ইসরায়েলের চরম ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেছেন, গাজা থেকে জিম্মিরা দেশে ফেরার পর হামাসকে ধ্বংস করতে হবে। বৃহস্পতিবার এক্সে (পূর্বে টুইটার) এই মন্তব্য করেন স্মোত্রিচ।
স্মোত্রিচ লেখেন, জিম্মিরা যখন দেশে ফিরবে, তখনই ইসরায়েল সব শক্তি নিয়ে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ও নির্মূলের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে, যাতে তারা আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি আরও বলেন, তিনি গাজা যুদ্ধ শেষ করতে হামাসের সঙ্গে হওয়া কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির পক্ষে ভোট দেবেন না। তবে তিনি নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে সমর্থন প্রত্যাহারের বা সরকার পতনের হুমকি দেননি।
স্মোত্রিচ আরও সতর্ক করেন যে, আমরা যেন ৭ অক্টোবরের আগের ভুল ধারণার কাছে ফিরে না যাই। আমরা যেন এমন কিছু না করি, যাতে নিজেদের ভবিষ্যৎ বন্ধক রেখে ভয়াবহ মূল্য পরিশোধ করতে হয়।
গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তির প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই রাজি হয়েছে বলে গত বুধবার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে নিশ্চিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে দুই পক্ষ সম্মত হওয়ার পর ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা এ পরিকল্পনার অনুমোদন দিতে পারে। এরই মধ্যে নেতানিয়াহু নেসেটে (ইসরায়েলের পার্লামেন্ট) ভাষণ দিতে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান ও উপত্যকাটিতে হামাসের হাতে থাকা ৪৮ জন জিম্মিকে (জীবিত ও মৃত) মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। জিম্মিদের মধ্যে ২০ জন জীবিত আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিপরীতে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের অনেককেই মুক্তি দেওয়া হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। তাদের মধ্যে ৪৭ জন এখনো জিম্মি। এর মধ্যে ২৫ জন আর বেঁচে নেই বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অন্যদিকে ওই দিন থেকেই গাজায় টানা বর্বর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন নিহত হন। এর মধ্যে ২০ হাজার ১৭৯ জন শিশু।
সুদানের এল-ফাশের শহরের একটি মসজিদে আধাসামরিক বাহিনীর হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে এবং ২০ জন আহত হয়েছে । বুধবার বিদ্রোহী গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এ হামলা করেছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই মসজিদটিতে যুদ্ধের ফলে বাস্তুচ্যুত ৭০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। উত্তর দিক থেকে মসজিদে বোমা হামলা চালানো হয়। ফলে ১৩ জন মারা যায় এবং মসজিদের একটি অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। আরএসএফ আবু শৌক শরণার্থী শিবির দখলের পর সেখান থেকে শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র হামলা চালাচ্ছে। গত মাসে আরেকটি মসজিদে আরএসএফ এর এক ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বুধবার বিকেলের দিকে বোমা হামলার পর আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করি এবং তাদের দাফন করি।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এল-ফাশের শহরে আরএসএফের সবচেয়ে বড় হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। আরএসএফ প্রতিদিনই আর্টিলারি ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে এবং আশপাশের শরণার্থী শিবির দখল করছে। এসব হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, যুদ্ধের ফলে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ মারাত্মক খাদ্যসংকটে ভুগছে এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী এল-ফাশের গত বছরের মে মাস থেকে আরএসএফের অবরোধে রয়েছে। এটি এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ বড় শহর। ধীরে ধীরে সেনা ও তাদের মিত্রদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ছোট হয়ে আসছে।
সম্পর্কের উষ্ণতায় নতুন অধ্যায় সূচনা করে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে অত্যাধুনিক মাঝারি পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এআইএম-১২০ উন্নত সংস্করণ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ মন্ত্রণালয়—যা আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নামে পরিচিত ছিল—এক সরকারি ঘোষণায় ইসলামাবাদকে এই ক্ষেপণাস্ত্রের নতুন ক্রেতাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি।
এই অনুমোদন আসে কয়েক সপ্তাহ পর, যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
চুক্তির বিবরণ
যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রে-থিয়ন একটি পূর্ববর্তী প্রতিরক্ষা চুক্তির সংশোধিত সংস্করণে ৪১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে। এর আওতায় ক্ষেপণাস্ত্রের সি–৮ এবং ডি–৩ মডেল তৈরি করা হবে।
নতুন এই সংশোধিত চুক্তিতে পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, ফলে পুরো প্রকল্পের মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই দশমিক পাঁচ এক বিলিয়ন ডলার। উৎপাদন কাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৩০ সালের মে মাস পর্যন্ত।
চুক্তির আওতায় পাকিস্তান ছাড়াও যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সৌদি আরব, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরাইল, তুরস্কসহ ৩০টিরও বেশি দেশ রয়েছে।
ভারতের জন্য অর্থ ও তাৎপর্য
কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তান পেতে যাচ্ছে তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই অনুমোদন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের আধুনিকীকরণের ইঙ্গিত বহন করছে।
এই ক্ষেপণাস্ত্র শুধুমাত্র এফ–১৬ যুদ্ধবিমানে ব্যবহারযোগ্য—যা পাকিস্তান বিমানবাহিনীর মূল আকাশযুদ্ধ সক্ষমতা নির্ধারণ করে। পাকিস্তানের সংবাদপত্র এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর মিগ–২১ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করতে পাকিস্তান এই ক্ষেপণাস্ত্রই ব্যবহার করেছিল।
ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত
প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষণী ওয়েবসাইট কুওয়া জানিয়েছে, এআইএম–১২০ সি–৮ সংস্করণটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ডি–শ্রেণির রপ্তানি সংস্করণ। পাকিস্তান এর আগের সি–৫ সংস্করণ পরিচালনা করছে, যা ২০১০ সালে তাদের নতুন ব্লক–৫২ এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে সরবরাহ করা হয়েছিল।
এআইএম–১২০ ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের অন্যতম কার্যকর দীর্ঘপাল্লার আকাশযুদ্ধ অস্ত্র। এর বিশেষত্ব হলো ‘লক্ষ্যে ছুড়ে ভুলে যাও’ বা ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট প্রযুক্তি—যার ফলে এটি পাইলটের নিরবচ্ছিন্ন নির্দেশনা ছাড়াই নিজস্ব রাডার ব্যবস্থার মাধ্যমে দীর্ঘ দূরত্বে লক্ষ্য শনাক্ত ও আঘাত হানতে সক্ষম।
পাকিস্তান–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের পটভূমি
সম্প্রতি পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নতির ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে, বিশেষ করে গত মে মাসে ভারত–পাকিস্তানের চার দিনের সীমান্তযুদ্ধের পর। পাকিস্তান প্রকাশ্যে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি আনার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা ছিল মুখ্য এবং ইসলামাবাদ এমনকি তার নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্যও প্রস্তাব করেছে।
অন্যদিকে ভারত দাবি করে, যুদ্ধবিরতির সমঝোতা হয়েছিল দুই দেশের সামরিক পরিচালকদের (ডিজিএমও) সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা ছাড়াই।
বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া
ওয়াশিংটন থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশে এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এতে পাকিস্তানের এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের আকাশযুদ্ধ সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে, যা নিয়ন্ত্রণরেখা এলাকায় শক্তির ভারসাম্য নড়বড়ে করতে পারে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, এই অস্ত্র বিক্রি ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন করবে না,’ তবু বাস্তবে এটি দিল্লি–ওয়াশিংটন সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
পাকিস্তানের পক্ষে এটি কেবল সামরিক শক্তি বাড়ানোর পদক্ষেপ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতারও এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। ভারতের জন্য বার্তাটি স্পষ্ট—দক্ষিণ এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক মিত্রতার সমীকরণ দ্রুত বদলে যাচ্ছে।
পারস্পরিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতা থাকলেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাকে সমর্থন করে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এ তথ্য জানিয়েছেন।
ল্যাভরভ অবশ্য বলেছেন, গাজায় রক্তপাত বন্ধের জন্য এই মুহূর্তে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ‘সেরা’ হলেও ‘আদর্শ’ নয়। তিনি আরও বলেছেন গাজায় যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য ইসরায়েল, হামাস এবং তিন মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার যদি রাশিয়ার কাছে কোনো ধরনের সহযোগিতা চায়, তাহলে তা দিতে প্রস্তুত আছে মস্কো।
মার্কিন সাময়িকী ফরেন অ্যাফেয়ার্সকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ল্যাভরভ। সেখানে গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা বাস্তববাদী। সেই সঙ্গে আমরা অনুভব করতে পারছি যে গাজায় রক্তপাত বন্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি সেরা। আলোচনার টেবিলে এই মুহূর্তে এটির বিকল্পর আর কিছু নেই।’
‘এটি সেরা হলেও আদর্শ প্রস্তাব নয়। কারণ এই যুদ্ধের একদম মূল পয়েন্ট হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। ট্রাম্পের প্রস্তাবে এ বিষয়টিকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, শুধু ফোকাস করা হয়েছে গাজার ওপর।’
‘তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো গাজায় রক্তপাত থামানো। এ কারণেই ট্রাম্পের প্রস্তাবটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আশাব্যাঞ্জক।’
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার স্থানীয় সময় বিকেলে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও দপ্তর হোয়াইট হাউসে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন একটি পরিকল্পনার ব্যাপারে ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার পাশে ছিলেন।
সেদিন ট্রাম্প বলেছিলেন, গাজায় যুদ্ধের অবসান এবং স্থায়ী শান্তি স্থাপন সংক্রান্ত নতুন পরিকল্পনার কপি ইসরায়েল, হামাস এবং যুদ্ধের অপর দুই মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর ও কাতারের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং হামাস ব্যতীত বাকি সবাই তার পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে।
৩ অক্টোবর শুক্রবার হামাস সম্মতি জানানোর পরের দিন ৪ অক্টোবর ইসরায়েলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেন ট্রাম্প। তারপর ৬ অক্টোবর মিসরের লোহিত সাগর তীরবর্তী পর্যটন শহর শারম আল শেখ- এ ট্রাম্পের প্রস্তাবের ওপর বৈঠক শুরু হয় ইসরায়েল, হামাস, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিদের মধ্যে।
সেই বৈঠকে দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে আলোচনা চলার পর ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্যায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইসরায়েল-হামাস। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন ট্রাম্প।
প্রসঙ্গত, রাশিয়া শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান (টু স্টেট সলিউশন)-এর দৃঢ় সমর্থক। গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের হামলার জবাব দিতে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী; সে সময় প্রথম যেসব দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল— তাদের মধ্যে রাশিয়া অন্যতম। ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবার গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে রাশিয়া।
তীব্র অর্থসংকটের কারণে বিশ্বজুড়ে নয়টি শান্তিরক্ষা মিশন থেকে এক-চতুর্থাংশ সেনা ও পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে জাতিসংঘ (ইউএন)। একাধিক শীর্ষ জাতিসংঘ কর্মকর্তার বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, সামগ্রিকভাবে আমাদের প্রায় ২৫ শতাংশ শান্তিরক্ষী সেনা ও পুলিশ, তাদের সরঞ্জামসহ নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক কর্মীকেও মিশন থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার শান্তিরক্ষী সদস্য প্রভাবিত হবেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা তহবিলে সবচেয়ে বড় অবদান রাখে যুক্তরাষ্ট্র, প্রায় ২৬ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন, যার অংশ ২৪ শতাংশের কাছাকাছি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থপ্রদান বাধ্যতামূলক হলেও, দেশটি বর্তমানে গুরুতর বকেয়ায় রয়েছে।
একজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন আর্থিক বছর শুরু হওয়ার আগেই (১ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের বকেয়া ছিল ১.৫ বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি ডলার। এর সঙ্গে চলতি অর্থবছরের আরও ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি ডলার যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৮ বিলিয়নের বা ২৮০ কোটি ডলারেরও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে জানিয়েছে, তারা শিগগিরই ৬৮ কোটি ডলার পরিশোধ করবে। তবে মার্কিন মিশন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
জাতিসংঘ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত আগস্টে একতরফাভাবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালের জন্য বরাদ্দকৃত ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি ডলার শান্তিরক্ষা তহবিল বাতিল করেন।
হোয়াইট হাউসের বাজেট অফিস আরও প্রস্তাব দিয়েছে, ২০২৬ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের সব অর্থায়নই বন্ধ করে দেওয়া হবে, যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মালি, লেবানন ও কঙ্গোতে মিশনের ব্যর্থতা।
যেসব মিশনে প্রভাব পড়বে
অর্থসংকটের কারণে যেসব মিশনে সদস্যসংখ্যা কমানো হচ্ছে, সেগুলো হলো- দক্ষিণ সুদান, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, লেবানন, কসোভো, সাইপ্রাস, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, পশ্চিম সাহারা, ইসরায়েল-সিরিয়ার গোলান মালভূমির নিরস্ত্রীকৃত এলাকা, আবেয়ি (দক্ষিণ সুদান ও সুদানের যৌথ প্রশাসনিক অঞ্চল)
জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বছরেই এমন আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। সংস্থার মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এরই মধ্যে ব্যয় সাশ্রয় ও দক্ষতা বৃদ্ধির নতুন কৌশল নিয়ে কাজ করছেন।
গুতেরেসের ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, এই সংকট কেবল একটি অস্থায়ী অর্থঘাটতি নয়- এটি জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম ও বৈশ্বিক শান্তিরক্ষার সক্ষমতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।
দক্ষিণ ভারতের সুপারস্টার অভিনেতা বিজয় থালাপতির বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বাড়ানো হয়েছে বিজয়ের তামিলনাডুর নীলঙ্করাই এলাকার বাড়ির নিরাপত্তা। এছাড়া সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরাও তার বাড়ির দিকে নজর রাখছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘এই সময়ের’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বোমা মেরে বিজয়ের বাড়ি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি আসে। এক ব্যক্তি ফোন করে চেন্নাই পুলিশকে ভয়ংকর কথাটি জানান। এরপরই পুলিশের একটি দল তার বাড়ির চারপাশে অবস্থান নেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, কন্যাকুমারী থেকে হুমকি দিয়ে ফোনটি আসে। পুলিশের ১০০ নম্বরে ফোন করে বলা হয়, ভবিষ্যতে আর কোনো দিন যদি বিজয় জনসভা করেন, তাহলে তার বাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হবে। কারুরে পদপিষ্টের ঘটনা নিয়ে এখনো অস্বস্তি কাটেনি তামিলাগা ভেত্তরি কাজহাগামের। ৪১ জনের মৃত্যু হয় সেই দুর্ঘটনায়। তারই মধ্যে এবার বিজয়ের বাড়িতে বোমা হামলার হুমকি এলো।
ইতোমধ্যে পুলিশ বিজয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। সেখানে কোনো বিস্ফোরক বা সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
এদিকে হুমকির ঘটনা তদন্তে পুলিশ কাজ করছে। কর্মকর্তারা জানান, ফোনকারী ব্যক্তির লোকেশন ট্র্যাক করে তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। তবে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, এটি কোনো প্র্যাঙ্ক বা ভুয়া কল ছিল।
সম্প্রতি তামিলনাড়ুর কারুরে সমাবেশে ৪১ জন নিহত হন। বিজয়ের রাজনৈতিক দল তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম (টিভিকে) এই ঘটনার পর বেশ চাপে পড়েছে। নিহতদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছেন।
ওই দিনের সমাবেশে ৫১ বছর বয়সি বিজয় প্রায় ৭ ঘণ্টা দেরিতে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। দুপুর থেকেই হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হতে শুরু করেন। তার দেরি হওয়ায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সমাবেশের জন্য বরাদ্দ ১০ হাজার জনের জায়গায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। নিরাপত্তা নির্দেশিকা লঙ্ঘন করা হয় এবং পর্যাপ্ত খাবার, পানি ও জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, এই সব কারণে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সমাবেশ চলাকালীন অনেক মানুষ অজ্ঞান হলেও সেখানে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারেনি।
ঘটনার পর বিজয় শোক প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে টিভিকে নেতারা বলেন, ‘আমরা এর আগে বহু বিশাল সমাবেশ আয়োজন করেছি এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
গাজা পুনর্নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফক্স নিউজের শন হ্যানিটির সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, শান্তি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের পর আপনারা দেখতে পাবেন যে লোকজন একসঙ্গে কাজ করছে এবং গাজা পুনর্নির্মাণ করা হবে। খবর আল জাজিরার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, এটি একটি ‘ভিন্ন বিশ্ব’ হতে চলেছে এবং গাজায় সম্পদ ব্যয় করা হবে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, গাজা অনেক নিরাপদ স্থান হতে চলেছে এবং এটি এমন একটি স্থান হতে চলেছে যেখানে পুনর্গঠন হবে এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলো এটি পুনর্গঠনে সহায়তা করবে। কারণ তাদের প্রচুর পরিমাণে সম্পদ রয়েছে এবং তারা এটা দেখতে চায়। তিনি আরও বলেন, আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে।
এদিকে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর ফিলিস্তিনিরা আনন্দ উদযাপন শুরু করে। কিন্তু এর মধ্যেই ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে গাজায় হামলা চালিয়েছে দখলদার সেনারা।
গাজা সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইর বলেছেন, যুদ্ধবিরতিসংক্রান্ত একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর ঘোষণার পরও ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটিসহ একাধিক স্থানে হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত রাতে গাজায় প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি কাঠামোর বিষয়ে একটি চুক্তির ঘোষণার পরও বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে, বিশেষ করে উত্তর গাজ এলাকায়।
তবে এসব অভিযানে কতজন হতাহত হয়েছে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এর আগে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের ‘গ্যারান্টি’ চেয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠন জানিয়েছে, তারা এমন নিশ্চয়তা চায় যাতে ইসরায়েল গাজার যুদ্ধ শেষ করে এবং পুরোপুরি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়।
মন্তব্য