যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময়ে অন্তত ১৩ জন আহত হন। সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েল যে গণহত্যা চালিয়েছে তাতে কমপক্ষে ৬৮ হাজার ৫২৭ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯৫ জন আহত হয়েছে।
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরজুড়েও তাণ্ডব অব্যাহত রেখেছে। ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স ক্লাব জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় গত রাতে অভিযান চালিয়ে ৪০ জন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে থাকা কমপক্ষে ৯ হাজার ফিলিস্তিনি ‘নিখোঁজ’ বলে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, তাদের পরিবারগুলো সংগ্রাম করছে। যুদ্ধের সময় থেকেই তারা তাদের প্রিয়জনদের মরদেহ উদ্ধারের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি চেয়ে আসছে। মানুষ বেলচা, ন্যূনতম সরঞ্জাম, এমনকি খালি হাতেও প্রিয়জনদের মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে পুনর্গঠন কাজ স্থবির হয়ে আছে, আর গোটা গাজাজুড়ে হাজার হাজার টন অবিস্ফোরিত ইসরায়েলি বোমা এখন মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে আছে।
গাজা সিটির মেয়র ইয়াহিয়া আল-সররাজ সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ভারী যন্ত্রপাতি ঢুকতে না পারায় ধ্বংসস্তূপ সরানো ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক সচল রাখতে ও নতুন কূপ খনন করতে গাজা সিটিতে কমপক্ষে ২৫০টি ভারী যন্ত্রপাতি ও ১ হাজার টন সিমেন্টের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। মেয়র বলেন, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন হাজারও মানুষ এবং মানবিক সহায়তা ও ভারী যন্ত্রপাতি ঢুকতে না দেওয়ায় বেঁচে থাকা মানুষের জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
আল জাজিরার গাজার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানিয়েছেন, প্রায় ৯ হাজার ফিলিস্তিনি এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। এত বড় চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়টি ট্রাক সীমান্ত পেরিয়ে গাজায় ঢুকতে পেরেছে। খুদারি জানান, নতুন যন্ত্রপাতিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে ইসরায়েলি বন্দিদের মরদেহ উদ্ধারে, ফিলিস্তিনিদের নয়।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা জানেন, যতক্ষণ না সব ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ যুদ্ধবিরতিতে কোনো অগ্রগতি হবে না।’ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, রাফাহ শহরে এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ উদ্ধার অভিযানে হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডকে সহায়তা করতে রেড ক্রসের গাড়ি পৌঁছেছে।
গাজার পুনর্গঠনকাজে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিস্ফোরিত না হওয়া বোমাগুলো। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, ইসরায়েল গাজায় অন্তত ২ লাখ টন বোমা ফেলেছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার টন এখনো বিস্ফোরিত হয়নি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা হালো ট্রাস্টের মধ্যপ্রাচ্য পরিচালক নিকোলাস টরবেট বলেন, ‘গাজা নগরীর প্রায় প্রতিটি অংশেই বোমা পড়েছে,’ এবং বহু গোলাবারুদ আঘাতের পরই বিস্ফোরিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তিনি বলেন, এই বোমা অপসারণে সময় লাগছে, ফলে পুনর্গঠনপ্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে বিলম্বিত হচ্ছে। টরবেটের মতে, সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো, ‘ছোট পরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করে বোমাটিকেই উড়িয়ে দেওয়া।’
এদিকে গত রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভাষণে বলেন, গাজায় কোন বিদেশি বাহিনী কাজ করতে পারবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা শুধু ইসরায়েলেরই আছে এবং তিনি দাবি করেন যে, এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রও মেনে নিয়েছে।
চিত্রকর্মটি বেশ পুরোনো। গড়পড়তা চোখে দেখে অনেকে হয়তো বলবেন, এ আর এমন কী, ভয়ংকরদর্শী মানুষের মাথায় চেপে বসেছে ভিনগ্রহী কোনো বস্তু। তবে ঝানু চোখের রায় হবে ভিন্ন। খুঁটিয়ে দেখলে তিনি ঠিকই বুঝবেন, ছবিটি যেনতেন কিছু নয়। কারণ, এর আঁকিয়ের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তিনি স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী সালভাদর দালি।
সালভাদর দালির ওই চিত্রকর্ম গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যে নিলামে বিক্রি হয়েছে। নামী শিল্পী, তাই দামটাও আকাশছোঁয়া। পরিচয় প্রকাশ না করা কেউ একজন সেটি কিনে নিয়েছেন ৪৫ হাজার ৭০০ পাউন্ডে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে ৭৪ লাখ টাকার বেশি। অবাক করা বিষয় হলো- চিত্রকর্মটি মাত্র ১৫০ পাউন্ডে (২৪ হাজার টাকা) কিনেছিলেন জন রাসেল (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যক্তি।
জন রাসেল একজন শিল্পকর্ম বিক্রেতা। তার সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছিল দুই বছর আগে। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে একটি বাড়ির পুরোনো জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছিল। সেখানেই ওই চিত্রকর্ম এক চোখ দেখার সুযোগ পান রাসেল। চিত্রকর্মের এক কোণে ছিল দালির স্বাক্ষর। আর পেছনে ছিল যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত নিলামকারী প্রতিষ্ঠান সদবি’স-এর স্টিকার।
‘এটি হয়তো নকল’- ঠিক এ কথাই প্রথম মাথায় এসেছিল রাসেলের। তবে একটু ঝুঁকি নিতে দোষ কী? যদি ভাগ্য খুলে যায়। চিত্রকর্মটির দরাদরি শুরু করেন তিনি। তার সঙ্গে আরও একজন দরদাম করছিলেন। তবে রাসেল হুট করে ১৫০ পাউন্ড বলার পর ওই ব্যক্তি আর আগে বাড়েননি। রাসেলের কথায়, ‘জীবনে এমন সুযোগ একবারই আসে।’
চিত্রকর্মটি যে আসল, তা পরে যাচাই করে বোঝা যায়। এটি আসলে একজন ‘বৃদ্ধ সুলতানের’ ছবি। তিনি আরব্য রজনীর একটি চরিত্র। ১৯৬৬ সালে আরবের এই রূপকথা নিয়ে ৫০০ ছবির এক সিরিজ আঁকতে চেয়েছিলেন সালভাদর দালি। সুলতানের চিত্রকর্মটি তারই একটি অংশ। কোনো কারণে চিত্রকর্মটি সিরিজ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল।
চিত্রকর্মটি কেনার পর রাসেলের অবশ্য আরও কিছু খরচ হয়েছিল। সেটি আসল কি না, যাচাই করতে পকেট থেকে বের হয়েছিল ৪ হাজার পাউন্ড। তবে কেমব্রিজের নিলামকারী প্রতিষ্ঠান চেফিন্জ-এ যখন চূড়ান্ত দামটা হাঁকা হলো তখন রাসেলের মনে হয়েছিল, তিনি যেন ‘চাঁদকে ছাড়িয়ে’ গেছেন। তার একটাই কথা- ‘এটি ছিল অসাধারণ।’
চিত্রকর্মে ‘সুররিয়ালিজম’ বা ‘পরাবাস্তববাদ’ ধারার জন্য সালভাদর দালির খ্যাতি রয়েছে। তার বিখ্যাত শিল্পকর্মগুলোর কয়েকটি হলো- ‘দ্য পারসিসট্যান্স অব মেমোরি’, ‘দ্য এলিফেন্টস’, ‘দ্য বার্নিং জিরাফ’ ও ‘মেটামরফোসিস অব নার্সিসাস’। ১৯৮৯ সালে ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যু হয় এই শিল্পীর।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
চলতি মাসের ১০ তারিখে গাজায় শুরু হয়েছে যুদ্ধবিরতি। কিন্তু এর মধ্যেও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৯৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩২৪ জন। শনিবার প্রকাশিত বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গাজার হাসপাতালে গত দুদিনে ইসরাইলি হামলায় ১৯ জন নিহত এবং সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া শনিবার ভোর থেকে উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ছয় ফিলিস্তিনি আহত হন।
মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি গণহত্যায় এখন পর্যন্ত মোট ৬৮ হাজার ৫১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৭০ হাজার ৩৮২ জন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল ইসরাইল ও হামাস। এর প্রথম পর্যায়ে ইসরাইলি জিম্মি মুক্তি এবং ফিলিস্তিনি বন্দিবিনিময় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের মতে, ইসরাইল যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের পর থেকে ৮০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এ সময় তারা বিভিন্ন এলাকা ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। দক্ষিণ গাজার রাফা শহরের উত্তর-পশ্চিমে ইসরাইলি গুলিতে এক ফিলিস্তিনি শিশু গুরুতর আহত হয়। খান ইউনুসের পূর্বে অবস্থিত বানি সুহাইলায় ইসরাইলি বাহিনী একটি গাড়িতে গুলি চালালে দুই বেসামরিক ব্যক্তি আহত হন। শুক্রবার খান ইউনুসের দক্ষিণ-পূর্বে বাড়িতে বিস্ফোরণ এবং মধ্য গাজার পূর্ব দেইর আল-বালাহে কামান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এসব হামলায় দেইর আল-বালাহে দুই ফিলিস্তিনি ভাই নিহত হন। ইসরাইলের দাবি, তারা তথাকথিত ‘ইয়ালো লাইন’ অতিক্রম করেছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা ২০ জন জীবিত ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এছাড়া ৯ জনের লাশ ফেরত দিয়েছে। এছাড়া বাকি লাশও ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা।
এদিকে, গাজায় মানবিক সহায়তা চালিয়ে যেতে ইসরাইলকে অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিএ। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ইসরাইলের বর্তমান পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে।
দক্ষিণ চীন সাগরে আধ ঘন্টার ব্যবধানে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ও একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন সকল ক্রু সদস্য। রোববার এ দুর্ঘটনা ঘটে। উভয় ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে বিস্তর অনুসন্ধান শুরু করেছে দেশটির নৌবাহিনী। খবর সিএনএনের।
রোববার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া বার্তায় মার্কিন নৌবাহিনী জানায়, মেরিটাইম স্ট্রাইক স্কোয়াড্রন (এইচএসএম) ‘ব্যাটল ক্যাটস’র জন্য নিযুক্ত একটি এমএইচ-৬০আর সিহক হেলিকপ্টার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস নিমিৎজ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার সময় বিধ্বস্ত হয়।
ঘটনার পর, বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে স্ট্রাইক ফাইটার স্কোয়াড্রন (ভিএফএ) ২২-এর ‘ফাইটিং রেডককস’র জন্য নিযুক্ত একটি এফ/এ-১৮এফ সুপার হর্নেট ফাইটারও নিমিৎজ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার সময় বিধ্বস্ত হয়। নৌবাহিনী জানিয়েছে, উভয় আকাশযানের ক্রু সদস্যরা সফলভাবে বেরিয়ে আসেন এবং তাদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে।
এই বসন্তে লোহিত সাগরে নৌবাহিনীর দুটি সুপার হর্নেট জেট হারিয়ে যাওয়ার পর একই সিরিজের যুদ্ধবিমান হারানোর এটি তৃতীয় কোনো দুর্ঘটনা। নৌবাহিনীর মতে, একটি পৃথক এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমানের দাম ৬ কোটি ডলারেরও বেশি।
চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বেশ কয়েকটি দেশ দ্বারা বেষ্টিত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরের বিভিন্ন অংশের মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অমান্য করে বেইজিং প্রায়ই সমস্ত কৌশলগত জলপথের মালিকানা দাবি করে।
ট্রাম্পের উপস্থিতিতে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুদেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। মালয়েশিয়ায় সই হওয়া এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প নিজেও।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও এ সময় উপস্থিতিত ছিলেন। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
এশিয়া সফরের প্রথম ধাপেই এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাতের পর রোববার ট্রাম্পের সামনে থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে রোববারই মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর মাধ্যমে এশিয়া সফরের সূচনা করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটিতে আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর তিনি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও সফর করবেন।
আর এই সফরের সবচেয়ে আলোচিত অংশ হতে চলেছে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক। দুদেশের বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটাতে ওই বৈঠকে নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে ওয়াশিংটন ছাড়ার আগে বিমানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি আশাবাদী যে চীন নতুন চুক্তিতে রাজি হবে যেন আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ঠেকানো যায়।
এবারের সফরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গেও সাক্ষাতের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। ২০১৯ সালের পর এটিই হতে পারে দুই নেতার প্রথম সাক্ষাৎ।
এদিকে মালয়েশিয়া সফর শেষে সোমবার ট্রাম্প পৌঁছাবেন জাপানে। কাল মঙ্গলবার তিনি জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ট্রাম্প তাকে ‘চমৎকার একজন নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ অনুসারী, আর এটি যুক্তরাষ্ট্র-জাপান সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক।
তাকাইচি গত শনিবার ফোনে ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, তার সরকারের প্রধান কূটনৈতিক অগ্রাধিকার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট আরও শক্তিশালী করা।
এরপর ট্রাম্প আগামী বুধবার পৌঁছাবেন দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দরনগরী বুসানে। সেখানে তিনি এপেক সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এরপর আগামী বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও সি চিন পিংয়ের মধ্যে বৈঠক হবে। আর এটি হবে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর সি চিন পিংয়ের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। বৈঠকে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসনের সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত। ছবি: সংগৃহীত
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সীমান্তপথগুলো বন্ধ থাকার পনেরো দিন পূর্ণ হলো। এই দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতায় উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা সরাসরি ও পরোক্ষভাবে কোটি কোটি ডলারের ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন আফগান ব্যবসায়ীরা।
করাচি বন্দরের মাধ্যমে আফগান পণ্যের ট্রানজিট স্থগিত হওয়ায়, আফগানিস্তানের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন বিকল্প বাণিজ্যপথ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
আফগান শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী নূরুদ্দিন আজিজি বলেন, এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো আফগান কৃষক, ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সীমান্তপথ বন্ধ, আফগান পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে, একই সঙ্গে পাকিস্তানের মাধ্যমে ট্রানজিটও স্থগিত। আমরা এখন এমন বিকল্প বাণিজ্যপথ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, যাতে আফগান পণ্য আঞ্চলিক বাজারে প্রবেশ করতে পারে। গত চার বছর ধরে আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি, এখন তা আরও গতিশীল করেছি।’
অন্যদিকে, আফগানিস্তান–পাকিস্তান যৌথ বাণিজ্য চেম্বার জানিয়েছে, সীমান্ত বন্ধ থাকার কারণে দুদেশের বেসরকারি খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে, রপ্তানি ও ট্রানজিট কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
চেম্বারের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হলে রাজনীতি থেকে বাণিজ্যকে আলাদা রাখা জরুরি।
যৌথ চেম্বারের প্রধান নির্বাহী নাকিবুল্লাহ সাফি বলেন, ‘উভয় দেশের বেসরকারি খাত ও বাণিজ্যচেম্বার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং সমস্যার সমাধান খুঁজছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিষয়টি এখন রাজনৈতিক হয়ে পড়েছে। যদি এটি কেবল বাণিজ্যসংক্রান্ত হতো, তবে সীমান্ত পুনরায় খোলার সম্ভাবনা এখনই দেখা যেত।’
কিছু আফগান ব্যবসায়ী জানান, সীমান্ত বন্ধের কারণে তাদের অনেক রপ্তানি পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে।
তবে তারা মনে করেন, বিকল্প বাজার ও বন্দর খোঁজা পাকিস্তানের ওপর আফগানিস্তানের বাণিজ্যিক নির্ভরতা কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
ব্যবসায়ী ওমিদ হায়দারি বলেন, ‘তোরখাম, গুলাম খান ও স্পিন বলদাক দিয়ে রপ্তানি প্রায়ই বাঁধাগ্রস্ত হয়, এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। সরকার যদি নীমরোজ ও ইসলাম কালা বন্দর ব্যবহার করে তুরস্ক ও ভারতের মতো বাজারে রপ্তানি বাড়াতে উৎসাহ দেয়, তবে তা বড় পদক্ষেপ হবে।’
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য ট্রানজিট সাময়িকভাবে স্থগিত আছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ থাকবে।
পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাহির আন্দরাবি বলেন, ‘পাকিস্তানি নাগরিকদের জীবন যে কোনো বাণিজ্যপণ্যের চেয়ে মূল্যবান।’
ভ্লাদিমির পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, রাশিয়া সফলভাবে তার পারমাণবিক শক্তিচালিত আন্তঃমহাদেশীয় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘বুরেভেস্তনিক’-এর পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।
রোববার সকালে এক বিবৃতিতে পুতিন জানান, রাশিয়ার এই অনন্য ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয়েছে গত মঙ্গলবার। খবর স্কাই নিউজের।
দেশটির সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ পুতিনকে জানান, ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার (৮,৭০০ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করেছে এবং হাওয়ায় উড়েছে ১৫ ঘণ্টা ধরে।
পুতিন বলেন, এটি সত্যিই একটি অনন্য অস্ত্র- এমন প্রযুক্তি বিশ্বের অন্য কোনো দেশের নেই। তিনি রাশিয়ার যৌথ বাহিনীর একটি কমান্ড সেন্টার পরিদর্শনের সময় এ কথা বলেন।
‘বুরেভেস্তনিক’ রাশিয়ার উন্নত অস্ত্র কর্মসূচির অংশ, যেটিকে ন্যাটো এসএসসি-এক্স-৯ স্কাইফল নামে চিহ্নিত করেছে। ২০১৯ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথম আলোচনায় আসে, যখন একটি ব্যর্থ পরীক্ষার পর আর্কটিক অঞ্চলে উদ্ধার অভিযানে প্রাণহানি ঘটে।
রাশিয়ার এই সফল পরীক্ষার মাধ্যমে দেশটির দূরপাল্লার আঘাত ক্ষমতা এবং পারমাণবিক প্রযুক্তির আধুনিকীকরণে আরও এক ধাপ অগ্রগতি হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার তার এশিয়া সফরের প্রথম ধাপে মালয়েশিয়া পৌঁছেছেন। এই সফরে তিনি আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য আলোচনায় অংশ নেবেন।
ট্রাম্প সফরের শেষ দিনে দক্ষিণ কোরিয়ায় সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ওয়াশিংটন ছাড়ার আগে তিনি ইঙ্গিত দেন, ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ হতে পারে।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর এটি ট্রাম্পের প্রথম এশিয়া সফর। তিনি বলেন, সি চিন পিংয়ের সঙ্গে একটি ব্যাপক বাণিজ্য চুক্তি করার আশা করছি।
তার মতে, চীন নতুন ১০০ শতাংশ শুল্ক এড়াতে একটি সমঝোতায় আসবে।
মালয়েশিয়ায় ট্রাম্প দেশটির সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করবেন এবং থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির সাক্ষী থাকবেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে বলেন, আমরা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই একটি শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করব।
এ সফরে ট্রাম্পের জাপান সফরের সম্ভাবনাও রয়েছে। তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাকাইচি জানান, জাপান-মার্কিন জোটকে শক্তিশালী করা আমার প্রশাসনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
এই সফরের মূল আকর্ষণ হবে দক্ষিণ কোরিয়া, যেখানে ট্রাম্প ও সি চিন পিংয়ের বৈঠককে কেন্দ্র করে বিশ্ব বাজার নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। আলোচনায় শুল্ক সংকট ও বিরল-পৃথিবী খনিজ নিয়ন্ত্রণে চীনের ভূমিকা মুখ্য বিষয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে ট্রাম্প ও কিম জং উনের মধ্যেও সাক্ষাতের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
কিম জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন যদি পিয়ংইয়ংকে পরমাণু অস্ত্র ত্যাগে চাপ না দেয়, তবে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে রাজি থাকবেন।
মন্তব্য