মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব ক্রমেই বাড়ছে। নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ১০ জনের মধ্যে ৬ জনই ইসরায়েলি সরকারের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন। পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রকাশিত এই জরিপ থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মার্কিন জনগণ ক্রমশ ইসরায়েলি সরকারের সমালোচক হয়ে উঠেছে।
জরিপে বলা হয়, ৩৯ শতাংশ আমেরিকান মনে করছেন ইসরায়েল হামাসবিরোধী সামরিক অভিযানে ‘অতিরিক্ত বল প্রয়োগ’ করছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা ছিল ৩১ শতাংশ, আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০২৪ সালের শুরুর তুলনায় বর্তমানে ইসরায়েলি সরকারের প্রতি মার্কিন নাগরিকদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ শতাংশে।
মাত্র ১৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, ইসরায়েল সঠিক পথে এগোচ্ছে। অন্যদিকে ১০ শতাংশ মনে করছেন, ইসরায়েলের অভিযান যথেষ্ট নয়। বাকিরা নিশ্চিত নন।
জরিপে দেখা গেছে, ৪২ শতাংশ মার্কিন নাগরিক গাজা যুদ্ধ মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। সমর্থন করেছেন মাত্র ৩০ শতাংশ। এছাড়া, ৩৬ শতাংশ আমেরিকান মনে করছেন ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি অতিরিক্ত পক্ষপাত দেখাচ্ছেন। মার্চে এ সংখ্যা ছিল ৩১ শতাংশ। মাত্র ২ শতাংশ বলেছেন, ট্রাম্প ফিলিস্তিনপন্থি হয়ে উঠেছেন।
প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আমেরিকান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অত্যধিক সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। ২৩ শতাংশ মনে করছেন সহায়তার পরিমাণ ঠিক আছে, আর ৮ শতাংশ মনে করেন এটি যথেষ্ট নয়।
তবে ফিলিস্তিনি সাধারণ নাগরিকদের জন্য মার্কিন সহায়তার বিষয়ে ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে। মাত্র ৯ শতাংশ বলেছেন সহায়তা বেশি দেওয়া হচ্ছে, ২০ শতাংশ বলেছেন যা দেওয়া হচ্ছে তা সঠিক, আর ৩৫ শতাংশ বলেছেন সহায়তার পরিমাণ খুবই কম।
প্রায় ৮০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক গাজায় খাদ্যসংকট ও ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষের প্রাণহানিতে উদ্বিগ্ন। ৬৯ শতাংশ উদ্বিগ্ন ইসরায়েলি সেনাদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের গাজা ছাড়তে বাধ্য করার বিষয়ে।
একইভাবে, ৮০ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন। আর ৭৩ শতাংশ আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে আবারও হামাস ইসরায়েলকে আক্রমণ করতে পারে।
ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকানদের তুলনায় ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। বিপরীতে রিপাবলিকানরা ভবিষ্যতে হামাসের হামলার আশঙ্কা নিয়ে বেশি চিন্তিত। তবে উভয় দলই সমানভাবে জিম্মি মুক্তির ব্যাপারে উদ্বিগ্ন।
হামাসের প্রতি মার্কিন বিরূপ মনোভাব স্পষ্ট। জরিপে ৮৪ শতাংশ আমেরিকান হামাসকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে অপছন্দ করেন ৬৮ শতাংশ আমেরিকান।
ইসরায়েলি জনগণের প্রতি সহানুভূতি তুলনামূলক বেশি—৫৬ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলিদের পছন্দ করেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে ৫২ শতাংশের। তবে ইসরায়েলিদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গত এক বছরে ৮ শতাংশ কমেছে, আর ২০২২ সালের তুলনায় ১১ শতাংশ কমেছে।
গাজা নিয়ে ট্রাম্পের সব প্রস্তাবে হামাস রাজি হয়নিগাজা নিয়ে ট্রাম্পের সব প্রস্তাবে হামাস রাজি হয়নি
ডেমোক্র্যাট ও ডেমোক্র্যাটঘেঁষা স্বতন্ত্র ভোটারদের ৭০ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। রিপাবলিকান ও রিপাবলিকান-সমর্থকদের মধ্যে এই সংখ্যা মাত্র ৩৭ শতাংশ।
এদিকে, ইসরায়েলি সরকারের প্রতি অনুকূল মনোভাব রয়েছে মাত্র ১৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাটের, কিন্তু রিপাবলিকানদের মধ্যে তা ৫৫ শতাংশ।
এছাড়া, তরুণ আমেরিকানরা (১৮-২৯ বছর) ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিপক্ষে বেশি। তাদের ৪২ শতাংশ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত সহায়তা দিচ্ছে। বিপরীতে ৬৫ বছরের বেশি বয়সি মানুষের মধ্যে এ মতের হার মাত্র ২৪ শতাংশ।
সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা সব মিলিয়ে ক্ষুব্ধ তরুণরা। নিজেদের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে এখন সরাসরি আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে জেন-জি বা ‘জেনারেশন জুমার্স’। এই তরুণরাই জন্ম থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সংস্পর্শে আসা প্রথম প্রজন্ম। উন্নত দেশ হোক বা উন্নয়নশীল সমাজ, জেন-জিরা নানা উপায়ে নাড়িয়ে দিচ্ছে প্রচলিত শাসন, সংস্কৃতি ও চিন্তার কাঠামো। তাদের ভাষা, অভিব্যক্তি আর প্রতিক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই আলাদা।
জেন-জি পরিচয়ে আসলে কারা অন্তর্ভুক্ত? শুধু তুলনামূলক সুবিধাপ্রাপ্ত তরুণরা, নাকি এর ভেতরে আছেন সুবিধাবঞ্চিতরাও? এ প্রজন্ম সত্যিই কি শুধু প্রশংসাযোগ্য কাজ করছে, নাকি তাদের আছে সীমাবদ্ধতাও? এ আয়োজনে রয়েছে এসবের অনুসন্ধান।
বৈশ্বিক তরুণ আন্দোলনের ঢেউ
মরক্কোর বিভিন্ন শহরে টানা কয়েক রাত ধরে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ চলছে। ‘জেন-জি-২১২’ নামে সংগঠিত এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে মূলত ছাত্র ও বেকার তরুণরা। তাদের দাবি স্বাস্থ্যশিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে।
তাদের অভিযোগ, সরকার ২০৩০ বিশ্বকাপের অবকাঠামোতে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেও হাসপাতালগুলোতে যথাযথ সেবা নেই, গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাস্থ্যসুবিধা সীমিত এবং শিক্ষাব্যবস্থা ধুঁকছে। বর্তমানে দেশটির যুব বেকারত্ব ৩৬ শতাংশ; প্রতি পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকের মধ্যে একজনেরও চাকরি নেই।
বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে আগাদির শহরে কয়েকজন গর্ভবতী নারীর মৃত্যুর ঘটনায়, যাদের অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসা জটিলতায় মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। এ পর্যন্ত তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখান্নোচ জানান, সরকার আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে ‘জেন-জি-২১২’ আন্দোলনকারীরা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে যাচ্ছে।
উত্তাল মাদাগাস্কার
হাজার মাইল দূরে মাদাগাস্কারেও চলছে জেন-জি তরুণদের বিক্ষোভ। দেশজুড়ে পানি সংকট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন সরকার পতনের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন।
রাজোয়েলিনা সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা করে বলেন, আমি তরুণদের কষ্ট বোঝতে পারছি।
তবে জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, এ ঘটনায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। সরকার অবশ্য এই সংখ্যাকে বিতর্কিত বলছে।
লাতিন আমেরিকায় তরুণদের বিক্ষোভ
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতেও তরুণদের আন্দোলন জোরদার হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভের সূত্রপাত পেনশন আইনের সংস্কার নিয়ে, যা পরে দুর্নীতি ও অপরাধবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্তে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমে গিয়ে এখন প্রায় তলানিতে- জুলাইয়ে করা এক জরিপে দেখা গেছে, তার জনপ্রিয়তা মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
নেপালে জেন-জি বিপ্লব
জেন-জি তরুণদের অন্যতম আলোচিত আন্দোলন ঘটেছে নেপালে। গত সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সরকার পতনের দিকে গড়ায়। অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন, রাজধানী কাঠমান্ডুর সরকারি ভবন আগুনে পুড়ে যায় এবং প্রধানমন্ত্রীকে সরে দাঁড়াতে হয়।
এই আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও তরুণরা জেগে উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক বার্ট কামার্টস বলেন, এই প্রজন্ম মনে করছে তাদের স্বার্থ কেউ প্রতিনিধিত্ব করছে না। তারা গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রাখে, কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থা তাদের আশা পূরণ করছে না।
এসওএএস সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুবির সিনহা জানান, রুলিং বা ক্ষমতাসীন এলিটদের অগ্রাধিকার তরুণদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে জেন-জি প্রজন্মের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও ধ্বংসাবশেষের অনুভূতি জন্ম নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যৎ যেন বাতিল হয়ে গেছে- এমন এক বাস্তবতায় তরুণরা এখন একে অপরের হাত ধরে সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবাদের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে রাস্তায়
ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। মরক্কোতে ‘জেন-জি-২১২’ নামের একটি ডিসকর্ড সার্ভার কয়েক দিনের মধ্যেই ৩ হাজার সদস্য থেকে বেড়ে ১ লাখ ৩০ হাজারে পৌঁছে যায়।
একইভাবে মাদাগাস্কারে ‘জেন-জি মাদা’ ফেসবুক ও টিকটকের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে শ্রমিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ডিজিটাল সংগঠনগুলো বিকেন্দ্রীকৃত, নেতা ছাড়া পরিচালিত হওয়ায় সরকারগুলোর পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
জেন-জি প্রজন্ম এখন শুধু অনলাইন নয়, বরং বাস্তবেই পরিবর্তনের হাল ধরেছে। এবং সেই পরিবর্তনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে, এক পর্দা থেকে সরাসরি রাস্তায়।
ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রীরা গাজায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা হুমকি দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবে রাজি থাকলে সরকার ভেঙে দিতে পারেন। লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যম আল–মায়েদিনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নেতানিয়াহু সরকারের জোট সঙ্গী কট্টর ডানপন্থি ওৎজমা ইয়েহুদিত দলের নেতা ও ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতমার বেন-গভির সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পরও হামাস টিকে থাকে, তাহলে তার দল সরকারের বাইরে চলে যাবে। তার দল নেতানিয়াহুর জোট ছাড়লে সরকারপতনের সম্ভাবনা আছে।
বেনগভির স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমি এবং ওৎজমা ইয়েহুদিতের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছি, যদি বন্দিদের মুক্তির পরও হামাস নামের সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে যায়, তাহলে আমরা সরকারের অংশ থাকব না।’
তিনি আরও বলেন, তার দল কোনোভাবেই জাতীয় পরাজয়ের অংশ হবে না। এটা ইসরায়েলের জন্য চিরস্থায়ী লজ্জা এবং ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি অবশ্য বলেছেন, তারাও বন্দিদের ঘরে ফেরার পক্ষে। কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘যে সন্ত্রাসী সংগঠন ইসরায়েল রাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে, তাদের আবার মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ আমরা মেনে নিতে পারি না।’
অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর জোট সরকারের আরেক অংশীদার রিলিয়জিয়াস জায়নিস্ট পার্টি–তকুমার নেতা সরকারের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচও নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য গাজায় ইসরায়েলি অভিযান থামানো মোটেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
স্মতরিচ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত গাজায় অভিযান থামিয়ে আলোচনায় যাওয়া গুরুতর ভুল। প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেওয়া, সেটাও যখন গাজা থেকে কোনো হামলা হচ্ছে না—এটা হামাসের জন্য সময়ক্ষেপণের সুযোগ করে দেবে।’
তিনি দাবি করেন, এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে। এর ফলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব বন্দীকে দ্রুত মুক্ত করার দাবি দুর্বল হয়ে যাবে। একই সঙ্গে যুদ্ধের মূল লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা এবং গাজাকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ—সেটিও ব্যাহত হবে।
ইসরায়েলি কারাগারে অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন সুইডিশ পরিবেশ বিষয়ক অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। গাজা অভিমুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি জাহাজ থেকে তাকে আটক করে ইসরাইল। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। তবে থুনবার্গকে যেই সেলে রাখা হয়েছে সেখানে তার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ। তাদের তরফে বলা হয়েছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং পোকামাকড়ে জর্জরিত একটি সেলে তাকে আটকে রেখেছে ইসরায়েল। পাশাপাশি তাকে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি দেয়া হচ্ছে না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান।
এতে বলা হয়, থুনবার্গের সঙ্গে বৈঠক করা এক সুইডিশ কূটনীতিকের পাঠানো ইমেইলে জানানো হয়েছে, তিনি অভিযোগ করেছেন যে তাকে পর্যাপ্ত পানি ও খাবার দেওয়া হয়নি। এতে তিনি ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভুগছেন। থুনবার্গ আরও জানান, বিছানায় পোকার কারণে তার শরীরে চুলকানি শুরু হয়েছে। আটক হওয়া অন্য এক ব্যক্তির দাবি, থুনবার্গকে পতাকা ধরিয়ে ছবি তোলার জন্য জোর করা হয়। যদিও সেই পতাকার পরিচয় জানানো হয়নি। তবে ভিন্ন একটি সূত্র বলছে, থুনবার্গকে ইসরায়েলি পতাকায় চুমো দিতে বাধ্য করা হয় এবং তার গায়ের ওপর দিয়ে পতাকা মুড়ে দেয়া হয়। এছাড়া থুনবার্গকে চুল ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ফ্লোটিলার ওই নৌবহর থেকে আরও ৪৩৭ জন অ্যাক্টিভিস্ট, সংসদ সদস্য ও আইনজীবীকে আটক করেছে ইসরায়েল। নৌবহরটিতে মোট ৪০টি জাহাজ অংশ নেয়। যার সবগুলোকেই আটক করে নিজেদের বন্দরে নিয়ে গেছে ইসরায়েল। আটক হওয়া এসব ব্যক্তির অধিকাংশকেই কেটজিওট নামের উচ্চ নিরাপত্তা বিশিষ্ট একটি কারাগারে রাখা হয়েছে। ফিলিস্তিন থেকে আটক হওয়া বেশির ভাগকেই এই কারাগারে রাখা হয়। এদিকে সুইডিশ কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে, থুনবার্গকে একটি নথিতে সই করাতে চাপ সৃষ্টি করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তবে থুনবার্গ সেই নথিতে সই করতে রাজি হননি।
এসব অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি দূতাবাস। তারা দাবি করেছে, আটককৃত সবাইকে পর্যাপ্ত পানি, খাবার এবং শৌচাগারের সুবিধা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের আইনগত অধিকার পুরোপুরি রক্ষা করা হয়েছে।
অন্যদিকে সুইডিশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আটককৃতদের জন্য জরুরি চিকিৎসা সহায়তার উপর জোর দিয়েছে এবং তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও ত্বরিত করতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথম সংসদীয় ভোট। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে গণপরিষদে এই নির্বাচন শুরু হয়েছে।
সিরিয়ার সুপ্রিম কমিটি ফর পিপলস অ্যাসেম্বলি ইলেকশনের প্রধান মোহাম্মদ আল-আহমাদ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, দামেস্ক এবং কিছু প্রদেশের প্রধান শহরগুলোতে ভোটদান বেড়েছে। দামেস্কের গ্রামীণ অঞ্চল এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে চলেছে। সিরিয়ার জনগণ গণপরিষদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের প্রথম বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করতে পেরে গর্বিত।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে দামেস্কের জাতীয় গ্রন্থাগার ভোটকেন্দ্রে পৌঁছেছেন।
সিরিয়ান আরব নিউজ এজেন্সি সানা অনুসারে, পিপলস অ্যাসেম্বলির ২১০টি আসনের জন্য ১ হাজার ৫৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ১৪ শতাংশ নারী প্রার্থী রয়েছেন।
২১০ আসনের এক-তৃতীয়াংশ আসনের জনপ্রতিনিধিরা সরাসরি প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে নিযুক্ত হবেন। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিটি জেলার মনোনীত 'নির্বাচনী সংস্থা'র মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য জাতীয় গ্রন্থাগার কেন্দ্রে কূটনৈতিক মিশনের পর্যবেক্ষক এবং স্বীকৃত কিছু রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনী কমিটির মুখপাত্র নাওয়ার নাজমা বলেন, প্রাথমিকভাবে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকল যোগ্য ভোটারের সুবিধার্থে তা স্থানীয় বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
তিনি বলেন, সোমবার বা মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সিরিয়ার নেতা আসাদ গত ডিসেম্বরে রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার ফলে প্রায় ২৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বাথ পার্টির শাসনের অবসান ঘটে। জানুয়ারিতে শারার নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠিত হয়।
১৩ বছর ধরে চলা ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পর, ১০ মাস আগে শারার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতাচ্যুত হন দীর্ঘদিনের শাসক আসাদ। ওই ঘটনার পর, প্রথমবারের মতো দেশটিতে গঠিত হতে যাচ্ছে নতুন সরকার।
তবে, পরোক্ষ নির্বাচনের এই প্রক্রিয়াকে অগণতান্ত্রিক মনে করছে ভোটারদের বড় অংশ। গত মার্চ মাসে সিরিয়ায় একটি সাংবিধানিক ঘোষণা জারি করা হয়। এতে আল-শারার নেতৃত্বাধীন সরকার কীভাবে চলছে, তার কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
ঘোষণায় ইসলামি আইনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে নারীর অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমালোচকদের আশঙ্কা, এতে করে এইচটিএস ও অন্যান্য কট্টরপন্থিদের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা চলে যেতে পারে।
ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রীরা গাজায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা হুমকি দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবে রাজি থাকলে সরকার ভেঙে দিতে পারেন। লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যম আল–মায়েদিনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নেতানিয়াহু সরকারের জোট সঙ্গী কট্টর ডানপন্থি ওৎজমা ইয়েহুদিত দলের নেতা ও ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতমার বেন-গভির সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পরও হামাস টিকে থাকে, তাহলে তার দল সরকারের বাইরে চলে যাবে। তার দল নেতানিয়াহুর জোট ছাড়লে সরকারপতনের সম্ভাবনা আছে।
বেনগভির স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমি এবং ওৎজমা ইয়েহুদিতের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছি, যদি বন্দিদের মুক্তির পরও হামাস নামের সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে যায়, তাহলে আমরা সরকারের অংশ থাকব না।’
তিনি আরও বলেন, তার দল কোনোভাবেই জাতীয় পরাজয়ের অংশ হবে না। এটা ইসরায়েলের জন্য চিরস্থায়ী লজ্জা এবং ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি অবশ্য বলেছেন, তারাও বন্দিদের ঘরে ফেরার পক্ষে। কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘যে সন্ত্রাসী সংগঠন ইসরায়েল রাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে, তাদের আবার মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ আমরা মেনে নিতে পারি না।’
অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর জোট সরকারের আরেক অংশীদার রিলিয়জিয়াস জায়নিস্ট পার্টি–তকুমার নেতা সরকারের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচও নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য গাজায় ইসরায়েলি অভিযান থামানো মোটেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
স্মতরিচ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত গাজায় অভিযান থামিয়ে আলোচনায় যাওয়া গুরুতর ভুল। প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেওয়া, সেটাও যখন গাজা থেকে কোনো হামলা হচ্ছে না—এটা হামাসের জন্য সময়ক্ষেপণের সুযোগ করে দেবে।’
তিনি দাবি করেন, এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে। এর ফলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব বন্দীকে দ্রুত মুক্ত করার দাবি দুর্বল হয়ে যাবে। একই সঙ্গে যুদ্ধের মূল লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা এবং গাজাকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ—সেটিও ব্যাহত হবে।
ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। রোববার ভোরে এক্সে (পূর্বে টুইটার) দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, এবার ভারত নিজ দেশের যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষের নিচেই সমাধিস্থ হবে, ইনশাআল্লাহ।
আসিফ বলেন, ভারতের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সাম্প্রতিক মন্তব্য তাদের ‘হারানো বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারের ব্যর্থ প্রচেষ্টা। তার ভাষায়, এই ধরনের বিবৃতি ভারতের নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে তীব্র চাপের ইঙ্গিত দেয়।
তিনি লিখেছেন, এমন এক সুস্পষ্ট ৬-০ পরাজয়ের পর যদি তারা আবারও চেষ্টা করে, তাহলে পাকিস্তানের স্কোর আরও ভালো হবে। আসিফ দাবি করেন, ওই পরাজয়ের পর ভারতের জনমত এখন ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে চলে গেছে, যা দেশটির নেতাদের বক্তব্যেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তান আল্লাহর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি রাষ্ট্র, আর আমাদের রক্ষাকারীরা আল্লাহর সৈনিক। এইবার ভারত, ইনশাআল্লাহ, নিজেদের ভূপাতিত যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষের নিচেই সমাধিস্থ হবে। আল্লাহু আকবার।
এর আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্রও ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একই ধরনের মন্তব্যের জবাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
ভারতের যুদ্ধোত্তেজনামূলক বক্তব্যের জবাবে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী সতর্ক করে বলেছে, ভারতের জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ‘উসকানিমূলক ও যুদ্ধবাজ মন্তব্য’ দক্ষিণ এশিয়ায় ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে বলেছে, এসব মন্তব্য আসলে আগ্রাসনের অজুহাত তৈরি করার নতুন প্রচেষ্টা, যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করবে।
এক দিন আগে ভারতের বিমানবাহিনীর প্রধান অমরপ্রীত সিং দাবি করেন, চলতি বছরের মে মাসে দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের সময় ভারত পাকিস্তানের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। সেগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ ও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ মডেলের যুদ্ধবিমান রয়েছে।
এ বিষয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের তীব্র সমালোচনা করে জানায়, ভারত বহু বছর ধরে নিজেকে ‘ভুক্তভোগী’ হিসেবে তুলে ধরছে। অথচ বাস্তবে তারাই দক্ষিণ এশিয়া ও এর বাইরেও সহিংসতা উসকে দিচ্ছে এবং সন্ত্রাসবাদে মদদ দিচ্ছে। আইএসপিআর জানায়, এই ভুয়া বর্ণনা এখন পুরোপুরি উন্মোচিত হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন ভারতকেই ‘আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের আসল মুখ’ এবং ‘আঞ্চলিক অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দু’ হিসেবে চেনে।
আইএসপিআর স্মরণ করিয়ে দেয়, চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারতের আগ্রাসনই দুই পরমাণু শক্তিধর দেশকে বড় ধরনের যুদ্ধে টেনে নিয়েছিল। ভারতীয় নেতৃত্ব এখনো তাদের যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ ও পাকিস্তানের পাল্টা হামলার ভয়াবহতা ভুলে গেছে বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও তিন বাহিনীর প্রধানদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গে আইএসপিআর সতর্ক করে জানিয়েছে, যে কোনো নতুন সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ায় বিপর্যয়কর ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, যদি ভারত কোনো আগ্রাসন শুরু করে, পাকিস্তান কখনো পিছু হটবে না; বরং দৃঢ় প্রতিশ্রুতিতে দ্রুত, কঠোর ও বিধ্বংসী জবাব দেবে।
আইএসপিআর সতর্ক করে বলেছে, যারা নতুন ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ তৈরি করতে চায়, তাদের জানা উচিত- পাকিস্তানও তার জবাবে এক নতুন স্বাভাবিকতা তৈরি করেছে, যা হবে দ্রুত, নির্ভুল ও বিধ্বংসী।
ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হুমকির প্রতিক্রিয়ায় আইএসপিআর বলেছে, ভারতকে জানতে হবে, যদি এমন পরিস্থিতি আসে, তবে এই মুছে ফেলা হবে পারস্পরিক।
এদিকে, পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্রগুলো ভারতের এই হুমকিকে ‘ফাঁকা বুলি’ বলে অভিহিত করেছে ও জানিয়েছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশ রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা ঘটে। এতে ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ভারত অভিযোগ করে, এ হামলায় পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের সহায়তা করেছে। তবে পাকিস্তান অভিযোগ নাকচ করে ঘটনাটির আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানায়।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে গত ৬ মে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে (আজাদ কাশ্মির) হঠাৎ বিমান হামলা চালায় ভারত। এর নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারতের দাবি, আজাদ কাশ্মীরে থাকা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালায় তারা।
ভারতের হামলার জবাবে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনিয়ানুন মারসুস’ চালায়। কয়েকদিন ধরে চলা এ সংঘাতে দুই পক্ষই যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করলে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয়। অবশেষে ১০ মে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
সংঘাত চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনী দাবি করে, ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’র জবাবে গত ৭ মে রাতে তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে তিনটি ছিল ফ্রান্সের তৈরি রাফাল, একটি রাশিয়ার তৈরি মিগ-২৯ ও একটি এসইউ-৩০।
সংঘাত শেষে পাকিস্তান আবারও দাবি করে, তারা ভারতের মোট ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে ফ্রান্সের রাফালও রয়েছে। কিছু ক্ষতির কথা স্বীকার করলেও ছয়টি বিমান হারানোর দাবি অস্বীকার করেছে ভারত।
মন্তব্য