বৈশ্বিক বাণিজ্য এখন ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এ কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে ‘বাণিজ্যযুদ্ধে’ না জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন তিনি।
স্থানীয় সময় বুধবার (৯ জুলাই) আসিয়ান জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই সতর্কতার আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের কারণে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো বর্তমানে উদ্বিগ্নতার মধ্যে রয়েছে। এরই মধ্যে এই সতর্কতা দিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের আঞ্চলিক জোট হচ্ছে আসিয়ান। বিশ্বের সবচেয়ে বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোর বেশ কয়েকটি এই জোটের সদস্য বলে মনে করা হয়। তবে জোটের ১০টির মধ্যে আটটি দেশই পড়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের মুখে, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে আনোয়ার বলেন, বিশ্ব এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে নীতিকে অস্থির করে তুলছে ক্ষমতা। একসময় যে বিষয়গুলো প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হতো, এখন তা চাপ সৃষ্টি, একঘরে করা ও নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও চলমান বাণিজ্য হুমকি মোকাবিলায় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
জোটভুক্ত দেশগুলোকে পারস্পরিক বাণিজ্য বাড়ানো, আঞ্চলিক সংহতি জোরদার এবং বাইরের শক্তির ওপর নির্ভরতা কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাদের সংহতি কেবল ঘোষণার মধ্যে সীমিত থাকলে চলবে না। এই বাণিজ্য হুমকি কোনো ক্ষণস্থায়ী ঝড় নয়। এটি আমাদের সময়ের নতুন বাস্তবতা।’
চলতি বছরের এপ্রিলে প্রথম এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অবশ্য সমঝোতার সুযোগ দিতে সে সময় ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করা হয়। এরপর সোমবার (৭ জুলাই) ও বুধবার (৯ জুলাই) নতুন করে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ হারে, কোনো দেশের ওপর আবার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। কোনো সমঝোতায় না এলে ১ আগস্ট থেকে এই হারে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে, কোনো দেশ পাল্টা পদক্ষেপ নিলে তার বিরুদ্ধে আরও শুল্ক বাড়ানোর হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
প্রথমবারে শুল্ক আরোপের পর কেবল ভিয়েতনামই একটি চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হার ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামাতে পেরেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, ব্রাজিলের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার ওপর ৩৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের ওপর ২৫ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ২০ শতাংশ, আর লাওস ও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হতে পারে। বাংলাদেশের ওপরও শুল্কের এই খড়্গ নেমে এসেছে ৩৫ শতাংশ হারে।
আসিয়ানভুক্ত অনেক দেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করেছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে তারা যৌথ অবস্থান তৈরির চেষ্টা করবে।
এদিকে, মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী জাফরুল আজিজ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনা চলবে, তবে জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয়ে তারা আপস করবেন না।
তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে নীতিমালা ও আইন সংক্রান্ত কিছু দাবি এসেছে, যার মধ্যে রয়েছে সরকারি ক্রয়নীতি, হালাল সনদ, চিকিৎসা মানদণ্ড ও ডিজিটাল করের মতো বিষয়গুলো। তবে তিনি এসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
জাফরুল আজিজ বলেন, ‘কোনো চুক্তি হলে তা অবশ্যই ন্যায্য হতে হবে। যদি কোনো সমঝোতা মালয়েশিয়ার জন্য লাভজনক না হয়, তাহলে তা আমাদের দরকার নেই।’
বাণিজ্য সংকট ছাড়াও আসিয়ান জোট এখন আরও কিছু গুরুতর অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এর মধ্যে মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ এবং থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্ত বিরোধ অন্যতম।
মালয়েশিয়ায় চলমান এই সম্মেলন শেষে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ও শুক্রবার (১১ জুলাই) আসিয়ান জোটের বড় বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এসব বৈঠকে অংশ নেবে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, রাশিয়া, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
বৃহস্পতিবার সম্মেলনে যোগ দিতে মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। এটাই এশিয়ায় তার প্রথম সফর। বৈঠকে আরও অংশ নিচ্ছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
এই অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ার কারণে এই বৈঠকগুলোতে আসিয়ান জোটের ভূমিকা বড় ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি, অন্যায্য কোনো চাপের কাছে মাথা নত না করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলা মেনে চলার অঙ্গীকার জোরদার করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছে এই জোটটি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেছেন। সোমবার (১৪ জুলাই) তিনি এ কথা জানান। অন্যথায় মস্কোকে ব্যাপক নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। ন্যাটোর মাধ্যমে কিয়েভে নতুন অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনাও তুলে ধরেন তিনি।
ট্রাম্প জানান, তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর ‘খুব, খুব অসন্তুষ্ট’। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রুশ নেতা মারাত্মক এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে অস্বীকৃতি জানানোয়ে অবশেষে তার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছে। ৫০ দিনের মধ্যে যদি কোনো চুক্তি না হয়, তাহলে আমরা খুব কঠোর শুল্ক আরোপ করব, প্রায় ১০০ শতাংশ শুল্ক। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে ওভাল অফিসে বৈঠকের সময় ট্রাম্প এসব কথা বলেন।
এই রিপাবলিকান নেতা আরও বলেন, এগুলো হবে ‘দ্বিতীয় শুল্ক’ যা রাশিয়ার অবশিষ্ট বাণিজ্য অংশীদারদের লক্ষ্য করে করা হবে। এরই মধ্যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় মস্কোর টিকে থাকার ক্ষমতাকে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাশিয়ান ফেডারেল কাস্টমস সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রাশিয়ার শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল চীন, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ভারত, তুরস্ক এবং বেলারুশ।
ট্রাম্প এবং রুট নতুন একটি চুক্তিও উন্মোচন করেছেন যার অধীনে ন্যাটো সামরিক জোট যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনবে। এর মধ্যে প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি-ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারিও থাকবে এবং এগুলি ইউক্রেনে পাঠানো হবে।
রুট বলেন, এটা সত্যিই বড়। তিনি ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের অভিযোগ নিরসনের লক্ষ্যে একটি চুক্তির কথা তুলে ধরেন। ট্রাম্প অনেকদিন ধরেই দাবি করে আসছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য ইউরোপীয় এবং ন্যাটো মিত্রদের চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করছে।
এই ন্যাটো প্রধান বলেন, জার্মানি, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন এবং ব্রিটেনও ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি যদি আজ ভ্লাদিমির পুতিনের জায়গায় থাকতাম এবং আপনার কথা শুনতে পেতাম... তাহলে আমি পুনর্বিবেচনা করতাম যে ইউক্রেন সম্পর্কে আলোচনা আরও গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ঘোষণা করেন যে, তিনি ট্রাম্পের সাথে কথা বলেছেন এবং অস্ত্র চুক্তির জন্য ‘কৃতজ্ঞ’।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর আগ্রাসন চলছেই। বেশ কিছু চিকিৎসা সূত্রের খবর অনুযায়ী, অবরুদ্ধ এই উপত্যকাজুড়ে একদিনে নতুন করে আরও কমপক্ষে ৭৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রাফায় আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) পরিচালিত ফিল্ড হাসপাতাল জানিয়েছে, গত ছয় সপ্তাহে তারা যতগুলো হতাহতের ঘটনা দেখেছে, তা গত এক বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (১১ জুলাই) পর্যন্ত গাজায় মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৮৯ জন। এদের মধ্যে ৬১৫ জন নিহত হয়েছেন মার্কিন ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর বিতরণকেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায়। আরও ১৮৩ জন নিহত হয়েছেন জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার ত্রাণ কনভয়ের পাশে।
অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় এরই মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলি যুদ্ধে কমপক্ষে ৫৮ হাজার ৩৮৬ জন নিহত এবং ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৭ জন আহত হয়েছেন।
অপরদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে আনুমানিক ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি হিসেবে অপহরণ করা হয়েছে।
গাজায় স্বাধীনতাকামীদের উৎখাতে মাহমুদ আব্বাসের পরিকল্পনা
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের দীর্ঘ ২১ মাসের অবরোধ ও যুদ্ধপরবর্তী সময়ে এখানকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। গাজায় স্বাধীনতাকামীদের উৎখাত করতে চান তিনি।
তিনি বলেছে, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির অবশ্যই ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের সব ধরনের অস্ত্র হস্তান্তর করতে হবে। একই সঙ্গে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের হাতেই থাকা উচিত। গত রোববার জর্ডানের রাজধানী আম্মানে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে এক সাক্ষাতে এসব কথা বলেন আব্বাস।
পাশাপাশি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির অবশ্যই বৈধ প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে। এই বছরের গোড়ার দিকে আব্বাস লেবানন সফর করেন এবং সেখানে তিনি এমন একটি বিষয়ে সম্মতি দেন যার ফলে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো অস্ত্র ত্যাগ করবে। যদিও দুর্নীতি ও ইসরায়েলঘেঁষা হওয়ার কারণে আব্বাসসহ তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা সাধারণ ফিলিস্তিনিদের কাছে যথেষ্ট অজনপ্রিয়।
এদিকে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো মনে করে ইসরায়েল থেকে আসা হুমকি এবং চলমান রাজনৈতিক অবক্ষয়কে মাথায় রেখে অস্ত্র বহন অপরিহার্য। টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে বৈঠকে আব্বাস আরও বলেন, যুদ্ধের পর একমাত্র বাস্তবসম্মত সমাধান হল গাজা থেকে ইসরায়েল পুরোপুরি নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করবে এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ওই অঞ্চলের দায়িত্ব নেবে, যা আরব দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সমর্থন করবে বলে তিনি মনে করেন।
গাজা ফেরত আরও এক ইসরায়েলি সেনার আত্মহত্যা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অভিযান শেষে ফেরার পর আবারও এক ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন। সিরিয়ার দখলকৃত গোলান মালভূমির একটি সামরিক ঘাঁটিতে সোমবার (১৪ জুলাই) ওই সেনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। খবর টিআরটি ওয়ার্ড।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ওই সেনাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, তবে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। সেনাবাহিনী কেবল জানায়, এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সামরিক পুলিশ।
স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল ১২-এর খবরে বলা হয়, আত্মহত্যাকারী ওই সেনা ‘নাহাল ব্রিগেড’-এর সদস্য ছিলেন এবং গাজায় সামরিক অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।
গত ১০ দিনের মধ্যে এটি তৃতীয় ইসরায়েলি সেনার আত্মহত্যা। এর আগে গত সপ্তাহে এক রিজার্ভ সেনা আত্মহত্যা করেন এবং আরেকজনকে সামরিক ঘাঁটি থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে একের পর এক এমন আত্মহত্যার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক মহল ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ এক্স-এ দেওয়া পোস্টে বলেন, 'গত এক সপ্তাহে তিনজন সেনা আত্মহত্যা করেছেন। এটি এক দমবন্ধ করা বাস্তবতা।’ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন। গত বছরের শেষার্ধে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকেই সেনাদের মানসিক চাপ বাড়তে থাকে, যার ফলে আত্মহত্যার হারও বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় বড় পরিসরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই গণহত্যামূলক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭ হাজার ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ।
গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সরব মার্কিন পপ তারকা
গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলেছেন মার্কিন পপ তারকা ওলিভিয়া রদ্রিগো। এক ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে তিনি এই পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেন। রদ্রিগো লেখেন, ‘গাজার মা-বাবা, শিশুরা ও পরিবারগুলো আজ অভুক্ত, পানিহীন এবং জরুরি চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল, ফিলিস্তিন কিংবা পৃথিবীর কোনো প্রান্তের কোনো শিশুই এমন যন্ত্রণার শিকার হওয়া উচিত নয়। তাদের প্রতি অবহেলা মানেই আমাদের সম্মিলিত মানবতার প্রতি অবহেলা।’
রদ্রিগো জানান, তিনি ইউনিসেফ-এ অনুদান দিয়েছেন যেন গাজার নিরীহ মানুষদের সহায়তা করা যায়, এবং অন্যদেরও সামর্থ্য অনুযায়ী অনুদান দেওয়ার অনুরোধ জানান।
ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) মঙ্গলবার ড্রোন হামলার ফলে মার্কিন-পরিচালিত একটি তেলক্ষেত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কুর্দিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুহোক প্রদেশের সারসাং তেলক্ষেত্রে হামলা হয়েছে। এই হামলা ‘কুর্দিস্তান অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের একটি কর্মকাণ্ড।’
প্রতিবেশী ইরবিল প্রদেশে একদিন আগে একই রকম ড্রোন হামলার পর নতুন এই হামলা চালানো হলো। তবে কারা হামলা চালিয়েছে, তা স্পষ্ট হয়।
মার্কিন কোম্পানি এইচকেএন এনার্জি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে সারসাং ফিল্ডে তাদের একটি উৎপাদন কেন্দ্রে বিস্ফোরণটি ঘটে। স্থানটি সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত সুবিধার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
এইচকেএন এনার্জির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যায়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। জরুরি প্রতিক্রিয়া দলগুলো আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কুর্দিস্তান অঞ্চলে ড্রোন এবং রকেট হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) কুর্দিস্তানে তিনটি বিস্ফোরক-বোঝাই ড্রোন হামলার খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি ড্রোন মার্কিন সেনাদের আবাসস্থল ইরবিল বিমানবন্দরের কাছে ভূপাতিত করা হয় এবং আরও দুটি খুরমালা তেলক্ষেত্রে আঘাত হানার ফলে বস্তুগত ক্ষতি হয়।
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম থেকে সরে আসার শর্ত দিলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে কোনো পরমাণু আলোচনা নয়—এই অবস্থান স্পষ্ট করেছে ইরান। সোমবার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা ও দরকষাকষিতে বসেছিল তেহরান। তবে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরায়েলের আকস্মিক বিমান হামলা এবং এর পাল্টা জবাবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর ওই আলোচনা ভেস্তে যায়। টানা ১২ দিনের এই সংঘাতের পর উভয় দেশ ফের আলোচনায় ফিরতে ইঙ্গিত দিলেও নতুন করে আলোচনা শুরুর আগে কঠোর অবস্থান নিয়েছে তেহরান।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা আলি বেলায়েতি বলেন, ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের শর্তে কোনো আলোচনা হবে না।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার থেকে ইরান সরে আসবে না।
এর আগে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে আলোচনায় বসার দিন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এখনো কোথায়, কবে এবং কখন ওই বৈঠক হবে তা নির্ধারণ হয়নি।’
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে দুই পক্ষের মধ্যে পাঁচ দফা বৈঠক হলেও তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর এটিই ছিল ওয়াশিংটন ও তেহরানের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সরাসরি সংলাপ, যা ওমানের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত হয়।
তবে গত ১৩ জুন ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার কারণে পূর্বনির্ধারিত ষষ্ঠ দফার বৈঠক বাতিল হয়। পরে এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও সীমিতভাবে ইসরায়েলের পাশে অবস্থান নেয়।
এই প্রসঙ্গে মুখপাত্র ইসমাইল বাকি বলেন, ‘আমরা কূটনীতি ও দরকষাকষিকে বিশেষ গুরুত্ব দিই এবং খোলা মনে আলোচনায় বসেছিলাম। কিন্তু আপনারা দেখেছেন, ষষ্ঠ দফার আলোচনার আগে ইসরায়েলের জায়নবাদী শাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে।’
এদিকে, সোমবার (১৪ জুলাই) এক বিবৃতিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘ইরান সবসময় কূটনীতি ও গঠনমূলক আলোচনাকে সমর্থন করে। আমরা বিশ্বাস করি, এখনো কূটনীতির পথ খোলা আছে এবং আমরা শান্তিপূর্ণ পথেই চলব।’
ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগ বারবার এনেছে ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলো। তবে ইরান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা দাবি করছে, পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশে পরিচালিত হচ্ছে।
জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ-ও জানিয়েছে, ইরান তাদের ইউরেনিয়ামের মজুতকে অস্ত্র নির্মাণে ব্যবহার করছে বা করতে চায়—এমন কোনো প্রমাণ তারা পাননি।
বর্তমানে ইরানই একমাত্র দেশ, যারা পরমাণু অস্ত্রের মালিক না হয়েও ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে এর চেয়েও বেশি মাত্রায় সমৃদ্ধকরণ প্রয়োজন।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে রাশিয়াকে ৫০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। না হলে শতভাগ হারে শুল্ক আরোপসহ কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে মস্কো।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্প একইসঙ্গে ইউক্রেনের জন্য নতুন অস্ত্র সহায়তার ঘোষণাও দিয়েছেন।
সোমবার হোয়াইট হাউজে ন্যাটো’র মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠকের সময় সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার ওপর খুবই ক্ষুব্ধ। ৫০ দিনের মধ্যে সমঝোতা না হলে শতভাগ হারে শুল্ক বসবে। এটা হবে সেকেন্ডারি ট্যারিফ, যা রাশিয়ার বাণিজ্য অংশীদারদেরও লক্ষ্যবস্তু করবে। এতে মস্কোর বাকি বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর শুল্ক বসিয়ে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মাঝে রাশিয়ার টিকে থাকার শক্তি কমিয়ে দেওয়া হবে।’
ট্রাম্প ও রুট একটি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন, যার মাধ্যমে ন্যাটো যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কিনে তা ইউক্রেনকে সরবরাহ করবে। এর মধ্যে রয়েছে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
ট্রাম্প বলেন, ‘বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কিনে তা ন্যাটোর মাধ্যমে দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে দেওয়া হবে।’
ন্যাটো প্রধান জানান, চুক্তির আওতায় ইউক্রেন বিপুল সংখ্যক অস্ত্র পাবে।
রুট, সাবেক ডাচ প্রধানমন্ত্রী যিনি এখন ন্যাটো মহাসচিব। হোয়াইট হাউজে এটাই তার সফর প্রথম। তিনি জুনে হেগে ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্পকে ‘ড্যাডি’ বলে সম্বোধন করেছিলেন।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর থেকেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী। এমনকি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চান বলেও জানিয়েছিলেন।
তবে ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউজে অপমান করার পর থেকেই কিয়েভে আশঙ্কা তৈরি হয়— ইউক্রেনকে বোধহয় বিক্রি করে দিতে চলেছেন ট্রাম্প।
কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্পের পুতিনের ওপর রাগ ও হতাশা বেড়েছে, কারণ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তার তিন বছরব্যাপী আগ্রাসন থামানোর বদলে হামলা আরও বাড়িয়ে চলেছেন।
পুতিন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি বলছি না, তিনি একজন খুনি। তবে খুবই কঠিন মানুষ।’
গত সপ্তাহে ট্রাম্প রাশিয়া বিষয়ে একটি ঘোষণা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এরপর রোববার তিনি জানান, ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানো হবে। যাতে রুশ হামলা ঠেকানো যায়।
এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের আগের অবস্থান থেকে একপ্রকার ইউটার্ন, কারণ জুলাইয়ের শুরুতে কিছু অস্ত্র সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
গত কয়েক সপ্তাহে মস্কো রেকর্ডসংখ্যক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, শুধু জুনেই ইউক্রেনে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা তিন বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সোমবার ট্রাম্প যখন এ ঘোষণা দেন, ঠিক তখনই তার বিশেষ দূত কিথ কেলগ কিয়েভে পৌঁছান প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করতে।
জেলেনস্কি বৈঠককে ‘গঠনমূলক’ বলে প্রশংসা করেন। তিনি জানান, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করা, ইউরোপের সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা ও উৎপাদন—এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সমর্থনের বার্তা ও ইতিবাচক সিদ্ধান্তের জন্য আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
একজন ইউক্রেনীয় সেনা, যিনি নিজের পরিচয় দিয়েছেন কল সাইন ‘গ্রিজলি’ হিসেবে, ট্রাম্পের নতুন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহায়তার প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি এএফপি’কে বলেন, ‘কখনো না হওয়ার থেকে দেরিতে হওয়া ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সামনে লড়াই করছি, কিন্তু আমাদের পরিবারগুলো নিরাপদ নয়। তাদের দেওয়া প্যাট্রিয়টের কারণে এখন আমাদের পরিবারগুলো অনেক বেশি নিরাপদ থাকবে।’
এদিকে সোমবার রুশ বাহিনী দোনেৎস্ক ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের দু’টি গ্রাম দখলে নেওয়ার দাবি করেছে। একই দিনে খারকিভ ও সুমি অঞ্চলে রাশিয়ান হামলায় কমপক্ষে তিনজন বেসামরিক লোক নিহত হয় বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা।
এদিকে ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেঙ্কোকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়নের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
সভিরিদেঙ্কো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ইউক্রেন এখন এক ‘গুরুত্বপূর্ণ সময়’ পার করছে।
মালয়েশিয়া সোমবার থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত উচ্চক্ষমতার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপের রপ্তানি, ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের ওপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মাধ্যমে চিপ পাচার ও অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করার লক্ষ্য নিয়েছে দেশটি, বিশেষ করে চীনের মতো দেশের ক্ষেত্রে।
কুয়ালালামপুর থেকে এএফপি জানায়, মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হচ্ছে। এখন থেকে মার্কিন উৎপাদিত উচ্চক্ষমতার এআই চিপ রপ্তানি, ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট করতে হলে স্ট্র্যাটেজিক ট্রেড পারমিট নিতে হবে।’
সরকার আরও জানায়, ‘এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রচলিত আইনি ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করা হবে এবং মালয়েশিয়া একইসঙ্গে তার ‘স্ট্র্যাটেজিক আইটেম তালিকা’তে এসব মার্কিন এআই চিপকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।’
এর আগে ওয়াশিংটন উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি চিপের ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে সংবেদনশীল প্রযুক্তি চীনে পাচার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত মাসে কুয়ালালামপুর ঘোষণা দেয়, তারা একটি চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে যারা নিভিডিয়া চিপযুক্ত সার্ভার ব্যবহার করে মার্কিন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে মালয়েশিয়াতে এআই মডেল তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, মার্চ মাসে চীনা কিছু প্রকৌশলী ডেটা সম্বলিত হার্ডড্রাইভ নিয়ে মালয়েশিয়ায় আসেন, এবং মালয়েশিয়ান ডেটা সেন্টারে উন্নত নিভিডিয়া চিপ ব্যবহার করে এআই মডেল তৈরি করেন।
তাদের পরিকল্পনা ছিল, এই মডেলগুলো পরে চীনে নিয়ে যাওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই উন্নত মানের সেমিকন্ডাক্টর চিপ বিশেষ করে নিভিডিয়ার তৈরি চিপ চীনে রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যাতে তারা প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারে।
গাজায় ইসরাইলের চলমান সংঘাত নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আশা করছেন, দোহায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার অগ্রগতি থেমে থাকলেও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সংকট কিছুটা নিরসন হবে।
জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজ (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘গাজা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি এবং আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বিষয়টা গুছিয়ে নিতে পারব।’
এ সময় তিনি চলতি মাসের ৪ তারিখে দেওয়া একই ধরনের আশাবাদী বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন।
মন্তব্য