বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে পল্টন ময়দান। দেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে অসংখ্য গৌরবগাথার জন্ম দিয়েছে এই ময়দান।
পল্টনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে মওলানা ভাসানী, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া—সবাই নির্দেশনা দিয়েছেন নেতাকর্মীদের।
ঢাকার বুকে এই ময়দান দেড় দশক আগেও ছিল সভা-সমাবেশের অন্যতম প্রধান জায়গা। পল্টন ময়দান থেকে নেতাদের দেয়া বিভিন্ন নির্দেশনা ছড়িয়ে পড়ত সারা দেশে।
ঐতিহাসিক সেই পল্টন ময়দান এখন কেমন আছে, তা সরেজমিনে অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা।
আশপাশেই এখন অপরিচিত
পল্টনের খুব কাছেই গুলিস্থান এলাকায় ভর দুপুরে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রমিজ মিয়া। পল্টন ময়দানটি কোথায়, জানতে চাইলে তিনি মাথা নেড়ে জানালেন, চেনেন না।
তার মতোই একই উত্তর পাওয়া গেল কয়েকজন ঠেলাগাড়িওয়ালা, পথচারী, দায়িত্বরত পুলিশ ও ফুটপাতের চা-দোকানির কাছ থেকে।
তবে আরেকটু এগিয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পূর্বপাশের ফুটপাতে খাবারের ব্যবসায়ী আফসার মিয়াকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘ওই যে দ্যাহেন স্টেডিয়ামের তিন নম্বর গেট, তার সাথের ছোট মাঠটা।’
ছোট মাঠ কেন, এমন প্রশ্নে আফসার কণ্ঠে আক্ষেপ, ‘অহন কি আর সেই ময়দান আছে! ময়দানের জায়গায় এখন অনেক কিছু উঠছে। এক কোনায় একটু জায়গা ফাঁকা। আমি ৪৫ বছর এহানে আছি। আগে ময়দানে ঘটি গরম চানাচুর আর বাদাম বিক্রি করতাম। তহন অনেক সভা হইত, কিন্তু অনেক দিন কিছুই হয় না। হইবোই বা কই, জায়গা থাকলে তো!’
আফসার একটুও বাড়িয়ে বলেননি। কয়েক দশকের উত্তাল রাজনীতিকে ধারণ করা ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান এখন ধুঁকছে। মাঠ ঘিরে গড়ে উঠেছে একের পর এক ভবন। আর সেগুলোর দাপটে ময়দানের পুরোনো রূপ এখন কল্পনা করাই কঠিন।
আফসার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে যখন সভা-সমাবেশ হইত তহন আগের দিন মাইকিং হইত। একটা অন্যরকম ব্যাপার স্যাপার ছিল। বড় নেতারা আইতো, বক্তৃতা করত। অহন আর সেই ময়দান নাই। ঢাকায় যারা দুই-দশ বছরের মধ্যে ঢুকছে তারা চিনবোই না পল্টন ময়দান কই ছিল।’
নামেমাত্র ময়দান
পল্টন ময়দানের বেশির ভাগ জায়গা জুড়েই এখন বিভিন্ন ভবন। শুধু পূর্ব দিক খালি রেখে বাকি তিন দিক থেকে সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে মাঠটি।
পশ্চিম পাশে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা হয়ে গড়ে উঠেছে সুবিশাল শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স। আর দক্ষিণে যেখানে জনসভার মঞ্চ বানানো হতো, সেখানকার কিছু অংশ নিয়ে দক্ষিণের সীমানা পর্যন্ত গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ অ্যামেচার বক্সিং ফেডারেশন। আগে থেকেই অল্প জায়গায় গড়ে ওঠা অলিম্পিক ফেডারেশনও তাদের পরিধি বাড়িয়েছে সেখানে।
উত্তর-পূর্ব কোণে গড়ে উঠেছে হ্যান্ডবল ফেডারেশন, নার্সারি। আর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তার দক্ষিণ অংশ ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।
ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন নিউজবাংলাকে জানান, ব্রিটিশ আমলে একটি নতুন সেনানিবাস গড়তে ঢাকার তখনকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডস নবাবপুর ও ঠাঁটারীবাজার ছাড়িয়ে শহরের উত্তর-পূর্ব দিকের জায়গায় বেশ কিছু সংস্কার করেন। সেখানে সিপাহিদের ছাউনি, অফিসারদের বাসস্থান ও প্যারেড গ্রাউন্ড করা হয়।
এ এলাকাটিই বর্তমান পল্টন বা পুরানা পল্টন এলাকা। ঢাকার ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, এই পল্টনের অবস্থান ছিল স্রোতস্বিনী পাণ্ডু নদীর তীরে। সেই নদীর অস্তিত্ব পরে বিলীন হয়ে যায়।
মুনতাসীর মামুন জানান, মশা, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন উপদ্রব ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে ব্রিটিশদের তৈরি করা সেনানিবাসটিও পরে পরিত্যক্ত হয়। ১৮৫৯ সালে তখনকার সার্ভেয়ার জেনারেলের ঢাকার মানচিত্রে পল্টনকে একটি বিরান অঞ্চল হিসেবে দেখানো হয়।
সেনানিবাস সরিয়ে নেয়ার পর পল্টন এলাকাটির পরিচর্যার দায়িত্ব পায় মিউনিসিপ্যাল কমিটি। এরপর এক অংশে গড়ে তোলা হয় ‘কোম্পানির বাগান’। আরেক অংশ খেলাধুলা ও বিভিন্ন সময় সিপাহিদের কুচকাওয়াজের জন্য ব্যবহার করা হতো। উনিশ শতকের শেষার্ধে পল্টনে মাঝেমধ্যে জনসভা হতে শুরু করে। পাকিস্তান পর্বে এই ময়দানই ছিল মুক্তিকামী বাঙালির আন্দোলন-সমাবেশের মূল কেন্দ্র।
স্বাধীনতার পরেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের প্রাণকেন্দ্র ছিল পল্টন ময়দান। নিয়মিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ হতো এখানে। তবে জিয়াউর রহমানের সময়ে পল্টনে সভা-সমাবেশের ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়তে শুরু করে।
নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় আবার প্রাণ ফিরে পায় পল্টন ময়দান। তবে এরশাদের পতনের পরের প্রায় দেড় যুগে এই ময়দান ধীরে ধীরে ঔজ্জ্বল্য হারাতে থাকে।
মোহাম্মদ হানিফ ঢাকার মেয়র থাকার সময়ে পল্টন ময়দানকে সিটি করপোরেশনের অধীনে নিয়ে সমাবেশের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের পর এ ময়দানের নিয়ন্ত্রণ পায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পল্টন ময়দান বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এই মাঠে জনসভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেটা ছিল ১৯৭১ সালের ৩ মার্চের ঘটনা।
‘শুধু তাই না। জাতির মুক্তিসনদ ছয় দফা দেয়ার কারণে বঙ্গবন্ধু মুজিবসহ সর্বমোট ৩৫ জনকে ফাঁসি দেয়ার লক্ষ্যে আগরতলা মামলার আসামি করা হয়। ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু কার্যালয়ে ডাকসু ভিপি হিসেবে আমার সভাপতিত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি শপথ দিবসে পল্টন ময়দানে সভাপতির ভাষণ শেষে স্লোগান তুলি- শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করব; শপথ নিলাম শপথ নিলাম, মাগো তোমায় মুক্ত করব।’
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসে পল্টনের মহাসমুদ্রে আমরা ১০ ছাত্রনেতা প্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক সবার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে স্বৈরশাসকের উদ্দেশে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম প্রদান করি। জনরোষের ভয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান আগরতলা মামলা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পল্টন ময়দান শুধু একটা মাঠ না। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছে এর আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। এক সময়ে দেশের সকল আন্দোলন, কর্মসূচি, দাবি-দাওয়া আহ্বানের সাক্ষী এই পল্টন ময়দান। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের বাঘা বাঘা নেতাদের তেজদীপ্ত কণ্ঠে তোলা দাবি-দাওয়া এবং সেগুলো আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাউন্ড এই মাঠ।
‘সিপিবির অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন ও সভা সমাবেশের সাক্ষীও পল্টন ময়দান। এখানে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলায় দলের ৭ নেতাকর্মী নিহত হন। আবার এই ময়দান থেকেই গণমানুষের হয়ে বহু দাবি আদায় করেছে সিপিবি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির কাছে পল্টন ময়দান অনেক অর্থ বহন করে। এই ময়দানে দাড়িয়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কথা বলেছেন। ওখানে দাঁড়িয়ে বহু আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাছাড়া পল্টন ময়দান থেকেই কিন্তু চার দলীয় ঐক্যজোট গঠন হয়।
‘শুধু তাই না, এরশাদের আমলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল পল্টন ময়দানে। আমি নিজে পল্টন ময়দান থেকে একবার বিশাল মিছিল বের করে নিউ মার্কেট পর্যন্ত গিয়েছিলাম। সবশেষ ২০০৫ সালে পল্টন ময়দানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সমাবেশ করে বিএনপি।’
পবিত্র হজ সম্পন্ন করে প্রথম ফিরতি ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন ৩৬৯ জন হাজি। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫৪ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ‘এসভি-৩৮০৩’ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এ সময় বিমানবন্দরের বোর্ডিং ব্রিজে হাজিদের স্বাগত জানান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া। তিনি ফুল দিয়ে প্রথম ফিরতি ফ্লাইটের হাজিদের বরণ করে নেন।
বিমানবন্দরে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, আজ আরও সাতটি ফিরতি ফ্লাইটে আড়াই হাজারের বেশি হাজি দেশে ফিরবেন। ফিরতি হজ ফ্লাইট চলবে আগামী ১১ জুলাই পর্যন্ত।
এ বছর হজ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৫ হাজার ৩০২ জন ধর্মপ্রাণ মুসল্লি সৌদি আরবে গেছেন। এরমধ্যে প্রথম হজ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ২৯ এপ্রিল। এরপর প্রায় এক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে হজযাত্রীদের বহন করে ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হয়। সর্বশেষ হজ ফ্লাইটটি যায় গত ১ জুন। পুরো এই সময়ে মোট ২২০টি হজ ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৫ হাজার ৩০২ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে গেছেন।
জানা গেছে, এবার হজ ফ্লাইট পরিচালনায় অংশ নেয় তিনটি এয়ারলাইনস। সেগুলো হচ্ছে —বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এয়ারলাইনস এবং ফ্লাইনাস। ফিরতি যাত্রার ক্ষেত্রেও এসব এয়ারলাইনস প্রতিদিন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনা করবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান ইভেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এই ইভেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অনেক কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতারা সেটাকে কীভাবে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সাক্ষাৎকারে তার সাফল্য প্রার্থনা করছি।
বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তবে, তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ সেক্টরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ডাক্তার অনুপম বাড়ৈর উপর হামলার অভিযোগে সোহেল হাওলাদার (২৫) নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় হাসপাতালটির জরুরী বিভাগে এ ঘটনা ঘটে।
আটককৃত যুবক সোহেল হাওলাদার উপজেলার ফেরধারা গ্রামের বিএনপি নেতা আব্দুল আজিজ হাওলাদারের ছেলে।
জানা গেছে, ঘটনার সময় ডাক্তার অনুপম বাড়ৈ নিজ কক্ষে রোগী দেখছিলেন। রুমে থাকা রোগীরা বের হয়ে গেলে হঠাৎ সোহেল হাওলাদার রুমে প্রবেশ করে দরজার সিটকানী বন্ধ করে দেয়। এরপর সোহেলের হাতে থাকা একটি এসএস পাইপ দিয়ে ডাক্তার অনুপম বাড়ৈকে বেধরক পিটাতে থাকে। এসময় তার চিৎকারে হাসপাতালের কর্মচারীরা রুমের দরজা ভেঙ্গে ডাক্তার অনুপম বাড়ৈকে উদ্ধার ও হামলাকারী সোহেল হাওলাদারকে আটক করে।
পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার কুমার মৃদুল দাস পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে যুবক সোহেল হাওলাদারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় হামলার শিকার ডাক্তার অনুপম বাড়ৈর পক্ষ থেক কোটালীপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
ডাক্তার কুমার মৃদুল দাস বলেন, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, গত কয়েকদিন আগে সোহেল নাকি এক রোগী নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। তখন তিনি নাকি কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই অভিযোগ এনে আজ সকালে জরুরী বিভাকে কর্মরত ডাক্তার অনুপম বাড়ৈর রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে তাকে বেধরক পিটিয়েছে। এ ঘটনায় ডাক্তার অনুপম বাড়ৈ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি আমি আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ডাক্তার অনুপম বাড়ৈর পক্ষ থেকে কোটালীপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কোটালীপাড়া থানা পুলিশ যুবক সোহেল হাওলাদারকে ইতোমধ্যে আটক করেছে। আমরা আইনগতভাবে এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। মামলার প্রস্তুতি চলছে। তদন্তপূর্বক পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মামলা বাণিজ্য ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাছা থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা জানান, পুলিশ বিভাগের সংস্কারের অংশ হিসেবে পাইলট একটা প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে। সারাদেশে অনলাইনে মামলা ও জিডি গ্রহণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য আর থানায় আসতে হবে না। এ ছাড়া, আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাচের ঘর করে দেওয়া হবে, এতে বাইরে থেকেই দেখা যাবে তার সঙ্গে কি রকম আচরণ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মামলা বাণিজ্য ও দুর্নীতির সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তবে হ্যাঁ, বাংলাদেশের দুর্নীতি সবচেয়ে বড় সমস্যা। এটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে দেশ অনেক এগিয়ে যেত।’
জুলাই আন্দোলনের মামলা নিষ্পত্তি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, জুলাই আগস্টের হত্যা মামলাগুলোর বাদী জনগণ। তাদের মামলার আসামি অনেক বেশি থাকায় এবং কে দোষী আর কে নির্দোষ, তা বের করে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে দেরি হচ্ছে।
এ সময় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. মো. নাজমুল খানসহ সহ জিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
গত ১ সপ্তাহ ধরে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপে পুড়ছে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। দিনের বেলায় প্রচণ্ড রোদ আর গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। প্রচন্ড তাপদাহের ফলে ঘর থেকে বের হতে পারছেনা মানুষ। তবে দিনের অংশে গরম হলেও রাতে পড়ছে ভারি কুয়াশা।
আজ মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ জেলাজুড়ে নেমে আসে ঘন কুয়াশা। সকাল ৮টা পর্যন্ত জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা দেখা যায়।
এতে রীতিমতো অবাক হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সদর উপজেলার ভাবরঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা মোমিনুল ইসলাম সবজি বিক্রি করতে এসেছেন পঞ্চগড় বাজারে। তিনি বলেন, গৃীস্মকালে এমন কুয়াশা তিনি কখনো দেখেননি। এমন আবহাওয়া থাকলে এ সময়ের অর্থকরী ফসলের ক্ষতি হতে পারে। কায়েত পাড়া গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরম। বাদাম শুকানোর জন্যে এই আবহাওয়া ভালো। কিন্ত তীব্র গরমে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। দিন ও রাতে কষ্টের মধ্যে সময় কাটাচ্ছি। কিন্তু আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি চারপাশ কুয়াশায় ঢেকে গেছে, ভাবতেও পারিনি এমন কিছু দেখতে পাবো।
পঞ্চগড় সরকারী কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, নদ নদীতে পানি নেই অপরিকল্পিতভাবে সমতল ভূমি কেটে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে, কেটে ফেলা হচ্ছে
গাছপালা। ফলে প্রকৃতিতে বিপর্যয় নেমে আসছে। এদিকে গরমের পাশাপাশি প্রায় সকাল ৮টা পর্যন্ত কুয়াশা ছিল। এমন আবহাওয়া জীবনে কখনো দেখিনি। অবাক হয়ে গেছি।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় বলেন, মূলত আকাশে ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে গেছে। যার কারণে বাতাসে সেগুলো জমে গিয়ে কুয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। একে ধূলিকণা প্রভাবিত কুয়াশা বলা যায়। এটি সাধারণ কুয়াশা নয়, বরং পরিবেশ দূষণ ও আবহাওয়ার বিশেষ অবস্থার কারণে সৃষ্টি।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে গতকাল সোমবার (৯ জুন) দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলমান দাবদাহের মধ্যে আগামী ১৪ জুন থেকে পঞ্চগড়ে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
মানিকগঞ্জের আরিচা-দৌলতপুর- টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়কের ঘিওরে ফ্লাইওভার ব্রিজে বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মটরসাইকেল আরোহী সিরাজুল ইসলাম শেখ ( ২৫ ) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত সিরাজুল ইসলাম শেখ দৌলতপুর উপজেলার চর গোবিন্দপুর গ্রামের মো. ঠান্ডু শেখের ছেলে।
রবিবার (৮ জুন) দুপুর ১ টার দিকে ঘিওর উপজেলার চরবাইলজুরী পঞ্চরাস্তায় ফ্লাইওভার ব্রিজের উপর এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দৌলতপুর থেকে ছেড়ে আসা স্বাধীনতা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বরংগাইল থেকে আসা একটি রানার মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী সিরাজুল ইসলাম শেখ মারা যান।
খবর পেয়ে ঘিওর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও মোটরসাইকেল জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।
ঘিওর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে ।।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছে।
সোমবার রাতে উপজেলার তারাবো এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, তারাবো সুলতানবাগ এলাকার দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সাবেক রূপগঞ্জ প্রতিনিধি মরহুম আবুল হাসান আসিফের ছেলে শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাতে তারাবো বিশ্বরোড এলাকা থেকে অটোরিক্সা যোগে তারাবো সুলতানবাগ এলাকার বাড়িতে ফিরছিলেন শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। পথিমধ্যে সাইফিং ফ্যাক্টরীর সামনে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসের সাথে অটোরিক্সাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অটোরিক্সাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫) এবং আহত হয় অটোরিক্সার যাত্রী শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। তাদের মধ্যে শাহরিয়ার হাসান আকাশ ও তার বন্ধু তামিম সরকারকে গুরুত্বর আহত অবস্থায়
স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা শাহরিয়ার হাসান আকাশকে মৃত ঘোষনা করেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, দূর্ঘটনার পর হাইয়েস মাইক্রোবাসের চালক মাইক্রোবাসটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় নি।
মন্তব্য