শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বহুল আলোচিত দুই বোন রিতা-মিতা। তাদের মধ্যে নুরুন নাহার মিতা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার; আইনুন নাহার রিতা ছিলেন চিকিৎসক। তারা দুজনই সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত।
২০০৫ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়ি থেকে এই দুই বোনকে উদ্ধার করে একটি মানবাধিকার সংগঠন। সে সময় বাড়িটি ‘ভূতের বাড়ি’ নামেই পরিচিত ছিল। বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করে থাকতেন তারা। কারও সঙ্গে মিশতেন না, কথাও বলতেন না। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে থাকা তাদের মা বিনা চিকিৎসায় মারা যান। দুই বোন মায়ের লাশ ঘরেই রেখে দেন। কাউকে না জানিয়ে মধ্যরাতে হারিকেন নিয়ে তারা ঘরের বাইরে মায়ের লাশ কবর দিতে চেয়েছিলেন। তখন প্রতিবেশীরা দেখে ফেললে জানাজানি হয়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসা দিলে তারা কিছুটা সুস্থ হন।
তারা সুস্থ হওয়ার পর বেশ কিছুদিন তাদের নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ২০১৩ সালে কাউকে না বলে তারা বগুড়ায় চলে গেলে ফের আলোচনা শুরু হয়। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে রাখা হয় বড় বোন কামরুননাহার হেনার বাসায়।
রিতা-মিতার সর্বশেষ অবস্থা জানতে সম্প্রতি নিউজবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় তাদের বড় বোন কামরুন নাহার হেনার সঙ্গে। কথা হয় হেনা ও তার একমাত্র মেয়ে সামিনা তুন নুরের সঙ্গে।
বড় বোন হেনা জানান, রিতা-মিতা বর্তমানে তার ধানমন্ডির বাসায় আছেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা মোটামুটি ভালোই ছিলেন। কিন্তু করোনার শুরুর দিকেই রিতা-মিতা সব ধরনের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন, যে কারণে আস্তে আস্তে তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন; আবার আগের মতো আচরণ করছেন।
তিনি বলেন, ‘এখন তারা অপরিচিত কারও সঙ্গে দেখা করে না। করোনার কারণে আমরাও কারও বাসায় নিয়ে যাই না।’
ইদানীং ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিতা-মিতাকে নিয়ে নানা ধরনের গুজব চলছে বলে অভিযোগ করেন তাদের বড় বোন হেনা। বলেন, ‘এসব শুধুই গুজব। রিতা-মিতা আমার বাসাতেই আছে এবং তাদের মিরপুরের জায়গা কেউ দখল করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার নিজের দুটি ফ্ল্যাট একসঙ্গে তৈরি করা। কিন্তু আমাদের প্রধান দরজা একটা। ভেতরে একটা ফ্ল্যাটে আমরা স্বামী-স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে থাকি। আরেকটি ফ্ল্যাটে আমার ছোট দুই বোন রিতা-মিতা থাকে।’
রিতা-মিতার কারণে সামজিকভাবে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেন তাদের বড় বোন। বলেন, ‘বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলে আমার চেহারা রিতার মতো হওয়ায় মানুষ আমাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করে। এতে আমার স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।’
‘জমি দখলের প্রশ্নই ওঠে না’
রিতা-মিতার বড় বোন হেনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিরপুরের জমির মালিক এখন আমরা তিন বোন। আমার মা-বাবা বেঁচে নেই। আমার কোনো ভাইও নেই। যেহেতু মিরপুরের জমির মালিক আমিও, তাই সেই জমি আমি দখল করব কেন?
‘তাছাড়া রিতা-মিতা বিয়েও করেনি। তাদের কোনো সন্তানও নেই। তাই ওই জমি তো একসময় আমার মেয়ে সামিনার নামে হয়ে যাবে। তাই প্রশ্নই ওঠে না ওই জামি দখল করার। তাছাড়া আমার স্বামীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে। যেখানে আমি আমার বোন রিতা-মিতাসহ একসঙ্গে আছি। আমার আসলে কোনো আর্থিক সংকট নেই।’
রিতা-মিতার বড় বোন কামরুন নাহার হেনা কিছুটা অসুস্থ থাকায় তিনি বেশি কথা বলতে চাননি। বলেন মেয়ে সামিনা তুন নুরের সঙ্গে কথা বলতে। পরদিন সামিনা তার পরিবার ও তার দুই খালার বিষয়ে কথা বলেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ডাক্তার বলছে, ওষুধ খেলে খালারা ভালো থাকবে। কিন্তু তারা কিছুদিন ওষুধ খায়; তারপর আবার ছেড়ে দেয়। ওষুধ খেলে ছয়-সাত মাস তারা ভালো থাকে। খাওয়া ছেড়ে দিলে আবার আগের মতো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে; উল্টাপাল্টা কথা বলে।’
উল্টাপাল্টা কী বলে এমন প্রশ্নে সামিনা বলেন, এই যেমন বলে, ‘আমি তো পুরা বাংলাদেশের মালিক। আমিই এই দেশ চালাব। এই পুরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আমার। আমাদের কাছে আল্লাহর বাণী আসছে।’ তারা বসে বসে শুধু বিভিন্ন কোড বানায় আর বিড়বিড় করতে থাকে। এসব আমরা বুঝি না। তবে তারা দিনে সময় করে কোরআন তেলাওয়াত করে এবং বাংলায় অর্থসহ পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘তারা এতটাই উল্টাপাল্টা বলে যে মাঝে মাঝে আমাকেই বলে তুমি তো আগে ছেলে ছিলা, এখন মেয়ে হলা কীভাবে? আমার বাবা-মাকে বলে তোদের ছেলে কই? এই মেয়ে কে? অথচ আমার কোনো ভাই নেই, আমিই একমাত্র মেয়ে।’
রিতা-মিতার একমাত্র ভাগনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন তারা নিয়মিত ওষুধ খেত। সমস্যা হয়নি। কিন্তু করোনার শুরুর দিকে তারা সব ধরনের ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়। এখন আমরা ইচ্ছা করলেই তাদের জোর করে ওষুধ খাওয়াতে পারি না।
‘তারা গোপনে সব ওষুধ নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। প্রতিবেশীরা দেখে আমার মাকে সে কথা জানান। আর এই ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়ার পর থেকেই খালারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে সেই আগের মতো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের আচার-আচরণ আগের জায়গায় চলে গেছে।’
সামিনা জানান, আগে মাঝে মাঝে তার খালারা রাস্তায় হাঁটতে বের হতেন। কিন্তু সমস্যা হলো তাদের তো অনেকেই চেনে। তাদের দেখলেই অনেকে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর নানা ধরনের প্রশ্ন করতে থাকে।
‘আপনাদের এই রোগ কীভাবে হলো, আপনারা উল্টাপাল্টা কাজ করেন কেন- এ ধরনের বিব্রতকর কথা বলে মানুষ। এতে খালারা মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ত। একপর্যায়ে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়’, বলেন তিনি।
সামিনা আরও বলেন, ‘তারপরও খালারা আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিত, টিভি দেখত, গান গাইত। কিন্তু করোনার প্রথম দিকে তারা পুরোপুরি ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং আস্তে আস্তে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
‘এখন তারা কারও সঙ্গে দেখা করে না, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে না। উদ্ভট-উদ্ভট কথা বলে। মাঝে মাঝেই আমাদের গালিগালাজ করে। সব সময় ঘরের লাইট বন্ধ রাখে।’
রিতা-মিতাকে সর্বশেষ ২০১৭ সালে হাসপাতালে নেয়া হয় জানিয়ে তাদের ভাগনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরপর ধীরে ধীরে তারা সুস্থ হয়ে ওঠে। কয়েক বছর মোটামুটি ভালোই ছিল। কিন্তু এখন তারা আগের মতোই হয়ে গেছে।
‘কিন্তু করোনার কারণে হাসপাতালে নিতে পারছি না। কারণ এমনিতেই খালারা বয়স্ক মানুষ। এক রোগ থেকে মুক্তির জন্য নিলে যদি আরেক রোগে আক্রান্ত হয়- সে ভয়ে হাসপাতালে নিচ্ছি না। করোনা পরিস্থিতি একটু ভালো হলেই তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাব।’
কেন তারা ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন- জানতে চাইলে সামিনা বলেন, ‘গত বছর হঠাৎ করে তারা বলে আমরা ওষুধ খাব না। আল্লাহর ওহি আমাদের কাছে আসছে। আমাদের ওষুধ খেতে নিষেধ করা হয়েছে। শুধু ওষুধই নয়, তারা মাঝে মাঝে সব ধরনের খাওয়া-দাওয়াই বন্ধ করে দেয়। আল্লাহর ওহিতে নাকি তাদের সব খাওয়া-দাওয়া বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। তার পর আমরা সবাই মিলে জোর করে ধরে খাওয়াই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিনা বলেন, ‘একটা মানুষ অসুস্থ হলে তাদের আত্মীয়স্বজন সেবা-যত্ন করে। কিন্তু আমার নানিবাড়ির কেউ নেই। তাদের জন্য কিছু করার মতো আমার মা, বাবা আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আর আমার বাবার বাড়ির আত্মীয়স্বজন আছে। কিন্তু তারা কেন খালাদের জন্য কিছু করবে? তারা হয়তো আমার মা, বাবা আর আমার জন্য করতে পারে।’
রিতা-মিতার ভাগনি বলেন, ‘রাতের বেলা যখন আমি পানি খেতে উঠি, তখন মাঝে মাঝে দেখি খালাদের রুম থেকে আওয়াজ আসছে। তারা তখন রুমের লাইট বন্ধ করে দিয়ে গান গায়। পুরোনো দিনের বাংলা সিনেমার গান গায়। দুজনে মিলে হাসিঠাট্টা করে। তারা আমাদের সামনে তেমন কথা না বললেও নিজেরা নিজেরা অনেক গল্প করে, গান গায়।’
আইসক্রিম আর রেস্টুরেন্টের খাবার খুব পছন্দ রিতা-মিতার
রিতা-মিতার খাদ্য তালিকায় কী কী আছে জানতে চাইলে তাদের ভাগনি বলেন, ‘আমরা যা খাই তারাও তাই খায়। সকালবেলা রুটি, আলুভাজি, ডিমভাজি অথবা তরকারি- আমরা যেটা খাই। আর দুপুরে ভাত, মাছ, মুরগির মাংস। আব্বু-আম্মুর ডায়াবেটিস। রাতে তারা রুটি খান; আমি আর খালারা ভাত খাই। মোট কথা, আমরা যা খাই তারাও তাই খায়।
‘তারা যখন খেতে চায় না তখন অন্য বিষয় থাকে; অসুস্থতার কারণে খেতে চায় না। এ ছাড়া তারা খাওয়া নিয়ে কোনো রকম জ্বালায় না। তারা খুব লক্ষ্মী। তবে খালারা আইসক্রিম খেতে খুব পছন্দ করে। তাই তাদের জন্য বাসায় প্রায় সব সময় আইসক্রিম কিনে রাখা হয়। দিনে অথবা রাতে তাদের যখন ইচ্ছে হয় তারা ফ্রিজ থেকে নিয়ে আইসক্রিম বের করে খায়।’
সামিনা জানান, সকাল ৭-৮টার মধ্যে তার খালারা নাশতা করেন। দুপুরে একটা-দেড়টার দিকে খাবার খান। আর রাতে ৮টার মাধ্যে রাতের খাবার শেষ করেন। গভীর রাতে দুধ, পাউরুটি আর আইসক্রিম খান তারা।
‘খালারা রেস্টুরেন্টের খাবার খুব পছন্দ করে। তাই আমি মাঝে মাঝেই খালাদের জন্য রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনি। তারা খুব পছন্দ করে খায়’, বলেন তিনি।
সামিনা আরও জানান, আসলে তার খালারা প্রচুর রাত জাগেন। তারা রাত জেগে একেবারে সকাল ৭-৮টার দিকে নাশতা করে ঘুমান। তবে একেক দিন একেক রকম। কোনো দিন রাতে ঘুমান আবার কোনো দিন দিনে ঘুমান। তারা প্রচুর লেখাপড়ে করেন।
সামিনা বলেন, ‘তারা ডিকশনারি পড়ে। একেকটা করে ওয়ার্ড মুখস্ত করে। আর তাদের মাথায় যা আসে সেটা ফিজিক্সের কোডের মতো করে লেখে। উল্টাপাল্টা যা মনে আসে তাই লেখে। একজন সাধারণ মানুষ সেই লেখা দেখলে কিছুই বুঝতে পারবে না।
‘আমরাও তাদের লেখা বুঝতে পারি না। খালারা আগে নিয়মিত টিভি দেখত। এখন আর টিভি দেখে না। এখন তারা কাউকেই পছন্দ করে না। যেই কাছে যায় তাকে গালাগালি করা শুরু করে।’
আক্ষেপ করে সামিনা বলেন, ‘খালাদের আত্মীয়স্বজন বলতে এখন একমাত্র আমরাই আছি। এ ছাড়া আর আপন বলে কেউ নেই। আমরা ছেড়ে দিলে তারা মারাই যেত। আমার খুব হিসাব করে চলতে হয়। আমার মা-বাবার বয়স হয়ে গেছে। তারা মাঝে মাঝে অসুস্থ থাকে। খালারাও অসুস্থ। বাসায় আমি একা সুস্থ মানুষ। আর কেউ নেই।
‘যখন তারা সবাই অসুস্থ থাকে তখন আমাকেই পুরা পরিবার সামলাতে হয়। আমার বন্ধুরা যখন-তখন বেড়াতে যেতে পারে, কিন্তু আমি পারি না। কারণ খালাদের কে কখন ওষুধ খাবে বা খাবার খাবে সেটাও আমাকে ভাবতে হয়।’
রিতা-মিতার ভাগনি জানান, তার লেখাপড়া শেষ দিকে। কিন্তু পুরো পরিবারের যে অবস্থা তাতে কাকে তিনি বিয়ে করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
সামিনা বলেন, ‘আমার লেখাপড়া শেষের দিকে। এখন আমি কাকে বিয়ে করব- সেটা নিয়েও আমাকে ভাবতে হয়। কারণ আমার স্বামী যিনি হবেন তাকে অবশ্যই আমাদের বাসায় থাকতে হবে। এবং আমার মা-বাবা, আর দুই খালাকে দেখতে হবে। আমি ছাড়া তো এদের আর কেউ নেই।
‘নিজের জীবনের এতটা সংগ্রাম করেও যখন মানুষের মুখে শুনতে হয় আমরা মিরপুরের জমি দখল করেছি অথবা আমরা খালাদের লন্ডনে পাঠিয়ে দিয়েছি তখন কেমন লাগে বলেন তো?’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবার বয়স ৭৫। প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকে। তারপরও বাবা খালাদের অনেক খেয়াল রাখে। খালারাও বড় দুলাভাই হিসেবে বাবার কাছে অনেক আবদার করে- এটা খাব ওটা খাব। বাবাও সেটা পূরণ করে।’
এ সময় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে রিতা-মিতার ভাগনি বলেন, ‘আর কিছু মানুষ ফেসবুকে প্রচার চালাচ্ছেন আমার বাবা জমি দখলের জন্য খালাদের লন্ডনে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের পরিবারের মধ্যে একজনকেও পাওয়া যাবে না যে লন্ডনে থাকে। তাহলে খালাদের লন্ডনে কার কাছে পাঠাব? খালাদের তো পাসপোর্টও নেই।
‘আমি বাবা-মাকে বলেছি মিরপুরের ওই জায়গায় ঘর করে ভাড়া দিয়ে দাও। কারণ আল্লাহ না করুক বাবা-মা না থাকলে আমিসহ খালাদের নিয়ে চলব কী করে? তাদের যেন চিকিৎসা করাতে পারি।’
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সমুদ্রসীমার একটি পরিপূর্ণ হাইড্রোগ্রাফিক তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে আরো পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, নিষ্ঠার সাথে কাজ করার জন্য হাইড্রোগ্রাফিক পেশাজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত আরো মজবুত ও সমৃদ্ধ করতে সমুদ্র তলদেশের নির্ভুল মানচিত্রায়নের মাধ্যমে একটি কার্যকর ও টেকসই সমুদ্রনীতি গড়ে তুলতে হবে।
‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস-২০২৫’ উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বাংলাদেশে ‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস-২০২৫’ উদ্যাপন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত।’
তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীসহ দিবসটি আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সাথে এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য-‘সিবেড ম্যাপিং: এনাবলিং ওশান এ্যাকশন’- যার মাধ্যমে গভীর সমুদ্রের তলদেশের মানচিত্রায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে, অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত হয়েছে বলে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় বঙ্গোপসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বাংলাদেশই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বঙ্গোপসাগরের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে একটি উৎপাদনমুখী ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এ লক্ষ্য অর্জনে সমুদ্র সম্পদকে আরো কার্যকরভাবে ব্যবহারে বিশদ, হালনাগাদ ও নির্ভুল হাইড্রোগ্রাফিক তথ্যের কোনো বিকল্প নেই।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও সমুদ্রসীমার হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ, চার্ট প্রস্তুত, সকল দেশি ও বিদেশি জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের সমুদ্র আইন অনুযায়ী, আমাদের মহীসোপান অঞ্চল নির্ধারণ এবং সুনীল অর্থনীতি বিকাশে হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আমাদের সামরিক ও নৌ-নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি হাইড্রোগ্রাফি বিভাগ সমুদ্র বন্দরের উন্নয়ন, মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং উপকূলীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
তিনি ‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস-২০২৫’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
শনিবার সরকারি ছুটি থাকলেও বাজেট কার্যক্রম চলমান থাকায় কাস্টমস ও ভ্যাট এবং আয়করসহ রাজস্ব আদায়ের সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য সকল দপ্তর খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী বেনাপোল কাস্টমস হাউস শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও খোলা থাকার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, বেনাপোল কাস্টম হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার এইচ এম শরিফুল ইসলাম। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক থাকবে বলে জানান এ কর্মকর্তা। ১৮ জুন উম্মে আয়মান কাশমী (দ্বিতীয় সচিব বোর্ড প্রশাসন-১) স্বাক্ষরিত একপত্রের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে বাজেট কার্যক্রম চলমান থাকায় আগামী ২১/০৬/২০২৫ ও ২৮/০৬/২০২৫ তারিখ শনিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এর অধীনস্থ কাস্টমস ও ভ্যাট এবং আয়করসহ রাজস্ব আদায়ের সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য সকল দপ্তর খোলা রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। বেড়ে চলেছে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সরকারের দেওয়া হিসাবে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। এই সময়ে সারা দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫১ জন। তবে এই সময়ের মধ্যে কারো মৃত্যু হয়নি।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে আক্রান্তের দিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে বরিশাল বিভাগ, যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৮৬ জন।
শুক্রবার (২০ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৮ জন। আর ঢাকার বাইরে অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১২৭ জন।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭ হাজার ৭৭ জন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ০৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ নারী।
এই সময়ের মধ্যে মোট ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ নারী।
জলবায়ু সহনশীলতা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরিবহন অবকাঠামো ও ব্যাংক খাতে সংস্কারে চারটি প্রধান উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে ১৩০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার (২০ জুন) রাজধানীর ইআরডি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও এডিবির মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদির সিদ্দিকী এবং এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং সংশ্লিষ্ট নথিতে সই করেন।
ইআরডি সচিব বলেন, ‘এই চুক্তিগুলো আমাদের জলবায়ু সহনশীলতা জোরদার, অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিচ্ছন্ন জ্বালানির প্রসার ও আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এডিবির সহায়তা আমাদের জাতীয় অগ্রাধিকার অনুযায়ী অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।’
যে ৪ প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে—৪০ কোটি ডলারের ‘জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচি (সিআরআইডিপি)’ সই করেছে এডিবি ও বাংলাদেশ। এই কর্মসূচির লক্ষ্য জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধি, নির্গমন হ্রাস এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। এই প্রকল্পের আওতায় এজেন্সি ফ্রান্সেস ডি ডেভেলপমেন্ট (এএফডি) থেকে প্রায় ১১ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক থেকে ৪০ কোটি ডলার সহ-অর্থায়ন পাবে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া, বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ গঠন, দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন জোরদার, জেন্ডার-সংবেদনশীল স্থানীয় অভিযোজন প্রচার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবহন মাস্টার প্ল্যানকে সহায়তা করবে সিআরআইডিপি।
এরপর রয়েছে ২০ কোটি ডলারের ‘বিদ্যুৎ সঞ্চালন শক্তিশালীকরণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি একীভূতকরণ প্রকল্প’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বগুড়া, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, হবিগঞ্জ, পিরোজপুর ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন গ্রামীণ জেলায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নীত করা হবে।
পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির একীভূতকরণে সহায়তা করবে এই প্রকল্প, যা নির্ভরযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
তাছাড়া, ঢাকা উত্তর-পশ্চিম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করিডোর উন্নয়নে ২০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে এডিবি ও বাংলাদেশ সরকার। করিডোরটির উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশের আঞ্চলিক বাণিজ্য আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করা হবে। প্রকল্পটি ভুটান, ভারত ও নেপালের সঙ্গে আঞ্চলিক সংযোগ উন্নয়নে সহায়তা করবে বলে বলা হয়েছে।
এতে জলবায়ু সহনশীল ডিজাইন ও জেন্ডার-সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্য যেমন ফুটব্রিজ ও মটরবিহীন যানবাহনের জন্য আলাদা লেন অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল ও সংস্কারের পথে এগিয়ে নিতে ৫০ কোটি ডলারের ‘ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও সংস্কার কর্মসূচি’ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
এই সংস্কারকেন্দ্রিক কর্মসূচিটি নিয়ন্ত্রক তত্ত্বাবধান শক্তিশালী করবে, আর্থিক সম্পদের গুণমান উন্নত করবে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানো ও খেলাপি ঋণ সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই প্রকল্প সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই সমন্বিত সহায়তা প্যাকেজ বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী সহনশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মন্তব্য করেন হো ইউন জিয়ং।
সীমান্তের ওপারে ভারতের ভেতরে সিলেটের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উৎমাছড়া সীমান্তের ওপারে জাকারিয়া আহমদ (২৩) নামের ওই যুবকের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে বলে খবর পান পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি বিজিবি ও পুলিশকে জানিয়েছে পরিবার।
নিহত জাকারিয়া (২৩) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার লামারগ্রাম কামালবস্তির আলাউদ্দিন আলাইয়ের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোরে জাকারিয়া বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১২৫৭ নম্বর মেইন পিলারের ২০ নম্বর ছাফ পিলারের নিকটবর্তী ভারতের অভ্যন্তরে একটি গাছের ডালে দড়িতে ঝুলন্ত একটি মরদেহ দেখা গেছে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিহত ব্যক্তির পরিবার মরদেহটি জাকারিয়ার বলে শনাক্ত করে।
তার পরিবারের সদস্যরা জানান, গত সোমবার একই ইউনিয়নের কাকরাইল গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে জাকারিয়ার বিয়ে হয়েছিল।
সিলেট কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ জানান, ‘সীমান্তের পিলারের ওপারে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। লাশ উদ্ধারের জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)র উৎমাছড়া ক্যাম্পের কমান্ডারের সাথে আলাপ হয়েছে। নিহতের পরিবার থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হলে পরবর্তীতে বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা গিয়ে লাশ উদ্ধার করতে পারবে। যেহেতু সীমান্তের ওপারে তাই কিছু আইনি জটিলতার জন্য লাশ উদ্ধারে বিলম্ব হচ্ছে।’
এদিকে , বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উৎমা বিওপি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) সমন্বয়ে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি।
কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ফেনীর ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর একটি স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয় পানি ঢুকেছে । এতে চার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ২০২৪ এর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার বছর না পেরোতেই আবারও বাঁধ ভাঙনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দায়সারা কাজকে দুষছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জনগণ বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারের দায়সারা সংস্কার ও মেরামতের কারণে এখানকার জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দিবাগত রাত ১০টার দিকে এ ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর বরইয়া বণিকপাড়া সহদেব বৈদ্যের বাড়ি-সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধের একটি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনগণ প্রাণপণ চেষ্টা করেও এ ভাঙ্গন ঠেকাতে পারেনি।
এতে উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বণিকপাড়া, বসন্তপুর এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যা থেকে ফুলগাজী তরকারি বাজার-সংলগ্ন স্থানে মুহুরী নদীর পানি প্রবেশ করে বাজারের একটি অংশ প্লাবিত হয়েছে। আজ শুক্রবার বৃষ্টি না
হাওয়ায় ফুলগাজী বাজার থেকে পানি নেমে গেছে।
প্রতি বছর দায়সারা বাঁধ মেরামত ও নদী সংস্কার না করার কারনে স্থানীয় এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডেকে এজন্য দায়ী করছেন। এখানকার জনগণ প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানিতে প্লাবিত হওয়ার কারণে কোন ত্রাণ নয়, তারা চায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার ফেনীর ফুলগাজী বাজার ও ভাঙ্গন স্থান পরিদর্শন করেছেন। তিনি স্থানীয় জনগণকে আতঙ্কিত না হয় সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় ফেনীতে নদীর পানি বাড়ছে। তবে মুহুরী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। বাঁধের ভাঙ্গন স্থল রক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের নিরাপত্তায় আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে আগামী রবিবার (২২ জুন) চীন সফরে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিএনপির মিডিয়া সেল সদস্য সৈয়দ সায়রুল কবীর খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এই সফরের জন্য বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছে সিপিসি।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ও দলীয় পর্যায়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ই এই সফরের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। সায়রুল কবীর আরও জানান, মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির চার সদস্য— মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ ছাড়া, চেয়ারপারসনের তিন উপদেষ্টা— জহির উদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জাবিউল্লাহ ও অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া এবং দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেলও প্রতিনিধিদলে রয়েছেন।
সফর শুরুর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় চীনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে চীনা দূতাবাসে সাক্ষাৎ করে বলেও জানান তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিবেচিত চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক গভীর করার প্রত্যাশারই প্রতিফলনই এই সফর। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে বেইজিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
এদিকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপিকে একটি ‘প্রতীক্ষমাণ সরকার’ হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেক পর্যবেক্ষক, যার অপেক্ষা চলছে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত।
এই সফরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চীনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতারা। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিএনপি, সদ্য-গঠিত এনসিপি ও কিছু ইসলামপন্থী দল।
এর আগে, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আটটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি ২১ সদস্যের ‘অনন্য’ প্রতিনিধিদল ১১ দিনের সফরে চীন যায়।
ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, গত আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে বহুদলীয় সম্পর্ক জোরদারের কৌশলের অংশ হিসেবেই এই সফর আয়োজন করা হয়।
১১ দিনের সফরে প্রতিনিধিদলটি বেইজিং, শানশি এবং ইউনান প্রদেশে সিপিসির কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
মন্তব্য