ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স সেবা দেয়ার জন্য ১০টি আঞ্চলিক অফিস রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর সিটির পাঁচটি এবং দক্ষিণ সিটির পাঁচটি অফিস থেকে ব্যবসা শুরুর এই সনদ দেয়া হয়।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই ট্রেড লাইসেন্স করতে গিয়ে ব্যবসা শুরুর আগেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। লাইসেন্স নবায়ন করতে ভোগান্তির শিকার হন পুরোনো ব্যবসায়ীরাও।
সিটি করপোরেশন এলাকায় মূলত ব্যবসার ধরনের ওপর নির্ভর করে লাইসেন্স ফি নির্ধারিত হয়। এই ফি সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী কোনো উদ্যোক্তার একটি লাইসেন্স পেতে তিন থেকে সাত কর্মদিবস লাগার কথা থাকলেও তার চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে। এই বিড়ম্বনা এড়াতে অনেক নতুন ব্যবসায়ীই অবৈধ পন্থায় সনদ নিচ্ছেন দালাল চক্রের মাধ্যমে। দিচ্ছেন নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মূল ভবন নগর ভবনে রয়েছে এই লাইসেন্স নেয়ার অঞ্চল-১-এর অফিস।
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি দুই দিন নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক যান নগর ভবনে।
প্রথম দিন ভবনে ঢোকার সিঁড়িতে উঠতে উঠতেই চোখে পড়ল সিঁড়ির একপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন দুজন। তাদের একজনের হাতে কাগজপত্র। একটু এগোতেই মনে হলো অফিশিয়াল কোনো ব্যাপারে কথা বলছেন তারা। মিনিট তিনেক পর স্পষ্ট হওয়া গেল, ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কথা হচ্ছে তাদের মধ্যে।
অফিশিয়াল কাজ, অথচ কথা হচ্ছে অফিসকক্ষের বাইরে- এই রহস্য জানতে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর কাগজপত্র হাতে থাকা লোকটাকে আলাদা করে পাওয়া গেল।
জগন্নাথ কর্মকার নামের ওই যুবক নিউজবাংলাকে জানান, তিনি পেশায় স্বর্ণকার। আট বছর অন্যের দোকানে কাজ করেছেন। এখন নিজেই দোকান দিতে চান। তাই ট্রেড লাইসেন্সের জন্য এসেছেন নগর ভবনে।
‘মালিকের কাজ ছাইড়া দিচি। অহন তো বইয়া খাওনের উপায় নাই। নিজের দোকান খুলোন লাগবো। এই লাইগ্গা লাইসেন্স নিবার আইছি। আমার সাথে উনার কথা হইচে দুই দিনের মধ্যে লাইসেন্স দিয়া দিবো। খরচ লাগবো পাঁচ হাজার ট্যাহা’, বলেন জগন্নাথ কর্মকার।
এই লাইসেন্সের ফি যে পাঁচ হাজার টাকা, তা জানেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি খচ্চ কত আমি জানি না। জিনিসটা আমার আইজ-কাইলকার মধ্যেই লাগবো, অফিসে গিয়ে কাউকাউ করা লাগে, তাছাড়া লোক ছাড়া কাম হয় না।
‘প্রথমে অফিসে গেছিলাম। অফিসে ঢোকার মুখে উনি খাড়াইন্না আছিলেন। কতা-বাত্তাই পইটা গেলো। বাইরে আইনা কইলো দুই দিনেই কাম হইবো, পাঁচ হাজার দিলেই চলবো। আমি রাজি হইয়া গেছি গা। হুনছি সরকারি খরচ কম আছে, কিন্তু উনারা করলে ঝামেলা নাই বইলা না কই নাই। অফিসের লোক আমগো দাম দিবার চায় না।’
স্বর্ণকার জগন্নাথ কর্মকার এতক্ষণ যাকে ‘উনি উনি’ করছিলেন তার নাম মিজান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি আদৌ এখানকার কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন। অনুসন্ধানের দুই দিনই তাকে নগর ভবনের লিফট ও ট্রেড লাইসেন্স শাখার আশপাশেই ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
এই চক্রের সঙ্গে অফিসের কারা কারা জড়িত তা জানতে নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক নতুন উদ্যোক্তা সেজে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য কথা বলেন মিজানের সঙ্গে।
একটা জুসের দোকান দিতে চাই, ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে- এ কথা শুনেই মিজান জানতে চাইলেন, কোন অঞ্চল; কত নম্বর ওয়ার্ড?
সবকিছু বলার পর কাগজপত্র চেয়ে বসলেন মিজান। কাগজপত্র বন্ধু নিয়ে আসছে- বলার পর কত টাকা লাগবে জানতে চাওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গেই মিজানের উত্তর, ‘অফিসের সাথে আপনার কোনো কাম নাই। সব কাম আমার। আমিই সব কিছু করুম। টাকা লাগবো সাড়ে ছয় হাজার। টাইম লাগবো দুই দিন। কাগজপাতি, টাকা দিয়া যান, কাম হয়ে যাবে।’
এরপর মিজান ব্যস্ত হয়ে পড়েন অন্য ‘কাস্টমার’ ধরতে।
এই সুযোগে নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক যান নগর ভবনের লিফটের ১০ তলায় অঞ্চল-১-এর অফিসের সামনে। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, জগন্নাথ কর্মকার যে ট্রেড লাইসেন্স করতে চাইছেন তার ফি দুই হাজার টাকা। অথচ মিজান চেয়েছেন পাঁচ হাজার টাকা। আর জুসের দোকান দিতে ট্রেড লাইসেন্সের ফি এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু মিজান বলছেন, লাগবে সাড়ে ছয় হাজার টাকা, যিনি আসলে এই অফিসের কেউ না।
এরপর মিজানকে খুঁজতে নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক যান নগর ভবনের নিচতলায় লিফটের কাছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়।
তখন সাংবাদিক পরিচয়ে মিজানের কাছে এসব ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা হয় তার। মিজান বলেন, ‘আপনে আপনার পরিচয় লুকাইছেন ক্যান? পরিচয় দিলে কি বেশি টাকা লইতাম? যান মিয়া আমনার লগে কতা নাই।’
এ কথা বলতে বলতে অনেকটা অভিমানের সুরে সটকে পড়েন মিজান ও তার সঙ্গে থাকা আরেকজন।
নগর ভবন ঘুরতে ঘুরতে বেলায়েত হোসেন জাকির নামে পুরোনো এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দেখা মেলে। কথাবার্তায় একপর্যায়ে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি জানান তার ভোগান্তি আর আক্ষেপের কথা।
‘আমি তখন প্রথমবার আসছিলাম অফিসে। ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স লাগে। লাইসেন্সটা করতে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ব্যবসা শুরুই করতে পারলাম না, অথচ ভোগান্তির শেষ নেই। সিটি করপোরেশনে আসলাম। বলে যে কাগজপত্র ঠিক নেই। আমি কিন্তু যা যা দরকার সব কাগজপত্র নিয়েই গেছিলাম।
‘শেষমেশ যখন হলো না তখন অফিস থেকেই একজন বলল, নিচে ওমুকের কাছে যান। ওনারা সহজেই করে দিবে। যার কাছে পাঠানো হলো তার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। তার কাছে আসার পর বুঝলাম সে আসলে দালাল। অবাক হয়েছি এটা দেখে যে, ওই দালালই আবেদন ফরম থেকে শুরু করে সব কিছু নিয়ে বসে আছেন। তার কাজকর্ম দেখে মনে হলো সে ওখানকার হর্তাকর্তা! হবেই তো। অফিসাররাই যেখানে তার কাছে লোক পাঠায়, সেখানে তার ভাবসাপ এমন হবেই তো।’
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাকির নিউজবাংলার কাছে আরও অভিযোগ করেন, ‘ট্রেড লাইসেন্সের জন্য যে কাগজপাতি নিয়ে সিটি করপোরেশন অফিসে দৌড়ালাম, সেই একই কাগজপাতি কিন্তু দালালের কাছে দিলাম। কাজও হয়ে গেল। কিন্তু যেখানে তিন হাজার টাকা লাগার কথা ছিল, দালাল ধরতে গিয়ে লাগল সাত হাজার ৮০০ টাকা। এবার আসছি লাইসেন্স রিনিউ (নবায়ন) করতে। এটাও ঘুষ ছাড়া হবে না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরেশনের এক কর্মী বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখেন যারা চাকরি করে না তারাই এখানকার বড় চাকরিজীবী। তাদের কথার দামই এখানে বেশি। কারণ দালালদের মাধ্যমে অফিসাররা ঘুষ নেয়। এটা সহজ না?’
তিনি জানান, মিজানের সঙ্গে এই চক্রে জড়িত রতন কুমার, জিল্লু সিকদার ও শাকিল জোয়ারদার, যারা বড় দালাল হিসেবে পরিচিত। যাদের কাছে না গেলে কাজ হবে না।
অনুসন্ধানের দ্বিতীয় দিন নগর ভবনে কথা হয় জহির উদ্দিন নামে এক উদ্যোক্তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘ঘুষ না দিলে আমার কাজ আটকে থাকবে। ওর চেয়ে ঘুষ দেয়াই ভালো। পেরেশানি পোহানো লাগলো না। কেউ খুশি হয়ে দেয়, কেউ বাধ্য হয়ে ঘুষ দেয়। যার কাছে যেমন পারে তেমন বাগায়ে নেয় দালালরা।
‘দুই হাজার, তিন হাজার, পাঁচ শ, এক হাজার যার কাছে যেমন পারে নেয়। এগুলো বাড়তিই নেয়। জানাশোনা আছে বিধায় আমার কাছ থেকে এক হাজার নিছে।’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর অঞ্চল-১-এর কর কর্মকর্তা কাজী সুমনা ইয়াসমিনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘এখানে যে দালাল নেই তা আমি কনফিডেন্টলি বলতে পারছি না। থাকতে পারে। তাদের পাহারা দেয়া আমার কাজ না। আমি থাকি অফিসকক্ষের ভেতরে। কক্ষের বাইরে কে কী করছে কীভাবে বলব?
কর কর্মকর্তা কাজী সুমনা ইয়াসমিন এ সময় জোর দিয়ে বলেন, ‘কারা এসব করছে তাদের নাম দেন। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এ সময় পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘গ্রাহকরা দালালদের কাছে যায় কেন? এখানে তো সব ব্যবস্থা আছে। নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহক সব কাগজপত্র নিয়ে সরাসরি অফিসে আসবে। তারপর সবকিছু ঠিকঠাক করে বুথে গিয়ে সরকারি যে ফি তা জমা দেবে। অফিসের বাইরের কারও কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নাই।’
আরও পড়ুন:যশোরের শার্শায় সন্ত্রাসীদের হামলয় বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছে। এলাকায় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার (১০ জুন) রাত ১০টার দিকে উপজেলার লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত লিটন (৩০) দুর্গাপুর গ্রামের আজগর আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) রাত ১০ টার দিকে লিটন বাজারে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় ওই এলাকার সেলিম ও রমজান তার ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় এবং কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
এ সময় লিটনের চিৎকারে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্বজনরা এসে তাকে উদ্ধার করে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা আজগর আলী বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মমিন, সেলিম হোসেন ও রমজান আলীর সঙ্গে তার ছেলের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ ছিল। তারা এর আগেও কয়েকবার আমার ছেলেকে মারধরও করেছে। ঈদের আগের দিন তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কিও হয়। এসব ঘটনার জেরে লিটনকে হত্যা করা হয়েছে।’
শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন বলেন, ‘লিটন বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী। শত্রুতার জেরে সেলিম ও রমজানসহ সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলার লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে।’
পাবনার ঈশ্বরদীতে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী মা মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহতদের ভর্তি করা হয়।
বুধবার (১১ জুন) সকাল ৭টায় ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের মুন্নার মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন নাটোর সদর উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মফিজুল ইসলামের স্ত্রী সুর্বনা খাতুন, মেয়ে পূর্ণতা এবং ঈশ্বরদীর ছলিমপুর ইউনিয়নের মুন্নার মোড় এলাকার মৃত আবেদ আলী মন্ডলের ছেলে আনিছুর রহমান।
পাকশী হাইওয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশফিকুর রহমান জানান, অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মফিজুল ইসলাম পরিবারসহ কুষ্টিয়ায় শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজ বাড়ি নাটোরে ফিরছিলেন। পথে ঈশ্বরদীর মুন্নার মোড়ে সড়কের পাশে লিচু কিনতে মোটরসাইকেল থামান। এসময় পিছন থেকে আসা একটি কাভার্ড ভ্যান মফিজুল ইসলাম, তার স্ত্রী, মেয়ে এবং এক লিচু বিক্রেতাকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মা-মেয়ে ও আনিছুর রহমানের মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত মফিজুল ইসলামকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
তবে দুর্ঘটনার পর ঘাতক কাভার্ড ভ্যানটি পালিয়ে যাওয়ায় আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশফিকুর রহমান।
আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী রেলস্টেশনে তিন ঘণ্টা রেলপথ অবরোধ করেছিলেন স্থানীয়রা। বুধবার (১১ জুন) সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত এই অবরোধ করেন তারা। এতে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন স্থানের ট্রেন আটকা পড়ে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে অবরোধ শুরু করে স্থানীয়রা। স্টেশনের দুই পাশে লাল নিশান দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর তারা সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। আন্দোলনকারীরা স্টেশন সংস্কার ও আন্তঃনগর ট্রেন থামানোর দাবি-সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন তুলে ধরেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও তিন ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
অবরোধের ফলে রাজশাহী থেকে সারাদেশের সঙ্গে তিন ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঈদের ছুটি শেষে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ফেরা মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ট্রেনগুলোর শিডিউল বিপর্যয় হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।
এদিন সকালে রাজশাহী থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সাগরদাঁড়ি ট্রেন সবার প্রথমে আটকা পড়েন। এরপর ঢাকাগামী মধুমতি ও চিলাহাটিগামী তিতুমীর এক্সপ্রেস আরেকটি স্টেশনে রাখা হয়। বনলতা ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস রাজশাহী স্টেশনে থেকে যায়। আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলে ট্রেনগুলো ছেড়ে যায়।
তাদের দাবি, নন্দনগাছি স্টেশনে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি দিতে হবে এবং স্টেশন সংস্কার করতে হবে। এই দাবি না মানা হলে আবারও ২০ তারিখ রেলপথ অবরোধের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ১৯২৯ সালে উপজেলার নন্দনগাছী স্টেশনটি স্থাপিত হয়। শতবর্ষী স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ২০১৫ সালের শেষের দিকে। বন্ধের আগে ১২ জন জনবল থাকলেও বর্তমানে শুধু পোর্টারম্যান পদে একজন কর্মরত আছেন। এখানে দুটি লোকাল ট্রেন থামে। প্রায় ২০ বছর ধরে বন্ধ এই স্টেশনের কোনো কার্যক্রম নেই। পুরো স্টেশনের প্লাটফর্মে ছাউনি আছে। স্টপেজ না থাকলেও অনেক সময় ক্রসিং এর জন্য দাঁড়ায় ট্রেন।
পশ্চিম রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক আহম্মদ হোসেন মাসুম বলেন, নন্দনগাছি রেলওয়ে স্টেশনে স্থানীয় দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করছে। এর আগেও তারা অবরোধ করেছিলেন। তখন বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল। তারা ঈদের এই সময় অবরোধ করে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, তাদের কাছে গিয়ে দাবি-দাওয়া শোনা হয়েছে। তারা তিন ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেয়। এরপর ট্রেনগুলো চলতে শুরু করে। এতে ঢাকাগামী তিনটি ট্রেনই শিডিউল বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা আছে।
এর আগে একই দাবিতে গেল ১ মে আন্তঃনগর ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করেছে হাজারো মানুষ। এ সময় রাজশাহী ও চিলাহাটির মধ্যে চলাচল করা বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও লোকাল মেল ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করা হয়।
নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের জালশুকা স্টেশন বাজারসংলগ্ন এলাকায় রবিদাস সম্প্রদায়ের পাঁচটি পরিবারের ওপর হামলা ও ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বনানী বিশ্বাসের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নেত্রকোণা জেলার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকার।
বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে যান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকার।
এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং ঘটনার বিস্তারিত শুনেন। এছাড়াও সহকারী কমিশনার(ভূমি) নাজনীন আখতার, পূর্বধলা থানার অফিসার ইন চার্জ (তদন্ত) মিন্টু দে ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে মত বিনিময় করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহায়তা ও সুষ্ঠু বিচারের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণার পূর্বধলায় পাঁচটি হরিজন পরিবারের ওপর হামলা ও ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। কয়েক দিন ধরে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকুনি ইউনিয়নের জালশুকা বাজার সংলগ্ন রেললাইনের পাশের একটি খাসজমিতে বংশপরম্পরায় বসবাস করছে কয়েকটি হরিজন পরিবার। কিছু দিন ধরে পূর্বধলা উপজেলার ধারা গ্রামের জানু মিয়ার ছেলে সিরাজ মিয়া জমিটি তাঁর ব্যক্তিমালিকানাধীন বলে দাবি করেন এবং পরিবারগুলোকে জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন। এ ঘটনায় হরিজন পল্লির বাসিন্দা সুনীল রবিদাস সম্প্রতি নেত্রকোণা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে সিরাজ ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে শুক্রবার সুনীল রবিদাসের বাড়িতে হামলা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। এরপর গত রোববার পুনরায় হামলা চালিয়ে তিনটি ঘর ভাঙচুর করেন। মঙ্গলবার দুপুরে ফের কিছু গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে হামলা চালায় এবং অবশিষ্ট দুইটি ঘর ভাঙচুরসহ পরিবারগুলোর সদস্যদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। ফলে পাঁচটি পরিবারের ২২ জন সদস্য আশ্রয়হীন হয়ে বসত ভিটায় খোলা আকাশের নিচে রাতদিন কাটায়।
অভিযুক্ত সিরাজ মিয়ার সঙ্গে চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। পালিয়ে আত্মগোপনে আছেন।
পূর্বধলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিন্টু দে জানান, আজ বুধবার সকালের দিকে নেত্রকোণা জেলা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকার ও সহকারী কমিশনার ভূমি নাজনীন আখতার সহ স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ঘরবাড়িগুলো ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ সত্যতা নিশ্চিত করেন। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী অনিল রবিদাস বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পূর্বধলা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজনীন আখতার জানান, খবরটি শুনতে পেয়ে বিশকাকুনি ইউনিয়নের তহশিলদারকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, এই জমিটি ব্যক্তিমালিকানাধীন নয়, খাস খতিয়ানভুক্ত।
আজ বুধবার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকারের সাথে সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকার জানান, জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস এর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি পরিবারের ২২জন সদস্যের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বনানী বিশ্বাস অতিদ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি পরিবারকে ১০বান্ডিল টিন এবং প্রতি পরিবারকে ১০হাজার টাকা করে অর্থসহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি আরও আশ্বস্ত করেছেন দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।
কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়র্কর বোচওয়ে বলেছেন, আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আগ্রহী সংস্থাটি।
গতকাল লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বোচওয়ে বলেন, 'বাংলাদেশ যদি চায়, বিশেষ করে সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য, তাহলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।'
বোচওয়ে বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করা আগামী পাঁচ বছরের জন্য কমনওয়েলথের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।
তিনি আরও জানান, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সংগ্রামে সহায়তা করাও সংগঠনের অগ্রাধিকারভিত্তিক লক্ষ্য।
কমনওয়েলথ ২.৭ বিলিয়ন জনগণের প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করে ঘানার এই নাগরিক বলেন, বর্তমানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৮৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আগামী কয়েক বছরে তা কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, কমনওয়েলথের অনেক সদস্য রাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এর মধ্যে অনেক দেশ আকারে অত্যন্ত ছোট।
'আমরা তাদের জলবায়ু অর্থায়নে প্রবেশাধিকার পেতে সহায়তা করার চেষ্টা করব,' তিনি বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কমনওয়েলথ মহাসচিবকে ক্রীড়া খাতে সম্ভাবনা অনুসন্ধান এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
'ক্রীড়া শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একটি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও। আমরা ক্রীড়াবিদদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি। কমনওয়েলথের স্মরণীয় হয়ে ওঠার জন্য ক্রীড়া হতে পারে একটি ভালো মাধ্যম,' বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
কমনওয়েলথ মহাসচিব জানান, চলতি মাসে তারা ঢাকায় একটি যুব প্রোগ্রাম আয়োজন করতে যাচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, কমনওয়েলথের ১.৫ বিলিয়ন জনগণ তরুণ এবং তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার জন্য তারা কাজ করছেন।
তিনি জানান, তারা কমনওয়েলথ বৃত্তিগুলো পুনর্গঠনের পরিকল্পনাও করছেন, একটি ক্ষেত্র যা প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সাক্ষাৎকালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ জানানো হয়, রাজশাহীর চারঘাটের কাছে ‘নন্দনগাছি’ স্টেশনে আন্ত:নগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে করা রেলপথ অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে ঢাকা-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার চন্দনা নদী থেকে মো. আসলাম প্রামানিক (৪২) নামে এক ইজিবাইক চালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে কালুখালী থানা পুলিশ।
বুধবার (১১ জুন) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের চন্দনা ব্রিজের নিচ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আসলাম শেখ পাংশা উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং পিয়ার আলী প্রামানিকের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসলাম শেখ গত মঙ্গলবার ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাত পর্যন্ত তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। বুধবার সকালে স্থানীয়রা চন্দনা ব্রিজের নিচে একটি মরদেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে মরদেহটি আসলাম শেখের বলে শনাক্ত করেন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেবব্রত সরকার জানান, “প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আসলাম শেখকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।”
পুলিশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
মন্তব্য