ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স সেবা দেয়ার জন্য ১০টি আঞ্চলিক অফিস রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর সিটির পাঁচটি এবং দক্ষিণ সিটির পাঁচটি অফিস থেকে ব্যবসা শুরুর এই সনদ দেয়া হয়।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই ট্রেড লাইসেন্স করতে গিয়ে ব্যবসা শুরুর আগেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। লাইসেন্স নবায়ন করতে ভোগান্তির শিকার হন পুরোনো ব্যবসায়ীরাও।
সিটি করপোরেশন এলাকায় মূলত ব্যবসার ধরনের ওপর নির্ভর করে লাইসেন্স ফি নির্ধারিত হয়। এই ফি সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী কোনো উদ্যোক্তার একটি লাইসেন্স পেতে তিন থেকে সাত কর্মদিবস লাগার কথা থাকলেও তার চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে। এই বিড়ম্বনা এড়াতে অনেক নতুন ব্যবসায়ীই অবৈধ পন্থায় সনদ নিচ্ছেন দালাল চক্রের মাধ্যমে। দিচ্ছেন নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মূল ভবন নগর ভবনে রয়েছে এই লাইসেন্স নেয়ার অঞ্চল-১-এর অফিস।
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি দুই দিন নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক যান নগর ভবনে।
প্রথম দিন ভবনে ঢোকার সিঁড়িতে উঠতে উঠতেই চোখে পড়ল সিঁড়ির একপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন দুজন। তাদের একজনের হাতে কাগজপত্র। একটু এগোতেই মনে হলো অফিশিয়াল কোনো ব্যাপারে কথা বলছেন তারা। মিনিট তিনেক পর স্পষ্ট হওয়া গেল, ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কথা হচ্ছে তাদের মধ্যে।
অফিশিয়াল কাজ, অথচ কথা হচ্ছে অফিসকক্ষের বাইরে- এই রহস্য জানতে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর কাগজপত্র হাতে থাকা লোকটাকে আলাদা করে পাওয়া গেল।
জগন্নাথ কর্মকার নামের ওই যুবক নিউজবাংলাকে জানান, তিনি পেশায় স্বর্ণকার। আট বছর অন্যের দোকানে কাজ করেছেন। এখন নিজেই দোকান দিতে চান। তাই ট্রেড লাইসেন্সের জন্য এসেছেন নগর ভবনে।
‘মালিকের কাজ ছাইড়া দিচি। অহন তো বইয়া খাওনের উপায় নাই। নিজের দোকান খুলোন লাগবো। এই লাইগ্গা লাইসেন্স নিবার আইছি। আমার সাথে উনার কথা হইচে দুই দিনের মধ্যে লাইসেন্স দিয়া দিবো। খরচ লাগবো পাঁচ হাজার ট্যাহা’, বলেন জগন্নাথ কর্মকার।
এই লাইসেন্সের ফি যে পাঁচ হাজার টাকা, তা জানেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি খচ্চ কত আমি জানি না। জিনিসটা আমার আইজ-কাইলকার মধ্যেই লাগবো, অফিসে গিয়ে কাউকাউ করা লাগে, তাছাড়া লোক ছাড়া কাম হয় না।
‘প্রথমে অফিসে গেছিলাম। অফিসে ঢোকার মুখে উনি খাড়াইন্না আছিলেন। কতা-বাত্তাই পইটা গেলো। বাইরে আইনা কইলো দুই দিনেই কাম হইবো, পাঁচ হাজার দিলেই চলবো। আমি রাজি হইয়া গেছি গা। হুনছি সরকারি খরচ কম আছে, কিন্তু উনারা করলে ঝামেলা নাই বইলা না কই নাই। অফিসের লোক আমগো দাম দিবার চায় না।’
স্বর্ণকার জগন্নাথ কর্মকার এতক্ষণ যাকে ‘উনি উনি’ করছিলেন তার নাম মিজান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি আদৌ এখানকার কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন। অনুসন্ধানের দুই দিনই তাকে নগর ভবনের লিফট ও ট্রেড লাইসেন্স শাখার আশপাশেই ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
এই চক্রের সঙ্গে অফিসের কারা কারা জড়িত তা জানতে নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক নতুন উদ্যোক্তা সেজে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য কথা বলেন মিজানের সঙ্গে।
একটা জুসের দোকান দিতে চাই, ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে- এ কথা শুনেই মিজান জানতে চাইলেন, কোন অঞ্চল; কত নম্বর ওয়ার্ড?
সবকিছু বলার পর কাগজপত্র চেয়ে বসলেন মিজান। কাগজপত্র বন্ধু নিয়ে আসছে- বলার পর কত টাকা লাগবে জানতে চাওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গেই মিজানের উত্তর, ‘অফিসের সাথে আপনার কোনো কাম নাই। সব কাম আমার। আমিই সব কিছু করুম। টাকা লাগবো সাড়ে ছয় হাজার। টাইম লাগবো দুই দিন। কাগজপাতি, টাকা দিয়া যান, কাম হয়ে যাবে।’
এরপর মিজান ব্যস্ত হয়ে পড়েন অন্য ‘কাস্টমার’ ধরতে।
এই সুযোগে নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক যান নগর ভবনের লিফটের ১০ তলায় অঞ্চল-১-এর অফিসের সামনে। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, জগন্নাথ কর্মকার যে ট্রেড লাইসেন্স করতে চাইছেন তার ফি দুই হাজার টাকা। অথচ মিজান চেয়েছেন পাঁচ হাজার টাকা। আর জুসের দোকান দিতে ট্রেড লাইসেন্সের ফি এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু মিজান বলছেন, লাগবে সাড়ে ছয় হাজার টাকা, যিনি আসলে এই অফিসের কেউ না।
এরপর মিজানকে খুঁজতে নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক যান নগর ভবনের নিচতলায় লিফটের কাছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়।
তখন সাংবাদিক পরিচয়ে মিজানের কাছে এসব ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা হয় তার। মিজান বলেন, ‘আপনে আপনার পরিচয় লুকাইছেন ক্যান? পরিচয় দিলে কি বেশি টাকা লইতাম? যান মিয়া আমনার লগে কতা নাই।’
এ কথা বলতে বলতে অনেকটা অভিমানের সুরে সটকে পড়েন মিজান ও তার সঙ্গে থাকা আরেকজন।
নগর ভবন ঘুরতে ঘুরতে বেলায়েত হোসেন জাকির নামে পুরোনো এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দেখা মেলে। কথাবার্তায় একপর্যায়ে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি জানান তার ভোগান্তি আর আক্ষেপের কথা।
‘আমি তখন প্রথমবার আসছিলাম অফিসে। ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স লাগে। লাইসেন্সটা করতে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ব্যবসা শুরুই করতে পারলাম না, অথচ ভোগান্তির শেষ নেই। সিটি করপোরেশনে আসলাম। বলে যে কাগজপত্র ঠিক নেই। আমি কিন্তু যা যা দরকার সব কাগজপত্র নিয়েই গেছিলাম।
‘শেষমেশ যখন হলো না তখন অফিস থেকেই একজন বলল, নিচে ওমুকের কাছে যান। ওনারা সহজেই করে দিবে। যার কাছে পাঠানো হলো তার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। তার কাছে আসার পর বুঝলাম সে আসলে দালাল। অবাক হয়েছি এটা দেখে যে, ওই দালালই আবেদন ফরম থেকে শুরু করে সব কিছু নিয়ে বসে আছেন। তার কাজকর্ম দেখে মনে হলো সে ওখানকার হর্তাকর্তা! হবেই তো। অফিসাররাই যেখানে তার কাছে লোক পাঠায়, সেখানে তার ভাবসাপ এমন হবেই তো।’
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাকির নিউজবাংলার কাছে আরও অভিযোগ করেন, ‘ট্রেড লাইসেন্সের জন্য যে কাগজপাতি নিয়ে সিটি করপোরেশন অফিসে দৌড়ালাম, সেই একই কাগজপাতি কিন্তু দালালের কাছে দিলাম। কাজও হয়ে গেল। কিন্তু যেখানে তিন হাজার টাকা লাগার কথা ছিল, দালাল ধরতে গিয়ে লাগল সাত হাজার ৮০০ টাকা। এবার আসছি লাইসেন্স রিনিউ (নবায়ন) করতে। এটাও ঘুষ ছাড়া হবে না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরেশনের এক কর্মী বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখেন যারা চাকরি করে না তারাই এখানকার বড় চাকরিজীবী। তাদের কথার দামই এখানে বেশি। কারণ দালালদের মাধ্যমে অফিসাররা ঘুষ নেয়। এটা সহজ না?’
তিনি জানান, মিজানের সঙ্গে এই চক্রে জড়িত রতন কুমার, জিল্লু সিকদার ও শাকিল জোয়ারদার, যারা বড় দালাল হিসেবে পরিচিত। যাদের কাছে না গেলে কাজ হবে না।
অনুসন্ধানের দ্বিতীয় দিন নগর ভবনে কথা হয় জহির উদ্দিন নামে এক উদ্যোক্তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘ঘুষ না দিলে আমার কাজ আটকে থাকবে। ওর চেয়ে ঘুষ দেয়াই ভালো। পেরেশানি পোহানো লাগলো না। কেউ খুশি হয়ে দেয়, কেউ বাধ্য হয়ে ঘুষ দেয়। যার কাছে যেমন পারে তেমন বাগায়ে নেয় দালালরা।
‘দুই হাজার, তিন হাজার, পাঁচ শ, এক হাজার যার কাছে যেমন পারে নেয়। এগুলো বাড়তিই নেয়। জানাশোনা আছে বিধায় আমার কাছ থেকে এক হাজার নিছে।’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর অঞ্চল-১-এর কর কর্মকর্তা কাজী সুমনা ইয়াসমিনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘এখানে যে দালাল নেই তা আমি কনফিডেন্টলি বলতে পারছি না। থাকতে পারে। তাদের পাহারা দেয়া আমার কাজ না। আমি থাকি অফিসকক্ষের ভেতরে। কক্ষের বাইরে কে কী করছে কীভাবে বলব?
কর কর্মকর্তা কাজী সুমনা ইয়াসমিন এ সময় জোর দিয়ে বলেন, ‘কারা এসব করছে তাদের নাম দেন। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এ সময় পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘গ্রাহকরা দালালদের কাছে যায় কেন? এখানে তো সব ব্যবস্থা আছে। নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহক সব কাগজপত্র নিয়ে সরাসরি অফিসে আসবে। তারপর সবকিছু ঠিকঠাক করে বুথে গিয়ে সরকারি যে ফি তা জমা দেবে। অফিসের বাইরের কারও কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নাই।’
আরও পড়ুন:গত ১ সপ্তাহ ধরে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপে পুড়ছে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। দিনের বেলায় প্রচণ্ড রোদ আর গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। প্রচন্ড তাপদাহের ফলে ঘর থেকে বের হতে পারছেনা মানুষ। তবে দিনের অংশে গরম হলেও রাতে পড়ছে ভারি কুয়াশা।
আজ মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ জেলাজুড়ে নেমে আসে ঘন কুয়াশা। সকাল ৮টা পর্যন্ত জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা দেখা যায়।
এতে রীতিমতো অবাক হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সদর উপজেলার ভাবরঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা মোমিনুল ইসলাম সবজি বিক্রি করতে এসেছেন পঞ্চগড় বাজারে। তিনি বলেন, গৃীস্মকালে এমন কুয়াশা তিনি কখনো দেখেননি। এমন আবহাওয়া থাকলে এ সময়ের অর্থকরী ফসলের ক্ষতি হতে পারে। কায়েত পাড়া গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরম। বাদাম শুকানোর জন্যে এই আবহাওয়া ভালো। কিন্ত তীব্র গরমে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। দিন ও রাতে কষ্টের মধ্যে সময় কাটাচ্ছি। কিন্তু আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি চারপাশ কুয়াশায় ঢেকে গেছে, ভাবতেও পারিনি এমন কিছু দেখতে পাবো।
পঞ্চগড় সরকারী কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, নদ নদীতে পানি নেই অপরিকল্পিতভাবে সমতল ভূমি কেটে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে, কেটে ফেলা হচ্ছে
গাছপালা। ফলে প্রকৃতিতে বিপর্যয় নেমে আসছে। এদিকে গরমের পাশাপাশি প্রায় সকাল ৮টা পর্যন্ত কুয়াশা ছিল। এমন আবহাওয়া জীবনে কখনো দেখিনি। অবাক হয়ে গেছি।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় বলেন, মূলত আকাশে ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে গেছে। যার কারণে বাতাসে সেগুলো জমে গিয়ে কুয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। একে ধূলিকণা প্রভাবিত কুয়াশা বলা যায়। এটি সাধারণ কুয়াশা নয়, বরং পরিবেশ দূষণ ও আবহাওয়ার বিশেষ অবস্থার কারণে সৃষ্টি।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে গতকাল সোমবার (৯ জুন) দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলমান দাবদাহের মধ্যে আগামী ১৪ জুন থেকে পঞ্চগড়ে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
মানিকগঞ্জের আরিচা-দৌলতপুর- টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়কের ঘিওরে ফ্লাইওভার ব্রিজে বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মটরসাইকেল আরোহী সিরাজুল ইসলাম শেখ ( ২৫ ) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত সিরাজুল ইসলাম শেখ দৌলতপুর উপজেলার চর গোবিন্দপুর গ্রামের মো. ঠান্ডু শেখের ছেলে।
রবিবার (৮ জুন) দুপুর ১ টার দিকে ঘিওর উপজেলার চরবাইলজুরী পঞ্চরাস্তায় ফ্লাইওভার ব্রিজের উপর এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দৌলতপুর থেকে ছেড়ে আসা স্বাধীনতা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বরংগাইল থেকে আসা একটি রানার মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী সিরাজুল ইসলাম শেখ মারা যান।
খবর পেয়ে ঘিওর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও মোটরসাইকেল জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।
ঘিওর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে ।।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছে।
সোমবার রাতে উপজেলার তারাবো এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, তারাবো সুলতানবাগ এলাকার দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সাবেক রূপগঞ্জ প্রতিনিধি মরহুম আবুল হাসান আসিফের ছেলে শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাতে তারাবো বিশ্বরোড এলাকা থেকে অটোরিক্সা যোগে তারাবো সুলতানবাগ এলাকার বাড়িতে ফিরছিলেন শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। পথিমধ্যে সাইফিং ফ্যাক্টরীর সামনে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসের সাথে অটোরিক্সাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অটোরিক্সাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫) এবং আহত হয় অটোরিক্সার যাত্রী শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। তাদের মধ্যে শাহরিয়ার হাসান আকাশ ও তার বন্ধু তামিম সরকারকে গুরুত্বর আহত অবস্থায়
স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা শাহরিয়ার হাসান আকাশকে মৃত ঘোষনা করেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, দূর্ঘটনার পর হাইয়েস মাইক্রোবাসের চালক মাইক্রোবাসটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় নি।
কুষ্টিয়া শহরের একটি বহুতল ভবনের পার্কিং স্পেসে একটি বিলাসবহুল ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো গাড়ির সন্ধান মিলেছে। কোটি টাকা দামের গাড়িটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) নিহত আনোয়ারুল আজীম আনারের বলে ধারণা করছেন পুলিশ ও স্থানীয়রা।
সোমবার (৯ জুন) দিবাগত রাত বারোটার দিকে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের আটতলা বিশিষ্ট সাফিনা টাওয়ার নামের ভবনের গ্যারেজে এটি খুঁজে পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ। গাড়ির ভেতরে পাওয়া গেছে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার। কালো রঙের গাড়িটির নম্বর ‘ঢাকা মেট্রো-ঘ ১২-৬০৬০’।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন। তিনি বলেন, ‘গাড়ির খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। গাড়ি থেকে কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িটি সাবেক এমপি আনারের।’
বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং গাড়িটি উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। ে
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাব্বির বলেন, ‘প্রথমে শুনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের গাড়ি রাখা আছে সাফিনা টাওয়ারের গ্যারেজে। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে গাড়ির কাগজপত্র ও সংসদ সদস্যের স্টিকার উদ্ধার করে। গাড়ির চালক কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর সাবেক চালক ছিলেন। তিনিই কাগজপত্র ও স্টিকার দেন। এতে দেখা যায়, গাড়িটির মালিক আনোয়ারুল আজীম আনার।”
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জুনায়েদ হোসাইন বলেন, ‘সাধারণ জনগণের কাছ থেকে জানতে পারি যে সাফিনা টাওয়ারে একটি দামি প্রাডো গাড়ি রাখা আছে, যা মাসের পর মাস বের করা হয় না, শুধু মাঝে মাঝে স্টার্ট দেওয়া হয়। পরে আমরা গিয়ে দেখি গাড়িটি। আমাদের দেখে চালক পালানোর চেষ্টা করেন। পরে একজনকে কল দেন, আমি তার সঙ্গে কথা বলি, কিন্তু তিনি কোনো তথ্য দেননি। পরে পুলিশ এসে কাগজপত্র উদ্ধার করে, যেখানে এমপি আনারের নাম পাওয়া যায়।’
ঘটনার তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। এদিকে স্থানীয়রা জানান, জেনুইন লিফ কোম্পানি নামের একটি সিগারেট কোম্পানি ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলা ভাড়া নিয়েছে। তারাই গাড়িটি এখানে রাখার ব্যবস্থা করেছে।
এ বিষয়ে বাসার কেয়ারটেকার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘জেনুইন লিফ কোম্পানি ভবনের তিনটি তলায় ভাড়া নিয়েছে। সেখানে বিদেশিরা আসেন, থাকেন ও খাওয়াদাওয়া করেন। গাড়িটি তারাই রেখেছেন। কোম্পানির বেলাল স্যার জিএম ও জাহিদ স্যার সিইও। এর বেশি আমি জানি না।’
গাড়িটির চালক শান্ত বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে আমি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ি চালাতাম। এখন জেনুইন লিফ কোম্পানির গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করি। জিএম বেলাল স্যার ও সিইও জাহিদ স্যারের গাড়ি চালাই। তাদের হুকুমে আমি গাড়ি স্টার্ট দিয়েছি। গাড়ির মালিক কে, তা জানি না। আমি কখনো রাস্তায় গাড়িটি চালাইনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবনের একজন নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘গাড়িটি এনে তারা গ্যারেজে রাখেন। আমি জানতাম না এটি কার। আজ শুনলাম এটি এক এমপির। গাড়িটি কয়েক মাস ধরে রাখা আছে।’
এ বিষয়ে সাফিনা টাওয়ারের মালিক জেনুইন লিফ টোব্যাকোর সিইও জাহিদ ও জিএম বেলালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের অফিসে গিয়ে কেয়ারটেকার ও দারোয়ান ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন ও মালিকানা পত্রে এমপি আনারের নাম রয়েছে। এ ছাড়া, সাফিনা টাওয়ারের ফ্ল্যাট মালিক ও ভাড়াটিয়ার চুক্তিপত্র অনুযায়ী মেহেরপুর জেলার গাংনী পৌরসভার বাঁশবাড়িয়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা মো. মুস্তাফিজুর রহমান ভবনের তিনটি ইউনিট ও তিনটি গাড়ির পার্কিং স্পেস ভাড়া নিয়েছেন। গাড়িটি বর্তমানে তার পার্কিং স্পেসেই রাখা আছে।
তিনি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এটি ভাড়া নিয়েছেন। মুস্তাফিজুর রহমান কুষ্টিয়ার দশমাইল এলাকায় অবস্থিত ‘তারা টোব্যাকো’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে গাড়িটি কলকাতায় খুন হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য আনারের। তবে গাড়িটির মালিকানা সম্পর্কে অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে কে বা কারা গাড়িটি এনে এখানে রেখেছে, সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
পবিত্র হজের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। এখন হাজিরা সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশি হাজিদের ফিরতি ফ্লাইট। যা চলবে ১০ জুলাই পর্যন্ত।
মিনায় শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ এবং কাবা ঘরে ফরজ তাওয়াফ শেষে মিনায় ফিরছেন হাজিরা। ফেরার পথে অনেকে পথ হারিয়ে আশ্রয় নেন মক্কার হজ মিশনে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে এ বছর ৮৭ হাজার ১৫৭ জন হজ পালন করেছেন। এর মধ্য ১৯ জন হজ যাত্রী মৃত্যুবরণ করেন। চলতি হজ মৌসুমে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৪৩৬টি ভুয়া হজ এজেন্সি বন্ধ করে দিয়েছে এবং ৪৬২ জনকে আইন ভঙ্গ করায় গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে চলতি বছর পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরবে গিয়ে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ১৮৮ বাংলাদেশি। এ ছাড়া ১৯ জন দেশটির সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এবার হজ অনুষ্ঠিত হয় ৫ জুন। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রার প্রথম ফ্লাইট ছিল ২৯ এপ্রিল আর হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রার শেষ ফ্লাইট ছিল ৩১ মে।
রবিবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে কারো মৃত্যু হয়নি। এই সময়ের মধ্যে পাঁচ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
সোমবার (৯ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন আরও পাঁচজন।
এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৪৭ জনে। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ২০ শতাংশ। মোট করোনা পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এ নিয়ে করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৬ জনে।
চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আমিরাতের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, এই সফরে বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় তিনি রাজা চার্লসের হাত থেকে গ্রহণ করবেন ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’।
সফরসঙ্গী হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।
এ ছাড়া, দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন করে পুনরুজ্জীবিত এবং অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ার লক্ষ্যে এই সফর অনুষ্ঠিত হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর। প্রধান উপদেষ্টা ৯ জুন ঢাকা থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেবেন এবং ১৪ জুন দেশে ফিরবেন।’
মন্তব্য