গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অপরাধে সম্প্রতি পদাবনমনের সাজাপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সামিয়া রহমানের বিষয়ে আরেকটি গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই অনিয়মের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ‘অবগত’ নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন (অনাপত্তি) না নিয়ে সামিয়া রহমান অন্তত তিনবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের ওই তিনটি অনুমোদনহীন ভ্রমণ নিয়ে তার বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির বৈঠকে আলোচনা হলেও বিষয়টি সাংবাদিকতা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনেনি। বরং সামিয়া রহমানের নাম উল্লেখ না করে সব শিক্ষকের উদ্দেশে অভিন্ন সতর্কবার্তা দেয়ার সিদ্ধান্তে শেষ হয় ওই বৈঠক।
সামিয়া রহমানের এই অনুমোদনহীন বিদেশ সফরের বিষয়ে অবগত নয় প্রশাসনিক দপ্তর ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সামিয়া রহমান অবশ্য দাবি করছেন, একটি পক্ষ ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ তাকে বিপদে ফেলতে চাইছে।
একই ধরনের অনিয়মে সাম্প্রতিককালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষককে চাকরিচ্যুতি ও পদাবনমনের সাজা ভোগ করতে হয়েছে।
এর চেয়ে কম অপরাধে মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসরীন ওয়াদুদের পদ অবনমন করে সহযোগী অধ্যাপক করা হয়েছে। অধ্যাপক নাসরীনের অপরাধ ছিল, তিনি ভারত যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটির অনুমোদন নিলেও অনুমোদিত ছুটির এক সপ্তাহ আগে সফর করেছিলেন। তার ছুটি অনুমোদিত ছিল ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে। তিনি ২৭ এপ্রিল ভারতের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি নাসরীন ওয়াদুদের গাফলতির সত্যতা পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট তার পদ অবনমন করে।
এ ছাড়া অননুমোদিতভাবে বিদেশে অবস্থান করায় পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাদিয়া তাইসিকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। একই অনিয়মে অব্যাহতি দেয়া হয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সাবরিনা জাহানকে।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সামিয়া রহমান একাধিকবার অনুমোদন বা অনাপত্তি না নিয়ে বিদেশ সফর করলেও প্রশাসনিকভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
নিউজবাংলা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জেনেছে, সেখানে তার (সামিয়া) বিদেশ সফরের কোনো অনাপত্তিপত্র নেই। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরেও তা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. সামাদ নিউজবাংলাকে বলেন, বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে এনওসি (অনাপত্তি) নেয়া বাধ্যতামূলক। কেউ যদি এটি না নেয়, তাহলে তার চাকরি চলে যাবে। এটি ল অব দ্য স্টেট।
গত ২৯ জানুয়ারি একাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তাকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করা হয়। এ ছাড়া সামিয়ার গবেষণা প্রবন্ধের সহলেখক অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানকে শিক্ষা ছুটি শেষে চাকরিতে যোগদানের পর দুই বছর একই পদে থাকতে হবে।
শাস্তির সিদ্ধান্তে বলা হয়, ২০১৬ সালে সামিয়া ও মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অফ কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্টাডি অফ দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধের প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা ছিল ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধের হুবহু নকল।
অনুমোদন না নিয়ে বিদেশ সফর
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সামিয়া রহমান ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর কলকাতা সফরে যান, কিন্তু তার এ সফরের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরে কোনো অনাপত্তিপত্র নেই। সামিয়া রহমান ভারত থেকে ফিরে আসেন ২৭ অক্টোবর। তিনি ওই দুদিনের সফরে বাংলাদেশের ডুব চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শোতে যোগ দেন।
এরপর তিনি ২০১৮ সালের আগস্টে পারিবারিক ভ্রমণে মালদ্বীপ যান। ওই ভ্রমণের বিষয়েও তিনি তার বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে কিছু জানাননি। ৩০ আগস্ট তিনি তার ফেসবুকে লেখেন, পারিবারিক পিকনিক করতে তারা মালদ্বীপ আছেন। মালদ্বীপের অবকাশ যাপন কেন্দ্রে সপরিবারে অবস্থানের ছবিও পোস্ট করেন ফেসবুকে। এই সফরেরও কোনো অনাপত্তিপত্র পাওয়া যায়নি।
এরপর সামিয়া রহমান ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আবার ভারত সফরে যান। ওই সফরেও তার কোনো অনাপত্তিপত্র ছিল না। তিনি ওই সফরে কলকাতার ‘চোখ’ সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করেন। তার ওই সফর ও সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণের সচিত্র প্রতিবেদন দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তর ওই সফরের কোনো অনাপত্তিপত্র এই প্রতিবেদককে দেখাতে পারেনি।
কী পাওয়া গেল প্রশাসনিক দপ্তরে?
সামিয়া রহমানের অনাপত্তিপত্র ছাড়া বিদেশ গমনের সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে নিউজবাংলা। গত ৭ মার্চ নিউজবাংলার পক্ষ থেকে প্রশাসনিক ভবনে সামিয়া রহমানের ছুটি না নিয়ে বিদেশ গমনের তথ্য জানতে চাওয়া হলে বলা হয়, লিখিত আবেদন করে তথ্য পেতে হবে।
পরে রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান বরাবর আবেদন করা হলে মঙ্গলবার জানানো হয়, আবেদনপত্রটি তারা হারিয়ে ফেলেছেন। একই দিন আবার আবেদন করা হলে তা রেজিস্ট্রারের অনুমোদনে উপাচার্য অফিসে পাঠানো হয়।
বুধবার উপাচার্যের কার্যালয়ে বসা ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহজাহান হাওলাদার জানান, তারা তথ্যপ্রাপ্তির আবেদনটি উপাচার্যের কাছে দিয়েছেন এবং উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছেন।
উপাচার্যের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে, জানতে চাওয়া হলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহজাহান হাওলাদার বলেন, যে নির্দিষ্ট তিনটি তারিখের কথা বলা হয়েছে, ওই তারিখগুলোতে সামিয়া রহমানের বিদেশ গমনের অনাপত্তিপত্র ছিল কি না সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে উপাচার্যকে জানাতে বলা হয়েছে।
একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও একজন সহকারী রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব দেয়া হয় এই বিষয়ে। বলা হয়, যতগুলো সংশ্লিষ্ট শাখায় অনাপত্তিপত্রের অনুলিপি থাকার কথা, সেইসব দপ্তরে খোঁজ নেয়া হবে। তবে বুধবার দিনভর খোঁজাখুঁজি করার পরও সংশ্লিষ্ট কোনো শাখাতেই সামিয়া রহমানের ওই তিন বিদেশ সফরের বিষয়ে কোনো অনাপত্তিপত্র পাওয়া যায়নি।
প্রশাসনিক দপ্তর নিউজবাংলাকে তথ্য দেয়ার জন্য যে সময় দেয়, সেই সময়ে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনিক শাখার এক কর্মকর্তা জানান, তারা এখনও এমন কোনো নথি খুঁজে পাননি, তবে তারা আরও খোঁজ করে জানাবেন। আর কোথায় খোঁজ করা হবে তা জানতে চাওয়া হলে বলা হয়, যদি বিভাগে থেকে থাকে, তবে সেটাও জানানো হবে।
বুধবার বিকেলে আবার যোগাযোগ করা হলে প্রশাসনিক ভবন থেকে বলা হয়, বিভাগ থেকেও কিছু পাওয়া যায়নি। এখন তারা এই বিষয়টি উপাচার্যকে অবহিত করবেন।
প্রশাসনিক দপ্তরের অনুসন্ধানের এ ফলাফল বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সকাল ১১টায় উপাচার্যকে জানানোর কথা থাকলেও প্রশাসনিক দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপাচার্য ওই দিন থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত কার্যালয়ে থাকবেন না।
তবে নথি খুঁজে বের করার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মোক্তার হোসেন অনানুষ্ঠানিকভাবে নিউজবাংলাকে জানান, তারা কোনো অনাপত্তিপত্র খুঁজে পাননি। বিষয়টি তারা উপাচার্যকে জানানোর পর নিউজবাংলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত করবেন।
ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহাজাহান হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপাচার্য স্যার এলে আপনাদের এই বিষয়টি জানানো হবে। এর আগে আমরা কিছু বলতে পারব না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে যদি এমন কিছু আমাদের কাছে থেকে থাকত, তবে আমরা আপনাকে আগেই দিয়ে দিতে পারতাম। যেহেতু কিছু নেই, তাই আমাদের খুঁজে দেখার দায়িত্ব ছিল। এখন স্যার এলে আমরা স্যারকে বিষয়টি জানাব।’
কী বলছে সাংবাদিকতা বিভাগ
অনুমোদনহীন বিদেশ সফরের বিষয়ে অবগত থাকলেও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শুধু মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি সাংবাদিকতা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের একজন শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির বৈঠকে সামিয়ার অননুমোদিত বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে তখন শুধু মৌখিকভাবে তাকে সতর্ক করা হয়।
একই অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের পদাবনমনের দৃষ্টান্ত নিয়ে আলোচনা হয় কমিটির বৈঠকে। এর আগে আগে মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসরীন ওয়াদুদের পদাবনমনের বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। বৈঠকের শুরুতে সামিয়া রহমানকে সতর্ক করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও পরে কয়েকজন শিক্ষকের পরামর্শে সামিয়া রহমানের নাম উল্লেখ না করে বিভাগের সবার উদ্দেশে অভিন্ন সতর্কবার্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেন এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার কোনো সদুত্তর বিভাগের কেউ দিতে পারেননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের ওই শিক্ষক জানান, বৈঠকে সামিয়া রহমানের পক্ষের কিছু শিক্ষক তাকে সতর্ক করা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। এরপর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিভাগের চেয়ারম্যান সব শিক্ষককে এ ব্যাপারে সতর্ক করে ই-মেইল করবেন।
নিউজবাংলার কাছে ওই অ্যাকাডেমিক কমিটির সভার উপস্থিতি ও সিদ্ধান্তের একটা কপি রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় দীর্ঘদিন অনুপস্থিতি, এনওসি (অনাপত্তিপত্র) না নিয়ে বিদেশ গমন, ক্লাস না নেয়া ও অন্যান্য বিষয়ে অ্যাকাডেমিক কমিটির সকল সদস্যকে সতর্ক করে চেয়ারপারসন সাধারণ ই-মেইল করবেন।’
অনুমোদন না নিয়ে সামিয়া রহমানের বিদেশ সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বুধবার নিউজবাংলাকে বলেন, তার বিদেশ সফরের বিষয়ে বিভাগ অবগত নয়।
কাবেরী গায়েন বলেন, ‘তার যে তিনটি ভ্রমণের বিষয়ে বলা হচ্ছে, সেটির একটি আমার আসার (চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের) আগেই ঘটেছে, তাই সেটি আমার জানা নেই। বাকি দুটির বিষয়ে হয়তো রেজিস্ট্রার ভবন অবগত থাকতে পারে।’
রেজিস্ট্রার ভবনে এই বিষয়ে কোনো নথি পাওয়া যায়নি উল্লেখ করলে কাবেরী গায়েন বলেন, ‘বিভাগ এই (সফরের) বিষয়ে অবগত নয়।’
২০১৭ সালে যখন তিনি প্রথম অনুমতি না নিয়ে বিদেশ সফর করেন তখন ওই সময় বিভাগের চেয়ারপারসন ছিলেন অধ্যাপক মফিজুর রহমান।
উপাচার্য যা বললেন
বৃহস্পতিবার উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, এই ছুটির বিষয়ে জানতে চাওয়া উচিত নয়। এটা বিশ্ববিদ্যালয় দেখবে।
তিনি নিউজবাংলার সাংবাদিককে বলেন, ‘তুমি যদি জেনে থাকো, তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাও। তুমি এটা দিয়ে কী করবে? এটা একেবারেই ব্যক্তিগত। কে কোথায় কবে গেল বা কী করল, এটা ব্যক্তিগত। তোমার কোনো অবজারভেশন থাকলে তুমি আমাদেরকে জানাও। আমাকে এটি জানালে আমি সেটি দেখব।’
এখানে অনিয়ম হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে উপাচার্য বলেন, ‘যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, সেটি আমরা দেখব। এটা ইউনিভার্সিটি দেখবে। তোমার কোনো অবজারভেশন থাকলে সেটি ইউনিভার্সিটিকে জানাও। কে কোথায় গেল সেটি অফিশিয়ালি তোমাকে কেন দেবে, ভাই? তুমি জানিয়েছ ভালো করেছ। তবে মনে থাকবে না।’
যেভাবে অনাপত্তিপত্র নিতে হয়
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও বিদেশ সফর করতে হলে আগেই বাধ্যতামূলক অনাপত্তিপত্র নিতে হয়।
শিক্ষককে বিদেশ গমনের জন্য রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে ছুটি নিতে হয়, তবে এ আবেদন রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠাতে হয় ওই বিভাগের চেয়ারপারসনের মাধ্যমে। চেয়ারপারসনের সুপারিশে অনাপত্তিপত্রের আবেদন প্রশাসনিক দপ্তরে পাঠানো হয়।
প্রশাসনিক দপ্তরে যাওয়ার পর সেই ছুটি দেয়া যাবে কি না তা বিবেচনা করেন রেজিস্ট্রার। যদি ছুটি দেয়া হয়, তবে সেই অনাপত্তিপত্রের একটি অনুলিপি যায় ইমিগ্রেশনে (বহির্গমন বিভাগ), একটি রেজিস্ট্রার অফিসে থাকে নথি হিসেবে, একটি অনুলিপি যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগে এবং একটি অনুলিপি থাকে বিভাগের চেয়ারপারসনের কাছে। তাছাড়া বিভাগে ওই শিক্ষকের ব্যক্তিগত ফাইলেও অনাপত্তিপত্রের জন্য করা আবেদনের অনুলিপি থাকে। এটি বিদেশ গমনের যেকোনো ছুটির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ও বাধ্যতামূলক।
সামিয়া রহমানের অনুমোদনহীন বিদেশ সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. সামাদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ভাইস-চ্যান্সেলরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়, সেটি উনি (উপাচার্য) সিন্ডিকেটে নিয়ে তদন্ত করবেন। এরপর তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।’
এনওসি নেয়ার নিয়মের বিষয়ে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, নিয়ম হলো, বিভাগের চেয়ারম্যান বা সিএমপির মাধ্যমে রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন আসবে। রেজিস্ট্রার উপাচার্যকে বলবেন। এরপর উপাচার্য এটি অনুমোদন করবেন।
এনওসি না নিয়ে বিদেশ যাওয়ার শাস্তি কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করে। বিষয়টা যেহেতু আমি ডিল করি না, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা আছে কি না আমি জানি না।’
সামিয়া রহমানের অনাপত্তিপত্র না নিয়ে বিদেশ গমনের বিষয়টি অবগত নন রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে হলে আমাকে রেকর্ড চেক করতে হবে ।
এ রকম কোনো রেকর্ড প্রশাসনিক ভবন থেকে দেখাতে পারেনি জানালে তিনি বলেন, ‘অফিশিয়াল কোনো রেকর্ড না থাকলে আমিও অবহিত থাকব না এটিই স্বাভাবিক। রেকর্ড থাকলেই না আমি অবহিত থাকব।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সামিয়া রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা আমার নামে ফেক চিঠি দিয়ে একটা মিথ্যা ষড়যন্ত্র করতে পারে, তারা অনেক কিছুই করতে পারে। যে প্রশাসনের মধ্য থেকে একটা মিথ্যা চিঠি দিয়ে আমাকে ফাঁসানো হয়, তারা অনেক কিছুই করতে পারে। ’
প্রতিবেদককে টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘অন্যদের ব্যাপারে খোঁজ নাও। যাদের চাকরি পর্যন্ত চলে যাচ্ছিল, বিদেশ থেকে ফেরত আসছিল না তাদের খোঁজ নাও। যারা মিথ্যা ষড়যন্ত্র করে ফাঁসাতে পারে, তারা অনেক কিছুই করতে পারে।’
অভিযোগ ওঠা তিনটি বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাপত্তি নিয়েছিলেন কি না- জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো জবাব দেননি। তবে সামিয়া রহমান বলেন, ‘সবই আছে, তারা অনেক কিছুর নথিপত্র গায়েব করে দিয়েছে।’
বিভাগ বা প্রশাসনিক দপ্তর কোনো নথি দেখাতে পারেনি জানালে তিনি বলেন, ‘তারা গায়েব করে দিয়েছে। যে সালের কথা তখন কেন এটা উঠেনি?’
আরও পড়ুন:২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।
এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য