গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অপরাধে সম্প্রতি পদাবনমনের সাজাপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সামিয়া রহমানের বিষয়ে আরেকটি গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই অনিয়মের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ‘অবগত’ নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন (অনাপত্তি) না নিয়ে সামিয়া রহমান অন্তত তিনবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের ওই তিনটি অনুমোদনহীন ভ্রমণ নিয়ে তার বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির বৈঠকে আলোচনা হলেও বিষয়টি সাংবাদিকতা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনেনি। বরং সামিয়া রহমানের নাম উল্লেখ না করে সব শিক্ষকের উদ্দেশে অভিন্ন সতর্কবার্তা দেয়ার সিদ্ধান্তে শেষ হয় ওই বৈঠক।
সামিয়া রহমানের এই অনুমোদনহীন বিদেশ সফরের বিষয়ে অবগত নয় প্রশাসনিক দপ্তর ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সামিয়া রহমান অবশ্য দাবি করছেন, একটি পক্ষ ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ তাকে বিপদে ফেলতে চাইছে।
একই ধরনের অনিয়মে সাম্প্রতিককালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষককে চাকরিচ্যুতি ও পদাবনমনের সাজা ভোগ করতে হয়েছে।
এর চেয়ে কম অপরাধে মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসরীন ওয়াদুদের পদ অবনমন করে সহযোগী অধ্যাপক করা হয়েছে। অধ্যাপক নাসরীনের অপরাধ ছিল, তিনি ভারত যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটির অনুমোদন নিলেও অনুমোদিত ছুটির এক সপ্তাহ আগে সফর করেছিলেন। তার ছুটি অনুমোদিত ছিল ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে। তিনি ২৭ এপ্রিল ভারতের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি নাসরীন ওয়াদুদের গাফলতির সত্যতা পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট তার পদ অবনমন করে।
এ ছাড়া অননুমোদিতভাবে বিদেশে অবস্থান করায় পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাদিয়া তাইসিকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। একই অনিয়মে অব্যাহতি দেয়া হয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সাবরিনা জাহানকে।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সামিয়া রহমান একাধিকবার অনুমোদন বা অনাপত্তি না নিয়ে বিদেশ সফর করলেও প্রশাসনিকভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
নিউজবাংলা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জেনেছে, সেখানে তার (সামিয়া) বিদেশ সফরের কোনো অনাপত্তিপত্র নেই। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরেও তা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. সামাদ নিউজবাংলাকে বলেন, বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে এনওসি (অনাপত্তি) নেয়া বাধ্যতামূলক। কেউ যদি এটি না নেয়, তাহলে তার চাকরি চলে যাবে। এটি ল অব দ্য স্টেট।
গত ২৯ জানুয়ারি একাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তাকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করা হয়। এ ছাড়া সামিয়ার গবেষণা প্রবন্ধের সহলেখক অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানকে শিক্ষা ছুটি শেষে চাকরিতে যোগদানের পর দুই বছর একই পদে থাকতে হবে।
শাস্তির সিদ্ধান্তে বলা হয়, ২০১৬ সালে সামিয়া ও মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অফ কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্টাডি অফ দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধের প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা ছিল ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধের হুবহু নকল।
অনুমোদন না নিয়ে বিদেশ সফর
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সামিয়া রহমান ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর কলকাতা সফরে যান, কিন্তু তার এ সফরের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরে কোনো অনাপত্তিপত্র নেই। সামিয়া রহমান ভারত থেকে ফিরে আসেন ২৭ অক্টোবর। তিনি ওই দুদিনের সফরে বাংলাদেশের ডুব চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শোতে যোগ দেন।
এরপর তিনি ২০১৮ সালের আগস্টে পারিবারিক ভ্রমণে মালদ্বীপ যান। ওই ভ্রমণের বিষয়েও তিনি তার বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে কিছু জানাননি। ৩০ আগস্ট তিনি তার ফেসবুকে লেখেন, পারিবারিক পিকনিক করতে তারা মালদ্বীপ আছেন। মালদ্বীপের অবকাশ যাপন কেন্দ্রে সপরিবারে অবস্থানের ছবিও পোস্ট করেন ফেসবুকে। এই সফরেরও কোনো অনাপত্তিপত্র পাওয়া যায়নি।
এরপর সামিয়া রহমান ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আবার ভারত সফরে যান। ওই সফরেও তার কোনো অনাপত্তিপত্র ছিল না। তিনি ওই সফরে কলকাতার ‘চোখ’ সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করেন। তার ওই সফর ও সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণের সচিত্র প্রতিবেদন দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তর ওই সফরের কোনো অনাপত্তিপত্র এই প্রতিবেদককে দেখাতে পারেনি।
কী পাওয়া গেল প্রশাসনিক দপ্তরে?
সামিয়া রহমানের অনাপত্তিপত্র ছাড়া বিদেশ গমনের সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে নিউজবাংলা। গত ৭ মার্চ নিউজবাংলার পক্ষ থেকে প্রশাসনিক ভবনে সামিয়া রহমানের ছুটি না নিয়ে বিদেশ গমনের তথ্য জানতে চাওয়া হলে বলা হয়, লিখিত আবেদন করে তথ্য পেতে হবে।
পরে রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান বরাবর আবেদন করা হলে মঙ্গলবার জানানো হয়, আবেদনপত্রটি তারা হারিয়ে ফেলেছেন। একই দিন আবার আবেদন করা হলে তা রেজিস্ট্রারের অনুমোদনে উপাচার্য অফিসে পাঠানো হয়।
বুধবার উপাচার্যের কার্যালয়ে বসা ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহজাহান হাওলাদার জানান, তারা তথ্যপ্রাপ্তির আবেদনটি উপাচার্যের কাছে দিয়েছেন এবং উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছেন।
উপাচার্যের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে, জানতে চাওয়া হলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহজাহান হাওলাদার বলেন, যে নির্দিষ্ট তিনটি তারিখের কথা বলা হয়েছে, ওই তারিখগুলোতে সামিয়া রহমানের বিদেশ গমনের অনাপত্তিপত্র ছিল কি না সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে উপাচার্যকে জানাতে বলা হয়েছে।
একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও একজন সহকারী রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব দেয়া হয় এই বিষয়ে। বলা হয়, যতগুলো সংশ্লিষ্ট শাখায় অনাপত্তিপত্রের অনুলিপি থাকার কথা, সেইসব দপ্তরে খোঁজ নেয়া হবে। তবে বুধবার দিনভর খোঁজাখুঁজি করার পরও সংশ্লিষ্ট কোনো শাখাতেই সামিয়া রহমানের ওই তিন বিদেশ সফরের বিষয়ে কোনো অনাপত্তিপত্র পাওয়া যায়নি।
প্রশাসনিক দপ্তর নিউজবাংলাকে তথ্য দেয়ার জন্য যে সময় দেয়, সেই সময়ে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনিক শাখার এক কর্মকর্তা জানান, তারা এখনও এমন কোনো নথি খুঁজে পাননি, তবে তারা আরও খোঁজ করে জানাবেন। আর কোথায় খোঁজ করা হবে তা জানতে চাওয়া হলে বলা হয়, যদি বিভাগে থেকে থাকে, তবে সেটাও জানানো হবে।
বুধবার বিকেলে আবার যোগাযোগ করা হলে প্রশাসনিক ভবন থেকে বলা হয়, বিভাগ থেকেও কিছু পাওয়া যায়নি। এখন তারা এই বিষয়টি উপাচার্যকে অবহিত করবেন।
প্রশাসনিক দপ্তরের অনুসন্ধানের এ ফলাফল বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সকাল ১১টায় উপাচার্যকে জানানোর কথা থাকলেও প্রশাসনিক দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপাচার্য ওই দিন থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত কার্যালয়ে থাকবেন না।
তবে নথি খুঁজে বের করার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মোক্তার হোসেন অনানুষ্ঠানিকভাবে নিউজবাংলাকে জানান, তারা কোনো অনাপত্তিপত্র খুঁজে পাননি। বিষয়টি তারা উপাচার্যকে জানানোর পর নিউজবাংলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত করবেন।
ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহাজাহান হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপাচার্য স্যার এলে আপনাদের এই বিষয়টি জানানো হবে। এর আগে আমরা কিছু বলতে পারব না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে যদি এমন কিছু আমাদের কাছে থেকে থাকত, তবে আমরা আপনাকে আগেই দিয়ে দিতে পারতাম। যেহেতু কিছু নেই, তাই আমাদের খুঁজে দেখার দায়িত্ব ছিল। এখন স্যার এলে আমরা স্যারকে বিষয়টি জানাব।’
কী বলছে সাংবাদিকতা বিভাগ
অনুমোদনহীন বিদেশ সফরের বিষয়ে অবগত থাকলেও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শুধু মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি সাংবাদিকতা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের একজন শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির বৈঠকে সামিয়ার অননুমোদিত বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে তখন শুধু মৌখিকভাবে তাকে সতর্ক করা হয়।
একই অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের পদাবনমনের দৃষ্টান্ত নিয়ে আলোচনা হয় কমিটির বৈঠকে। এর আগে আগে মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসরীন ওয়াদুদের পদাবনমনের বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। বৈঠকের শুরুতে সামিয়া রহমানকে সতর্ক করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও পরে কয়েকজন শিক্ষকের পরামর্শে সামিয়া রহমানের নাম উল্লেখ না করে বিভাগের সবার উদ্দেশে অভিন্ন সতর্কবার্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেন এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার কোনো সদুত্তর বিভাগের কেউ দিতে পারেননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের ওই শিক্ষক জানান, বৈঠকে সামিয়া রহমানের পক্ষের কিছু শিক্ষক তাকে সতর্ক করা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। এরপর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিভাগের চেয়ারম্যান সব শিক্ষককে এ ব্যাপারে সতর্ক করে ই-মেইল করবেন।
নিউজবাংলার কাছে ওই অ্যাকাডেমিক কমিটির সভার উপস্থিতি ও সিদ্ধান্তের একটা কপি রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় দীর্ঘদিন অনুপস্থিতি, এনওসি (অনাপত্তিপত্র) না নিয়ে বিদেশ গমন, ক্লাস না নেয়া ও অন্যান্য বিষয়ে অ্যাকাডেমিক কমিটির সকল সদস্যকে সতর্ক করে চেয়ারপারসন সাধারণ ই-মেইল করবেন।’
অনুমোদন না নিয়ে সামিয়া রহমানের বিদেশ সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বুধবার নিউজবাংলাকে বলেন, তার বিদেশ সফরের বিষয়ে বিভাগ অবগত নয়।
কাবেরী গায়েন বলেন, ‘তার যে তিনটি ভ্রমণের বিষয়ে বলা হচ্ছে, সেটির একটি আমার আসার (চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের) আগেই ঘটেছে, তাই সেটি আমার জানা নেই। বাকি দুটির বিষয়ে হয়তো রেজিস্ট্রার ভবন অবগত থাকতে পারে।’
রেজিস্ট্রার ভবনে এই বিষয়ে কোনো নথি পাওয়া যায়নি উল্লেখ করলে কাবেরী গায়েন বলেন, ‘বিভাগ এই (সফরের) বিষয়ে অবগত নয়।’
২০১৭ সালে যখন তিনি প্রথম অনুমতি না নিয়ে বিদেশ সফর করেন তখন ওই সময় বিভাগের চেয়ারপারসন ছিলেন অধ্যাপক মফিজুর রহমান।
উপাচার্য যা বললেন
বৃহস্পতিবার উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, এই ছুটির বিষয়ে জানতে চাওয়া উচিত নয়। এটা বিশ্ববিদ্যালয় দেখবে।
তিনি নিউজবাংলার সাংবাদিককে বলেন, ‘তুমি যদি জেনে থাকো, তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাও। তুমি এটা দিয়ে কী করবে? এটা একেবারেই ব্যক্তিগত। কে কোথায় কবে গেল বা কী করল, এটা ব্যক্তিগত। তোমার কোনো অবজারভেশন থাকলে তুমি আমাদেরকে জানাও। আমাকে এটি জানালে আমি সেটি দেখব।’
এখানে অনিয়ম হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে উপাচার্য বলেন, ‘যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, সেটি আমরা দেখব। এটা ইউনিভার্সিটি দেখবে। তোমার কোনো অবজারভেশন থাকলে সেটি ইউনিভার্সিটিকে জানাও। কে কোথায় গেল সেটি অফিশিয়ালি তোমাকে কেন দেবে, ভাই? তুমি জানিয়েছ ভালো করেছ। তবে মনে থাকবে না।’
যেভাবে অনাপত্তিপত্র নিতে হয়
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও বিদেশ সফর করতে হলে আগেই বাধ্যতামূলক অনাপত্তিপত্র নিতে হয়।
শিক্ষককে বিদেশ গমনের জন্য রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে ছুটি নিতে হয়, তবে এ আবেদন রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠাতে হয় ওই বিভাগের চেয়ারপারসনের মাধ্যমে। চেয়ারপারসনের সুপারিশে অনাপত্তিপত্রের আবেদন প্রশাসনিক দপ্তরে পাঠানো হয়।
প্রশাসনিক দপ্তরে যাওয়ার পর সেই ছুটি দেয়া যাবে কি না তা বিবেচনা করেন রেজিস্ট্রার। যদি ছুটি দেয়া হয়, তবে সেই অনাপত্তিপত্রের একটি অনুলিপি যায় ইমিগ্রেশনে (বহির্গমন বিভাগ), একটি রেজিস্ট্রার অফিসে থাকে নথি হিসেবে, একটি অনুলিপি যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগে এবং একটি অনুলিপি থাকে বিভাগের চেয়ারপারসনের কাছে। তাছাড়া বিভাগে ওই শিক্ষকের ব্যক্তিগত ফাইলেও অনাপত্তিপত্রের জন্য করা আবেদনের অনুলিপি থাকে। এটি বিদেশ গমনের যেকোনো ছুটির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ও বাধ্যতামূলক।
সামিয়া রহমানের অনুমোদনহীন বিদেশ সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. সামাদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ভাইস-চ্যান্সেলরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়, সেটি উনি (উপাচার্য) সিন্ডিকেটে নিয়ে তদন্ত করবেন। এরপর তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।’
এনওসি নেয়ার নিয়মের বিষয়ে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, নিয়ম হলো, বিভাগের চেয়ারম্যান বা সিএমপির মাধ্যমে রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন আসবে। রেজিস্ট্রার উপাচার্যকে বলবেন। এরপর উপাচার্য এটি অনুমোদন করবেন।
এনওসি না নিয়ে বিদেশ যাওয়ার শাস্তি কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করে। বিষয়টা যেহেতু আমি ডিল করি না, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা আছে কি না আমি জানি না।’
সামিয়া রহমানের অনাপত্তিপত্র না নিয়ে বিদেশ গমনের বিষয়টি অবগত নন রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে হলে আমাকে রেকর্ড চেক করতে হবে ।
এ রকম কোনো রেকর্ড প্রশাসনিক ভবন থেকে দেখাতে পারেনি জানালে তিনি বলেন, ‘অফিশিয়াল কোনো রেকর্ড না থাকলে আমিও অবহিত থাকব না এটিই স্বাভাবিক। রেকর্ড থাকলেই না আমি অবহিত থাকব।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সামিয়া রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা আমার নামে ফেক চিঠি দিয়ে একটা মিথ্যা ষড়যন্ত্র করতে পারে, তারা অনেক কিছুই করতে পারে। যে প্রশাসনের মধ্য থেকে একটা মিথ্যা চিঠি দিয়ে আমাকে ফাঁসানো হয়, তারা অনেক কিছুই করতে পারে। ’
প্রতিবেদককে টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘অন্যদের ব্যাপারে খোঁজ নাও। যাদের চাকরি পর্যন্ত চলে যাচ্ছিল, বিদেশ থেকে ফেরত আসছিল না তাদের খোঁজ নাও। যারা মিথ্যা ষড়যন্ত্র করে ফাঁসাতে পারে, তারা অনেক কিছুই করতে পারে।’
অভিযোগ ওঠা তিনটি বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাপত্তি নিয়েছিলেন কি না- জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো জবাব দেননি। তবে সামিয়া রহমান বলেন, ‘সবই আছে, তারা অনেক কিছুর নথিপত্র গায়েব করে দিয়েছে।’
বিভাগ বা প্রশাসনিক দপ্তর কোনো নথি দেখাতে পারেনি জানালে তিনি বলেন, ‘তারা গায়েব করে দিয়েছে। যে সালের কথা তখন কেন এটা উঠেনি?’
আরও পড়ুন:রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, এসব নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই, ভালোভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি। এজন্য আপনাদের (সাংবাদিক) সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে রাকসু ও চাকসু নির্বাচন-২০২৫ উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ক সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি রাকসু ও চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা দেশের সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, শুধু দেশেই না বিদেশেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত । যারা ভোট দেবে তারাও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
তিনি বলেন, ‘তাদের অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করলাম। যেহেতু আমাদের একটা জাতীয় নির্বাচন আছে ফেব্রুয়ারিতে, এই নির্বাচনগুলো দেখে আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা হচ্ছে। সেটা আমরা জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে প্রয়োগ করতে পারবো সেজন্য আজকে বসেছিলাম।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা আজ ভালো ভালো সাজেশন দিয়ে গেছে। সেই সাজেশন আমরা ভবিষ্যতে কাজে লাগাবো। একইসঙ্গে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় তাদেরও উপকার হয়েছে। যেহেতু দুইটা নির্বাচন হয়েছে। সেখানে নির্বাচনে কী করতে হবে, ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি থাকলে সেগুলো কীভাবে সমাধান করা হবে, এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সভায় তারা কোনো ধরনের শঙ্কার কথা জানায়নি।
আজকের সভায় কি ধরনের সাজেশন এসেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে তারা বলেছে- কতগুলো সেন্টার হওয়া দরকার, ভোট গণনা কীভাবে হবে, কালি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, এসব নিয়ে কথা হয়েছে। দ্রুত ফল ঘোষণার জন্যও কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, আলোচনা হয়েছে। ভোটারদের ছবিযুক্ত আইডি কার্ড ও ভোটার তালিকা যেন স্বচ্ছ থাকে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, রাকসু ও চাকসু নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন থেকে অনেক কিছু শনাক্ত হয়েছে। এসব নির্বাচনে কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে বা কোন বিষয়গুলো কাজ করেনি, তার একটি ধারণা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আমরা এখানে এসেছি। আজকের সভায় ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। ভালো নির্বাচন হবে বলে আশা করছি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪৭ তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি পেশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ জবানবন্দি পেশ শেষ করেন নাহিদ। তিনি গতকাল জবানবন্দি পেশ শুরু করেন।
আজ বিকেলে তাকে জেরা করবেন এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
এ মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে আজ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
একপর্যায়ে এ মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। পরবর্তীকালে এ মামলার ৩৬ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এ মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, পরিবারে পুরুষের সঙ্গে নারী জেলেদেরও কার্ড থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের দেওয়া জেলে কার্ডে পুরুষ জেলেদের নামই আসে, মাত্র ৪ শতাংশ সেখানে নারী। পরিবারে একজন চাকরি করলে তিনিই চাকরিজীবী হোন কিন্তু যারা মাছ ধরে তার পুরো পরিবার এ কাজে যুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ সময় নারীদের বেশি কাজ করতে হয়। তাই পুরুষ জেলেদের সঙ্গে নারীদেরও কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপদেষ্টা আজ বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) আয়োজিত “টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় নীতি সংলাপ”-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এ সেমিনার এসে দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমাদের জেলেদের বিশেষ করে নারী জেলেদের নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। এখন পর্যন্ত নারীদেরকে কৃষকের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। আর নারী জেলেদের কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ নারী জেলেরা তার পরিবার পরিজনের জন্য নদীতে মাছ ধরে। স্বামীর অবর্তমানে সংসার চালায়।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, "এ পেশায় পুরো পরিবারকে নিয়ে কাজ করতে হয়। মান্তা সম্প্রদায়ের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম।" জেলে সম্প্রদায়ের আইনগত সমস্যা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড় তুফানে অনেক জেলে মারা যায়, কেউ হারিয়ে যায়, সেসব পুরুষের হদিস না থাকায় ব্যাংকের টাকাও তুলতে পারে না তাদের স্ত্রীরা। তা ছাড়া নারীকে বিধবা ভাতাও দেওয়া যায় না। এসব আইনি জটিলতা দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, "আমাদের আইনগুলো পুরুষদের কথা চিন্তা করে করা। সেখানে নারীদের স্থান খুব কম। আর আগের মৎস্য আইনও একই ধরনের। তাই মৎস্য আইনের খসড়া ২০২৫ -এ আমরা এসকল সমস্যার সমাধানে দৃষ্টি দিয়েছি। আর নারীদের স্বীকৃতি দিলে হলে সংখ্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। অথচ আমাদের তালিকায় নারীজেলের সংখ্যা খুবই নগন্য, মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু সমাজে অসংখ্য নারী জেলে রয়েছে। এসব ঘাটতি পূরণে আমরা কাজ করছি। "
অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগের তালিকা অনুসন্ধান করে দেখেছি অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে। এখন সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। আমরা চাই যেন প্রকৃত জেলেরা কার্ড পেতে পারে। সেইসঙ্গে যে পরিবারে পুরুষ জেলের কার্ড থাকবে সেখানে নারীদেরও থাকতে হবে।
কাঁকড়া ও ঝিনুক মানুষের খাদ্যের অংশ এটিকে বন অধিদপ্তরের সংজ্ঞা থেকে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তা ছাড়া যারা কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলমহাল ইজারা সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, জলমহালের কাছের মানুষের নামে অন্যরা জলমহাল ইজারা নেয়। এক্ষেত্রে জৈবভিত্তিক ইজারা দিতে হবে, অর্থাৎ এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলেদের দিতে হবে। বাওড়ে ইজারা জেলেদের দেওয়ার কথা নিশ্চিত হচ্ছে, তবে হাওর নিয়েও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা চলছে। যাতে প্রকৃত জেলেরা তা পায়।
নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা সময়ে যতজনকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় সহযোগিতা দেওয়া দরকার তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে চাই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম মজুরি পায়। তা ছাড়া আমাদের জলমহাল ইজারা রাজস্বভিত্তিক দেওয়া হয়। এটি বাতিল করে জাল যার জলা তার নীতিতে নিতে হবে। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড নিশ্চিত করে জেলে কার্ড দেওয়া হবে। বর্তমানে আমাদের নিবন্ধনে ১৭ লাখ জেলের মধ্যে ৪৪ হাজার রয়েছে নারী। এ সংখ্যা আমরা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএনআরএস এর পরিচালক মি. এম. আনিসুল ইসলাম। এমপাওয়ারিং উমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টর্স ইন বাংলাদেশ (ইডাব্লিউসিএসএ) প্রকল্পের পরিচিতি উপস্থাপন করেন অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর শাহজাদী বেগম।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএনআরএস-এর পরিচালক ড. এম. আমিনুল ইসলাম এবং জাগো নারী টিম লিডার রিসার্চ আহমেদ আবিদুর রেজা খান।
সংলাপ শেষে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নারী মৎস্যজীবীদের ক্ষমতায়ন ও টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা জোরদারে বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপিত হয়।
সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গত বছরের চেয়ে এবার পূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, পূজা উপলক্ষে হামলার কোনো হুমকি নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ বুধবার রমনা কালী মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় রমনা কালী মন্দির কমিটির সভাপতি অপর্ণা রায়সহ কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীর বলেন, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানের জন্য ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হবে। সে কারণে একটি নতুন অ্যাপ খোলা হয়েছে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটিকে নজরদারি করার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সে কারণে ধর্মীয় নিয়ম মেনে সবাই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত সরকারের সময় ২ কোটি টাকা পূজা উপলক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হতো। বর্তমান সরকার তা থেকে বাড়িয়ে গত বছর এ লক্ষ্যে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল; এবার সেটি থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সহায়তা করা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম বলেছেন, যেসব শিশু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছে, তাদের লেখা ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে 'নবারুণ' পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে উপদেষ্টা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। বুধবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) ঢাকার তথ্য ভবনে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রকাশিত কিশোর মাসিক পত্রিক 'নবারুণ'-এর লেখকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এই পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের আঁকা ছবি ও লেখা গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করতে হবে। 'নবারুণ' পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের লেখা ও ছবি বেশি পরিমাণে প্রকাশিত হলে তারা অনুপ্রাণিত হবে। এতে তাদের সৃজনশীলতা বিকশিত হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, "যে সরকারই দায়িত্বে আসুক না কেন, শিশু-কিশোরদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা উচিত।" তিনি ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-সহ আর্থসামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখালিখি করার জন্য লেখকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রকাশনার শুরু থেকে (১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ) এ পর্যন্ত 'নবারুণ' পত্রিকার সকল সংখ্যা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে এবং তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এতে পাঠক অনলাইনে পুরাতন সংখ্যা পড়ে সমৃদ্ধ হতে পারবেন।
'নবারুণ' পত্রিকার কলেবর বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'নবারুণ' পত্রিকায় নতুন লেখকদের জন্য আলাদা বিভাগ চালু করা উচিত। পত্রিকার প্রতি সংখ্যায় কমপক্ষে পাঁচ জন নতুন লেখকের লেখা প্রকাশের জন্য তিনি কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। তিনি শিশু-সাহিত্যিকদের নিয়ে দিনব্যাপী একটি কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, যেসব লেখক ৪০-৫০ বছর ধরে লিখছেন, তাঁদের লেখা 'নবারুণ' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে হবে। এতে পত্রিকা আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি 'নবারুণ' পত্রিকার লেখক-সম্মানি বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন।
সভায় 'নবারুণ' পত্রিকার লেখকরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। তাঁরা 'নবারুণ'-কে একটি অসাধারণ ও সাহসী পত্রিকা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁরা পত্রিকাটির মানোন্নয়নে বেশ কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম। সভার শুরুতে 'নবারুণ' পত্রিকা বিষয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপনা করেন পত্রিকার সম্পাদক ইসরাত জাহান। মতবিনিময় সভাটি সঞ্চালন করেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সিনিয়র সম্পাদক শাহিদা সুলতানা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আজ বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) মুনির সাতোরির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিনিধিদলকে জানান, ‘আমরা ইতোমধ্যেই নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে, রমজানের ঠিক আগে।’
তিনি উল্লেখ করেন, জনসাধারণ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে নির্বাচনী উৎসাহ বাড়ছে, কারণ দীর্ঘদিন পর—কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দশকেরও বেশি সময় পর—ছাত্র সংসদ নির্বাচন আবার শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর।’ তিনি যোগ করেন, কিছু শক্তি এখনো নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, তরুণ ভোটাররা এবার রেকর্ড সংখ্যায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, কারণ ১৫ বছরেরও বেশি সময় পর অনেকেই প্রথমবারের মতো ভোট দেবে।
তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সূচনা বয়ে আনবে। এটি আমাদের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে—জাতির জন্য এক নতুন যাত্রা।’
এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ও ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত সমর্থন এবং চলমান রোহিঙ্গা মানবিক সংকট নিয়ে মতবিনিময় করেন।
আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা। একজন আইনপ্রণেতা প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সরকারের গত ১৪ মাসের ‘অসাধারণ’ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
একজন ডাচ আইনপ্রণেতা মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ কতিপয় দেশের মধ্যে অন্যতম, যেখানে ‘ঘটনাগুলো সঠিক পথে এগোচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বাড়তি তহবিল প্রদানের আহ্বান জানান।
বিশেষ করে সম্প্রতি অর্থাভাবের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ শ্রম সংস্কারগুলো তুলে ধরে বলেন, এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ওয়েস্টিন পারনাস হোটেলে আজ থেকে ০৩(তিন) দিনব্যাপী (১৬-১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কো-অপারেশন কনফারেন্স (জিআইসিসি)-২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। সম্মেলনে সেতু সচিব সেতু বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সেতু সচিব প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেন সেতু বিভাগের কয়েকটি প্রকল্পে কোরিয়ান ইডিসিএফ/ইডিপিএফ (EDCF/EDPF) অর্থানয়ের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
জিআইসিসি-২০২৫ সম্মেলনের লক্ষ্য কোরিয়ান নির্মাণ সংস্থাগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করা এবং বিভিন্ন দেশের প্রকল্প বাস্থবায়নকারীদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করা। এটি মূলত একটি বিজনেস-টু-বিজনেস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো বিদেশী সরকার, প্রজেক্ট ডেভেলপার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। সম্মেলনে প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ৩০টি দেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এবং কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ সংস্থাগুলির কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো: বিভিন্ন দেশের আসন্ন অবকাঠামো প্রজেক্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, নতুন প্রজেক্টে অংশগ্রহণের জন্য চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কোরিয়ান উন্নত প্রযুক্তি যেমন স্মার্ট সিটি, হাই-স্পিড রেল, এবং স্মার্ট পোর্ট সিস্টেমের সাথে পরিচিতি করা।
এছাড়াও সম্মেলনের বাকী অংশে বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্যানেল আলোচনা, বিভিন্ন দেশের প্রজেক্ট ব্রিফিং, ব্যক্তিগত বিজনেস মিটিং, কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো তাদের নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে।
মন্তব্য