কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার কাছ থেকে জব্দ করা বিলাসবহুল গাড়ি দুটির মালিক তিনিই। এর মধ্যে বিএমডব্লিউ এস২০৯ মডেলের সিলভার রঙের গাড়িটি গত বছরের এপ্রিল মাসে আরেকজনের কাছ থেকে কেনেন তিনি। তবে পিয়াসা দীর্ঘদিনেও মালিকানা বদলের আবেদন না করায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সার্ভারে পুরোনো মালিকের প্রতিষ্ঠানের নামই রয়ে গেছে।
আর এ কারণেই ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি, সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও ঘুরপাক খেতে হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিএমডব্লিউ গাড়িটির মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন করতে পিয়াসাকে বারবার অনুরোধ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। সবশেষ গত এপ্রিলে তিনি আবেদনটি করেন। তবে গাড়িটি গত মাসে বিআরটিএতে পিয়াসার নামে রেজিস্ট্রেশন করা হলেও লকডাউনের কারণে সার্ভার আপডেট করা সম্ভব হয়নি, বলছেন কর্মকর্তারা।
পিয়াসা গাড়ি কেনার পর এক বছরেও কেন মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন করেননি, তা নিয়ে সন্দিহান বিআরটিএর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গাড়িটির আগের মালিকপক্ষও।
বিআরটিএর সার্ভারে পিয়াসার ব্যবহৃত বিএমডব্লিউ এস২০৯ মডেলের সিলভার রঙের গাড়িটির নিবন্ধন এখনও দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্সের নামে। এ তথ্য পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে খোঁজ নেয় নিউজবাংলা। জানা যায়, ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্স। এর মালিক শফিকুল আলম মিথুন।
বুধবার ‘পিয়াসার বিএমডব্লিউ গাড়ির মালিক কে?’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্সের মালিক শফিকুল আলম মিথুন নিউজবাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪ নম্বরের বিএমডব্লিউ আমাদেরই ছিল। যেটা আমি ২০১৫ সালে কিনে ব্যবহার শুরু করি। ২০১৮ সালে গাড়িটি আমি আমার আপন ছোট ভাই রিফাত বিন আলমকে দিই। পরে ছোট ভাই সেটা বিক্রি করে দেয়। এরপর আমি আর কিছু জানি না। পিয়াসার গাড়ি জব্দ হওয়ার পরই একবার সন্দেহ হয়েছিল। বুধবার গাড়িটি নিয়ে খবর প্রকাশের পর জানতে পারি, গাড়িটি এখনও আমার প্রতিষ্ঠানের নামেই আছে।’
শফিকুল আলম মিথুনের ছোট ভাই রিফাত বিন আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাইয়ার কাছ থেকে গাড়িটি নিয়ে আমি দুই বছর ব্যবহার করি। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বারিধারার ৭১ প্রগতি সরণিতে অবস্থিত নিড ফোর স্পিড নামের একটি গাড়ির দোকানে এটি বিক্রি করে একটি পাজেরো কিনি।
‘সেই ক্রয়-বিক্রয়ের কাগজপত্রও আমার কাছে আছে। এরপর আমি আর কিছু জানি না। হঠাৎ পিয়াসাকে গ্রেপ্তারের পর আমার সেই পুরোনো গাড়ি দেখে আঁতকে উঠি। তখনও ভাবিনি বিআরটিএতে গাড়িটি আমাদের নামেই আছে। গাড়িটির বর্তমান মালিকানার তথ্য আপডেট হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো অনেক আগেই নাম পরিবর্তনের কাজ সেরে ফেলেছি। বিআরটিএতে গাড়িটির মালিকানায় এখনও আমাদের নাম কেন আছে বুঝতে পারছি না।’
রিফাত বিন আলমের বক্তব্যের সূত্র ধরে নিউজবাংলা কথা বলেছে নিড ফোর স্পিডের মালিক আতিক রহমান খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পিয়াসাকে বিআরটিএ থেকে নাম পরিবর্তনের জন্য বারবার চাপ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছিল না। একপর্যায়ে ফোনে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তিনি।’
নিড ফোর স্পিডের মালিক আতিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মূলত পুরোনো গাড়ি বেচাকেনার ব্যবসা করতাম, কিন্তু করোনার কারণে আমাদের ব্যবসায় চরম ক্ষতি হয়। তাই গাড়ির ব্যবসা বন্ধ করে অন্য ব্যবসা শুরু করেছি।’
পিয়াসার বিএমডব্লিউ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এটা এক বছর আগের কথা। সম্ভবত ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে রিফাত বিন আলম নামের একজনের কাছ থেকে আমরা ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪ নম্বরের বিএমডব্লিউ এস২০৯ মডেলের সিলভার রঙের একটি গাড়ি এক্সচেঞ্জ করি।
‘কাগজে-কলমে আমরা তাদের কাছ থেকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি কিনে আরেকটি পাজেরো গাড়ি তাদের কাছে বিক্রি করি। সে সময়ে রিফাত বিন আলমের সঙ্গে আমরা ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে গাড়ি বিক্রির চুক্তিনামাও করি।’
নিড ফোর স্পিডের মালিক আতিক বলেন, ‘আমরা এই বিএমডব্লিউ কেনার কয়েক দিনের মধ্যেই পিয়াসা নামের মেয়েটি লকডাউনের মধ্যেই আমাদের কাছ থেকে গাড়িটি কিনে নেয়। তার কাছে গাড়ি বিক্রির সেই কাগজপত্রও আমাদের কাছে আছে। তখন আমরা পিয়াসাকে বিআরটিএ থেকে নাম পরিবর্তনের জন্য তেমন চাপ দিইনি। কারণ তখন লকডাউন চলছিল।
‘লকডাউন শেষ হলে আমরা পিয়াসাকে চাপ দিতে থাকি, আপনি বিআরটিএ থেকে নাম পরিবর্তন করে নেন। সে আজ করছি, কাল করছি বলে ঘোরাতে থাকে। একটা সময় সে আমাদের ফোন ধরাই বন্ধ করে দেয়। পরে ফোন ধরলেও লকডাউনের দোহাই দিতে থাকে। আমাদের চাপাচাপিতেই এ বছরের এপ্রিল মাসে পিয়াসা বিআরটিএতে আবেদন করে। জুলাই মাসে নাম পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনের একটা কপি আমরা রাখি, আরেকটা কপি যিনি মূল বিক্রেতা তাকে দিই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর আমরা বিআরটিএতে কথা বলে আপডেট করতে বলি। যেহেতু আমাদের টাকাপয়সা জমা দেয়া আছে, সব কাগজ আপডেট করা আছে। তখন বিআরটিএ থেকে আমাদের জানানো হয়, লকডাউন চললে তাদের সার্ভারও বন্ধ থাকে। তাই লকডাউন উঠে গেলে তারা গাড়ির নাম পরিবর্তন আপডেট করে দেবে। অথচ এই লকডাউনের মধ্যেই এই গাড়ি নিয়ে এত কিছু হয়ে গেল।’
গাড়িটির মালিকানা পরিবর্তনসংক্রান্ত বিআরটিএর একটি অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে দেখা যায়, ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা গত ১২ এপ্রিল ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪ নম্বরের বিএমডব্লিউ গাড়িটির মালিকানা পরবর্তনের আবেদন করেন। আবেদনে রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ সই করে ১২ জুলাই। আবেদনে পিয়াসা তার বনানীর বাসার ঠিকানা ব্যবহার করেন। বাবার নাম মাহবুব আলম বলে উল্লেখ করেন।
বিআরটিএর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সার্ভারে এখনও ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪ নম্বরের বিএমডব্লিউ গাড়িটি দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্স নামেই নিবন্ধিত আছে। ২০২০ সালে এটার মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার পরেও যদি আমাদের কাছে আসতে এত দিন লাগে, তাহলে বলতে হবে এর জন্য দায়ী তিনি, যিনি গাড়িটি কিনেছেন। কোনো অনিয়ম হলে সেটা পিয়াসা করেছেন। কারণ এতদিন নাম পরিবর্তন না করে তিনি বেআইনি কাজ করেছেন।’
গত মাসে বিএমডব্লিউ গাড়িটি পিয়াসার নামে রেজিস্ট্রেশন হলেও আপনাদের সার্ভারে নেই কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনায় আমাদের কার্যক্রম সীমিত আকারে চলছে। লকডাউনে অফিস বন্ধ থাকে। অফিস বন্ধ থাকলে আমাদের সার্ভারেও কোনো কিছু আপডেট করা হয় না।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পিয়াসা ২০২০ সালে গাড়ি কিনে কেন ২০২১ সালের এপ্রিলে মাসে নিজের নামে রেজিস্ট্রেশনের আবেদন করবে? এতদিন সে কী করেছে? তার মানে গাড়িটি নিয়ে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল তার।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এক ফেসবুক পোস্টে এ আহ্বান জানান তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালিত হয়ে আসছে। গণতন্ত্রের সারবত্তা ও এর অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পর্কে বিশ্বসম্প্রদায়ের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যেই এই দিবসটি পালিত হয়।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে গণতন্ত্র চর্চার লক্ষ্যে প্রচলিত একটি বিশেষ দিন। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, আহতদের সমবেদনা জানাচ্ছি। সারা বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’
তিনি আরো বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন একদলীয় বাকশালের আগ্রাসী থাবা থেকে।
তার কালজয়ী দর্শন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মর্মমূলে ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র। আর প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তিই হচ্ছে মানবিক মর্যাদা, ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্য। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অগ্রগামী করেছিলেন শহীদ জিয়ার চিন্তা ও দর্শনকে। আর এ জন্য তাকে সহ্য করতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ের স্বৈরতন্ত্রের হিংস্র আক্রমণ।
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকেই বারবার স্বৈরতন্ত্র হানা দিয়েছে। রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করা, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা, ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা ইত্যাদি অনাচার করা হয়েছে রাষ্ট্রশক্তিকে হাতের মুঠোয় নিয়ে। একটি ভীতিকর ও কর্তৃত্ববাদী পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছিল ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে ধরে রাখার স্বপ্নে বিভোর হয়ে। গত দেড় দশক আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আত্মপ্রকাশে গণতন্ত্র ছিল অবরুদ্ধ, বন্দি রাখা হয়েছিল সারা জাতিকে। গণতন্ত্রের নীতিমালা প্রচার ও সমুন্নত রাখার যেকোনো প্রচেষ্টাকেই পতিত আওয়ামী সরকার নির্দয়ভাবে প্রতিহত করেছে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘এবারের আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের মূল প্রতিপাদ্য, ‘অ্যাচিভিং জেন্ডার ইকুইলিটি অ্যাকশন বাই অ্যাকশন’, অর্থাৎ পদক্ষেপের পর পদক্ষেপ গ্রহণ করে লিঙ্গ সমতা অর্জন করতে হবে। গণতন্ত্রে নারী-পুরুষ বা অন্য যেকোনো লিঙ্গের মানুষ লিঙ্গ-নির্বিশেষে সবার সমান সুযোগ ও মর্যাদা লাভ করে। এটি একটি মূল মানবাধিকার। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র-সমাজে কেউ বঞ্চনার শিকার হলে জোরালো প্রতিবাদের পরিবেশ থাকে, সে কারণে নারী-পুরুষ বা অন্য যেকোনো লিঙ্গের ভেদরেখা তীব্র হতে পারে না এবং ক্রমান্বয়ে সমানাধিকার নিশ্চিত হওয়ার পথে অগ্রসর হয়।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র হলো একটি সর্বজনীন মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক পদ্ধতি, জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিসর নির্ধারণে স্বাধীনভাবে প্রকাশিত ইচ্ছা এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে তাদের পূর্ণ অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার এক নজিবিহীন গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ইতিহাসে এক ভয়ংকর স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। এখন তাই ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আমাদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে। আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের ভিত্তি হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন; বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের সব মূলনীতির প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োগ। ইনশাআল্লাহ আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যেখানে নিশ্চিত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমৃদ্ধি ও স্বনির্ভরতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদার রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সামাজিক স্থিতি ও ন্যায়পরায়ণতা।’
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য টিম হিসেবে কাজ করছে। এরই মধ্যে সুপারিশের প্রায় অর্ধেক বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ছয়টি সংস্কার কমিশনের তাৎক্ষণিক কার্যকর করার মতো প্রায় ৭০ ভাগ সুপারিশ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, প্রথম যে ছয়টি কমিশন গঠিত হয়, তাদের প্রস্তাবিত সুপারিশের মধ্যে থেকে আশু বাস্তবায়নযোগ্যগুলো বাছাই করে ইতোমধ্যেই অর্ধেকের মত বাস্তবায়ন করেছি। আমাদের ইচ্ছা, ডিসেম্বরের মধ্যেই অন্তত ৭০ শতাংশ সম্পন্ন করে যেতে পারব।
তিনি আরও বলেন, যে সকল সংস্কার প্রস্তাব সংবিধান সংশ্লিষ্ট, সেসব বিষয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আমরা সংবিধান পরিবর্তন করতে পারি না।
উপদেষ্টা জানান, কিছু প্রস্তাব সংবিধান সংশ্লিষ্ট হিসেবে উপস্থাপিত হলেও বাস্তবে তা তেমন নয়। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কমিশনের সভাপতির সঙ্গেও আলোচনা করেছি। উদাহরণস্বরূপ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান কে হবেন, তা কেবল কার্যপ্রণালীর বিধি পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব; সংবিধান সংশোধনের দরকার নেই।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, কিছু প্রস্তাবের পুনরাবৃত্তি ছিল, কিছু তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে মনে হয়েছে।
আবার কিছু প্রস্তাবে নিয়মিত কার্যক্রমের কথা উল্লেখ রয়েছে, যেমন দুর্নীতি দমন বিষয়ক কৌশলপত্র তৈরি।
আইন উপদেষ্টা জানান, বাকি পাঁচটি কমিশনের কোন সুপারিশগুলো বাস্তবায়নযোগ্য তা নিরূপণে বিদ্যুৎ,
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে কাজ চলছে। কিছু সুপারিশের বাস্তবায়ন ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
সরকার আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্তে অবিচল রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, একবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে আর কোন আইনি সংশোধন আনা যাবে না, কারণ তা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। সে কারণেই প্রয়োজনীয় সব আইনি সংস্কার ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের কথা আমাকে খুব আশাবাদী করেছে। সবাই ঐক্যমত্যের ওপর ভিত্তি করে একটি ভালো সমাধান চায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মানুষের নিয়ত। আমাদের নিয়ত যদি গণভ্যুত্থানের ঐক্য সংরক্ষণ করা, দেশে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার সুযোগ না দেওয়া এবং নিজেদের বিপদমুক্ত রাখা হয়, তাহলে সমাধান কঠিন হবে না, ইনশাআল্লাহ।
‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও সভায় অংশ নেন।
জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সভাটি পরিচালনা করেন।
সভায় কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।
বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ দুপুরে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ সোমবার মধ্যরাত ১ টায় কোস্ট গার্ড স্টেশন কয়রা কর্তৃক খুলনার কয়রা থানাধীন ছোট অংটিহারা এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালীন উক্ত এলাকা হতে ১০৩ কেজি হরিণের মাংস, ১টি হরিণের মাথা এবং প্রায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ হরিণ শিকারের ফাঁদসহ ১ জন হরিণ শিকারিকে আটক করা হয়।
পরবর্তীতে জব্দকৃত হরিণের মাংস, মাথা, শিকারের ফাঁদ এবং আটককৃত ব্যক্তির আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কয়রার আন্দারমানিক ফরেস্ট অফিসের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বন্যপ্রাণী হত্যা ও পাচার রোধে কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।
সম্প্রতি জানা যায় যে, কিছু অসাধুচক্র দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র অনুপ্রবেশ করানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিজিবির নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ০৩ মাসে বিজিবি ১৬টি দেশি-বিদেশি পিস্তল, ০২টি রিভলভার, ০২টি এসএমজি, ০৫টি রাইফেল, ১৬টি দেশীয় বন্দুক, ০৩টি শর্টগান, ০৩টি মর্টার শেল, ০৮টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ২৭টি অন্যান্য অস্ত্র, ২১টি ম্যাগাজিন এবং ১০০৩ রাউন্ড বিভিন্ন অস্ত্রের গোলাবারুদ জব্দ করেছে।
সীমান্ত দিয়ে দেশে অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ে বিজিবির গোয়েন্দা তৎপরতা ও আভিযানিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির টোল ফ্রি ০১৭৬৯৬০০৫৫৫ নাম্বারে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করা যাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ ১২ তরুণকে ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান করেছেন। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ ও তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণামূলক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ বছর পাঁচটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে তরুণদের এই সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারও রয়েছেন।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের রাস্তার পাশে জনবসতি এলাকায় বালুর স্তূপ করে চলছে রমরমা ব্যবসা। সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের প্রভাবশালী, অর্থ-বিত্ত-বৈভবের মালিক ইলিয়াস ব্যাপারী গং এ ব্যবসা চালিয়ে জনদূর্ভোগ তৈরী করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটা থেকে শুরু করে বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অনেক পরিবার গৃহহীণ হওয়ার উপক্রম। এ পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
পেয়ারপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী ইলিয়াস ব্যাপারী জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বালু বিক্রি করছেন। এর ফলে আঞ্চলিক সড়কগুলো বালুর স্তূপে বেশীরভাগ সময় অবরুদ্ধ থাকে, যা পথচারী ও যানবাহন চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এ সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ নুরুল হক জমাদ্দার জানান, বালু ব্যবসাস্থলের জমি নিয়ে আমাদের আদালতে মামলা চলছে, বালু ব্যবসার আড়ালে বেরিকেড, কাদাপানি সহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরী করে কৌশলে আমাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার জন্য বাড়ির সামনে বালুর স্তূপ করে রেখে রমরমা অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন ইলিয়াস ব্যাপারী গং। এ কারণে চলাফেরা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বালুর স্তূপ করে চলাচলের রাস্তা টুকু বন্ধ্ করে দেয়া হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বালুর সাথে পানি মিশে কাদা হয়ে যায় এবং পানি সরাসরি আমাদের ঘরে ঢুকে যায়। পানির কারনে আমাদের বাড়ি-ঘর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। উক্ত এলাকায় আরেকজন বাসিন্দা আঃ আজিজ জমাদ্দার বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা ঠিকঠাকমতো স্কুলে যেতে পারে না, কারণ রাস্তা পুরোটাই পানি ও বালুতে ভরা থাকে। আমরা একাধিকবার আমাদের অসহনীয় দূর্ভোগের কথা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি, তারা এখানে এলে সাময়িকভাবে তা বন্ধ করা হয় এবং চলে গেলে আবার তা চালু করা হয়। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আদালতের কাছে আইনি প্রতিকার চেয়েছি।
তারা অবিলম্বে এ অবৈধ বালু বিক্রি ও দূর্ভোগ তৈরীকারী ব্যবসা বন্ধ বা অন্যত্র সরিয়ে নিতে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এলাকার মানুষের দাবি বালুর ব্যাবসা বন্ধ করে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়া হোক।
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং আদালতের নির্দেশনা পেলে সে মোতাবেক দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
স্থানীয়রা এখন তাকিয়ে আছেন আদালতের দিকে। কেননা আদালত তাদের আস্থার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার স্থল- যেখানে তাদের আশা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তারা এ দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে বালু ব্যবসায়ী ইলিয়াস ব্যাপারী কাছে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে মুঠোফোনে কল করলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
হবিগঞ্জের মাধবপুরে এক পাগলা কুকুরের কামড়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন।উপজেলার চৌমুহনি ইউনিয়নের কমলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে শিশুসহ পুরো গ্রামবাসীর মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শিশু-কিশোররা ভয়ে স্কুলে যেতেও সাহস পাচ্ছে না।এ নিয়ে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে স্থানীয় একটি মসজিদে পাগাল কুকুরটি থেকে সাবধান থাকতে ও একে নিধন করতে মসজিদে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়।
আহতদের মধ্যে মিলাদ মিয়া ও মনোয়ারা বেগমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ এক কুকুর গ্রামে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি কামড়ে একের পর এক মানুষকে আহত করে। আতঙ্কের মাত্রা বাড়তে থাকায় গ্রামবাসীকে সতর্ক করতে মসজিদে মাইকিং করা হয়। তবে কুকুরটিকে এখনও আটক বা নিধন করা যায়নি।
স্থানীয় সেলিম মিয়া বলেন, “পাগলা কুকুরের ভয়ে আমাদের বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না।কুকুরটির লাল বর্ণের কুকুরি। আমরা মসজিদ থেকে মাইকিং করেছি। সরকারি উদ্যোগে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।”
এ বিষয়ে মাধবপুরের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিঠুন সরকার জানান, “কুকুরকে ধরে র্যাবিস টিকা দেয়ার প্রযুক্তি আমাদের নেই। এটি বন বিভাগ করলে করতে পারে। আপাতত এলাকাবাসীকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এদিকে গ্রামবাসী দ্রুত সরকারি হস্তক্ষেপ ও স্থায়ী সমাধান দাবি করেছেন।
মন্তব্য