সংসারের অভাব থেকে মুক্তি দিতে মাস ছয়েক আগে ১৩ বছরের মেয়েকে রাজধানী ঢাকা পাঠিয়েছিলেন কুড়িগ্রামের এক দম্পতি। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, রাজধানীতে যার বাসায় থাকবে মেয়েটি তারা অনেক ভালো মানুষ, মেয়েটি অনেক ভালো থাকবে। কিন্তু এক মাস পর ওই বাসার মালিক মোবাইলে ফোন করে বাবা-মাকে জানান, মেয়েটি পালিয়ে গেছে, সঙ্গে চুরি করে নিয়ে গেছে ২৫ হাজার টাকাও।
কিন্তু বাড়িওয়ালার এই কথা বিশ্বাস করতে পারেনি কুড়িগ্রামের পরিবারটি। তাদের আশঙ্কা, দেখতে সুন্দর কিশোরী মেয়েটিকে পরিকল্পিতভাবে পাচার করা হয়েছে। মেয়েটির সন্ধানে কুড়িগ্রাম ও রাজধানীর একটি থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন তার বাবা। রাজধানীর একই থানায় জিডি করেছেন ওই বাসার মালিকও।
মেয়েটিকে ঢাকা আনার বিষয়ে শাহিদা ওরফে শানু নামে যে নারীর ভূমিকা ছিল, সেই নারী নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘শাহপরানের অনুসারী যাত্রাবাড়ীর এক দরবেশের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, মেয়েটি দিব্যি ফুর্তিতে আছে।’
পুলিশ বলছে, তারা মেয়েটিকে খুঁজে বের করার চেষ্টায় আছেন।
মেয়ের সন্ধানে রাজধানীতে এসে নাখালপাড়ায় একটি বাসা ভাড়া করেছেন কুড়িগ্রামের ওই বাবা-মা। গত বৃহস্পতিবার ওই বাসায় তাদের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
মেয়েটির বাবা জানান, তিনি এখন ঢাকায় রিকশা চালান। থানা-পুলিশ কোনো সন্ধান দিতে পারছে না। উপায় না পেয়ে রিকশা চালাতে চালাতেও মেয়েকে খুঁজছেন তিনি।
আশঙ্কা প্রকাশ করে এই বাবা বলেন, ‘পত্রিকা ও টিভি খুললেই নারী পাচারের খবর পাই, চমকে উঠি। এভাবে আমাদের মেয়েকেও কি কেউ কৌশলে পাচার করে দিয়েছে? সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমার মেয়ের সন্ধান চাই।’
নিখোঁজ মেয়েটির বাবা-মা জানান, তাদের ঘরে চার মেয়ে, কোনো ছেলে নেই। অভাব-অনটনের কারণে মেজো মেয়েকে এলাকার দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের পীড়াপীড়িতে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এলাকার এক বাসায় পাঠান গত নভেম্বরে। সেখানে কাজ করার এক মাসের মধ্যেই মেয়েটি পালিয়ে যায় বলে দাবি করেন ওই বাসার লোকজন।
বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে ওই বাসার মালিক আবদুল্লাহ আল হেলাল ও তার বড় ভাই জনির সঙ্গে। তারা বলছেন, মেয়েটি দ্বিতল ভবনের নিচতলার বাথরুমের ভাঙা ভেন্টিলেটরের ফাঁকা দিয়ে পালিয়ে গেছে। পালানোর পর এলাকায় মাইকিং করা হয়। পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদ ছাপানো হয়। তারপরও না পেয়ে থানায় জিডি করেন।
শেরেবাংলা নগর থানার এসআই আবদুল বারেক নিউজবাংলাকে জানান, মেয়েটি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী ও শেরেবাংলা নগর থানায় একটি করে জিডি করেছেন তার বাবা-মা। আরেকটি জিডি করেছেন শেরেবাংলা নগরের ওই বাসার মালিক হেলাল। এসব জিডির সূত্র ধরে তদন্ত করা হলেও মেয়েটির সন্ধান মেলেনি।
তিনি আরও বলেন, ‘যে বাসা থেকে নিখোঁজ হয়েছে, সেই বাসায় গিয়েছি। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, মেয়েটি বাসার বাথরুমের ফাঁকা জায়গা দিয়ে পালিয়েছে। তারপরও বিষয়টির অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সিআইবির (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো) সহায়তা চাওয়া হয়েছে।’
নিখোঁজ মেয়েটির বাবা নিউজবাংলাকে জানান, যাত্রাবাড়িতে ‘বান্দা কাজ’ করেন এমন একজন পরিচিত নারী, যার নাম শাহিদা ওরফে শানু ও আব্দুল্লাহ আল হেলালের বড় ভাই জনির মাধ্যমে গত নভেম্বর মাসে মেয়েটি ঢাকা আসে। পরে শেরেবাংলা নগর এলাকার বাসায় পাঠানো হয়। গৃহকর্তা আবদুল্লাহ আল হেলালের বাড়িও কুড়িগ্রামে, নিজেকে কখনো ব্যাংকার, কখনো প্রকৌশলী পরিচয় দেন তিনি। তার স্ত্রীর বাড়ি কুমিল্লায়। মেয়েটির ব্যাপারে হেলালের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। বলেন, ‘তিনি সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া কারও সঙ্গে কথা বলেন না।’
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য সোমবার হেলালের শেরেবাংলা নগরের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের স্টাফ কোয়ার্টারের বাসায় যান নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক। বাসার গেটে তালা মারা দেখে মোবাইলে ফোন করা হলে হেলাল বলেন, ‘আমি ঢাকার বাইরে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় আছি। এখানে এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের আউটসোর্সিংয়ের কাজ করি। মেয়েটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমরাও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’
তিনি বলেন, ‘মেয়েটি পালানোর পর এলাকায় মাইকিং করেছি; থানায় জিডি করেছি। তবে খোঁজ পাইনি। মেয়েটি বাসা থেকে যখন পালিয়ে যায়, তখন আমার স্ত্রী ছিল না। অফিসে যাওয়ার আগে ভুলে ড্রয়ারের চাবি বাসায় রেখে যায়। সেই চাবি দিয়ে ড্রয়ার খুলে ২৫ হাজার টাকাও নিয়ে যায় মেয়েটি।’
মেয়েটির বাবা নিউজবাংলাকে আরও বলেন, ‘‘মেয়ের খবর নিতে থানার এসআইকে ফোন দিলেই তিনি বলেন, ‘আমি খুঁজতেছি না! না পেলে আমি কী করব?’ হেলালকে ফোন করলে তিনিও হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যাহ। তুই থানা-পুলিশ কর। কোর্টের মাধ্যমে ফাঁসি হলে হবে।’ হেলালের বড় ভাই জনিও একই কথা বলে।’’
মেয়েটির পরিণতি নিয়ে নানা আশঙ্কার কথা বলতে গিয়ে তার বাবা আরও বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, মেয়েকে ভারতে পাচার করা হয়েছে। যেহেতু ৫-৬ মাস খুঁজতেছি। মাইকিং করা হচ্ছে। জিডি করেছি। আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে ফেসবুকেও সন্ধান চেয়ে পোস্ট দিয়েছি।
‘এখন পত্রিকা ও টিভিতে দেখি মেয়েদের পাচার করা হয়, তাই আমার সন্দেহ আমার মেয়েকেও পাচার করা হয়েছে। মেয়ের খোঁজ করতেই কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছি। পাঁচ মাস ধরে ঢাকায় রিকশা চালাই, আর মেয়েরে খুঁজি।’
মেয়েটির মা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘‘ঢাকায় নেয়ার এক মাস পরই হেলাল ফোন করে বলে, ‘তোদের মেয়ে পালায়ে গেছে। ওর কাপড়-চোপড় নিয়ে গেছে।’ পরে মেয়ের খোঁজ করতে ঢাকায় আসি।’’
মেয়েটির বাবা বলেন, ‘‘মেয়ের খোঁজ করতে আমরা ডিসেম্বর মাসে একবার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মাঠের বাম পাশের কোয়ার্টারের সামনে যাই। তখন ২০-২৫ জন লোক জড়ো করেন হেলাল। তারপর বলেন, ‘তোর মেয়ে বাসা থেকে পালায়ে গেছে। সিসি ক্যামেরা দেখ।’ আমি ভয়ে বাসায় না গিয়ে তাকে সিসি ক্যামেরা দেখাতে বলি, তিনি বলেন, ‘এমপি-মন্ত্রী ছাড়া কোনো সিসি ক্যামেরা দেখা যাবে না।’’
‘দরবেশ বলেছে, মেয়েটি দিব্যি ফুর্তিতে আছে’
মেয়েটিকে ঢাকা আনতে যে নারী প্রথম যোগাযোগ করেন পরিবারটির সঙ্গে, সেই নারীর সঙ্গে সোমবার মোবাইল ফোনে কথা হয় নিউজবাংলার।
ওই নারী বলেন, ‘মেয়েটি নিখোঁজ হওয়ার পর আমিও দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। মেয়েটির অবস্থান জানার জন্য প্রায় এক মাস আগে শাহপরানের অনুসারী যাত্রাবাড়ীর এক দরবেশের কাছে যাই। ১০১ টাকা ফি দিয়ে মেয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়েটি দিব্যি ফুর্তিতে আছে। এক বছর পর ঠিকই ফিরে আসবে। সে এখন গাজীপুরে এক ছেলের সঙ্গে আছে।’
মেয়েটি কোনো পাচার চক্রের হাতে পড়েছে কি না জানতে চাইলে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত চলছে। দেখা যাক।’
কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য