আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে যেসব ভুঁইফোঁড় সংগঠন গড়ে উঠেছে, সেগুলোর আরেকটি বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ লীগ। ১৩১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি জেলায় জেলায় কমিটি আছে বিতর্কিত সংগঠনটির। কমিটি আছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এসব ‘কমিটি নিয়ে বাণিজ্য’ করার পেছনে নাম এসেছে ৫০ বছর পেরোনো জি এম শফিউল্লাহর, যিনি ভুঁইফোঁড় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সাতক্ষীরায় জি এম শফিউল্লাহর পরিবারের সদস্যরা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সেখানে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের টাকার বিনিময়ে তরুণ লীগে পদ দিয়েছেন তিনি। আর এসব ‘হাইব্রিড নেতা’কে দিয়েই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছেন। তাদের ভয়ে কোণঠাসা ক্ষমতাসীন দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
প্রায় ১৯ বছর বয়সী এই সংগঠনের সবশেষ পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আইয়ুবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জি এম শফিউল্লাহ। এই শফিউল্লাহ এর আগের কমিটিরও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে নিউজবাংলা জানতে পেরেছে, আলোচিত এই নেতার গ্রামের বাড়ি শ্যামনগর উপজেলার নুরনগর ইউনিয়নের হাবিবপুর (আগের নাম হরিপুর) গ্রামে। তিনি গ্রামের বাড়ি থাকেন না, মাঝেমধ্যে যান। সাতক্ষীরা শহরের রসুলপুরে তার একটি তিনতলা বাড়ি আছে, সাততলা বাড়ি আছে রাজধানীর মিরপুরে। জি এম শফিউল্লাহ মূলত রাজধানীতে থাকেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্যামনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা নিউজবাংলাকে জানান, শফিউল্লাহ ২০০১ সালে বিদেশে লোক পাঠানোর ‘দালালি’ শুরু করেন। জনশক্তি রপ্তানির কাজে একটা সময় কুয়েত চলে যান, সেখানে কয়েক বছর থাকেন।
আপন বড় ভাই জামায়াত নেতা!
ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা বলেন, ‘২০০৬ সালে রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকায় এক মোটর মেকানিকের সঙ্গে পরিচয় হয় শফিউল্লাহর। শুনছি তার মাধ্যমেই শফিউল্লাহ তরুণ লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারি হয়। ২০১৬ সালে সে তরুণ লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়।’
তিনি জানান, শফিউল্লাহর বাবার দুই স্ত্রী। তারা মোট সাত ভাই। তবে শফিউল্লাহরা আপন দুই ভাই। তার বড় ভাইয়ের নাম জমাত আলী। তিনি দীর্ঘদিন নুরনগর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড শাখা জামায়াতে ইসলামীর ‘দায়িত্বশীল’ পদে ছিলেন। দুই বছর আগে সেই ওয়ার্ডের নায়েবে আমির পদ পেয়েছেন। বর্তমানে এই পদেই আছেন।
শ্যামনগর উপজেলার নুরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা জানিয়েছেন, শফিউল্লাহর বড় ভাই জমাত আলীকে নিয়মিতই উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচিতে দেখা যায়। জমাত আলী ৬ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা।
তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নুরনগর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকায় হরিপুর গ্রামের সবাই এখন আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী হয়ে গেছেন। গ্রামের লোকজন আগে অন্য কোনো দলে যুক্ত থাকলেও এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ নেই।’
নুরনগর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. রুহুল আমিন বলেন, ‘তরুণ লীগ নেতা শফিউল্লাহর বড় ভাই জমাত আলী একসময় জামায়াত ভালোবাসত। আমাদের কর্মী ছিল। আমাদের সঙ্গে থাকত। দীর্ঘদিন দলীয় কার্যক্রম না থানায় এখন তো সবাই নিষ্ক্রিয়।’
এ ব্যাপারে শফিউল্লাহর ভাই জমাত আলীর বক্তব্য জানতে কয়েক দিন ধরে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে কথা বলতে পারেনি।
শফিউল্লাহ এলাকায় পরিচিত ‘আদম ভাই’ নামে
শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নিউজবাংলাকে জানান, বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করায় ২০০১ সালের দিকেই স্থানীয় লোকজনের কাছে জি এম শফিউল্লাহ পরিচিতি পান আদম শফিউল্লাহ হিসেবে। তাকে অনেকেই ‘আদম ভাই’ বলে ডাকেন। তবে এখন তাকে কেউ আদম ভাই বলে ডাকলে তিনি সাড়া দেন না, রাগ করেন।
আওয়ামী লীগের এই নেতা অভিযোগ করেন, জি এম শফিউল্লাহ বিদেশে লোক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়েছেন, কিন্তু বিদেশে পাঠাননি, টাকাও ফেরত দেননি।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, জি এম শফিউল্লাহ বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ লীগে পদ পাওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কমিটি ও তদবির-বাণিজ্য শুরু করেন। তিনি সাতক্ষীরার মতো দেশের প্রায় সব জেলাতেই বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের তরুণ লীগে পদ দিয়েছেন টাকার বিনিময়ে। এভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। নিজেকে ‘বড় নেতা’ হিসেবে জাহির করতে গিয়ে ফেসবুক পেজে বেসরকারি টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদন বিকৃত করে নিজের ঢোল নিজে পিটিয়েছেন তিনি।
তবে সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ লীগের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের সাধারণ সম্পাদক জি এম শফিউল্লাহ। তিনি বলছেন, সবই অপপ্রচার।
বিএনপি-জামায়াতের লোকজনের কাছে পদ বিক্রি
জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরায় রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের যেসব নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়, তাদের অনেককেই জি এম শফিউল্লাহ তরুণ লীগের পদ ও সনদপত্র দেন টাকার বিনিময়ে। এসব নেতাই পরবর্তী সময়ে হাইব্রিড নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। ওই তিন বছরে শুধু সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায়ই ৩০টির বেশি মামলা হয় সহিংসতার অভিযোগে।
এ ব্যাপারে নুরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শফিউল্লাহ জামায়াত-বিএনপির অনেক মানুষকে সাহায্য করেছে। তাদের সঙ্গে তার সখ্য অনেক বেশি। অনেককেই টাকার বিনিময়ে তরুণ লীগের পদ দিয়েছেন তিনি।’
‘জিয়া নগরের গোল্ডেন’ তরুণ লীগের সভাপতি
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এই নেতার অভিযোগ, বৈখালী নামের একটা গ্রাম ছিল শ্যামনগরে। বিএনপি আমলে সেই গ্রামের নাম বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নামের সঙ্গে মিল রেখে ‘জিয়া নগর’ করেছিলেন গোল্ডেন নামের এক বিএনপি নেতা।
গোল্ডেন এখন ইতালি থাকেন জানিয়ে সোহেল রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই গোল্ডেনকেই বৈখালী ইউনিয়ন তরুণ লীগের সভাপতি বানিয়েছিলেন শফিউল্লাহ। বিনিময়ে নিয়েছিলেন মোটা অঙ্কের টাকা।
‘পরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ব্যাপক প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে তরুণ লীগের ওই কমিটি ভেঙে দিতে বাধ্য হন শফিউল্লাহ। ওই সময়ে নাশকতার মামলার অনেক আসামি বিএনপি-জামায়াতের অনেক লোককে তরুণ লীগের কর্মী বানিয়েছিলেন তিনি।’
তরুণ লীগের চাপে তৃণমূল আওয়ামী লীগ
নুরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার অভিযোগ, শফিউল্লাহর স্বজনরা বিএনপি-জামায়াত আমলের মতোই ভালো আছেন। ভালো নেই তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘তরুণ লীগের সাধারণ সম্পাদক জি এম শফিউল্লাহ তো কেন্দ্রের বড় নেতা। তাদের বাড়ি নুরনগর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে। কিন্তু তাদের পরিবারে তো বিএনপি-জামায়াতের বাইরে কোনো লোক নাই।
‘বিএনপি-জামায়াতের সময় সাধারণ মানুষ তাদের হাতে নির্যাতিত হতো। আবার এখনও মানুষ তাদের ওপরে কথা বলতে পারে না। অথচ তার আপন বড় ভাই জামায়াতের স্থানীয় ওয়ার্ডের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছে।’
আক্ষেপ করে সোহেল রানা বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে কী আর করব, ভাই। বাপ-দাদারা এই দল করে গেছে। আমিও ছাত্রলীগ, তারপর যুবলীগ আর এখন আওয়ামী লীগ করি। রক্তের ভেতর এই দল আছে বলে এই দল করি। কিন্তু এসব ভুঁইফোঁড় নেতার জন্য আর দল করার কোনো সুযোগ নেই। তাদের জন্য এখন এলাকায় বিরাট সমস্যা হয়ে গেছে। তৃণমূলে আমরা এদের জন্য খুব সমস্যায় আছি, ভাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেব, এরা তো কেন্দ্রের বড় নেতা দাবি করে। বড় বড় নেতার সঙ্গে তাদের ছবি আছে, তৃণমূল কর্মীরা তো ওই সব ছবি দেখে তাদের বড় নেতা ভাবে। তাদের কারণে আমাদের মতো তৃণমূল নেতারা খুব সমস্যায় আছি।’
শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তরুণ লীগ তো একটা ভুঁইফোঁড় সংগঠন। এদের এই শফিউল্লাহ বহুদিন ধরেই আমাদের এলাকায় দলের নাম ভাঙিয়ে চলছে বলে আমি শুনেছি। এদের বিরুদ্ধে আসলে কেন্দ্র থেকে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আমিও মনে করি, এদের বিষয়টা নেত্রীর নলেজে আসা উচিত এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
চাকরি দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ
শ্যামনগরের সাইদুর রহমান নামে এক যুবক অভিযোগ করে নিউজবাংলাকে জানান, ২০১৭ সালে জি এম শফিউল্লাহ সরকারি ব্যাংকের পিয়ন পদে চাকরি দেয়ার নামে তার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি চাকরি দিতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘গত ৩-৪ বছর এই ৭০ হাজার টাকা তুলতে তার পেছন ঘুরতে ঘুরতে আমি শেষ। শফিউল্লাহর মিরপুরের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে বেশ কয়েকবার টাকা চেয়েছি। কিন্তু শফিউল্লাহ আজ দেব কাল দেব বলে এখনো ঘোরাচ্ছে। সালাম নামে আমার এক পরিচিত লোক আছে, সেও চাকরির জন্য শফিউল্লাকে টাকা দিয়েছিল, কিন্তু কাজও হয়নি, আবার টাকাও ফেরত পায়নি।’
সাইদুর আরও বলেন, ‘শুধু আমরা এই দুজনই না, সাতক্ষীরায় আমার মতো এ রকম শতাধিক ভুক্তভোগী আছে, যারা বিভিন্ন কারণে শফিউল্লাকে টাকা দিয়ে ধরা খেয়েছে। কেউ চাকরির জন্য, কেউ বিদেশ যাওয়া জন্য, কেউ মামলা থেকে বাঁচার জন্য।’
শফিউল্লাহকে ধরে নিয়ে যান ভুক্তভোগীরা
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বুধবার নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় শ্রমিক লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি জানান, সেনা-সমর্থিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা সম্ভাবনা দেখা দিলে শফিউল্লাহ ২৫ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর ভবনে আসা শুরু করেন। সে সময় পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ‘কাছের লোকের’ সঙ্গে তার খুব ভালো সম্পর্ক হয়। তার মাধ্যমে শফিউল্লাহ বিভিন্ন জায়গায় তদবির-বাণিজ্য করতেন।
শ্রমিক লীগের ওই নেতা বলেন, ‘সে সময় একবার নোয়াখালীর কিছু মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন কাজ করে দেয়ার নামে কয়েক লাখ টাকা নেয় শফিউল্লাহ। কিন্তু তাদের কাজ করে দিতে পারেনি। একপর্যায়ে তারা গুলিস্তান এলাকা থেকে শফিউল্লাহকে তুলে নিয়ে যায়। পরে আমরা খবর পেয়ে নোয়াখালী থেকে শফিউল্লাহকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। তখন থেকেই আমরা জানি, শফিউল্লাহ এ রকম ধান্দাবাজি করে চলে।’
শফিউল্লাহর গাড়ি-বাড়ি
সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে জানান, সাতক্ষীরা সদরের রসুলপুর এলাকায় শফিউল্লার একটি তিনতলা বাড়ি আছে। এ ছাড়া রাজধানীর মিরপুরে সনি সিনেমা হলের পেছনে তার একটি সাততলা বাড়ি আছে। এই বাড়ির কিছু ফ্ল্যাট নির্মাণকারী রিয়েল স্টেট কোম্পানির, আর কিছু শফিউল্লাহর। শফিউল্লাহ সব সময় একটি প্রাইভেট কারে চড়েন, যেটি তার কেনা।
ঠিকানা আছে ফেসবুকে, বাস্তবে নেই
জি এম শফিউল্লাহ সম্প্রতি কিছু মেমোরি শেয়ার করেছেন তার ফেসবুক পেজে। এর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তরুণ লীগ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন তিনি। ভিডিওটি ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর শেয়ার করা হয় ‘প্রচারে তরুণ লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি’ নামের পেজ থেকে।
এই পেজই বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ লীগের ফেসবুক পেজ। এই পেজের পরিচয় অংশে লেখা আছে, বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ লীগ, কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত ও প্রকাশিত। প্রচার ও প্রকাশনায় মো. মুক্তার হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। সংগঠনটির ঠিকানা দেয়া আছে ২৫ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ৪র্থ তলা, গুলিস্তান, ঢাকা-১০০০।
তবে নিউজবাংলা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ঘুরে জানতে পেরেছে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর ২৫ নম্বর ভবনের নিচতলায় রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কার্যালয়। আর ২য় তলায় রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের অফিস। বহুতল এই ভবনের কোথাও বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ লীগের কোনো অফিস পাওয়া যায়নি।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী নিউজবাংলাকে জানান, ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর ভবনটি পুনর্নির্মাণের সময় ২৫ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর ভবনটি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে নেয়া হয়। ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভবন পুনর্নির্মিত হওয়ার পর ২৫ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর ভবনটি নিচতলা ছেড়ে দেয়া হয় ঢাকা মহানগর যুবলীগের জন্য। আর যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অফিস ফিরিয়ে আনা হয় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর নতুন ভবনে। ২৫ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের অফিস। এই ভবনে তরুণ লীগ নামে কোনো সংগঠন নেই।
ভিডিও কারসাজি
জি এম শফিউল্লাহ নিজের ফেসবুক পেজে ৩ বছর আগে পোস্ট করা একটি ভিডিও গত ২ আগস্ট দুপুরে আবার শেয়ার করেছেন। ২০১৮ সালের ১ আগস্টের সেই পোস্ট করে তিনি লিখেছিলেন, ‘মাদকমুক্ত উপজেলা চাই স্লোগানে,,,,, চ্যানেল "9"। জি এম শফিউল্লাহ।’
ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেটি ছিল এমপিওভুক্তির দাবিতে রংপুরে নন-এমপিও শিক্ষকদের সমাবেশ নিয়ে চ্যানেল নাইনের একটি প্রতিবেদন।
সেই ভিডিও প্রতিবেদন এডিট করে এমনভাবে প্রচার করা হয়, যা দেখলে মনে হবে বেসরকারি চ্যানেলটি জি এম শফিউল্লাকে ফোকাস করেই সংবাদটি প্রচার করছে। শেয়ার করা এই ভিডিওর প্রশংসা করেছেন তার এক ফেসবুক বন্ধু। তিনি বলেছেন, ‘গ্রেট ভিডিও।’
এই ভিডিওর প্রথমে চ্যানেল নাইনের উপস্থাপককেই সংবাদ পরিবেশন করতে দেখা যায়। বলতে শোনা যায়, এমপিওভুক্তির দাবিতে রংপুরে নন-এমপিও শিক্ষকদের সমাবেশ। তবে প্রতিবেদনের প্রথম ভয়েস ওভারের সময়ই চ্যানেল নাইনের লোগোর পরিবর্তে আরেকটি লোগো ব্যবহার করা হয়, যাতেও চ্যানেল নাইন লেখা। ভিডিওর এই অংশে তরুণ লীগের সাধারণ সম্পাদক জি এম শফিউল্লার গুণকীর্তন করতে দেখা যায় নেতাদের। ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককে।
ভিডিওটি একটু ভালোভাবে দেখলে যে কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব যে, সেটি কারসাজি করে করা হয়েছে।
সব অভিযোগই অস্বীকার জি এম শফিউল্লাহর
আপনার আপন বড় ভাই ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির কি না, জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বড় ভাই জামায়াতের নায়েবে আমির, এটা মিথ্যা কথা। আমার ব্যক্তিগত শত্রুরা এসব কথা বলছে।’
সনি সিনেমা হলের পেছনে আপনার সাততলা বাড়ি আছে কি না, জানতে চাইলে শফিউল্লাহ বলেন, ‘এটাও মিথ্যা কথা।’
তাহলে সত্যটা কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফোনে এসব কথা বলা যাবে না, লকডাউন চলে যাক। একদিন আপনার সঙ্গে বসে কথা বলা যাবে।’
বিদেশ পাঠানোর নামে আপনি মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দিচ্ছেন না, এ অভিযোগের বিষয়ে শফিউল্লাহ বলেন, ‘আমার শত্রুরা এসব অভিযোগ করে। কিন্তু এগুলো সত্য না।’
তরুণ লীগ কি আওয়ামী লীগের সংগঠন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সংগঠন করতে। আমরা ৭২ পৃষ্ঠার একটা বই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জমা দিয়েছি। এখন আমরা কমিটি দেই না। ১০ বছর আগে আমরা কমিটি দিয়েছি।’
তা হলে ২০২০ সালের কমিটির সাধারণ সম্পাদক হলেন কীভাবে, নিউজবাংলার এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান জি এম শফিউল্লাহ।
আপনাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কোথায়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের অফিস ২৫ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে। যারা বলছে এখানে আমাদের অফিস নেই, তারা ভুল বলছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করছে, তাদের আমি চিনিই না। আমার ব্যক্তি শত্রু থাকতে পারে, দলের শত্রু থাকতে পারে, আত্মীয় শত্রু থাকতে পারে, তারাই আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার করছে।’
আপনার কী কী সম্পদ আছে, জানতে চাইলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন জি এম শফিউল্লাহ।
তার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বুধবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই তরুণ লীগ একটা ভুঁইফোঁড় সংগঠন। আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে আমরা এসব সংগঠনকে আগাছা হিসেবেই চিহ্নিত করে ফেলেছি। এদের সঙ্গে আমাদের দলের কোনো সম্পর্ক নাই। সুবিধাবাদী শ্রেণির মানুষরাই এসব ভুঁইফোঁড় সংগঠন করে থাকে। কোনো ভালো মানুষ এসব ভুঁইফোঁড় সংগঠন করতে পারে না।
‘যাদের সমাজের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই, জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই, তারা নিজেদের স্বার্থ, নিজেদের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য এসব নাম ব্যবহার করে।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা ছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম। পরে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হন নাহিদ। তবে নাহিদ ইসলামের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) উপদেষ্টা পদে থাকাবস্থায় লক করে রেখেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এনআইডির তথ্য ফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংস্থাটি।
তবে অভিযোগের প্রমাণ না মেলায় ৫ দিন পর আনলক করে দেওয়া হয় নাহিদের এনআইডি।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে এনটিএমসি জানায়, ‘ভণ্ডবাবা’ গ্রুপের অ্যাডমিন নাহিদ ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তার এনআইডির নম্বরও দেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে। এরপর তদন্তে নামে অনুবিভাগ। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর লক করা হয় নাহিদের এনআইডি।
তদন্তে বেরিয়ে আসে, ‘ভণ্ডবাবা’ হোয়াটসঅ্যাপের কোনো গ্রুপ নয়। এটি টেলিগ্রামের একটি গ্রুপ। আর নাহিদ ওই গ্রুপের অ্যাডমিন নন।
তার এনআইডির বিপরীতে কোনো তথ্য পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায়, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডি আনলক করে দেয় সংস্থাটি।
এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু এই ভোটার কর্তৃক ডাটা সরবরাহ করার বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি এবং অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, সেহেতু মো. নাহিদ ইসলামের এনআইডি আনলক করার জন্য সুপারিশ করে কমিটি। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নথি উত্থাপন করা হলে ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডির মহাপরিচালক তখন এনআইডিটি আনলক করার সিদ্ধান্ত দেন।
এভাবেই পাঁচ দিনের জন্য লক থাকে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এনআইডি।
বর্তমান এনআইডি মহাপরিচালক এসএম হুমাযুন কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, সে সময় আমি ছিলাম না। তাই সেটি আমার বিবেচনার বিষয় নয়। আর পুরোনো বিষয় যেটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সেটির মতামতও দিতে চাই না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী পৃথিবীর যেকোনো বাহিনীকে টেক্কা দেওয়ার সক্ষমতা রাখলেও অতীতে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা তাদের জিম্মি করে রেখেছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের চৌরাঙ্গী মোড়ে এক পথসভা এ মন্তব্য করেন তিনি।
সারজিস আলম বলেন, ‘হাসিনার কারণে বিজিবি এত দিন ভারতের বিরুদ্ধে তাদের শক্তিমত্তা প্রকাশ করতে পারেনি। সীমান্তে পুশইনের ঘটনা বাংলাদেশবিরোধী ভারতের ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখনো সন্তোষজনক নয়। যে ব্যক্তি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশের হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, তাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। তাই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে প্রতিবেশীর মতো আচরণ করতে হবে। যত দিন পর্যন্ত শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রিত থাকবেন তত দিন বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না।’
সারজিস আলম বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে প্রতিবেশীর মতো শ্রদ্ধা ও সম্মানের সম্পর্ক হতে হবে। এখন পর্যন্ত ভারত যে আচরণ বাংলাদেশের সঙ্গে করেছে তা সন্তোষজনক নয়। এই আচরণ দিয়ে ভারত কখনোই প্রতিবেশীর মতো সম্পর্ক পাবে না।
সারজিস বলেন, ‘ভারত তাদের নাগরিক কিংবা এজেন্টদের বাংলাদেশে পুশইনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করছে। এ কারণে শুধু বিজিবি নয়, এই অঞ্চলের প্রতিটি নাগরিককেই সজাগ থাকতে হবে।’
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যখনই দেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র দেখবেন, তখনই তা প্রতিহত করুন।’
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারের অধিক হত্যা ও লাখের অধিক মানুষকে রক্তাক্ত করার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনাকে তারা (ভারত) আশ্রয় দিয়েছে। দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে শেখ হাসিনা সরকার জিম্মি করে রেখেছিল। তাদের শক্তি সামর্থ্যকে প্রকাশ করতে দেয়নি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কাছে সবসময় ছোট করে রেখেছিল। অস্ত্রের সক্ষমতা নয়, কলিজার সক্ষমতা থাকতে হবে। ১৯৭১ সালে এ দেশ স্বাধীন করে বাংলাদেশ সেটার প্রমাণ দিয়েছে। এসময় তিনি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিন্দু মাত্র আপস না করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম-মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা, কেন্দ্রীয় সংগঠক উত্তরাঞ্চলের রাসেল আহমেদ, লালমনিরহাট জেলা সমন্বয়ক রকিবুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দেশে গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভিডিও বার্তায় একথা বলেন তিনি।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শহীদ দিয়া আমৃত্যু যে গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে গেছেন, সেই গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা প্রতি পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
‘প্রতি বছর মে মাসের এই দিনটি আমাদের পরিবারে বেদনাবিধুর স্মৃতি নিয়ে আসে। এই দিনে শুধু আমাদের পরিবার নয়, বরং সমগ্র দেশই হয়ে ওঠে বেদনার্ত ও অভিভাবকহীন,’ বলেন তিনি।ঢ়
সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক অবিচ্ছেদ্য নাম শহীদ জিয়াউর রহমান। যে চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করে তিনি এ দেশের সঙ্গে তার নাম অবিচ্ছেদ করেছিলেন, সেই চট্টগ্রামেই এক সফল, সৎ, দূরদর্শী ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।’
শিগগিরই দেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে খালেদা বলেন, দেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করাই যেন হয় শহীদ জিয়ার শাহাদাত বার্ষিকীর দৃঢ় অঙ্গীকার।
এ লক্ষ্যে নেতা-কর্মীদের নিরলস কাজ করার আহ্বান জানান দলটির চেয়ারপারসন।
রাজধানীর ধানমন্ডি থানা থেকে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে আটক তিন ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে আনার অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দেওয়া কারণ দর্শানোর অভিযোগে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২১ মে হান্নানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল এনসিপি। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তিনি কারণ দর্শানো নোটিশের লিখিত ও মৌখিক জবাব ‘রাজনৈতিক পর্ষষের’ কাছে পেশ করেন।
নোটিশের জবাবে হান্নান ধানমন্ডির কর্মকাণ্ড ভুল ছিল বলে স্বীকার করেন এবং আগামীতে এই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে না মর্মে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
পাশাপাশি থানায় আটক হওয়া ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে হান্নানের সম্পৃক্ততা না থাকায় রাজনৈতিক পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার ওপর আরোপিত কারণ দর্শানো নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনসিপি।
এর আগে হান্নানকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয় বলা হয়, ২০ মে ধানমন্ডি থানার আওতাভুক্ত একটি আবাসিক এলাকায় ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে বিশৃঙ্খলা করার অভিযোগে তিনজন ব্যক্তিকে আটক করে থানা-পুলিশ।
এই তিনজনের অন্যতম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিকে নৈতিকতা স্খলনের কারণে অব্যাহতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। তা সত্ত্বেও আবদুল হান্নান মাসউদ সংশ্লিষ্ট থানায় উপস্থিত হয়ে আটক তিনজনকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়েছেন।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আবদুল হান্নান মাসউদকে ব্যাখ্যা এবং তার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার লিখিত বিবরণ তিন দিনের মধ্যে এনসিপির শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানের কাছে উপস্থাপন করার জন্য নির্দেশনা দেয় দলটি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জনগণ শিগগিরই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন দেখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখনকার প্রত্যাশা হলো জনগণ শিগগিরই সবচেয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে, যা হবে দক্ষ, যোগ্য এবং আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত এক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের নেতৃত্বে।’
জাতীয় পিপলস পার্টির (এনপিপি) ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার(২৫ মে) রাজধাণীর ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে এক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো আবারও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে এবং জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ও সময় স্পষ্টভাবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে। বিএনপি দাবি করেছে, জাতীয় নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, বিএনপি এবং যারা দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় আন্দোলন করছে, তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে পুরোপুরি সহযোগিতা করে যাচ্ছে—যাতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যায়।
বিএনপি নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহির সরকার প্রতিষ্ঠায় যেকোনো অজুহাত বা অপ্রয়োজনীয় বিলম্বের সুযোগ নিয়ে পতিত, পলাতক এবং পরাজিত স্বৈরশাসক জেগে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছে।’
তবে, তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে ফ্যাসিস্ট, ধ্বংসাত্মক ও অপশক্তির পুনর্বাসন রোধ করা সম্ভব।’
তারেক বলেন, ‘যদিও আমরা আমাদের দলীয় মতাদর্শ ও কর্মসূচি অনুযায়ী ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিগত পার্থক্য দেখতে পাই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণ এখন ৫ আগস্টের মতোই ঐক্যবদ্ধ। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ও জনগণের স্বার্থে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের জন্য একটি ইস্যুতে এই ঐক্য হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যার ফলে বিভিন্ন পেশা এবং শ্রেণির মানুষ প্রতিদিন বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় নামছে। ‘দুর্ভাগ্যবশত, তাদের দাবির প্রতি কেউ কান দিচ্ছে না।’
তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনকালে রাজনৈতিক দলগুলো নানা নির্যাতন, ষড়যন্ত্র এবং দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘এখন সব রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য হওয়া উচিত পরাজিত ফ্যাসিস্টের রাজনৈতিক পুনরুত্থান রোধ করা। এর জন্য জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন দেশের জনগণ রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান হবে, তখন কোনো সরকারই স্বৈরাচারী হতে পারে না। এজন্য জনগণের একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।’
তারেক রহমান সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠন করার হঠাৎ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। উদ্যোগটি জাতীয় বাজেটের আগে নেওয়া হয়েছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে রাজস্ব সংগ্রহ ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে—সতর্ক করেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিএনপি যে নির্বাচনী রোডম্যাপ দাবি করেছে, সেটিকে কিছু উপদেষ্টা ‘মহাপাপ’ হিসেবে দেখছেন বলে মন্তব্য করছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
নির্বাচনের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘স্পষ্ট সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনের আহ্বান জানানো কি মহাপাপ? কিছু উপদেষ্টার মন্তব্য থেকে মনে হচ্ছে যে, তারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে এই ধারণা উসকে দিচ্ছেন।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার (২৫ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি নেতা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে বলেছে। শেখ হাসিনা জনগণের এই ভোট দেওয়ার অধিকার বিলম্বিত করেছিলেন, বঞ্চিত করেছিলেন।’
‘আমাদের সব বিক্ষোভ ও আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল এই পরিস্থিতির উত্তরণ। প্রকৃত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা এবং একটি মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু এখন, নির্বাচনকে ঘিরে অনেক চক্রান্ত চলছে,’ যোগ করেন রিজভী।
নিজেদের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে কিছু উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। এ কারণেই রাজনৈতিক সংকট বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।
রিজভী বলেন, ‘যদি উপদেষ্টারা তাদের দায়িত্বের বাইরে কোনো গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন—তাহলে জনগণ তা মেনে নেবে না। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের ভূমিকা পরিবেশ রক্ষা এবং উন্নত করা, কিন্তু তিনি বরং নির্বাচনের কথা বলেন ‘
‘বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদী রক্ষার জন্য রিজওয়ানা কী করেছেন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছি কেন? দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে, পরিবেশ দূষণমুক্ত করতে তার কোনো উদ্যোগ বা কর্মসূচি আমরা দেখিনি।’
দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের জন্য তার দলের আহ্বানকে সমর্থন করে রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা হলো নিরপেক্ষ থাকা। কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল গঠনে সহায়তা করা বা এর বিকাশে সহায়তা করা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয় ‘
রিজভী বলেন, ‘অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে, যদি একজন উপদেষ্টা (কুমিল্লার) এসপিকে ফোন করে বিএনপির লোকজনকে গ্রেপ্তার করার এবং দলটিকে সেখানে কোনো কার্যকলাপ পরিচালনা করতে বাধা দেওয়ার নির্দেশ দেন—তাহলে কেন তার পদত্যাগের দাবি উঠবে না?’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারে যে দুই ছাত্র উপদেষ্টা রয়েছেন, তাদের সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই। তারা যদি রাজনীতি ও নির্বাচন করতে চান তাহলে সরকার থেকে বের হয়ে তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেবেন। একই সঙ্গে জনগণের ভোগান্তি কমাতে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে হত্যাকারীদের বিচার, সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ এক সঙ্গে ঘোষণার দাবি তোলেন তিনি।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, তারা (উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ) গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে সেই সময়ের সরকারে গিয়েছিলেন। আমিও তাদের সঙ্গে ছিলাম। এখন দুই উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক না থাকার পরও তাদেরকে জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত করে এক ধরনের অপপ্রচার চলছে এবং তাদের হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বলব এটি খুবই উদ্দেশ্যমূলক। গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে যারা গিয়েছেন সরকার থেকে তারা বের হবেন কি না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমাদের প্রত্যাশা, গণঅভ্যুত্থানের বৈধতাসহ আকাঙ্ক্ষাগুলো বাস্তবায়নে ছাত্র উপদেষ্টাসহ সব উপদেষ্টা একত্রে কাজ করবেন। ছাত্র উপদেষ্টাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত করে যে অপপ্রচার করা হচ্ছে আমরা তার নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনতে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। সরকারের মধ্যে নতুন দলের কয়েকজন রয়ে গেছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই দলের প্রতি আমাদের অনেক আশাবাদ ছিল। তাদের দুজন উপদেষ্টা এই সরকারে থেকে অনেক কিছুতে হস্তক্ষেপ করছে।
অপরদিকে ওই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে গণঅধিকার পরিষদও। দলটির নেতাদের ভাষ্য, এই দুই উপদেষ্টা এনসিপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজের বিষয়ে দলীয় বক্তব্য তুলে ধরেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ।
এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কী শুধু নির্বাচনকালীন সরকার, নাকি গণঅভ্যুত্থানের সরকার। রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং বিচারের মধ্য দিয়েই নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন এই তিনটিরই সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা উচিত। তবে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত। তাহলে মানুষের দুর্ভোগ দূর হবে।
গত ২০ মে বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন নাহিদ বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। তাদের কাজে ভরসা নাই। তাই দ্রুত ইসি পুনর্গঠন করতে হবে। গতকালের সংবাদ সম্মেলেনও ইসি নিয়ে আগের মন্তব্যই করেন তিনি। বলেন, ইসি আস্থা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। হয় তারা আস্থা ফিরিয়ে আনবেন, না হয় দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৬২৬ জনের একটা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যেটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছিলাম। এটা তো আগস্ট মাসের ঘটনা। এটা যদি আগেই প্রকাশ করা হতো তাহলে জনগণের মনে কোনো সন্দেহ তৈরি হতো না। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগও পেত না। সেনাবাহিনী আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। গণঅভ্যুত্থান এবং তার পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী যে ভূমিকা পালন করেছে, সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
‘আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিভিন্ন সময় দেখেছি, সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক কখনো কখনো তৈরি হয়। আমরা ১/১১’র ঘটনা জানি। এসব ঘটনা কিন্তু আমাদের গণতন্ত্রের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য এবং আমাদের সেনাবাহিনী, প্রতিষ্ঠান হিসেবে, কারো জন্য কোনো ভালো ফলাফল নিয়ে আসেনি। সে বিষয়টা যেন আমরা সবাই বিবেচনা করি। যার যেটা কাজ, যার যেটা দায়িত্ব, সেটা যাতে সবাই পালন করে,’বলেন নাহিদ।
বিগত সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে জানিয়ে এনসিপি নেতা বলেন, আমলাতন্ত্র, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং তাদের দিয়ে মানবতাবিরোধী কাজ করানোর অভিযোগও রয়েছে। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান এই সময়ে এসে একটা বিচারের মধ্য দিয়ে যাবে এবং যারা অভিযুক্ত তাদেরকে শাস্তি দেবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
তিনি বলেন, গুমের অভিযোগ যেসব সেনা অফিসারের বিরুদ্ধে রয়েছে তাদের মধ্যে অনেকে গ্রেপ্তার হননি। তাদের অবস্থা কী সেটা কিন্তু আমরা জানি না। এই বিষয়গুলা সুস্পষ্ট করলে সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরও বেশি জনগণের কাছে আস্থার জায়গা পাবে। আমরা সেই আস্থার জায়গায় সেনাবাহিনীকে দেখতে চাই।
এসময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য