একটি নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় আরও জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে হামাস। শনিবার শুরু হওয়া নতুন আলোচনার পর তারা এই প্রস্তাব দিয়েছে । গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর উভয় পক্ষের মধ্যে এই আলোচনা শুরু হলো। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক রাতেই ১০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর বিবিসির।
ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং দুই মাসের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ৯ জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস। ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবিত নতুন চুক্তিতে প্রতিদিন ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাকের গাজায় প্রবেশ এবং অসুস্থ বা রোগীদের গাজা থেকে বের করে আনার কথা বলা হয়েছে।
দোহায় দুই পক্ষের আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবিত চুক্তি সম্পর্কে ইসরায়েল এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা এই আলোচনার আগে জানিয়েছে যে, তারা গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার বা যুদ্ধ বন্ধের কোনো অঙ্গীকার করবে না। জবাবে ইসরায়েল হামাসের হাতে এখনো আটকে থাকা সব জিম্মি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দাবি করেছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নতুন অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। অভিযানে বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে। গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া অভিযানে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। কারণ ইসরায়েল খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা সেখানে যেতে দিচ্ছে না।
এর আগে হামাসকে ধ্বংস করতে ও গাজার দখল ও নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযানের কথা বলেছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজা থেকে সাংবাদিক ঘাদা আল কুর্দ বিবিসি নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামে সেখানে ব্যাপক হামলার বর্ণনা দিয়েছেন। ত্রাণ সংস্থাগুলো গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করেছে। ফুটেজগুলোয় ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের দেখা যাচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, গাজায় বহু মানুষ খাদ্য পাচ্ছে না। কিন্তু ইসরায়েল সরকার বারবার গাজায় খাদ্য সংকটের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল থেকে ব্রিটিশ চিকিৎসক ভিক্টোরিয়ো রোজ বিবিসি রেডিও ফোর-এর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেন, তার টিম অবসন্ন হয়ে পড়েছে এবং কর্মীরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ওজন হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, শিশুরা খুবই লিকলিকে হয়ে পড়েছে। আমরা অনেককে পেয়েছি যাদের দাঁত পড়ে গেছে। অনেকে পুড়ে আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ইনফেকশনের প্রবণতা আছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত ৫ মে বলেছেন, তারা গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ওই অঞ্চলে তার সফর শেষ করেছেন। আইডিএফ বলছে, সব জিম্মির মুক্তি এবং যত দিন হামাসকে আর কোনো হুমকি মনে না হবে, তত দিন তাদের অভিযান চলবে।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক রাতে নিহত ১০০
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক রাতে কমপক্ষে ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে নতুন করে মধ্যস্থতা শুরু করেছে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খলিল আল-দেকরান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘রাতভর আমরা অন্তত ১০০ জন শহীদের খবর পেয়েছি। অনেক পরিবার পুরোপুরি মুছে গেছে নাগরিক নিবন্ধন তালিকা থেকে।’
বিমান হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার থেকে গাজাজুড়ে বিস্তৃত হামলা চালিয়ে শত শত মানুষকে হত্যার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল, যার লক্ষ্য হলো নতুন একটি স্থল অভিযান চালিয়ে গাজার নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে ‘অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ’নিশ্চিত করা।
ইসরায়েল মার্চের শুরু থেকে গাজায় চিকিৎসা, খাদ্য ও জ্বালানির প্রবেশ বন্ধ রেখেছে, যাতে হামাসকে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি দিতে চাপ দেওয়া যায়। একই সঙ্গে গাজা পুরোপুরি দখল ও ত্রাণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনাও অনুমোদন করেছে দেশটি। হামাস বলেছে, তারা কেবল যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েলিদের মুক্তি দেবে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নতুন দফায় মধ্যস্থতা শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। তবে আলোচনার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনও অগ্রগতি হয়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ আরাবিয়া ও বিবিসি জানিয়েছে, হামাস একটি প্রস্তাব দিয়েছে- যার আওতায় তারা দুই মাসের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের প্রায় অর্ধেককে মুক্তি দিতে চায় এবং এর বদলে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের ছাড়ার দাবি জানিয়েছে।
রয়টার্সকে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলের অবস্থান অপরিবর্তিত- তারা শুধু নিজেদের জিম্মিদের মুক্তি চায়, যুদ্ধ শেষের কোনও প্রতিশ্রুতি ছাড়াই। এমন অবস্থায় যুদ্ধবিরতিতে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হওয়ার খবরে। তবে হামাস বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি, আর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও কোনও মন্তব্য আসেনি।
ইসরায়েলের এই সংকটের মধ্যেও জিম্মি মুক্তি চুক্তির পরিবর্তে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে দায়ী করেছেন এক জিম্মির মা। মাতান জাঙ্গাউকারের মা আইনাভ জাঙ্গাউকার এক্স-এ লিখেছেন, সরকার শুধু আংশিক চুক্তিতে আগ্রহী। তারা আমাদের কষ্ট দিচ্ছে ইচ্ছাকৃত। আমাদের সন্তানদের ফেরত আনুন, সব, ৫৮ জনকেই!’
রাতের এক হামলায় দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে একটি তাঁবুতে আঘাত হানে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। এতে নারী-শিশুসহ বহু মানুষ নিহত হন, আহত হন অনেকে এবং বেশ কয়েকটি তাঁবু আগুনে পুড়ে যায়। হামাস এই ঘটনাকে নতুন একটি নৃশংস অপরাধ বলে অভিহিত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকেই এই সহিংসতার জন্য দায়ী করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার (২১ মে) সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসির ইহুদি জাদুঘরের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান ক্রিস্টি নোম। তিনি জানান, এ হামলার ঘটনা ঘটেছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ওয়াশিংটন কার্যালয়ের একেবারে কাছাকাছি এলাকায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি জানান, তিনি ওয়াশিংটনের বর্তমান অ্যাটর্নি ও সাবেক বিচারক জ্যানিন পিরোর সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
এদিকে, এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ ঘটনাকে তিনি ‘একটি বর্বর ও ইহুদি-বিদ্বেষমূলক সন্ত্রাসী হামলা’ বলে উল্লেখ করেন।
তবে বুধবার রাত পর্যন্ত হামলার সঙ্গে কারা জড়িত কিংবা কী উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে, সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি পুলিশ।
ড্যানন বলেন, ‘আামদের বিশ্বাস, এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। বিশ্বের যেখানেই হোক না কেন, ইসরায়েল তার নাগরিক ও কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সুরক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের আশাবাদের জেরে বিটকয়েনের দাম বুধবার নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে।
লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন এদিন বেড়ে দাঁড়ায় সর্বকালের সর্বোচ্চ ১,০৯,৪৯৯.৭৬ মার্কিন ডলারে, যা আগের সর্বোচ্চ রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। আগের রেকর্ডটি হয়েছিল ২০ জানুয়ারি, যেদিন ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।
বিশ্লেষকদের মতে, বিটকয়েনের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক একটি প্রস্তাবিত আইনের প্রতি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের সমর্থনের কারণে। ওই আইনটি মূলত ‘স্টেবলকয়েন’ নিয়ন্ত্রণে প্রণয়ন করা হচ্ছে—যেসব ডিজিটাল কয়েনের মান ডলারের সঙ্গে যুক্ত।
যদিও বিটকয়েন সরাসরি ডলারের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, তবুও এই আইনের মধ্য দিয়ে খাতটির জন্য একটি সুস্পষ্ট নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা বিটকয়েনকেও ইতিবাচক প্রভাবিত করেছে।
এ ছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে, যা বিটকয়েনের মূল্যবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনী প্রচারে ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি সমর্থন জানানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তবে, তিনি বিশ্বজুড়ে যে নতুন শুল্ক আরোপ করেন, তা বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন করেছিল।
চলতি বছরের ৮ মে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিটকয়েন ফের প্রতীকী ১ লাখ ডলারের সীমা অতিক্রম করে, যা এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ছুঁয়েছিল।
ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো শুরুর পর থেকেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কখনো চরম দোলাচলের জন্য, কখনো আবার শিল্পখাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পতনের জন্য। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এফটিএক্স নামের এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মটির ধস।
বিটকয়েন তৈরি হয়—বা ‘মাইনিং’ করা হয়—যখন শক্তিশালী কম্পিউটার ব্যবহার করে জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে একটি হস্তক্ষেপ-প্রতিরোধী নিবন্ধনপদ্ধতি ‘ব্লকচেইন’-এ লেনদেন যাচাই করা হয়।
সম্প্রতি ৪০ রোহিঙ্গাকে সাগরে ছুড়ে ফেলে মিয়ানমারে ফিরতে বাধ্য করেছে ভারতের কর্তৃপক্ষ। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে। ভারতের এমন ‘নিন্দনীয়’ কাজের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, এপির মতো প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোতে। এরই মধ্যে এই অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল।
যেভাবে সাগরে ফেলা হয় রোহিঙ্গাদের
গত ৮ মে সন্ধ্যায় দিল্লির এক তরুণ রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার থেকে একটি ফোনকল পান। ফোনের অন্যপাশে ছিলেন তার বাবা-মা। তরুণ বলেন, বাবা-মা আমাকে জানান, তাদের সমুদ্রের মাঝখানে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। মাত্র দুই দিন আগেই ওই তরুণ দেখেছিলেন, পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে তার বাবা-মাসহ আরও ৪১ জনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর ফোনে তার বাবা-মা তাকে এক নির্মম অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন। তারা জানান, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের একটি নৌবাহিনী জাহাজ থেকে আন্দামান সাগরে নামিয়ে দেয় এবং কেবল লাইফ জ্যাকেট পরে সাঁতরে মিয়ানমারের ভূখণ্ডে পৌঁছাতে বাধ্য করে।
ভুক্তভোগীদের নির্মম অভিজ্ঞতা
গত শুক্রবার পাঁচজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বার্তা সংস্থা এপিকে নিশ্চিত করেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা সেই দলের মধ্যে ছিলেন, যাদের ৬ মে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আটক করেছিল। ওই দলে ১৫ জন খ্রিষ্টানও ছিলেন। তাদের একটি বিমানযোগে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ৮ মে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের সাগরে ফেলে দেয়।
যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রোহিঙ্গারা
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পক্ষে আইনি লড়াই করা আইনজীবী দিলাওয়ার হুসেইন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে একটি আবেদন জমা দিয়েছে, যাতে তাদের ফেরত এনে আবার দিল্লিতে বসবাসের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভারতের নৌবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
জাতিসংঘ কী বলছে
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তর গত ১৫ মে এক বিবৃতিতে জানায়, অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নয়াদিল্লিতে আটক করা হয় এবং ভারত-মিয়ানমার জলসীমার কাছে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের সাগরে ফেলে দেয়। শরণার্থীদের মধ্যে শিশু, নারী ও বৃদ্ধও ছিলেন। তারা সাঁতরে উপকূলে পৌঁছান। তবে তারা বর্তমানে মিয়ানমারে কোথায় রয়েছেন, তা জানা যায়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানায়, এই ঘটনাকে তারা ‘অবিবেচনাপ্রসূত, গ্রহণযোগ্য নয় এমন আচরণ’ হিসেবে অভিহিত করছে এবং তদন্তের জন্য একজন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি ভারত সরকারকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি ‘অমানবিক ও জীবনহানিকর আচরণ’ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রিউজ এই ঘটনাকে ‘আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজন যাদের, তাদের জীবন ও নিরাপত্তার প্রতি প্রকাশ্য অবজ্ঞা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এটিকে ‘একটি ভয়াবহ ঘটনা’ হিসেবেও বর্ণনা করেন।
অ্যান্ড্রিউজ আরও বলেন, এমন নিষ্ঠুর কাজ মানবতাবিরোধী এবং ‘নন-রিফাউলমেন্ট’ নীতির গুরুতর লঙ্ঘন, যা একটি আন্তর্জাতিক আইনি নীতিমালা- যেখানে বলা হয়েছে, কাউকে এমন কোনো এলাকায় ফেরত পাঠানো যাবে না, যেখানে তার জীবন বা স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
ভারতের অবস্থান
ভারতের কোনো জাতীয় শরণার্থী নীতিমালা বা আইন নেই। দেশটি ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রটোকলের পক্ষভুক্ত নয়। তবুও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ
গত সপ্তাহে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট আন্দামান সাগরে ৪০ জন রোহিঙ্গাকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা সংক্রান্ত একটি আবেদনের শুনানি করতে অস্বীকৃতি জানান। তারা এই ঘটনাটিকে ‘চমৎকারভাবে রচিত গল্প’ বলে মন্তব্য করেন। রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন ও সমুদ্রের ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের এমন অবস্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ।
সোমবার সিভিল রাইটস সুরক্ষা সংস্থা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই একই ভাষা ব্যবহার করছে, যা এই অমানবিক সরকার ব্যবহার করে শরণার্থীদের প্রতি। তারা বলছে, ভারত কোনো ধর্মশালা নয়।
তার কথায়, আপনারা বলেন ‘বাসুধৈব কুটুম্বকম’ (গোটা পৃথিবীই একটি পরিবার)। আপনারা জোর দিয়ে বলেন, ভারতের সংবিধান মানবিক এবং ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ নাগরিক ও অনাগরিক সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অথচ আপনারা এখন বলছেন, তারা কোনো অধিকার রাখে না, আপনি তাদের সঙ্গে যা খুশি করতে পারেন... তাদের সীমান্ত পেরিয়ে সাগরে ফেলে দিতে পারেন!’
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এবার সামান্য পরিমাণ খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরাইল। রোববার ইরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই তথ্য জানিয়েছে। এর আগে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে উপত্যকাটিকে পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে রাখে তেল আবিব। সেসময় কোন ধরনের আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় নতুন করে বড় ধরনের স্থল অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর এ ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সময়ে হামাস ও নেতানিয়হু সরকারের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য একটি চুক্তি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা চলছিলো।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, "গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের খাদ্য সংকট এড়াতে মৌলিক কিছু খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দেবে ইসরাইল।"
এতে আরও বলা হয়, মানবিক এই সহায়তা যাতে হামাসের হাতে না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে তারা।
গত ২ মার্চ থেকে গাজায় ইসরাইলের এই অবরোধ চালু ছিল। যার লক্ষ্য ছিল হামাসকে চাপ দিয়ে কিছু দাবি আদায়ের চেষ্টা করছিল ইসরাইল। তবে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করে আসছিল যে, এই অবরোধের ফলে গাজায় খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, ইসরাইলের সেনাবাহিনী রবিবার জানিয়েছে, তারা “গাজার উত্তর ও দক্ষিণে ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করেছে” এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এই তীব্র অভিযান মূলত শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। এই অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে হামাসকে পরাজিত করে জিম্মিদের মুক্ত করা। যদিও একই লক্ষ্য সামনে রেখে কাতারেও পরোক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল ও হামাস।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় আরও জানায়, প্রস্তাবিত চুক্তির মধ্যে থাকবে "সব জিম্মির মুক্তি, হামাস সন্ত্রাসীদের দেশত্যাগ এবং গাজা উপত্যকার নিরস্ত্রীকরণ।"
মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বিভিন্ন আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সমাধান আসেনি।
নেতানিয়াহু বলে আসছেন, হামাসকে পরাজিত না করে যুদ্ধ থামানো যাবে না। অপরদিকে হামাস তাদের অস্ত্র হস্তান্তর করতে নারাজ।
আলোচনার সঙ্গে জড়িত হামাসের এক সূত্র জানিয়েছে, “যদি একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয়, তাহলে তারা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্তি দিতে রাজি।” তবে ইসরাইল তাদের বন্দিদের এক বা দুই দফায় মুক্তির বিনিময়ে শুধু অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী।
এদিকে, রবিবার বিকেলে দক্ষিণ ইসরাইলে সাইরেন বেজে ওঠে। পরে সেনাবাহিনী জানায়, গাজা থেকে ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের একটি ভূপাতিত করা হয়েছে।
পরে ইসরাইলি বাহিনী গাজার কিছু এলাকায় লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় এবং জানায়, এসব এলাকা থেকে রকেট ছোড়া হলে কঠোর হামলা চালানো হবে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, রবিবার বিকাল পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন।
তিনি আরো জানান, গাজার দক্ষিণের আল-মাওয়াসিতে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের তাঁবুতে হামলায় ২২ জন নিহত এবং অন্তত ১০০ জন আহত হয়েছেন।
এএফপির ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, লোকজন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র খুঁজছে এবং আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, গত এক সপ্তাহে তারা গাজা জুড়ে ৬৭০টির বেশি হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে আঘাত হেনেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মারওয়ান আল-হামস জানান, খাদ্য সহায়তা বন্ধের কারণে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭ জন শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছে এবং এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তবে এএফপি স্বাধীনভাবে এই সংখ্যা যাচাই করতে পারেনি। এর আগে জাতিসংঘও গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা জানিয়েছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রবিবার জানায়, ইসরাইল ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল ঘিরে ফেলেছে এবং প্রবেশাধিকার বন্ধ করেছে। এতে হাসপাতালটি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় গাজার উত্তরাঞ্চলে এখন আর কোনও সরকারি হাসপাতাল চালু নেই।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইল নতুন করে হামলা শুরু করার পর এখন পর্যন্ত ৩,১৯৩ জন নিহত হয়েছেন। আর পুরো যুদ্ধজুড়ে মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৫৩,৩৩৯ জনে।
ভারতের সেনাবাহিনী বলেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনী আরো জানিয়েছে, প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির মেয়াদের কোনো নির্দিষ্ট সময় সীমা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ আজ এই খবর জানায়।
রোববার একজন সেনা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে।
পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি অস্থায়ী ছিল এবং আজই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে এমন ধারণা উড়িয়ে দিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশনস) আলাপচারিতায় যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তার কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই।’
ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, রোববার ভারত ও পাকিস্তানের ডিজিএমওদের মধ্যে কোনো আলোচনা হওয়ার সময়সূচী নির্ধারিত ছিল না।
এর আগে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ১৮ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গত ১০ মে সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে, ভারত ও পাকিস্তান ‘পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ভারত ও পাকিস্তানের চার দিনের পাল্টাপাল্টি হামলার পর এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতভর দীর্ঘ আলোচনার পর তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’
ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতব্যাপী দীর্ঘ আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’ পরে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা নিশ্চিত করে ভারত ও পাকিস্তান।
ফিলিস্তিনের গাজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখল ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এই অভিযানের লক্ষ্য হলো হামাসকে পরাজিত করা এবং যারা এখনো হামাসের হাতে জিম্মি আছে তাদের মুক্ত করা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই ঘোষণা দিয়েছে। অপারেশন গিডিয়নের চ্যারিয়টস নামে এই অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তারা বলছে, এই অভিযানে গাজার কৌশলগত এলাকা দখল করবে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছেন। গত মার্চে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির সমাপ্তির পর ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, গাজায় অনেক মানুষ না খেয়ে আছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের এক পোস্টে অপারেশন গিডিয়নের চ্যারিয়টস নামটি ব্যবহার করেনি। তবে তারা বলেছে, হামাস যতদিন হুমকি হিসেবে থাকবে এবং সব জিম্মি ফিরে না আসে, ততদিন অভিযান চলবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা গাজাজুড়ে ১৫০টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে, বলেও জানিয়েছে সেনাবাহিনী। ইসরায়েল সীমান্তে ট্যাঙ্ক ও সেনা সমাবেশ বাড়িয়েছে, যদিও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে যুদ্ধবিরতির দিকে ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এই নতুন অভিযান থেকে বোঝা যাচ্ছে, কূটনৈতিক চেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয়েছে।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গিডিয়নের চ্যারিয়টস নামটি বাইবেলের একজন যোদ্ধার নাম থেকে নেওয়া এবং এই অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েলি সেনারা গাজার কিছু এলাকা দখল করে রাখবে, বেসামরিক লোকজনকে দক্ষিণে পাঠাবে, হামাসকে আক্রমণ করবে এবং ত্রাণের ওপর হামাসের নিয়ন্ত্রণ ঠেকাবে।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভল্কার টার্ক হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইসরায়েলের এই তীব্র আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। তিনি বলেন, যেভাবে মানুষকে জোর করে সরানো হচ্ছে, এলাকাগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে এবং মানবিক সহায়তা বন্ধ করা হয়েছে এতে গাজায় স্থায়ীভাবে মানুষের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা জাতিগত নির্মূলের মতো এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাজার জনগোষ্ঠী বর্তমানে ‘চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে’ রয়েছে। যদিও ইসরায়েলি সরকার বারবার দাবি করে আসছে, গাজায় কোনো খাদ্য সংকট নেই।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চলতি মাসের শুরুতে বলেছিলেন, ইসরায়েল গাজায় তীব্র আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যার উদ্দেশ্য ওই এলাকা তাদের দখলে রাখা। তবে ইসরায়েলি সরকার এটিও বলেছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই অভিযান শুরু হবে না। শুক্রবারই ট্রাম্প সফর শেষে মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগ করেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। এরপরই ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এখনো হামাসের কাছে ৫৭ জন জিম্মি রয়েছে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে।
গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াচ্ছেন হলিউড তারকারা
গাজায় চলমান সহিংসতা ও ‘গণহত্যা’র বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র শিল্পের নীরবতার নিন্দা জানিয়ে একটি উন্মুক্ত প্রতিবাদপত্রে নতুন করে যোগ দিলেন হলিউডের জনপ্রিয় তারকারা। সম্প্রতি অভিনেতা জোয়াকিন ফিনিক্স, পেদ্রো পাসকাল, রিজ আহমেদ ও পরিচালক গুইয়ারমো দেল তোরোদের মতো শিল্পীরা এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন আয়োজকরা।
আরব নিউজ জানিয়েছে, এই চিঠিতে ৩৭০ জনেরও বেশি অভিনেতা, পরিচালক ও চলচ্চিত্রকর্মী স্বাক্ষর করেছেন। তারা গাজায় ফাতিমা হাসুনা নামে এক ফটোসাংবাদিকের হত্যারও তীব্র প্রতিবাদ জানান। ফাতিমা ‘Put Your Soul in Your Hand and Walk’ নামক একটি তথ্যচিত্রে কাজ করেছিলেন, যা বৃহস্পতিবার কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন কান উৎসবের বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশও। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিনোশ বলেন, ‘সে (ফাতিমা) আজ আমাদের সঙ্গে এখানে থাকার কথা ছিল।’ তিনি জানান, ফাতিমা তথ্যচিত্রটি কানে নির্বাচিত হওয়ার খবর জানার পরদিনই পরিবারের আরও ১০ সদস্যসহ ইসরায়েলের বিমান হামলায় প্রাণ হারান। এ ছাড়া প্রতিবাদপত্রে যোগ দিয়েছেন, রুনি মেরা, মার্কিন স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক জিম জারমাশ এবং ‘লুপিন’ সিরিজের তারকা ওমর সি-ওর মতো হলিউডের পরিচিত মুখ।
চিঠিতে আরও স্বাক্ষর করেছেন ‘শিন্ডলারস লিস্ট’খ্যাত রেইফ ফাইনস, রিচার্ড গিয়ার, মার্ক রাফালো, গাই পিয়ার্স, সুসান সার্যান্ডন, হাভিয়ের বারডেম, পরিচালক ডেভিড ক্রোনেনবার্গ, পেদ্রো আলমোডোভার, আলফোনসো কুয়ারন, মাইক লি প্রমুখ। তারা বলেন, আমরা লজ্জিত যে আমাদের শিল্পজগৎ গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ নিয়ে মুখ খুলছে না।
ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের ছক যুক্তরাষ্ট্রের
ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজ ভূমি থেকে সরিয়ে দিতে একাধিক আফ্রিকান দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ প্রচেষ্টা আরও স্পষ্ট হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের এ সংকটকে নতুনভাবে সমাধানের নামে গাজাবাসীদের আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসনের পরিকল্পনায় এগোচ্ছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্ট জানায়, গাজাবাসীদের জন্য মরক্কো, সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড ও সোমালিল্যান্ডকে সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশগুলোর রাজনৈতিক দুর্বলতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে এসব অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরপর মার্চে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, পূর্ব আফ্রিকার ৩টি দেশ-সুদান, সোমালিয়া ও বিচ্ছিন্ন অঞ্চল সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যৌথভাবে আলোচনা করেছে।
মন্তব্য