যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
আগুনে ১০ হাজার ঘরবাড়ি, অন্যান্য ভবন ও অবকাঠামো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল নিয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির গভর্নরের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন।
পানি সংকটের জন্য ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।
আলাদা ছয়টি দাবানলের মধ্যে অনেকগুলোই নিয়ন্ত্রণের পুরোপুরি বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তীব্র বাতাস, শুষ্ক আবহাওয়া এবং পানির চাপ কম থাকায় আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছেন ফায়ারফাইটাররা।
আগুনের তীব্রতা দেখে তা নিয়ন্ত্রণ করার বদলে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন ফায়ারফাইটাররা। ফলে হতাহতের সংখ্যা বেশ কম হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্থনি ম্যারন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগুন নেভাতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ছয় অঙ্গরাজ্য থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ক্যালিফোর্নিয়ায় আনা হয়েছে। আগুন নেভানোর কাজে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে পানি।
তিনি আরও বলেন, প্যাসিফিক প্যালিসেইডস এলাকার কিছু আগুন নেভানোর জন্য পানি সরবরাহের হাইড্রেন্ট শুকিয়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের দুই লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় আগুন দেখা যায় চলচ্চিত্র জগতের তীর্থস্থান হলিউডে। আগুনে হলিউডের বেশ কয়েকজন তারকার বাড়ি পুড়ে যায়।
বিখ্যাত হলিউড সাইনবোর্ডটির বেশ কাছাকাছি আগুনের শিখা দেখতে পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন লস অ্যাঞ্জেলেসের মূল শহরের বাসিন্দারা। এ এলাকায় বেশির ভাগ বাংলাদেশির বসবাস।
এ পর্যন্ত তারা নিরাপদে আছেন বলে খবর পাওয়া যায়।
আগুনে ভস্মীভূত বাড়িঘরে লুটপাট করার খবরও পাওয়া যায়।
এ চরম সংকটেও যারা লুটপাট করছে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ কর্মকর্তা ক্যাথরিন বার্গারবলেন।
লুটপাটের ঘটনায় এরই মধ্যে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আগুনে এ পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রায় দুই হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়। এর মধ্যে শত কোটি ডলারের বাড়িও রয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত সাড়ে তিন লাখ বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
দাবানলে এ পর্যন্ত ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে।
এদিকে হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে বিশেষ ফেডারেল ফান্ড থেকে দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দাবানলের কারণে তিনি বাতিল করেন ইতালি সফর।
আগুনের দাহ থেকে বের হওয়া সূক্ষ্ম কণা অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। আগুনের এসব কণা ফুসফুস এমনকি ধমনিতে পর্যন্ত প্রবেশ করে যে কাউকে মারাত্মক অসুস্থ করে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গত কয়েক দিনের তুলনায় বাতাসের গতিবেগ কম হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণ কিছুটা সহজ হবে বলে মনে করছেন দমকলকর্মীরা। তবে পানি সংকট নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ এক নিমেষে বন্ধ করতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। দেশটির এক সিদ্ধান্তেই ‘সঙ্গে সঙ্গে’ যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এমনটাই দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এতদিন কেন সেটা ঘটল না, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি।
পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সৌদি আরবের কী করা উচিত, সেটাও বলে দিয়েছেন ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, সৌদি আরব ও তেল রপ্তানিকারী অন্য দেশগুলোর উচিত অবিলম্বে তেলের দাম কমিয়ে দেওয়া। তা হলেই রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে।
আল জাজিরার উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
সুইজারল্যান্ডের পার্বত্য শহর দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভা চলছে। সেখানেই স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ফোরামের ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, তেল রপ্তানিকারী দেশগুলো যে এখনও তেলের দাম কমায়নি, তাতে তিনি বিস্মিত।
তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অনেক আগেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল সৌদিসহ অন্যদের।
পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেকের সদস্যদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘সৌদি ও ওপেকের সবাইকে আমি বলব, তেলের দাম কমান। আপনাদের এটা করতেই হবে।
‘সত্যি কথা বলতে, এখনও যে এটা করা হয়নি, তাতে আমি অবাক। তেলের দাম কমলে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘খনিজ তেলের দাম এখন অনেক বেশি। তাই যুদ্ধ চলবে। যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইলে আপনাদের তেলের দাম কমাতে হবে।
‘যা হচ্ছে, তার জন্য ওই দেশগুলো অনেকাংশে দায়ী। এত মানুষ মারা যাচ্ছে! তেলের দাম কমার পর আমি সুদের হারও কমাতে বলব।’
ইউক্রেনে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশেষ সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর প্রায় তিন বছর ধরে চলছে রক্তক্ষয়ী এ সংঘাত।
দীর্ঘ এ সময়ে দুই পক্ষের পাল্টা হামলায় হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।
ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলে আসছেন ট্রাম্প।
তিনি প্রায়ই বলতেন, ক্ষমতায় থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধান করে ফেলতেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সম্প্রতি ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি। বৈঠকের আয়োজন চলছে।
গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করেন ট্রাম্প। এরপর অবিলম্বে এ সংঘাতের সমাধান দাবি করেন তিনি।
শুধু তাই নয়, যুদ্ধ বন্ধ না করলে রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হবে বলেও হুঁশিয়ারি করে দিয়েছেন আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন:বার্ষিক ৫০ লাখ টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান আর্জেন্ট এলএনজির সঙ্গে একটি অবাধ্যতামূলক চুক্তিতে সই করেছে বাংলাদেশ।
আর্জেন্ট এলএনজি লুইজিয়ানায় বছরে ২ কোটি ৫০ লাখ টন (এমটিপিএ) এলএনজি সুবিধা সরবরাহ করছে।
আর্জেন্ট এলএনজির বিবৃতিতে বলা হয়, সোমবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর এলএনজি সরবরাহের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এটিই প্রথম বড় চুক্তি।
ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নেই, এমন দেশগুলোতে সুপার-চিল্ড গ্যাস রপ্তানির লাইসেন্সের ওপর জ্বালানি বিভাগের স্থগিতাদেশ বাতিলের নির্বাহী পদক্ষেপ নেন। তিনি এলএনজি রপ্তানি বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন।
চুক্তি অনুযায়ী পোর্ট ফোরচনে আর্জেন্টের এলএনজি প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এর কার্গো পেট্রোবাংলার কাছে বিক্রি করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘এই চুক্তি কেবল বাংলাদেশের সম্প্রসারিত শিল্প ভিত্তির জন্য নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের কৌশলগত অংশীদারত্বকেও শক্তিশালী করবে।’
এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ এখনও মূল্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সংবেদনশীল।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর এলএনজির দাম বেড়ে গেলে বাংলাদেশ আরও সাশ্রয়ী মূল্যের কয়লা ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত বৃহস্পতিবার জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির অধিকারকে সীমিত করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করার নির্বাহী আদেশকে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াশিংটনের সিয়াটল ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক জন কফেনৌর।
নির্বাহী আদেশের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছেন তিনি।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, তার একটি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন বাতিল সংক্রান্ত।
ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশ চ্যালেঞ্জ করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আবেদন জমা পড়ছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদেশটিকে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেন ওয়াশিংটনের সিয়াটল ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক জন কফেনৌর। একই সঙ্গে নির্বাহী আদেশের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন তিনি।
ট্রাম্পের আদেশটি আটকে দিতে ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল নিক ব্রাউন এবং তিনটি ডেমোক্র্যাট শাসিত রাজ্যের পক্ষ থেকে করা আবেদনের পক্ষে রায় দেন বিচারক কফেনৌর।
আদালতে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, এই আদেশে রাজ্যগুলোর তাৎক্ষণিক ক্ষতি হয়েছে এবং আরও বিচার বিভাগীয় আলোচনা ছাড়াই বিচারকের সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত নয়। তবে বিচারক তার স্থগিতাদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।
এদিকে নির্বাহী আদেশের ওপর দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চলবে।
আরও পড়ুন:সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান (এমবিএস) জানিয়েছেন, তার দেশ আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৬০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ফোনালাপে এ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
ফোনালাপে সৌদি যুবরাজ বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যাশিত সংস্কার ‘অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি’ তৈরি করতে পারে। সৌদি আরব এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চায়। আরও সুযোগ সৃষ্টি হলে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) বৃহস্পতিবার সকালে জানায়, দ্বিতীয় দফায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ওভাল অফিসে ফিরে আসার জন্য ট্রাম্পকে নিজের এবং বাদশাহ সালমানের অভিনন্দনবার্তা পৌঁছে দেন তিনি।
বিন সালমান বলেন, সৌদি নেতারা আমেরিকার জনগণের আরও অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। ওই সময় ট্রাম্প বাদশাহ সালমান ও যুবরাজকে ধন্যবাদ জানান এবং উভয় দেশের সাধারণ স্বার্থে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
যুবরাজ এমবিএস ২০১৮ সালে বলেছিলেন, ‘অস্ত্র সরঞ্জামের একটি অংশ সৌদি আরবে তৈরি হবে। এ উদ্যোগ আমেরিকা ও সৌদি আরবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
‘উভয় দেশের জন্য ভালো বাণিজ্য, ভালো সুবিধা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসবে। পাশাপাশি এটি আমাদের নিরাপত্তাকে সহায়তা করবে।’
ট্রাম্পের নতুন মেয়াদেও নিজেদের মধ্যে এ সহযোগিতা ধরে রাখতে চান তিনি।
প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে তিনি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ এমবিএসের সঙ্গে রিয়াদে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তরবারি নৃত্য এবং বিমান বাহিনীর ফ্লাই পাস্টের মাধ্যমে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সে সময় সৌদি বাদশাহ দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘কলার অব আবদুল আজিজ আল সৌদ’-এ ভূষিত করেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে।
প্রথম দফার শাসনামলে সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও নিরাপত্তা অংশীদার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করা ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত অবৈধ অভিবাসনবিরোধী আইনে অনুমোদন দিয়েছে রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস।
সন্দেহভাজন বিদেশি অপরাধীদের বিচারপূর্ব কারাবাসের মেয়াদ বাড়ানোর একটি বিলও অনুমোদন করেছে কংগ্রেস।
আইনসভা কংগ্রেসের অনুমোদন লাভের পর সিনেটে ৬৫-৪৫ ভোটে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী আইনটি সহজেই পাস হয়।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি বৃহস্পতিবার এ খবর জানায়।
এদিকে দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানায়, কংগ্রেসের অনুমোদন লাভের পর অবৈধ অভিবাসীবিরোধী ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে চার বাংলাদেশিসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত কারও কাছেই বৈধ কাগজপত্র ছিল না। এদের মধ্যে একজন এথেন্সের ও অন্যজন ভেনেজুয়েলার নাগরিক। তারা দুজনই খুনের মামলার আসামি।
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন এক এক্স বার্তায় বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের অবশ্যই আটক করা হবে এবং তাদের কখনও আমাদের দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’
মাইক জনসন বলেন, ‘আমেরিকানরা নিরাপত্তা দাবি করে এবং নিরাপত্তা দাবির অধিকারও তাদের রয়েছে।’
নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বরোর ফুলটন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চার বাংলাদেশিকে।
অভিবাসী ধরপাকড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে স্কুল-গির্জা-হাসপাতালেও।
সংবেদনশীল এসব স্থানে অভিবাসী আটক কার্যক্রমের ওপর থেকে এক দশকের বেশি সময়ের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে সেসব স্থানে ধরপাকড়ে আর কোনো বাধা নেই। এ সিদ্ধান্তে আতঙ্কিত অভিবাসীরা।
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কালবিলম্ব করেননি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শপথ নিয়েই শক্ত হাতে অবৈধ অভিবাসী দমন শুরু করেছেন তিনি।
ধরপাকড় শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নানা অঙ্গরাজ্যে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। এর মধ্যে চার বাংলাদেশিও রয়েছেন ।
নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বরোর ফুলটন এলাকা থেকে ওই চার বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট (আইস)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পরিচয়পত্র দেখাতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাদের গ্রেপ্তার করে সাদা পোশাকের পুলিশ। এ ঘটনার পর বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার সড়ক ও রেস্তোরাঁয় লোকজনের ভিড় নেই বললেই চলে। চরম আতঙ্কে রয়েছেন বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা।
এদিকে এখন থেকে স্কুল, গির্জা এমনকি হাসপাতালগুলোতেও অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।
আইস এবং কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন সংস্থাগুলোর ওপর গেল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এসব স্থানে অভিযান পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা ছিল।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পক্ষ থেকে এ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করাসহ জারি করা হয় নতুন নির্দেশনা।
এতে বলা হয়, স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে যাতে কেউ লুকিয়ে না থাকতে পারে, তাই এ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়।
অপর নির্দেশনায় বলা হয়, বৈধ কাগজপত্র না থাকা কেউ গ্রেপ্তার হলে সেই ব্যক্তি যদি যুক্তরাষ্ট্রে দুই বছরের বেশি সময় ধরে তার অবস্থান করার প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে দ্রুতই দেশ থেকে বের করে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে গ্রেপ্তারের অনুমতি দেওয়ার ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে সতর্ক করেছেন আইনজীবীরা।
সেন্টার ফর ল’ অ্যান্ড সোশ্যাল পলিসি এক বিবৃতিতে জানায়, এ পদক্ষেপের কারণে অভিবাসীদের পরিবার ও তাদের সন্তানের পাশাপাশি আমেরিকান শিশুরাও মারাত্মক মানসিক চাপের সম্মুখীন হতে পারে।
এরই মধ্যে মেক্সিকো সীমান্তে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। নিশ্চিত করা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এ আদেশের আওতায় অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার একটি প্রকল্পও বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষীরা।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে নতুন করে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার ৯ হাজার ৪০০ একরেরও বেশি ভূমি গ্রাস করে ফেলে আগুন।
জোরালো বাতাস ও শুষ্ক ঝোঁপঝাড়ের কারণে খুবই দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল। এমন পরিস্থিতিতে ৩১ হাজারেরও বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সিবিএস নিউজের খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় পৌনে ১১টায় লেক হিউজেস রোড থেকে শুরু হয় দাবানল। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই ৫০০ একর এলাকায় সেটি ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ারফাইটাররা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। এর আগেও মহানগর এলাকার দুটি বড় দাবানল তারা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিলেন।
আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়া সবচেয়ে বিধ্বংসী দাবানলের একটি ইয়াটন ফায়ার।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ক্যাসটেইক লেক এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, তীব্র শুষ্ক ঝোড়ো বাতাসের কারণে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ব্যাপক অগ্নিঝুঁকি রয়েছে। এতে নাগরিকদের জন্য শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে দাবানল এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরও ২১ হাজারকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তাদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া লাগতে পারে।
গেল ৯ মাসে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়নি। এতে পুরো অঞ্চলটিতে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আগামী শনিবার থেকে সোমবারের মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সেটি ঘটলে ফায়ারফাইটাররা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।
আরও পড়ুন:কানাডীয় পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কারোপ করলে যেকোনো পরিস্থিতির জবাব দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প খুবই ভালো আলোচক। তিনি তার আলোচনার অংশীদারকে কিছুটা বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতে চান।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর দ্বিতীয় দিনে বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে সই করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে সোমবার কানাডা ও মেক্সিকান পণ্য আমদানিতে ব্যাপক শুল্কারোপের আভাস দিয়েছেন তিনি, যা আগামী ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর হতে পারে।
আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার করলেও শুল্কারোপের বিষয়ে ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম।
আর ট্রাম্পের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয় জানিয়ে ট্রুডো বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণ অনিশ্চয়তা ডেকে আনে। পরবর্তী আনুষ্ঠানিক আলাপচারিতার অপেক্ষায় থাকুন।’
আমেরিকায় যে সমৃদ্ধির অঙ্গীকার ট্রাম্প করেছেন, সে জন্য কানাডীয় সম্পদের প্রয়োজন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ট্রুডো বলেন, ‘আমেরিকান অর্থনীতিতে অনেক প্রয়োজনীয় জোগান কানাডা সরবরাহ করে। কাজেই দেশটির অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের জন্য তা অপরিহার্য।’
এদিকে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে সংলাপে বসার কথাও বলেছেন তিনি।
দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পর ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপ আগের মেয়াদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জানিয়ে ক্লাউদিয়া বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে দেশের স্বার্থ সুরক্ষা করব।
‘গতকাল ট্রাম্প যেসব ডিক্রিতে সই করেছেন, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমি বলতে চাই, মেক্সিকোর জনগণ নিশ্চিত থাকতে পারেন, আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার সুরক্ষা দেব।’
তিনি যখন এমন অঙ্গীকার করেন, তখন দেশটির পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ক্লাউদিয়া বলেন, ‘মাথা ঠান্ডা রাখা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ।’
গত বছরের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন মেক্সিকোর এ বামপন্থি নেতা। ক্লাউদিয়া দেশটির প্রথম কোনো নারী প্রেসিডেন্ট।
মেক্সিকান পণ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপের যে আভাস ট্রাম্প দিয়েছেন, পাল্টা জবাবে আমেরিকান পণ্যে কোনো শুল্ক আরোপের হুমকি তিনি দেননি। ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন ক্লাউদিয়া।
এর আগে মেক্সিকান পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুল্ক আরোপ করলে সমানভাবে জবাব দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ক্লাউদিয়া ও তার অর্থমন্ত্রী। দেশটির ৮০ শতাংশ রপ্তানির গন্তব্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
মন্তব্য