কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার কাছ থেকে জব্দ করা বিলাসবহুল গাড়ি দুটির মালিক তিনিই। এর মধ্যে বিএমডব্লিউ এস২০৯ মডেলের সিলভার রঙের গাড়িটি গত বছরের এপ্রিল মাসে আরেকজনের কাছ থেকে কেনেন তিনি। তবে পিয়াসা দীর্ঘদিনেও মালিকানা বদলের আবেদন না করায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সার্ভারে পুরোনো মালিকের প্রতিষ্ঠানের নামই রয়ে গেছে।
আর এ কারণেই ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি, সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও ঘুরপাক খেতে হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিএমডব্লিউ গাড়িটির মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন করতে পিয়াসাকে বারবার অনুরোধ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। সবশেষ গত এপ্রিলে তিনি আবেদনটি করেন। তবে গাড়িটি গত মাসে বিআরটিএতে পিয়াসার নামে রেজিস্ট্রেশন করা হলেও লকডাউনের কারণে সার্ভার আপডেট করা সম্ভব হয়নি, বলছেন কর্মকর্তারা।
পিয়াসা গাড়ি কেনার পর এক বছরেও কেন মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন করেননি, তা নিয়ে সন্দিহান বিআরটিএর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গাড়িটির আগের মালিকপক্ষও।
বিআরটিএর সার্ভারে পিয়াসার ব্যবহৃত বিএমডব্লিউ এস২০৯ মডেলের সিলভার রঙের গাড়িটির নিবন্ধন এখনও দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্সের নামে। এ তথ্য পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে খোঁজ নেয় নিউজবাংলা। জানা যায়, ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্স। এর মালিক শফিকুল আলম মিথুন।
বুধবার ‘পিয়াসার বিএমডব্লিউ গাড়ির মালিক কে?’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্সের মালিক শফিকুল আলম মিথুন নিউজবাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪ নম্বরের বিএমডব্লিউ আমাদেরই ছিল। যেটা আমি ২০১৫ সালে কিনে ব্যবহার শুরু করি। ২০১৮ সালে গাড়িটি আমি আমার আপন ছোট ভাই রিফাত বিন আলমকে দিই। পরে ছোট ভাই সেটা বিক্রি করে দেয়। এরপর আমি আর কিছু জানি না। পিয়াসার গাড়ি জব্দ হওয়ার পরই একবার সন্দেহ হয়েছিল। বুধবার গাড়িটি নিয়ে খবর প্রকাশের পর জানতে পারি, গাড়িটি এখনও আমার প্রতিষ্ঠানের নামেই আছে।’
শফিকুল আলম মিথুনের ছোট ভাই রিফাত বিন আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাইয়ার কাছ থেকে গাড়িটি নিয়ে আমি দুই বছর ব্যবহার করি। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বারিধারার ৭১ প্রগতি সরণিতে অবস্থিত নিড ফোর স্পিড নামের একটি গাড়ির দোকানে এটি বিক্রি করে একটি পাজেরো কিনি।
‘সেই ক্রয়-বিক্রয়ের কাগজপত্রও আমার কাছে আছে। এরপর আমি আর কিছু জানি না। হঠাৎ পিয়াসাকে গ্রেপ্তারের পর আমার সেই পুরোনো গাড়ি দেখে আঁতকে উঠি। তখনও ভাবিনি বিআরটিএতে গাড়িটি আমাদের নামেই আছে। গাড়িটির বর্তমান মালিকানার তথ্য আপডেট হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো অনেক আগেই নাম পরিবর্তনের কাজ সেরে ফেলেছি। বিআরটিএতে গাড়িটির মালিকানায় এখনও আমাদের নাম কেন আছে বুঝতে পারছি না।’
রিফাত বিন আলমের বক্তব্যের সূত্র ধরে নিউজবাংলা কথা বলেছে নিড ফোর স্পিডের মালিক আতিক রহমান খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পিয়াসাকে বিআরটিএ থেকে নাম পরিবর্তনের জন্য বারবার চাপ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছিল না। একপর্যায়ে ফোনে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তিনি।’
নিড ফোর স্পিডের মালিক আতিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মূলত পুরোনো গাড়ি বেচাকেনার ব্যবসা করতাম, কিন্তু করোনার কারণে আমাদের ব্যবসায় চরম ক্ষতি হয়। তাই গাড়ির ব্যবসা বন্ধ করে অন্য ব্যবসা শুরু করেছি।’
পিয়াসার বিএমডব্লিউ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এটা এক বছর আগের কথা। সম্ভবত ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে রিফাত বিন আলম নামের একজনের কাছ থেকে আমরা ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪ নম্বরের বিএমডব্লিউ এস২০৯ মডেলের সিলভার রঙের একটি গাড়ি এক্সচেঞ্জ করি।
‘কাগজে-কলমে আমরা তাদের কাছ থেকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি কিনে আরেকটি পাজেরো গাড়ি তাদের কাছে বিক্রি করি। সে সময়ে রিফাত বিন আলমের সঙ্গে আমরা ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে গাড়ি বিক্রির চুক্তিনামাও করি।’
নিড ফোর স্পিডের মালিক আতিক বলেন, ‘আমরা এই বিএমডব্লিউ কেনার কয়েক দিনের মধ্যেই পিয়াসা নামের মেয়েটি লকডাউনের মধ্যেই আমাদের কাছ থেকে গাড়িটি কিনে নেয়। তার কাছে গাড়ি বিক্রির সেই কাগজপত্রও আমাদের কাছে আছে। তখন আমরা পিয়াসাকে বিআরটিএ থেকে নাম পরিবর্তনের জন্য তেমন চাপ দিইনি। কারণ তখন লকডাউন চলছিল।
‘লকডাউন শেষ হলে আমরা পিয়াসাকে চাপ দিতে থাকি, আপনি বিআরটিএ থেকে নাম পরিবর্তন করে নেন। সে আজ করছি, কাল করছি বলে ঘোরাতে থাকে। একটা সময় সে আমাদের ফোন ধরাই বন্ধ করে দেয়। পরে ফোন ধরলেও লকডাউনের দোহাই দিতে থাকে। আমাদের চাপাচাপিতেই এ বছরের এপ্রিল মাসে পিয়াসা বিআরটিএতে আবেদন করে। জুলাই মাসে নাম পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনের একটা কপি আমরা রাখি, আরেকটা কপি যিনি মূল বিক্রেতা তাকে দিই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর আমরা বিআরটিএতে কথা বলে আপডেট করতে বলি। যেহেতু আমাদের টাকাপয়সা জমা দেয়া আছে, সব কাগজ আপডেট করা আছে। তখন বিআরটিএ থেকে আমাদের জানানো হয়, লকডাউন চললে তাদের সার্ভারও বন্ধ থাকে। তাই লকডাউন উঠে গেলে তারা গাড়ির নাম পরিবর্তন আপডেট করে দেবে। অথচ এই লকডাউনের মধ্যেই এই গাড়ি নিয়ে এত কিছু হয়ে গেল।’
গাড়িটির মালিকানা পরিবর্তনসংক্রান্ত বিআরটিএর একটি অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে দেখা যায়, ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা গত ১২ এপ্রিল ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪ নম্বরের বিএমডব্লিউ গাড়িটির মালিকানা পরবর্তনের আবেদন করেন। আবেদনে রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ সই করে ১২ জুলাই। আবেদনে পিয়াসা তার বনানীর বাসার ঠিকানা ব্যবহার করেন। বাবার নাম মাহবুব আলম বলে উল্লেখ করেন।
বিআরটিএর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সার্ভারে এখনও ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪ নম্বরের বিএমডব্লিউ গাড়িটি দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্স নামেই নিবন্ধিত আছে। ২০২০ সালে এটার মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার পরেও যদি আমাদের কাছে আসতে এত দিন লাগে, তাহলে বলতে হবে এর জন্য দায়ী তিনি, যিনি গাড়িটি কিনেছেন। কোনো অনিয়ম হলে সেটা পিয়াসা করেছেন। কারণ এতদিন নাম পরিবর্তন না করে তিনি বেআইনি কাজ করেছেন।’
গত মাসে বিএমডব্লিউ গাড়িটি পিয়াসার নামে রেজিস্ট্রেশন হলেও আপনাদের সার্ভারে নেই কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনায় আমাদের কার্যক্রম সীমিত আকারে চলছে। লকডাউনে অফিস বন্ধ থাকে। অফিস বন্ধ থাকলে আমাদের সার্ভারেও কোনো কিছু আপডেট করা হয় না।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পিয়াসা ২০২০ সালে গাড়ি কিনে কেন ২০২১ সালের এপ্রিলে মাসে নিজের নামে রেজিস্ট্রেশনের আবেদন করবে? এতদিন সে কী করেছে? তার মানে গাড়িটি নিয়ে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল তার।’
আরও পড়ুন:লালমনিরহাটে করতোয়া এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের আলাউদ্দিন নগরে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ট্রেনের ধাক্কায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তারা হলেন- আজিজার রহমান, মোবারক হোসেন, মকবুল হোসেন ও আব্দুল ওহাব। তাদের সবার বাড়ি জোংড়া ইউনিয়নের ইসলাম নগরে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যার দিকে আলাউদ্দিন নগর স্টেশন এলাকায় কয়েকজন যুবক রেললাইনের পাশ দিয়ে ধান মাড়াই মেশিন নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় করতোয়া এক্সপ্রেস ট্রেনটিও যাচ্ছিলো। কিন্তু ধান মাড়াই মেশিনের শব্দে ট্রেনের শব্দ শুনতে পাননি তারা। ফলে চার যুবক ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
পাটগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নূর ইসলাম জানান, সীমান্তবর্তী স্থলবন্দর বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা করতোয়া এক্সপ্রেস (ট্রেন নং ৭১৩/৭১৪) সন্ধ্যার দিকে বাউরা আলাউদ্দিন নগরে আসে। এ সময় করতোয়া এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই চারজন প্রাণ হারান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাসী নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘আন্দোলনের নেতারা হয়তো ভাবেন যে দুই-একটা মিছিল করলেই দেশ ঠিক হয়ে যাবে। আর এগুলো হয়তো তাদের গুরুরা শেখান।’
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সোমবার ‘৭ নভেম্বরের আকাঙ্ক্ষা ও আজকের রাজনীতির প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর ছিল আওয়ামী লীগের ভয়াবহ দুঃশাসন। ওই দলের নেতাদের কাজ ছিল শেখ মুজিব ও তার পরিবারের গুণগান গাওয়া, অর্থ লুটপাট করা আর তা পাচার করা।’
তিনি বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার করা হয়েছে। এই সরকারের প্রধান কাজ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে লঙ্কায় যায় সে-ই রাবণ হয়। তারা দীর্ঘদিন, ২০ বছর ক্ষমতায় থাকতে চান। ইতোমধ্যে সরকারের উপদেষ্টা পদে আওয়ামী ঘরনার বিভিন্ন লোক ঢুকে গেছেন।
‘আমাদের সন্তান সমতুল্য ছাত্রদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয় যে দেশটা তারাই স্বাধীন করেছেন, আর কেউ জীবন দেননি। বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের হাজার নেতাকর্মী যে জীবন দিলেন তাদের হিসাব-নিকাশ কে করবে?’
‘শুধু নির্বাচনের জন্য দুই হাজার মানুষ জীবন দেননি’- বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমের বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির ওই নীতিনির্ধারক।
তিনি বলেন, ‘ভোট কি এতো সোজা? ভোট তো গণতন্ত্রের প্রতীক। ভোটের জন্যই তো ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ২০২৪-এর লড়াই তো হয়েছে বাক-স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান।
‘আর এরা বলেন, নির্বাচনের জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। তাহলে কিসের জন্য যুদ্ধ, এতো আত্মত্যাগ? ভোট কি এতই হেলাফেলার বস্তু? অর্থাৎ এরা (বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন) গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাসী নয়। তারা হয়তো ভাবেন, দুই-একটা মিছিল করলেই দেশ ঠিক হয়ে যাবে। এগুলো এদের গুরুরা হয়তো শেখান।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংস্কার করে নির্বাচন দিন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দেশ সংস্কার করবেন।
‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করি, ভবিষ্যতেও করব। তবে আপনারা আজীবন ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন না। ১০-২০ বছর ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন না। যারা আওয়ামী লীগের কুশীলব ছিল, ১৬ বছর হালুয়া-রুটি খেয়েছে, সুবিধা নিয়েছে, তারা এখনও বহালতবিয়তে আছে। এদের সরাতে হবে। এটি শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বও বটে।’
আরও পড়ুন:গাজীপুর মহানগরীর মোগরখাল এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক আবারও অবরোধ করেছেন তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীরা। এক ঘণ্টার ব্যবধানে পুনরায় মহাসড়ক অবরোধের কারণে আবারও যানজট তৈরি হয়েছে।
শ্রমিকদের দাবি, বকেয়া বেতনের জন্য ঢাকায় যাওয়া তাদের প্রতিনিধি দল ফিরে না আসা পর্যন্ত তাদের অবরোধ অব্যাহত থাকবে।
বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এর আগে টানা প্রায় ৫৩ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন টিএনজেড গ্রুপের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। অবশেষে বকেয়া পরিশোধের আশ্বাসে সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা।
তবে এক ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকরা। তাদের দাবি, বকেয়া বেতনের টাকা হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা মহাসড়ক ছাড়বেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরের দিকে গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ মিয়া ও সেনাবাহিনীসহ পুলিশের একটি দল শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য কলম্বিয়া গার্মেন্টস এলাকায় যায়। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় তাদের বেতন সংক্রান্ত বিষয়টি সমাধানের জন্য। পরে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হলে কিছু শ্রমিক মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। তবে কিছু শ্রমিক মহাসড়ক ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান।
একপর্যায়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ধাওয়া দিলে ওই শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে চলে যান। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেলা আড়াইটার দিকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
তবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা চলে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফের একই স্থানে অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে পুনরায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
থানা পুলিশ ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে যেতে নারাজ। তারা বলছেন, প্রতিনিধি দল ঢাকা থেকে ফেরার পর পরিস্থিতি বুঝে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৬৪ কর্মকর্তাকে বদলি ও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে সোমবার পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এই বদলি ও প্রত্যাহার করা হয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে সই করেন উপ-সচিব আবু সাঈদ।
একটি প্রজ্ঞাপনে একজন ডিআইজি, আটজন অতিরিক্ত ডিআইজি ও ৩৯ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করা হয়।
আরেকটি প্রজ্ঞাপনে একজন ডিআইজি, পাঁচজন অতিরিক্ত ডিআইজি ও ১০ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন নয়, বরং বর্তমান সিস্টেমকেই কার্যকর করে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মোহাম্মদ আবু হেনা। তার মতে, এজন্য কমিশনে যোগ্য লোক নিয়োগ দিতে হবে।
সোমবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আবু হেনা বলেন, ‘কমিশনের আমন্ত্রণে এসেছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করেছি। এই সুযোগে সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। আমাদের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন নিয়ে আমার সুপারিশ কিছু আছে। আমি তাদের বলেছি, আশা করি তারা বিবেচনা করবেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো- দেশের একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে আমি চাই, আগামীতে যে নির্বাচন হবে সেগুলো সাধারণ বা অন্যান্য নির্বাচন যাই হোক, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় এবং দেশের যেন কল্যাণ হয়।’
সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, যত ভালো আইনই হোক না কেন, প্রয়োগ না হলে সুফল আসে না। যত রিফর্ম করেন না কেন, নির্বাচন কমিশনে যোগ্য মানুষ দরকার, যোগ্য কমিশন দরকার।
‘যোগ্য সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনার দরকার। তারা যদি যোগ্য না হন তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আর আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন দরকার। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া দরকার। উপর থেকে আরোপ করা নয়। নিচে থেকে উঠে আসতে হবে। ভোটের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী দিতে হবে। এটা যদি সবগু দল বাস্তবায়ন করে তবে দেশের জন্য কল্যাণ হবে।’
আবু হেনা বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। এ সিস্টেমই কার্যকর হতে পারে। নতুন কোনো সিস্টেম দরকার আছে বলে মনে করি না। যেসব দেশে সংখ্যানুপাতিক সিস্টেম আছে সেসব দেশে যে এটা ভালোভাবে চলছে এটা মনে করবেন না। এটা আমি জানি।
‘আমাদের যে সিস্টেম আছে, যেটা মানুষের কাছে পরীক্ষিত- এই সিস্টেমই কার্যকর করে তোলা দরকার। আর সংসদ কয় কক্ষের হবে সেটা দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেয়া ভালো।’
নির্বাচনবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘উনি যা বলেছেন আমরা তাতে উৎসাহিত হয়েছি। উনি বলেছেন যে আমরা সঠিক পথেই আছি। ওনার অভিজ্ঞতার আলোকে সঠিক আছে।
‘আমরা আইনকানুন গভীরভাবে পর্যালোচনা করছি। ১৭ থেকে ১৮টি মিটিং করেছি। আমাদের অগ্রগতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। দলগুলোর কিছু মতামত পেয়েছি। গণমাধ্যমের সঙ্গেও বসবো।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ধরনের মতামত আছে। এক্ষেত্রে অনেক মতামত বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট কমিশনের সঙ্গেও বসবো।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা, মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনা ও ছেলে আয়মান বাহারের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এই তথ্য জানিয়েছেন।
এদিন দুদকের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদন বলা হয়েছে, উল্লিখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সরকারি অর্থ আত্মসাৎপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান। গোপন ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে, আ ক ম বাহাউদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর উত্তরায় ফ্ল্যাট, কুমিল্লার হাউজিং এস্টেটে একাধিক প্লট, মার্কেটসহ আরও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে।
অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট আ ক ম বাহাউদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশ ছেড়ে পলায়ন করতে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন মর্মে অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
এদিন দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আদালতে শুনানি করেন।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের বৃহত্তম জলবায়ু সম্মেলন, কপ-২৯ এ যোগ দিতে আজারবাইজানের বাকুর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট সোমবার বেলা ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, ১৪ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান হুমকি কীভাবে এড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে বিশ্বনেতা ও কূটনীতিকরা এই বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (কপ২৯) ২৯তম সম্মেলন ১১ নভেম্বর শুরু হয়ে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
এবারের কপ-২৯ এ অংশ নিচ্ছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
উন্নত দেশগুলোর প্রতি জলবায়ু আর্থিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তার আহ্বান জানান এই উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘সময় এসেছে উন্নত দেশগুলোর তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর।’
১৮৪৬ সালে বিশ্বের প্রথম তেলক্ষেত্র গড়ে উঠেছিল বাকুতে এবং ১৮৯৯ সালে তেল উৎপাদনকারী বিশ্বের নেতৃত্ব দিতো আজারবাইজান।
আজারবাইজানের রপ্তানির প্রায় সবই তেল ও গ্যাস। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের প্রধান উত্সগুলোর মধ্যে দুটি হলো তেল ও গ্যাস।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এপ্রিল মাসে এগুলোকে ‘সৃষ্টিকর্তার উপহার’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।
আলিয়েভ বলেছেন, কপ২৯ সম্মেলনটি আজারবাইজানের জন্য একটি ‘বড় সম্মান’।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার ঘটনাগুলো বিশ্বজুড়ে মানুষকে প্রভাবিত করছে। কপ২৯-এ বিভিন্ন দেশের সরকার, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের নেতারা অংশ নিচ্ছেন। সুনির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করতে তারা আলোচনা করবেন।
আয়োজকদের মতে, কপ২৯ এর মূল ফোকাস অর্থায়নের দিকে থাকবে। কারণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে জীবন ও জীবিকা রক্ষা করতে দেশগুলোর জন্য ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
প্যারিস চুক্তির অধীনে তাদের হালনাগাদ জাতীয় জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপনের জন্য এই সম্মেলন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ কর্মপরিকল্পনা ২০২৫ সালের প্রথম দিকে নির্ধারিত হবে।
যদি সঠিকভাবে করা হয় তবে এই পরিকল্পনাগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য