ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পরও গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
শনিবার গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে নতুন করে ১৯ জন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া এদিন গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৫৫ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশগুলো গাজার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
একই সূত্রের বরাত দিয়ে শনিবার জানানো হয়, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি আবাসিক এলাকায় ঘাব্বুন পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৬ জন নিহত হন।
এছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের কাছাকাছি এক বিমান হামলায় আরও দুই ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং পূর্ববর্তী হামলায় আহত একজন ফিলিস্তিনির চিকিৎসাধীন মৃত্যু হয়।
বোমাবর্ষণের মাত্রা কিছুটা কমে আসায় এবং ইসরায়েলি সেনারা গাজার কয়েকটি অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ায় উদ্ধারকারী দলগুলো অবশেষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া পাড়া-মহল্লায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তারা গত দুই বছরের ধারাবাহিক ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের লাশ উদ্ধার করছে।
সরছে ইসরায়েলি বাহিনী
দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবশেষে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজার কিছু প্রধান এলাকা থেকে তাদের সামরিক অবস্থান গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। অন্যদিকে যুদ্ধের মধ্যে ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি তাদের পরিত্যক্ত ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ির দিকে ফিরতে শুরু করেছেন।
এর আগে গত শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোরের দিকে ইসরায়েল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করে, যার ফলস্বরূপ আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মি ও বন্দি বিনিময় শুরু হওয়ার কথা, যা দুই বছরের এই ভয়াবহ যুদ্ধ অবসানের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ নিশ্চিত করেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের প্রথম ধাপ সম্পন্ন করেছে এবং জিম্মি মুক্তি পর্ব শুরু হয়েছে। এই চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী বহনকারী শত শত ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারবে, যা বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ মানুষের জন্য জীবনদায়ী ত্রাণ বয়ে আনবে।
যেভাবে জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তি
যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো- জিম্মি ও বন্দি বিনিময়। আশা করা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাস ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রথমে তাদের কারাগারে থাকা ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে, যারা দীর্ঘ মেয়াদে সাজা ভোগ করছেন। এরপর যুদ্ধের সময় গাজায় আটক হওয়া আরও ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনিকেও মুক্তি দেওয়া হবে।
ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই যে ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে, তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে ১৫ জনকে পূর্ব জেরুজালেমে ও ১০০ জনকে পশ্চিম তীরে পাঠানো হবে এবং বাকি ১৩৫ জনকে নির্বাসিত করা হবে বলে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। তবে হামাস মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় মারওয়ান বারঘৌতির মতো কিছু হাই-প্রোফাইল ফিলিস্তিনি নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
গাজায় হামাসের নির্বাসিত নেতা খলিল আল-হায়া দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে তারা এই মর্মে গ্যারান্টি পেয়েছেন যে যুদ্ধ শেষ। এই চুক্তি গাজায় দুই বছরের যুদ্ধ অবসানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রথম ধাপ। এই ধাপে ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজার প্রধান শহরগুলো থেকে সরে আসতে বলা হয়েছে, যদিও তারপরও গাজার প্রায় অর্ধেক অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।
গাজার কিছু স্থান থেকে সেনা প্রত্যাহার
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গত শুক্রবার দুপুর থেকে গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের অবস্থান গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, কিছু ইসরায়েলি সেনা গাজার পূর্ব দিকে সীমান্তসংলগ্ন এলাকা থেকে পিছু হটেছে। তবে সেখানে ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। মধ্য গাজার নুসেইরাত শিবির এলাকায় কিছু ইসরায়েলি সেনা তাদের সামরিক অবস্থান গুটিয়ে ইসরায়েলি সীমান্তের দিকে চলে গেলেও শুক্রবার ভোরের দিকে গোলাগুলির শব্দ শোনার পর বাকি সেনারা সেই এলাকাতেই থেকে যায়। এ ছাড়া ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল ধরে গাজা সিটির দিকে যাওয়ার রাস্তা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সরে এসেছে। এই অঞ্চলে ফিরে যাওয়ার আশায় শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিল; কিন্তু কাছাকাছি গোলাগুলির শব্দ শোনে অনেকে সামনে এগোনোর বিষয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফি ডেফ্রিন গাজার বাসিন্দাদের ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন এবং তাদের চুক্তি মেনে চলার ও নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ধ্বংসস্তূপেই ফিরছে মানুষ
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর দুই বছরের যুদ্ধের মধ্যে উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। অনেকে তাদের অবশিষ্ট জিনিসপত্র পিঠে নিয়ে হেঁটে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছেন। যারা সামর্থ্যবান, তারা গাধার গাড়ি বা ছোট ট্রাক ভাড়া করে এই যাত্রা করছেন। অবশ্য দুই বছরের যুদ্ধে তাদের বেশিরভাগেরই ঘরবাড়ি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। তবে ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও নিজ এলাকায় ফিরতে পেরেই খুশি সবকিছু হারিয়ে নিঃস হয়ে যাওয়া এই ফিলিস্তিনিরা।
৪০ বছর বয়সি মাহদি সাকলা বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির খবর শুনে আমরা খুব খুশি, গাজা সিটিতে আমাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। অবশ্য এখন আর বাড়ি নেই; সব ধ্বংস হয়ে গেছে; কিন্তু ধ্বংসস্তূপ হলেও সেখানে ফিরে যেতে পারলে আমরা খুশি। এটাও এক দারুণ আনন্দ। গত দুই বছর আমরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বাস্তুচ্যুত হয়ে কষ্ট সহ্য করেছি।’
স্ত্রী ও ছয় সন্তানকে নিয়ে খান ইউনিসে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া স্কুলশিক্ষক আলা সালেহ বলেন, ‘রাস্তা দীর্ঘ ও কঠিন, খাবার বা পানি নেই। আমি পরিবারকে পেছনে ফেলে উত্তরে হাঁটা শুরু করেছি। আমার চারপাশে হাজার হাজার মানুষ সংগ্রাম করছে। একটি গাড়ি ভাড়া করতে প্রায় ৪ হাজার শেকেল (১ হাজার ২২৭) খরচ হয়, যা বেশিরভাগ মানুষের সাধ্যের বাইরে।’
রাশিয়া নতুন একটি কৌশলগত অস্ত্র তৈরি করছে। এ বিষয়ে মস্কো শিগগিরই একটি বড় ঘোষণা দিতে পারে। কেননা বিশ্বে ইতোমধ্যেই একটি ‘অস্ত্র প্রতিযোগিতা’ চলছে।
শুক্রবার তাজিকিস্তানে এক শীর্ষ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এমনটাই জানিয়েছেন।
পুতিন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা কিছুক্ষণ আগে ঘোষণা করা নতুন অস্ত্র সম্পর্কে রিপোর্ট করার সুযোগ পাব। এই অস্ত্রগুলো তৈরি এবং পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষাগুলো সফলভাবে এগিয়ে চলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতার অভিনবত্ব অন্য যে কোনো পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের তুলনায় বেশি। আমরা সক্রিয়ভাবে এটির সবকিছুই বিকাশ করছি। আমরা আগের বছরগুলোতে যা উল্লেখ করেছি, তা বিকাশ করছি; আমরা এটি চূড়ান্ত করার জন্য কাজ করছি।’
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে কার্যকর হওয়া ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তিটি ছিল মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে সবশেষ বড় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি। চুক্তিটি ২০১০ সালে সই হয়েছিল, যার মাধ্যমে দুই দেশ কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড মোতায়েনের সংখ্যা সীমিত করে।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। রাশিয়া এটি এগিয়ে নিতে চাইলেও ওয়াশিংটন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবে সম্মত হয়নি।
‘ট্রাম্পকে নোবেল না দেওয়ায় এ পুরস্কারের সম্মান কমে গেছে’
রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জটিল আন্তর্জাতিক সংকট সমাধানে ‘অতি আপ্রাণ প্রচেষ্টা’ করছেন।
পুতিন দূশানবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে কমিটি এমন ব্যক্তিদের নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়েছে যারা শান্তির জন্য কিছুই করেনি।’
তিনি যুক্তি দেখান, এর ফলে নোবেল পুরস্কারের সম্মান ও কর্তৃত্ব কমে গেছে। তবে তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ‘তবুও ট্রাম্প দীর্ঘকাল ধরে চলা জটিল সংকট সমাধানে অনেক কাজ করছেন।’ তিনি বিশেষভাবে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে উল্লেখ করে বলেন, যদি ট্রাম্পের ২০-পয়েন্ট পরিকল্পনা গাজা অঞ্চলে কার্যকর হয়, তা হবে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ট্রাম্প আন্তরিকভাবে যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা করছেন। এ যুদ্ধ ইতোমধ্যেই তিন বছর ছয় মাস অতিক্রম করেছে।
এর আগে শুক্রবার নরওয়ের নোবেল কমিটি ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া করোনা মাচাদোকে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করে। মাচাদোকে ‘ভেনিজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার জন্য’ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। যদিও ট্রাম্প নিজেকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন, তবু কমিটি তার পরিবর্তে মাচাদোকে পুরস্কৃত করেছে।
পুতিনের মন্তব্যে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ!’ এবং পুতিনের বক্তব্যের ভিডিও শেয়ার করেছেন।
চলতি সপ্তাহে মিসরে অনুষ্ঠিতব্য গাজা শান্তি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এই সম্মেলনের আয়োজন করছেন এবং ইউরোপ ও আরব বিশ্বের কয়েকজন নেতাকে এতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
সম্মেলনটি আগামী মঙ্গলবার (একদিন আগেও হতে পারে) লোহিত সাগরের উপকূলীয় শহর শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এখানেই সম্প্রতি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল, যেখানে কাতার, মিশর ও তুরস্ক মধ্যস্থতা করেছিল।
এই সম্মেলনে অংশ নেবেন জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, জর্ডান, তুরস্ক, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার নেতারা বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এতে যোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা।
মার্কিন প্রশাসন নিশ্চিত করেছে যে ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে সম্মেলনে অংশ নেবেন, যদিও হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
অ্যাক্সিওস জানায়, এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন তৈরি করা। বর্তমানে গাজার শাসন, নিরাপত্তা ও পুনর্গঠন ইস্যুতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যা রয়ে গেছে।
ট্রাম্প আগামী সোমবার সকালে ইসরায়েলে পৌঁছাবেন, যেখানে তিনি কেনেসেটে ভাষণ দেবেন এবং ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর তিনি মিশরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট সিসির সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং তার শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
দীর্ঘ দুই বছর যাবত নৃশংস গণহত্যা চালানোর পর অবশেষে গাজা উপত্যকার কয়েকটি এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে ইসরায়েল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজা ভূখণ্ড থেকে তিন ধাপে সেনা প্রত্যাহার করা হবে। তবে সেনা প্রত্যাহার করা হলেও গাজার ৫০ শতাংশের বেশি এলাকা ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
গাজার বাসিন্দারা স্থানীয় সংবাদদাতাদের জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূর্ব দিকে সরে গিয়েছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যমও নিশ্চিত করেছে যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা উপত্যকার কিছু অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেনারা এমন স্থানে ফিরে যাবে যেখানে ইসরায়েলের গাজা উপত্যকার প্রায় ৫৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক পোস্টে বলেছেন, ‘একটি নির্ধারিত সীমারেখা পর্যন্ত সেনা প্রত্যাহার করা হবে।
কোনো কোনো এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হবে তা নিয়ে গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস একটি মানচিত্র প্রকাশ করে। এ মানচিত্রে হলুদ রেখা দিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের প্রাথমিক প্রত্যাহারের সীমারেখা দেখানো হয়েছিল। তখনই জানানো হয়েছিল, এটি সেনা প্রত্যাহারের তিন ধাপের প্রথম ধাপ।
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার আহত হয়েছেন বলে তথ্য প্রকাশ করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইউনিসেফের তথ্য মতে, এ যুদ্ধে ২০ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৪২ হাজারের বেশি শিশু; যাদের মধ্যে অন্তত ২১ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
হামাস কি অস্ত্র সমর্পণ করবে?
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস সমঝোতায় পৌঁছালেও, এখনো বহু জটিল ইস্যু অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে—সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, হামাস কি তার অস্ত্রসমূহ সমর্পণ করবে?
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র হতে হবে, পাশাপাশি গাজা শাসন থেকে সরে গিয়ে সংগঠন হিসেবে নিজেদের বিলুপ্ত করতে হবে।
অন্যদিকে, হামাস প্রকাশ্যে অস্ত্র সমর্পণের দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, তারা অংশিকভাবে অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে গোপনে কিছু নমনীয়তা দেখিয়েছে।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিশেষজ্ঞ হিউ লাভাট বলেন, নিরস্ত্রীকরণের প্রশ্নে হামাসের অবস্থানেই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন দেখা গেছে। গোপনে তারা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, আক্রমণাত্মক অস্ত্রগুলোর একটি অংশ তারা নিষ্ক্রিয় করতে রাজি হতে পারে।
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যেসব প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে
মিশরে তিন দিন ধরে পর্দার আড়ালে চলা নিবিড় আলোচনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েল এবং হামাস তার প্রস্তাবিত ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এর অর্থ, সব জিম্মিকে খুব দ্রুত মুক্তি দেওয়া হবে। একইসাথে, একটি শক্তিশালী, টেকসই ও চিরস্থায়ী শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইসরায়েল তাদের সৈন্যদের একটি নির্দিষ্ট সীমানায় ফিরিয়ে আনবে।’
তবে এই প্রথম ধাপের বিস্তারিত বিবরণ তিনি দেননি।
এই সমঝোতা এমন এক সময়ে হলো, যখন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের চালানো হামলার দুই বছর দুই দিন পূর্ণ হয়েছে। ওই হামলায় প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।
এরপর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এই অভিযানে ৬৭, ১০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যুটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে বিপন্ন করে তুলতে পারে—যদি হামাস সম্পূর্ণভাবে অস্ত্র ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে ইসরায়েল আবারও হামলা শুরু করতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের গাজাভিত্তিক গবেষক আজমি কেশাওয়ি বলেন, হামাস হয়তো স্বল্প ও দীর্ঘ পাল্লার রকেটের মতো আক্রমণাত্মক অস্ত্র সমর্পণ করতে পারে। কিন্তু ছোট অস্ত্র বা গোপন টানেল নেটওয়ার্কের মানচিত্র কখনোই দেবে না।
তার মতে, হামাস কেবল তখনই অস্ত্র ছাড়বে, যখন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ইসরায়েল তার দখল শেষ করবে।
গাজার অনেক ফিলিস্তিনি মনে করেন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় হামাসের কিছু সামরিক সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, কারণ ইসরায়েল গাজায় কিছু গ্যাং সংগঠনকে সহায়তা দিয়েছে—যারা এখন মানবিক সহায়তা লুট করছে।
ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন বিশ্লেষক তাগরিদ খোদারি বলেন, ইসরায়েল নিজেই এমন গ্যাং তৈরি করেছে যারা এখন নিজেদের জনগণকে হত্যা করছে। হামাস না থাকলে গাজায় নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে।
লাভাটের মতে, হামাস একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা টাস্কফোর্সের সঙ্গে আংশিক সহযোগিতায় রাজি হতে পারে, যদি সেই বাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা না করে।
আইসজি-এর কেশাওয়ি বলেন, ইসরায়েল হামাসকে যতই দমন করুক না কেন, গোষ্ঠীটি পুরোপুরি নির্মূল হবে না।
হামাস এখন কেবল একটি সংগঠন নয়, এটি একটি প্রতিরোধের প্রতীক। তারা এমন এক যুদ্ধ লড়েছে যা কেউ কল্পনাও করেনি বলে জানান তিনি।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম যে জাহাজটিতে ছিলেন, সেই দ্য কনশায়েন্সের ক্যাপ্টেন অস্ট্রেলীয় নারী মেডেলেইন হাবিবকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাগারে পাঠিয়েছে ইসরায়েল। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন শুক্রবার জানিয়েছে, একটি মুচলেকায় সই করতে অসম্মতি জানানোয় তাঁকে কেৎজিয়েত কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।
অভিজ্ঞ এ নারী নাবিকের সঙ্গে কারাগারে বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎ করেন অস্ট্রেলিয়ার কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা। তখন তিনি জানান, তিনি মানসিক আঘাতের শিকার হয়েছেন। তাঁকে খেতে দেওয়া হয়েছে বাসি রুটি ও খয়েরি রঙের পানি। তবে শারীরিক হেনস্তা করা হয়নি।
এদিকে গাজার দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ভূমধ্যসাগর হয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বিশ্বের ১৪৪ বিশিষ্টজনের সঙ্গে আটক বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম কারামুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন। শনিবার ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে তাঁকে বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। শহিদুল আলমকে বরণ করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও মানবাধিকারকর্মী রেহনুমা আহমেদ, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ইবনে ওয়াহাব, আলোকচিত্রী ও গবেষক মুনেম ওয়াসিফসহ সহকর্মীরা। ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তির পর শুক্রবার দুপুরে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পৌঁছান। পরে তিনি দেশের উদ্দেশে রওনা করেন। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে ভোর ৫টার পর তিনি বের হন।
শহিদুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আমাকে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, গাজার মানুষ এখনও মুক্ত হয়নি। গাজার মানুষ এখনও আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের ওপর এখনও নির্যাতন চলছে। সেটা যতক্ষণ না হয়, আমাদের কাজ কিন্তু শেষ হয়নি।’ দৃকের ফেসবুক পেজে তাঁর এই বক্তব্য পোস্ট করা হয়েছে। পোস্টে শহিদুল আলম আরও বলেন, ‘সারা পৃথিবী থেকে বাংলদেশিরা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, দোয়া করেছেন, বাংলাদেশ সরকার ও টার্কিশ সরকার যেভাবে সাহায্য করেছে- সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমি যেতে পেরেছি, অনেকে পারেনি। অনেকে যেতে চেয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। আমাদের মতো আরও হাজার ফ্লোটিলা যাওয়া দরকার, যতদিন না ফিলিস্তিন স্বাধীন হয়। আমাদের আসল সংগ্রাম এখনও বাকি আছে। ফিলিস্তিন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।’
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের জাহাজবহরের সবচেয়ে বড় নৌযান দ্য কনশায়েন্সে ছিলেন শহিদুল আলম। তাঁর সঙ্গে ওই বহরের আরও ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিক, সমাজকর্মী, মানবাধিকারকর্মী আটক হন। এরই মধ্যে কয়েকজনকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। তবে ওই জাহাজের ক্যাপ্টেন অস্ট্রেলীয় নারী মেডেলেইন হাবিবকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইসরায়েলের মরুভূমির কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় সময় বেলা ২টা ২৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ২৫ মিনিট) শহিদুল আলমকে বহনকারী ফ্লাইটটি ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. মিজানুর রহমান বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান। পরে ইস্তাম্বুলের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম স্বাধীন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নাগরিক অধিকার নিয়েও সোচ্চার তিনি। গাজা অভিমুখী একটি নৌবহরে অংশ নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হন। ইসরায়েলের নৃশংসতা বন্ধ ও গাজায় নৌ অবরোধ ভাঙার প্রত্যয় নিয়ে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের গাজামুখী নৌযাত্রায় তিনি অংশ নেন।
ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে আত্মপ্রকাশ করা আরেক উদ্যোগ ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’র আটটি নৌযানও এ যাত্রায় অংশ নেয়। ৯টি নৌযানের এ বহরে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীরা যোগ দিয়েছিলেন। সেই দলে ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। বুধবার ওই নৌবহরে আক্রমণ করে সব অধিকারকর্মী ও নাবিককে ধরে নিয়ে যায় ইসরায়েলি সেনারা। পরে শহিদুল আলমসহ আটক অনেককে ইসরায়েলের মরুভূমির কুখ্যাত কেৎজিয়েত কারাগারে নেওয়া হয়। ইসরায়েলে আটক হওয়ার পর থেকেই শহিদুল আলমের মুক্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জর্ডান, মিসর ও তুরস্কের মাধ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আসছিল।
শহিদুল আলমের মুক্তি ও ইসরায়েল থেকে তাঁর প্রত্যাবর্তনে সাহায্য করার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
ইরানের ওপর সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের অব্যাহত চেষ্টার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ৯ প্রতিষ্ঠান ও দেশটির আট ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অভিযোগ করা হয়েছে, এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ইরানি তেল, পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য এবং পেট্রোকেমিক্যাল বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।
গত বৃহস্পতিবার ঘোষিত এ সর্বশেষ পদক্ষেপে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রায় ৪০ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এদের বিরুদ্ধে ইরানি পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি)’ ইরান থেকে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে তেল ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) পরিবহনে সহায়তা করার অভিযোগে আরও ৬০ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও জাহাজকে কালোতালিকাভুক্ত করেছে। চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও কয়েকটি দেশের প্রতিষ্ঠানও এ তালিকায় রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ৮ ভারতীয় রাসায়নিক ও পেট্রোকেমিক্যাল বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো মুম্বাইভিত্তিক সিজে শাহ অ্যান্ড কো, কেমোভিক, মোডি কেম, পারিকেম রিসোর্সেস, ইনডিসল মার্কেটিং, হরেশ পেট্রোকেম, শিভ টেক্সকেম এবং দিল্লিভিত্তিক বিকে সেলস করপোরেশন।
পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, গত কয়েক বছরে এসব প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাধীন ইরানি উৎস থেকে শত শত মিলিয়ন ডলার মূল্যের পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করেছে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের এ তালিকায় আরও রয়েছেন পাঁচ ভারতীয় নাগরিক—কেমোভিকের পরিচালক পিয়ূষ মাগনলাল জাভিয়া, ইনডিসল মার্কেটিংয়ের পরিচালক নীতি উনমেশ ভাট এবং হরেশ পেট্রোকেমের পরিচালক কমলা কাসাত, কুনাল কাসাত ও পুনম কাসাত।
ওএফএসির তালিকায় আরও তিন ভারতীয়—বরুণ পুলা, আয়াপ্পান রাজা ও সোনিয়া শ্রেষ্ঠার নাম রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ইরানি এলপিজি পরিবহনকারী জাহাজগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ওএফএসি জানিয়েছে, মুম্বাইভিত্তিক শিপিং প্রতিষ্ঠান ‘ভেগা স্টার শিপ ম্যানেজমেন্ট’ সোনিয়া শ্রেষ্ঠার মালিকানাধীন। এটির মালিকানাধীন কমোরোস পতাকাবাহী ‘নেপটা’ নামের জাহাজ ইরানি উৎসের এলপিজি পাকিস্তানে পরিবহন করেছে।
ওএফএসির পদক্ষেপ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় ইরানের জ্বালানি রপ্তানি কাঠামো ভেঙে দিয়ে দেশটির নগদ অর্থের প্রবাহ দুর্বল করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে এই প্রশাসন ইরানি শাসনের সেই ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে, যার মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেওয়া ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে’ অর্থায়ন করে থাকে।
সূত্র:দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
লাতিন আমেরিকার দেশ চিলির আতাকামা মরুভূমিতে এক বিরল দৃশ্য দেখা দিয়েছে। বছরের বেশির ভাগ সময় যেখানে ধুলা উড়তে থাকে, সেই নির্জন মরুপ্রান্তরে এখন ছড়িয়ে আছে রঙিন ফুলের গালিচা। এ যেন মরুর বুকে ক্ষণিকের এক রূপকথা।
চিলির লানোস দে চায়ে জাতীয় উদ্যান এলাকায় এ বছর অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পর বুনো ফুল গাছে ভরে গেছে আতাকামা মরুভূমি। বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক এই মরুভূমিতে বছরে গড়ে মাত্র দুই মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তবে এ বছরের শীতে পাহাড়ি অঞ্চল এবং পাদদেশে নজিরবিহীনভাবে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে।
সেই বৃষ্টির পানিতেই মাটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা দুই শতাধিক প্রজাতির বীজ জেগে ওঠে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। গোলাপি, বেগুনি, হলুদ আর নীল—নানা রঙের এই উৎসবে মরুভূমি যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে।
চিলির জাতীয় প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরের উদ্ভিদবিদ ভিক্টর আরদিলেস বলেন, ‘বছরের পর বছর এই বীজগুলো মাটির নিচে ঘুমিয়ে থাকে। যথেষ্ট আর্দ্রতা পেলে তারা জেগে ওঠে, অঙ্কুরিত হয়, আর ফুটে ওঠে ফুল।’
তবে সব বীজ যে জেগে ওঠে, তা নয়। পর্যাপ্ত পানি, তাপমাত্রা, আলো আর আর্দ্রতা—এই চারটি উপাদান একসঙ্গে না মিললে ফুল ফোটে না। এই সৌন্দর্যের আয়ুও খুব বেশি নয়। নভেম্বর নাগাদ বেশির ভাগ ফুল ঝরে যাবে। কেবল শক্ত প্রাণের কিছু বুনো ফুল জানুয়ারি পর্যন্ত টিকে থাকবে।
এই ক্ষণস্থায়ী ফুলেল মরু দেখার জন্য ছুটে আসছেন হাজারো মানুষ। রাজধানী সান্তিয়াগো থেকে ৮০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অনেকেই আসছেন এই রঙিন গালিচা দেখতে। পর্যটক মারিৎসা বারেরা বললেন, ‘ভাবনার চেয়েও বেশি মোহময় এই দৃশ্য।’
এই বিরল প্রকৃতি রক্ষায় চিলি সরকার ২০২৩ সালে ৫৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। নাম দেওয়া হয়েছে ডেজার্ট ব্লুম ন্যাশনাল পার্ক। গবেষকেরা বলছেন, পৃথিবীর আর কোথাও মরুভূমি এভাবে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে না। তাই আতাকামার এই ক্ষণিকের রূপ, যত দিন আছে, উপভোগ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
মন্তব্য