ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স সেবা দেয়ার জন্য ১০টি আঞ্চলিক অফিস রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর সিটির পাঁচটি এবং দক্ষিণ সিটির পাঁচটি অফিস থেকে ব্যবসা শুরুর এই সনদ দেয়া হয়।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই ট্রেড লাইসেন্স করতে গিয়ে ব্যবসা শুরুর আগেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। লাইসেন্স নবায়ন করতে ভোগান্তির শিকার হন পুরোনো ব্যবসায়ীরাও।
সিটি করপোরেশন এলাকায় মূলত ব্যবসার ধরনের ওপর নির্ভর করে লাইসেন্স ফি নির্ধারিত হয়। এই ফি সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী কোনো উদ্যোক্তার একটি লাইসেন্স পেতে তিন থেকে সাত কর্মদিবস লাগার কথা থাকলেও তার চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে। এই বিড়ম্বনা এড়াতে অনেক নতুন ব্যবসায়ীই অবৈধ পন্থায় সনদ নিচ্ছেন দালাল চক্রের মাধ্যমে। দিচ্ছেন নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মূল ভবন নগর ভবনে রয়েছে এই লাইসেন্স নেয়ার অঞ্চল-১-এর অফিস।
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি দুই দিন নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক যান নগর ভবনে।
প্রথম দিন ভবনে ঢোকার সিঁড়িতে উঠতে উঠতেই চোখে পড়ল সিঁড়ির একপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন দুজন। তাদের একজনের হাতে কাগজপত্র। একটু এগোতেই মনে হলো অফিশিয়াল কোনো ব্যাপারে কথা বলছেন তারা। মিনিট তিনেক পর স্পষ্ট হওয়া গেল, ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কথা হচ্ছে তাদের মধ্যে।
অফিশিয়াল কাজ, অথচ কথা হচ্ছে অফিসকক্ষের বাইরে- এই রহস্য জানতে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর কাগজপত্র হাতে থাকা লোকটাকে আলাদা করে পাওয়া গেল।
জগন্নাথ কর্মকার নামের ওই যুবক নিউজবাংলাকে জানান, তিনি পেশায় স্বর্ণকার। আট বছর অন্যের দোকানে কাজ করেছেন। এখন নিজেই দোকান দিতে চান। তাই ট্রেড লাইসেন্সের জন্য এসেছেন নগর ভবনে।
‘মালিকের কাজ ছাইড়া দিচি। অহন তো বইয়া খাওনের উপায় নাই। নিজের দোকান খুলোন লাগবো। এই লাইগ্গা লাইসেন্স নিবার আইছি। আমার সাথে উনার কথা হইচে দুই দিনের মধ্যে লাইসেন্স দিয়া দিবো। খরচ লাগবো পাঁচ হাজার ট্যাহা’, বলেন জগন্নাথ কর্মকার।
এই লাইসেন্সের ফি যে পাঁচ হাজার টাকা, তা জানেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি খচ্চ কত আমি জানি না। জিনিসটা আমার আইজ-কাইলকার মধ্যেই লাগবো, অফিসে গিয়ে কাউকাউ করা লাগে, তাছাড়া লোক ছাড়া কাম হয় না।
‘প্রথমে অফিসে গেছিলাম। অফিসে ঢোকার মুখে উনি খাড়াইন্না আছিলেন। কতা-বাত্তাই পইটা গেলো। বাইরে আইনা কইলো দুই দিনেই কাম হইবো, পাঁচ হাজার দিলেই চলবো। আমি রাজি হইয়া গেছি গা। হুনছি সরকারি খরচ কম আছে, কিন্তু উনারা করলে ঝামেলা নাই বইলা না কই নাই। অফিসের লোক আমগো দাম দিবার চায় না।’
স্বর্ণকার জগন্নাথ কর্মকার এতক্ষণ যাকে ‘উনি উনি’ করছিলেন তার নাম মিজান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি আদৌ এখানকার কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন। অনুসন্ধানের দুই দিনই তাকে নগর ভবনের লিফট ও ট্রেড লাইসেন্স শাখার আশপাশেই ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
এই চক্রের সঙ্গে অফিসের কারা কারা জড়িত তা জানতে নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক নতুন উদ্যোক্তা সেজে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য কথা বলেন মিজানের সঙ্গে।
একটা জুসের দোকান দিতে চাই, ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে- এ কথা শুনেই মিজান জানতে চাইলেন, কোন অঞ্চল; কত নম্বর ওয়ার্ড?
সবকিছু বলার পর কাগজপত্র চেয়ে বসলেন মিজান। কাগজপত্র বন্ধু নিয়ে আসছে- বলার পর কত টাকা লাগবে জানতে চাওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গেই মিজানের উত্তর, ‘অফিসের সাথে আপনার কোনো কাম নাই। সব কাম আমার। আমিই সব কিছু করুম। টাকা লাগবো সাড়ে ছয় হাজার। টাইম লাগবো দুই দিন। কাগজপাতি, টাকা দিয়া যান, কাম হয়ে যাবে।’
এরপর মিজান ব্যস্ত হয়ে পড়েন অন্য ‘কাস্টমার’ ধরতে।
এই সুযোগে নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক যান নগর ভবনের লিফটের ১০ তলায় অঞ্চল-১-এর অফিসের সামনে। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, জগন্নাথ কর্মকার যে ট্রেড লাইসেন্স করতে চাইছেন তার ফি দুই হাজার টাকা। অথচ মিজান চেয়েছেন পাঁচ হাজার টাকা। আর জুসের দোকান দিতে ট্রেড লাইসেন্সের ফি এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু মিজান বলছেন, লাগবে সাড়ে ছয় হাজার টাকা, যিনি আসলে এই অফিসের কেউ না।
এরপর মিজানকে খুঁজতে নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক যান নগর ভবনের নিচতলায় লিফটের কাছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়।
তখন সাংবাদিক পরিচয়ে মিজানের কাছে এসব ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা হয় তার। মিজান বলেন, ‘আপনে আপনার পরিচয় লুকাইছেন ক্যান? পরিচয় দিলে কি বেশি টাকা লইতাম? যান মিয়া আমনার লগে কতা নাই।’
এ কথা বলতে বলতে অনেকটা অভিমানের সুরে সটকে পড়েন মিজান ও তার সঙ্গে থাকা আরেকজন।
নগর ভবন ঘুরতে ঘুরতে বেলায়েত হোসেন জাকির নামে পুরোনো এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দেখা মেলে। কথাবার্তায় একপর্যায়ে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি জানান তার ভোগান্তি আর আক্ষেপের কথা।
‘আমি তখন প্রথমবার আসছিলাম অফিসে। ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স লাগে। লাইসেন্সটা করতে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ব্যবসা শুরুই করতে পারলাম না, অথচ ভোগান্তির শেষ নেই। সিটি করপোরেশনে আসলাম। বলে যে কাগজপত্র ঠিক নেই। আমি কিন্তু যা যা দরকার সব কাগজপত্র নিয়েই গেছিলাম।
‘শেষমেশ যখন হলো না তখন অফিস থেকেই একজন বলল, নিচে ওমুকের কাছে যান। ওনারা সহজেই করে দিবে। যার কাছে পাঠানো হলো তার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। তার কাছে আসার পর বুঝলাম সে আসলে দালাল। অবাক হয়েছি এটা দেখে যে, ওই দালালই আবেদন ফরম থেকে শুরু করে সব কিছু নিয়ে বসে আছেন। তার কাজকর্ম দেখে মনে হলো সে ওখানকার হর্তাকর্তা! হবেই তো। অফিসাররাই যেখানে তার কাছে লোক পাঠায়, সেখানে তার ভাবসাপ এমন হবেই তো।’
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাকির নিউজবাংলার কাছে আরও অভিযোগ করেন, ‘ট্রেড লাইসেন্সের জন্য যে কাগজপাতি নিয়ে সিটি করপোরেশন অফিসে দৌড়ালাম, সেই একই কাগজপাতি কিন্তু দালালের কাছে দিলাম। কাজও হয়ে গেল। কিন্তু যেখানে তিন হাজার টাকা লাগার কথা ছিল, দালাল ধরতে গিয়ে লাগল সাত হাজার ৮০০ টাকা। এবার আসছি লাইসেন্স রিনিউ (নবায়ন) করতে। এটাও ঘুষ ছাড়া হবে না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরেশনের এক কর্মী বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখেন যারা চাকরি করে না তারাই এখানকার বড় চাকরিজীবী। তাদের কথার দামই এখানে বেশি। কারণ দালালদের মাধ্যমে অফিসাররা ঘুষ নেয়। এটা সহজ না?’
তিনি জানান, মিজানের সঙ্গে এই চক্রে জড়িত রতন কুমার, জিল্লু সিকদার ও শাকিল জোয়ারদার, যারা বড় দালাল হিসেবে পরিচিত। যাদের কাছে না গেলে কাজ হবে না।
অনুসন্ধানের দ্বিতীয় দিন নগর ভবনে কথা হয় জহির উদ্দিন নামে এক উদ্যোক্তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘ঘুষ না দিলে আমার কাজ আটকে থাকবে। ওর চেয়ে ঘুষ দেয়াই ভালো। পেরেশানি পোহানো লাগলো না। কেউ খুশি হয়ে দেয়, কেউ বাধ্য হয়ে ঘুষ দেয়। যার কাছে যেমন পারে তেমন বাগায়ে নেয় দালালরা।
‘দুই হাজার, তিন হাজার, পাঁচ শ, এক হাজার যার কাছে যেমন পারে নেয়। এগুলো বাড়তিই নেয়। জানাশোনা আছে বিধায় আমার কাছ থেকে এক হাজার নিছে।’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর অঞ্চল-১-এর কর কর্মকর্তা কাজী সুমনা ইয়াসমিনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘এখানে যে দালাল নেই তা আমি কনফিডেন্টলি বলতে পারছি না। থাকতে পারে। তাদের পাহারা দেয়া আমার কাজ না। আমি থাকি অফিসকক্ষের ভেতরে। কক্ষের বাইরে কে কী করছে কীভাবে বলব?
কর কর্মকর্তা কাজী সুমনা ইয়াসমিন এ সময় জোর দিয়ে বলেন, ‘কারা এসব করছে তাদের নাম দেন। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এ সময় পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘গ্রাহকরা দালালদের কাছে যায় কেন? এখানে তো সব ব্যবস্থা আছে। নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহক সব কাগজপত্র নিয়ে সরাসরি অফিসে আসবে। তারপর সবকিছু ঠিকঠাক করে বুথে গিয়ে সরকারি যে ফি তা জমা দেবে। অফিসের বাইরের কারও কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নাই।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর মুগদায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
মুগদার বড়বাজারের সামনে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো মাহিন আহমেদ (১৩) মতিঝিল সরকারি আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে পরিবারের সঙ্গে উত্তর মুগদার মদিনাবাগে একটি বাসায় থাকত।
মাহিনের খলাত ভাই হিমেল জানান, মাহিনের বাবা একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মাহিন দ্বিতীয়। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল মাহিন, ওই সময় ময়লার গাড়িটি তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে মাহিনের মৃত্যু হয়।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ মিয়া জানান, ময়নাতদন্তের জন্য শিশুটির মরদেহ ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িটি জব্দ করে চালককে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দিতে শুক্রবার গভর্নমেন্ট হাউসে (থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইউএনবি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গভর্নমেন্ট হাউসে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান থাই প্রধানমন্ত্রী।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় নথিতে সই করা হবে। দুই নেতার মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিট একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গভর্নমেন্ট হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাই সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দলের দেয়া গার্ড অফ অনার পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসের অতিথি বইয়ে সই করার আগে স্রেথা থাভিসিন তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন।
গভর্নমেন্ট হাউস ত্যাগ করার আগে শেখ হাসিনা সেখানে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:গাজীপুরের শ্রীপুরে বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে এক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় টেবিলের ওপরে একটি চিরকুট পাওয়া যায়।
উপজেলার মুলাইদ গ্রামের ফারুক খানের বহুতল ভবনের নিচ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে শুক্রবার সকালে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো ইসরাফিল (১৭) শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানান হলদি গ্রামের বাসিন্দা ও তার স্ত্রী রোকেয়া খাতুনের (১৫) বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার পস্তারি গ্রাম।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গত সাত থেকে আট মাস আগে তারা পরিবারের অমতে বিয়ে করেন। তারা দুজনই শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামের ফারুক হোসেনের বহুতল ভবনে ভাড়া থাকতেন। ইসরাফিল স্থানীয় একটি ওয়ার্কসপে ও রোকেয়া স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করতেন।
রোকেয়ার ভাই বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘সাত থেকে আট মাস আগে পরিবারের অমতে তারা বিয়ের সম্পর্কে জড়িয়েছিল। বিয়ের পর তাদের সম্পর্ক ভালোই চলছি। সম্প্রতি ইসরাফিল তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। পরে বৃহস্পতিবার তাদের বুঝিয়ে বাসায় আনা হয়। সকালে তাদের মৃত্যুর খবর পাই।’
ইসরাফিলের বাবা মফিজুল হক জানান, পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন তারা। পরিবারের রান্নার কাজ তারা ইসরাফিলের ফ্ল্যাটে করতেন। শুক্রবার সকালে তাদের ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ভেতরে যান এবং ইসরাফিলকে ওড়নায় পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় এবং রোকেয়ার মরদেহ খাটের ওপর বিছানায় দেখতে পান।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাখাওয়াত হোসেন জানান, ‘খবর পেয়ে একটি ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রথমে স্ত্রী আত্মহত্যা করে। স্ত্রীর আত্মহত্যার বিষয়টি স্বামী সইতে না পেরে তিনিও আত্মহত্যা করেন।’
এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর মোহনায় জেলের জালে এবার ধরা পড়েছে ২৬ কেজি ২৫০ গ্রাম ওজনের একটি কোরাল মাছ।
পরে সেই মাছটি কুয়াকাটা পৌর মাছ বাজারে বিক্রি করা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৫০ টাকায়।
কুয়াকাটা পৌর মাছ বাজারের ‘কুয়াকাটা ফিস পয়েন্টের’ পরিচালক নাসির উদ্দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে মাছটি কেনেন।
তিনি বলেন, ‘সাগর মোহনায় সচরাচর এত বড় মাছ পাওয়া যায় না। আজ দুপুরে মাছটি মার্কেটে আসার পর এক হাজার ২৫০ টাকা কেজি দরে কিনে নেই।’
স্থানীয় জেলেরা জানান, গত মঙ্গলবার কুয়াকাটার বাবলাতলা এলাকার জেলে রাসেল ‘মায়ের দোয়া’ নামের তার ট্রলারটি নিয়ে গভীর সমুদ্রে ইলিশ মাছ ধরতে রওনা হন। পরবর্তীতে বলেশ্বর নদীর সাগর মোহনায় রাত ২টার দিকে রাসেলের জালে এ বিশাল কোরাল মাছটি ধরা পড়ে।
রাসেল বলেন, ‘তীব্র তাপদাহ শুরুর পর থেকে সাগরে মাছ পড়ে না। ভাগ্য সহায় বলে এত বড় মাছ আল্লাহ দিয়েছেন। মাছটি তীরে নিয়ে আসলে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা মাছটি ক্রয় করতে চেয়েছেন। পরে কুয়াকাটা মাছ বাজারে এক হাজার ২৫০ টাকা কেজি দরে মাছটি বিক্রি করেছি।’
জানতে চাইলে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, নদ-নদী এবং সাগরে বিভিন্ন মাছ পাওয়া যায়। সব সময় বড় মাছ ধরা পড়ছে না। সামুদ্রিক কোরাল এর চেয়েও অনেক বড় হয়।
সরকারের দেয়া ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার সফল কার্যক্রমের কারণেই এ ধরনের মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখার ভল্ট থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ওই ব্যাংকের প্রধান তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনজনকে আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাদের সাঁথিয়া থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তিনজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার আবু জাফর, ব্যবস্থাপক হারুন বিন সালাম ও ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী, যাদের বাড়ি পাবনার বিভিন্ন উপজেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী।
সাঁথিয়া থানা ও অগ্রণী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে অগ্রণী ব্যাংক রাজশাহী বিভাগীয় ও পাবনা আঞ্চলিক শাখা থেকে পাঁচ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আকস্মিক অডিটে আসেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখায়। অডিট শেষে সেখানে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকার আর্থিক অনিয়ম দেখতে পান তারা। পরে অডিট কর্মকর্তা সাঁথিয়া থানাকে অবহিত করলে পুলিশ অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় অগ্রণী ব্যাংক পাবনা আঞ্চলিক শাখার উপমহাব্যবস্থাপক রেজাউল শরীফ বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় অভিযোগ করেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে বিভাগীয় অফিস থেকে পাঁচ সদস্যের অডিট টিম ব্যাংকে অডিট শুরু করে। ওই টিমের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনজনের কাছ থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে রাতে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, আটককৃতদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
তিনি আরও বলেন, অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন:সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পাথরবাহী ট্রাকের ধাক্কায় ২ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ৪ আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার গৌরীনগর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমদ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সিলেটগামী পাথরবাহী একটি ট্রাক সিএনজিচালিত অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দিলে ৬ জন যাত্রী গুরুতর আহত হন। পরে তাদেরকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
হাসপাতাল সূত্রে নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি হলেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার লুবিয়া গ্রামের বাসিন্দা ২৫ বছর বয়সী নয়ন মিয়া।
এ ঘটনায় নয়ন মিয়ার ভাই ৪০ বছর বয়সী হারুন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নয়াগাঙ্গের পাড় গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী শাহ আলম, নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার রঞ্জিত সাহার ছেলে ২৩ বছর বয়সী পার্থ সাহাসহ অজ্ঞাতনামা আরও একজন আহত হয়েছেন।
মেট্রোরেলের চলমান প্রকল্পটি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার সকালে সাভার উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মেট্রোরেলের এমআরাটি-৫ ও এমআরটি-৬-এর চলমান প্রকল্পটি হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ অথবা দিয়াবাড়ি থেকে সাভারের রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পে সরকার যদি কোনোরকম জটিলতা মনে করে তাহলে এমআরটি-৬ প্রকল্প উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে বিরুলিয়া হয়ে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিও জানান তারা।
কর্মসূচিতে সড়কের উপর দিয়ে সম্ভব না হলে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেলের যে প্রকল্প রয়েছে, সেই প্রকল্পে সাভারকে যুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সাভার নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি কামরুজামান খান।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের প্রকল্প সাভার পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে অবগতপত্র দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রেলমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকে পত্র দিয়ে এবং সরাসরি সবকিছু অবগত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত সাভারবাসী রেলসেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের লাখ লাখ মানুষ মেট্রেরেলের সুবিধা প্রত্যাশা করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক, সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষানুরাগী সালাহউদ্দিন খান নঈম, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী স্বরণ সাহা, প্রভাত ডি রোজারিও, বন্ধুরহাট যুব সংগঠনের আলোকুর রহমান, জাগরণী থিয়েটারের সভাপতি আজিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
মন্তব্য