সুইটি ইসলাম (ছদ্মনাম)। বয়স ১৭ বছর। বাড়ি শরীয়তপুর জেলার চন্দনকর এলাকায়। বছর খানেক আগে ফেসবুকে টিকটক গ্রুপের মাধ্যমে শিহাব নামে যশোরের এক তরুণের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক হয় তাদের। কিন্তু শিহাব যে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছেন, তা বুঝতে পারেনি সে।
এরই একপর্যায়ে গত সোমবার সুইটি শরীয়তপুর থেকে তিন হাজার টাকায় মোটরসাইকেল ভাড়া করে একাই চলে যায় যশোরে শিহাবের কাছে।
সুইটির ভাষ্যমতে, যশোরে পৌঁছানোর পর প্রথমে একটি হোটেলে ওঠানো হয় তাকে। সেখানে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এরপর ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় একটি নির্জন গ্রামে। সেখানেও চলে ধর্ষণচেষ্টা। তবে যশোরে পরিচিত কেউ না থাকায় এসবের প্রতিবাদ করার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না মেয়েটি।
এরই মাঝে তাকে ভারতে পাচারের জন্য সেখান থেকে নেয়া হয় বেনাপোল বাসস্ট্যান্ডে। সেখানে সুযোগ বুঝে মেয়েটি আশপাশের লোকজনকে জানিয়ে দেয় যে, সে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছে। এ সময় কৌশলে পালিয়ে যান শিহাব।
এ ঘটনার পর সুইটিকে নিরাপদে পৌঁছে দিতে যশোর জেলা প্রশাসন যোগাযোগ করে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। এ যাত্রায় বেঁচে যায় মেয়েটি। কিন্তু টিকটক গ্রুপের মাধ্যমে পাচারকারীদের হাতে পড়ে আরও কত মেয়ে যে ভারতের অন্ধকার জগতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তার কোনো হিসাব নেই।
যেভাবে পাচার হয়
একটা সময় পর্যন্ত সাধারণত আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের মেয়ে, গার্মেন্টসকর্মী এমনকি বিধবা নারীদের টার্গেট করে অনেক টাকার স্বপ্ন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করা হতো। এ জন্য দালালের মাধ্যমে টার্গেট নারী বা তাদের পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো।
বছর দুয়েক আগে দেশে ‘টিকটক কালচার’ জনপ্রিয় হতে শুরু করে। এই অনলাইন সামাজিকমাধ্যমের মোহে পড়তে শুরু করে উঠতি বয়সী মেয়েরা। আর এ সুযোগ নেয় নারী পাচারে সক্রিয় পুরোনো এই চক্র। কারণ, টিকটক গ্রুপের অ্যাডমিনদের মাধ্যমে অনলাইনে সহজেই হ্যাং আউট বা পুল পার্টির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।
দুই বছর ধরে এভাবে তারা টিকটক গ্রুপের নারী সদস্যদের ছলেবলে বিদেশে শুটিং-অডিশনের কথা বলে পাচার করছে। বিশেষ করে ভারতে। প্রতিবেশী এই দেশটিতে নেয়ার সময় পথে পথে তাদের করা হয় ধর্ষণ। কিছু ক্ষেত্রে এসব ঘটনায় ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেয়া হয়। একপর্যায়ে বাধ্য করা হয় যৌন পেশায়।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, পুরোনো এই চক্রটি আগের মতোই পুরোনো গার্মন্টসকর্মী দিয়ে নতুন গার্মেন্টসকর্মীকে প্রলোভনের মাধ্যমেও পাচার করছে। এ ছাড়া স্বর্ণ চোরাকারবারিদের একটি চক্র নারী পাচারে জড়িয়েছে। এই চক্রের কেউ কেউ স্থানীয় দালালের মাধ্যমে বিদেশে নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নারী পাচার করছে।
বেশির ভাগই থেকে যায় ‘অন্ধকার জগতে’
পাচার হওয়ার পর যৌন নির্যাতনের শিকার এসব ভুক্তভোগীর কিছু অংশকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বেশির ভাগই থেকে যায় অন্ধকার জগতে।
পাচার হওয়া মানুষ নিয়ে কাজ করে ‘রাইটস যশোর’ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন। তাদের তথ্য বলছে, শুধু যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়েই ২০১৯ সালে ফেরত আনা হয়েছে পাচার হওয়া ৩৫ নারীকে, যাদের মধ্যে ছিল ৯টি মেয়েশিশুও।
২০২০ সালে একই সীমান্ত দিয়ে ফেরত আনা হয়ে ২৫ নারী ও ১৯ মেয়েশিশুকে। আর চলতি বছরের গত পাঁচ মাসে বেনাপোল দিয়ে ফেরত আনা হয়েছে চার মেয়েশিশু ও ১৩ নারীকে।
রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, গত ১৭-১৮ মাসে টিকটকের ফাঁদে ফেলে পাচার করা হয়েছে বহু মেয়েকে। কয়েকটি ঘটনার মাধ্যমে তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজনকে উদ্ধার করা গেলেও বেশির ভাগই এখনো ভারতে রয়ে গেছে। করোনার বিধিনিষেধের কারণে তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
যেভাবে ফিরিয়ে আনা হয় পাচার হওয়া নারীদের
এ প্রসঙ্গে রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক নিউজবাংলাকে বলেন, ভারতে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন কারণে রেড দেয় পুলিশ। তখন পাচার হওয়া যেসব মেয়েকে জোরপূর্বক যৌন পেশায় লিপ্ত করা হয়, তাদের অনেকে পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। তারপর তাদের বেসরকারি সেফ হোমে রাখা হয়।
তিনি বলেন, ‘সেফ হোম থেকে আমরা তথ্য পাই। তারপর একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনকে। তারা বিষয়টা ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানায়।
‘এরপর ভুক্তভোগীদের ট্রাভেল পাস মেলে। ওই ট্রাভেল পাস নিয়েই দেশে ফিরতে পারেন তারা। এভাবে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পাচারের শিকার নারীরা যখন দেশে আসেন, তখন আমরা তাদের সংখ্যা হিসাব করি।’
‘স্বপ্ন দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে ইজ্জতের ওপর হাত দেয় ওরা’
সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরে আসা এক নারী নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন তার নির্মম অভিজ্ঞতার কথা।
তিনি বলেন, ‘একেকজন একেক কারণে পাচার হয়। অনেকজনকে একসঙ্গে নিয়ে যায় না পাচারকারীরা। কাউকে ভালো ইনকামের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়। কাউকে নেয় মডেল বানানোর প্রলোভন দিয়ে। কাউকে কাউকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিয়ে যাওয়া হয়।’
ওই নারী বলেন, ‘ইন্ডিয়া যাওয়ার আগে এসব জানতাম না। কারণ আমাদের তিনজনকে ভালো কাজের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওখানে গিয়ে দেখি সবই গল্প। একেকজনকে একেক কথা বলে পাচার করা হয়েছে।
‘স্বপ্ন দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে ইজ্জতের ওপর হাত দেয় ওরা। একটা মেয়ে যখন পাচার হয়, তখন ঘাটে ঘাটে ধর্ষণের শিকার হয়। ওটা যে কী আজাব, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’
‘ওই সব বাচ্চার যে কী হয় আল্লাই ভালো জানে’
পাচারের পর নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসা আরও এক নারীর সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
তিনি বলেন, ‘এক অমানুষ নিয়ে যায় আরেক অমানুষের কাছে। এভাবে কত অমানুষের হাতে যে আমাদের পড়তে হয়, তা বলে বোঝাতে পারব না। তারপর বিক্রি করে দেয় ভারতীয় দালালদের কাছে।
‘তারা আবার বিক্রি করে দেয় হোটেলে, গোপন বাসাবাড়িতে বা পতিতালয়ে। এসব জায়গায় থাকতে থাকতে অনেক মেয়ের পেটে বাচ্চা চলে আসে। মেয়েটি দেখতে সুন্দর হলে বাচ্চার ভ্রূণ নষ্ট করে দেয়া হয়।’
‘গোপন বাসাবাড়িতে’ যেসব মেয়েকে রাখা হয়, তাদের মধ্যে কারও কারও পেটে বাচ্চা এলে নষ্ট করা হয় না বলে জানান তিনি।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে মেয়েটি বলেন, ‘যারা গোপন বাসায় পড়ে, অনেক সময় তারা বাচ্চা নষ্ট না করলেও কিছু বলা হয় না, বিশেষ করে যারা দেখতে তেমন আকর্ষণীয় না, বয়স ত্রিশের ওপরে তাদের।
‘একপর্যায়ে সেই সন্তানের জন্ম ওই সব গোপন বাসায়ই হয়। যখন পুলিশ রেড দেয়, তখন বাচ্চাগুলোকে ওখানে রেখেই বাংলাদেশে চলে আসে। ওই সব বাচ্চার যে কী হয় আল্লাই ভালো জানে। শুনছি, ওসব বাচ্চা নাকি ওই দেশে যাদের বাচ্চা হয় না, তাদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়।’
আরও পড়ুন:মিয়ানমারে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নৃশংসতার ঘটনায় ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সাত দেশের জোট জি-৭-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
তারা এক যৌথ বিবৃতিতে এ অবস্থান ব্যক্ত করেন বলে শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইউএনবি।
বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, যৌথ বিবৃতিতে তারা মিয়ানমারে অস্ত্র ও জেট ফুয়েলসহ অন্যান্য উপকরণের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জোটভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সব রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে স্থায়ী প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলেছেন। তারা একটি অর্থবহ ও টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে অবিলম্বে যেকোনো সহিংসতা বন্ধ, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতাদের থেকে শুরু করে নির্বিচারে আটক সব বন্দিদের মুক্তি এবং সব অংশীজনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপ প্রতিষ্ঠার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি শুক্রবার বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে, যেকোনো ধরনের জোরপূর্বক শ্রম থেকে বিরত থাকতে এবং সব বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি ও অভাবী মানুষের কাছে দ্রুত, নিরাপদ ও অবাধ মানবিক প্রবেশাধিকার দেয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি।’
মিয়ানমারে সংঘটিত গুরুতর অপরাধের জন্য জবাবদিহি অপরিহার্য উল্লেখ করে জি-৭ দেশগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২৬৬৯ নম্বর প্রস্তাবের (২০২২) ব্যাপক বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেছি। মিয়ানমার বিষয়ক নবনিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূতের নেতৃত্ব এবং দেশটিতে আবাসিক সমন্বয়কারী নিয়োগের মাধ্যমে এ সংকটে জাতিসংঘের আরও সম্পৃক্ততা সমর্থন করি।’
আরও পড়ুন:সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ও সেই সঙ্গে অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অস্থান নিয়ে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
শনিবারের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
তাপপ্রবাহ নিয়ে বলা আছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং বরিশালের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে যা অব্যাহত থাকতে পারে।
বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা আছে, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য স্থানে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য