অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ২৪ ঘণ্টায় ১৭০ লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের যুদ্ধবিমান গাজা উপত্যকায় ১৭০টি ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা চালিয়েছে এবং এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তিনটি ডিভিশনের সৈন্য গাজা সিটি ও এর উত্তরাঞ্চলে স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তারা কয়েকজন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা এবং একটি অস্ত্র গুদাম ধ্বংসের দাবি করেছে। তবে এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা হাজির করেনি।
বিশ্বনেতাদের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন আরও ৮৫ জন। এর মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থী ক্যাম্পে আল-আহলি স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুতদের ওপর হামলায় ১২ জন প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে ছিলেন সাত নারী ও দুই শিশু।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাসের দুই যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। তবে হতাহতের তথ্য তাদের তথ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এরই মধ্যে হামাসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শহরের কেন্দ্রে অগ্রসর হওয়া অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনীর ট্যাংক ও সৈন্যরা।
এখনো হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত করাই স্থল অভিযানের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ‘চূড়ান্ত পরাজয়’ নিশ্চিত করাও এই বাহিনীর লক্ষ্য বলে তারা জানিয়েছে।
গাজার সবচেয়ে বড় শহর থেকে এখন পর্যন্ত লাখ লাখ বাসিন্দা পালিয়ে গেছে। যেখানে গত মাসেই জাতিসংঘের সমর্থিত একটি সংস্থা দুর্ভিক্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কিন্তু আরও লাখ লাখ মানুষ সেখানে এখনো ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিতে রয়েছে। স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা সেখানে ভেঙে পড়েছে।
এদিকে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে আরব মুসলিম নেতাদের এক দলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘মধ্যপ্রাচ্য ও গাজায় শান্তির জন্য ২১ দফা পরিকল্পনা’ উপস্থাপন করেছেন।
এই পরিকল্পনা সম্পর্কে উইটকফ বিস্তারিত আর কিছু জানাননি। তবে তিনি বলেছেন, এটা ইসরায়েলের উদ্বেগের পাশাপাশি এই অঞ্চলের সব প্রতিবেশীর দুশ্চিন্তাকে তুলে ধরেছে। আমরা আশাবাদী, এমনকি আমি আত্মবিশ্বাসী হয়েও বলতে পারি, আগামী দিনগুলোতে আমরা যেকোনো ধরনের যুগান্তকারী সাফল্য ঘোষণা করতে পারব।
গাজা সিটির হাসপাতালগুলো গত বুধবার বিকেলে জানিয়েছে, তারা মধ্যরাত থেকে ইসরায়েলি হামলা ও গুলিবর্ষণে নিহত ৬০ জনেরও বেশি মানুষের মরদেহ পেয়েছে।
হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, ফাইরাস মার্কেটের কাছে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত একটি ওয়্যারহাউসে ইসরায়েলি হামলায় এক তৃতীয়াংশ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ছয়জন নারী এবং নয়জন শিশু রয়েছে।
বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের গাজা সিটিতে স্বাধীনভাবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই এসব সংবাদ ভেরিফাই বা যাচাই করা কঠিন। কিন্তু ঘটনাস্থলের একটি ভিডিও ফুটেজে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে কম্বলে মোড়ানো একটি মরদেহ সরিয়ে নিতে দেখা গেছে লোকজনকে।
নিহতদের মধ্যে মোহাম্মদ হাজ্জাজের আত্মীয়ও রয়েছে। তিনি এএফপি নিউজকে বলেছেন, যখন লোকজন ঘুমাচ্ছিল তখন ওই স্থানে ‘ব্যাপক বোমা হামলা’ চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এসে শিশু ও নারীদের ছিন্নভিন্ন অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। এটি এক করুণ দৃশ্য ছিল। আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে, আল আহলি হাসপাতালের বাইরে মেঝেতে সাদা কাফন এবং প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা ছয়টি মরদেহের পাশে বসে মানুষ শোক পালন করছে।
তালা আল-দীব নামে এক নারী জানিয়েছেন, মরদেহগুলোর মধ্যে তার বোনের স্বামী, দুই সন্তান এবং বোনের শ্বশুরসহ চারজনের মরদেহ রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসরায়েলি ডিফেন্স বাহিনীর মন্তব্য জানতে চাইলে তারা বলেছে, দুই হামাস সন্ত্রাসীকে লক্ষ্য করে হামলা করেছে তারা।
গাজা সিটির অন্যান্য স্থানের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম তেল আল-হাওয়া এবং উত্তর-পশ্চিম রিমাল পাড়ায় ইসরায়েলি ট্যাংক দেখতে পেয়েছেন তারা।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, তাল আল-হাওয়ার আল-কুদস হাসপাতালের বাইরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বাহন মোতায়েন করা হয়েছে এবং ইসরায়েলি গুলিবর্ষণে এর অক্সিজেন স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অকেজো হয়ে গেছে।
আইডিএফ গত বুধবার জানিয়েছে, হাসপাতালের দিকে সরাসরি কোনো হামলা চালানো হয়নি। এই ঘটনার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে তারা।
গাজায় যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা উপস্থাপন করলেন ট্রাম্প
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১-দফা একটি নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন।
গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে আরব ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠকে এই পরিকল্পনাটি নিয়ে আলোচনা করা হয়। গত বুধবার সিএনএনকে দেওয়া তথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এই খবর জানিয়েছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে এই বৈঠকে তিনিসহ আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
উইটকফ বলেন, ‘আমরা বেশ ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ২১-দফা পরিকল্পনাটি আরব নেতাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন গাজায় সহিংসতা বন্ধ হবে, তেমনি ইসরায়েল এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্বেগও দূর হবে।’
তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই বিষয়ে কোনো ধরনের অগ্রগতির ঘোষণা আসবে। ট্রাম্পের পরিকল্পনার কয়েকটি মূল বিষয় হলো: গাজায় আটক সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা, গাজার প্রশাসনকে হামাসের প্রভাবমুক্ত করা এবং পর্যায়ক্রমে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুদিন ধরেই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার আশা করছেন। তবে নোবেল বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বছর তার সেই প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ট্রাম্পের কার্যকলাপ ও নীতিকে তারা আন্তর্জাতিক শান্তির আদর্শের পরিপন্থি বলে মনে করছেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কারের ইতিহাসবিদ আসলে স্বেন বলেন, ট্রাম্পের এই পুরস্কার পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। গাজায় যুদ্ধের সময় তার ইসরায়েলপ্রীতি এবং ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা- দুটোই তাকে বাদ দেওয়ার বড় কারণ।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নোবেল কমিটির একজন সদস্য বলেন, পুরস্কার নির্বাচন প্রক্রিয়া চাপমুক্ত রাখতে চান তারা। বাইরের লবিং, বিশেষত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো প্রার্থীর পক্ষ থেকে করা চাপ, বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে।
পিচ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলো-এর পরিচালক নিনা গ্র্যাগার বলেন, ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছেন, তিনি বন্ধু ও মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন। এগুলো কোনোভাবেই শান্তির প্রসারে সহায়ক নয়।
তিনি আরও বলেন, একজন শান্তিপ্রেমী নেতার থেকে যা আশা করা হয়, ট্রাম্প তার বিপরীত কাজ করছেন।
এ বছর শান্তি পুরস্কার পেতে পারেন এমন সংস্থাগুলোর মধ্যে আছে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনসিএইচআর), শিশু সংস্থা ইউনিসেফ, রেড ক্রস, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস, সুদানের এমার্জেন্সি রেসপন্স রুম নামের একটি স্থানীয় গ্রাসরুট সংগঠন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকেই এমন পরিবেশে মানবিক কাজ করছেন, যা ট্রাম্প প্রশাসনের তহবিল কাটছাঁটের কারণে আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। তাই এ ধরনের সংস্থাগুলোর ভূমিকাই নোবেল কমিটির চোখে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছা অনুযায়ী, এই পুরস্কার সেই ব্যক্তিকে দেওয়া হয়, যিনি জাতিগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তি প্রচারে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নীতিগত অবস্থান ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তার ভূমিকাই তাকে সেই মানদণ্ড থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
ইয়েমেনের ড্রোন হামলায় ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় পর্যটন নগরী ইলাতে অন্তত ২২ জন আহত হয়েছে।
বুধবার জানিয়েছে দেশটির জরুরি সেবা সংস্থার বরাত দিয়ে জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। ইহুদি নববর্ষ রোশ হাশানাহের দ্বিতীয় দিনে হামলাটি চালানো হলো।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, ড্রোনটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে লোহিত সাগরের উপকূলীয় শহর ইলাতে পতিত হয়। আহতদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা গুরুতর।
মাগেন ডেভিড অ্যাডম জরুরি সেবা জানিয়েছে, তাদের দল ২২ জনকে চিকিৎসা দিয়েছে। এর মধ্যে ২৬ ও ৬০ বছর বয়সী দুই ব্যক্তি গুরুতর আহত, একজন মাঝারি ও অন্যান্যরা সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত।
পুলিশ জানায়, ড্রোনটি ইলাত শহরের কেন্দ্রে আঘাত করে, যা পর্যটক সমাগমের স্থান হিসেবে পরিচিত। এতে এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
হুথি সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি পরে এক বিবৃতিতে জানান, তাদের বাহিনী দক্ষিণ ইসরাইলের দুটি স্থানে দুইটি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
ইলাতের মেয়র ইলি ল্যাঙ্ক্রি সরকারের প্রতি হুথিদের বিরুদ্ধে কঠোর পাল্টা হামলার আহ্বান জানান।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, হামলার আগে ইলাতজুড়ে বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। শহরটি মিশর ও জর্ডানের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত।
ইসরাইল ইতোমধ্যেই ইয়েমেনে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। গত মাসে হুথি সরকারের প্রধানসহ আরও ১১ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে।
হুথিরা ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলের দিকে বারবার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে দাবি করছে যে তারা ফিলিস্তিনি মিত্র হামাসকে সমর্থন করছে।
ইউক্রেন সংঘাতের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘খুব স্পষ্ট বার্তাকে’ বৃহস্পতিবার স্বাগত জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।
ট্রাম্প তার অবস্থান থেকে সরে এসে কিয়েভ রাশিয়ার দখলকৃত সমস্ত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে পারে বলে ঘোষণা দেওয়ার পর মাখোঁ তাকে স্বাগত জানালেন।
নিউ ইয়র্ক থেকে ফ্রান্স ২৪ ও রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএফআই)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, এই বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান পরিবর্তন ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ এবং এটি একটি ‘নতুন দৃষ্টিভঙ্গি’ প্রদান করেছে, কারণ কিয়েভের জন্য ‘মার্কিন সরঞ্জাম ও সমর্থন প্রয়োজন।’
মাখোঁ বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এটি একটি খুব স্পষ্ট বার্তা যে রাশিয়া নিঃসন্দেহে দুর্বল, অনেকের যেমন বলছে তার চেয়েও ভঙ্গুর।’
নিউইয়র্কে বার্ষিক জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিচ্ছেন মাখোঁ। তিনি সেখান থেকে জানান, তিনি ‘ইউক্রেনকে (রাশিয়াকে) আরও বেশি প্রতিরোধ করতে এবং এমনকি (দখলকৃত) অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম করবেন।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করার পর ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ইইউর সহায়তায় ‘পুরো ইউক্রেনকে তার আসল রূপে ফিরিয়ে আনার’ জন্য লড়াই করা ও জয় করার অবস্থানে রয়েছে ইউক্রেন।
২০১৪ সালে একটি অভিযানের পর ক্রিমিয়ার ইউক্রেনীয় কৃষ্ণ সাগর উপদ্বীপকে নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে রাশিয়া।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কোর পূর্ণ মাত্রার হামলার পর এখন ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়া।
ন্যাটো সদস্যরাষ্ট্র পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় ড্রোন হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করার পর, মাখোঁ বলেন, মস্কোর ‘নতুন উস্কানির ক্ষেত্রে জোটের প্রতিক্রিয়া আরো ‘এক ধাপ উপরে যেতে হবে।’
তিনি বিস্তারিত উল্লেখ না করে আরো বলেন, ‘এর অর্থ হল, কেউ যদি আপনাকে আবার উস্কানি দেয়, তাহলে আপনাকে আরও কিছুটা কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।’
ফিলিস্তিনে গাজার প্রধান শহর গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর জোরদার স্থল হামলার মধ্যেই হামাসের পাল্টা হামলায় এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, বুধবার হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্যভেদী (স্নাইপার) হামলায় ওই ইসরায়েলি সেনা নিহত হন।
নিহত সেনার নাম চালাচেউ শিমন ডামালাশ (২১) । তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নাহাল ব্রিগেডের ৯৩২তম ব্যাটেলিয়নের স্টাফ সার্জেন্ট ছিলেন। তার বাড়ি ছিল ইসরায়েলের বিরশেবায়।
প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে আইডিএফ জানিয়েছে, একটি সেনা শিবিরের গার্ড পোস্টে দায়িত্ব পালন করাকালে ডামালাশ লক্ষ্যভেদীর গুলিতে নিহত হন।
গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অভিযান শুরু করার পর থেকে সেখানে এই নিয়ে তাদের দুইজন সেনা নিহত হল।
একই দিন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর এলাতে ইয়েমেনের হুতিরা ড্রোন হামলা চালায়। বিরশেবার সোরোকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার জানিয়েছে, এই হামলায় গুরুতর আহত ২৬ বছর বয়সী এক পুরুষ এখন হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন।
এই ড্রোন হামলায় ২৪ ও ৬৫ বছর বয়সী আরও দুই ইসরায়েলি পুরুষ আহত হয়েছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ গত মঙ্গলবার বলেছেন, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সত্যিই নোবেল শান্তি পুরস্কার জিততে চান, তবে তাকে গাজার যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।
নিউইয়র্ক থেকে ফ্রান্সের বিএফএম টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, শুধু ট্রাম্পেরই ক্ষমতা আছে ইসরায়েলকে যুদ্ধ শেষ করার জন্য চাপ দেওয়ার।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘এ বিষয়ে কিছু করার ক্ষমতা একজনের আছে। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।’
মাখোঁ আরও বলেন, ‘আরেকটি কারণে তিনি (ট্রাম্প) আমাদের চেয়ে বেশি করতে পারেন। তা হলো, আমরা এমন কোনো অস্ত্র সরবরাহ করি না, যা গাজায় যুদ্ধ চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। আমরা এমন কোনো সামগ্রী সরবরাহ করি না, যা গাজায় যুদ্ধ চালানোর সুযোগ করে দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা করে।’
এদিন ট্রাম্প জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় কড়া ভাষায় বক্তৃতা দেন। তিনি পশ্চিমা মিত্রদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, এটি হামাসের জন্য পুরস্কার হবে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের অবিলম্বে গাজার যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। আমাদের অবিলম্বে শান্তি আলোচনা শুরু করতে হবে।’
ট্রাম্পের বক্তৃতা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মাখোঁ বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টকে দেখি, যিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছেন। আজ সকালে পডিয়াম থেকে তিনি পুনরায় বলেছেন, ‘আমি শান্তি চাই। আমি সাতটি সংঘাত সমাধান করেছি।’ তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার চান। নোবেল শান্তি পুরস্কার শুধু তখনই সম্ভব, যদি আপনি এই সংঘাত (গাজা যুদ্ধ) বন্ধ করেন।’
কাম্বোডিয়া, ইসরায়েল, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ ট্রাম্পকে এ বছর নোবেল পুরস্কার দেওয়ার জন্য মনোনয়ন দিয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এ পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য, যা তার চারজন পূর্বসূরি প্রেসিডেন্টকে দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি বলেছেন, ‘যারা জাতিসংঘে উপস্থিত ছিলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তির জন্য একাই তাদের সবার চেয়ে বেশি কাজ করেছেন।’
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘শুধু এই প্রেসিডেন্টই বিশ্বে স্থিতিশীলতার জন্য এত কিছু অর্জন করতে পেরেছেন। কারণ, তিনি কার্যত যুক্তরাষ্ট্রকে আবার শক্তিশালী করেছেন।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের বিতর্ক পর্বে ভাষণ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভাষণে জাতিসংঘের কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। দাবি করেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ অকার্যকর।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন চলছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে বিতর্ক-পর্ব। এই পর্বের শুরুতে ভাষণ দেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস। এরপর বক্তব্য রাখেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের পর পোডিয়ামে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের অসাধারণ সম্ভাবনা রয়েছে। আমি সবসময় বলেছি - এর এত অসাধারণ, অসাধারণ সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এটি তার কাছাকাছিও পৌঁছাচ্ছে না।’
ভাষণে ট্রাম্প নিজেই নিজের প্রশংসা করে বলেন, বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটা সংঘাত থামানোয় তিনি ভূমিকা রেখেছেন। তার দাবি, তিনি সাতটি যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছেন। যদিও এই মধ্যস্থতার বেশ কয়েকটিতে ওয়াশিংটনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ ‘অকার্যকর’ দাবি করে ট্রাম্প বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, এসব যুদ্ধ থামানোয় তিনি নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাওয়ার যোগ্য। তার কথায়, ‘এটা খুবই খারাপ যে জাতিসংঘের পরিবর্তে আমাকে এই কাজগুলো করতে হয়েছে এবং দুঃখের বিষয়, সমস্ত ক্ষেত্রেই জাতিসংঘ এর কোনোটিতেই সাহায্য করার চেষ্টা করেনি।’
ট্রাম্প তার ভাষণের শুরুতেই অভিযোগ করেন, জাতিসংঘের সদর দপ্তরে তিনি একটি ভাঙা লিফট পেয়েছেন। এরপর ভাষণ দেয়ার সময় টেলিপ্রম্পটারকে অকার্যকর দেখতে পান। তার কথায়, ‘জাতিসংঘ থেকে আমি এই দুটি জিনিস পেয়েছি, একটি খারাপ এসক্যালেটর এবং একটি খারাপ টেলিপ্রম্পটার।’
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হামাসকে পুরস্কৃত করার শামিল বলে উল্লেখ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, সংঘাতকে আরও উৎসাহিত করতে জাতিসংঘের কিছু সদস্য একতরফাভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করছে। তা হবে হামাসের সন্ত্রাসীদের নৃশংসতার জন্য অনেক বড় পুরস্কার হবে। ৭ অক্টোবরের ঘটনাসহ ভয়াবহ নৃশংসতাগুলোর জন্য হামাসের পুরস্কার।
সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আসার একাধিক দেশের সরকারপ্রধান ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্য দিয়ে গাজা যুদ্ধ শুরুর প্রায় দুই বছর পর এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে জাতিসংঘ।
সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালামানকে সঙ্গে এক বৈঠকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ঘোষণা দেন, ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। তিনি বলেন, ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা ধরে রাখতে আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করতে হবে।’
একই বৈঠকে ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, মোনাকো ও বেলজিয়ামও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়। এর আগে এই সপ্তাহে কানাডা, ব্রিটেন, পর্তুগাল ও অস্ট্রেলিয়াও একই ঘোষণা দিয়েছে।
জাতিসংঘের ভাষণে একের পর এক দেশ কর্তৃক ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপকে ‘ভুল বার্তা’ আখ্যা ট্রাম্প। তার মতে, এমন পদক্ষেপ কেবল সহিংসতাকে উৎসাহিত করবে এবং শান্তি প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ‘প্রধান অর্থদাতা’ ভারত ও চীন। কারণ তারা রাশিয়ার তেল ক্রয় অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি মস্কো থেকে জ্বালানি আমদানি কমাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য ন্যাটো দেশগুলিরও সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, ‘চীন ও ভারত রাশিয়ার তেল ক্রয় অব্যাহত রেখে চলমান যুদ্ধের প্রধান অর্থদাতা। এই বিষয়টি অমার্জনীয়। পাশাপাশি ন্যাটো দেশগুলিও রাশিয়ান জ্বালানি এবং পণ্য আমাদানি খুব বেশি বন্ধ করেনি। আমি প্রায় দুই সপ্তাহ আগে জানতে পেরেছিলাম এবং আমি খুশি ছিলাম না। তারা নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অর্থায়ন করছে। কেউ কখনও এই কথা শুনেছে?’
তিনি বলেন, ‘যদি রাশিয়া শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রস্তুত না হয়, তাহলে ওয়াশিংটরে কঠোর শুল্ক আরোপের জন্য প্রস্তুত হও। আমার বিশ্বাস, এতে খুব দ্রুত রক্তপাত বন্ধ হবে। পাশাপাশি ইউরোপীয় দেশগুলিকে এই ধরনের পদক্ষেপ কার্যকর করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এক বছর আগে, আমাদের দেশ গভীর সংকটে ছিল। কিন্তু আজ আমরা সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। আমেরিকা সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি, সীমান্ত, সামরিক বাহিনী, বন্ধুত্ব এবং চেতনায় আশীর্বাদপ্রাপ্ত। আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কর কর্তন চালু করেছে, যখন শেয়ার বাজার শক্তিশালীভাবে কর্মক্ষম ছিল এবং মজুরি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। গত চার মাস ধরে, আমাদের দেশে অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশের সংখ্যা শূন্য। আমাদের বার্তা খুবই সহজ, আপনি যদি অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন, তাহলে আপনাকে জেলে যেতে হবে।’
বিশ্বব্যাপী সংঘাতের কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, তিনি ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে সাতটি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন। তিনি ইসরায়েল ও ইরান, পাকিস্তান ও ভারত, রুয়ান্ডা ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান, মিশর ও ইথিওপিয়া এবং সার্বিয়া ও কসোভোর মধ্যে সংঘাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, অন্য কোনও রাষ্ট্রপতি এর কাছাকাছি কিছু করেননি।
মন্তব্য