গবাদিপশুতে বাংলাদেশ এখন শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, এসব পশুর মাংস রপ্তানি করতেও সক্ষম। তাই দেশীয় খামারিদের কথা চিন্তা করে বছর দুয়েক আগে যেকোনো ধরনের গবাদিপশু আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না বিদেশি গরুর কারবারিদের। নানা কৌশলে বিদেশি গরু আনছেন তারা। আর প্রতিবছরই কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বাড়ে তাদের তৎপরতা।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনার কারণে গত বছর থেকে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও ঢুকছে বিদেশি গরু। এই কোরবানির ঈদ সামনে রেখে শুধু কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়েই প্রতিদিন আসছে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের নানা জাতের তিন-চার হাজার গরু। এর মধ্যে রয়েছে মাংসের জন্য বিখ্যাত ব্রাহমা জাতের গরুও। এ ছাড়া কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় গরু। এসব খবরে ক্ষতির আশঙ্কায় আছেন সাধারণ খামারিরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ রয়েছে। কোনোভাবেই বিদেশি গরু বৈধভাবে দেশে আনার নিয়ম নেই। তারপরও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উত্তরবঙ্গের কয়েকটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিনই ঢুকছে গরু।
টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডর সূত্র জানিয়েছে, গত এক বছর ধরে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু আনা হচ্ছে। শুধু টেকনাফের করুটুল সীমান্ত এলাকা দিয়েই প্রতিদিন তিন হাজারের মতো গরু আসছে বাংলাদেশে। কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে অবৈধভাবে এসব গরু আনা হচ্ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন দেশের খামারিরা।
নিউজবাংলার অনুসন্ধান ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, টেকনাফের আবু সৈয়দ মেম্বারসহ কয়েকজন স্থানীয় কারবারির ট্রলারে মিয়ানমার থেকে ব্রাহমাসহ নানা জাতের গরু আসছে। একেকটি ট্রলারে থাকে ২৫-৩০টি গরু। এসব গরুর জন্য কোটি কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহপরীর দ্বীপের এক খামারি জানান, আবু সৈয়দ মেম্বার ও মো. শহিদ এখন মিয়ানমার থেকে গরু আনছেন। কখনো রাতের আঁধারে, কখনো দিনের আলোতেই গরু আনা হয়। তাদের মতো আরও বেশ কয়েকজনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় খামারিরাসহ দেশের গরু ব্যবসায়ীরা।
অধিদপ্তর বলছে বন্ধ, কারবারিরা বলছেন কাগজপত্র আছে
টেকনাফের গরু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ মনির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক দিনে কিছু ব্রাহমা গরুসহ অন্যান্য জাতের গরু ঢুকেছে বলে শুনেছি। যারা এসব গরু এনেছে, তাদের নামেই এসব গরুর চালান, ভ্যাট হয়েছে। ওই সব চালান ও ভ্যাটের কপি জোগাড় করলেই বের হবে ওই সব গরু কারা কীভাবে এনেছে।’
মিয়ানমার থেকে গরু আনার কথা স্বীকার করেছেন টেকনাফের আবু সৈয়দ মেম্বার নিজেও। বৃহস্পতিবার এক প্রশ্নের জবাবে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই আড়াই থেকে তিন হাজার গরু আসছে। শুধু আমি না, অনেকেই আনছেন। কিন্তু আমাদের কাছে কাগজপত্র আছে, চালানও আছে ব্রাহমা গরুর ক্ষেত্রে। অন্য গরু কীভাবে আসছে, আমার জানা নেই। গত ৪০ বছর ধরেই এ সীমান্ত দিয়ে গরু আসে। এখনো আসছে।’
আরও পড়ুন: দেশি গরুতেই কোরবানি, বিদেশির প্রয়োজন নেই
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় খামারিদের কথা চিন্তা করে চলতি মাসের ৫ জুলাই টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে আমরা গবাদিপশু আমদানি বন্ধ করে দিই। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী আমাদের এই নির্দেশ জানতেন না। আবার অনেক ব্যবসায়ী গরুর জন্য মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের আগাম টাকা দিয়ে দিয়েছিলেন। এর কারণে একটা খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
‘যে কারণে যেসব ব্যবসায়ী আগাম টাকা দিয়ে মিয়ানমারের গরু অর্ডার করে রেখেছিলেন, আমরা শুধু তাদের গরু আনতে পাস দিয়েছি। তাদের গরু আনা হয়ে গেলে আমরা বিজিবিকে এই বর্ডার পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে বলব। তখন আর কোনো গরু দেশে আসবে না।’
বিদেশি গরু আসার খবরে ক্ষুব্ধ কুষ্টিয়ার প্রান্তিক খামারি সুমন খন্দকার। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা সারা বছর লালন-পালন করে গরু বড় করছি। আর সিন্ডিকেট করে কোরবানি সামনে রেখে থাইল্যান্ড থেকে গরু এনে আমাদের বাজার ধ্বংস করে দিচ্ছে। কীভাবে এসব গরু বাংলাদেশে আসছে, সেটি খতিয়ে দেখলে সব তথ্য বের হয়ে আসবে। আমরা যারা গরু পালনের ওপরই নির্ভরশীল, তাদের বড় উপকার হবে।’
গফুর আলী নামের আরেক খামারি বলেন, ‘ব্যাংক থকে ঋণ নিয়ে গরু পালন করে আমরা লস খাচ্ছি। আর কিছু ব্যক্তি গরু ক্রয়ের নামে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছেন।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. শেখ আজিজুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, বাংলাদেশ বর্তমানে গরু-ছাগল উৎপাদন তথা মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় পশু আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যাতে বাংলাদেশে পশু না ঢুকতে পারে, সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি জানান, তারপরও কিছু সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে গরু ঢোকানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু জব্দ করা হয়েছে। গরুগুলো আমেরিকা থেকে টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আনা হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘সরকারের কৃত্রিম প্রজনন নীতিমালার অধীনে বেসরকারিভাবে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে খামারিদের মাধ্যমে ব্রাহমা গরু আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, একটা সময় সরকারিভাবে ব্রাহমার সিমেন আনা হয়েছিল। কিন্তু সেটা দুধ উৎপাদনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তাই সেটা আমদানি বন্ধ।
‘তা ছাড়া দেশে নতুন শিক্ষিত উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি করোনার সময়ে বহু প্রবাসী দেশে ফিরে বেকারত্ব ঘোচাতে খামারি হয়েছেন। তারা নিজেদের প্রচেষ্টায় পর্যাপ্ত গবাদিপশু লালন-পালন করছেন। ফলে এই খাতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি রপ্তানিমুখী পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। তাই বর্তমানে সব ধরনের গবাদিপশু আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ।’
তিনি বলেন, ‘গত কোরবানিতে গবাদিপশুর চাহিদা ছিল ৯৬ লাখ। এ বছর আমরা আরও চার লাখ বাড়িয়ে এই চাহিদা ধরেছি ১ কোটি। এর বাইরে ২০ লাখ গবাদিপশু আছে কোরবানিযোগ্য।’
সারা বছর দেশে যে পরিমাণ গবাদিপশু জবাই হয়, তার ৬০ শতাংশ হয়ে থাকে কোরবানিতে। ২০১৮ সাল থেকে দেশ সম্পূর্ণ দেশীয় উৎস থেকে পাওয়া গবাদিপশু সরবরাহের মাধ্যমে কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে।
কোরবানিতে গবাদিপশুর সরবরাহ প্রস্তুতি নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর দেশে কোরবানিযোগ্য ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি পশু হাটে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার, ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭০ লাখ ৬৫ হাজার এবং অন্যান্য পশু রয়েছে ৪ হাজার ৭৬৫টি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হৃষ্টপুষ্টকৃত গরু-মহিষ সরবরাহ হবে ৩৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০টি, গৃহপালিত উৎস্য থেকে সরবরাহ মিলবে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ২০০টি। অন্যদিকে বাণিজ্যিকভাবে হৃষ্টপুষ্টকৃত ছাগল-ভেড়ার সরবরাহ মিলবে ২৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৮টি এবং চরাঞ্চলসহ সারা দেশে গৃহপালিত ছাগল-ভেড়া মিলবে ৪৯ লাখ ৯২ হাজার ২৫২টি।
প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সম্প্রতি জানিয়েছেন, দেশি গরুতেই পূরণ হবে কোরবানির পশুর চাহিদা। দেশেই পর্যাপ্ত পশু থাকায় কোনোভাবেই গবাদিপশু দেশের বাইরে থেকে আসবে না। তিনি বলেন, হাটগুলোতে পশুর সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনে পশু পরিবহনে স্পেশাল ট্রেন থাকবে। পশু বিক্রেতাদের নিরাপত্তায়ও রাস্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই কোরবানি নিশ্চিত করা হবে।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রস্তাবিত ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এই ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’
গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে প্রস্তাব তাতে একটা ইলেক্টোরাল কলেজ করা হবে। এবং প্রায় ওনাদের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০ হাজারের মতো ভোটার থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ এখানে ভোটার হবেন। এবং রাষ্ট্রপতিকে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে আগের মতোই একমত নয় বিএনপি।
এই কাউন্সিলের জবাবদিহি না থাকায় সমর্থন করে না বিএনপি। এই কাউন্সিলে আরেকটি ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করি আমরা।’
স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হলে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে, ফ্যাসিবাদ দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্য সাংবিধানিক পদ, সংস্থা স্বাধীন করতে পারলে সমস্যা থাকবে না।’
বিএনপি মনে করে সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল করা যেতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে তাদের যোগ করা যেতে পারে, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি মনে করে, দুদক ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।
কেরানীগঞ্জের শাক্তা ও তারানগর ইউনিয়নের বুক চিরে চলা ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়কের বেহাল দশায় নিত্যদিন ভোগান্তিতে পড়ছে হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়ে এখন গর্ত আর ধুলাবালি। সামান্য বৃষ্টিতে কাদায় যানবাহন আটকে যায়, আর শুকনো মৌসুমে উড়ে ধূলোর ঝড়।
রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। ছোট-বড় গর্তে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হন অনেক পথচারী। অন্যদিকে, যানবাহন চলাচলের অযোগ্য এই সড়কে প্রতিনিয়তই নষ্ট হয়ে পড়ে ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি। আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, মেকাইল মাদ্রাসা ও অগ্রখোলা কমিউনিটি হাসপাতালের সামনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে মাঝে মাঝেই উল্টে যায় যাত্রী বোঝাই যানবাহন ।
সড়কের করুণ অবস্থার কারণে অনেক চালক ও পথচারী এখন পাশের বেলনা, কলাতিয়া ও নয়াবাজার হয়ে বিকল্প রাস্তায় যাতায়াত করছেন। এতে সময়, অর্থ ও দুর্ভোগ বাড়ছে।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ ছাড়াও নবাবগঞ্জ, দোহার, সিরাজদিখানসহ দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ মোহাম্মদপুর হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। অথচ বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে সড়কটি।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটার অবস্থা এমন যে, অটোরিকশা সিএনজিতে ওঠা মানেই কোমর ভাঙা। মাঝে মাঝেই যানবাহন পড়ে মানুষ আহত হয়। স্কুলের বাচ্চারা পর্যন্ত ভয়ে এই রাস্তায় যেতে চায় না। কোন এমপি-মন্ত্রী একবার এই রাস্তা দিয়ে গেলে বুঝত কষ্টটা কেমন।
একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পণ্যবাহী ট্রাকচালক রাকিব হাওলাদার। তিনি বলেন, একবার গর্তে পড়লে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ট্রাকে থাকা জিনিসপত্র পড়ে যায়, এভাবে থাকলে এই রাস্তা দিয়ে আর চলাচল করা সম্ভব নয়। এটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সড়কটি ইতোমধ্যে ডিপিপিতে অনুমোদন পেয়েছে। তাই এখন সংস্কার করা হচ্ছেনা। বছরের শেষ দিকে ২০ ফুট প্রশস্ত করে এবং আরও শক্তিশালী করে কাজ শুরু হবে। তখন রাস্তাটি আরো টেকসই হবে।
এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, সংস্কার কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত অন্তত গর্ত ভরাট করে সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। নইলে প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
একটা ভাঙাচোরা বাইসাইকেলই তার ভরসা। এ সাইকেল চালিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের দুর্গম খাসিয়া পল্লীতে কাজ করে দুই-আড়াইশ টাকা রোজগার করে কিশোর তোফাজ্জল (১৪)। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫) এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। পরিবারে সে একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাবা হার্টের রোগী, বোন আয়েশা খাতুন (২৫) মানসিক ভারসাম্যহীন আর বয়োবৃদ্ধ দাদী সমিতা বিবি (৮২) দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী।
তোফাজ্জল কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিনি সকালে ভাঙাচোরা একটি সাইকেল নিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের খাসিয়া পল্লীতে কাজে যাই। সন্ধ্যায় ফিরি। যা রোজগার হয়, দুবেলাও খেতে পাইনা। এ দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই। প্রতিবেশী ফজল মিয়া, আবু শহীদ এ পরিবারের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, প্রকৃতই তারা খুব অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনজনই অসুস্থ। মাঝে মধ্যে আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
সরেজমিন তোফাজ্জলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ছোট্ট একটি ঘরে মেঝেয় জীর্ণ-শীর্ণ কাঁথায় শুয়ে আছেন সমিতা বিবি। অপুষ্টি আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ক্লান্ত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। যা বললেন বোঝা গেলো, ডালভাত খেয়ে ঈদের দিন পার করেছি। ক্ষিদের জ্বালায় রাতে ঘুম আসে না। একরত্তি নাতি আর কিইবা করবে। তবু যা করছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। চাল ডাল আনলে ওষুধ আনতে পারে না। তবু প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়। ঈদে চান্দে প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়। এইভাবেই টিকে আছি।
স্থানীয়দের সহযোগিতাই একমাত্র ভরসা। মানুষের সাহায্যে দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, যদি কেউ সাহায্যে না করে তাহলে না খেয়েই থাকতে হয়। তার বিলাপে চোখে জল চলে আসে। এ যেন দারিদ্র্যের এক করুণ চিত্র। এই অসহায় নারীর জীবন কাটছে অভাব আর কষ্টে। পা ভেঙে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। ছেলে আলী আহমেদও হার্টের রোগী। কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই ১৩/১৪ বছরের নাতি তোফাজ্জলের কাঁধেই সংসারের ভার। দুর্গম খাসিয়া পুঞ্জিতে কাজ করে দিনে আয় করে দুই-আড়াইশ টাকা মাত্র। এ টাকায় দুবেলা খাবার যোগানোই মুশকিল। তার ওপর অসুস্থ দাদি, বাবা আর মরার উপর খাঁড়ার ঘা মানসিক প্রতিবন্ধী বড় বোন আয়েশা খাতুন।
ইসলামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, একসময় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না। কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোফাজ্জলদের দুরাবস্থা জেনে অনেকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। তবে বয়োবৃদ্ধ সমিতা বিবি ও মানসিক প্রতিবন্ধী আয়েশা খাতুনের সুচিকিৎসা ও তোফাজ্জলদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যবস্থা জরুরি।
সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। প্রায় সাত-আট মাস কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় এতে তৃণমুলে বসবাসকারী অবহেলিত মানুষগুলো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। এমনটিই আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলা ও একটি প্রশাসনিক থানা এলাকায় ৪০টি ইউনিয়ন পরিবারকেন্দ্র এবং মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সিভিল সার্জন কর্তৃক সাতটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র পরিচালিত হয় । বাকিগুলো পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে।
সিভিল সার্জন কর্তৃক পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় তিনটি, লোহাগড়া উপজেলায় তিনটি এবং কালিয়া উপজেলায় একটি। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসাসেবার ওপর গ্রামাঞ্চলের নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষগুলো সুস্থ ও সবলভাবে বেচে থাকার জন্য অনেকটিই নির্ভর করে। এসব কেন্দ্রগুলোতে সরকারি ওষুধ সরবরাহ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ । কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সংকটের কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ।
গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার জেলার কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসাসেবা নিতে আসা গ্রামের অনেক মহিলা চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসাপত্র নিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তাদের মুখখানা ছিল মলিন । আবার অনেক কেন্দ্র ছিল ফাকা। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার একটি কক্ষে বসে গল্পে মেতে আছেন বন্ধুদের সঙ্গে। গত মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মো.আলাউদ্দীন কেন্দ্রের একটি কক্ষে চুপচাপ বসে আছেন । জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে আমাদের এখানে ২৫ রকমের ওষুধ বরাদ্দ ছিল। তখন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিশু-নারী ও পুরুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে জড়ো হতেন। গত সাত-আট মাস হলো কোনো ওষুধ সরবরাহ নেই । ফলে কেন্দ্রে রোগীদের তেমন ভিড়ও নেই। শুধু পরিবার পরিকল্পনা কিছু সামগ্রী আছে তাই দিয়ে সেবা চলছে। তিনি বলেন, এখানে যেসব রোগী আসে তার বেশিরভাগ হচ্ছে শিশু ও নারী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগীকে সেবা দিয়েছি। বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি হয় না।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হলে তৃণমুলে সাধারণ মানুষ বিপদে এবং স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো.রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। না হলে গ্রামের কৃষক শ্রেণির মানুষের জীবনের ছন্দ পতন ঘটবে। গতকাল বুধবার দুপুরে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কুমড়ি গ্রাম থেকে ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসেছেন সালমা আক্তার । তার কোলের শিশুর সর্দি-কাশি দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে এহেনে ডাক্তার দেহালি ওষুধ দেতো। এহোনে দেচ্ছে না । কাগজে লেহে দিলি আমাগে বাজারের দুয়ানতে কিনে নিতি হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। অত টায়া পয়সা নাই আমাগে। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকাররে কচ্ছি আগের মতো আমাগে মাগনা (বিনা টাকায়) ওষুধ দিতি হবে।’
কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের মুলশ্রী গ্রামের দীপ্তি রানী মণ্ডল বুকে ব্যথা অনুভব করলে নিজের ওষুধ নিতে এসেছেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘এহেনের ডাক্তার সাদা কাগজে কী যেন লেহে দেলো। আর কলো এই কাগজ নিয়ে বাজারের দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে । কিরাম কতা হলো কওদিন বাপু । আমাগে যদি দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে তালি তুমরা এহানে বসে রইছো ক্যান ? আগেতো এমন কতা শুনিনি।’
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক আলিফ নূর বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় সাত থেকে আট মাস। যে কারণে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি দাবি করেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বন্ধের মধ্যেও খোলা ছিল । ওষুধ না পেলেও চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল না । যারা গর্ভবতী মা তারা চেকআপের জন্য কেন্দ্রে আসছেন । তাদের প্রয়োজনীয় সেবাও দেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সংকট মোচন হবে ।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।
এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য