করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় গত ৫ এপ্রিল সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। সেদিন থেকে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস চলাচল।
গত ৬ মে সিটি ও জেলা শহরে গণপরিবহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলেও দূরপাল্লার বাসে কোনো ছাড় দেয়া হয়নি। তবে ঈদের আগে ঘরমুখী মানুষের চাপ আর শ্রমিকদের নিরুপায় অবস্থার মধ্যে সরকারের সেই নিষেধাজ্ঞার বাস্তব চিত্র কী, তা অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা।
নিউজবাংলার কাছে তথ্য রয়েছে, সূর্য ডুবলেই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলছে বাস। ঢাকা থেকে দ্বিগুণ ভাড়া দিলেই নির্বিবাদে যাওয়া যাচ্ছে দেশের যে কোনো গন্তব্যে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে কীভাবে যাচ্ছে দূরপাল্লার বাস, যাত্রী হচ্ছেন কারা, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কতটা, এসব সরেজমিন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় নিউজবাংলা। পরিচয় গোপন করে একটি দূরপাল্লার রুটের বাসে যাত্রী হন দুই প্রতিবেদক।সম্পাদকীয় নীতিমালা অনুযায়ী, এই প্রতিবেদনে কোনো বাস কোম্পানি বা সংশ্লিষ্টদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
প্রতিবেদনটির একমাত্র উদ্দেশ্য, সরকারের নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে কতটা কার্যকর হচ্ছে, সেটি অনুসন্ধান করা।
ঢাকা থেকে লালমনিরহাটের বুড়িমারী পর্যন্ত যেতে একটি বাস কোম্পানির এক কর্মীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয় নিউজবাংলার দুই প্রতিবেদকের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ওই কর্মীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাসে করে লালমনিরহাট যাওয়ার কোনো উপায় আছে কিনা। তিনি কোম্পানির আরেক জনের সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় নেন। কিছুক্ষণ পর কল করে জানান, যাওয়া যাবে। রাতে তাদেরই কোম্পানির একটি বাস হেমায়েতপুর থেকে ছেড়ে যাবে।
ওই কর্মী এক জনের ফোন নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ওই ব্যক্তিকে ফোন করে জানা যায়, হেমায়েতপুর পার হয়ে একটি সিএনজি স্টেশন রয়েছে। সেখান থেকেই তাদের পরিবহনের একটি নন এসি বাসে করে লালমনিরহাট যাওয়া যাবে।
ভাড়ার বিষয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, জনপ্রতি ১৩০০ টাকা করে লাগবে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই সিএনজি স্টেশনে গিয়ে যাওয়ার ভাড়া বুঝিয়ে দিতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ে এ ধরনের বাসে লালমনিরহাটের বুড়িমারী পর্যন্ত ভাড়া ৬০০ টাকার মতো।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নিউজবাংলা কার্যালয় থেকে হেমাযেতপুরের উদ্দেশে বের হন দুই প্রতিবেদক। হেমায়েতপুরের ওই সিএনজি স্টেশনে তারা পৌঁছান ৭টা ১০ মিনিটে। তবে তখনও নির্ধারিত বাস ও ফোনে যোগাযোগ হওয়া ব্যক্তি সেখানে আসেননি।
ফোন করা হলে তিনি জানান, গাড়ি আসতে আরও সময় লাগবে।
বাসের চালক এখন চালাচ্ছেন ট্রাক
এক মাসের বেশি সময় ধরে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন বহু পরিবহন শ্রমিক। তাদের অনেকে বাধ্য হয়ে ট্রাকসহ বিভিন্ন ছোট যান চালাচ্ছেন।
এমনই একজন আনোয়ার হোসেন। হেমায়েতপুরের সিএনজি স্টেশনে নিউজবাংলার দুই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘গাড়ি না চালাইলে আমার ইনকাম বন্ধ। আমি বাস চালাইতাম। একমাস হয় বাস বন্ধ। এখন বাস ছেড়ে ট্রাক চালাই।
‘গরিবের ঘরে এক মাস চলার খোরাকি থাকে না। বাধ্য হয়েই রাস্তায় নামতে হয়।’ ।
ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার জন্য একটি পিকআপ ভ্যানে চড়ে বসেছেন রাজু ও তার স্ত্রী আকলিমা। রাজু থাকেন মিরপুরে। কাজ করতেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। গত মাসেই তার চাকরি চলে যায়। এপ্রিল মাস জুড়ে চাকরি খুঁজে ব্যর্থ হয়ে পরিবার নিয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছিলেন রাজু।
তিনি বলেন, ‘ট্রাক ও পিকআপে করে ঢাকার বাইরে যাওয়া যায়। আমার এক আত্মীয়ও গতকাল ঢাকা থেকে বগুড়া গিয়েছে। তার কথা মতো আমরা আমিন বাজার ব্রিজ পার হয়ে এই পিকআপ ভ্যান পেয়েছি।’
দূরপাল্লার বাস না থাকায় বিকল্প এই পথ ধরা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না বলে বলে জানান রাজু।
বিভিন্ন গন্তব্যে ছাড়ছে বাস
সিএনজি স্টেশনে তখন আরও অনেক যাত্রী অপেক্ষারত। একেক জনের গন্তব্য উত্তরবঙ্গের একেক জায়গায়। তাদের নির্ধারিত বাসগুলোও ছাড়বে এখান থেকেই।
এক ঘণ্টার মধ্যে দুটি বাস যাত্রী বোঝাই করে ছেড়ে যায় বগুড়ার উদ্দেশে। এর মধ্যে একটি বাসের সুপারভাইজার জানান, বগুড়া পর্যন্ত যেতে ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ১২০০ টাকা, স্বাভাবিক সময়ে এই ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এসব বাসে প্রতিটি আসনেই রয়েছে যাত্রী, এক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রী বসানোর তোয়াক্কাও নেই রাতের আঁধারে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে।
বাড়তি ভাড়া নেয়ার কারণ হিসেবে কয়েকটি বাসের চালকেরা জানান, পথে পথে চেকপোস্টে পুলিশ গাড়ি আটকায়। প্রতিটি চেকপোস্টে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত পুলিশকে দিতে হয়। এই টাকা পেলে রাতের আধাঁরে চলা যাত্রীবাহী বাসগুলো পুলিশ ছেড়ে দেয়।
তারা জানান, মির্জাপুরের আগে ও যমুনা সেতুর কাছে চেকপোস্ট আছে। এছাড়া, অস্থায়ী কিছু চেকপোস্ট হঠাৎ হঠাৎ বসায় হাইওয়ে পুলিশ।
নিউজবাংলার দুই প্রতিবেদকের বাস তখনও আসেনি। তবে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফোন করা হলে আশ্বস্ত করেন বাসটির ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, আর ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
রাত ঠিক ৮টা ৪৫ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত সেই বাস এসে পৌঁছায় সিএনজি স্টেশনে। দেখা হয় ফোনে যোগাযোগ হওয়া সেই ব্যক্তির সঙ্গে। সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে জানান, তিনিই এই গাড়ির মালিক। তার আরও নয়টি গাড়ি রয়েছে।
ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আপনারা দেরি করে যোগাযোগ করছেন, তাই সামনের দিকে সিট দেয়া যাবে না।’
তবে হাতে বাড়তি কিছু টাকা গুঁজে দিতেই তিনি উৎসাহ নিয়েই নিউজবাংলার দুই প্রতিবেদককে বাসের দ্বিতীয় সারিতেই বসার ব্যবস্থা করে দেন।
পরিচয় ‘ধান কাটা শ্রমিক’, সামনের আসনে নারী যাত্রী নয়
বাস মালিক জানান, ঝামেলা এড়াতে বাস চলাচলের অনুমতি নেয়া হয়ছে ধান কাটা শ্রমিক পরিবহনের জন্য। এজন্য সামনের দিকের দুই সারির আসনে নারী যাত্রীদের বসা নিষিদ্ধ।
বাস মালিক বলেন, ‘এখন ধান কাটার মৌসুম চলছে। গাড়িতে ধান কাটার শ্রমিক রয়েছে বলে প্রশাসনের লোকদের একটা বুঝ দেয়া হয়। এটা বলার জন্যই বলা।’
তিনি বলেন, ‘রাস্তায় আটকালে যাত্রীরা ধান কাটা শ্রমিক না ঘরমুখী মানুষ, তা চেক করে না পুলিশ। তবে, গাড়ি আটকালে এটা বলে একটা অজুহাত সামনে আনা হয়। পুলিশও জানে, এতে ধান কাটা শ্রমিক নেই। সেজন্য চেক না করলেও গাড়ি আটকালে টাকা দিতে হয়।’
উত্তরের পথে যাত্রা শুরু
রাত ৮টা ৫০ এ সিএনজি স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে বাসটি। ওই স্টেশন থেকে নিউজবাংলার দুই প্রতিবেদক ছাড়াও ওঠেন আরও ২০ যাত্রী। এরপর হেমায়েতপুর থেকে সাভারের জিরানীবাজার যাওয়ার মধ্যেই ৫২ আসনের প্রতিটি যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায়। জনপ্রতি ভাড়া ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।
দরজার পাশের সুপারভাইজারের ছোট আসনে বাসের সেই মালিকও আছেন। গল্পছলে তিনি দুই প্রতিবেদককে বলেন, ‘টেকনিক করে এখন গাড়ি চালাতে হচ্ছে। রাস্তায় কেউ গাড়ি আটকালে মন্ত্রী-এমপির পরিচয় দিতে হয়। আবার কখনও ধান কাটা শ্রমিক পরিবহনের কথা বলি। তবে যত কৌশলই ব্যবহার করা হোক পুলিশ আটকালে টাকা ছাড়া রেহাই নাই।’
অন্ধকার মহাসড়কের বুক চিরে একের পর এক ছুটে যাচ্ছে মালবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস। প্রতিটিতেই আছে উত্তরবঙ্গমুখী সাধারণ মানুষ। নিউজবাংলার দুই প্রতিবেদক যে বাসে চড়েছেন, সেটিকে ওভারটেক করে একের পর এক যাত্রীবাহী বাসও ছুটে যাচ্ছিল যমুনা সেতুর দিকে।
চলাচল ঠেকাতে নয়, টাকার জন্য চেকপোস্ট
দূরপাল্লার বাসের এই ‘নিষিদ্ধ’ যাত্রার সুযোগ ষোলআনাই নিচ্ছে পুলিশ। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাস বন্ধ করার জন্য নয়, বরং সেগুলো থেকে টাকা নিতে থামানো হচ্ছে বিভিন্ন চেকপোস্টে।
সাভারের বাইশমাইল এলাকায় প্রথমবার পুলিশ থামায় নিউজবাংলার দুই প্রতিবেদকের বাসটিকে। তাদের থামানোর সংকেত দেখেই তৎপর হয়ে ওঠেন বাসের মালিক। গাড়ি থেকে নেমে পুলিশের একজন লাইনম্যানের কাছে তিন শ টাকা বুঝিয়ে দেন, এরপর আবার যাত্রা শুরু।
পুলিশের পরবর্তী চেকপোস্ট সম্পর্কে রাস্তায় সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন বাস মালিক। তার নির্দেশনা মেনেই বাস চালাচ্ছেন চালক। কোথাও থামার সংকেত পেলে নিজেই নেমে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘রফা’ করছেন।
রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে দ্বিতীয়বারের মতো মির্জাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সামনে বাসটি থামায় হাইওয়ে পুলিশ। এখানে ৫০০ টাকার বিনিময়ে মিলল ছাড়।
কিছুদূর যাওয়ার পর টাঙ্গাইলের নগর জালৈফ বাইপাস এলাকায় আবার চেকপোস্ট। বাসটি থামিয়ে হাইওয়ে পুলিশের একজন সদস্য দরজায় উঠে দাঁড়ান। বাসটি কিছুদূর নিয়ে গিয়ে একপাশে থামানোর পর পুলিশের সেই সদস্যের সঙ্গে শুরু হয় বাস মালিকের দেনদরবার।
দেখা যায়, গাড়ি ছেড়ে দিতে বাস মালিক টাকা গুঁজে দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যের হাতে, তবে তিনি বারবার গাড়ির কাগজ চাচ্ছেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে টাকার অংকও বাড়ছে। এক সময় ওই পুলিশ সদস্য ‘উপযুক্ত’ টাকা পেয়ে বাস ছেড়ে দিতে রাজি হন। বিজয়ীর হাসি দিয়ে ফিরে আসের বাস মালিক।
এতক্ষণের দেনদরবারে যাত্রীরা কিছুটা আতঙ্কে পড়িছেলেন। তবে বাস মালিক ফিরে এসে সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আপনাদের কিছু হবে না, টেনশন নিয়েন না।’
নিউজবাংলার দুই প্রতিবেদককে বাস মালিক বলেন, ‘প্রথমে ৫০০ দিছি, মানে না। কাগজ চায়। কইলাম, সংসার চালাইতে হইব, আমাদের একটু চলতে দেন। এই বইলা আরও ২০০ দিলাম। তাও মানে না। বলে, কাগজ নিয়া নিচে নাম। নামছি না দেখে এক হাজার মিলাই দিতে বলল।
‘তখন তার পায়ে হাত রেখে বললাম, মাফ করেন, আমাদের বাঁচান। এই বলে আরও ১০০ টাকা দিয়া কইলাম, স্যার এইবার যাইতে দেন, তারপর ছাইড়া দিলো।’
বাসটি এবার বিনা বাধায় পার হয়ে যায় যমুনা সেতু। যমুনার ওপারের সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা এলাকায় একটি হোটেলে যাত্রাবিরতি। রাত তখন ১টা পার হয়ে গেছে। নিউজবাংলার দুই প্রতিবেদক উত্তরের দিকে আর না এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন।
এই হোটেলে সাধারণত ট্রাক চালকেরা যাত্রাবিরতি করেন। তবে গভীর রাতের নিষিদ্ধ যাত্রীবাহী বাসও এখন থামছে এখানে। হোটেলটিতে প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে বেশকিছু যাত্রীবাহী বাসের চালক, যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন নিউজবাংলার দুই প্রতিবেদক। এ সময়ে দেখা গেছে, বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারের পাশাপাশি ট্রাক, পিকআপেও ঢাকা ছাড়ছে অসংখ্য মানুষ।
ঢাকা ফেরার উপায় ওই শেষ রাতে বের করা ছিল কঠিন। হোটেলের কর্মীরা জানান, ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছানোর পর বাসগুলো আমার ফিরতি যাত্রা করে দুপুরের দিকে। সন্ধ্যার পর সেগুলো ঢাকায় পৌঁছে রাতে আবার বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়।
তবে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসে ঢাকা ফেরা সম্ভব যে কোনো সময়েই। তেমনই একটি প্রাইভেট কারে শুক্রবার সকালে ঢাকা ফেরেন নিউজবাংলার দুই প্রতিবেদক।
পুলিশ যা বলছে
হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া অঞ্চলের পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকারের কাছে মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচলের বিষয়ে জানতে চেয়েছে নিউজবাংলা। তিনি বলেন, ‘রাতের আঁধারে কোনো বাস চললে বা যাত্রী পরিবহন করলে আমরা প্রত্যেকটা গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছি। সরকারি প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত বিধিনিষেধ মেনে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
নিউজবাংলার দুই প্রতিবেদকের অভিজ্ঞতা জানানো হলে শামসুল আলম বলেন, ‘ধান কাটা শ্রমিক ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লোকজন পরিবহনের জন্য কিছু বাস চলছে।’
যাত্রাপথে বেশ কয়েক জায়গায় পুলিশকে টাকা দিতে হয়েছে, এমন তথ্য জানালে হাইওয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। আগামী পাঁচ দিনেও আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে।
শুক্রবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির গভর্নর হাউসে শুক্রবার থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি ও আইসিটি খাতে সহযোগিতা জোরদারের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে অনুভব করি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি, আইসিটি, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগের ক্ষেত্রে এবং বিমসটেকের অধীনে আমাদের সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ রয়েছে।’
এর আগে দুই নেতা গভর্নর হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেয়ার আগে ১৫ মিনিটের জন্য একান্ত বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি—একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি লেটার অফ ইনটেন্ট (এলওআই) সই করা হয়।
মধ্যাহ্নভোজে শেখ হাসিনা বলেন, নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বন্ধুত্ব আমাদের ঐতিহাসিক, ভাষাগত ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগসহ সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে আমাদের দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী থাভিসিন ও তিনি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা করতে এবং দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে আরও আলাপ-আলোচনাকে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছি। একইভাবে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগের প্রসার ও সুবিধার্থে আমাদের সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার ঢাকা ও ব্যাংকক যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে, তা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি দৃঢ় কাঠামো প্রদান করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সফরটি ‘প্রতিবেশী’ নীতির বৃহত্তর ফোকাসের অংশ, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি আরও নবায়নের জন্য দুই দেশকে চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, এই সফর আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করতে সাহায্য করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গতি সঞ্চার করবে।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারি সফর আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে, যা আমাদের দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ অংশীদারত্বের এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।
‘আগামী দিনগুলোয় আমাদের জনগণ ও দেশের পারস্পরিক সুবিধার জন্য আমাদের সম্পর্কের নতুন গতি বজায় রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কেও থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ কামনা করেছেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে শুক্রবার গভর্নমেন্ট হাউসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি চিকিৎসাকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি তাকে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণেরও প্রস্তাবও দিয়েছি।’
বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি, একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি লেটার অফ ইনটেন্টে (এলওআই) সই করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের বন্ধুত্ব আমাদের ঐতিহাসিক, ভাষাগত ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত।
‘সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে আমাদের দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গতিশীল অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডকে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ ও গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখি।’
বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বর্তমান পরিসর বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সহজীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি প্রধানমন্ত্রীকে (থাভিসিন) আশ্বস্ত করেছি। আমি থাই পক্ষকে আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করার ও শুধু থাইল্যান্ডের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:দেশের দুটি জেলায় অতি তীব্র ও ১৬টিতে তীব্র দাবদাহ চলছে জানিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, সেটি অব্যাহত থাকতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে জানানো হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা এবং খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলার (১০ জেলার মধ্যে বাকি আটটি) ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।
তাপমাত্রার বিষয়ে অধিদপ্তর জানায়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইউএনবি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গভর্নমেন্ট হাউসে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান থাই প্রধানমন্ত্রী।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় নথিতে সই করা হয়। দুই নেতার মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিট একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গভর্নমেন্ট হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাই সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দলের দেয়া গার্ড অফ অনার পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসের অতিথি বইয়ে সই করার আগে স্রেথা থাভিসিন তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন।
গভর্নমেন্ট হাউস ত্যাগ করার আগে শেখ হাসিনা সেখানে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:মেট্রোরেলের চলমান প্রকল্পটি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার সকালে সাভার উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মেট্রোরেলের এমআরাটি-৫ ও এমআরটি-৬-এর চলমান প্রকল্পটি হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ অথবা দিয়াবাড়ি থেকে সাভারের রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পে সরকার যদি কোনোরকম জটিলতা মনে করে তাহলে এমআরটি-৬ প্রকল্প উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে বিরুলিয়া হয়ে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিও জানান তারা।
কর্মসূচিতে সড়কের উপর দিয়ে সম্ভব না হলে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেলের যে প্রকল্প রয়েছে, সেই প্রকল্পে সাভারকে যুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সাভার নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি কামরুজামান খান।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের প্রকল্প সাভার পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে অবগতপত্র দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রেলমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকে পত্র দিয়ে এবং সরাসরি সবকিছু অবগত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত সাভারবাসী রেলসেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের লাখ লাখ মানুষ মেট্রেরেলের সুবিধা প্রত্যাশা করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক, সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষানুরাগী সালাহউদ্দিন খান নঈম, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী স্বরণ সাহা, প্রভাত ডি রোজারিও, বন্ধুরহাট যুব সংগঠনের আলোকুর রহমান, জাগরণী থিয়েটারের সভাপতি আজিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরেন। সূত্র: ইউএনবি
তাতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেদনটি দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং নির্দিষ্ট কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করতে শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং অবমূল্যায়ন করেছে, যা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোবল ও কার্যকারিতার জন্য ক্ষতিকর।’
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মুখপাত্র বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন প্রতিবেদনে স্থান পায়নি। অন্যদিকে বিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।
‘প্রতিবেদনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়লে স্পষ্ট হবে যে এতে পৃথকভাবে রিপোর্ট করা বা কথিত ঘটনাগুলোর পরিপূর্ণ রেফারেন্স দেয়া হয়নি। এটি সরলীকরণ অনুমাননির্ভর তথ্যে ভরপুর।’
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার বিষয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। একইসঙ্গে আশা প্রকাশ করেছে, ফিলিস্তিনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিরপরাধ নারী ও শিশু হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবে।
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘গত বছর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন অজুহাতে এবং বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে অস্থিরতা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির বিষয়টি প্রতিবেদনে অনুপস্থিত।
‘বেশিরভাগই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার (বেনামী উৎসসহ) কাছ থেকে পাওয়া অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমর্থিত।’
‘প্রতিবেদনটি সহজাত পক্ষপাতদুষ্ট, এটি বেশ স্পষ্ট।’
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অব্যাহত আগ্রহের প্রশংসা করেছে।
মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা যতই প্রত্যাশা করি না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। মানবাধিকার কোনো শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তবে আর্থ-সামাজিক সীমাবদ্ধতা প্রায়ই এসব অধিকার আদায়ের গতিকে সীমাবদ্ধ করে।’
‘বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
‘যেসব ক্ষেত্রে আরও উন্নতি প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা মেয়াদে মানবাধিকার পরিস্থিতির অর্থবহ অগ্রগতি করতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক লক্ষ্য করবেন, এ জাতীয় প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, প্রবীণদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারের সুবিধা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং আরও অনেক কিছুতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও এটি বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্রদের সহিংসতা ও ভাঙচুরের বিষয়টি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে এবং এর ফলে সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
‘এ ধরনের পরিকল্পিত প্রচারণা থেকে জনসাধারণের জীবন, শৃঙ্খলা ও সম্পত্তি রক্ষায় আইনানুগ পদক্ষেপ এবং প্রতিকারের চেষ্টা করার রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপকেও প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে। এটি খুবই হাস্যকর।’
তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত যে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করেছে এবং যেকোনো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্ণ পেশাদারত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের আন্তরিক সমর্থন ও পেশাদারত্বের ভিত্তিতে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিএনপি ও অন্যান্য দলের নির্বাচন বর্জন সত্ত্বেও ৪২ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেদনে বার বার বেশকিছু অভিযোগ বা অনুযোগ উঠে এসেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
‘উদাহরণস্বরূপ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী বা রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা মিয়ানমারের নাগরিক বা বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতির বৈধ দাবিকে ক্ষুণ্ন করছে।’
অন্য একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে দেশের সাংবিধানিক বিধানের পরিপন্থী ‘আদিবাসী জনগণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা অযৌক্তিক উত্তেজনা ও বিভাজনকে উসকে দেয়ার প্রচেষ্টার নামান্তর।
“আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবেদনটি আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিনিময় করা অকাট্য প্রমাণ বা তথ্য বাদ দিয়েছে বা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
“উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শাহীন মিয়া ও মোহাম্মদ রাজু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে, যাতে ঘটনাগুলো আইনের আওতাভুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। জেসমিন সুলতানার ক্ষেত্রে যে বিচারিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রতিবেদনে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি, বিশেষ করে চলমান যথাযথ প্রক্রিয়ার বিষয়টি।”
মুখপাত্র বলেন, ‘একইভাবে শ্রম অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো, বিশেষত ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধকরণ ও কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।’
‘বরাবরের মতোই প্রতিবেদনে আইনগত কর্মকাণ্ডের চিত্র ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারও কারখানা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি সম্পত্তি বা ব্যবস্থাপনা কর্মীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের নামে অযাচিত বাধা বা ভাঙচুরের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের গৃহীত আইনানুগ পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
‘প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গৃহীত প্রশাসনিক ও বিচারিক পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে প্রতিবেদনে মানবাধিকারের পদ্ধতিগত অপব্যবহারের অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যক্তি বা সংস্থার দ্বারা সংঘটিত ঘটনাগুলো প্রকাশের প্রবণতা বজায় রাখা হয়েছে।
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘সাধারণভাবে বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক প্রতিবেদনটি নজরে নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সব নাগরিকের মানবাধিকারের পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রক্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রত্যাশায় রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য