চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শুক্রবার এক ফোনালাপে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে বলেছেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়ন হতে দেখে চীন খুশি হয়েছে।
শুক্রবার চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
বেইজিং থেকে এএফপি জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উভয়পক্ষ নিশ্চিত করেছে, বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে এবং ইঙ্গিত দিয়েছে, আগামী সপ্তাহেই বৈঠক হতে পারে। তবে বৈঠকের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও স্থান এখনো নির্ধারণ হয়নি।
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি জানায়, পুতিনের অনুরোধে শি জিনপিং শুক্রবার তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।
পুতিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক যোগাযোগ ও আলোচনার অগ্রগতি এবং ইউক্রেনের পরিস্থিতি সম্পর্কে শি’কে অবহিত করেছেন।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার ইংরেজি সংস্করণের খবরে বলা হয়, পুতিনকে শি জানিয়েছেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ বজায় রাখা, সম্পর্ক উন্নত করা এবং ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানকে এগিয়ে নিতে দেখে চীন আনন্দিত।
শি আরো বলেন, ‘জটিল সমস্যার সহজ সমাধান নেই। চীন সর্বদা শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সংলাপ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা তাদের সামরিক বাহিনীকে গাজা শহর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। শুক্রবার এ খবর প্রকাশের পর দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
জেরুজালেম থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
গাজা যুদ্ধে প্রায় দুই বছর পার হলেও যুদ্ধবিরতির জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ছে। এতে ২ কোটিরও বেশি ফিলিস্তিনিকে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বাঁচানো এবং ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্ত করা সম্ভব হবে।
এদিকে, ইসরাইলের প্রতিপক্ষ হামাস লড়াই চালিয়ে যাওয়ার এই পরিকল্পনাকে ‘নতুন যুদ্ধাপরাধ’ বলে সমালোচনা করেছে।
অপরদিকে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র জার্মানি এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ হিসেবে দেশটিতে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি স্থগিত করেছে। জার্মানির আশঙ্কা, এসব অস্ত্র গাজায় ব্যবহার করা হতে পারে। জার্মানির এই পদক্ষেপকে হামাসের জন্য পুরস্কার বলে নিন্দা জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে, হামাসকে ‘পরাজিত’ করার জন্য নতুন অনুমোদিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সেনারা গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেবে এবং যুদ্ধবিহীন এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মানবিক সহায়তা বিতরণ করবে।
নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এর এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা গাজা দখল করব না বরং গাজাকে হামাসের হাত থেকে মুক্ত করব।’
তিনি আরো বলেন, গাজায় নিরস্ত্রীকরণ হলে ও শান্তিপূর্ণ বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা হলে তা জিম্মিদের মুক্ত করতে সহায়ক হবে এবং ভবিষ্যৎ হামলার ঝুঁকি কমাবে।
ইসরাইল ১৯৬৭ সালে গাজা দখল করেছিল, তবে ২০০৫ সালে সেনা ও বসতি সেখান থেকে সরিয়ে নেয়।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, মন্ত্রিসভা পাঁচটি নীতি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজার নিরস্ত্রীকরণ এবং এমন একটি বিকল্প বেসামরিক প্রশাসন গঠন, যা হামাসও নয়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও নয়।
পরিকল্পনাটি বিশ্বজুড়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। চীন, তুরস্ক, বৃটেনসহ বিভিন্ন আরব দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস একে ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা’ বলে সতর্ক করেছেন। তার মতে, এটি ইতোমধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে থাকা লক্ষাধিক ফিলিস্তিনির জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রোববার এ বিষয়ে বৈঠক করবে।
এদিকে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস ইসরাইলে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, নতুন পরিকল্পনা বৈধ লক্ষ্য অর্জনে কীভাবে সহায়ক হবে তা বোঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
ইসরাইলে এ পরিকল্পনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ জানিয়েছেন, সেনারা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে।
জিম্মিদের পরিবারের প্রধান সংগঠন ‘হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’ এই পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, এটা জিম্মিদের ‘পরিত্যাগ’ করার শামিল।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ‘গত রাতে মন্ত্রিসভা এমন একটা বেপরোয়া পদক্ষেপ নিয়েছে, যা জিম্মি, সৈন্য ও পুরো ইসরাইলি সমাজের জন্য বিপদের কারণ হবে।’
২০২৩ সালের হামলায় জিম্মি হওয়া ২৫১ জনের মধ্যে এখনো ৪৯ জন গাজায় আছেন, যাদের মধ্যে ২৭ জন মৃত বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনারা।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলা আরও বাড়লে, সেনারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অভিযান চালাতে পারে যেখানে জিম্মিদের রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
কিছু ইসরাইলি অবশ্য এতে সমর্থন জানিয়েছেন। ইহুদিদের একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ছাত্র চেইম ক্লেইন (২৬) বলেন, ‘গাজা নিয়ন্ত্রণে নিলে তারা হামাসকে পুরোপুরি না হলেও বড় অংশে নির্মূল করবে।’
ইসরাইলি সেনারা গত মাসে জানিয়েছিল, তারা গাজা উপত্যকার ৭৫ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
গাজার বাসিন্দারা আরও বাস্তুচ্যুতি ও হামলার আশঙ্কায় ভীত। ছয় সন্তানের মা মাইসা আল-শান্তি (৫২) এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘তারা আমাদের কখনো দক্ষিণে যেতে বলে, কখনো উত্তরে। এখন আবার দক্ষিণে পাঠাতে চায়। আমরা মানুষ, কিন্তু কেউ আমাদের শুনছে না, দেখছে না।’
হামাস শুক্রবার বলেছে, গাজা দখল করা ও এর বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাটি একটি নতুন যুদ্ধাপরাধ। সংগঠনটি সতর্ক করেছে, এতে জিম্মিদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে এবং ইসরাইলকে চরম মূল্য দিতে হবে।
জাতিসংঘ সমর্থিত এক জরিপে সতর্ক করা হয়েছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চলতি বছর গাজায় অপুষ্টিতে অন্তত ৯৯ জন মারা গেছে, যা আসল সংখ্যার চেয়ে কম হতে পারে।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, গাজার ওপর বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার সময় ১৯ বছর বয়সী এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন।
সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেছেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মানুষের মাথায় ভারি ত্রাণের প্যাকেট পড়ে প্রতিদিনই আহত ও প্রাণহানি হচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, ত্রাণ ফেলার জায়গায় ভিড় এবং পদদলিত হওয়ার কারণে প্রায়শই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
বাসাল আরো জানিয়েছে, শুক্রবার গাজাজুড়ে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরাইল সম্প্রতি গাজায় কিছু ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিলেও জাতিসংঘ বলছে, এর পরিমাণ এখনো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ইসরাইলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ২০২৩ সালে হামাসের হামলায় ইসরাইলে নিহত হয়েছে ১ হাজার ২১৯ জন। সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এএফপি এই হিসাব দিয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার মার্কিন-মধ্যস্থতায় আর্মেনিয়া-আজারবাইজান শান্তি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। দেশটি তবে বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। দুই দেশের সীমানার কাছাকাছি বিশেষ করে বিদেশি হস্তক্ষেপকে নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।
তেহরান থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরান দুই দেশের মধ্যে শান্তিচুক্তির চূড়ান্ত সম্পাদনকে স্বাগত জানায়। কিন্তু একই সঙ্গে যে কোনো ধরনের ও ফর্মের বিদেশি হস্তক্ষেপের নেতিবাচক পরিণতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে। বিশেষ করে সাধারণ সীমানার আশেপাশে।
ভারতে বাংলাভাষী মুসলিমরা বলছেন, তারা আটক এবং নির্বাসনের ভয়ে বাস করছেন। দেশটিতে ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান বেড়ে চলেছে। এর ফলে শত শত লোককে অবৈধভাবে বাংলাদেশে জোরপূর্বক প্রবেশ করতে বাধ্য করা হয়েছে। যদিও তাদের মধ্যে অনেকেই ভারতীয় নাগরিক।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দেওয়া জুলাই মাসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ৭ মে থেকে ১৫ জুনের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মুসলিমকে যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই সীমান্ত দিয়ে ‘বহিষ্কার’ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ বিরুদ্ধে ভারতে দমন-পীড়ন নতুন নয়। তবে গত এপ্রিল মাসে জম্মু ও কাশ্মিরে হামলার পর বর্তমান দমন-পীড়নের ধারাটি শুরু হয়েছে।
দিল্লি এই হামলার জন্য ‘পাকিস্তানের সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করার পর ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি শাসিত রাজ্যগুলো হাজার হাজার বাঙালি মুসলিমকে আটক করেছে। তাদের সন্দেহভাজন ‘অবৈধ অভিবাসী’ এবং ‘সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
৫৩ বছর বয়সি ভারতীয় নাগরিক এবং আসাম রাজ্যের সাবেক স্কুলশিক্ষক খাইরুল ইসলাম আরব নিউজকে বলেন, ২৪ মে পুলিশ তাকে তার বাড়ি থেকে আটক করে। তারপর আরও ১৪ জনের সঙ্গে জোর করে বাংলাদেশে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘এটা একটা ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ছিল, আমাকে ভারত ও বাংলাদেশের মাঝামাঝি একটা নো-ম্যানস-ল্যান্ডে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। যখন আমি ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করি তখন ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করে।’
খাইরুল ইসলামের স্ত্রী এবং আত্মীয়-স্বজনরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে তার নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য নথিপত্র দেখানোর প্রায় এক সপ্তাহ পরে তিনি তার দেশে ফিরতে সক্ষম হন।
তিনি বলেন, ‘আমার দাদা ভারত থেকে এসেছিলেন। আমার কাছে ভারতে তার স্কুলের পড়াশোনার একটি কপি আছে - তার অষ্টম শ্রেণীর সার্টিফিকেট। আমার বাবা ১৯৫২ সালে সরকারের কাছ থেকে বন্দুকের লাইসেন্স পেয়েছিলেন। আমি একজন সরকারি কর্মচারী ছিলাম এবং ১৯৯৭ সালে শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়েছি।’
‘এটা তো সহজ হয়রানি। আসামে বাঙালি মুসলিম হওয়া অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের জীবন নরকে পরিণত হয়েছে...। তারা আমাকে বিদেশি বলে ডাকে, কারণ আমি একজন মুসলিম এবং একজন বাঙালি। এই জাদুকরী শিকারে অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে... আমি আশা করি আমাদের প্রতি ন্যায়বিচার হবে।’
বাংলা বাংলাদেশের প্রধান ভাষা হলেও ভারতে আনুমানিক ১০ কোটি বাংলাভাষী রয়েছে। তারা মূলত আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা রাজ্যে বাস করে। তাদের মধ্যে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মুসলমান হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়।
হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, অনিয়মিত অভিবাসন রোধ করার জন্য এই ‘বহিষ্কার’ করা হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে ‘মুসলিম অনুপ্রবেশ’ ভারতের পরিচয়ের জন্য হুমকিস্বরূপ।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা নির্ভীকভাবে সীমান্তের ওপার থেকে চলমান, অনিয়ন্ত্রিত মুসলিম অনুপ্রবেশ প্রতিহত করছি, যা ইতোমধ্যেই একটি উদ্বেগজনক জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলায়, হিন্দুরা এখন তাদের নিজস্ব ভূমিতে সংখ্যালঘু হওয়ার পথে।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি দেশটিকে ‘খারাপ দৃষ্টিতে দেখাচ্ছে’।
তিনি আরব নিউজকে বলেন, যদিও সরকার অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবেলা করতে পারে, তবে এটি যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করতে হবে। বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী মুসলিম কর্মীদের এলোমেলোভাবে আটক করে ধরে নেওয়া এবং তাদের বাংলাদেশি নাগরিক বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
আসামের মতো রাজ্যগুলোতেও সম্প্রতি হাজার হাজার পরিবারকে উচ্ছেদের ঘটনা বেড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সরকারি জমিতে অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগ এনেছে।
মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘চলমান উচ্ছেদগুলো ধর্মীয় বা জাতিগত ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক আচরণের একটি রাষ্ট্রীয় নীতি বলে মনে হচ্ছে, যা সাংবিধানিক সুরক্ষাকে লঙ্ঘন করে।’
গোলাঘাট জেলায় নিজ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া আসামের বাসিন্দা শাজি আলীও সরকারি বর্ণনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার বাবা ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে নওগাঁ জেলা (বাংলাদেশের) থেকে এখানে এসেছিলেন। পূর্ববর্তী সরকারই আমাদের এখানে বসতি স্থাপন করে দিয়েছিল।’
তিনি আরব নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা আছে। আমরা কীভাবে দখলদার হয়ে গেলাম? (বর্তমান) সরকারের জন্য, আমাদের বাঙালি-মুসলিম পরিচয় একটি সমস্যা।’
অল আসাম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সেক্রেটারি মিন্নাতুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, চলমান কর্মকাণ্ডের পেছনে রাজনীতি জড়িত।
তিনি আরব নিউজকে বলেন, ‘আজ আসামে এক অমানবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাংলাভাষী মুসলমানরা চরম আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে...। এটি একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ এবং আসাম সরকার ২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং উচ্ছেদ নির্বাচনী এজেন্ডার অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘লক্ষ্য হলো বাংলাভাষী মুসলিমরা। প্রায় ৯০ লাখ বাঙালি মুসলিম থাকবে। এটা স্পষ্ট যে, আসামে কোনো বাংলাদেশি নেই। সরকার যাই করছে... তা উপযোগী নয়, কেবল রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য মুসলিমদের টার্গেট করছে।’
ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর ভারতের তৈরি পোশাকের অর্ডার স্থগিত করতে শুরু করেছে ওয়ালমার্ট, অ্যামাজন, টার্গেট ও গ্যাপসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় বেশ কয়েকটি কোম্পানি। পাশাপাশি অনেক কোম্পানি ভারত থেকে পোশাক কারখানা অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবছেন। এতে দেশটির তৈরি পোশাক খাত বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে।
এনডিটিভির এক সংবাদে বলা হয়েছে, ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের পর মার্কিন প্রশাসন ‘রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনার অপরাধে’ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের পণ্য রপ্তানিতে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসায়। তারপরও ভারতের তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারকেরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ স্থগিত রাখার ই–মেইল পেতে শুরু করেন। ই–মেইলে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্রয়াদেশ স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।
সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ শুল্কের বোঝা ভাগ করতে রাজি নয়। তারা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের এই ব্যয় বহন করতে বলছে।
উচ্চ শুল্কের কারণে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৩০-৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ কারণে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়াদেশ ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। তাতে কয়েক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ক্ষতির শঙ্কা করছেন ভারতের রপ্তানিকারকেরা।
ভারতের ওয়েলস্পান লিভিং, গোকলদাস এক্সপোর্টস, ইন্দো কাউন্ট ও ট্রাইডেন্টের মতো বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের মোট রপ্তানির ৪০-৭০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে করে থাকে। ভারতের তৈরি পোশাক ও বস্ত্রের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারত চতুর্থ শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। গত বছর ভারত ৪৬৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। এই বাজারে ভারতের মূল প্রতিযোগী দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। ফলে উচ্চ শুল্কের কারণে ভারত থেকে স্থানান্তরিত ক্রয়াদেশ এই দেশ দুটিতে যেতে পারে। তার কারণ, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ করে পাল্টা শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে ২৫ শতাংশ। বাকি ২৫ শতাংশ ২৮ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
ভারতীয় বস্ত্র খাতের শীর্ষ সংগঠন দ্য কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি (সিআইটিআই) এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতের জন্য কার্যত ৫০ শতাংশ শুল্কহার গভীর উদ্বেগের বিষয়। সংগঠনটি বলেছে, ‘৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত শুল্ক ভারতের বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য বিশাল ধাক্কা। আগেই আমরা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে ছিলাম। এই নতুন শুল্কের কারণে তা আরও জটিল হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতার শক্তি কমে যাবে।’ সরকারের প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছে, এই কঠিন সময়ে খাতটিকে দ্রুত সহায়তা দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
শুধু তৈরি পোশাক ও বস্ত্র নয়, বাড়তি ৫০ শতাংশ শুল্কে ভারতের চামড়া, রাসায়নিক, জুতা, রত্ন ও গয়না ও চিংড়ি রপ্তানি খাত সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন দেশটির শিল্প বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতীয় পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক নিয়ে বিরোধ মেটার আগে তাদের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য আলোচনা হবে না। তার প্রশাসন সম্প্রতি ভারতীয় আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এ মন্তব্য করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ওভাল অফিসে দিল্লিভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, নতুন করে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর ভারতের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা আছে কি না।
ট্রাম্প জবাব দেন, ‘না, যতক্ষণ না আমরা বিষয়টি মেটাতে পারছি।’
হোয়াইট হাউস গত বুধবার এক নির্বাহী আদেশ জারি করে ভারতীয় পণ্যের ওপর জরিমানা হিসেবে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে আগের ২৫ শতাংশ পাল্টাসহ মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশেষ করে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির কারণে এই ২৫ শতাংশ জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।
ট্রাম্পের জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, এই আমদানি—সরাসরি হোক বা তৃতীয় দেশের মাধ্যমে হোক, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা ‘অস্বাভাবিক ও গুরুতর হুমকি’ এবং এর ফলে জরুরি অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া ন্যায্য।
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, প্রাথমিক ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। জরিমানা হিসেবে আরোপ করা অতিরিক্ত শুল্ক ২১ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে। মার্কিন বন্দরে প্রবেশ করা সব ভারতীয় পণ্যের ওপর এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে। তবে ইতোমধ্যে যাত্রাপথে থাকা পণ্য এবং কিছু ছাড়প্রাপ্ত ক্যাটাগরি বাদ থাকবে।
আদেশে পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্টকে এ পদক্ষেপ পরিবর্তনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যেমন ভূরাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হলে অথবা ভারত বা অন্য কোনো দেশ পাল্টা ব্যবস্থা নিলে।
অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এম এস স্বামীনাথন শতবর্ষ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তার বক্তব্যে বলেন, অর্থনৈতিক চাপে ভারত পিছু হটবে না।
মোদি দাবি করেন, ‘আমাদের কাছে কৃষকের স্বার্থই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভারত কখনো কৃষক, জেলে ও দুগ্ধশিল্পের স্বার্থ নিয়ে আপস করবে না। আমি জানি, এর জন্য বড় মূল্য দিতে হবে, আর আমি প্রস্তুত। ভারত প্রস্তুত।’
ভারত বরাবরই কৃষি ও দুগ্ধশিল্পের মতো সংবেদনশীল খাত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য উন্মুক্ত করতে আপত্তি জানিয়ে আসছে। কারণ, এতে গ্রামীণ জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
এ অচলাবস্থা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা তীব্রতর করেছে, যেখানে উভয় পক্ষই নিজেদের অর্থনৈতিক নীতি ও জাতীয় স্বার্থে অনড় অবস্থান নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি গ্রন্থাগার থেকে দুর্লভ চীনা পাণ্ডুলিপি ধার করে সেগুলোর বদলে নকল পাণ্ডুলিপি ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
এতে ২ লাখ ১৬ হাজার ডলারের চুরির মামলা হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
মার্কিন বিচার বিভাগ জানায়, জেফরি ইং (৩৮) একাধিক ছদ্মনাম ব্যবহার করে লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গ্রন্থাগার থেকে ৬০০ বছরের পুরোনো কিছু ক্লাসিক বই নিয়েছিলেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ইং ওইসব বই নিয়ে যাওয়ার কয়েক দিন পর সেগুলোর নকল পাণ্ডুলিপি ফেরত দিতেন এবং প্রায়শই এর পরপরই চীনে যেতেন।
বিচার বিভাগ জানায়, ‘গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু দুর্লভ চীনা পাণ্ডুলিপি খুঁজে না পেয়ে প্রাথমিক তদন্তে দেখতে পায়, ‘অ্যালান ফুজিমোরি’ নামের এক ব্যক্তি সর্বশেষ ওই বইগুলো দেখেছিলেন।’
গোয়েন্দারা যখন লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি হোটেলে ইং-এর থাকার জায়গায় অভিযান চালায়, তখন তারা বেশ কিছু ফাঁকা পাণ্ডুলিপি খুঁজে পায়, যা চুরি হওয়া বইগুলোর মতো দেখতে।
বিচার বিভাগ আরও জানায়, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখানে এমন লেবেল বা ট্যাগ (অ্যাসেট ট্যাগ) পেয়েছে, যা চুরি যাওয়া পাণ্ডুলিপিগুলোর সঙ্গে মিল ছিল। এই ট্যাগগুলো দিয়ে নকল বা ‘ডামি’ বই তৈরি করে আসল বইয়ের জায়গায় ফেরত দেওয়া হতো।’
গ্রন্থাগারের নিয়ম অনুযায়ী, দুর্লভ ও কেবল একটি কপি আছে এমন বইগুলো শুধু গ্রন্থাগারের ভেতরেই দেখা যায়, সাধারণ বইয়ের মতো সেগুলো বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই।
বেই এরিয়ার ফ্রিমন্টের বাসিন্দা ইং-এর কাছে বিভিন্ন নামে বেশ কয়েকটি গ্রন্থাগার কার্ডও পাওয়া গেছে।
দুর্লভ শিল্পকর্ম চুরির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে ইং-এর ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। বর্তমানে তিনি রাজ্য হেফাজতে আছেন।
চীনের শিল্পবাজার বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেখানে সরকার অনুমোদিত জাদুঘর যেমন বাড়ছে, তেমনি বেসরকারি শিল্পবাজারও জমজমাট হচ্ছে। ধনী ও দেশপ্রেমিক হয়ে উঠা মধ্যবিত্তরা দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার করতে আগ্রহী হওয়ায় এমনটি হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার হোয়াইট হাউসে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের নেতাদের নিয়ে এক ‘ঐতিহাসিক শান্তি সম্মেলন’ আয়োজন করছেন।
দুই সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান ঘটানোই এর লক্ষ্য।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।
ট্রাম্প বৃহস্পতিবার তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেছেন যে, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান ও আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ আমার সঙ্গে হোয়াইট হাউসে আনুষ্ঠানিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। দীর্ঘদিনের শত্রু এই দুই দেশ যদি সত্যিই চুক্তিতে পৌঁছায়, তাহলে এটি হবে ট্রাম্পের সর্বশেষ কূটনৈতিক সাফল্য। যিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংঘাতে তার মধ্যস্থতাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের উপযুক্ত বলে মনে করেন।
নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে দুই যুদ্ধ
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে দুইবার যুদ্ধ করেছে। ২০২৩ সালে আজারবাইজান একটি দ্রুত সামরিক অভিযানে অঞ্চলটি পুনরুদ্ধার করে।
এতে ১ লাখেরও বেশি জাতিগত আর্মেনিয়ানের দেশত্যাগ ঘটায়। দুই দেশের মধ্যে ইতঃপূর্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবং ইউরোপীয় রাজনৈতিক সম্মেলনে শান্তিচুক্তির আলোচনা হয়েছে। তবে সেগুলোর ফলাফল আশাব্যঞ্জক ছিল না।
ট্রাম্পের দাবি ও আশাবাদ
ট্রাম্প বলেন, ‘এই দুই জাতি বহু বছর ধরে যুদ্ধে জড়িত। এই যুদ্ধে হাজার হাজার প্রাণহানি হয়েছে। বহু নেতা চেষ্টা করেছেন এই যুদ্ধ বন্ধ করতে, কিন্তু সফল হননি। আমার প্রশাসনের প্রচেষ্টায় অবশেষে সেই দিন এসেছে।
বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী ট্রাম্প আরও বলেন, ‘শুক্রবার আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন হবে। তাহলে দেখা হবে!’
ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন উভয় দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে একসাথে অর্থনৈতিক সুযোগুলো অনুসরণ করার জন্য, যাতে আমরা দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের সম্ভাবনা সম্পূর্ণরূপে উন্মোচন করতে পারি।
এক্সনমোবিল চুক্তি
ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের সঙ্গেই আলাদা আলাদা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করবে, যার মাধ্যমে দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে।
এরই মধ্যে ওয়াশিংটনে বৃহস্পতিবার আজারবাইজানের রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা এসওসিএআর গ্যাস এক্সনমোবিলের মধ্যে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে ।
চুক্তি স্বাক্ষরে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ ও ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।
পরে আলিয়েভ ও উইটকফ দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসেন বলে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ এক পোস্ট করে বিষয়টি জানিয়ে দেন।
সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের এই দুই দেশ চলতি বছরের মার্চ মাসে শান্তিচুক্তির একটি খসড়া টেক্সটে সম্মত হয়।
আজারবাইজান তখন থেকে নথিতে স্বাক্ষর করার আগে কারাবাখের ওপর আঞ্চলিক দাবি ত্যাগ করার জন্য আর্মেনিয়ার সংবিধানে সংশোধনসহ বেশ কয়েকটি দাবির রূপরেখা তৈরি করেছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসব শর্ত পূরণ হয়েছে কি-না, তা স্পষ্ট নয়।
যদিও ট্রাম্প বলেছেন যে, তার প্রশাসন বেশ কিছুদিন ধরে উভয় পক্ষের সাথে জড়িত ছিল।
তবে তিনি দুই দেশের প্রতিনিধিদের দ্বারা স্বাক্ষরিত নথি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি।
জুলাইয়ের গোড়ার দিকে, পাশিনিয়ান ও আলিয়েভ সংযুক্ত আরব আমিরাতে সর্বশেষ দফা শান্তি আলোচনার জন্য মিলিত হন। কিন্তু তারা কোনও অগ্রগতি অর্জন করতে ব্যর্থ হন।
দুই শত্রুরাষ্ট্র এর আগে মে মাসে আলবেনিয়ায় ইউরোপীয় রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দেখা করেছিলেন।
সেই সময়ে ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল মাঁখো এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কস্তা দুই দেশের মধ্যে দ্রুত একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মন্তব্য