গাজায় কার্যকর হওয়া ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি গত মঙ্গলবার প্রথম পরীক্ষার মুখে পড়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস জিম্মিদের মরদেহ ফেরাতে বিলম্ব করায় গাজায় ত্রাণপ্রবাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে এবং মিসরের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংও পরিকল্পনামতো খোলা হবে না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার রাতে হামাস চার জিম্মির মরদেহ আন্তর্জাতিক রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় করা যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এ নিয়ে মোট আটজনের মরদেহ ফেরত দেওয়া হয়েছে। এখনো ২০ জনের মরদেহের সন্ধান মেলেনি। হামাস জানিয়েছে, সব কবরস্থানের অবস্থান শনাক্ত না হওয়ায় তারা বাঁধার মুখে পড়েছে।
রেডক্রস গত সোমবার সতর্ক করেছিল, গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা একটি ‘বিরাট চ্যালেঞ্জ’, যা সম্পন্ন করতে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
কিন্তু ইসরায়েল এ বিলম্বের জন্য হামাসকে ইচ্ছাকৃতভাবে দোষারোপ করে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায়। তারা ঘোষণা দেয়, গাজায় প্রবেশের অনুমতি পাওয়া ত্রাণবাহী ট্রাকের সংখ্যা দিনে ৬০০ থেকে কমিয়ে ৩০০ করা হবে। পাশাপাশি মিসর সীমান্তের রাফাহ ক্রসিংও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন।
এই চুক্তির মাধ্যমেই গত সোমবার হামাস শেষ ২০ জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়, ইসরায়েল প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে ছেড়ে দেয় এবং আংশিকভাবে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে। তবে যুদ্ধবিরতি স্থায়ী করতে এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথে এগোতে গেলে বড় ধরনের ঝুঁকি রয়ে গেছে।
ট্রাম্প হামাসকে অবশিষ্ট মরদেহগুলো দ্রুত ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি গাজা পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয়। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘একটা বড় বোঝা এখন হালকা হয়েছে, কিন্তু কাজ এখনো শেষ হয়নি। মৃতদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফেরত দেওয়া হয়নি। এখনই দ্বিতীয় ধাপ শুরু হচ্ছে।’
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার শুরুতে কিছু টানাপোড়েন হবে, এটা আগেই অনুমান করা হয়েছিল। হামাস ও ইসরায়েল দুপক্ষই ট্রাম্পের অস্পষ্ট ২০ দফা পরিকল্পনার বাস্তবায়নের সময় নিজেদের পক্ষে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
তবু রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়া বিলম্বিত করা এবং ত্রাণ সীমিত করার ঘোষণা ছিল অপ্রত্যাশিত। গত সপ্তাহে চুক্তিতে বলা হয়েছিল, গতকাল বুধবার থেকে রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়া হবে এবং মার্চের স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতির সময়কার মতো পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েল গাজায় প্রবেশ ও বহির্গমনপথ বন্ধ করে দেয়। ফলে খাদ্য ও ওষুধের সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং গাজার বহু এলাকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
চুক্তিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি গ্রহণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ‘সব জিম্মিকে (জীবিত বা মৃত) ফেরত দিতে হবে।’ তবে যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে হামাসকে অবশিষ্ট মৃত জিম্মিদের বিষয়ে তথ্য দিতে হবে এবং ‘যত দ্রুত সম্ভব এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
এদিকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর গত সোমবারের উদযাপনের পর মঙ্গলবার সারাদিন গাজাজুড়ে বিচ্ছিন্ন সহিংসতায় উত্তেজনা আবারও বৃদ্ধি পায়।
গত শনিবার ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটি ও আরও কিছু এলাকা থেকে সরে গেলেও তারা নতুন অবস্থানে থাকা অবস্থায় দুটি আলাদা ঘটনায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালায়। এতে ছয়জন নিহত হয় বলে খবর পাওয়া গেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী তথাকথিত ‘হলুদ রেখা’র পেছনে সরে গেছে; তবে এখনো গাজার অর্ধেকের বেশি এলাকা তাদের দখলে রয়েছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল বলেন, গাজা সিটির শুজাইয়া এলাকায় নিজ বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি দেখতে গিয়ে ড্রোন হামলায় পাঁচজন নিহত হন, এবং খান ইউনিসের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আরও একজন ড্রোন হামলায় মারা যান।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, প্রথম ঘটনায় তারা বারবার সতর্ক করার পরও ‘সন্দেহভাজন’ ব্যক্তিরা তাদের অবস্থানের দিকে এগিয়ে আসছিলেন, যাদের ‘হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে হামাসের একটি পুরোনো অস্ত্রভান্ডারের কাছে।
গাজা উপত্যকার ৮০ শতাংশেরও বেশি এবং গাজা সিটির ৯২ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। গাজা পুনর্গঠনে কী কী দরকার তার চাহিদা মূল্যায়ন করছে সংস্থাটি। জেনেভায় ইউএনডিপির এক মুখপাত্র গাজার ধ্বংসস্তূপকে ‘বিধ্বংসী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সংস্থাটি অনুমান করছে, সেখানে কমপক্ষে ৫৫ মিলিয়ন বা সাড়ে পাঁচ কোটি টন ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
ইউএনডিপি বলছে, তারা কিছু অপসারণ শুরু করেছে, কিন্তু অবিস্ফোরিত বিস্ফোরক তাদের কার্যক্রমকে ব্যহত করছে। ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার কার্যক্রমের সময় অনেক মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো শনাক্ত ও সমাহিত করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তারা।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিশ্বব্যাংক পরিচালিত পুনর্গঠন ব্যয়ের একটি অনুমান অনুসারে, গাজাকে আবার বাসযোগ্য করে তুলতে কমপক্ষে ৭০ বিলিয়ন ডলার (৫২.৭ বিলিয়ন পাউন্ড) প্রয়োজন হবে।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, কারণ কেউ ভাবেনি যে এটা সম্ভব।
ইসরায়েল ও মিসর সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। গাজায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরছে, এটা বলা তড়িঘড়ি হয়ে যাবে কি না এই প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, অনেক মানুষ এক-রাষ্ট্রীয় সমাধান পছন্দ করেন। কিছু মানুষ দ্বী-রাষ্ট্রীয় সমাধান পছন্দ করেন। আমাদের দেখতে হবে। আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করিনি।
মিশরে ২০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক সম্মেলনে গাজা সংক্রান্ত এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গাজা উপত্যকায় পরবর্তীতে কী হবে তা নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প।
তিনি প্রেসিডেন্ট না থাকলে শান্তি থাকবে কি না জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, আমি বলতে পারছি না কী ঘটবে। তবে যেই হোক না কেন, তার পক্ষে আমি লড়াই করব।
গাজায় পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত
যুদ্ধবিরতির পরেও গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজা শহরের শুজাইয়া এলাকায় ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় দখলদার বাহিনী। খবর আল জাজিরার।
কাতার, মিসর এবং তুরস্কের নেতাদের সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যেই পুরোনো রুপে ফিরে গেছে ইসরায়েলি সেনারা।
এদিকে ইসরায়েলি বন্দিদশা থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, তাদের মারধর এবং অপমান করা হয়েছে। ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া এক ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের ওফার কারাগারকে ‘কসাইখানা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে। অপরদিকে হামাস গাজায় আটক ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং আরও চারজনের মৃতদেহ হস্তান্তর করেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৭ হাজার ৮৬৯ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ১০৫ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে মোট ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে বন্দি করা হয়েছিল।
গাজায় ৮৩৫টি মসজিদ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও ধর্মীয় ঐতিহ্য কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। উপত্যকার মোট ১ হাজার ২৪৪টি মসজিদের মধ্যে ৮৩৫টিই সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ১৮০টি মসজিদ। ধ্বংস হওয়া এসব স্থাপত্যের বেশিরভাগই মামলুক ও উসমানীয় আমলে নির্মিত হয়েছিল।
গত শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় গাজার যুদ্ধবিরতি। পুরো উপত্যকা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি শতাব্দী প্রাচীন মসজিদ ও ঐতিহাসিক স্থাপনাও রক্ষা পায়নি। ইসরায়েলের বর্বর ও নৃশংস আগ্রাসনে গত দুই বছরে প্রাণহানি ছাড়িয়েছে সাড়ে ৬৭ হাজার।
গাজার সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন মসজিদ ছিল প্রায় ১৪০০ বছর পুরনো মহান ওমরী মসজিদ। ‘ছোট আল-আকসা’ নামে পরিচিত এই স্থাপনাটি একসময় ৫ হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল এবং এটি ছিল ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ। সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় এটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা, সাইয়্যিদ হাশিম মসজিদ, ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর ইসরায়েলি বিমান হামলায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এছাড়া মামলুক আমলে নির্মিত কাতিব আল-ওয়ালায়া মসজিদও হামলা থেকে রেহাই পায়নি; ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর এটিও ধ্বংস হয়ে যায়।
চতুর্দশ শতকে নির্মিত ইবনে উসমান মসজিদ, আলী ইবনে মারওয়ান মসজিদ এবং ১৩৬১ সালে নির্মিত জাফার আদ-দিমরী মসজিদ–এগুলোর সবই এখন কেবল ধ্বংসস্তূপ।
দক্ষিণ গাজার ১৯২৮ সালে নির্মিত গ্রেট খান ইউনিস মসজিদ, যা পরে ৩ হাজার বর্গমিটারের বেশি জায়গায় সম্প্রসারিত হয়েছিল, সেটিও সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
এই মসজিদগুলো কেবল উপাসনার স্থান ছিল না, বরং গাজার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিচয়ের প্রতীক ছিল। ইসরায়েলি হামলায় এখন সেগুলোর জায়গায় কেবলই ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে।
বিশ্বের উষ্ণমণ্ডলীয় প্রবালপ্রাচীরগুলো এমন এক সীমা অতিক্রম করেছে, যেখান থেকে আর ফেরার পথ নেই। কারণ, সমুদ্রের তাপমাত্রা এখন এমন মাত্রায় পৌঁছেছে, যেখানে অধিকাংশ প্রবালের টিকে থাকা অসম্ভব। গতকাল সোমবার প্রকাশিত এক বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে এমন সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পৃথিবী সম্ভবত একটি ‘বিপজ্জনক’ সীমারেখায় পৌঁছেছে। এতে বিশ্বের প্রকৃতিতে বড় ধরনের, এমনকি স্থায়ী পরিবর্তনও দেখা যেতে পারে।
প্রতিবেদনের মূল লেখক এবং এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু ও বিশ্বব্যবস্থাবিষয়ক বিজ্ঞানী টিম লেন্টন এএফপিকে বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হলো, এখন আমরা অনেকটাই নিশ্চিত যে আমরা উষ্ণ পানির বা উষ্ণমণ্ডলীয় প্রবালপ্রাচীরের একটি ‘বিপজ্জনক সীমা’ অতিক্রম করেছি।’
বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ১৬০ জন বিজ্ঞানী প্রতিবেদনটি তৈরি করছেন। বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে একমত যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার শিল্পপূর্ব যুগের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হলেই অধিকাংশ প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস হয়ে যাবে। আর কয়েক বছরের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা সে সীমারেখাকে ছুঁয়ে ফেলতে পারে।
উষ্ণ সমুদ্রে চাপের কারণে প্রবালগুলো তাদের স্বাভাবিক রং ও খাদ্যের উৎস হারাচ্ছে। যদি সমুদ্র ঠাণ্ডা না হয়, তাহলে রং হারিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া প্রবাল আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে না। তা ছাড়া খাবার না পেয়ে এগুলো ধীরে ধীরে মরে যায়।
২০২৩ সালের পর থেকে সমুদ্র বিজ্ঞানীরা এমন মাত্রায় প্রবালের মৃত্যু দেখেছেন, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। প্রশান্ত, ভারত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবালপ্রাচীরগুলো ভুতুড়ে সাদা রং ধারণ করেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রবালপ্রাচীর পুরোপুরি নষ্ট না হয়ে তা কম বৈচিত্র্যপূর্ণ বাস্তুব্যবস্থায় পরিণত হবে। অ্যালজি, স্পঞ্জের মতো যেসব প্রাণী উষ্ণ সমুদ্রে টিকে থাকতে সক্ষম, তাদের আধিপত্য দেখা যাবে। নতুন জলজ পরিবেশে এসব প্রজাতি আধিপত্য করবে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মৃত প্রবালের কঙ্কালগুলো ভেঙে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।
এ ধরনের পরিবর্তন প্রবালপ্রাচীরের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষ এবং প্রায় ১০ লাখ প্রজাতির প্রাণীর জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠবে।
সূত্র: এএফপি
সৌদি আরবের পৌরসভা ও আবাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মসজিদ ও স্কুল থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনো তামাক পণ্যের দোকান স্থাপন করা যাবে না। এই পদক্ষেপটি জনস্বাস্থ্য রক্ষা, বিধিমালা মেনে চলা এবং বাণিজ্যিক পরিবেশকে নিরাপদ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, দোকানগুলো সিগারেট, ই-সিগারেট, শীশা বা অন্যান্য তামাকজাত পণ্য ও সরঞ্জাম বিক্রি করে, তাদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। লাইসেন্স পেতে হলে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে তা হলো, বৈধ বাণিজ্যিক রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে, সিভিল ডিফেন্সের অনুমোদন থাকতে হবে, পৌর লাইসেন্সিং আইনের সকল ধারা ও বিধি মানতে হবে, দোকানটি শহরের একটি বাণিজ্যিক ভবনে অবস্থিত হতে হবে, ন্যূনতম দোকানের আকার ৩৬ বর্গমিটার হতে হবে।
চালানোর নিয়ম ও সাইনবোর্ডের বিধিতে রয়েছে, দোকানের বাইরের সাইনবোর্ডে যেকোনও ধরনের লোগো কিংবা প্রচারণামূলক ছবির ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। তবে কেবল দোকানের নাম প্রদর্শন করা যাবে। দোকানের বাইরে ফুটপাত ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, পাবলিক ফুটপাত ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন বাধ্যতামূলক, ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ব্যবস্থা থাকতে হবে, দোকানকে স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
স্থাপত্য ও কারিগরি নির্দেশনা অনুযায়ী যা যা থাকতে হবে তা হলো, নাগরিক প্রবেশের জন্য র্যাম্প, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং সৌদি বিল্ডিং কোড অনুযায়ী বায়ু চলাচল, আলো, এসি ইত্যাদি।
তামাকজাত পণ্য বিক্রির ওপরও কড়াকড়ি নিয়ম দেওয়া হয়েছে। পণ্যের উৎসের প্রমাণপত্র রাখতে হবে, কোনো ধরণের মিশ্রণ বা পুনঃপ্যাকেজিং নিষিদ্ধ, ১৮ বছরের নিচে কাউকে বিক্রি করা যাবে না (বয়স যাচাই বাধ্যতামূলক), পণ্যের মান হতে হবে এসএফডিএ অনুমোদিত এবং বিনামূল্যে নমুনা, একক সিগারেট বিক্রি বা প্রোমোশন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
প্রদর্শনী ও মোড়ক সংক্রান্ত নিয়মের মধ্যে রয়েছে, তামাকজাত পণ্য সিল করা প্যাকেটে থাকতে হবে, ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে বিক্রি নিষিদ্ধ, পণ্যের মূল্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
সতর্কীকরণ লেবেল ও কিউআর কোড থাকতে হবে, যা লাইসেন্স ও নিয়ম সংক্রান্ত তথ্য দেবে।
নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নজরদারি চালাবে ও প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। নতুন এই বিধিনিষেধ কার্যকর হলে তামাক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ আসবে, জনসুরক্ষা বাড়বে এবং শহরের পরিবেশ আরও সুশৃঙ্খল হবে বলে আশা করছে সরকার।
সূত্র: গালফ নিউজ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল সোমবার নয়াদিল্লিতে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন — দুই দেশের মধ্যে তীব্র কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব কাটিয়ে রাষ্ট্রদূত বিনিময় পুনরায় শুরু হওয়ার পর এটি সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, ‘গত কয়েক মাসে ভারত-কানাডা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি দেখাচ্ছে।’
মোদির সঙ্গে আনন্দের সাক্ষাতের পর জয়শঙ্কর আরো বলেন, ‘আমরা কানাডাকে দেখি একটি সহযোগী অর্থনীতি হিসেবে, আরেকটি উন্মুক্ত সমাজ হিসেবে — যা ঘনিষ্ঠ, টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করে।’
দুই দেশের সম্পর্ক ২০২৩ সালে গভীর সংকটে পড়ে, যখন কানাডা অভিযোগ তোলে যে ভারত ভ্যাঙ্কুভারে একজন কানাডীয় শিখ নেতার হত্যায় জড়িত — ভারত অভিযোগটি অস্বীকার করে।
এই কূটনৈতিক উত্তেজনার ফলে দূতাবাস, কনস্যুলার ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪ সালের মার্চে কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ক্ষমতা গ্রহণের পর সম্পর্কে উন্নতি আসে।
কার্নি ও মোদি জুন মাসে কানাডায় অনুষ্ঠিত জি৭ সম্মেলনের ফাঁকে সাক্ষাৎ করেন এবং নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগে সম্মত হন। উভয় কূটনীতিক ইতোমধ্যেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
আনন্দ বলেন, মোদির সঙ্গে তার বৈঠক ছিল ‘কার্নির সঙ্গে মোদির আলোচনার গতি ধরে রাখার প্রচেষ্টা’।
তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আইন প্রয়োগ ও নিরাপত্তা সংলাপ বজায় রেখে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিস্তৃত করে কানাডা ও ভারত তাদের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনায়, ভারত ও কানাডা উভয়ই এখন একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে আরো আগ্রহী হয়েছে।
নয়াদিল্লিতে সফর শেষে আনন্দ বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে এবং মুম্বাইয়ের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে।
কানাডায় ভারতের বাইরে সবচেয়ে বড় শিখ সম্প্রদায় বাস করে। এই সম্প্রদায়ের মধ্যেই রয়েছে ‘খালিস্তান’ আন্দোলনের কর্মীরা — যারা ভারতের শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবি জানায়।
অটোয়া ২০২৩ সালে অভিযোগ তোলে, ভারত ভ্যাঙ্কুভারে খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হারদীপ সিং নিজজারের হত্যায় জড়িত এবং অন্যান্য শিখ কর্মীদেরও লক্ষ্যবস্তু করেছে।
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হওয়া খালিস্তান আন্দোলনকে ঘিরে একজন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা ও একটি যাত্রীবাহী বিমানে বোমা হামলার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে।
এই ইস্যুটি ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের সম্পর্কেরও দীর্ঘদিনের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।
চলতি ২০২৫ সালের জন্য অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনজন অর্থনীতিবিদ—জোয়েল মোকির, ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট। উদ্ভাবন নির্ভর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাখ্যা করার জন্য তারা এ পুরস্কার পেয়েছেন।
এই তিন অর্থনীতিবিদের মধ্যে অর্ধেক পুরস্কার পেয়েছেন জোয়েল মোকির। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির পূর্বশর্তগুলো শনাক্ত করার জন্য তিনি পুরস্কার পেয়েছেন। ‘সৃজনশীল বিনাশ’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির তত্ত্ব দেওয়ার জন্য বাকি অর্ধেক পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছেন ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট। রয়টার্সের তথ্যানুসারে, এই পুরস্কারের মূল্যমান ১২ লাখ ডলার।
বিবৃতিতে নোবেল কমিটি বলেছে, নোবেলজয়ীরা আমাদের শিখিয়েছেন—সব সময় প্রবৃদ্ধি হবে, এটা কখনোই নিশ্চিত ধরে নেওয়া যায় না। মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রবৃদ্ধি নয়, বরং স্থবিরতাই ছিল স্বাভাবিক অবস্থা। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সম্ভাব্য হুমকিগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবিলা করতে হবে।
ঐতিহাসিক উপাত্ত ও দলিল ব্যবহার করে মোকির দেখিয়েছেন, কীভাবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও উদ্ভাবন একসময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নিয়মিত বিষয়ে পরিণত করেছে। অন্যদিকে আগিয়োঁ ও হাউইট সেই প্রবৃদ্ধির অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন। ১৯৯২ সালের এক প্রবন্ধে তারা গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেন, যখন নতুন ও উন্নত কোনো পণ্য বাজারে আসে, তখন পুরোনো পণ্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে টিকে থাকতে পারে না। এই প্রক্রিয়াই অর্থনীতিতে ‘সৃজনশীল বিনাশ’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ পুরোনো ব্যবস্থার ভেতর থেকেই নতুন উদ্ভাবন হয়।
পুরস্কারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ধারাবাহিকভাবে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে, গত দুই শতকের ইতিহাসে তা প্রথম দেখা গেছে। এর ধারাবাহিকতায় কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে। সেই মানুষেরাই আজকের সমৃদ্ধির ভিত্তি গড়ে তুলেছে।
চলতি বছর অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী জোয়েল মোকির, ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট দেখিয়েছেন, উদ্ভাবনই ভবিষ্যৎ অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি। তাদের গবেষণা মনে করিয়ে দেয়—অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্বয়ংক্রিয় বা নিশ্চিত প্রক্রিয়া নয়।
অর্থনীতির এই পুরস্কার মূল নোবেল পুরস্কারের অন্তর্ভুক্ত নয়। ১৯৬৯ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে এই পুরস্কার চালু করে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫৭ জন এই পুরস্কার পেয়েছেন। আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অর্থনীতিতে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুরস্কার—এটাই এই পুরস্কারের কেতাবি নাম।
সবচেয়ে বেশি বয়সে এই পুরস্কার পেয়েছেন লিওনিড হারউইচ। ২০০৭ সালে এই পুরস্কার পাওয়ার সময় তার বয়স ছিল ৯০ বছর। তিনি আরও দুজনের সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। সবচেয়ে কম বয়সে (৪৬) এই পুরস্কার পেয়েছেন এস্থার দুফলো। ২০১৯ সালে স্বামী অভিজিৎ ব্যানার্জির সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার পান তিনি।
এবারের বিজয়ীদের পরিচয়
জোয়েল মকিয়র যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। তিনি পুরস্কারের অর্ধেক ভাগ পেয়েছেন। অন্য অর্ধেক ভাগ ভাগাভাগি করেছেন ফিলিপ আজিওন ও পিটার হাওয়িট।
আজিওন বর্তমানে প্যারিসের কোলেজ দ্য ফ্রঁস ও ইনসিয়াড এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিকাল সায়েন্সে অধ্যাপনা করছেন। হাওয়িট যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক।
নোবেল কমিটির সদস্য জন হ্যাসলার বলেন, ‘জোয়েল মকিয়র ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ওপর নির্ভরশীল টেকসই প্রবৃদ্ধির উপাদানগুলো চিহ্নিত করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফিলিপ আজিওন ও পিটার হাওয়িট ‘ক্রিয়েটিভ ডেস্ট্রাকশন’-এর একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন — এটি এমন এক অন্তহীন প্রক্রিয়া যেখানে নতুন ও উন্নত পণ্য পুরনোকে প্রতিস্থাপন করে।’
গাজা শান্তি চুক্তি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বক্তৃতা দেওয়ার সময় ইসরায়েলি পার্লামেন্টে হট্টগোল সৃষ্টি হয়েছে। একজন আইনপ্রণেতা ট্রাম্পের দিকে চিৎকার করে ‘ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিন’ স্লোগান দেন। শুধু তাই নয়, তিনি ট্রাম্পকে ‘সন্ত্রাসী’ বলেও বর্ণনা করেন।
গতকাল সোমবার বিরল এই ঘটনার পর দুই এমপিকে পার্লামেন্ট থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়।
জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রাম্প তার ভাষণের সময় যখন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের প্রশংসা করছিলেন, তখন হাদাশ পার্টির প্রধান আয়মান ওদেহ এবং দলের একজন সদস্য ‘ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিন’ লেখা প্ল্যাকার্ড ধরে রাখেন।
পার্লামেন্ট থেকে বের করে দেওয়ার জবাবে ওদেহ বলেছেন, তিনি সবচেয়ে মৌলিক দাবি উত্থাপন করেছেন। এটি এমন একটি দাবি, যার সঙ্গে সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একমত: একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া।
নেসেটের স্পিকার আমির ওহানা এই হট্টগোলের জন্য ট্রাম্পের কাছে তাৎক্ষণিক ক্ষমা চেয়েছেন। ওহানা বলেন, ‘এর জন্য দুঃখিত, মি. প্রেসিডেন্ট।’
ইসরায়েলি এমপি এবং আরেক সদস্যকে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা যখন বের করে দিচ্ছিলেন, তখন ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, কর্মকর্তারা ‘খুবই দক্ষ’। এটি শুনে অন্যান্য সংসদ সদস্যরা হেসে ওঠেন।
এদিকে, পার্লামেন্ট থেকে বের করে দেওয়া আগে নিজের বক্তৃতায় ওদেহ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে বলেন, ‘নেসেটে ভণ্ডামির মাত্রা অসহনীয়।’
তিনি বলেন, নজিরবিহীন তোষামোদের মাধ্যমে নেতানিয়াহুকে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত করলেই তাকে বা তার সরকারকে গাজায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। এমনকি লাখ লাখ ফিলিস্তিনি এবং হাজার হাজার ইসরায়েলি নিহতদের রক্তপাতের দায় থেকেও মুক্তি দেওয়া যাবে না।
জেন-জি নেতৃত্বাধীন রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। গতকাল সোমবার বিভিন্ন সূত্রের বরাতে রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা সিতেনি র্যান্ড্রিয়ানাসোলোনিয়িকো রয়টার্সকে জানান, সেনাবাহিনীর কিছু ইউনিট বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর রোববার রাজোয়েলিনা মাদাগাস্কার ত্যাগ করেন।
সিতেনি বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্সির কর্মীদের ফোন করেছিলাম। তারা নিশ্চিত করেছে, তিনি দেশ ছেড়ে গেছেন।’
এর আগে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছিল, রাজোয়েলিনা গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তবে তার বর্তমান অবস্থান অজানা।
একটি সামরিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, রাজোয়েলিনা রোববার একটি ফরাসি সামরিক বিমানে দেশত্যাগ করেছেন।
ফরাসি রেডিও আরএফআই জানিয়েছে, রাজোয়েলিনা প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে একটি চুক্তি করেছেন।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, মাদাগাস্কারের সেন্ট মেরি বিমানবন্দরে একটি ফরাসি সেনাবাহিনীর বিমান অবতরণ করেছিল। এর পাঁচ মিনিট পরে একটি হেলিকপ্টার এসে রাজোয়েলিনাকে সেটিতে স্থানান্তর করে।
সাবেক ফরাসি উপনিবেশ দেশটিতে ২৫ সেপ্টেম্বর পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। কিন্তু দ্রুতই তা দুর্নীতি, খারাপ শাসন এবং মৌলিক পরিষেবার অভাবসহ বিস্তৃত অভিযোগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে পরিণত হয়।
মন্তব্য