অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী ‘হাফেজ’ আহমেদ আল রাজির সঙ্গে গত বছরের শুরুতে অনলাইনে পরিচয় ঢাকার মেয়ে নুসরাত শারমিনের (ছদ্মনাম)। কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। বিয়ের জন্য ‘পাগলপ্রায়’ হয়ে ওঠেন ছেলেটি। কিন্তু তার পরিবারের ছিল ঘোরতর আপত্তি।
ছেলেটি তখন মেয়েটিকে এই বলে বোঝান, ‘সংসার তো আমরা করব; আমরা হ্যাপি থাকলেই সব ঠিক।’ তার এমন আশ্বাসে পরিবারকে একরকম জোর করেই বিয়েতে রাজি করান মেয়েটি। এভাবে পরিচয়ের তিন মাস না পেরোতেই অস্ট্রেলিয়ায় বসে মেয়েটির বাসায় কথিত কাজি ও দুই বন্ধুকে পাঠিয়ে অনলাইনে বিয়েও করেন ছেলেটি।
এর প্রায় এক বছর পর দেশে আসেন আল রাজি; নিজেদের মোহাম্মদপুরের ভাড়াবাসায় না উঠে মেয়েটিকে নিয়ে রাজধানীর একটি হোটেলে ওঠেন। সেখানে দুই দিন থাকার পর উত্তরার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন তারা। সেই বাসায় ওঠার পরই ছেলেটি ‘আজেবাজে’ কথা বলা শুরু করেন।
ওই তরুণী বলছেন, পেটে সন্তান আসার খবরে ‘তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে’ আল রাজি, গলা টিপে হত্যারও চেষ্টা করে। ‘ডিভোর্স দিয়ে দিছি’ বলে বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলে। ছেলেটির পরিবারের সদস্যরাও তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এরই একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে গত ১১ মে বাবার বাড়ি চলে গেছেন মেয়েটি।
এই তরুণীর অভিযোগ, ‘স্বপ্নের সংসার’ ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যাওয়ার আগে তুরাগ থানায় গিয়েছিলেন তার সঙ্গে প্রতারণার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে। কিন্তু থানা থেকে জানানো হয়, এক দিন আগেই ছেলেটি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে গেছেন। তাই তারা তার অভিযোগ নিতে পারবে না। এদিকে ছেলেটিকে তার পরিবার আবারও বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
এমন পরিস্থিতিতে অনাগত সন্তান আর পরিবারের কথা ভেবে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন নুসরাত। তিনি যে প্রতারিত হয়েছেন সে বক্তব্যের ভিডিও প্রস্তুত করেন ফেসবুকে ছাড়ার জন্য। বিষয়টি জানান কাছের বন্ধুদের। সেই ভিডিওতে তার বাঁচার কোনো ইচ্ছা নেই এবং আল রাজির বিচারের দাবি জানিয়ে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন- এমন কথা রেকর্ড করেন মেয়েটি।
এই পরিস্থিতিতে এক বন্ধুর মাধ্যমে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় মেয়েটির। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শনিবার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘বিয়ের নামে প্রতারণার শিকার হয়ে এখন আমি ও আমার অনাগত সন্তান জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’
নুসরাত বলেন, ‘অনলাইনে গত বছরের শুরুতে আমার একজনের সঙ্গে যোগাযোগ হয় এবং একটা পর্যায়ে কথাবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে দেড় মাসের মধ্যে উনি আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমরা পারিবারিকভাবে এগোতে চাই।
‘কিন্তু শুরুতেই তার পরিবারের কিছু ব্যবহার আমাদের ভালো লাগেনি। তাই আমরা প্রস্তাবটা বাতিল করতে চাই। কিন্তু ছেলেটা প্রায় মরিয়া হয়ে উঠেছিল আমাকে বিয়ে করার জন্য।’
মেয়েটি বলেন, ‘‘সে একজন হাফেজ। সেই সুবাধে তার মিষ্টি কথায় ভরসা করে ফেলি। সে আমাকে এই বলে সান্ত্বনা দেয় যে, ‘আমরা অনলাইনে বিয়ে করে ফেলি, একটা সময় পরিবার মেনে নেবে। সংসার তো আমরা করব; আমরা হ্যাপি থাকলেই সব ঠিক’।
‘তার কথায় ভুলে আমিও আমার পরিবারকে এই বিয়েতে একপ্রকার জোর করেই রাজি করাই। আমার পরিবারের সবাই তার হাফেজ ও ধর্মভীরু মনোভাব দেখে আমার কথা মেনে নেন।”
এই তরুণী জানিয়েছেন, গত বছরের ৩০ মার্চ অনলাইনে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী আহমেদ আল রাজির সঙ্গে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় তার।
তিনি বলেন, ‘‘আমি সেই দিন থেকে স্বপ্ন বোনা শুরু করি; একটা মেয়ে ঠিক যেভাবে সংসারের স্বপ্ন বোনে। আমিও নিজেকে তার মনমতো তৈরি করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। এর মধ্যে তার পরিবার আমাকে অনেক কটু কথা শোনায়। কিন্তু সব সময় তার সাপোর্ট ছিল। ভরসা দিত ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’। তারা সব সময় তাকে আবার বিয়ে করানোর এবং আমাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিতে থাকে। কিন্তু সে আমাকে শুধু ধৈর্য ধরতে বলে। আর আমি তাই করি।”
শ্বশুরবাড়ির এমন আচরণের পরও ছেলেটির কথা বিশ্বাস রেখেছিলেন নুসরাত। অপেক্ষায় ছিলেন স্বামীর দেশে আসার।
তিনি বলেন, ‘আমিও তার বাংলাদেশে ফেরার অপেক্ষা করতে থাকি। সে ফিরেও আসে। গত ২৫ মার্চ সে আসে। দীর্ঘ একটা বছর অপেক্ষা করে প্রথমবার আমি তাকে দেখি। প্রথমে হোটেলে উঠি। সেখানে দুজন আলোচনা করে একটা বাসা নিই উত্তরায়। বলে রাখি, তার নিজের বাসা মোহাম্মদপুরে। সে আমাকে ওখানে ওঠায় না এটা বলে যে তার যৌথ পরিবার। এখনো ওনারা আমাকে মেনে নেয়নি। কিছুদিন যাক সব ঠিক হয়ে যাবে।’
কিন্তু কোনো কিছুই আর ঠিক হয়নি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নুসরাত। বলেন, ‘আমিও এই আশাতেই থাকি। তবে সপ্তাহ না যেতেই তার আচার-আচরণে পরিবর্তন দেখতে পাই। নোংরা ভাষায় কথা বলতে থাকে। আমার অসুস্থ বাবাসহ পরিবারের সবাইকে ছোট করতে থাকে। তারা আমাদের থেকে অর্থবিত্তে অনেক এগিয়ে- এটা প্রতিটা মুহূর্তে জাহির করতে শুরু করে।’
‘আমি আগে জব করে সেই টাকা কেন বাসায় দিয়েছি, যেসব ফার্নিচার কিনেছি সেগুলো কেন এই বাসায় আনছি না, আমার বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে আমি, তাহলে বাসা কেন তারা সাজিয়ে দিচ্ছে না- এসব যৌতুকের জন্যও অনেক নির্যাতন করে আমাকে।’
ওই তরুণী আরও বলেন, ‘সে সব সময় এটা বোঝাতে থাকে যে, আমি তার যোগ্য নই। সে ভুল করেছে। বহু ঝগড়া, মারামারি, লোক জানাজানিসহ অনেক ঘটনা হয়। তার পরিবারের মানুষ আমাকে হুমকি দিতে থাকে। প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়।
‘এর মধ্যে আমি জানতে পারি, কনসিভ করেছি। এটা জানার পর তো আমার হাজব্যান্ড তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। এবং যেকোনো মূল্যে বাচ্চাটাকে সে রাখতে চায় না। এটা নিয়ে কথা বলাতে সে আমার গায়ে হাত তোলে। এ ছাড়া নোংরা নোংরা সিনক্রিয়েট করে। বলে তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিছি।’
এরই একপর্যায়ে চলতি মাসে সেই ভাড়া বাসায় তাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় বলেও অভিযোগ মেয়েটির।
‘গত ৭ ও ৮ মে আমাকে তালাবদ্ধ করে রাখে। এমনকি আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলার জন্য উদ্যত হয়। পরে নিজের ও বাচ্চার জীবনের নিরাপত্তা না পেয়ে ১১ মে আমি বাবার বাসায় চলে আসি।
‘কেননা ও আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। আর সবকিছু নিয়ে গিয়ে বাসা ছেড়ে দেয়। আসার আগে আমি তুরাগ থানায় লিখিত অভিযোগ জানাতে চাই। কিন্তু কোনো পুলিশ অফিসার এ বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করেননি। কারণ আমার স্বামী নাকি আগের দিন রাতেই আমার নামে অভিযোগ করে গেছে। কতটা অসহায় আমরা মেয়েরা।’
এ কথা বলতে বলতে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন নুসরাত। বেশ কিছুক্ষণ পর তার সঙ্গে আবার কথা বলে নিউজবাংলা।
এ সময় তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আজ আমার অনাগত বাচ্চা ও আমার জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন। আমি মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছি। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি আমার পরিবারের অশান্তির কারণ হতে চাই না।
‘তার আগে এই বাচ্চার ভবিষ্যৎ কী? আমার জীবনের যে ক্ষতি সে করেছে তার নোংরা স্বার্থ চরিতার্থ করতে, এর প্রতিকার কী? সত্যিই কি দেশের আইন মেয়েদের পাশে আছে? আমি সবার কাছে নিজের আর বাচ্চার সুন্দর একটা জীবন চাই। প্লিজ, হেল্প মি। আমি এই ভদ্র মুখোশধারী প্রতারকের চেহারা সবার কাছে উন্মোচন করে গেলাম। আমি ওর শাস্তি চাই।’
নুসরাতের কাছ থেকে এসব অভিযোগ পাওয়ার পর আল রাজির বক্তব্য জানতে তার তিনটি মোবাইল নম্বরে গত দুই দিনে অন্তত ২৫ বার ফোন করেন নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক। এ সময় তার দুটি নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। একটিতে ফোন ঢুকলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া আল রাজিদের মোহাম্মদপুরের ওই ভাড়া বাসায় গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। বাসার মালিককে পাওয়া যায়নি। দারোয়ান জানিয়েছেন, তারা গত মাসেই বাসা ছেড়ে চলে গেছেন।
নুসরাতকে তুরাগ থানার কোনো কর্মকর্তা কেন সাহায্য করেননি, তা জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, ‘থানায় এসে এ ধরনের অভিযোগ করলে তা নেয়া হবে না- এমনটা হওয়ার কথা না। আমার আসলে জানা নেই। আমাদের যদি কোনো গ্যাপ থেকে থাকে সেটা আমি দেখছি। ভুক্তভোগীকে থানায় পাঠিয়ে দেন, অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ছেলেটার অভিযোগ কী এবং তার সত্যতা পেয়েছেন কি না- এ কথা জানতে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও সাড়া দেননি ওসি মেহেদী হাসান।
বিয়েটা ছিল ভুয়া
২০২০ সালের ৩০ মার্চ অনলাইনে তাদের মধ্যে যে বিয়ে হয়েছিল তার কাবিননামার একটি অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা।
কাবিননামাটি ঘেঁটে দেখা গেছে, দুই পক্ষের সাক্ষীর নাম ও কনের নামের ঘরে সই থাকলেও বরের ঘরে কোনো সই নেই।
কাবিননামায় বরের সই নেই কেন- জানতে চাইলে মেয়েটি বলেন, ‘বিয়ের সময় সে দেশের বাইরে থাকায় তার সই নেয়া যায়নি। ওই সময় সে কাজিকে বলে পাত্রের সইয়ের স্থানটা ফাঁকা থাক। দেশে ফিরেই সই করবে।
‘গত মার্চে ও দেশে আসার পর বারবার বললেও সই করেনি। এখন বুঝতে পারছি, ও প্রতারণা করে আমাকে শুধুই ব্যবহার করেছে। স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কোনো ইচ্ছাই তার ছিল না।’
সেই সই নেয়ার জন্য হোটেল ও ভাড়া বাসায় ছেলেটির সঙ্গে উঠেছিলেন জানিয়ে মেয়েটি বলেন, ‘কিছুতেই রাজি হয়নি ও। ওর পরিবার চাইছে ওকে আবার বিয়ে দিতে। আমাকে বলছে ডিভোর্স লেটারে সই করতে।’
জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর সুরক্ষা বাড়াতে জাহাজ ঘিরে কাঁটাতারে বেড়া দেয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে নাবিকদের নিয়ে জাহাজটি দুবাইয়ের কঙিক্ষত বন্দরে পৌঁছাতে পারে ২২ এপ্রিলের মধ্যে।
জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম এসব তথ্য দিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুবাইয়ের পথে রয়েছে এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি বাংলাদেশ সময় বুধবার দুপুর ১২টার দিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পাড়ি দিয়েছে। বর্তমানে জাহাজটি ঝুঁকিমুক্ত এলাকা দিয়ে চলাচল করছে।
এমভি আবদুল্লাহ প্রায় ১২ নটিক্যাল মাইল স্পিডে দুবাই অভিমুখে চলছে। জাহাজটির দুই পাশে এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুইটি যুদ্ধজাহাজ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অগ্রসর হচ্ছে।
মিজানুল ইসলাম জানান, জাহাজটি আগামী ২২ এপ্রিল সকালে গন্তব্যস্থল দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছাবে। বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় হাইরিস্ক এরিয়া থেকে বেরিয়ে গেছে জাহাজটি।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌ বাহিনীর দুটি জাহাজ এখনো এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি আছে। নেভির জাহাজের সঙ্গে এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
মিজানুল ইসলাম জানান, জাহাজটি জলদস্যুমুক্ত হওয়ার পর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে; যাতে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা পার হওয়ার আগেই অন্য কোনো জলদস্যুর দল জাহাজটিতে উঠতে না পারে। একই সঙ্গে জাহাজের ডেকে হাই প্রেসার ফায়ার হোস বসানো হয়েছে, যাতে উচ্চচাপে পানি ছিটানো যায়।
এর আগে ১৩ এপ্রিল রাতে সোমালিয়ার জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। আশা করা হচ্ছে, ২২ এপ্রিল জাহাজটি কাঙ্ক্ষিত বন্দরে পৌঁছাবে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, জাহাজটিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার দস্যুরা ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করে। মুক্ত হওয়ার সময় ওই জাহাজ থেকে নেমে যায় ৬৫ জন জলদস্যু। এরপর জাহাজ ও নাবিকরা মুক্ত হন।
দেশের ছয়টি জেলার ওপর দিয়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, সেটি অব্যাহত থাকতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, ‘পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।’
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, ‘রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
‘এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।’
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে বলা হয়, ‘রাজশাহী, পাবনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং মৌলভীবাজার জেলা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও ঢাকা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।’
তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণ অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জের ধরে প্রতিবেশী দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি’র মোট ২৬১ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে বুধবার একজন ও আগের দিন আসা ৪৬ রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মুখে বুধবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তপথে বিজিপি’র এক সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। মঙ্গলবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এপারে চলে আসেন আরও ৪৬ জন বিজিপি সদস্য। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি তাদের সবাইকে হেফাজতে নিয়েছে।
আইন-শৃংখলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান বিদ্রোহীদের গোলাযোগ চলছে৷ মঙ্গলবার রাতেও সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সংঘাতে আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে টিকতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা।
স্থানীয়দের দাবি, রাতের অন্ধকারে ৪৬ জন বিজিপি সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বিজিবি তাদের নিরস্ত্র করে মঙ্গলবার সকালে আশ্রয় নেয়া ১২ জনের সঙ্গে নতুনদেরও হেফাজতে রেখেছে।
বিজিবি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে নতুন করে ৪৬ জন মিয়ানমারের বিজিপি সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। তাদের নিরস্ত্র করে বিজিবি ক্যাম্পের হেফাজতে রাখা হয়েছে। এছাড়া আজ (বুধবার) নতুন করে আরও একজন আশ্রয় নিয়েছে। এ নিয়ে বর্তমানে মোট ২৬১ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
মার্চ মাসে সারা দেশে মোট ৫৫২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এসব দুর্ঘটনায় মোট ৫৬৫ জন নিহত এবং এক হাজার ২২৮ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্চ মাসে রেলপথে ৩৮টি দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত ও ৮৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া নৌপথে ৭টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে ১৮১ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৩ জন নিহত, ১৬৬ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২.৭৮ শতাংশ, নিহতের ৩৫.৯২ শতাংশ ও আহতের ১৩.৫১ শতাংশ।
এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ১৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় এ বিভাগে ১৬৫ জন নিহত ও ৩০৬ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে, যেখানে ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত ও ৯২ জন আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৮৩ জন চালক, ৮২ জন পথচারী, ৮২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩১ জন শিক্ষার্থী, ৭ জন শিক্ষক, ১০৯ জন নারী, ৭০ শিশু, ৩ জন চিকিৎসক, একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং ৬ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর পরিচয় মিলেছে।
এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন- ৫ পুলিশ সদস্য, ১ আনসার, ৩ সৈনিক, ২ জন চিকিৎসক , ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ১৩০ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৭৮ জন পথচারী, ৬৪ জন নারী, ৬৩ শিশু, ২১ শিক্ষার্থী, ৩১ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬ জন শিক্ষক, ও ৬ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী।
এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৭৯৩টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৪.৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৫.৮৫ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১১.২২ শতাংশ বাস, ১৬.৩৯ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৫.১৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১০.৪৬ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা এবং ৬.৪৩ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫৭.৪২ শতাংশ গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৭.২১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২১.৭৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ২.৮৩ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং শূন্য দশমিক ৭২ ট্রোন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৪.৬০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১৭.২১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৯.৪৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৭.৭৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, প্রকাশিত এই তথ্য দেশে সংঘঠিত সড়ক দুঘর্টনার প্রকৃতচিত্র নয়। এটি কেবল গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য। দেশে সংঘঠিত সড়ক দুঘর্টনার একটি বড় অংশ (প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত) গণমাধ্যমে স্থান পায় না। তাই এসব তথ্য আমাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, ‘দেশে সড়ক দুঘর্টনার প্রাথমিক উৎসস্থল দেশের হাসপাতালগুলোতে দেখলে এমন ভয়াবহ তথ্য মেলে। ঢাকা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) মার্চ মাসে ১৩৬৯ জন সড়ক দুঘর্টনায় গুরুতর আহত পঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বিজ্ঞান বলে একটি দুঘর্টনায় ১০ জন আহত হলে তার মধ্যে কেবল একজন গুরুতর আহত বা পঙ্গু হয়।
‘বাংলাদেশে ১০ হাজার সরকারি ও ৬ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে এসব হাসপাতালে প্রতিবছর সড়ক দুঘর্টনায় আহত প্রায় ৩ লাখের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। অথচ গণমাধ্যমে তার ১০ ভাগের এক ভাগ তথ্যও প্রকাশিত হয় না বলে আমরা ঘটনার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরতে পারি না।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ
১. ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিয়ম দুর্নীতি ব্যাপক বৃদ্ধি।
২. মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সড়ক মহাসড়কে অবাধে চলাচল।
৩. সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং ও সড়কে বাতি না থাকা। রাতের বেলায় ফক লাইটের অবাধ ব্যবহার।
৪. সড়ক-মহাসড়কে নির্মাণত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও অদক্ষ চালকের হার ব্যাপক বৃদ্ধি।
৫. ফুটপাত দখল, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
৬. উল্টোপথে যানবাহন চালানো ও সড়কে চাদাঁবাজি।
৭. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশসমূহ
১. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চালু করা।
২. স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা।
৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান।
৪. রাতের বেলায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা।
৫. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা; চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।
৬. রাতের বেলায় চলাচলের জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৭. ব্লাক স্পট নিরসন করা, সড়ক নিরাপত্তা অডিট করা ও স্টার মানের সড়ক করিডোর গড়ে তোলা।
৮. দেশে সড়কে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ-এর চলমান গতানুগতিক কার্যক্রম অডিট করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করা ও প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা সংস্কার করা জরুরি।
মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতির দিকে যথাযথ নজর রাখতে মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে অর্থাৎ যুদ্ধ শুরু হলে এবং সৃষ্ট উত্তেজনা দীর্ঘ সময়ে গড়ালে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বুধবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নির্দেশ দেন সরকার প্রধান। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার ফলে সম্ভাব্য রি-অ্যাকশন কী হতে পারে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এখন থেকেই সে বিষয় বিবেচনায় প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কনফ্লিক্ট যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, সেটি কীভাবে আমরা মোকাবিলা করব, সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য আমরা কী করতে পারি; সেগুলোর প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তিনি। ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখতে বলেছেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, যুদ্ধ যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তখন বিভিন্ন সেক্টরে যে ইমপ্যাক্ট পড়তে পারে, সেটি সংশ্লিষ্ট সেক্টর থেকে এক্সারসাইজ করে তা মোকাবিলায় পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেছেন সরকার প্রধান। তিনি বলেছেন, যার যার সেক্টরে সবাই যেন প্রস্তুতি নেয়।
ক্রাইসিস তৈরি হলে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে। তখন কী করা যায়, সেসব বিষয়ে পরিকল্পনা রাখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সচিব জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে মন্ত্রিসভাকে জানাতে বলেন।
দেশে এখনও ১৬টি আইন তালিকাভুক্ত করা হয়নি উল্লেখ করে সচিব মাহবুব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিগগির আইনগুলো বাদ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রিসভা ‘মহেশখালী ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এমআইডিএ) অ্যাক্ট-২০২৪’ এবং ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা) আইন-২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমন্বিত প্রক্রিয়ায় পরিচালনার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের লক্ষ্যে এমআইডিএ আইনের খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব।
আইনটির আওতায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন এবং এটি ১৭ সদস্যের বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হবে। গভর্নিং বোর্ড ছাড়াও সরকার একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করবে, যিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অফিসটি পরিচালনা করবেন।
কর্তৃপক্ষের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- প্রায় ৫৫ হাজার ৯৬৮ একর জমির নির্দিষ্ট এলাকার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা, সেখানে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা আনা, বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা এবং এলাকাটিকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা) আইন-২০২৪’ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি মূলত প্রচলিত ইংরেজির বাংলা সংস্করণ এবং এই সংস্করণে কোনো পরিবর্তন নেই। এর আগে এই আইনের ইংরেজি ভার্সন অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি যে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও সেই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এ আইনটিই পুনরায় বাংলায় করা হয়েছে। সেটির নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:ভারতে লোকসভা নির্বাচনের কারণে ১৭, ১৮ ও ১৯ এপ্রিল পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পাথরসহ সকল প্রকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারও বন্ধ থাকবে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামা পারভীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় ।
এদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বুধবার দুপুরে ৩ দিন বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের লোকসভা নির্বাচন কারনে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আজ (বুধবার) থেকে শুক্রবার বন্দর দিয়ে দুই দেশের মাঝে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ সময় অফিস যথারীতি খোলা থাকবে।’
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে স্থলবন্দর দিয়ে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্মকর্তা অমৃত অধিকারী জানান, দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধের সঙ্গে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাওয়া-আসাও বন্ধ থাকবে।
হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই বন্দর দিয়ে পার হতে আসা যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে, জরুরি চিকিৎসার জন্য যাতায়াতকারী মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে।
আরও পড়ুন:জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ দুবাইয়ের পথে রয়েছে। জাহাজটিতে রয়েছেন জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়া ২৩ জন নাবিক। তাদের মধ্যে ২১ জন নাবিক ওই জাহাজে করেই দেশে ফিরবেন। বাকি দু’জন এডেন উপসাগর হয়ে ওমান উপকূলের সামনে দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছে বিমানযোগে দেশে ফিরবেন।
জাহাজটির মালিক পক্ষের একটি সূত্রে জানা গেছে, নাবিকরাই এমন ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
কেএসআরমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম জানান, নাবিকরা তাদের ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন। ২১ নাবিক জাহাজে ও বাকি দুজন বিমানে বাংলাদেশে আসবেন। অন্যরাও চাইলে উড়োজাহাজে আসতে পারেন। যদি তারা আমাদের সিদ্ধান্ত দেন। তবে ২১ নাবিক জানিয়েছেন তারা ওই জাহাজে করেই দেশে ফিরবেন।
দীর্ঘ ৩৩ দিন জিম্মি থাকার পর শনিবার জাহাজটি মুক্ত হয়। এরপর সোমালিয়ার ডেরা থেকে আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হয় জাহাজটি।
মেরিন ট্রাফিক তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, জাহাজটি আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছবে ২০ এপ্রিল রাত ১০টায়। কিন্তু জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২২ এপ্রিল জাহাজটি আরব আমিরাতে ভিড়বে। কারণ জাহাজটি চলার গতি অনেক কম।
কর্তৃপক্ষ জানায়, জাহাজটি আরব আমিরাতে পৌঁছার পরপরই দুই নাবিক বিমানযোগে বাংলাদেশে আসবেন। বাকিরা জাহাজে করে বাংলাদেশে আসবেন প্রায় এক মাস পর।
সোমালিয়ার একদল জলদস্যু গত ১২ মার্চ ২৩ নাবিকসহ এমভি আব্দুল্লাহ নামের জাহাজটি জিম্মি করে। দেশটির উপকূল থেকে ৫৭৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজটি ছিনতাই করা হয়। এর ৩২ দিন পর অর্থাৎ ৩৩ দিনের জিম্মিদশা থেকে শনিবার রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য