বাংলাদেশের অতি সাম্প্রতিককালের একটি বহুল আলোচিত ও ব্যাপক বিস্তৃত অনুষঙ্গ হচ্ছে মব (mob) বা উচ্ছৃঙ্খল জনতা। মানুষ সারাক্ষণই এ মবের ভয়ে এই ভেবে আতঙ্কে থাকে যে, কখন না কার উপর এটি ভর করে বসে। আর এ ভীতির মাত্রা ইদানীংকালে আরো বিস্তার লাভ করেছে এ কারণে যে, মবের পেছনে আগে কোনো সাংগঠনিক বা প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও এখন তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও সৃষ্টি করা হচ্ছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘চাপ’। তো এই মবের মতো সমান গতিতে বা তারচেয়েও অধিক শক্তিতে চারদিকে এখন দ্রুত বিস্তার লাভ করছে ধর্ষণ। এবং সে ধর্ষণের ঘটনা ইদানীং এতটাই বেড়ে গেছে যে, বিষয়টি এখন আর কেবল উদ্বেগের পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই-- উদ্বেগের মাত্রা ছাড়িয়ে তা এরইমধ্যে এক ধরনের আতঙ্কময় পরিস্থিতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বাসগৃহ থেকে শুরু করে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, জনপথ, পর্যটন কেন্দ্র সর্বত্রই এটি সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে উল্লিখিত ধর্ষণের যত সংখ্যক ঘটনার কথা সাধারণ মানুষ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে জানতে পারছে, এক্ষেত্রে প্রকৃত ঘটনা তারচেয়েও অনেক বেশি। অর্থাৎ এ ভয়াবহতার প্রকৃত মাত্রা দৃশ্যমান বাহ্যিক অবস্থার চেয়েও অনেক বেশি নিষ্ঠুর। বর্তমান অবস্থায় ধর্ষণের যেসব ঘটনার কথা গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে জনসমক্ষে প্রকাশ পাচ্ছে, বস্তুত সেগুলোর ধরন, বৈশিষ্ট্য ও সংখ্যা দেখেই মানুষ এর ভয়াবহতা সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা তৈরি করে নিচ্ছে। কিন্তু তারাই জানলে আরো বিস্মিত হবেন যে, এ উভয় মাধ্যমের বিস্তার ও পরিধির বাইরে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত ও প্রান্তিক জনপদগুলোতে এ জাতীয় বা এরচেয়েও জঘন্য ধর্ষণের ঘটনা প্রতিদিনই আরো অনেক বেশি সংখ্যায় ঘটে চলছে। কিন্তু লোকলজ্জা, ধর্ষকের সামাজিক প্রভাব, যোগাযোগ অবকাঠামোর পশ্চাৎপদতা ও অন্য নানাবিধ কারণে সেসব জনসমক্ষে প্রকাশ পাচ্ছে না।
উল্লিখিত পরিস্থিতিতে জনসমক্ষে প্রকাশ পাওয়া ও লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা অর্থাৎ জনসমক্ষে প্রকাশ না পাওয়া-- এ উভয়বিধ ধর্ষণের বিস্তার, এসবের প্রকৃতি ও সম্ভাব্য কারণ নিয়ে এখানে অতি সংক্ষেপে খানিকটা আলোচনা করা হলো। আশা করব, সমস্যাটির ভয়াবহতা বিবেচনায় এবং এর বিস্তার রোধ ও প্রতিহতকরণের উদ্দেশে জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে অন্যেরাও এ ধরনের আলোচনায় যুক্ত হবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে হঠাৎ করেই ধর্ষণের ঘটনা এভাবে এতোটা বেড়ে গেল কেন? এর কারণ একাধিক। তবে মূল কারণ অবশ্যই সমাজ ও রাষ্ট্রে বিচার, ন্যায়ের শাসন, রাজনৈতিক স্থিরতা এবং সামাজিক ঐক্য ও সংহতি না থাকা। তদুপরি রয়েছে অর্থনীতির নানা নেতিবাচক অনুষঙ্গ যার মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বেকারত্ব, প্রয়োজনের তুলনায় আয়ের ঘাটতি, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্য ইত্যাদি। আর উল্লিখিত এই উভয় শ্রেণির সমস্যা সমাজের সব শ্রেণি ও পেশার এবং সব বয়নি ও লিঙ্গের মানুষকে স্পর্শ করলেও তা সর্বাধিক সংখ্যায় করছে তরুণদেরকে। আর এই তরুণদের মধ্যে অভাব, বেকারত্ব ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতির সমস্যা এতটাই প্রকট যে, সেসব থেকে তাদের ভেতরে যেসব কষ্ট, ক্ষোভ ও হতাশা পুঞ্জিভূত আকারে জমা হয়েছে, সেটাই ক্রমান্বয়ে নানা হিংস্রতাপূর্ণ পাশবিক প্রবণতার দিকে ধাবিত হতে হতে বর্তমানের ধর্ষণ বা গণধর্ষণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আর তারই এক ধরনের আদিম বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে অতিদ্রুত হারে বেড়ে চলা ধর্ষণের ঘটনাগুলো।
এসব ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে ধর্ষকের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও একটি বড় কারণ। এক্ষেত্রে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধর্ষক বা ধর্ষণকারীরা কোনো না রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এরূপ জড়িত থাকার উদাহরণ হচ্ছে: মুরাদনগরে রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকা, টাংগাইলে বাসে শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে, নোয়াখালীর গ্রামে স্থানীয় সমিতির সঙ্গে ইত্যাদি। মোটকথা ধর্ষক ধরেই নিচ্ছে যে, তাকে রক্ষা করার জন্য তার পেছনে সাংগঠনিক শক্তির সমর্থন যথেষ্টই রয়েছে। অন্যদিকে ধর্ষকের সামাজিক অবস্থানও তার একটি বড় রক্ষাকবচ। সমাজের বিত্তবান বা প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরা এসব ঘটনায় জড়িত হয়েও চারপাশের প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। আর তাদেরকে ধর্ষণের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ থেকে মুক্তিদানের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্বচ্ছ আচরণ, প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের উদ্যমহীন দায়িত্বহীনতা, বিচারব্যবস্থার নির্লিপ্ততা ও গাফিলতি ইত্যাদি এতোটাই দায়ী যে, এটিকে শুধু রাষ্ট্রব্যবস্থার ত্রুটি ও দুর্বলতা বললে খুবই সামান্য বলা হয়। আসলে এগুলো হচ্ছে অসহায় ধর্ষিতাদের প্রতি রাষ্ট্রের একধরনের শোষণ ও উপেক্ষামূলক বর্বর দৃষ্টিভঙ্গিরই বহিঃপ্রকাশ।
তবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটা ও ঘটার পর ধর্ষককে সে অভিযোগ থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আগ্রাসী ভূমিকা রাখছে রাষ্ট্রের রাজনীতি। দেশে যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকছে, তখন সে দলের অনুসারীরা পুরো দেশ ও দেশের সমুদয় সম্পদকেই তাদের নিজেদের জন্য ‘মালে গণিমত’ ভাবতে শুরু করে, যে গণিমতের আওতায় তারা হয়তো ওই অসহায় ধর্ষিতা নারীকেও গণ্য করে বৈকি! কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, যে রাজনৈতিক নেতারা এসব অপকর্মকে প্রশ্রয় দেন, তারা যখন জনগণের কাছে ভোট চাইতে যান, তখন সে ভোটারদের কেউই তাকে প্রশ্ন করেন না যে, বিভিন্ন সময়ে ধর্ষকের পক্ষে দাঁড়ানোর কারণে ইতোমধ্যে তিনি তার ভোট চাওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে ফেলেছেন কিনা। আশা করা হচ্ছে, সামনেই নির্বাচন। ধর্ষণের ক্ষত শুকিয়ে যাওয়ার আগেই ওই নির্বাচনের ভোটপ্রার্থীদের কাছে ভোটাররা কি দয়া করে এর কারণ জানতে চাইবেন? আর তাদের কাছে এটাও জানতে চাওয়া যেতে পারে যে: তুলনামূলকভাবে দরিদ্র, সংখ্যালঘু এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার দিক থেকে পিছিয়েপড়া নারীরাই কেন অধিক হারে ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন? রাজনীতিকদের কাছে এ প্রশ্নও রাখছি যে, ধর্ষককে প্রশ্রয় দিয়ে ও তাকে নিজ দলের কর্মী-কাম-লাঠিয়াল বানিয়ে এ দেশের জন্য কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা তার গড়ে তুলবেন?
ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে উপরোক্ত কারণসমূহ ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে আরো কিছু নতুন কারণ সমাজে সৃষ্টি হয়েছে, যেসবের বেশিরভাগই আলোচনার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এর একটি হচ্ছে: উপার্জনের প্রয়োজনে বাংলাদেশের গ্রামগুলোর এক বিরাট সংখ্যক মানুষ বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করছে, যে ক্ষেত্রে তার পরিবারের নারী সদস্যদেরকে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই দেশে বসবাস করতে হচ্ছে। কিছু বছর আগ পর্যন্তও বাংলাদেশের গ্রামগুলোর দীর্ঘকালীন ঐতিহ্যিক সংহতির কারণে এ নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এসব পরিবারের জন্য যৌন হয়রানিসহ নানাবিধ সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গেছে। দেশে একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থা বহাল থাকলে এ দেখভালের কাজটি খুব সহজেই তারা করতে পারত। একইভাবে যেসব গ্রামীণ পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বর্তমানে পরিবার-পরিজনকে গ্রামের বাড়িতে রেখে শহরে যেয়ে কাজ করছেন, সেসব পরিবারের নারী সদস্যদের জন্যও নিরাপত্তাহীনতার অনুরূপ ঝুঁকি দিন দিনই বেড়ে চলেছে। আর পোশাক শিল্পের দরিদ্র অসহায় দুঃখী মেয়েরাতো এখন ধর্ষণের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য (target)। তথ্য পর্যালোনা করলে দেখা যাবে যে, সারাদেশে গত পাঁচ বা দশ বছরের মধ্যে যারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তাদের মধ্যে এই পোশাককর্মীর সংখ্যাই সর্বাধিক।
ধর্ষণের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ নিয়ে উপরে যে আলোচনা করা হলো, তার বাইরে যেয়ে এসবের মনস্তাত্ত্বিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, এসব ঘটনায় ধর্ষকের মধ্যে যৌন আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার চেয়েও অধিক হারে কাজ করে এক ধরনের রাগ, ক্ষোভ, ক্রোধ ও হতাশা, যার কিছুটা নিজের প্রতি হলেও বেশির ভাগটাই চলমান রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি। ওই যে দেশের তরুণেরা এখন বন্যার স্রোতের মতো বিদেশে চলে যাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ছুটছে, সেটি যেমন বহুলাংশে রাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ ও হতাশা থেকে, এই ধর্ষকদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি মোটামটি একই। ধর্ষণের মতো পাশবিক অমানবিকতা প্রকাশের মাধ্যমে সে বস্তুত রাষ্ট্রের প্রতিই এক ধরনের ঘৃণা প্রকাশ করতে চায়, যদিচ সে ঘৃণা প্রকাশের জন্য এটি কোনো গ্রহণযোগ্য পথ নয়। এমতাবস্থায় ধর্ষণ প্রতিরোধে আশু ও জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় গ্রহণের পাশাপাশি রাষ্ট্রকে ঐসব ব্যবস্থাদিও গ্রহণ করতে হবে, যার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রের প্রতি ধর্ষকের ঘৃণা, ক্ষোভ ও হতাশাগুলোও দূরীভূত হশ।
শিরীন আমজাদ: সাবেক অধ্যক্ষ, মির্জা আব্বাস মহিলা কলেজ, ঢাকা।
পশ্চিম তীরে চার হাজারের বেশি নতুন আবাসন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল। কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ গত বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। আলজাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি বসতিবিরোধী পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘পিস নাউ’ জানিয়েছে— অনুমোদিত ৪ হাজার ৩০টি আবাসন ইউনিটের মধ্যে ৭৩০টি নির্মিত হবে আরিয়েলের পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যমান বসতিতে এবং বাকি ৩ হাজার ৩০০টি স্থাপন করা হবে মা’আলে আদুমিম এলাকায়।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী স্মোট্রিচ জানান, নতুন বসতি প্রকল্পের জন্য শিগগিরই বাড়ি নির্মাণের দরপত্র অনুমোদন করা হবে। এর লক্ষ্য জেরুজালেম ও ইসরায়েলি বসতি মা’আলে আদুমিমের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন। তিনি আরও দাবি করেন, এই উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে চিরতরে শেষ করবে। তার ভাষায়, ‘এমন কিছু নেই যা স্বীকৃতি পাবে, আর এমন কেউ নেই যাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। আজ যদি কেউ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করে, আমরা মাটিতেই তার জবাব দেব।’
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পরিকল্পনাকে ‘গণহত্যা, বাস্তুচ্যুতি এবং দখলদারিত্বের সম্প্রসারণ’ হিসেবে নিন্দা করেছে। তাদের মতে, এটি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ সম্পর্কিত বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই বসতিগুলো কার্যকর হলে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা তৈরি হবে। পরিকল্পিত এলাকা অধিকৃত পশ্চিম তীরকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে দেবে, ফলে পূর্ব জেরুজালেমকে বেথলেহেম ও রামাল্লার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করে সংলগ্ন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গঠন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
উল্লেখ্য, এর আগেও ইসরায়েল ওই এলাকায় বসতি স্থাপনের চেষ্টা করেছিল। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পরিকল্পনা স্থগিত হয়। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থি সরকার সেখানে রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্প অনুমোদন করেছে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে।
মা’আলে আদুমিমের মেয়র গাই ইফ্রাচ নতুন বসতি পরিকল্পনার প্রশংসা করে বলেছেন, এটি জেরুজালেমের সঙ্গে মা’আলে আদুমিমের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। তার অভিযোগ, ফিলিস্তিনিরা ওই এলাকায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করেছিল, যা এই প্রকল্প ব্যর্থ করে দেবে।
গাজায় তীব্র গরম, চর্মরোগে ভুগছে শিশুরা
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ফিলিস্তিনিরা। তীব্র গরমে এখন চর্মরোগে ভুগছে শিশুরা।তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
আল শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, গাজার আশ্রয়শিবিরে থাকা অনেক শিশুই বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের কাছে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জামও নেই। আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াফা নামের এক মায়ের ছেলে সারা রাত চুলকানির কারণে ঘুমাতে পারছে না। তার ছেলের শরীরে সাদা-লাল ফুসকুড়ি দেখা গেছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) এর গাজার মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ আবু মুগাইসিব বলেন, শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, কারণ তারা শিশু এবং সেখানকার পরিবেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঠিকমতো গোসলের জন্য পর্যাপ্ত পানিও নেই তাদের।
গাজায় একদিনে ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত
যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা আবারও ভয়াবহ হামলার মুখে পড়েছে। লাগাতার বোমাবর্ষণ ও বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, বাজার—এবং প্রতিদিন বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। স্থানীয়রা বলছেন, গাজার উত্তরাংশ এখন প্রায় ‘নিষ্প্রাণ ধ্বংসস্তূপ’। আন্তর্জাতিক মহল এই হামলা ও দখল পরিকল্পনার বিরুদ্ধে নিন্দা জানালেও পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে।
গতকাল শুক্রবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলি বিমান হামলায় একদিনে অন্তত ৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন ত্রাণের সন্ধানে। একই দিনে খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিতে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞ এমন সময় ঘটছে যখন ইসরায়েল গাজা সিটিতে হামলা আরও তীব্র করেছে এবং সম্প্রতি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা শহরটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে লাখো ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ গাজায় গাদাগাদি করে বসবাসে বাধ্য করা হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা সিটির একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আটজন নিহত হন এবং তুফাহ এলাকায় অন্য এক হামলায় আরও দুজন প্রাণ হারান। কয়েকটি চিকিৎসা সূত্রও এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে উত্তর গাজার বড় অংশ এখন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শহরের বাসিন্দারা নতুন করে বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত, কারণ ইসরায়েল শহর ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে তাদের আরও দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
বাসিন্দা ওয়ালা সুবহ জানান, যুদ্ধ শুরুর পর তিনি উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়া থেকে গাজা সিটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই, আয়ও নেই—তিনি একজন বিধবা। তার ভাষায়, ‘যদি আমাদের বের করে দিতে চায়, তবে অন্তত আমাদের থাকার জায়গা দিক, তাঁবু দিক, বিশেষ করে বিধবা, শিশু আর অসুস্থদের জন্য। এখানে কয়েকজন নয়, লাখো মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হবে, যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’
উম সাজেদ হামদান নামে আরেক নারী বলেন, তিনি পাঁচ সন্তানের মা, স্বামী বন্দি—তাই সন্তানদের নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালানো সম্ভব নয়। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ‘আল-মাওয়াসিতে যাওয়ার চেয়ে আমি গাজা সিটিতেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে রাজি।’
ভারী মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে, যার ফলে কমপক্ষে ২৩ জনের মৃত্যু আরও অনেকে আটকা পড়েছেন।
দেশটির দুর্যোগ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে শুক্রবার পেশোয়ার থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে পাহাড়ি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে কমপক্ষে ১৬ জন এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে সাত জন প্রাণ হারিয়েছেন।
ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদেরকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বৈঠকের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
লন্ডন থেকে এএফপি জানিয়েছে, স্টারমার ইউক্রেনের নেতা জেলেনস্কিকে তার ডাউনিং স্ট্রিট বাসভবনে উষ্ণ আলিঙ্গন ও হাত মেলানোর মাধ্যমে স্বাগত জানান।
এর কয়েক ঘণ্টা পরেই জেলেনস্কি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল ফোনালাপে অংশ নেন।
শুক্রবার আলাস্কার একটি বিমান ঘাঁটিতে ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে। এতে করে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর পুতিন পশ্চিমা মাটিতে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
তবে ইউক্রেনে অব্যাহত রুশ হামলা ও জেলেনস্কিকে এই বৈঠকে আমন্ত্রণ না করায় উদ্বেগ বেড়েছে। কারণ ট্রাম্প ও পুতিন এমন একটি চুক্তি করতে পারেন, যার ফলে ইউক্রেনকে বড় কিছু ছাড় দেওয়া লাগতে পারে।
তবে স্টারমার বুধবার বলেন, ইউক্রেনে তিন বছরের বেশি যুদ্ধের পর এখন ‘একটি সম্ভাব্য’ যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে।
এদিকে শুক্রবার ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হলেও এরই মধ্যে ইউক্রেন রাশিয়ায় ডজনখানেক ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এতে তিন জন আহত হয় এবং ভোলগোগ্রাদ শহরের একটি তেল শোধনাগারে আগুন লেগে যায়।
কিয়েভ দাবি করেছে, এই হামলাগুলো মস্কোর নিত্যদিনের মিসাইল ও ড্রোন হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ন্যায্য।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়াকে কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেবেন না। ইউরোপীয় নেতারা আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন, ইউক্রেনের জন্য কোনো ছাড় দেওয়া ছাড়াই মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুদ্ধবিরতির দিকে নজর দেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করার হুমকি দেওয়ার পর বিপাকে পড়েছেন ভারতীয় রপ্তানিকারকরা। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ না করলে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থান হ্রাস এবং রপ্তানি শিল্পে বিশাল ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এলারা সিকিউরিটিজের অর্থনীতিবিদ গরিমা কাপুর বলেন, ‘৫০ শতাংশ শুল্কে ভারতের কোনো পণ্যই প্রতিযোগিতামূলক থাকতে পারবে না।’
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জ্বালানি আমদানিকারক ভারতকে আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে তেল আমদানির এক-তৃতীয়াংশ রাশিয়া বাদ দিয়ে অন্য উৎস থেকে জোগাড় করতে হবে। ২০২৪ সালে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। নতুন এই শুল্কের ফলে রত্ন ও গহনা, বস্ত্রশিল্প ও সামুদ্রিক খাদ্যসহ কম মুনাফার ও শ্রমনির্ভর খাতগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ জানিয়েছে, ২০২৫ সালে পোশাক খাতসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
মুম্বাইয়ের ‘ক্রিয়েটিভ গ্রুপয়ের’ চেয়ারম্যান বিজয় কুমার আগরওয়াল বলেন, ‘আমরা যতটা পারি, ২৭ আগস্টের আগেই পণ্য পাঠিয়ে দিচ্ছি।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এটা সমস্যার সাময়িক সমাধান মাত্র, আসল সমস্যার সমাধান নয়।’
আগরওয়াল বলেন, ‘যদি দ্রুত এই বিষয়টির সমাধান না হয়, তাহলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করা ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’
এই সমস্যা ব্যবসার আওতার বাইরে, কারণ এটি নির্ভর করছে ভূরাজনীতির ওপর। ট্রাম্প গত শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন, যা ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ।
মস্কোর সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকায় দিল্লি এখন এক জটিল অবস্থানে রয়েছে। ট্রাম্পের হুমকির পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন, এবং ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের’ আহ্বান জানিয়েছেন।
ইতোমধ্যেই কিছু মার্কিন ক্রেতা ভারত থেকে নতুন অর্ডার বন্ধ করে দিয়েছেন, যা কয়েক মিলিয়ন ডলারের ভবিষ্যৎ ব্যবসা এবং হাজার হাজার কর্মসংস্থান হুমকির মুখে ফেলেছে।
ভারতের বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারকদের অনেকে এখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ডার অন্য দেশে স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন। পার্ল গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছে, কিছু মার্কিন ক্রেতা অর্ডার ভিয়েতনাম বা বাংলাদেশে তৈরি করার অনুরোধ করেছেন, যেখানেও তাদের কারখানা রয়েছে।
অপরদিকে, গোকলদাস এক্সপোর্টস জানিয়েছে, তারা ইথিওপিয়া ও কেনিয়াতে উৎপাদন বাড়ানোর কথা ভাবছে, যেখানে মাত্র ১০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। মুডিজ সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছে, ভারতের জন্য এই বিশাল শুল্ক ব্যবধান ‘গত কয়েক বছরে আকৃষ্ট হওয়া বিনিয়োগের অনেকটাই উল্টো পথে নিতে পারে।’
গত বছর ভারত ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রত্ন ও গহনা রপ্তানি করেছে, যেখানে কয়েক লাখ মানুষ কর্মরত। এখন এই শিল্প কার্যত স্থবির। ডি. নভিনচন্দ্র এক্সপোর্টসের অজেশ মেহতা বলেন, ‘এখন কিছুই হচ্ছে না, সব অর্ডার স্থগিত। আমরা আশঙ্কা করছি ১.৫ থেকে ২ লাখ শ্রমিক প্রভাবিত হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘১০ শতাংশ শুল্ক মানিয়ে নেওয়া যায়, ২৫ শতাংশ কঠিন- আর ৫০ শতাংশ একেবারে অগ্রহণযোগ্য। আমরা বিলাসবহুল পণ্যে কাজ করি, দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ক্রেতারা পিছিয়ে যাবে।’
সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিকারকরাও বলছেন, কিছু মার্কিন ক্রেতা চালান আটকে রাখতে বলছেন। তারা এখন নতুন বাজারের খোঁজ করছেন। ‘বেবি মেরিন গ্রুপের পার্টনার’ অ্যালেক্স নিনান বলেন, ‘আমরা বাজার বৈচিত্র্যের চেষ্টা করছি। যুক্তরাষ্ট্র একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এখন চীন, জাপান এবং রাশিয়ার মতো বাজারে নজর দিচ্ছি।’ তবে নিনান বলেন, ‘এটা সহজ নয়। হঠাৎ করেই কোনো বাজার তৈরি করা যায় না।’
ইরানের নিরাপত্তা প্রধান লেবাননের প্রতি ‘সহায়তা’ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। লেবাননের সরকার তেহরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা তৈরির জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার পর বুধবার লেবাননে ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা প্রধান এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইরানের নিরাপত্তা প্রধান বলেন, তার সরকার লেবাননের প্রতি সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
বৈরুত থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
গত বছর ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের আগে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার সরকারি পরিকল্পনার বিরোধিতা প্রকাশ করার পর আলী লারিজানির লেবানন সফর। হিজবুল্লাহ গত বছর ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের আগে লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়ে ভালো অস্ত্রে সজ্জিত বলে মনে করা হত।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান লারিজানি বৈরুতে অবতরণের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদি লেবাননের জনগণ কষ্ট ভোগ করে, তাহলে আমরা ইরানেও এই যন্ত্রণা অনুভব করব এবং আমরা সকল পরিস্থিতিতে লেবাননের প্রিয় জনগণের পাশে থাকব’।
লারিজানিকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দর সড়কে বহু হিজবুল্লাহ সমর্থক জড়ো হয়েছিল। লারিজানি যখন সমর্থনের স্লোগান দিচ্ছিলেন, তখন তিনি তাদের স্বাগত জানাতে গাড়ি থেকে নেমে আসেন।
লেবাননে, লারিজানি প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন ও প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালামের পাশাপাশি হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সংসদ স্পিকার নাবিহ বেরির সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।
ইসরাইলের সাথে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইরান একাধিক আঘাতের সম্মুখীন হয়েছে। যার মধ্যে গত জুন মাসে দুই দেশের মধ্যে ১২ দিনের প্রকাশ্য যুদ্ধও অন্তর্ভুক্ত।
২০২৪ সালের নভেম্বরে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত নতুন লেবানন সরকার গোষ্ঠীটিকে আরো নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
হিজবুল্লাহ ইরানের তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ গাজার হামাস ও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীসহ এই অঞ্চলের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি নেটওয়ার্কের অংশ, যারা ইসরাইলের বিরোধিতায় একত্রিত হয়েছিল।
ডিসেম্বরে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, লেবাননের অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেয়। এটি দীর্ঘকাল ধরে ইরান ও হিজবুল্লাহর মধ্যে অস্ত্র সরবরাহের পথ হিসেবে কাজ করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার আসন্ন বৈঠককে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে তার ধারণাগুলো মূল্যায়নের একটি ‘অনুভূতিশীল বৈঠক’ বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে ইউরোপীয় নেতারা কিয়েভের স্বার্থের প্রতি অটল রয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে আলাস্কায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে এটিই প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির আঞ্চলিক ছাড় প্রত্যাখ্যান করার সমালোচনা করেছেন।
অগ্রহণযোগ্য আপস জোরদার করার লক্ষ্যে পুতিন ট্রাম্পের সাথে জোট বাঁধবেন এই আশঙ্কায়, ইউরোপীয় নেতারা বুধবার জেলেনস্কি ও ট্রাম্প উভয়ের সাথেই আলাদাভাবে কথা বলার পরিকল্পনা করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম মাসগুলোয় ২৪ ঘন্টার মধ্যে সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারবেন বলে মন্তব্য করার পর, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু কয়েক দফা আলোচনা, ফোন কল ও কূটনৈতিক সফরের পরও কোনো প্রকার সাফল্য আসেনি।
ট্রাম্প সাধারণত তার চুক্তি সম্পন্ন করার দক্ষতা নিয়ে গর্ব করতে পছন্দ করেন। আলাস্কায় সাফল্যের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে পুতিনের সঙ্গে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ আশা করছেন।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি সত্যিই কিছুটা অনুভূতিপ্রবণ বৈঠক।’
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা দেখব তার মনে কী আছে এবং যদি এটি একটি ন্যায্য চুক্তি হয়, তাহলে আমি এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের, ন্যাটো নেতাদের এবং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কাছেও প্রকাশ করব।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারি- অনেক ভাগ্য, লড়াই চালিয়ে যাও, অথবা আমি এও বলতে পারি, আমরা একটি চুক্তি সম্পাদন করতে পারি।’
জেলেনস্কি বলপ্রয়োগ করে দখল করা অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে ট্রাম্প ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের এক সভায় প্রকাশ্যে জেলেনস্কির সমালোচনা করে বলেছিলেন তিনি জেলেনস্কির অবস্থান নিয়ে কিছুটা বিরক্ত এবং অঞ্চল বিনিময়ের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘কিছু বিনিময় হবে, জমির কিছু পরিবর্তন হবে।’
তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পুতিনকে এই যুদ্ধ শেষ করতে বলবেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎজ বুধবার ফরাসি, ব্রিটিশ ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের এবং ইইউ ও ন্যাটো প্রধানদের ভার্চুয়াল আলোচনায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
সোমবার মের্ৎজের কার্যালয় জানিয়েছে, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন দফা আলোচনায় রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের আরও বিকল্প, সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার প্রস্তুতি এবং আঞ্চলিক দাবি ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সোমবার ব্রাসেলসে ইইউ’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহার সঙ্গে দেখা করেন এবং আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার ওপর ১৯তম নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিও নিয়েও আলোচনা করেন।
আলোচনার পরে ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কালাস বলেন, রাশিয়া ‘পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত, আমাদের কোনও ছাড় নিয়ে আলোচনা করা উচিত নয়।’ ‘এটি অতীতে কখনও রাশিয়ার সাথে কাজ করেনি এবং আজও পুতিনের সাথে কাজ করবে না।’
এদিকে পুতিনের দাবির কাছে আত্মসমর্পণের বিরুদ্ধে আবারও সতর্ক করেছেন জেলেনস্কি ।
জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘রাশিয়া হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে অস্বীকার করে, তাই কোনও পুরষ্কার বা সুবিধা গ্রহণ করা উচিত নয়। এটি কেবল একটি নৈতিক অবস্থান নয়, এটি একটি যুক্তিসঙ্গত অবস্থান।’
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে জঙ্গি হামলায় অন্তত নয়জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন বলে মঙ্গলবার এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ওয়াশুক জেলার একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, বহু সংখ্যক জঙ্গি একটি পুলিশ স্টেশন এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা চালায়।
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পথে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়। সন্ত্রাসীরা নয়জন সেনাকে হত্যা করে।’
মন্তব্য