শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বহুল আলোচিত দুই বোন রিতা-মিতা। তাদের মধ্যে নুরুন নাহার মিতা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার; আইনুন নাহার রিতা ছিলেন চিকিৎসক। তারা দুজনই সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত।
২০০৫ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়ি থেকে এই দুই বোনকে উদ্ধার করে একটি মানবাধিকার সংগঠন। সে সময় বাড়িটি ‘ভূতের বাড়ি’ নামেই পরিচিত ছিল। বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করে থাকতেন তারা। কারও সঙ্গে মিশতেন না, কথাও বলতেন না। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে থাকা তাদের মা বিনা চিকিৎসায় মারা যান। দুই বোন মায়ের লাশ ঘরেই রেখে দেন। কাউকে না জানিয়ে মধ্যরাতে হারিকেন নিয়ে তারা ঘরের বাইরে মায়ের লাশ কবর দিতে চেয়েছিলেন। তখন প্রতিবেশীরা দেখে ফেললে জানাজানি হয়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসা দিলে তারা কিছুটা সুস্থ হন।
তারা সুস্থ হওয়ার পর বেশ কিছুদিন তাদের নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ২০১৩ সালে কাউকে না বলে তারা বগুড়ায় চলে গেলে ফের আলোচনা শুরু হয়। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে রাখা হয় বড় বোন কামরুননাহার হেনার বাসায়।
রিতা-মিতার সর্বশেষ অবস্থা জানতে সম্প্রতি নিউজবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় তাদের বড় বোন কামরুন নাহার হেনার সঙ্গে। কথা হয় হেনা ও তার একমাত্র মেয়ে সামিনা তুন নুরের সঙ্গে।
বড় বোন হেনা জানান, রিতা-মিতা বর্তমানে তার ধানমন্ডির বাসায় আছেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা মোটামুটি ভালোই ছিলেন। কিন্তু করোনার শুরুর দিকেই রিতা-মিতা সব ধরনের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন, যে কারণে আস্তে আস্তে তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন; আবার আগের মতো আচরণ করছেন।
তিনি বলেন, ‘এখন তারা অপরিচিত কারও সঙ্গে দেখা করে না। করোনার কারণে আমরাও কারও বাসায় নিয়ে যাই না।’
ইদানীং ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিতা-মিতাকে নিয়ে নানা ধরনের গুজব চলছে বলে অভিযোগ করেন তাদের বড় বোন হেনা। বলেন, ‘এসব শুধুই গুজব। রিতা-মিতা আমার বাসাতেই আছে এবং তাদের মিরপুরের জায়গা কেউ দখল করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার নিজের দুটি ফ্ল্যাট একসঙ্গে তৈরি করা। কিন্তু আমাদের প্রধান দরজা একটা। ভেতরে একটা ফ্ল্যাটে আমরা স্বামী-স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে থাকি। আরেকটি ফ্ল্যাটে আমার ছোট দুই বোন রিতা-মিতা থাকে।’
রিতা-মিতার কারণে সামজিকভাবে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেন তাদের বড় বোন। বলেন, ‘বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলে আমার চেহারা রিতার মতো হওয়ায় মানুষ আমাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করে। এতে আমার স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।’
‘জমি দখলের প্রশ্নই ওঠে না’
রিতা-মিতার বড় বোন হেনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিরপুরের জমির মালিক এখন আমরা তিন বোন। আমার মা-বাবা বেঁচে নেই। আমার কোনো ভাইও নেই। যেহেতু মিরপুরের জমির মালিক আমিও, তাই সেই জমি আমি দখল করব কেন?
‘তাছাড়া রিতা-মিতা বিয়েও করেনি। তাদের কোনো সন্তানও নেই। তাই ওই জমি তো একসময় আমার মেয়ে সামিনার নামে হয়ে যাবে। তাই প্রশ্নই ওঠে না ওই জামি দখল করার। তাছাড়া আমার স্বামীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে। যেখানে আমি আমার বোন রিতা-মিতাসহ একসঙ্গে আছি। আমার আসলে কোনো আর্থিক সংকট নেই।’
রিতা-মিতার বড় বোন কামরুন নাহার হেনা কিছুটা অসুস্থ থাকায় তিনি বেশি কথা বলতে চাননি। বলেন মেয়ে সামিনা তুন নুরের সঙ্গে কথা বলতে। পরদিন সামিনা তার পরিবার ও তার দুই খালার বিষয়ে কথা বলেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ডাক্তার বলছে, ওষুধ খেলে খালারা ভালো থাকবে। কিন্তু তারা কিছুদিন ওষুধ খায়; তারপর আবার ছেড়ে দেয়। ওষুধ খেলে ছয়-সাত মাস তারা ভালো থাকে। খাওয়া ছেড়ে দিলে আবার আগের মতো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে; উল্টাপাল্টা কথা বলে।’
উল্টাপাল্টা কী বলে এমন প্রশ্নে সামিনা বলেন, এই যেমন বলে, ‘আমি তো পুরা বাংলাদেশের মালিক। আমিই এই দেশ চালাব। এই পুরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আমার। আমাদের কাছে আল্লাহর বাণী আসছে।’ তারা বসে বসে শুধু বিভিন্ন কোড বানায় আর বিড়বিড় করতে থাকে। এসব আমরা বুঝি না। তবে তারা দিনে সময় করে কোরআন তেলাওয়াত করে এবং বাংলায় অর্থসহ পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘তারা এতটাই উল্টাপাল্টা বলে যে মাঝে মাঝে আমাকেই বলে তুমি তো আগে ছেলে ছিলা, এখন মেয়ে হলা কীভাবে? আমার বাবা-মাকে বলে তোদের ছেলে কই? এই মেয়ে কে? অথচ আমার কোনো ভাই নেই, আমিই একমাত্র মেয়ে।’
রিতা-মিতার একমাত্র ভাগনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন তারা নিয়মিত ওষুধ খেত। সমস্যা হয়নি। কিন্তু করোনার শুরুর দিকে তারা সব ধরনের ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়। এখন আমরা ইচ্ছা করলেই তাদের জোর করে ওষুধ খাওয়াতে পারি না।
‘তারা গোপনে সব ওষুধ নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। প্রতিবেশীরা দেখে আমার মাকে সে কথা জানান। আর এই ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়ার পর থেকেই খালারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে সেই আগের মতো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের আচার-আচরণ আগের জায়গায় চলে গেছে।’
সামিনা জানান, আগে মাঝে মাঝে তার খালারা রাস্তায় হাঁটতে বের হতেন। কিন্তু সমস্যা হলো তাদের তো অনেকেই চেনে। তাদের দেখলেই অনেকে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর নানা ধরনের প্রশ্ন করতে থাকে।
‘আপনাদের এই রোগ কীভাবে হলো, আপনারা উল্টাপাল্টা কাজ করেন কেন- এ ধরনের বিব্রতকর কথা বলে মানুষ। এতে খালারা মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ত। একপর্যায়ে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়’, বলেন তিনি।
সামিনা আরও বলেন, ‘তারপরও খালারা আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিত, টিভি দেখত, গান গাইত। কিন্তু করোনার প্রথম দিকে তারা পুরোপুরি ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং আস্তে আস্তে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
‘এখন তারা কারও সঙ্গে দেখা করে না, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে না। উদ্ভট-উদ্ভট কথা বলে। মাঝে মাঝেই আমাদের গালিগালাজ করে। সব সময় ঘরের লাইট বন্ধ রাখে।’
রিতা-মিতাকে সর্বশেষ ২০১৭ সালে হাসপাতালে নেয়া হয় জানিয়ে তাদের ভাগনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরপর ধীরে ধীরে তারা সুস্থ হয়ে ওঠে। কয়েক বছর মোটামুটি ভালোই ছিল। কিন্তু এখন তারা আগের মতোই হয়ে গেছে।
‘কিন্তু করোনার কারণে হাসপাতালে নিতে পারছি না। কারণ এমনিতেই খালারা বয়স্ক মানুষ। এক রোগ থেকে মুক্তির জন্য নিলে যদি আরেক রোগে আক্রান্ত হয়- সে ভয়ে হাসপাতালে নিচ্ছি না। করোনা পরিস্থিতি একটু ভালো হলেই তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাব।’
কেন তারা ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন- জানতে চাইলে সামিনা বলেন, ‘গত বছর হঠাৎ করে তারা বলে আমরা ওষুধ খাব না। আল্লাহর ওহি আমাদের কাছে আসছে। আমাদের ওষুধ খেতে নিষেধ করা হয়েছে। শুধু ওষুধই নয়, তারা মাঝে মাঝে সব ধরনের খাওয়া-দাওয়াই বন্ধ করে দেয়। আল্লাহর ওহিতে নাকি তাদের সব খাওয়া-দাওয়া বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। তার পর আমরা সবাই মিলে জোর করে ধরে খাওয়াই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিনা বলেন, ‘একটা মানুষ অসুস্থ হলে তাদের আত্মীয়স্বজন সেবা-যত্ন করে। কিন্তু আমার নানিবাড়ির কেউ নেই। তাদের জন্য কিছু করার মতো আমার মা, বাবা আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আর আমার বাবার বাড়ির আত্মীয়স্বজন আছে। কিন্তু তারা কেন খালাদের জন্য কিছু করবে? তারা হয়তো আমার মা, বাবা আর আমার জন্য করতে পারে।’
রিতা-মিতার ভাগনি বলেন, ‘রাতের বেলা যখন আমি পানি খেতে উঠি, তখন মাঝে মাঝে দেখি খালাদের রুম থেকে আওয়াজ আসছে। তারা তখন রুমের লাইট বন্ধ করে দিয়ে গান গায়। পুরোনো দিনের বাংলা সিনেমার গান গায়। দুজনে মিলে হাসিঠাট্টা করে। তারা আমাদের সামনে তেমন কথা না বললেও নিজেরা নিজেরা অনেক গল্প করে, গান গায়।’
আইসক্রিম আর রেস্টুরেন্টের খাবার খুব পছন্দ রিতা-মিতার
রিতা-মিতার খাদ্য তালিকায় কী কী আছে জানতে চাইলে তাদের ভাগনি বলেন, ‘আমরা যা খাই তারাও তাই খায়। সকালবেলা রুটি, আলুভাজি, ডিমভাজি অথবা তরকারি- আমরা যেটা খাই। আর দুপুরে ভাত, মাছ, মুরগির মাংস। আব্বু-আম্মুর ডায়াবেটিস। রাতে তারা রুটি খান; আমি আর খালারা ভাত খাই। মোট কথা, আমরা যা খাই তারাও তাই খায়।
‘তারা যখন খেতে চায় না তখন অন্য বিষয় থাকে; অসুস্থতার কারণে খেতে চায় না। এ ছাড়া তারা খাওয়া নিয়ে কোনো রকম জ্বালায় না। তারা খুব লক্ষ্মী। তবে খালারা আইসক্রিম খেতে খুব পছন্দ করে। তাই তাদের জন্য বাসায় প্রায় সব সময় আইসক্রিম কিনে রাখা হয়। দিনে অথবা রাতে তাদের যখন ইচ্ছে হয় তারা ফ্রিজ থেকে নিয়ে আইসক্রিম বের করে খায়।’
সামিনা জানান, সকাল ৭-৮টার মধ্যে তার খালারা নাশতা করেন। দুপুরে একটা-দেড়টার দিকে খাবার খান। আর রাতে ৮টার মাধ্যে রাতের খাবার শেষ করেন। গভীর রাতে দুধ, পাউরুটি আর আইসক্রিম খান তারা।
‘খালারা রেস্টুরেন্টের খাবার খুব পছন্দ করে। তাই আমি মাঝে মাঝেই খালাদের জন্য রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনি। তারা খুব পছন্দ করে খায়’, বলেন তিনি।
সামিনা আরও জানান, আসলে তার খালারা প্রচুর রাত জাগেন। তারা রাত জেগে একেবারে সকাল ৭-৮টার দিকে নাশতা করে ঘুমান। তবে একেক দিন একেক রকম। কোনো দিন রাতে ঘুমান আবার কোনো দিন দিনে ঘুমান। তারা প্রচুর লেখাপড়ে করেন।
সামিনা বলেন, ‘তারা ডিকশনারি পড়ে। একেকটা করে ওয়ার্ড মুখস্ত করে। আর তাদের মাথায় যা আসে সেটা ফিজিক্সের কোডের মতো করে লেখে। উল্টাপাল্টা যা মনে আসে তাই লেখে। একজন সাধারণ মানুষ সেই লেখা দেখলে কিছুই বুঝতে পারবে না।
‘আমরাও তাদের লেখা বুঝতে পারি না। খালারা আগে নিয়মিত টিভি দেখত। এখন আর টিভি দেখে না। এখন তারা কাউকেই পছন্দ করে না। যেই কাছে যায় তাকে গালাগালি করা শুরু করে।’
আক্ষেপ করে সামিনা বলেন, ‘খালাদের আত্মীয়স্বজন বলতে এখন একমাত্র আমরাই আছি। এ ছাড়া আর আপন বলে কেউ নেই। আমরা ছেড়ে দিলে তারা মারাই যেত। আমার খুব হিসাব করে চলতে হয়। আমার মা-বাবার বয়স হয়ে গেছে। তারা মাঝে মাঝে অসুস্থ থাকে। খালারাও অসুস্থ। বাসায় আমি একা সুস্থ মানুষ। আর কেউ নেই।
‘যখন তারা সবাই অসুস্থ থাকে তখন আমাকেই পুরা পরিবার সামলাতে হয়। আমার বন্ধুরা যখন-তখন বেড়াতে যেতে পারে, কিন্তু আমি পারি না। কারণ খালাদের কে কখন ওষুধ খাবে বা খাবার খাবে সেটাও আমাকে ভাবতে হয়।’
রিতা-মিতার ভাগনি জানান, তার লেখাপড়া শেষ দিকে। কিন্তু পুরো পরিবারের যে অবস্থা তাতে কাকে তিনি বিয়ে করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
সামিনা বলেন, ‘আমার লেখাপড়া শেষের দিকে। এখন আমি কাকে বিয়ে করব- সেটা নিয়েও আমাকে ভাবতে হয়। কারণ আমার স্বামী যিনি হবেন তাকে অবশ্যই আমাদের বাসায় থাকতে হবে। এবং আমার মা-বাবা, আর দুই খালাকে দেখতে হবে। আমি ছাড়া তো এদের আর কেউ নেই।
‘নিজের জীবনের এতটা সংগ্রাম করেও যখন মানুষের মুখে শুনতে হয় আমরা মিরপুরের জমি দখল করেছি অথবা আমরা খালাদের লন্ডনে পাঠিয়ে দিয়েছি তখন কেমন লাগে বলেন তো?’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবার বয়স ৭৫। প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকে। তারপরও বাবা খালাদের অনেক খেয়াল রাখে। খালারাও বড় দুলাভাই হিসেবে বাবার কাছে অনেক আবদার করে- এটা খাব ওটা খাব। বাবাও সেটা পূরণ করে।’
এ সময় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে রিতা-মিতার ভাগনি বলেন, ‘আর কিছু মানুষ ফেসবুকে প্রচার চালাচ্ছেন আমার বাবা জমি দখলের জন্য খালাদের লন্ডনে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের পরিবারের মধ্যে একজনকেও পাওয়া যাবে না যে লন্ডনে থাকে। তাহলে খালাদের লন্ডনে কার কাছে পাঠাব? খালাদের তো পাসপোর্টও নেই।
‘আমি বাবা-মাকে বলেছি মিরপুরের ওই জায়গায় ঘর করে ভাড়া দিয়ে দাও। কারণ আল্লাহ না করুক বাবা-মা না থাকলে আমিসহ খালাদের নিয়ে চলব কী করে? তাদের যেন চিকিৎসা করাতে পারি।’
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ী হত্যা ও মব সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র বলেন, ‘ঢাকায় যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, সেটা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গতকালও র্যাব দুজন ও ডিএমপি দুজনকে ধরেছে। পরে আরও একজনকে ধরা হয়েছে।’
বাকিদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মোটামুটি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি। ছোটখাট ঘটনায়ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। এই জিনিসটা বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে চাঁদপুরে, খুলনা ও চট্টগ্রামের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
পুলিশের মিল ব্যারাক এলাকা পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সঙ্গে একটু কথা বলা। তাদের থাকা ও খাবারের মান দেখা। আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে তাদের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব এখানে।’
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই বলেও এ সময় মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, সেটা আমরা জানি না। সেটা জানাবে নির্বাচন কমিশন।’
অভিযানে গৌরবময় অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের টাগবোট ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘প্রশংসাপত্র’ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)।
শনিবার সকালে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বাসস’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানকালে গত বছর ৫ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন তেলবাহী জাহাজ ‘এমটি বাংলার সৌরভ’-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দ্রুত ও কার্যকর অগ্নিনির্বাপণ এবং সামুদ্রিক পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ অসাধারণ ভূমিকা রাখে।
ঘটনার সময় ট্যাংকারটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র ও পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তৎক্ষণাৎ জরুরি উদ্ধার অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।
‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর সাহসী নাবিকরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। সেই অভিযানে ৪৮ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কার্যকর ব্যারিয়ার স্থাপন ও বর্জ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে দূষণরোধ করা হয়।
এই দৃষ্টান্তমূলক ও সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘লেটার অব কমান্ডেশন' দিয়েছে।
আইএমও এই অভিযানে প্রদর্শিত পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তা নীতিমালা অনুসরণের বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইএমও’র এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের জন্য বড় অর্জন। এটি শুধু কোস্টগার্ড নয়, পুরো দেশের জন্যই গর্বের। এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, কোস্টগার্ড একটি আধুনিক ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে যেকোন দুর্যোগে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সর্বদা সমুদ্রসীমায় নিরাপত্তা বিধান, বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার, সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর থাকবে।
টানা চার দিনের মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পর টানা দুদিন নোয়াখালীতে রোদ্রৌউজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করছে। এতে অধিকাংশ উপজেলায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর ও লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বেড়েছে। স্থানীয়দের ধারণা ফেনীর পানি ঢুকে বৃষ্টি না থাকলে এ অঞ্চলে পানি বেড়েছে।
শনিবার (১১ জুলাই) সকালে জেলার সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দারা জানায় তাদের এলাকায় পানি নামছে ধীর গতিতে। এজন্য বেশিরভাগ এলাকায় এখনো বন্যার পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০৩ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫টি বসতঘর। সুবর্ণচরে একটি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ,পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয় গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। হালকা বৃষ্টিতেই নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এদিকে মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সেন্ট্রাল রোড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনো রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে রয়েছে। আশপাশের অনেক বাসাবাড়িতেও পানি জমে রয়েছে। টানা বৃষ্টির বিরতিতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে তেমন কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। আপাতত ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা নেই। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজার ৮৫০ জন মানুষ এবং ১৭১টি গবাদি পশু। দুর্গতদের চিকিৎসায় ৫১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি কাজ শুরু করেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ করা হবে।
উপদেষ্টা শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে এবং ধারা ১০-এর অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করা হবে।
গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও ইট-পাথরের আঘাতে মাথা ও শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ, মামলার এজাহার, নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে হত্যাকাণ্ডের এমন বর্ণনা উঠে এসেছে।
মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ চাঁদাবাজি। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এদিকে, অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। পাশাপাশি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আসকর আলী (২৪) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) ভোরে উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আসকর আলী হরিপুর উপজেলার জীবনপুর গ্রামের কানুরার ছেলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, শনিবার ভোর আনুমানিক চারটার দিকে আসকর আলীসহ কয়েকজন মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যান। এ সময় ভারতের কিষাণগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে আসকর আলী ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার মরদেহ ভারতের প্রায় ২০০ গজ অভ্যন্তরে পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে, ভারতের সীমান্তেও অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে।
দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে। নিহত যুবকের লাশ ফেরত আনার জন্য বিএসএফকে পতাকা বৈঠকে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪২ বিজিবি জানিয়েছে, "আমরা বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশটি ফেরত আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচও’র এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, আমরা এটিকে জবাবদিহিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে সরকারের এই বক্তব্য তুলে ধরেন।
সায়মা ওয়াজেদকে পদ থেকে অপসারণ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, যেখানে সায়মা ওয়াজেদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে, তার সকল সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে এবং এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বের সততা ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায়বিচারের আবির্ভাবে আনন্দিত।
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আট মাস পর আবারো ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হয়েছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থল বন্দরের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা মো. নিজামুল ইসলাম আজ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ শনিবার মরিচ বোঝাই দুটি ট্রাক হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। এর আগে গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দুটি ট্রাকে ১৬ মেট্রিক টন ২৪ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি করা হয়। এ নিয়ে দুই দিনে চারটি ট্রাকে ৩২ মেট্রিক টন ৪৮ কেজি কাঁচা মরিচ দেশে আমদানি করা হলো।
হিলি স্থল বন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী জানান, হিলি স্থলবন্দর আমদানিকারক ব্যবসায়ী মেসার্স এনপি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও সততা বাণিজ্যালয় নামের দুটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের শিলিগুড়ি থেকে ৩২ টন ৪৮ কেজি কাঁচামরিচ আমদানি করেছে।
হিলি বাজার ঘুরে জানা যায়, প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর দুইদিন আগে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
হিলি বাজারের কাঁচামরিচ বিক্রেতা আব্দুর রহিম বাসসকে বলেন, ‘কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির কারণে মরিচ ক্ষেতে কাঁচামরিচের ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মরিচ উৎপাদন অনেক কমে গেছে। তাই মোকামগুলোতে মরিচ সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে দেশীয় কাঁচামরিচ না পাওয়ায় আমরা ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচামরিচ বিক্রি করছি।
আমদানিকারক সততা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বাবলু রহমান জানান, দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের চাহিদা ও হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির কারণে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে মরিচ আমদানি করা হচ্ছে। গতকাল আমদানি করা দুই ট্রাক মরিচ দেশে প্রবেশের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজধানীসহ কয়েকটি জেলায় পাঠানো হয়েছে। আজ শনিবার আমদানি করা মরিচ একইভাবে খালাস করে বিক্রি প্রক্রিয়া আজ শনিবার দিনের মধ্যেই শেষ করা হবে। চাহিদা না থাকলে আর মরিচ আমদানি করা হবে না বলেও তিনি জানান।
হিলি আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী বলেন, ‘দেশের বাজার স্বাভাবিক রাখতে বন্দর দিয়ে অন্যান্য পণ্যসহ কাঁচা-মরিচ আমদানি করা হচ্ছে। আমদানিকৃত কাঁচামরিচ আশপাশের উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে। কয়েক দিনের মধ্য কাঁচামরিচের দাম আরও কমে আসবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।’
গত বছরের ১৪ নভেম্বর সর্বশেষ এ বন্দর দিয়ে তিনটি ট্রাকে ৩১ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ আমদানি করা হয়। সে সময় দেশে মরিচের চাহিদা না থাকায় এর একদিন পর ১৫ নভেম্বর থেকে কাঁচামরিচ আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশীয় কাঁচামরিচের সরবরাহ কম থাকায় দীর্ঘ আট মাস পর ভারত থেকে পুনরায় কাঁচামরিচ আমদানি করা হলো।
মন্তব্য