আফগান বাহিনীর সঙ্গে রাতভর গোলাগুলির পর রোববার আফগানিস্তানের সঙ্গে সব প্রধান সীমান্ত পয়েন্ট বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। এতে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। রোববার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার গভীর রাতে আফগান বাহিনী সীমান্তের ওপার থেকে পাকিস্তানের পোস্টগুলোতে গুলি চালায়।
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত সপ্তাহে পাকিস্তানের পরিচালিত বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই তারা এই আক্রমণ চালায়। পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা পাল্টা গুলি ও আর্টিলারি হামলার মাধ্যমে জবাব দিয়েছে।
আফগান সরকার দাবি করেছে, তাদের হামলায় ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে, যদিও কীভাবে তারা এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। একই সঙ্গে আফগানিস্তান জানিয়েছে, তাদের ২০ জন সেনা নিহত বা আহত হয়েছে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, পাল্টা হামলায় আফগানিস্তানের ২ শতাধিক তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে। রয়টার্স ঘটনাগুলোর কোনো দাবিই স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
দুই দেশই একে অপরের সীমান্ত পোস্ট ধ্বংসের দাবি করেছে। পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা একাধিক ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে—আফগান পোস্টে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে বলে তাদের দাবি।
রোববার সকালে সংঘর্ষ বেশিরভাগ এলাকায় থেমে গেলেও পাকিস্তানের খুররম অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে গুলি বিনিময় চলছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের সামরিক অভিযান শনিবার মধ্যরাতে শেষ হয়।
কাবুল জানায়, কাতার ও সৌদি আরবের অনুরোধে তারা হামলা বন্ধ করেছে। দুই উপসাগরীয় দেশ সংঘর্ষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আফগান তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আফগানিস্তানের কোনো অঞ্চলে এখন কোনো ধরনের হুমকি নেই। ইসলামিক আমিরাত ও আফগান জনগণ নিজেদের ভূমি রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং অবিচল থাকবে।’
তবে তিনি স্বীকার করেন, কিছু এলাকায় এখনও লড়াই চলছে।
ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, আফগান তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) আশ্রয় দিচ্ছে। কাবুল বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সীমান্ত বন্ধ
পাকিস্তানের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, রোববার আফগানিস্তানের সঙ্গে দুটি প্রধান সীমান্ত ক্রসিং—তোরখাম ও চামান—বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি খারলাচি, আঙ্গুর আড্ডা ও গুলাম খানের মতো অন্তত তিনটি ছোট সীমান্তপথও বন্ধ করা হয়েছে।
কাবুল থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২,৬০০ কিলোমিটার (১,৬০০ মাইল)।
পাকিস্তানের পরিচালিত বিমান হামলার বিষয়ে ইসলামাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানালেও দেশটির এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার কাবুলে টিটিপি নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদের অবস্থান লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছিল। তিনি নিহত হয়েছেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
টিটিপি গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইসলামাবাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে কঠোর ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
তালেবান মুখপাত্র মুজাহিদ রোববার পুনরায় বলেন, ‘টিটিপির কোনো যোদ্ধা আফগান ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে না।’
দুই দেশের সীমান্তে সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, যেখানে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয় দেশই অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস ও অর্থনৈতিক চাপে ভুগছে।
‘কড়া’ জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর
দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। এই সংঘাতের জন্য আফগানিস্তানকেই দায়ী করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। প্রতিবেশী দেশটির তালেবান সরকারের ‘উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড’–এর ‘কড়া’ জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
দুই দেশের সীমান্তে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির কারণে শাহবাজ শরিফ রোববার এক বিবৃতিতে এ হুঁশিয়ারি দেন।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারিজমি শনিবার রাতে বলেছেন, আফগান ভূখণ্ডে বারবার পাকিস্তানের সীমানা লঙ্ঘন ও বিমান হামলার জবাবে তালেবান ‘সফল প্রতিশোধমূলক অভিযান’ চালিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি বলেন, অভিযানটি মধ্যরাতে শেষ হয়েছে।
এর জবাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে কোনো আপস হবে না। কড়া ও কার্যকরভাবে প্রতিটি উসকানির জবাব দেওয়া হবে।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতে আফগানিস্তানের তালেবান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলা হয়, তারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পাকিস্তানের বিমান হামলার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। তবে ইসলামাবাদ ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি; বরং তারা অভিযোগ করেছে, আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে; যারা ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে।
এরপর আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির ভারত সফরের মধ্যে সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান আফগান তালেবান যোদ্ধারা।
’সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পাকিস্তান সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে’
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, আফগানিস্তানের সীমান্তে পাকিস্তান অতিরিক্ত সতর্কতা নিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে এবং প্রয়োজন হলে নিজের অঞ্চল, সার্বভৌমত্ব ও জনসাধারণ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেব।
দার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইসলামাবাদ ওই হামলাকে গুরুতর উসকানিমূলক হিসেবে দেখছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল আফগান এলাকা থেকে পাকিস্তানে সক্রিয় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-র মতো দুষ্কৃতীকারীদের থামানো।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান জানায় তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আফগান নাগরিকদের লক্ষ্য করে গৃহীত হয়নি এবং তারা আশা করছে তালেবান সরকার উক্ত সন্ত্রাসী উপাদান ও তাদের অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে বাস্তব পদক্ষেপ নেবে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি বলেছেন, পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে আপস করবে না এবং তিনি কাবুলকে অনুরোধ করেছেন—আফগান ভূখণ্ড যেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহার না হয়।
পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্র বলছে, সীমান্তে সংঘাতে ইস্যুতে বর্তমানে পরিস্থিতি আংশিক শান্ত হলেও কুর্রম অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন গোলাগুলি চলছে।
মাদাগাস্কারের সেনাবাহিনীর একটি অংশ কর্তৃপক্ষের আদেশ উপেক্ষা করে রাজধানী আন্তানানারিভোতে জমায়েত হওয়া হাজার হাজার সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে। মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ক্রমাগত জোরাল হয়ে ওঠার মধ্যে এমন ঘটনা ঘটল।
বিদ্যুৎ ও পানির সংকটকে কেন্দ্র করে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে মাদাগাস্কারে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। গত শনিবার তরুণদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকারীরা প্রথমবারের মতো মাদাগাস্কারের রাজধানী শহরের মে থার্টিন চত্বরে প্রবেশ করেন। চলমান এ বিক্ষোভে এ পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে বড় জমায়েতগুলোর একটি এটি। সম্প্রতি কেনিয়া ও নেপালে হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভের অনুপ্রেরণায় ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটিতে এমন বিক্ষোভ হচ্ছে। কেনিয়া ও নেপালের ওই বিক্ষোভ জেন–জি বিক্ষোভ হিসেবে পরিচিত।
মাদাগাস্কারের পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে স্টান গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পর কিছুসংখ্যক সেনাসদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বিক্ষোভকারীরা তখন সেনাসদস্যদের স্বাগত জানান এবং উল্লাস প্রকাশ করেন।
এর আগে আন্তানানারিভো শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি সেনা ব্যারাকে সেনাসদস্যদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। ওই সময় মাদাগাস্কারের সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিট সিএপিএসএটির সেনাসদস্যরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভকারীদের করা দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশের আবেদন জানান, যা বিরল ঘটনা। কারণ, ২০০৯ সালে রাজোয়েলিনার উত্থানের ক্ষেত্রে এই সিএপিএসএটি ইউনিটের মুখ্য ভূমিকা ছিল।
সোয়ানিয়েরানা অঞ্চলের একটি ঘাঁটির সেনাসদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন। সেখানে তারা বলেন, ‘সেনা, আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ—চলুন, এক হয়ে কাজ করি। বেতনের বিনিময়ে আমাদের বন্ধু, ভাইবোনদের গুলি করার আদেশ আমরা মেনে নেব না।’
বিমানবন্দরে নিযুক্ত সেনাদের উদ্দেশে তারা বলেছেন, কোনো উড়োজাহাজকে উড়তে না দিতে। অন্য সেনাঘাঁটির সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেছেন, ‘আপনাদের বন্ধুদের ওপর গুলি করার আদেশ মানবেন না।’
ভিডিওতে আরও বলা হয়, ‘ফটকগুলো বন্ধ করে দিন এবং আমাদের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করুন। আপনাদের ঊর্ধ্বতনদের আদেশ মানবেন না। যারা আপনাদের সহযোদ্ধাদের ওপর গুলি করার আদেশ দিচ্ছে তাদের দিকে আপনারা অস্ত্র তাক করুন। কারণ, যদি আমরা মারা যাই, তারা আমাদের পরিবারের দেখভাল করবে না।’
ঠিক কতজন সেনাসদস্য বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নতুন নিয়োগ পাওয়া সশস্ত্র বাহিনীবিষয়ক মন্ত্রী দেরামাসিনজাকা মানানৎসোয়া রাকোতোআরিভেলো সেনাসদস্যদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে রাকোতোআরিভেলো বলেন, ‘যেসব ভাই আমাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন, আমরা তাদের আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
রাকোতোআরিভেলো আরও বলেন, মালাগাসির সেনাবাহিনী মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা বজায় রেখেছে এবং জাতির শেষ প্রতিরক্ষা রেখা হিসেবে কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করলে কয়েকজন আহত হন।
দুই বছর ধরে গাজায় নৃশংস গণহত্যা চালানোর পরেও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সদ্য ঘোষিত শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। সম্প্রতি ইসরায়েলের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভেনিজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী এ সমর্থন জানান।
ওই সাক্ষাৎকারে মাচাদো বলেন, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, একদিন ভেনিজুয়েলা ও ইসরায়েলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। এটি হবে আমাদের পক্ষ থেকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থনের অংশ। আমি বিশ্বাস করি এবং ঘোষণা করতে পারি যে আমাদের সরকার ইসরায়েলে ভেনিজুয়েলার দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করবে।
দেশে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ মাচাদোকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। নোবেল কমিটি তাদের বিবৃতিতে জানায়, যখন স্বৈরশাসকরা ক্ষমতা দখল করে, তখন স্বাধীনতার সাহসী রক্ষকদের স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে তৎকালীন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের আমলে গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে ভেনিজুয়েলা ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং দেশ থেকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মাচাদো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে আলোচনায় আসেন। ৫৮ বছর বয়সি এই শিল্পপ্রকৌশলী বর্তমানে গোপনে বসবাস করছেন। ২০২৪ সালে আদালতের রায়ে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন, দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে অনুপ্রবেশ।
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, ভারতের ভোটাধিকার কেবল নাগরিকদেরই থাকা উচিত।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, অমিত শাহ বলেন, ‘মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ, অন্যদিকে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এই পরিবর্তন প্রজনন হারের কারণে নয়, বরং অনুপ্রবেশের ফলেই হয়েছে।’
ধর্মভিত্তিক দেশভাগের প্রসঙ্গ টেনে অমিত শাহ বলেন, ‘ভারতের দুই প্রান্তে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই অনুপ্রবেশ চলছে, আর তার ফলেই এই জনসংখ্যাগত পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারী আর শরণার্থীর মধ্যে পার্থক্য আছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে, কারণ অনেকেই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রধানত অনুপ্রবেশের কারণে, প্রজনন নয়।’
তিনি অভিযোগ করেন, ভোটার তালিকায় অনুপ্রবেশকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা সংবিধানের মূল চেতনাকে বিকৃত করছে। ‘ভোটাধিকার কেবল নাগরিকদেরই থাকা উচিত,’ জোর দিয়ে বলেন শাহ।
কিছু রাজনৈতিক দল অনুপ্রবেশকারীদের ‘ভোট ব্যাংক’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। প্রশ্ন তোলেন, ‘গুজরাট ও রাজস্থানেও তো সীমান্ত আছে, সেখানে কেন অনুপ্রবেশ হয় না?’
অমিত শাহ বলেন, ‘অনুপ্রবেশ কোনো রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, এটি জাতীয় সমস্যা। বিরোধীরা বলে, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) কেন্দ্রের অধীনে, তাই দায়িত্বও কেন্দ্রের। কিন্তু সীমান্তের অনেক জায়গায় ভৌগোলিক কারণে বেড়া দেওয়া সম্ভব নয়। কেবল কেন্দ্র একা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারবে না, রাজ্য সরকারগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। কিছু দল অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করে, কারণ তারা সেখানে ভোট ব্যাংক খোঁজে।’
তিনি আরও জানান, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, আসামে এক দশকে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ‘অনুপ্রবেশ ছাড়া এটি অসম্ভব,’ বলেন শাহ। ‘পশ্চিমবঙ্গের কিছু জেলায় বৃদ্ধির হার ৪০ শতাংশ, আর সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর কিছু জায়গায় তা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এসবই অতীতের অনুপ্রবেশের স্পষ্ট প্রমাণ।’
অমিত শাহের দাবি, ঝাড়খণ্ডে আদিবাসী জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, এবং তার মূল কারণও বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ।
ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন। রোববার অস্ট্রেলিয়ার অন্তত ২৭টি স্থানে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশের অংশ নেওয়া অনেকে গাজা উপত্যকায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসানে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি টিকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
সমাবেশের আয়োজনকারী সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপ বলেছে, অস্ট্রেলিয়ার সর্বাধিক জনবহুল শহর সিডনিতে বিক্ষোভে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। তবে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো হিসেব জানায়নি পুলিশ।
এদিকে রোববার সকালের দিকে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের দৃশ্য দেখা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রথম ধাপে ইসরায়েলি সৈন্যরা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা থেকে চলে গেছেন। দুই বছর ধরে চলা গাজা উপত্যকায় এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে ৬৭ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং গাজার বেশিরভাগ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এক বিবৃতিতে সিডনি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজক আমাল নাসের বলেছেন, যুদ্ধবিরতি টিকলেও ইসরায়েল এখনো গাজা ও পশ্চিম তীরে সামরিক দখল চালিয়ে যাচ্ছে। এই দখলদারিত্ব এবং ইসরায়েলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য এক ধরনের বর্ণবৈষম্যমূলক শাসনব্যবস্থা তৈরি করেছে।
অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (এবিসি) ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে ও ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ পরিহিত অবস্থায় শহরের প্রধান প্রধান সড়কে পদযাত্রা করেন। পুলিশ বলেছে, দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শেষ হয়েছে। বিক্ষোভ থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অ্যাবি জর্ডান বলেন, ইসরায়েলের তথাকথিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থায়ী হবে না। তিনি বলেন, ইসরায়েল অতীতে কখনো কোনো যুদ্ধবিরতি রক্ষা করেনি। ৭৮ বছর ধরে তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
তবে অস্ট্রেলিয়ার ২০০টিরও বেশি ইহুদি সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠী এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়ান জিউরি ওই বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রধান নির্বাহী পিটার ওয়ার্থহেইম বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা চান এই চুক্তি ব্যর্থ হোক। যার অর্থ যুদ্ধ জারি থাকুক।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। পরে সেদিনই গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তখন থেকে চলা ইসরায়েলি যুদ্ধে গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ইসরায়েলি যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে অস্ট্রেলিয়ায়, বিশেষ করে সিডনি ও মেলবোর্নে নিয়মিত ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
গাজায় গণহত্যা বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে ইসরায়েল ও হামাসের সম্মতিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবে হামাসকে নিরস্ত্র করার কথা বলা হলেও তা মেনে নেবে না হামাস। হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের প্রশ্ন ‘অসম্ভব এবং অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে শনিবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রস্তাবিত অস্ত্র হস্তান্তর কোনোভাবেই সম্ভব নয় এবং এটি আলোচনাযোগ্যও নয়।’
হামাসের অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে আলোচিত হবে বলে জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অস্ত্র জমার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যারা অস্ত্র ত্যাগ করবে তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে এবং অভিবাসন নীতির আওতায় ইচ্ছা করলে তারা গাজা ত্যাগের অনুমতি পাবে। এক্ষেত্রে হামাসের অস্ত্র সমর্পণ ও গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার এই দুটি বিষয়কে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নিরস্ত্রীকরণের প্রশ্নে ছাড় না দেওয়ার বিবৃতি এমন সময় দিয়েছে হামাস যখন গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। এরই মধ্যে শান্তি প্রস্তাবের প্রথম ধাপ কর্যকরের পর সোমবার ৭২ ঘণ্টার সময়সীমার মধ্যে হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ফলে গাজায় আটক থাকা অন্তত ২০ জীবিত ইসরায়েলি বন্দি এবং ২৮ জনের মরদেহ ইসরায়েলে ফেরত পাঠানো হবে। এর বিনিময়ে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল, যাদের মধ্যে ২৫০ জন ইসরায়েলি আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত।
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার আহত হয়েছেন বলে তথ্য প্রকাশ করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইউনিসেফের তথ্য মতে, এ যুদ্ধে ২০ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৪২ হাজারের বেশি শিশু; যাদের মধ্যে অন্তত ২১ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
গাজা থেকে জিম্মিরা মুক্ত হওয়ার পরপরই সেখানকার ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের অবশিষ্টাংশ গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রোববার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এ কথা বলেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, যে দেশটির উদ্যোগে তিন দিন আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে, সেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি ‘আন্তর্জাতিক’ তদারকিতে এই অভিযান চলবে।
এক বিবৃতিতে কাৎজ বলেছেন, ‘জিম্মিদের মুক্তি পাওয়ার ধাপটি শেষ হলে ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জটি হবে গাজায় হামাসের সব সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা। এ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত থাকতে আমি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি।’
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজায় ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এ ধরনের সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নজরদারির বাইরে থেকে কাজ করার সুযোগ পায় তারা। এর মধ্যে কিছু সুড়ঙ্গ সীমানার বেড়ার নিচ দিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে পড়েছে। এগুলো ব্যবহার করে ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালানোর সুযোগ পায় হামাস।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস সীমান্ত পার হয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালায়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে দুই বছর ধরে ইসরায়েলি হামলা চালিয়ে বেশ কিছু সুড়ঙ্গ ধ্বংস করে দিয়েছে।
মুক্তির আগে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে ইসরায়েল
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে মুক্তি পাওয়ার আগে ইসরায়েলের নেগেভ কারাগারে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ সংশ্লিষ্ট ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
রোববার তুর্কিভিত্তিক টিআরটি ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স মিডিয়া অফিসের প্রকাশিত এবং ইসরায়েলি মিডিয়ার উদ্ধৃতি দেওয়া ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বন্দিদের হাত পেছনে বাঁধা; চোখও বাঁধা। মাথা নিচু করে লাইনে হাঁটতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদের ঘিরে রয়েছে ইসরায়েলি সৈন্য এবং পুলিশ অফিসাররা।
প্রিজনার্স মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ভিডিওটিতে একটি বেদনাদায়ক দৃশ্য দেখানো হয়েছে। যাদের বিনিময় চুক্তির অধীনে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে, দখলদাররা সেইসব বন্দিদের ওপর নির্মম নির্যাতন করছে।
ফিলিস্তিনি বন্দি সংশ্লিষ্ট ক্লাবের প্রধান প্রধান আমজাদ আল-নাজ্জার ফেসবুকে লিখেছেন, ইসরায়েলি মিডিয়া নেগেভ কারাগার থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির প্রস্তুতি দেখানো হয়েছে। ক্লিপটির অনুবাদ থেকে বোঝা যাচ্ছে, দেখানো বন্দিরা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি। তাদের চুক্তির অংশ হিসেবে গাজায় নির্বাসনের আগে নেগেভের আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আনাদোলু এজেন্সিকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরে বেশ কয়েকজন বন্দির বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। পরিবারগুলোকে তাদের আত্মীয়দের মুক্তির পর প্রকাশ্যে উদযাপন না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
আল-কুদস সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, এর আগে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দি তাদের প্রত্যাশিত মুক্তির আনন্দ প্রকাশ করতে পরিবারকে ফোন করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের অধীনে ৪৮ জন ইসরায়েলি বন্দীর বিনিময়ে ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে - যার মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে আটক ছিলেন ১ হাজার ৭০০ জন। ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয় ২৫০ জন বন্দীর নাম প্রকাশ করেছে।
গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার একদিন পর যুক্তরাজ্যের লন্ডনে সমাবেশ করেছে ফিলিস্তিনিপন্থি লাখো মানুষ। শনিবার বিকেলের বিক্ষোভে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মূল কারণগুলো খুঁজে বের করে, তা সমাধানের আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা। খবর বিবিসির।
মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব ব্রিটেন, ফ্রেন্ডস অব আল আকসা এবং ব্রিটেনের প্যালেস্টাইন ফোরামসহ অন্যান্যদের সাথে এ বিক্ষোভের আয়োজন করে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন (পিএসসি)। এতে অংশ নেয় কমপক্ষে ছয়লাখ মানুষ।
মিছিলের সময় ‘ইসরাইলকে অস্ত্র দেয়া বন্ধ করো’, ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’ এ ধরনের স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, আইন ভঙ্গ, মারামারি এবং নিষিদ্ধ গোষ্ঠীকে সমর্থন করার মতো অপরাধের জন্য ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তবে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইনের পরিচালক বেন জামাল বলেছেন যে তারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করা কখনো বন্ধ করবেন না।
জামাল বলেন, ইসরাইল যেকোনো সময় যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করতে পারে। যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান করার জন্য কিছুই করেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও এটি একটি অনিশ্চিত অগ্রগতি। তারা আরো বলেন, ফিলিস্তিনিরা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা প্রতিবাদ থামাবেন না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্ততায় গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি প্রত্যাবর্তন চুক্তির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে চুক্তি করেছে ইসরাইল ও হামাস। পরবর্তী ধাপগুলো এখনো আলোচনার মধ্যে রয়েছে।
মন্তব্য