কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিরুদ্ধে তার নিজের দল লিবারেল পার্টিতে ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে। এর ফলে তিনি যেকোনো দিন দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে পারেন বলে রোববার জানিয়েছে ‘দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল’।
লিবারেল পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত আছেন এমন তিনটি অসমর্থিত সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রোববার‘ দ্য গ্লোব’ জানায়, পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন ট্রুডো।
দ্য গ্লোবের সূত্রে জানা যায়, বুধবার লিবারেল পার্টির জাতীয় সম্মেলনের আগেই এ ঘোষণা আসবে।
দ্য গ্লোব আরও জানায়, পদত্যাগের পরও ট্রুডো অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। তাৎক্ষণিকভাবে নতুন কাউকে নেতৃত্ব দেওয়ার বিকল্পটিও রয়েছে লিবারেল পার্টির সামনে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রুডোর জনপ্রিয়তা অনেক কমে এসেছে। তার সরকার কয়েক দফা অনাস্থা ভোট কোনোমতে এড়াতে সক্ষম হলেও সমালোচকরা তাকে একাধিকবার পদ ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
২০২৫ সালের অক্টোবরের নির্বাচন পর্যন্ত দলের নেতৃত্বে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ট্রুডো। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত চাপের মুখে পড়েছেন তিনি, যা তাকে আরও বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ক্ষমতা গ্রহণ করেই কানাডার পণ্য আমদানির ওপর বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
ট্রাম্পের এই হুমকির বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, সে বিষয়ে মতভেদের জেরে ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। এটাই ট্রুডোর মন্ত্রিসভায় প্রথম ‘প্রকাশ্য’ বিদ্রোহের ঘটনা।
এ ঘটনার পর ট্রুডো মন্ত্রিসভায় বড় পরিবর্তন আনেন। তিন ভাগের এক ভাগ মন্ত্রী পরিবর্তন করে রাজনৈতিক অস্থিরতা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
এর আগে নভেম্বরে ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের বিলাসবহুল বাড়ি মার-এ লাগোয় বৈঠক ও নৈশভোজে যোগ দেন ট্রুডো । কিন্তু এতে তেমন কোনো কাজ হয়নি। এরপরও গণমাধ্যমে ট্রুডোকে নিয়ে অপমানজনক বক্তব্য দিয়ে গেছেন ট্রাম্প। তাকে কানাডার ‘গভর্নর বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে ‘চমৎকার পদক্ষেপ’ বলেও অভিহিত করেন ট্রাম্প।
২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসেন ট্রুডো। একসময়ের অসম্ভব জনপ্রিয় এ নেতা এখন কনজারভেটিভ পার্টির পিয়েরে পোইলিভ্রের চেয়ে ২০ জনমত পয়েন্টে পিছিয়ে আছেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম দুই মেয়াদে তিনি সিনেটের সংস্কার আনেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং কানাডার গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে কার্বন ট্যাক্স চালু করেন।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের স্কটসডেল বিমানবন্দরের রানওয়েতে দুটি বিমানের সংঘর্ষে অন্তত একজন নিহত ও অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন।
আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার একাধিক সংবাদমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অবতরণের পর একটি লিয়ারজেট ৩৫এ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। এ সময় অ্যারিজোনার স্কটসডেল মিউনিসিপ্যাল বিমানবন্দরের র্যাম্পে গালফস্ট্রিম ২০০ বিজনেস জেটকে ধাক্কা দেয় এটি।’
দেশটিতে বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি জানায়, বিমানটিতে কতজন আরোহী ছিলেন, তা তারা এখনও নিশ্চিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডায় নতুন ধরনের বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন এক দুগ্ধ শ্রমিক।
গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া বার্ড ফ্লু থেকে এটি নতুন ও ভিন্ন ধরনের ভাইরাস।
দেশটির ফেডারেল স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা স্থানীয় সময় সোমবার এ তথ্য জানান।
ওই ব্যক্তির অসুস্থতাটিকে হালকা বলে মনে করা হয়েছিল। তার শরীরে প্রধান লক্ষণ ছিল চোখের লাল ভাব ও জ্বালা।
এমন অসুস্থতা সাধারণত বেশির ভাগ দুগ্ধবতী গরুর ক্ষেত্রে দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) জানায়, আক্রান্ত ওই ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হননি, তবে সুস্থ হয়েছেন।
এর আগে হাঁস-মুরগির সংস্পর্শে আসা এক ডজনেরও বেশি মানুষের শরীরে নতুন এ ধরন দেখা গেছে। তবে এই প্রথম কোনো গরুর মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ল।
নেভাডা অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, নেভাডার পশ্চিম-মধ্যাঞ্চলের চার্চিল কাউন্টির একটি খামারে আক্রান্ত ওই দুগ্ধ শ্রমিকের সন্ধান পাওয়া যায়।
সিডিসির কর্মকর্তারা জানান, এ ব্যক্তি থেকে ভাইরাসটি অন্য কারও মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
সংস্থাটি নিয়মিতই বলছে, ভাইরাসটি সাধারণ মানুষের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ।
বর্তমানে প্রাণী ও কিছু মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বার্ড ফ্লু বিজ্ঞানীদের কাছে ‘টাইপ এ এইচ৫এন১’ ইনফ্লুয়েঞ্জা নামে পরিচিত। তবে এটির বিভিন্ন ধরন রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানান, ২০২৩ সালের শেষের দিকে গবাদি পশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে বার্ড ফ্লু। পরের বছরের মার্চে বি৩.১৩ নামে পরিচিত একটি সংস্করণ নিশ্চিত করা হয়েছিল। এটি ১৬টি অঙ্গরাজ্যের ৯৬২টি গবাদি পশুকে সংক্রামিত করে। আর এসব আক্রান্তের বেশির ভাগই ক্যালিফোর্নিয়ায় হয়েছিল।
ডি১.১ নামে পরিচিত নতুন ধরনের ভাইরাসটি ৩১ জানুয়ারি নেভাডার গবাদি পশুর শরীরে শনাক্ত করা হয়। ডিসেম্বরে শুরু হওয়া পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগ্রহ করা দুধে এটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৬৮ জন বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হন। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই গরু বা হাঁস-মুরগির সংস্পর্শে কাজ করতেন।
আরও পড়ুন:রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে মস্কোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কোনো আলাপ হয়েছে কি না, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে অস্বীকার করেছেন তিনি।
স্থানীয় সময় রবিবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে ওঠার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন কথা বলেন।
ট্রাম্পের আভাস, পুতিনের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। আর এমন কিছু যদি হয়ে থাকে, তাহলে ২০২২ সালের পর কোনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পুতিনের আলোচনার প্রথম স্বীকারোক্তি হবে এটি।
গত ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে কিংবা পরে পুতিনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এটা করেছি, ধরা যাক, আমি এটা করেছি...এবং আরও অনেক আলোচনা হবে বলে আমি মনে করছি। এই যুদ্ধ আমাদের বন্ধ করতে হবে।’
রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ আছে বলেও জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলছি।’
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার এক নির্বাহী আদেশে সে দেশে আমেরিকান সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ কথা জানায়।
ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার আইন সাদা মানুষদের (কৃষকদের) জমি দখলে দক্ষিণ আফ্রিকার কর্তৃপক্ষকে বৈধতা দেয়। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার কর্তৃপক্ষ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ অভিযোগ মানতে নারাজ।
জমির মালিকানা দক্ষিণ আফ্রিকার একটি বিতর্কিত ইস্যু।
এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেখানকার বেশির ভাগ কৃষি জমির মালিক সাদা চামড়ার মানুষরা। অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকাতে সাদা মানুষদের শাসন অবসানের তিন দশক পরও মালিকানা সেটলারদের হাতে, যে জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার ভূমি সংস্কারে চাপের মধ্যে আছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ প্রযুক্তি মোগল ইলন মাস্ক বর্ণবাদী আইন থাকার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার রামাফোসা সরকারকে অভিযুক্ত করেছেন।
কিউবান বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্টের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার আমেরিকাবিদ্বেষী এজেন্ডার কারণে দেশটিতে জি-২০ আলোচনায় তিনি যোগ দেবেন না।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার নোমগামী একটি ছোট যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার বিমানটি সমুদ্রের বরফের ওপর বিধ্বস্ত হয়ে পড়ায় আরোহীদের সবাই নিহত হন।
গত ২৫ বছরের মধ্যে রাজ্যটির সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
উদ্ধারকারীরা হেলিকপ্টার দিয়ে তল্লাশির মাধ্যমে নোমের দক্ষিণ-পূর্বে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান।
কোস্ট গার্ডের তোলা ছবিতে দেখা যায়, বিধ্বস্ত বিমান ও হতাহতরা বরফের ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। জরুরি উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।
নোমের মেয়র জন হ্যান্ডেল্যান্ডকে আবেগপ্রবণ দেখা গেছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সম্প্রদায়ের স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেন।
তিনি জানান, নিহত যাত্রীদের স্মরণে প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
বৈরী পরিবেশ, জমে থাকা বরফ এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হতাহতদের নিরাপদে উদ্ধার কাজ করার জন্য সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে বেরিং এয়ারের সেসনা ক্যারাভান ৯ জন যাত্রী ও একজন পাইলটকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে উনালাকলেট থেকে উড্ডয়ন করলেও এক ঘণ্টার মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কর্মকর্তারা হঠাৎ উচ্চতা এবং গতি হ্রাসের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে দুর্ঘটনার কারণটি নির্ধারণ করতে পারেননি তারা।
এমনকি কোনো বিপদের সংকেতও শনাক্ত করা যায়নি।
আলাস্কার দুর্গম ভূখণ্ড এবং পরিবহনের জন্য ছোট বিমানের ওপর নির্ভরতা অত্যাবশ্যক, তবে তা ঝুঁকিপূর্ণ।
ওয়াশিংটন ডিসি ও ফিলাডেলফিয়ায় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে এক সপ্তাহের মধ্যে এটি তৃতীয় বড় ধরনের বিমান দুর্ঘটনা।
আরও পড়ুন:কানাডাকে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় রবিবার ফ্লোরিডার পাম বিচ থেকে এএফপি জানায়, নিজের ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প এ প্রস্তাব দেন।
ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ‘কানাডাকে শত শত বিলিয়ন ডলার’ ভর্তুকি দেয়। এটি ছাড়া কানাডা একটি কার্যকর দেশ হিসেবে টিকে থাকতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘কানাডার আমাদের প্রিয় ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়া উচিত, যা কানাডার জনগণের জন্য অনেক কম কর ও আরও ভালো সামরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এবং কোনো শুল্ক থাকবে না।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ট্রাম্প এ মন্তব্য পুনর্ব্যক্ত করলেন।
ট্রাম্প প্রশাসন কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে, যা কানাডার অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
এর প্রতিক্রিয়ায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা আমেরিকান পণ্যের (বিয়ার, ওয়াইন, ফল, জুস, পোশাক, খেলাধুলার সরঞ্জাম এবং গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি) ওপর প্রযোজ্য হবে।
এ ছাড়া কানাডার অন্টারিও প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ডগলাস ফোর্ড ২৭ ফেব্রুয়ারি আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন, যাতে তিনি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্কের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ম্যান্ডেট পেতে পারেন।
ফোর্ড সতর্ক করে বলেন, এ শুল্ক অন্টারিওর অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে এবং হাজার হাজার চাকরি হুমকির মুখে পড়বে।
ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি এ মন্তব্যকে ‘কানাডার শক্তির প্রকৃতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞতা’ বলে আখ্যায়িত করেন।
ট্রাম্পের এ প্রস্তাব এবং সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক উত্তেজনা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দীর্ঘস্থায়ী মিত্রতার মধ্যে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগেও একাধিকবার কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
জানুয়ারি মাসে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে বলেন, ‘কানাডার অনেক মানুষ আমাদের ৫১তম অঙ্গরাজ্যের অংশ হতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত হয়, তাহলে কোনো শুল্ক থাকবে না, কর অনেকটাই কমে যাবে এবং তারা রাশিয়ান ও চীনা জাহাজের হুমকি থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে।’
এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ট্রাম্প কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে প্রস্তাব দেন যে, কানাডা চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হতে পারে। তবে প্রস্তাবটি হাস্যরসের ছলে করা হয়েছিল বলে খবর পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের ওপর চড়া শুল্কারোপ করে একটি আদেশে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এতে উত্তর আমেরিকার দুই প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকেও তাৎক্ষণিক পাল্টা পদক্ষেপ এসেছে। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সময়ের মিত্র মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকটা বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
সামাজিকমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকাকে সুরক্ষায় এই শুল্কারোপ অপরিহার্য ছিল।’
অবৈধ ফেনটানিল উৎপাদন ও রপ্তানি বন্ধে এ তিন দেশকে আরও অনেক জোর দিতে হবে বলেও জানান তিনি।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী কমিয়ে আনতে কানাডা ও মেক্সিকোকে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান ট্রাম্প।
তবে এই শুল্কারোপ ট্রাম্পের জন্য হিতে-বিপরীতও ঘটতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে যদি মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়, তাহলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, পেট্রল, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য পণ্য কম দামে পেতে ট্রাম্পের ওপর যে আস্থা মার্কিন ভোটাররা রেখেছিলেন, সেটা ঝুঁকিতে পড়বে।
এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিকে নতুন এক অস্থিরতায় ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। চীনা থেকে আমদানি করা সব পণ্যে ১০ শতাংশ ও মেক্সিকো-কানাডীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করতে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।
মেক্সিকো, কানাডা থেকে যে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়, তাতে ১০ শতাংশ হারে শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। দেশগুলো পাল্টা পদক্ষেপ নিলে শুল্কারোপ আরও বাড়িয়ে দেওয়ার একটি কৌশল অন্তর্ভুক্ত করেছেন তার আদেশে। এতে ব্যাপক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘আজ ট্রাম্প যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে আমাদের একত্রিত করার বদলে বিচ্ছিন্ন করে দিল হোয়াইট হাউস।’
কানাডা অ্যালকোহল ও ফলসহ আমেরিকান পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ এক লাখ ৫৫ হাজার ডলারের শুল্কারোপ করা হয়েছে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া সেইনবামও একই ঘোষণা দেন। কিন্তু চীনের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য