অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ২৪ ঘণ্টায় ১৭০ লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের যুদ্ধবিমান গাজা উপত্যকায় ১৭০টি ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা চালিয়েছে এবং এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তিনটি ডিভিশনের সৈন্য গাজা সিটি ও এর উত্তরাঞ্চলে স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তারা কয়েকজন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা এবং একটি অস্ত্র গুদাম ধ্বংসের দাবি করেছে। তবে এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা হাজির করেনি।
বিশ্বনেতাদের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন আরও ৮৫ জন। এর মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থী ক্যাম্পে আল-আহলি স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুতদের ওপর হামলায় ১২ জন প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে ছিলেন সাত নারী ও দুই শিশু।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাসের দুই যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। তবে হতাহতের তথ্য তাদের তথ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এরই মধ্যে হামাসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শহরের কেন্দ্রে অগ্রসর হওয়া অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনীর ট্যাংক ও সৈন্যরা।
এখনো হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত করাই স্থল অভিযানের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ‘চূড়ান্ত পরাজয়’ নিশ্চিত করাও এই বাহিনীর লক্ষ্য বলে তারা জানিয়েছে।
গাজার সবচেয়ে বড় শহর থেকে এখন পর্যন্ত লাখ লাখ বাসিন্দা পালিয়ে গেছে। যেখানে গত মাসেই জাতিসংঘের সমর্থিত একটি সংস্থা দুর্ভিক্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কিন্তু আরও লাখ লাখ মানুষ সেখানে এখনো ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিতে রয়েছে। স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা সেখানে ভেঙে পড়েছে।
এদিকে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে আরব মুসলিম নেতাদের এক দলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘মধ্যপ্রাচ্য ও গাজায় শান্তির জন্য ২১ দফা পরিকল্পনা’ উপস্থাপন করেছেন।
এই পরিকল্পনা সম্পর্কে উইটকফ বিস্তারিত আর কিছু জানাননি। তবে তিনি বলেছেন, এটা ইসরায়েলের উদ্বেগের পাশাপাশি এই অঞ্চলের সব প্রতিবেশীর দুশ্চিন্তাকে তুলে ধরেছে। আমরা আশাবাদী, এমনকি আমি আত্মবিশ্বাসী হয়েও বলতে পারি, আগামী দিনগুলোতে আমরা যেকোনো ধরনের যুগান্তকারী সাফল্য ঘোষণা করতে পারব।
গাজা সিটির হাসপাতালগুলো গত বুধবার বিকেলে জানিয়েছে, তারা মধ্যরাত থেকে ইসরায়েলি হামলা ও গুলিবর্ষণে নিহত ৬০ জনেরও বেশি মানুষের মরদেহ পেয়েছে।
হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, ফাইরাস মার্কেটের কাছে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত একটি ওয়্যারহাউসে ইসরায়েলি হামলায় এক তৃতীয়াংশ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ছয়জন নারী এবং নয়জন শিশু রয়েছে।
বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের গাজা সিটিতে স্বাধীনভাবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই এসব সংবাদ ভেরিফাই বা যাচাই করা কঠিন। কিন্তু ঘটনাস্থলের একটি ভিডিও ফুটেজে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে কম্বলে মোড়ানো একটি মরদেহ সরিয়ে নিতে দেখা গেছে লোকজনকে।
নিহতদের মধ্যে মোহাম্মদ হাজ্জাজের আত্মীয়ও রয়েছে। তিনি এএফপি নিউজকে বলেছেন, যখন লোকজন ঘুমাচ্ছিল তখন ওই স্থানে ‘ব্যাপক বোমা হামলা’ চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এসে শিশু ও নারীদের ছিন্নভিন্ন অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। এটি এক করুণ দৃশ্য ছিল। আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে, আল আহলি হাসপাতালের বাইরে মেঝেতে সাদা কাফন এবং প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা ছয়টি মরদেহের পাশে বসে মানুষ শোক পালন করছে।
তালা আল-দীব নামে এক নারী জানিয়েছেন, মরদেহগুলোর মধ্যে তার বোনের স্বামী, দুই সন্তান এবং বোনের শ্বশুরসহ চারজনের মরদেহ রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসরায়েলি ডিফেন্স বাহিনীর মন্তব্য জানতে চাইলে তারা বলেছে, দুই হামাস সন্ত্রাসীকে লক্ষ্য করে হামলা করেছে তারা।
গাজা সিটির অন্যান্য স্থানের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম তেল আল-হাওয়া এবং উত্তর-পশ্চিম রিমাল পাড়ায় ইসরায়েলি ট্যাংক দেখতে পেয়েছেন তারা।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, তাল আল-হাওয়ার আল-কুদস হাসপাতালের বাইরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বাহন মোতায়েন করা হয়েছে এবং ইসরায়েলি গুলিবর্ষণে এর অক্সিজেন স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অকেজো হয়ে গেছে।
আইডিএফ গত বুধবার জানিয়েছে, হাসপাতালের দিকে সরাসরি কোনো হামলা চালানো হয়নি। এই ঘটনার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে তারা।
গাজায় যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা উপস্থাপন করলেন ট্রাম্প
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১-দফা একটি নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন।
গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে আরব ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠকে এই পরিকল্পনাটি নিয়ে আলোচনা করা হয়। গত বুধবার সিএনএনকে দেওয়া তথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এই খবর জানিয়েছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে এই বৈঠকে তিনিসহ আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
উইটকফ বলেন, ‘আমরা বেশ ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ২১-দফা পরিকল্পনাটি আরব নেতাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন গাজায় সহিংসতা বন্ধ হবে, তেমনি ইসরায়েল এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্বেগও দূর হবে।’
তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই বিষয়ে কোনো ধরনের অগ্রগতির ঘোষণা আসবে। ট্রাম্পের পরিকল্পনার কয়েকটি মূল বিষয় হলো: গাজায় আটক সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা, গাজার প্রশাসনকে হামাসের প্রভাবমুক্ত করা এবং পর্যায়ক্রমে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করা।
ভারতের লাদাখে রাজ্য মর্যাদা এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিকে ঘিরে চলমান আন্দোলন সহিংস রূপ নিয়েছে। গত বুধবার লেহ শহরে ব্যাপক বিক্ষোভে অন্তত চারজন নিহত এবং অন্তত ৮০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। বিক্ষোভ-আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠায় লেহ শহরে কারফিউ জারি করেছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।
লাদাখে এখন হাড় কাঁপানো শীত। হিমালয়ের সাড়ে ১১ হাজার ফিট উচ্চতায় ছিমছাম ছোট শহরে এখন বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে। আলাদা রাজ্যের মর্যাদা ও বিশেষ সংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে তরুণরা ফেটে পড়েছেন বিক্ষোভে। আগুন দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির স্থানীয় কার্যালয়ে।
ভারতের হিমালয় অঞ্চলের লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা, স্থানীয় বাসিন্দাদের চাকরির কোটা, লেহ ও কার্গিলকে নিয়ে একটি লোকসভা আসনের দাবিতে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে অনশন করে আসছিলেন পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুকসহ ১৫ জন।
একসময় তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আন্দোলনের ডাক দেয় লাদাখ অ্যাপেক্স বডি(এলএবির) যুব শাখা। পরে গত বুধবার এনডিএস মেমোরিয়াল গ্রাউন্ডে জমায়েত হয় কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী।
এরপর মিছিল নিয়ে তারা লেহ শহর প্রদক্ষিণ করার সময় বিজেপি সদরদপ্তর ও হিল কাউন্সিলের অফিসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপে অবনতি হয় পরিস্থিতির।
তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করলে জনতা সহিংস হয়ে ওঠে। এরপর দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত ও ৮০ জনের বেশি আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৪০ জন পুলিশ সদস্য।
এরপরই অনশনভঙ্গ করে বিবৃতি দেন সোনম ওয়াংচুক।
তিনি বলেন, ‘আমি সব যুবককে সহিংসতা থামিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা লাদাখ বা দেশে অস্থিরতা চাই না।’
তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিক্ষোভের দায় কংগ্রেসের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে শাসক দল বিজেপি।
বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য এক্সে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করেন, লেহ শহরের আপার ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর ফুনছগ স্তানজিন ছেপাগকে বিক্ষোভকারীদের উসকানি দিতে দেখা গেছে।
এরপর বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সাম্বিত পাত্রা দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে আরও একধাপ এগিয়ে অভিযোগ তুললেন, লাদাখে জেন জিয়ের নামে যে আন্দোলনের ছবি দেখানো হচ্ছে, তা আসলে কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র।’
পাত্রার দাবি, ওই কাউন্সিলরকে অস্ত্র হাতে বিজেপি কার্যালয়ের দিকে মিছিল করতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘এটা আসলে রাহুল গান্ধীর নকশা, জর্জ সোরোসের সঙ্গে মিলে দেশকে অশান্ত করার চক্রান্ত।’
অন্যদিকে, এই অভিযোগ একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুক। তিনি বলেন, ‘লাদাখে কংগ্রেসের এত প্রভাব নেই যে তারা পাঁচ হাজার তরুণকে রাস্তায় নামাতে পারে।’ তার দাবি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ফল না মেলায় তরুণদের হতাশাই সহিংসতার বড় কারণ।
ওয়াংচুক আরও জানান, জেন জি প্রজন্ম এতদিন বিক্ষোভে সেভাবে অংশ নেয়নি। তবে গত বুধবার একসঙ্গে ২ থেকে ৫ হাজার তরুণ বিক্ষোভে যোগ দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এছাড়া দুজন বয়স্ক নাগরিকের আহত হওয়ার ঘটনা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে স্ফুলিঙ্গের মতো কাজ করেছে। আর তাতে জ্বালানি জুগিয়েছে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত দাবি, সঙ্গে কেন্দ্রের প্রতিশ্রুত আলোচনার তারিখ পিছিয়ে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত।
লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া ও ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করার দাবি ২০১৯ সালে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর থেকেই তীব্র আকার ধারণ করেছে। তবে বিজেপি এখন সেটিকে কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করে দায় মুক্তি চাইছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বিক্ষোভকারীদের।
লাদাখ ভারতের একটি কৌশলগত এলাকা, যা চীনের সঙ্গে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার সীমান্ত শেয়ার করে। ২০২০ সালে ভারত-চীন সেনাবাহিনীর সংঘর্ষেও এই এলাকাই ছিল মূল কেন্দ্র।
এখন এই সীমান্তবর্তী এলাকায় অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ভারতের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিদ্দিক ওয়াহিদ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যে সিদ্ধান্ত ২০১৯ সালে নিয়েছিল, তারই ফল এখন ঘরে ঘরে আগুন হয়ে ফিরছে। আগে ছিল কাশ্মীর, এখন লাদাখও সরকারের মাথাব্যথা।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে হঠাৎই অবস্থান বদলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনীকে ‘কাগুজে বাঘ’ বলে খোঁচা দিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্রেমলিন। বলেছে, ‘রাশিয়া বাঘ নয় ভালুক।’
ট্রাম্প গত মঙ্গলবার ট্রুথ সোশ্যালে বলেছিলেন, রাশিয়া তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে উদ্দেশ্যহীনভাবে এমন এক যুদ্ধ লড়ছে, যা এক সপ্তাহেরও কম সময়ে জয় করা উচিত ছিল। কিন্তু রাশিয়া তা না পারায় তারা ‘কাগুজে বাঘ’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনিও আরও বলেছিলেন, ‘ভ্লাদিমির পুতিন ও রাশিয়া এখন বড়সড় অর্থনৈতিক সমস্যায়, এখনই সময় ইউক্রেনের পদক্ষেপ নেওয়ার। (যুদ্ধে) রাশিয়ায় যে অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে তা দেখে আমার মনে হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন নিয়ে লড়াই করার ও তার সব অঞ্চল আদি অবস্থায় পুনরুদ্ধার করতে ইউক্রেইন পারবে।
ট্রাম্পের এমন সব মন্তব্যের পরেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল রাশিয়া। তার ‘কাগুজে বাঘ’ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘রাশিয়া বাঘ নয়, বরং রাশিয়াকে ভালুকের সঙ্গে তুলনা করা হয়। আর আমরা কাগুজে ভালুক নই। সত্যিকারের ভালুক।’
রাশিয়ার অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে ট্রাম্প যা বলেছেন সে প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের জবাব, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপে থাকার পরও রুশ অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। আর ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ধীর অগ্রযাত্রা মূলত কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ, দুর্বলতা নয়।
‘যুদ্ধে ইউক্রেন জিততে পারে’- এমন পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেছেন দিমিত্রি পেসকভ। তিনি বলেন, রাশিয়ার জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করতে বিশেষ এই সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য এ লড়াই করা হচ্ছে। এর কোনো বিকল্প নেই।
মস্কোর ওপর যুদ্ধ বন্ধে চাপ সৃষ্টি করতে ট্রাম্প ইউরোপের দেশগুলোকে রাশিয়ার জ্বালানি কেনা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
পেসকভ এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক স্বার্থেই ট্রাম্প ইউরোপের দেশগুলোকে রুশ জ্বালানি কিনতে বাঁধা দিচ্ছেন। এর ফলে ইউরোপের স্বার্থও ক্ষুণ্ণ হবে।’
গত কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প রাশিয়ার অনুকূল বার্তা দিয়ে আসলেও এবার সরাসরি অবস্থান বদলে ইউক্রেন এবং ইউরোপের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য দুষেছেন রাশিয়াকে।
এর মধ্যেই গত বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ট্রাম্পের প্রশংসা করেন। সেইসঙ্গে নিউইয়র্কে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। তারপরেই রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ ঘিরে অবস্থান বদলান ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুদিন ধরেই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার আশা করছেন। তবে নোবেল বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বছর তার সেই প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ট্রাম্পের কার্যকলাপ ও নীতিকে তারা আন্তর্জাতিক শান্তির আদর্শের পরিপন্থি বলে মনে করছেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কারের ইতিহাসবিদ আসলে স্বেন বলেন, ট্রাম্পের এই পুরস্কার পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। গাজায় যুদ্ধের সময় তার ইসরায়েলপ্রীতি এবং ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা- দুটোই তাকে বাদ দেওয়ার বড় কারণ।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নোবেল কমিটির একজন সদস্য বলেন, পুরস্কার নির্বাচন প্রক্রিয়া চাপমুক্ত রাখতে চান তারা। বাইরের লবিং, বিশেষত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো প্রার্থীর পক্ষ থেকে করা চাপ, বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে।
পিচ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলো-এর পরিচালক নিনা গ্র্যাগার বলেন, ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছেন, তিনি বন্ধু ও মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন। এগুলো কোনোভাবেই শান্তির প্রসারে সহায়ক নয়।
তিনি আরও বলেন, একজন শান্তিপ্রেমী নেতার থেকে যা আশা করা হয়, ট্রাম্প তার বিপরীত কাজ করছেন।
এ বছর শান্তি পুরস্কার পেতে পারেন এমন সংস্থাগুলোর মধ্যে আছে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনসিএইচআর), শিশু সংস্থা ইউনিসেফ, রেড ক্রস, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস, সুদানের এমার্জেন্সি রেসপন্স রুম নামের একটি স্থানীয় গ্রাসরুট সংগঠন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকেই এমন পরিবেশে মানবিক কাজ করছেন, যা ট্রাম্প প্রশাসনের তহবিল কাটছাঁটের কারণে আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। তাই এ ধরনের সংস্থাগুলোর ভূমিকাই নোবেল কমিটির চোখে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছা অনুযায়ী, এই পুরস্কার সেই ব্যক্তিকে দেওয়া হয়, যিনি জাতিগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তি প্রচারে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নীতিগত অবস্থান ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তার ভূমিকাই তাকে সেই মানদণ্ড থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
ইয়েমেনের ড্রোন হামলায় ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় পর্যটন নগরী ইলাতে অন্তত ২২ জন আহত হয়েছে।
বুধবার জানিয়েছে দেশটির জরুরি সেবা সংস্থার বরাত দিয়ে জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। ইহুদি নববর্ষ রোশ হাশানাহের দ্বিতীয় দিনে হামলাটি চালানো হলো।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, ড্রোনটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে লোহিত সাগরের উপকূলীয় শহর ইলাতে পতিত হয়। আহতদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা গুরুতর।
মাগেন ডেভিড অ্যাডম জরুরি সেবা জানিয়েছে, তাদের দল ২২ জনকে চিকিৎসা দিয়েছে। এর মধ্যে ২৬ ও ৬০ বছর বয়সী দুই ব্যক্তি গুরুতর আহত, একজন মাঝারি ও অন্যান্যরা সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত।
পুলিশ জানায়, ড্রোনটি ইলাত শহরের কেন্দ্রে আঘাত করে, যা পর্যটক সমাগমের স্থান হিসেবে পরিচিত। এতে এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
হুথি সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি পরে এক বিবৃতিতে জানান, তাদের বাহিনী দক্ষিণ ইসরাইলের দুটি স্থানে দুইটি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
ইলাতের মেয়র ইলি ল্যাঙ্ক্রি সরকারের প্রতি হুথিদের বিরুদ্ধে কঠোর পাল্টা হামলার আহ্বান জানান।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, হামলার আগে ইলাতজুড়ে বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। শহরটি মিশর ও জর্ডানের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত।
ইসরাইল ইতোমধ্যেই ইয়েমেনে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। গত মাসে হুথি সরকারের প্রধানসহ আরও ১১ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে।
হুথিরা ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলের দিকে বারবার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে দাবি করছে যে তারা ফিলিস্তিনি মিত্র হামাসকে সমর্থন করছে।
ইউক্রেন সংঘাতের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘খুব স্পষ্ট বার্তাকে’ বৃহস্পতিবার স্বাগত জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।
ট্রাম্প তার অবস্থান থেকে সরে এসে কিয়েভ রাশিয়ার দখলকৃত সমস্ত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে পারে বলে ঘোষণা দেওয়ার পর মাখোঁ তাকে স্বাগত জানালেন।
নিউ ইয়র্ক থেকে ফ্রান্স ২৪ ও রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএফআই)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, এই বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান পরিবর্তন ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ এবং এটি একটি ‘নতুন দৃষ্টিভঙ্গি’ প্রদান করেছে, কারণ কিয়েভের জন্য ‘মার্কিন সরঞ্জাম ও সমর্থন প্রয়োজন।’
মাখোঁ বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এটি একটি খুব স্পষ্ট বার্তা যে রাশিয়া নিঃসন্দেহে দুর্বল, অনেকের যেমন বলছে তার চেয়েও ভঙ্গুর।’
নিউইয়র্কে বার্ষিক জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিচ্ছেন মাখোঁ। তিনি সেখান থেকে জানান, তিনি ‘ইউক্রেনকে (রাশিয়াকে) আরও বেশি প্রতিরোধ করতে এবং এমনকি (দখলকৃত) অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম করবেন।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করার পর ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ইইউর সহায়তায় ‘পুরো ইউক্রেনকে তার আসল রূপে ফিরিয়ে আনার’ জন্য লড়াই করা ও জয় করার অবস্থানে রয়েছে ইউক্রেন।
২০১৪ সালে একটি অভিযানের পর ক্রিমিয়ার ইউক্রেনীয় কৃষ্ণ সাগর উপদ্বীপকে নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে রাশিয়া।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কোর পূর্ণ মাত্রার হামলার পর এখন ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়া।
ন্যাটো সদস্যরাষ্ট্র পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় ড্রোন হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করার পর, মাখোঁ বলেন, মস্কোর ‘নতুন উস্কানির ক্ষেত্রে জোটের প্রতিক্রিয়া আরো ‘এক ধাপ উপরে যেতে হবে।’
তিনি বিস্তারিত উল্লেখ না করে আরো বলেন, ‘এর অর্থ হল, কেউ যদি আপনাকে আবার উস্কানি দেয়, তাহলে আপনাকে আরও কিছুটা কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।’
ফিলিস্তিনে গাজার প্রধান শহর গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর জোরদার স্থল হামলার মধ্যেই হামাসের পাল্টা হামলায় এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, বুধবার হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্যভেদী (স্নাইপার) হামলায় ওই ইসরায়েলি সেনা নিহত হন।
নিহত সেনার নাম চালাচেউ শিমন ডামালাশ (২১) । তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নাহাল ব্রিগেডের ৯৩২তম ব্যাটেলিয়নের স্টাফ সার্জেন্ট ছিলেন। তার বাড়ি ছিল ইসরায়েলের বিরশেবায়।
প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে আইডিএফ জানিয়েছে, একটি সেনা শিবিরের গার্ড পোস্টে দায়িত্ব পালন করাকালে ডামালাশ লক্ষ্যভেদীর গুলিতে নিহত হন।
গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অভিযান শুরু করার পর থেকে সেখানে এই নিয়ে তাদের দুইজন সেনা নিহত হল।
একই দিন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর এলাতে ইয়েমেনের হুতিরা ড্রোন হামলা চালায়। বিরশেবার সোরোকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার জানিয়েছে, এই হামলায় গুরুতর আহত ২৬ বছর বয়সী এক পুরুষ এখন হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন।
এই ড্রোন হামলায় ২৪ ও ৬৫ বছর বয়সী আরও দুই ইসরায়েলি পুরুষ আহত হয়েছেন।
মন্তব্য