরার মায়ের বাসার গাড়িচালকের নাম আামিন। ওই পরিবারে ৪ বছর চাকরির পর ২০১৮ সালে চাকরি ছাড়েন আমিন। তবে এরপরেও সাবিরার পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল।

প্রায়ই বাসার বাজার করে দিতেন আমিন। ডা. সাবিরার ভাড়া বাসাতেও মাঝেমধ্যে তার যাতায়াত ছিল। আমিন বলছেন, সবশেষ ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি সাবিরার বাসায় কিছু আসবাবপত্র দিতে যান।

শাপলা ও আমিনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব এখন পিবিআইয়ের কাছে। পিবিআই প্রধান (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার জানাচ্ছেন, বলার মতো অগ্রগতি এখনও আসেনি।

তিনি বলেন, ‘রহস্য উদ্ঘাটনে বিভিন্নমুখী কাজ আমাদের করতে হয়, সেগুলো করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত কিলারকে শনাক্ত করা না যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা বলব যে মামলার তেমন অগ্রগতি হয়নি।’

৮ মাস পেরিয়ে গেছে এই হত্যার। কিন্তু রহস্য ঘিরে আছে প্রতিটি অংশে। বহুবার তদন্তকারীরা ভেবেছেন এই বুঝি পাওয়া গেল খুনের মোটিভ, চিহ্নিত হতে যাচ্ছে ডা. সাবিরার খুনি!

তবে তারপরই আবার ঘিরে ধরেছে অন্ধকার। আর এভাবেই রহস্যের জালে আটকে আছে ডা. সাবিরা লিপির হত্যাকাণ্ড।

মন্তব্য

আরও পড়ুন

অনুসন্ধান
Sagar Rooney Murder Report Report is a record of 120 times

সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্ত প্রতিবেদন ১২০ বার পেছানোর রেকর্ড

সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্ত প্রতিবেদন ১২০ বার পেছানোর রেকর্ড

বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।

এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।

এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।

তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।

মন্তব্য

অনুসন্ধান
Abu Saeed Murder Hearing the charges against the accused today

আবু সাঈদ হত্যা: ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ

আবু সাঈদ হত্যা: ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।

সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।

এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।

গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।

এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।

মন্তব্য

অনুসন্ধান
Former Chief Justice ABM Khairul Haque arrested

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক গ্রেপ্তার

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক গ্রেপ্তার

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।

মন্তব্য

অনুসন্ধান
All courts have observed a minute of silence before the trial begins

বিচার শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে সকল আদালত

বিচার শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে সকল আদালত

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।

আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

মন্তব্য

অনুসন্ধান
Corruption in the mural project in the Mujib year

মুজিববর্ষে ম্যুরাল প্রকল্পে দুর্নীতি, ৬৪ জেলায় দুদকের চিঠি

মুজিববর্ষে ম্যুরাল প্রকল্পে দুর্নীতি, ৬৪ জেলায় দুদকের চিঠি

সারাদেশে মুজিব শতবর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণের আর্থিক হিসাব চেয়ে ৬৪ জেলায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিজালক আকতারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

দুদক জানায়, ৬৪ জেলা পরিষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে মুজিবর্ষ পালনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, ব্যয় করা মন্ত্রণালয়ের নাম, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় কতগুলো এবং কোথায় ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, ম্যুরাল নির্মাণে কত টাকা খরচ হয়েছে, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন ও শেখ মুজিবের ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে ওই অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই রেকর্ডপত্র দ্রুত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো প্রকল্পই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে পাঠানোর আগে একই চিঠি বাংলাদেশ বেতার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেও পাঠানো হয়েছে।

গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিববর্ষ পালনে অর্থ অপচয় ও এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল দুদক।

মন্তব্য

অনুসন্ধান
Mob Violence cannot disrupt the normal activities of the country RAB Director General

মব ভায়োলেন্স করে দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না: র‌্যাব মহাপরিচালক

মব ভায়োলেন্স করে দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না: র‌্যাব মহাপরিচালক

র‍্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।

শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র‌্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র‍্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র‍্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’

‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‍্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’

‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’

র‍্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য

অনুসন্ধান
ACCs Sharifs direction to return the job to the High Court

দুদকের সেই শরীফকে চাকরি ফেরত দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

দুদকের সেই শরীফকে চাকরি ফেরত দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার (৯ জুলাই) বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

তিন বছর আগে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই কোনো কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ-সংক্রান্ত দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) বিধির বৈধতা নিয়ে ও চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে একই বছরের ১৩ মার্চ শরীফ রিট করেন।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক পদ থেকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বেতন, সব সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। দুদকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

রুলের ওপর গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত আজ রায়ের জন্য দিন রেখেছিলেন। রুল যথাযথ (অ্যাবসোলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হলো।

রায়ের সময় শরীফ উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে শরীফ উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান।

রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দীন দোলন বলেন, শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। জ্যেষ্ঠতা ও সব সুযোগ-সুবিধাসহ তাঁকে চাকরিতে ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, রায়ের বিষয়টি দুদককে জানানো হবে। আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।

মন্তব্য

p
উপরে