× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

অনুসন্ধান
ইভ্যালির গোপন খবর
google_news print-icon

ইভ্যালির গোপন খবর

ইভ্যালির-গোপন-খবর
‘একবার ভাবুন তো ৪০ হাজার টাকার ফ্রিজ ১৫ হাজার টাকায় কীভাবে দেয়া সম্ভব? এই অফার দেখে পাবলিকের মাথা তো পুরাই নষ্ট। অর্ডার পড়ল দুই হাজার জনের। তার মানে ইভ্যালির কাছে জমা হলো ৩ কোটি টাকা (২০০০ গুণ ১৫০০০)। কিন্তু তিন মাসেও ওই দুই হাজার লোককে পণ্য দেয়া হয় না। এই তিন মাসে ওই ৩ কোটি টাকা অন্য কোনো খাতে খাটিয়ে আয় করে ইভ্যালি।’

দেশে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু ই-কমার্স সাইট হয়েছে, যেগুলো গ্রাহকদের অবিশ্বাস্য ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে। তবে টাকা নিয়েও পণ্য সরবরাহে বারবার সময় নেয়ার অভিযোগ আছে। তাদের ব্যবসার কৌশলও স্পষ্ট নয়। এ কারণে নানা সন্দেহ-সংশয় আছে মানুষের মধ্যে।

এর মধ্যেই ই-কমার্স সাইট ইভ্যালিকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তদন্ত চালিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি এক টাকা আয় করতে সাড়ে তিন টাকার বেশি ব্যয় করে। তাদের সম্পদের তুলনায় দেনা ছয় গুণ। ফলে তারা এই টাকা আদৌ পরিশোধ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

এমন পরিস্থিতিতে নিউজবাংলা কথা বলেছে আলোচিত এই ই-কমার্স সাইটের তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইভ্যালির লোক ঠকানোর গোপন কৌশল জানিয়েছেন তারা।

তারা বলছেন, ইভ্যালির নিজস্ব মূলধন ছিল খুবই কম। নেই নিজস্ব কোনো পণ্য। তারপরও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যের ওপর অবিশ্বাস্য সব ছাড় দিয়ে আসছে, যে দামে মূল কোম্পানিও পণ্য বিক্রির চিন্তা করতে পারে না।

এ ছাড়া তারকাদের দিয়ে ব্র্যান্ডিং করছে; দামি দামি পণ্য উপহার দিয়ে প্রশংসাসূচক পোস্ট দেয়াচ্ছে। বিষয়টা এমন যেন তারকারা পণ্যটি ইভ্যালি থেকে কিনেছেন এবং কোনো রকম ঝুটঝামেলা ছাড়াই পেয়েছেন।

মূলত এভাবে ইভ্যালিকে সাধারণ মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। ক্রেতা ধরতে নিজেদের কর্মী দিয়ে ফেইক আইডি খুলে পণ্যের রিভিউ করায়। রিভিউ দেয়ায় ‘পেইড’ লোক দিয়েও, যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে।

আবার গণমাধ্যমকর্মীরা যাতে কোনো সমালোচনা না করেন সেদিকেও আছে তাদের বিশেষ নজর। এভাবেই গত আড়াই বছর ধরে ব্যবসা করছে ইভ্যালি। কিন্তু গ্রাহক বা পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান- কোনো পক্ষের সঙ্গেই কথা রাখছে না, তাদের টাকা আটকে রাখছে মাসের পর মাস। তাদের কাছে দেনা রেখে সেই টাকা দিয়েই চালু করছে নতুন নতুন ব্যবসা। কিনছে কোম্পানিও।

পুরো বিষয়টাকে ‘কই মাছের তেল দিয়ে ইলিশ মাছ ভাজা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন ইভ্যালির এই কর্মকর্তারা।

তাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। সাড়া দিয়েছেন শুধু ইভ্যালির হেড অফ পিআর, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন শবনম ফারিয়া। কথা হয়েছে ইভ্যালির প্রশংসা করে পোস্ট দেয়া ইউটিউবার সালমান মুক্তাদিরের সঙ্গেও।

দুই টাকার জিনিস দেড় টাকায়: ব্যবসা কোথায়, কোম্পানি চলছে কীভাবে?

ইভ্যালির ওই তিন কর্মকর্তার কাছে নিউজবাংলার প্রশ্ন ছিল- ধরেন, আপনারা দুই টাকার জিনিস দেড় টাকায় বিক্রি করেন। এটা কীভাবে সম্ভব? ভর্তুকির টাকাটাই বা আসছে কোথা থেকে?

জবাবে তাদের একজন উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘একবার ভাবুন তো ৪০ হাজার টাকার ফ্রিজ ১৫ হাজার টাকায় কীভাবে দেয়া সম্ভব? এই অফার দেখে পাবলিকের মাথা তো পুরাই নষ্ট। অর্ডার পড়ল দুই হাজার জনের। তার মানে ইভ্যালির কাছে জমা হলো ৩ কোটি টাকা (২০০০ গুণ ১৫০০০)। কিন্তু তিন মাসেও ওই দুই হাজার লোককে পণ্য দেয়া হয় না। এই তিন মাসে ওই ৩ কোটি টাকা অন্য কোনো খাতে খাটিয়ে আয় করে ইভ্যালি।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ইভ্যালি এভাবে যে ৩ কোটি টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে তোলে, তা ব্যাংকে রেখে ৫% হারেও যদি সুদ নেয়, তাতেও মাসে আয় হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ৩ মাসে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা৷

‘এদিকে প্রতিষ্ঠানের ওপর যাতে চাপ না পড়ে সে জন্য ২০০০ জনের মধ্যে ১০০ জনের জন্য ফ্রিজ কেনা হয় ৩৫ হাজার টাকা দরে। তাহলে খরচ হলো ৩৫ লাখ টাকা, হাতে থাকল ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এখন যে ১০০ ফ্রিজ ডেলিভারি দেয়া হলো, যারা পেলেন তারা তো খুশিতে আত্মহারা। উৎফুল্ল হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দেন, আমি পেয়েছি, আমি পেয়েছি। আর যারা পেলেন না তারা ভাবতে থাকলেন আরও কিছুদিন অপেক্ষা করি। যেহেতু অনেকেই পেয়েছেন, তাই আমিও পাব। কিন্তু সেই পাওয়াটা ইভ্যালির ওয়েবসাইটে ঝুলেই থাকে। এ রকম অভিযোগ বাড়তেই থাকে।’

ইভ্যালির গোপন খবর
ইভ্যালির ফেসবুক পেজে গ্রাহকদের অভিযোগ

৪৫ কার্যদিবসের নামে ‘নয়ছয়’

এই ই-কমার্স সাইট ৪৫ কর্মদিবসে পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলেও সে প্রতিশ্রুতি রাখে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এটা কেন হচ্ছে?

এ প্রসঙ্গে ইভ্যালির এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি একটা ইনভয়েস নম্বর (পণ্য কেনার আইডি নম্বর) অ্যাডমিন প্যানেল দিলে বুঝতে পারি কার প্রোডাক্টটা কোন প্রসিডিউরে আছে। কাস্টমাররা ক্লেইম করেছেন কি না, প্রোডাক্ট পাইছেন কি না, আপডেটটা কী? বা ৪৫ কার্যদিবস হয়ে গেছে, প্রোডাক্টটা কেন ডেলিভারি হয় নাই ইত্যাদি বিষয় দেখা যায়।

‘এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে দেখানো হয়, যেগুলো ৪৫ দিন পার হয়ে গেছে সে ক্ষেত্রে পিকড দেখায়। এটা হলো পিও (প্রোডাক্ট অর্ডার) সেন্ট টু সেলার। তার মানে তারা বোঝায় অর্ডারটা সেলারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে ইভ্যালি। কিন্তু আসলে দেয়নি।’

ওই তিন কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, ইভ্যালি বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করে ‘দালালের মতো’।

উদাহরণ দিয়ে তাদের একজন বলেন, ‘ধরেন কিয়াম নামে একটা কোম্পানি আছে। ওরা ট্রিমার, ফ্রাইপ্যান ইত্যাদি বিক্রি করে। ওদের একটা প্রোডাক্ট আপনি অর্ডার করেছেন। সে প্রোডাক্টটা ৪৫ দিন পার হওয়ার পর ইভ্যালির প্যানেলে দেখাচ্ছে পিকড। অথচ ইভ্যালি থেকে পারচেজ অর্ডার পাঠানো হয় নাই।

‘এখন কাস্টমার তো ভাবছে আমার প্রোডাক্টট তো সেলারের হাতে, সেলার আমাকে দিচ্ছে না কেন? ইভ্যালির কাজ তো ইভ্যালি করে দিছে। কাস্টমার ইভ্যালির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তখন ইভ্যালি বলে আপনার পারচেজ অর্ডার সেলারের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সেলার আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রোডাক্ট দিয়ে দেবে। অথচ দুই মাস ছয় মাস পার হয়ে যায়, সেলার ওই কাস্টমারের সঙ্গে আর যোগাযোগ করে না।’

তাহলে আসল ঘটনা কী জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একটা উদাহরণ দেই। আমি জেনেছি, কিয়াম ৭০ লাখ টাকা পাবে ইভ্যালির কাছে। এখন একটা কোম্পানি যখন আপনার কাছে ৭০ লাখ টাকা পায়, তখন আপনি নতুন ২০ লাখ টাকার পণ্য অর্ডার করলে তারা কি আর পণ্য দেবে?’

তিনি বলেন, ‘এদিকে কাস্টমার নানা ধরনের রিভিউ দেখে ভাবে, একই প্রক্রিয়ায় অর্ডার করে অনেকে তো প্রোডাক্ট পাইছে, আমি পাচ্ছি না কেন? আবার ইভ্যালি বলে, তারা পারচেজ অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। তাহলে দোষটা নিশ্চয়ই সেলারের। এভাবে বড় একটা শুভংকরের ফাঁকি চলে। এভাবে ডেট ওভার হয়, আবার ইভ্যালি দেখায় অনটাইমে অর্থাৎ ৪৫ দিনেই পিকড। অথচ কাস্টমার প্রোডাক্ট পায় না।’

ইভ্যালির গোপন খবর
ইভ্যালির ফেসবুক পেজে গ্রাহকদের অভিযোগ

পিকড’ দেখিয়ে সান্ত্বনা

ইভ্যালির প্যানেলে পিকড দেখালে তাদের দায়িত্ব বা কাজ শেষ হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয় বলে জানান এক কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘ইভ্যালির কিছু প্রসেস আছে। যেমন প্রথমে প্রসেসিং, তারপর শিফটিং, সবশেষ পিকড। এই পিকড মানে হলো, ইভ্যালির দায়িত্ব বা কাজ শেষ। ৪৫ দিন হয়ে গেলে ইভ্যালি অর্ডারটা সেলারের কাছে পাঠিয়ে দেবে, সেলার কুরিয়ারের কাছে দিয়ে দেবে। কিন্তু ইভ্যালি এখানে টাকা পরিশোধ না করেই বেশির ভাগ সময় কাস্টমারকে বোঝায় তাদের দোষ নেই তারা পারচেজ অর্ডার দিয়ে দিছে। সেলার প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিচ্ছে না। অপেক্ষা করেন ডেলিভারি দিয়ে দেবে। এভাবে দিনের পর দিন পার করতে থাকে।’

ইভ্যালি কেন এমন করে- নিউজবাংলার এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা তারা করে কারণ ওই যে টাকা। কাস্টমার অর্ডার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকা পায় ইভ্যালি। ওটা নিয়ে তারা কাজে লাগায়। কাস্টমারকে যা তা বোঝানো যায়। ইভ্যালি ক্লায়েন্টকে বোঝায়, আমরা তো সবকিছু করে দিছি। সেলার কেন প্রোডাক্ট দিচ্ছে না, ওদের মনে হয় সাপ্লাই নাই। এভাবে নানান কিছু বোঝায়। কারণ কাস্টমার তো ফান্দে। অনেক সময় অপেক্ষা ছাড়া উপায় কী?

কৌশলে নগদ টাকা বের করে অন্য জায়গায় বিনিয়োগ

এ প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দিয়ে ইভ্যালির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সম্প্রতি দেখলাম সুলতান’স ডাইন ইভ্যালির কাছে কয়েক লাখ টাকা পায়। কাস্টমার যখন ইভ্যালির মাধ্যমে অর্ডার করেন তখন ইভ্যালি অর্ডারের টাকাটা পায়। সুলতান’স ডাইন কিন্তু প্রোডাক্ট দিয়ে দিচ্ছে। কারণ তারা হয়তো তাদের সুনামের কথা চিন্তা করেই খাবার দিয়ে দেয়। এভাবে ইভ্যালির কাছে দিনের পর দিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের টাকা পড়ে থাকছে। ইভ্যালি কৌশলে ঋণগ্রস্ত থেকে নগদ টাকা বের করে তা অন্য খাতে ইনভেস্ট করে।’

ইভ্যালির কাছে পাওনার বিষয়ে জানতে নিউজবাংলা কথা বলেছে সুলতান’স ডাইনের কাস্টমার সার্ভিসে কর্মরত ফাতেমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ইভ্যালির সঙ্গে সুলতান ডাইনের কোনো ব্যবসা নেই। আমাদের কর্তৃপক্ষ সেটা স্টপ করে দিয়েছে। ইভ্যালির ঋণ আছে। তবে এ বিষয়টা আমরা বলতে চাচ্ছি না।’

ইভ্যালির গোপন খবর
গাড়ি পেয়ে সালমান মুক্তাদিরের ফেসবুক পোস্ট

কই মাছের তেল দিয়ে ইলিশ মাছ ভাজা’

অভিযোগ আছে, কোনো পণ্যের জন্য গ্রাহক ইভ্যালিকে যে টাকা দেন, সেই টাকা চাইলেও আর ফেরত পান না। বাধ্য হয়ে প্রয়োজনীয় পণ্যের বদলে ‘আজেবাজে’ কোনো পণ্য কিনতে হয় টাকা উসুল করতে।

গ্রাহকদের টাকা ফেরত না পাওয়ার বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কারণ একটা অ্যাকাউন্ট হয়। সেটা হলো ইভ্যালি ব্যালান্স বা ই-ওয়ালেট। এ ব্যালান্স কাস্টমার চাইলেই তুলতে পারেন না। ধরেন, কোনো কাস্টমার ৭০ হাজার টাকার একটা ফ্রিজ অর্ডার করলেন। কাস্টমার নানা ভোগান্তির শিকার হয়ে অর্ডার ক্যানসেল করুক আর যাই করুক, রিফান্ড অন্য ইস্যু। যদি ইভ্যালির কারসাজিতে পড়ে সেলার আপনাকে বলে দেয় মাল ডেলিভারি দিতে পারবে না, তখন কাস্টমার বিরক্ত হয়ে যদি বলে দেয় অর্ডার ক্যানসেল, সে ক্ষেত্রে ব্যালেন্সটা ইভ্যালির হয়ে গেল।

‘টাকা তো ফেরত পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেই সময় বাধ্য হয়ে কাস্টমাররা দুইটা মগ, জুতা-স্যান্ডেল হাবিজাবি কেনেন, যতটুকু পারে কিছু টাকা উসুল করার চেষ্টা করেন। অথচ মূল টাকাও ফেরত পাইল না, আবার প্রয়োজনীয় জিনিসটাও পাইল না। স্রেফ একটা চিটিংবাজির মধ্যে পড়ল কাস্টমার।’

তিনি বলেন, ‘বুঝলাম যে এটা ই-কমার্সের বিজনেস। কিন্তু সেলারকে টাকা না দিয়ে তাদের কাছে দেনা, আবার কাস্টমারের কাছ থেকে নগদ টাকা বুঝে নেয়া- এটা আবার কেমন ব্যবসা? লোভনীয় অফারের সুযোগ দিয়ে কাস্টমার ও কোম্পানিকে ঠকানো ছাড়া আর কিছুই না। আমার মনে হয়েছে, বিষয়টা কই মাছের তেলে কই মাছ ভাজা নয়, যেন ইলিশ মাছ ভাজা।’

‘প্রতারণা তো প্রতারণাই, আইন আগে থেকেই আছে’

এক পণ্যের বদলে অন্য পণ্য দেয়ার বিষয়টি প্রতারণার মধ্যে পড়ে এবং প্রচলিত আইনেই (দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায়) প্রতারণার জন্য শাস্তি আছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

সোমবার নিউজবাংলার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতারণার যে আইন আছে, সেখানে সংজ্ঞার মধ্যেই আছে যে, কোনো ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী একটা জিনিস দেয়ার কথা বলে সেটি না দিয়ে অন্য কোনো কিছু নিতে বাধ্য করে বা প্রতারণা করে তাহলে ফৌজদারি আইনে মামলা হবে। যেকোনো জায়গায় মামলা করতে পারবে প্রতারণার শিকার ব্যক্তি। প্রতারণা মামলায় সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছরের কারাদণ্ড। আছে জরিমানার বিধানও।

সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, ‘তবে সম্প্রতি ই-কমার্স নিয়ে একটা আইন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক কোনো পণ্য বুঝে পাওয়ার আগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান টাকা পাবে না, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকাটা পাবে। এ আইন বাস্তবায়ন হলে গ্রাহক প্রতারণার শিকার হলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান টাকা পাবে না।

‘সে ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রতারণার সুযোগ কমবে। তা ছাড়া এ আইনের আগেও তো প্রতারণার মামলার সুযোগ আছে। প্রতারণা তো প্রতারণাই। প্রতারণা বা চিটিংয়ের বিষয়ে আইন আগে থেকেই আছে।’

পেইড রিভিউ

প্রতিষ্ঠানটির এই কর্মকর্তারা জানান, সবচেয়ে বড় প্রতারণার বিষয়টা হলো, ইভ্যালির পেজে যেসব রিভিউ দেয়া হয় তার সবই পেইড রিভিউ। ওদের একটা গ্রুপ আছে, সেই গ্রুপের নাম ইভ্যালি হেল্প অফার অ্যান্ড রিভিউ। সেখানে সাড়ে ৭ লাখ সদস্য। ওটার মধ্যে ইভ্যালির কর্মীরা রিপ্লাই দেন ফেইক আইডি খুলে। ওখানকার ৯৮ শতাংশ পোস্ট হলো পেইড পোস্ট।

তাদের একজন বলেন, ‘অনেক সময় আমাদেরকে অর্থাৎ ইভ্যালির কর্মীদের ব্যক্তিগত আইডি দিয়ে পোস্ট দেয়ানো হয় যে, ইভ্যালি থেকে যথাসময়ের মধ্যে আমার প্রোডাক্টটি বুঝে পেলাম। আজ আমি খুব খুশি। এমন পোস্ট দেয়া হয়। সেগুলোতে অনেক ভিউ হয়। নিজেদের বানানো পোস্ট। এসব মেইনটেইন করার জন্য ইভ্যালিতে ১২৫ কর্মী কাজ করেন। এসব ফেইক পোস্ট রিপ্লাই শুধু মানুষকে ইভ্যালির দিকে টানার জন্য। কারণ বেশির ভাগ অরিজিনাল রিভিউয়ে থাকে সমালোচনা।’

ইভ্যালির গোপন খবর
গাড়ি পেয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের ফেসবুক পোস্ট

গিফটের বিনিময়ে পোস্টের ডিল

তারা জানান, ইভ্যালির সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার আরেক কৌশল তারকাদের উপহার দিয়ে পোস্ট দেয়ানো, যেগুলো আসলে পেইড পোস্ট।

উদাহরণ দিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেমন এর আগে ইউটিউবার সালমান মুক্তাদির আর ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান যে পোস্ট দিয়েছিলেন ইভ্যালিতে, সেটা ছিল পেইড পোস্ট। তারা তাদের পেজে পোস্ট লিখেছিলেন, আমি খুব অল্প সময়ে পেয়ে গেছি, অন টাইমে পেয়ে গেছি, ধন্যবাদ ইভ্যালি। তাদের ইনস্টাগ্রাম আর ফেসবুকে এগুলো আছে।’

সালমান মুক্তাদির ও মুস্তাফিজুর রহমান আসলে ইভ্যালি থেকে মোটরসাইকেল ক্রয় করেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের মোটরবাইক গিফট করে পোস্ট দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল, যাতে সবাই আকৃষ্ট হয়। এই সুযোগে বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা জড়ো করতে পারে ইভ্যালি। মানুষ তো আর এসব পেইড পোস্টের হিসাব বুঝবে না।

‘তার মানে কিন্তু ভিআইপিদের সঙ্গে সঙ্গে পণ্য দেয়া, বিষয়টা এমন না। ডিল হয় যে, আমরা তোমাকে এই গিফট দেব, পরিবর্তে আপনার ফেসবুকে ইভ্যালি থেকে প্রোডাক্টটি পেয়েছেন- এমন একটি পোস্ট দিতে হবে। এভাবে পাবলিকের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সালমান মুক্তাদির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বাইক পেয়েছি। কিন্তু ইভ্যালির সঙ্গে আমার কোনো ডিল নেই। ইভ্যালি থেকে বাইক যে প্রক্রিয়ায় কিনতে হয়, সেটা আমার মেইনটেইন করতে হয়নি। এসব ক্ষেত্রে আমরা নিজের নাম-ফোন নম্বর ব্যবহার করি না। তাই ও রকম চালান নেই।’

নিউজবাংলা কথা বলার চেষ্টা করেছে ইভ্যালির বাইক নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম বোলার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে।

গত ২৮ জুন পাঁচবার তার নম্বরে ফোন করা হয়। এতে সাড়া না পেয়ে কয়েক ঘণ্টা পর নিউজবাংলার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এসএমএসও করা হয় তাকে। সবশেষ খুদেবার্তা পাঠানো হয় তার হোয়াটসঅ্যাপে। বলা হয়, ‘আপনার ফেসবুক পেজে ইভ্যালি বাইক সম্পর্কিত একটা পোস্ট আছে। সেটা উপহার পেয়েছেন কি না?’ এসব প্রশ্ন তিনি দেখলেও সাড়া দেননি এই তারকা ক্রিকেটার।

সাংবাদিকদের জন্য আলাদা তালিকা

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাংবাদিকদের জন্য আলাদা তালিকা রয়েছে। তালিকায় থাকা সাংবাদিকরা অফারে কোনো কিছু অর্ডার করলে ৪৫ কর্মদিবসের আগেই প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিয়ে দেয়া হয়, যাতে নেগেটিভ কোনো নিউজ না হয়।

বিষয়টি দেখভালের জন্য একটা টিম রয়েছে। টিমটি বিভিন্ন হাউসের যেসব সাংবাদিক ইভ্যালির কাস্টমার তাদের নির্ধারিত সময়ের আগেই সার্ভিস দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।

এ বিষয়ে জানতে রোববার বিকেলে নিউজবাংলা কথা বলেছে ইভ্যালির হেড অফ পিআর, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন শবনম ফারিয়ার সঙ্গে।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যেহেতু পিআর ডিপার্টমেন্টে আমি কাজ করি, যারা জার্নালিস্ট আছে, তারা আমার লোক। আমার সব কাজ যেহেতু সংবাদমাধ্যমে হয়, আমার কাছে এ রকম একটা লিস্ট আছে। সেখানে শুধু সাংবাদিক না, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের মার্কেটিংয়ের লোকজনের নামও আছে।

‘এই লিস্টের গ্রাহকদের পণ্য আমি জরুরি ভিত্তিতে পাঠিয়ে দেই। সাইক্লোন অফারের ক্ষেত্রেও আমি এই গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ, অনেকেই ডাউট করছে, সাইক্লোন অফ হয়ে গিয়েছে, এখন আমাদের পণ্য আদৌ পাব কি না- এ রকম একটা ডাউট সাধারণ মানুষের মধ্যে হচ্ছে। এটাকে আমি স্বাভাবিক মনে করি।’

সাংবাদিকদের পণ্য সরবরাহ দ্রুত হলেও হাজার হাজার সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছে কেন- জানতে চাইলে শবনম ফারিয়া বলেন, ‘এই বিষয়টা আমার ডিপার্টমেন্ট না। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

৫ লাখের মোটরসাইকেল ৩ লাখে কীভাবে

ইভ্যালির ওই তিন কর্মকর্তা জানান, মোটরবাইকের ক্ষেত্রে যেটা বলা হয়ে থাকে এত কম টাকায় বাইক দেয় কীভাবে? একটা ৫ লাখ টাকার বাইক ৩ লাখ টাকায় কীভাবে বিক্রি করে? যেখানে ওই বাইকটার দাম আসলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা।

এ ক্ষেত্রে ইভ্যালি এভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে যে তারা একসঙ্গে অনেক বাইক আনে। তাদের ওয়্যারহাউস আছে। সুতরাং তাদের বাইকের দাম কম পড়ে, কম টাকায় দিতে পারে। কিন্তু আসল কথা হলো বাইকের যন্ত্রপাতির তো মিনিমাম একটা মূল্য আছে, ৪ লাখ ২০ হাজার। তার চেয়ে কম দামে কীভাবে ইভ্যালি বাইক বিক্রি করতে পারে?

ঘাটতির টাকা কীভাবে ম্যানেজ করে

কর্মকর্তাদের একজন বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে ইভ্যালি এই ঘাটতির টাকা কীভাবে ম্যানেজ করে? এ ক্ষেত্রে তারা চালাকি করে যে, তারা বাইকের জন্য যে টাকা কাস্টমারের কাছ থেকে অ্যাডভ্যান্স নেয়, সেই অ্যাডভান্সের টাকাটা অন্যভাবে অন্য বিজনেসে বিনিয়োগ করে। সেটা তারা কাউকে বলে না বা প্রকাশ করে নাই এখন পর্যন্ত।’

গ্রাহকের টাকায় ৬ মাসে ৬ কোম্পানি কেনার চিন্তা

কাস্টমারদের এসব টাকায় সম্প্রতি তারা ফ্লাইট এক্সপার্ট নামে একটা ট্রাভেল এজেন্সি কিনেছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি জেনেছি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে তারা আরও ছয়টি কোম্পানি কিনবে। যতটুকু শুনেছি, এগুলোর মধ্যে ই-হেলথ, ই-এগ্রো, ই-ফার্মা রয়েছে।

‘আমার জানামতে, ৬০ হাজারের মতো অর্ডার ঝুলে আছে ইভ্যালিতে। এর মধ্যে তিন হাজার মানুষের অর্ডার ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এক বছরের বেশি সময়, যেগুলো দেড় মাসে ডেলিভারি দেয়ার কথা ছিল। এদের বেশির ভাগের অর্ডার প্রথম ছয় মাস ঝুলিয়ে রাখা হয় সেলারের কাছে প্রোডাক্ট নাই বলে। বাকি ছয় মাস পার করেছে রিফান্ডের কথা বলে। কিন্তু কোনো কিছুই হয় নাই।’

জাস্ট আইওয়াশ’

এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই যে ইভ্যালির প্রধান মাঝে মাঝেই বলেন, আমরা একটা স্টার্টআপ কোম্পানি। কোম্পানির বয়স আড়াই বছর। এই সময়ের মধ্যে আমাদের এমপ্লয়ি ১ হাজার ২০০ জন। এসব কথা জাস্ট আইওয়াশ।

‘যেমন ইভ্যালির একটা ডিপার্টমেন্ট আছে, সোস্যাল কমিউনিকেশনস। তাদের কাজ হলো ফেসবুকে রিপ্লাই করা, মেইলে রিপ্লাই করা এসব। এখানে এখন মোট ১৬০ জন কাজ করেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আইওয়াশটা এ রকম যে, আমি ১ হাজার ২০০ এমপ্লয়ি নিয়োগ দিছি। আমি একটা স্টার্টআপ কোম্পানি। তারা কোনো করপোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি পালন করতেছে না, ট্যাক্সের হিসাবও দেয় না। তাছাড়া তারা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেক্টরে স্পনসর করে, এটাও একটা আইওয়াশ। বড় বড় মানুষের সঙ্গে অ্যাটাচ হয়ে পাবলিককে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে- এটাও প্রতারণারই কৌশল।’

ডু শেয়ার’

ইভ্যালির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইভ্যালিতে যেসব কর্মী কাজ করে তারা তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কীভাবে ব্যবহার করবে সে ক্ষেত্রে একটা নীতিমালা বেঁধে দিয়েছে ইভ্যালি। শুধু পজিটিভ পোস্ট করার জন্য বাধ্য করা হয়।

‘হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের গ্রুপ আছে, সেখানে তারা পোস্ট লিখে দিয়ে বলে, ডু শেয়ার। শেয়ার করার পর হোয়াটসঅ্যাপে লিখতে হয়, ডান। এটাই হলো ইভ্যালির সিস্টেম।’

এ প্রসঙ্গে আরেক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা কর্মীদের বোঝায় যে নেগেটিভ কথা হবেই। ওটা ভালো। মাঝে ইভ্যালির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছিল। অফিসের কর্মীদের তখন বোঝানো হয়, সরকারকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছে ইভ্যালি নিজেই। পরে ব্যাংক হিসাব খুলে দেয়া হলে সেটা ক্যাশ করে। বলা হয়, কোনো ঘাপলা না পেয়ে সরকার ছেড়ে দিয়েছে। যেহেতু সরকার ভেরিফাই করে দিছে, সাধারণ মানুষ ভাববে ইভ্যালি ভাগবে না।’

পুরো বিষয় নিয়ে কথা বলতে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কোনোভাবেই তিনি সাড়া দেননি।

গত ২৮ জুন দুটি মোবাইল নম্বরেই বারবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি তিনি। একই দিন নিউজবাংলার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এসএমএস পাঠানো হয় তার হোয়াটসঅ্যাপে। তা দেখেও কোনো উত্তর দেননি ইভ্যালির এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

ইভ্যালির গোপন খবর
ইভ্যালির প্রধান কার্যালয় রাজধানীর ধানমন্ডির এই ভবনে। সম্প্রতি এই অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি কোনো কর্মকর্তাকে। ছবি: নিউজবাংলা

এরপর ৩০ জুন সকালে ইভ্যালির ধানমন্ডির অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি রাসেলসহ কোনো কর্মকর্তাকে। চারজন নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন পুরো অফিসে। তারা জানান, গত ২৭ জুন থেকে কোনো কর্মকর্তা অফিসে আসছেন না। নিরাপত্তা প্রহরীরা জানান, প্রতিদিন বহু মানুষ অভিযোগ নিয়ে আসছিল অফিসে। এত লোকজন আসার কারণে করোনা ছড়াতে পারে, সে জন্য অফিস আগেই বন্ধ রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ ৩ জুলাই তার হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকটি প্রশ্ন পাঠায় নিউজবাংলা। সেগুলো তিনি দেখলেও কোনো জবাব দেননি।

প্রশ্নগুলো হলো

১. ইভ্যালির কাছে কতগুলো প্রতিষ্ঠান টাকা পায়? আপনাদের দেনার পরিমাণ কত?

২. জানা গেছে, আগামী ৬ মাসে আপনারা নতুন ৬টি প্রতিষ্ঠান আনছেন। কতটুকু সত্য?

৩. ইভ্যালির কাছে এখন পর্যন্ত কতজন পণ্য অর্ডার করেছেন?

৪. গ্রাহক ও পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ৩৫০ কোটি টাকা কীভাবে ফেরত দিবে ইভ্যালি?

৫. অনেকে আশঙ্কা করছে, ইভ্যালি গ্রাহক ও পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের শত শত কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাবে। আসলেই কি তাই?

আরও পড়ুন:
এবার ইভ্যালির টি১০ ক্যাম্পেইন
ইভ্যালিতে কেনা যাবে এবিএসের ক্যাবল

মন্তব্য

আরও পড়ুন

অনুসন্ধান
Most of the houses in the Teknaf shelter project are being rented

টেকনাফে আশ্রয়ণের অধিকাংশ ঘরে চলছে ভাড়া-বাণিজ্য

টেকনাফে আশ্রয়ণের অধিকাংশ ঘরে চলছে ভাড়া-বাণিজ্য টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নে নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০টি ঘরের সাতটিই বরাদ্দ পেয়েছেন সচ্ছল ব্যক্তিরা। ছবি: নিউজবাংলা
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নে নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক বাসিন্দা জানান, এখানে ১০টি ঘরের মধ্যে মাত্র তিনটিতে অসচ্ছল উপকারভোগীরা বসবাস করেন। বাকি সাতটি ঘরে বরাদ্দপ্রাপ্তরা কেউ থাকেন না। কেউ কেউ নিজের নামে বরাদ্দ ঘর ভাড়া দিয়েছিল। বর্তমানে সাতটি ঘরে তালা ঝুললেও বরাদ্দপ্রাপ্তরা নতুন ভাড়াটে খুঁজছেন। দুটি ঘর ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে কক্সবাজারের টেকনাফে উপজেলার একটি পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নের মোট ৫২৩ জন ভূমি ও গৃহহীনের মাঝে ঘর বিতরণ করা হয়। মাথা গোঁজার স্থায়ী একটি আবাসন পেয়ে নতুন জীবন শুরু করেন ভূমিহীন অসহায় মানুষ।

তবে এখানে ঘর বরাদ্দ পাওয়া অনেকেই ভূমিহীন নন। অভাবগ্রস্তও নন। দুর্নীতি ও প্রভাব খাটিয়ে ঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত অনেকেই সচ্ছল। আশ্রয়ণের সেসব ঘর মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য।

আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দে অনিয়ম ও ভাড়া আদায়ের এমন একাধিক ঘটনা নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে সেসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

টেকনাফে আশ্রয়ণের অধিকাংশ ঘরে চলছে ভাড়া-বাণিজ্য
আশ্রয়ণ প্রকল্পে বরাদ্দ পাওয়া প্রভাবশালী সচ্ছলদের অধিকাংশ ঘর এখন তালাবদ্ধ। খোঁজা হচ্ছে ভাড়াটে। ছবি: নিউজবাংলা

টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নে নয়াপাড়ার শেষ মাথায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের তালিকায় ৫ নম্বর সিরিয়ালে রয়েছে নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. কামালের ঘর। ওই গ্রামেই তার নিজস্ব টিনশেড ঘর রয়েছে। তারপরও প্রভাব খাটিয়ে তিনি আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। কামালের নিজের ঘর থাকায় এখন আশ্রয়ণে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে থাকেন আরেকজন।

আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কামাল হোসেন নিজের নামে বরাদ্দ ঘরে কখনোই বসবাস করেননি। কামালসহ প্রভাবশালী সাতজন একটি করে ঘর বরাদ্দ নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কামাল দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ঘরটি বিক্রি করে দেন রাশেদা নামের এক নারীর কাছে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ওই নারীকে তিনি টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানান বাসিন্দারা।

নয়াপাড়ায় (পুরান পাড়া) আশ্রয়ণের ঘরে বসবাসকারী এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের এখানে ১০টি ঘরের মধ্যে মাত্র তিনটিতে আমাদের মতো অসচ্ছল উপকারভোগী বসবাস করে। বাকি সাতটি ঘরে বরাদ্দপ্রাপ্তরা কেউ থাকেন না।

‘৫ নম্বর ঘর বিক্রি করলেও পরে টাকা ফেরত নিছে। আর ১ নম্বর ঘর সাইফুল ইসলাম ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছিল। এখন সেই টাকা ফেরত দিছে কিনা তা জানি না। কেউ কেউ নিজের নামে বরাদ্দ ঘরটি দীর্ঘদিন তাদের আত্মীয়দের কাছে ভাড়া দিয়েছিল। বর্তমানে সেই সাতটি ঘরে তালা ঝুলিয়ে রাখলেও তারা নতুন ভাড়াটে খোঁজ করছেন।’

টেকনাফে আশ্রয়ণের অধিকাংশ ঘরে চলছে ভাড়া-বাণিজ্য
নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে দশটি ঘরের মধ্যে মাত্র তিনটি বরাদ্দ পেয়েছেন প্রকৃত ভূমিহীনরা। ছবি: নিউজবাংলা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল ও সাইফুল মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ঘর আগে বিক্রি করেছিলাম। এখন আর ঘর বিক্রি করব না। ভাড়াও দেব না। অন্যদের পাঁচটি বাড়ি ভাড়া চলে। আমাদের ঘর তালাবদ্ধ করে রাখছি।’

বিষয়টি নিয়ে কোনো খবর প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন তারা।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের তালিকা সঠিকভাবে করা হয়নি। তালিকা প্রস্তুতকারীরা প্রকৃত ভূমিহীনদের বদলে নিজেদের পছন্দের লোকের নাম দিয়েছেন। ফলে প্রকৃত অভাবীদের অনেকে আশ্রয়ণের ঘর থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সচ্ছল ব্যক্তিরা ঘর বরাদ্দ পেয়ে সেগুলো মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিয়ে রাখছেন।

টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মুফিত কামাল ও ফেরুজা বেগম বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে সরকার গুচ্ছগ্রাম করে টিনের ঘর বানিয়ে বরাদ্দ দিয়েছিল। সেখানে প্রতিটি ঘরেই বরাদ্দপ্রাপ্ত অভাবী মানুষগুলো থাকে। বর্তমানে ওইসব ঘর জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়।

‘পাশেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর রয়েছে। অথচ অনেকে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে থাকছেন না। সবময় তালাবদ্ধ থাকে। আর যারা বসবাস করেন তাদের সিংহভাগই অন্যের বরাদ্দ পাওয়া ঘরে থাকেন। অনেকে উপহারের ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার অনেকে ভাড়া দিয়েছেন।’

আশ্রয়ণ প্রকল্পের যেসব ঘর তালাবদ্ধ থাকে, সেগুলো গুচ্ছগ্রামে জরাজীর্ণ ঘরে থাকা বাসিন্দাদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া ছাত্র মো. শাহ্ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সিংহভাগ ঘরে বরাদ্দপ্রাপ্তরা থাকেন না। শুধু সাবরাং নয়, টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে এই প্রকল্পের আওতায় যেসব ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সবখানেই এমন অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যাদের ঘরের প্রয়োজন নেই তারাই এসব ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের কাছের লোক এবং আত্মীয়দের ঘর দিয়েছেন। তাই সিংহভাগ ঘর তালাবদ্ধ থাকছে।’

প্রশাসনের কাউকে কোনোদিন আশ্রয়ণ প্রকল্পে এসব ঘর তদারকি করতেও দেখেননি বলে উল্লেখ করেন তিনি। বরাদ্দ পাওয়া যেসব ঘরে প্রকৃত মালিকরা থাকেন না, সেগুলো ফেরত নিয়ে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে বণ্টন করার দাবি জানান এই শিক্ষার্থী।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর কেউ বিক্রি করে থাকলে এবং ভাড়া দিয়ে থাকলে যাচাই-বাছাই করে তাদের দেয়া ঘরের বরাদ্দ বাতিল করা হবে।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিজের নামে বরাদ্দ পাওয়া ঘর ভাড়া দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এসব বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

আরও পড়ুন:
কুড়িগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রের সংস্কার চান বাসিন্দারা
গজারিয়ায় আশ্রয়ণের ঘরে আগুন

মন্তব্য

অনুসন্ধান
Torture of Hajti after seeing the activities of Subeda and women prisoners
গাইবান্ধা জেলা কারাগার

সুবেদারের ‘অপকর্ম’ দেখে ফেলায় নারী হাজতিকে নির্যাতন!

সুবেদারের ‘অপকর্ম’ দেখে ফেলায় নারী হাজতিকে নির্যাতন! গাইবান্ধা জেলা কারাগার। ছবি: নিউজবাংলা
গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষীর সঙ্গে এক নারী কয়েদির অবৈধ কর্মকাণ্ড দেখে ফেলেন এক নারী কয়েদি। ঘটনা ফাঁস হওয়ার আতঙ্কে ওই দুজনসহ আরও কয়েক বন্দি ও কারারক্ষী মিলে ওই কয়েদির ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে নেমেছে জেলা প্রশাসন।

গাইবান্ধা জেলা কারাগারে এক নারী হাজতিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, এক প্রধান কারারক্ষীর সঙ্গে এক নারী কয়েদির ‘অবৈধ কর্মকাণ্ড’ দেখে ফেলায় তার মেয়েকে এই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই নারী হাজতির নাম মোর্শেদা খাতুন সীমা। তিনি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে। সীমা মাদক মামলায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে গাইবান্ধা কারাগারে বন্দি।

লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে হাজতি সীমার উন্নত চিকিৎসা ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর মা করিমন নেছা। সেই অভিযোগের কপি নিউজবাংলার হাতেও এসেছে।

অভিযুক্তরা হলেন- গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী (সুবেদার) আশরাফুল ইসলাম, নারী কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা, কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফা।

সুবেদারের ‘অপকর্ম’ দেখে ফেলায় নারী হাজতিকে নির্যাতন!
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর দেয়া অভিযোগপত্র।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসককে দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা একটি মামলায় (হাজতি নং-৫০৮) প্রায় ৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি। কিছুদিন আগে কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলেন নারী হাজতি সীমা।

বিষয়টি জানতে পেরে সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন সীমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। ঘটনা জানাজানির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তারা কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।

একপর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল ও তার সহযোগীরা হাজতি সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে আনেন। তারা অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার ভেঙে দেন।

এতোসবের পর হাজতি সীমা এসব ঘটনা জানিয়ে জেল সুপারের কাছে বিচার দেবেন জানালে সুবেদার আশরাফুল তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পরে সেলের ভেতরে নিয়ে সীমাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রশি দিয়ে দুই পা বেঁধে আবারও মারধর করেন। উপরন্তু নির্যাতনের এসব ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে সীমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, করিমন নেছা একাধিকবার তার মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও সে সুযোগ দেয়া হয়নি। অবশেষে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের সাক্ষাৎ পান মা করিমন নেছা। এদিন সীমা মায়ের কাছে নির্যাতনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের অভিযুক্ত প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলাম মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টির সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার নামটা কেন আসতেছে জানা নেই।

‘ঘটনাটি এক মাস আগের। আরেক প্রধান কারারক্ষী মোস্তফার ডিউটির সময়ের। কিন্তু আমার নাম কেন হচ্ছে বিষয়টি জানি না।’

অপর অভিযুক্ত মহিলা কারারক্ষী তহমিনা আক্তার মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেদিন যা ঘটেছিল তার বিপরীত ঘটনা তুলে ধরে অভিযোগ করা হয়েছে। আরেফিন নামে এক নারী কারারক্ষী ও তার স্বামীর মদদে এই বন্দি এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’

কারারক্ষী তহমিনা আরও বলেন, ‘এই বন্দী (সীমা) একাধিক মামলার আসামি। প্রশাসনের লোকজনের ওপর হাত তোলার একাধিক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঘটনার দিনও সাবানা নামে এক নারী কারারক্ষীর গায়ে হাত তুলেছিলেন এই বন্দি।’

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) এডিসি মহোদয় তদন্তে এসেছিলেন। ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে ভেতরের ব্যাপারে পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে একটি ব্যাপার তৈরি হয়েছে, যা ফোনে বলা সম্ভব নয়। তবে ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) বিষয়টির তদন্ত করেছি। খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এরপরই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।’

মন্তব্য

অনুসন্ধান
The causes of the Faridpur accident were known

ফরিদপুরের দুর্ঘটনার যেসব কারণ জানা গেল

ফরিদপুরের দুর্ঘটনার যেসব কারণ জানা গেল অতিরিক্ত গতি থাকায় সংঘর্ষে দুমড়ে মুচড়ে যায় যানবাহন দুটির সামনের অংশ। ছবি: নিউজবাংলা
সরেজমিনে ঘুরে প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার বেশ কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছে নিউজবাংলা। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, মহাসড়কে উল্টো লেনে গাড়ি চালানো ও এবড়ো খেবড়ো সড়কের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

ফরিদপুরের কানাইপুরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। দুর্ঘটনায় এক পরিবারের চার সদস্যসহ মোট ১৪ জন নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আরও দুজন।

মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কের কানাইপুরের দিগনগর তেঁতুলতলায় ঢাকা থেকে মাগুরা অভিমুখী ইউনিক পরিবহনের একটি বাস ও পিকআপের সংঘর্ষে সড়কেই ঝরে পড়ে ১১ প্রাণ। হাসপাতালে নেয়ার পর আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।

তবে সরেজমিনে ঘুরে প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার বেশ কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছে নিউজবাংলা। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, মহাসড়কে উল্টো লেনে গাড়ি চালানো ও এবড়ো খেবড়ো সড়কের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। ফরিদপুর পুলিশ সুপার, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার ও স্থানীয়দের দাবি অন্তত তা-ই।

দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও পিকআপ দুটিরই অতিরিক্ত গতি ছিল। আর পিকআপচালক তার নির্দিষ্ট লেন ছেড়ে বিপরীত লেনে চলে আসেন। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাসের চালক ফিট ছিলেন কি না, পিকআপটির চালকের লাইসেন্স ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।’

ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার সুবাস বাড়ৈ বলেন, ‘গাড়িটি (বাস) ওভার স্পিডে (অতিরিক্ত গতি) চলছিল। এ কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।’

দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই শেখ লিমনের বাড়ি। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখানে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে কিছু বিট ও তার পাশে গর্ত আছে, রাস্তাও এবড়ো থেবড়ো। ঈদের আগেও এখানে বিশ-বাইশটি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। সকালে ওই বিটের কাছেই দুর্ঘটনা ঘটে।’

দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, নিহতদের দাফনের জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের পরবর্তীতে ৫ লাখ এবং গুরুতর আহতদের ৩ লাখ টাকা করে প্রদান করা হবে।

আরও পড়ুন:
ফরিদপুরে পিকআপে বাসের ধাক্কায় নিহত ১৩

মন্তব্য

অনুসন্ধান
Syndicate behind Chasiks 20 Ghat Khas collection

চসিকের ২০ ঘাটে ‘খাস কালেকশন’, নেপথ্যে সিন্ডিকেট

চসিকের ২০ ঘাটে ‘খাস কালেকশন’, নেপথ্যে সিন্ডিকেট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন কর্ণফুলীর একটি ঘাটে যাত্রী পারাপার। ছবি: নিউজবাংলা
উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় পহেলা বৈশাখে ২০ ঘাটের ইজারা হয়নি। আর এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে চসিকের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ইজারালোভী সিন্ডিকেটকে সহায়তা করছেন। আর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

কর্ণফুলীর সল্টগোলা-ডাঙারচর ঘাটসহ ২০টি নদী পারাপার ঘাট ইজারা না হওয়ায় নামমাত্র ‘খাস কালেকশন’ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বিরুদ্ধে। এতে করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চসিক রাজস্ব শাখার কর্মকর্তারা স্থানীয় পর্যায়ের পুরনো ইজারাদারদের সঙ্গে আঁতাত করে খাস আদায়ে উঠেপড়ে লেগেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মেয়রের নামও ভাঙাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চসিকের এসব ঘাট দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রীসহ পণ্য আনা-নেয়া করা হয়। ঘাটগুলো নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে ২০ ঘাটের ইজারা দেয়া সম্ভব হয়নি।

ঘাট ইজারা না হওয়াটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে চসিকের রাজস্ব শাখা ‘খাস কালেকশন’ আদায়ের দিকে হাঁটছে। এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিতে ইজারালোভী সিন্ডিকেটকে সহায়তা করছেন। খাস কালেকশনের নামে রাজস্ব আদায় কম দেখানোর সুযোগ তৈরি করছেন তারা।

চসিকের ২০ ঘাটে ‘খাস কালেকশন’, নেপথ্যে সিন্ডিকেট
একটি ঘাটে ইজারাদারের টোল আদায়ের ঘর। ছবি: নিউজবাংলা

এই খাস কালেকশনকে রাজস্ব ফাঁকির কৌশল হিসেবে অভিহিত করেছে পাটনিজীবী একাধিক সমিতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন পুরনো ইজারা ব্যবসায়ী বলেন, খাস কালেকশনে টাকা আদায় কম দেখানো গেলে পরবর্তী বছরের ইজারা মূল্য কমানোর আইনগত পথ সৃষ্টি হয়। এছাড়া একাধিকবার খাস কালেকশনে পরের বছর আইনগত ঝামেলা এড়িয়ে কম টাকায় ইজারা নিতে পারেন ব্যবসায়ীরা। এভাবেই কিছু অসৎ কর্মকর্তার কারসাজিতে কয়েক বছর পর পর গুরুত্বপূর্ণ ঘাটগুলোর ইজারা মূল্য কমে যায় এবং সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়।

তারা বলেন, এই পদ্ধতিতে সরকারি কোষাগারে নামমাত্র অর্থ জমা হলেও বড় অংকের টাকা চলে যাবে চসিক সিন্ডিকেটের পকেটে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এ বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে চসিক কিংবা সরকার।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, হাইকোর্ট বিভাগের রিট (১৫১৬৩/২৩) পিটিশনের কারণে এবার বাংলা ১৪৩১ সনে চসিক নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাটগুলোর ইজারা স্থগিত রয়েছে। ঘাটে ঘাটে আবার কানাঘুষাও চলছে যে এসব চসিকেরই কৌশল। কেননা এতে কপাল খুলে যায় একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও চসিক-সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের।

চসিকের নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাটগুলো হলো- পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাট, সল্টগোলা ঘাট, বাংলাবাজার ঘাট, নয়ারাস্তা পাকা পুলঘাট, সদরঘাট, ফিশারীঘাট, নতুনঘাট, এয়াকুব নগর লইট্যা ঘাট, পতেঙ্গা ১৪ নংম্বর ঘাট ও গুচ্ছগ্রাম ঘাট, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট, ১২ নম্বর তিনটিংগা ঘাট, ৭ নম্বর রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি সংলগ্ন ঘাট, ৯ নম্বর বিওসি ঘাট, অভয় মিত্র ঘাট, চাক্তাই খালের পাশে পানঘাট থেকে গাইজ্জের ঘাট, পতেঙ্গা চাইনিজ ঘাট, বাকলিয়া ক্ষেতচর ঘাট, চাক্তাই ঘাট ও চাক্তাই লবণ ঘাট।

চসিকের ২০ ঘাটে ‘খাস কালেকশন’, নেপথ্যে সিন্ডিকেট

চলতি বছরে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘাটের সম্ভাব্য ইজারা মূল্য ছিল- পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাট ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সল্টগোলা ঘাট ৫৭ লাখ ৩২ হাজার ১০০ টাকা, বাংলাবাজার ঘাট ২৪ লাখ ৪ হাজার ৬০০ টাকা, সদরঘাট ২১ লাখ ৯৭ হাজার ১২৪ টাকা, ফিশারি ঘাট ২৪ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা, পতেঙ্গা ১৪ নম্বর ঘাট ও গুচ্ছগ্রাম ঘাট ৪২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট ৮৭ লাখ ৩২ হাজার ৪০০ টাকা এবং ৯ নম্বর বিওসি ঘাট ৩৫ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা।

হিসাব করলে দেখা যায়, পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাটের সম্ভাব্য ইজারা মূল্যের সঙ্গে ২০ শতাংশ ভ্যাট যোগ করলে মোট ইজারা দাঁড়ায় ৩ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এতে দৈনিক কিস্তি পড়ে ৮৮ হাজার ৬০২ টাকা। অনুরূপভাবে সল্টগোলা ঘাটের দৈনিক কিস্তি ১৮ হাজার ৮৪৫ টাকা।

এভাবে প্রতিটি ঘাটে দৈনিক ১০ হাজার থেকে ৮৮ হাজার টাকার মতো ইজারা আদায় হওয়ার কথা। কিন্তু অতি কৌশলে চসিকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে দৈনিক মাত্র ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার নামমাত্র মূল্যে খাস কালেকশন আদায়ের প্রক্রিয়া নিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

অভয় মিত্র ঘাটের খাস কালেকশনকারী মো. আবুল জানান, দৈনিক দু’হাজার টাকা হিসাবে তিনি এই ঘাট নিয়েছেন। বাংলাবাজার ঘাটের লোকমান দয়াল জানান, দৈনিক সাড়ে ৫ হাজার টাকায় তিনি এই ঘাট দেখাশোনা করছেন।

চসিক নীতিমালায় ঘাট ইজারা কিংবা খাস আদায়ে সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত স্থানীয় পাটনিজীবী সমিতিকে ঘাট পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু খাস আদায়ের জন্য স্থানীয় পাটনিজীবী সমিতিগুলো মেয়রের কাছে ধর্না দিয়েও সাড়া না পায়নি। অনন্যোপায় হয়ে তারা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন কিংবা মানববন্ধন কর্মসূচির চিন্তা-ভাবনা করছে বলে জানা গেছে।

সল্টগোলা ডাঙ্গারচর পাটনিজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাম্পান মাঝিরা সাম্পান চালিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে দুমুঠো ডাল-ভাত খেতে চাই। আমরা চাই কেউ আমাদের পেটে লাথি না মারে। টোল কিংবা খাস কালেকশন যে আদায় করবে করুক, আমরা এই ঘাটের মাঝি; আমরা যাত্রী পারাপার করতে চাই।

‘বর্তমানে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে খাস কালেকশন দিচ্ছি। এখনও চসিক থেকে কেউ আসেনি। আমরা সরকারি রেজিস্ট্রেশনধারী পাটনিজীবী সমিতি। কিন্তু বাইরের কিছু লোক ঘাট দখলের পাঁয়তারা করছে ঘাটে চাঁদাবাজি করার জন্য। আমরা এসব হতে দেব না।’

বেশিভাগ ঘাটের ইজারাদার আব্দুল শুক্কুর প্রকাশ তেল শুক্কুর বলেন, ‘আমরা কয়েকটি ঘাটের খাস কালেকশন করতেছি। ১৫ দিন পর পর সিটি করপোরেশনে টাকা দিতে হয়।’

চসিকের ২০ ঘাটে ‘খাস কালেকশন’, নেপথ্যে সিন্ডিকেট

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কিছু পাটনিজীবী সমিতি মিলে হাইকোর্টে রিট করে স্টে-অর্ডার করেছে; যাতে ইজারা টেন্ডার বন্ধ থাকে। সে কারণে ঘাটগুলোর ইজারা বন্ধ রয়েছে। আমরা ডকুমেন্টস সংগ্রহ করছি। শিগগিরই রিট শুনানি করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর বর্তমানে ঘাটগুলো বিভিন্নজনকে বিভিন্নভাবে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এস্টেট শাখা ভালো বলতে পারবে।’

চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা সাব্বির রাহমান সানি বিশেষ ট্রেনিংয়ে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে চসিকের সহকারী এস্টেট অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের আইন শাখা কাজ করছে। শিগগিরই হাইকোর্টের স্টে-অর্ডারটি ব্যাকেট করা হবে। তারপর ঘাটগুলোর টেন্ডার কল করা হবে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব লোকজন ঘাটগুলো দেখাশোনা করছে। আর সল্টগোলা ডাঙারচর ঘাটে লোকজন গেছে।’

চসিক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (সিআরও) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ মানতে হবে। কিছু করার নেই। খাস কালেকশনে ঘাট চলছে। যেহেতু আদালতের নির্দেশে স্থগিত ইজারা। রিট শুনানির জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। কিন্তু এভাবে খাস কালেকশন চলতে থাকলে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আসবে না সেটাও সত্য।’

মন্তব্য

অনুসন্ধান
Railways helpless with powerful KCC councillors

ক্ষমতাধর কেসিসি কাউন্সিলরের কাছে অসহায় রেলওয়ে

ক্ষমতাধর কেসিসি কাউন্সিলরের কাছে অসহায় রেলওয়ে খুলনা নগরের খালিশপুরে জলাশয় ভরাট করে রেলওয়ের ৬৬ শতক জমি দখল করে রেখেছেন কেসিসির কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম মুন্না। ছবি: নিউজবাংলা
স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ শেখ বলেন, ‘খুলনা নগরের খালিশপুর এলাকায় খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পশ্চিম পাশে রেলওয়ের ৬৬ শতক জমি রয়েছে। রেলওয়ের মালিকানাধীন ওই জায়গা যখন ভরাট করা হয় তখন কাউন্সিলর মুন্না কেসিসির প্যানেল মেয়র ছিলেন। তাই প্রকাশ্যে জমি ভরাট করলেও তাকে বাধা দেয়ার মতো কেউ ছিল না।’

রেলওয়ের ৬৬ শতক জলাশয় ভরাট করে দখলে রেখেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। এক্ষেত্রে তিনি অজুহাতের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন খুলনা সিটি করপোরেশনকে (কেসিসি)। তার দাবি, মেয়র ওই জায়গায় পার্ক বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাই পুলিশে অভিযোগ দিয়েও সেই সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারছে না রেলওয়ে।

তবে কেসিসি থেকে জানানো হয়েছে, সেখানে কোনো নির্মাণ পরিকল্পনা করা হয়নি। আর কাউন্সিলের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে কিছুই জানেন না মেয়র।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, খুলনা নগরের খালিশপুর এলাকায় খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পশ্চিম পাশে রেলওয়ের ৬৬ শতক জমি রয়েছে। কয়েক বছর আগে স্থানীয় জনি মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে ওই জমি ইজারা দেয়া হয়েছিল। ওই জমিটুকু জলাশয় হওয়ায় ইজারার শর্তে উল্লেখ ছিল যে তা ভরাট করা যাবে না। তবে ইজারা নেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই জায়গাটি ভরাট করে ফেলা হয়।

রেলওয়ের যশোর ও খুলনার ভূমি কর্মকর্তা মহসিন আলী বলেন, ‘স্থানীয় কাউন্সিলরের নির্দেশে ওই জমি ভরাট করা হয়েছে। জনি মিয়ার দায়িত্ব ছিল ওই জলাভূমি রক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের। কিন্তু তিনি ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম মুন্নার সঙ্গে যোগসাজস করে ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ফেলেছেন।’

শর্ত ভঙ্গ করে ভূমি ভরাট করায় জনি মিয়ার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর সরকারি রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) স্টেশনে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ভূমি কর্মকর্তা। তবে প্রভাবশালী কাউন্সিলরের চাপে পুলিশ কিছুই করতে পারেনি।

মহসিন আলী বলেন, ‘তৎকালীন ভূমি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জিআরপি থানায় যে ডায়েরি করেছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছিল। ওই সময়ে কাউন্সিলর মুন্না ও তার লোকজন প্রভাব খাটিয়ে ওই তদন্ত বন্ধ করে দেন। অবশেষে রেলওয়ের ৬৬ শতক জমির পুরো জলাশয়টি ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যায়।’

সম্প্রতি রেলওয়ের ওই সম্পত্তি পরিদর্শন করেন এই প্রতিবেদক। সেখানে দেখা যায়, জলাশয়টির কোনো অস্তিত্ব নেই। পুরো জায়গাটি সমতল মাঠে পরিণত হয়েছে। আর কিছু শ্রমিক ভরে ফেলা জায়গাটি সমতল করছে।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, রেলওয়ের ওই জমিতে শিশুপার্ক, কাউন্সিলর কার্যালয়, দোকানপাট ও বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ শেখ বলেন, ‘রেলওয়ের মালিকানাধীন ওই জায়গা যখন ভরাট করা হয় তখন কাউন্সিলর মুন্না কেসিসির প্যানেল মেয়র ছিলেন। তাই প্রকাশ্যে জমি ভরাট করলেও তাকে বাধা দেয়ার মতো কেউ ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি রেলওয়ের কর্মকর্তারা এখানে এসে অসহায় বোধ করেন। মুন্না স্পষ্ট করেই তাদেরকে বলে দেন- এটি কেসিসির মালিকানাধীন পরিত্যক্ত জমি এবং তারা শিশুদের জন্য একটি পার্কসহ সেখানে কিছু স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। তখন রেলওয়ের কর্মকর্তারা পুলিশের সহায়তা নেন।’

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় খুলনার জিআরপি থানার ওসি ইদ্রিস আলী মৃধার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কাউন্সিলর দাবি করেন যে ড্রেন সংস্কারের সময় জমে থাকা মাটি ফেলার জায়গা নেই, তাই কেসিসি মেয়রের নির্দেশে তারা মাটি দিয়ে জলাশয়টি ভরাট করছেন।’

যোগাযোগ করা হলে কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম মুন্নাও দাবি করেন, কেসিসি মেয়রকে জানানোর পর তিনি জলাশয়টি ভরাট করেছেন।

তিনি বলেন,’ জলাশয়টি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। আর তা স্থানীয়দের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই আমি মেয়রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি এবং জনগণের স্বার্থে জলাশয়টি ভরাট করে দিয়েছি। অদূর ভবিষ্যতে সেখানে একটি শিশুপার্ক নির্মাণ করা হবে।

অনুমতি ছাড়া রেলওয়ের সম্পত্তি জলাশয় ভরাট করা আইনসঙ্গত কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘ওই জমিতে সিটি করপোরেশনের পার্ক স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা নেই। আর জমি ভরাট ও দখলের ব্যাপারে মেয়র কোনো কিছুই জানেন না।’

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল। তিনি বলেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে জলাশয় দখল করে নিলেন। আর জমির মালিক সরকারি প্রতিষ্ঠান পুলিশের আশ্রয় নিয়েও তা রক্ষা করতে পারলো না। এখানে আইন অন্ধ দৃষ্টির ভূমিকা রেখেছে।’

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের বিভাগীয় ভূমি সম্পত্তি কর্মকর্তা (পাকশী জোন) মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘যারা জলাশয়টি ভরাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি ইতোমধ্যে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাকে জায়গাটির চারপাশে বেড়া দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’

আরও পড়ুন:
পূর্ব রেলের কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অবশেষে মামলা
চাকরি স্থায়ী করতে প্রতারণার আশ্রয়, কপাল পুড়ল ৩৭ কর্মীর
পূর্ব রেলওয়ের কোটি টাকা আত্মসাৎ, কিনারা হয়নি ২৩ দিনেও
যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণে প্রস্তুত কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন

মন্তব্য

অনুসন্ধান
Al Amin has cheated various businesses by killing customers money
সিরাজগঞ্জে জনতা ব্যাংকের তামাই শাখায় অর্থ জালিয়াতি

ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা মেরে ম্যানেজার আল-আমিনের নানা ব্যবসা

ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা মেরে ম্যানেজার আল-আমিনের নানা ব্যবসা জনতা ব্যাংক তামাই শাখার সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপক আল-আমিন। ছবি: নিউজবাংলা
ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার খোঁজ এখনও মেলেনি। এরই মাঝে তথ্য মিলেছে, ব্যাংকের ম্যানেজার আল-আমিনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চক্র গ্রাহকদের বিপুল টাকা তাদের অগোচরে তুলে নিয়েছে। আর সেসব টাকায় আল-আমিন ঠিকাদারিসহ পার্টনারশিপে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও দোকানপাট।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ম্যানেজার আল-আমিনের জালিয়াতির নতুন নতুন খবর বেরিয়ে আসছে। ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা নয়-ছয় করে এই কর্মকর্তা ব্যক্তি জীবনে বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন। চাকরির আড়ালে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার খোঁজ এখনও মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উদ্যোগে তদন্ত চলছে। এরই মাঝে তথ্য মিলেছে, ব্যাংকের ম্যানেজারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চক্র গ্রাহকদের বিপুল টাকা তাদের অগোচরে তুলে নিয়েছে। আর এভাবে ব্যাংকের বিপুল টাকা সরিয়ে নিয়ে চাকরির আড়ালে নিজের ব্যবসা ফেঁদেছেন ম্যানেজার আল-আমিন। ঠিকাদারিসহ পার্টনারশিপে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও দোকানপাট।

সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

এদিকে জনতা ব্যাংক প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পাঁচ সদস্যের তদন্ত দল বুধবার সকাল থেকে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে সোমবার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই সদস্যের তদন্ত দলও তাদের মতো করে তদন্ত করছে।

ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের বিপুল পরিমাণ টাকার হদিস মিলছে না- এমন খবরে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার হিসাবধারী গ্রাহকরাও উৎকণ্ঠিত। তারা নিজ নিজ হিসাবের টাকার খবর জানতে ভিড় করছেন ব্যাংক কার্যালয়ে।

ইতোমধ্যে গ্রাহকদের সিসি একাউন্টসহ বিভিন্ন হিসাব থেকে বড় অংকের টাকা নয়-ছয় হওয়ার শঙ্কা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। তবে এখনই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চাচ্ছেন না তদন্তকারী দলের সদস্যরা।

জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে জনতা ব্যাংক তামাই শাখা থেকে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে রোববার রাতে গ্রেপ্তার হন ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকর্তা। এর আগে অভিযুক্তরা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে ২০ লাখ টাকা ভল্টে ফেরত দিয়েছেন- এমন তথ্য অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনুসন্ধানে গিয়ে ব্যবস্থাপক আল-আমিনের পার্টনারশিপে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়। আল-আমিনের বসবাস সিরাজগঞ্জ শহরের ধানবান্ধি মতি সাহেবের ঘাট মহল্লায়।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ছয়-মাস ধরে ব্যবস্থাপক আল-আমিন তার বসতবাড়ির পাশে আবুল পাটোয়ারীর পাকা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে গড়ে তুলেছেন বৈদ্যুতিক তার উৎপাদনের কারখানা। ‘এম আর ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের কারখানাটিতে পিভিসি ইনস্যুলেটেড ক্যাবল তৈরি হয়।

এই কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য সিরাজগঞ্জ শহরের বড়বাজার পাতিলাপট্টিতে পুরাতন হিরাঝিল মার্কেটে ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’ নামে ইলেক্ট্রিক দোকানের প্রোপ্রাইটার হিসেবে ব্যবসায় করছেন আল-আমিনের ভাতিজা মঈন উদ্দিন পলাশ। ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’-এর আবরার নামটি আল-আমিনের ছোট ছেলের।

আল-আমিনের ব্যবসার গণ্ডি ছড়িয়েছে রাজধানীতেও। ঢাকার নবাবপুর ও মিরপুরে এম আর এন্টারপ্রাইজ নামে ইলেক্ট্রিক সামগ্রীর দুটি দোকান রয়েছে তার। গাইবান্ধায় যমুনা নদী তীর রক্ষাবাঁধের কাজে সিসি ব্লক তৈরি প্রকল্পেও আল-আমিন টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের হোসেনপুর মোল্লাবাড়ি মহল্লার মিজানুর রহমানের সঙ্গে পার্টনারশিপে এসব ব্যবসা কারখানা ও দোকানপাট পরিচালনা করেন ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তাদের ব্যবসায়িক অফিস রয়েছে।

মঈন উদ্দিন পলাশ অবশ্য ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিকানা নিজের বলে দাবি বলেন, ইলেক্ট্রিক তার উৎপাদন কারখানাটি তার চাচার নয়, মিজানুর রহমানের।

অপরদিকে আল-আমিনের বন্ধু মিজান বলেন, ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিক আমি। আল-আমিন বা তার ভাতিজা পলাশ নয়।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক যৌথভাবে ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন ও মিজানুর রহমান।

বুধবার দুপুরে আল-আমিনের ধানবান্ধি মহল্লার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রী রুনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মিজানের সাথে আমার স্বামী আল-আমিনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব আছে। কিন্তু তার সাথে কোনো প্রকার অংশীদারত্বমূলক ব্যবসার কথা আমি জানেন না।’

একইসঙ্গে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন, তার স্বামী আল-আমিন কারও খপ্পরে পড়ে এরকম পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন।

একই দিন সকালে বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামে গিয়ে ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তামাই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী শামীম সেখের ছেলে সাদি সেখ বলেন, “এই ব্যাংকে ‘শামীম ব্রাদার্স’ ও ‘সাদি এগ্রো ফার্ম’ নামে আমাদের দুটি একাউন্ট আছে। এর মধ্যে শামীম ব্রাদার্স-এর হিসাবের ২৩ লাখ আর সাদি এগ্রো’র হিসাব থেকে ৩২ লাখ টাকা ডামি চেকে স্বাক্ষর জাল করে তুলে নেয়া হয়েছে।”

মুসলিম উইভিং ফ্যাক্টরি নামীয় হিসাবধারী মোতালেব জোয়ার্দার বলেন, ‘আমার হিসাবে ৪৮ লাখ টাকার সিসি লোন পাস করা আছে। আমি ২০২২ সালের পর ব্যাংকের এই শাখা থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করি নাই। ব্যাংকের এই অবস্থা জেনে হিসাবের প্রতিবেদন তুলে দেখা যায় যে, ৪৮ লাখ টাকাই তুলে নেয়া হয়েছে।’

জনতা ব্যাংক তামাই শাখার অনেক গ্রাহকেরই এমন অভিযোগ। শাহিন কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজের সিসি হিসাব থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। তাঁত ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের ১৫ লাখ, চান টেক্সটাইলের চান মিয়া আকন্দের ১০ লাখ, হাজী আব্দুল্লাহ আকন্দের পাঁচ লাখসহ অনেক গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা তাদের একাউন্ট থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও বেশ কয়েকজন গ্রাহকের কাছ থেকে নগদ হাওলাতি টাকা নিয়েছেন শাখা ব্যবস্থাপক আল-আমিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, ‘২৪ মার্চ বিপদের কথা বলে স্বল্প সময়ে পরিশোধের আশ্বাসে ২০ লাখ টাকা ধার চেয়েছিলেন আল-আমিন। দুই লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিনি না জানিয়ে আমার ব্যাংক হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেন। আর একই দিন সন্ধ্যায় ব্যবস্থাপক তার নামে আমার কাছ থেকে পিয়ন শহিদুল মারফত ১০ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নিয়েছেন।’

মোহাম্মদ আলী উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক হাজী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ব্যাংককে বিশ্বাস করে টাকা রাখি। সেই ব্যাংক যদি এরকম কাজ করে তাহলে আমরা যাব কোথায়?’

বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামছুল হক জানান, ম্যানেজার আল-আমিন বিভিন্ন সময় লুজ চেক ব্যবহার করে সিসি একাউন্টের টাকা তুলে নিয়েছেন। তাতে স্বাক্ষরের মিল নেই, চেকের সিরিয়ালের পরম্পরা নেই।

ব্যাংকের ক্যাজ্যুয়াল পিয়ন শহিদুল বলেন, ‘ম্যানেজার স্যার বিভিন্ন সময়ে আমার নাম ব্যবহার করে আমার মাধ্যমে বিভিন্ন একাউন্টে টাকা জমা দিয়েছেন। টাকা উত্তোলনে তিনি আমার নাম লিখে দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু আমি জানি না।’

জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ভল্টের ক্যাশ লিমিট ৭৫ লাখ টাকা। তাহলে সেই ভল্টে আত্মসাৎ করা পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থাকলো কীভাবে- এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত চলছে, তদন্তে সঠিক বিষয়টি বের হয়ে আসবে। তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করাই ভাল। তদন্ত শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’

প্রসঙ্গত, রোববার রাতে জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া কার্যালয়ের ডিজিএম নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল-আমিন, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও ব্যাংকের কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। পরদিন সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল-হাজতে পাঠানো হয়। পরে অভিযোগটি বিধি মোতাবেক সাধারণ ডায়েরি আকারে গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবনা অফিসে পাঠানো হয়।

দুদক সমন্বিত পাবনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খায়রুল হক বলেন, ‘অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরও পড়ুন:
জনতা ব্যাংক তামাই শাখার গ্রাহকদের টাকাও ‘হাওয়া’

মন্তব্য

অনুসন্ধান
Customers of Janata Bank Tamai branch also have money
ক্যাশভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার হিসাবে গরমিল

জনতা ব্যাংক তামাই শাখার গ্রাহকদের টাকাও ‘হাওয়া’

জনতা ব্যাংক তামাই শাখার গ্রাহকদের টাকাও ‘হাওয়া’ আটকের পর সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানায় ব্যাংক ম্যানেজার আল আমিনসহ তিনজন। ছবি: নিউজবাংলা
ব্যাংকিং নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজের মর্জিমাফিক কার্যক্রম চালিয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আল আমিন। একে একে বেরিয়ে আসছে নতুন তথ্য। অনেক গ্রাহকের হিসাবের টাকাও তুলে নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে- তাহলে কি হিসাবে গরমিলের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকাই শেষ কথা নয়?

ব্যাংকিং নিয়মে নয়, নিজের বানানো নিয়মে ব্যাংকের কার্যক্রম চালাতেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচির জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন। নিজের ইচ্ছেমতো গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন ও জমা দিতেন।

এদিকে ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার হদিস এখনও মেলিনি।

বুধবার সকালে জনতা ব্যাংকের তামাই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রাহকদের হিসাবে থাকা টাকা তাদের অজান্তে তুলে নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ক্যাশ ভল্টের ওই পরিমাণ টাকাই শেষ কথা নয়? গ্রাহকদের অজান্তে তাদের হিসাবে জমা বিপুল পরিমাণ টাকাও হাতিয়ে নেয়া হয়েছে?

শাখাটিতে অবস্থানকালে সাংবাদিকদের কথা হয় তামাই বাজারের মেসার্স মুসলিম উইভিং ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী আব্দুল মোতালেব জোয়ারদারের সঙ্গে।

তিনি জানান, তার একটি ৪৮ লাখ টাকার সিসি লোন করা ছিল। তবে তিনি এখনও লোনটি উত্তোলন করেননি। অথচ তার ব্যাংক হিসাব ঘেটে দেখা যায় যে তিনি পুরো টাকাই উত্তোলন করেছেন। তার এই টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে তার সিরিয়ালের চেক ব্যবহার করা হয়নি। অন্য একটি চেকে ওই পরিমাণ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

এমন ঘটনায় মোতালেব জোয়ারদার হতবাক! এ অবস্থায় তার করণীয় কী হতে পারে বুঝতে পারছেন না।

শুধু আব্দুল মোতালেব নন, আরও অনেক গ্রাহকের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে। একই এলাকার ব্যবসায়ী চান টেক্সটাইলের আকন্দের হিসাব থেকে তার অজান্তেই ১০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আল ফারুক স্টোরের শহিদুল ইসলামের ২৪ লাখ টাকার সিসি লোনের মধ্যে তার অজান্তেই চেক জালিয়াতে করে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

ব্যক্তিগত সঞ্চয় হিসাবেও এমন জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসছে। ঝিন্না মোল্লার ব্যক্তিগত হিসাবে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১০ টাকা থাকার কথা। কিন্তু ওই হিসাবে আছে মাত্র এক লাখ ৫ হাজার ১১২ টাকা।

তাৎপর্যের বিষয় হল, এসব লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকরা তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাওয়ার কথা থাকলেও কোন এসএমএস আসেনি। গ্রাহকরা এ বিষয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে তিনি তাদেরকে জানান- সার্ভারে ত্রুটি থাকার কারণে গ্রাহক এসএমএস পাচ্ছেন না।

বুধবার সকালে দেখা যায়, তামাই শাখার নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পাঁচজন সদস্য বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন।

জনতা ব্যাংক হেড অফিসের এজিএম সাদিকুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আরও রয়েছেন- ব্যাংকের এসপিও মোস্তফা কামাল, সিনিয়র অফিসার মাসুদুর রহমান, প্রিন্সিপাল অফিসার শরীফ মোহাম্মদ ইশতিয়াক ও এরিয়া ম্যানেজার সঞ্জিত কুমার।

এর আগে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিসের যুগ্ম পরিচালক এস এম সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তামাই শাখার ক্যাজুয়াল পিয়ন শহিদুল ইসলাম জানান, গত ৭ /৮ মাস ধরে শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিনের কথা অনুসারে তিনি বিভিন্ন গ্রাহকের চেকে নিজে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। ব্যবস্থাপকের কথায় অনেক জমা ভাউচারেও তিনি স্বাক্ষর করেছেন।

কেন স্বাক্ষর করেছেন- এমন প্রশ্নে শহিদুল বলেন, ‘আমরা তাদের চাকরি করি। তিনি যা অর্ডার করতেন আমাদের তাই করতে হতো। আমি তো শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি, ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তার আইডির মাধ্যমে টাকাগুলো দেয়া হতো। অনেক সময় গ্রাহকের হিসাবে টাকা না থাকলেও ম্যানেজার নিজে এসে তাদের টাকা দিতেন।’

এসব বিষয়ে নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে স্যাররাই ব্যবস্থা নেবেন।’

তদন্ত কমিটির প্রধান এজিএম সাদিকুর রহমান বলেন, ‘ঠিক কত টাকা গরমিল হয়েছে তার তদন্ত চলছে। গ্রাহকদের টাকার বিষয়ে হেড অফিস সিদ্ধান্ত নেবে। যেসব গ্রাহকের হিসাবে ঝামেলা হয়েছে তাদেরকে দরখাস্ত দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

ব্যাংকের বিপুল টাকার হদিস না পাওয়ার এই ঘটনায় রোববার রাতে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন- সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও ব্যাংক অফিসার রাশেদুল ইসলাম।

আল আমিন সিরাজগঞ্জের ধানবান্দি পৌর এলাকার মো. হারান শেখের ছেলে, রেজাউল করিম বগুড়ার ধুনট থানার বেলকুচি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে এবং রাশেদুল ইসলাম সিরাজগঞ্জের বনবাড়িয়া কাদাই গ্রামের জিয়াউল হকের ছেলে। তারা বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

প্রসঙ্গত, ২৪ মার্চ রোববার জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই শাখার ক্যাশ ভল্টে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার গরমিল ধরা পড়ে।

পরে এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম তামাই শাখার ম্যানেজারসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

এ ঘটনায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। হিসাব অনুসারে ভল্টে মোট ৭ কোটি ১১ লাখ ২৪০ টাকা থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে এক কোটি ৭৭ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা। বাকি ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোনো খোঁজ মেলেনি।

মন্তব্য

p
উপরে