সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দামেস্ক ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে পালানোর খবরের মধ্যে দেশটির রাজধানী শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিদ্রোহীরা।
এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় হাফিজ আল-আসাদ ও তার ছেলে বাশার আল-আসাদের অর্ধশতাব্দীর বেশি সময়ের শাসনের অবসান হলো।
আল জাজিরা রোববার জানায়, বিদ্রোহী যোদ্ধারা রাজধানীতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে সড়ক ও চত্বরগুলোতে নেমে আসেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।
সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, যোদ্ধারা দামেস্কের প্রাণকেন্দ্রে প্রবেশ করে প্রতিশোধহীন ‘নতুন যুগের’ ঘোষণা দেয়। তাদের পক্ষ থেকে প্রবাসে থাকা সিরীয়দের দেশে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রবাসে সিরিয়ার রাজনৈতিক বিরোধীদের জোটের প্রধান হাদি আল-বাহরা দামেস্ককে ‘আল-আসাদ মুক্ত’ ঘোষণা করে জনগণকে অভিনন্দন জানান।
সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি বাড়িতে থাকার কথা জানিয়ে বলেন, তিনি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। একই সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর রাখতে চান।
একই সময়ে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের প্রধান দল হায়াত তাহরির আল-শামের নেতা মোহামেদ আল-জুলানি কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সেবাদাতা সংস্থায় হামলা না করতে যোদ্ধাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান (এমবিএস) জানিয়েছেন, তার দেশ আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৬০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ফোনালাপে এ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
ফোনালাপে সৌদি যুবরাজ বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যাশিত সংস্কার ‘অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি’ তৈরি করতে পারে। সৌদি আরব এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চায়। আরও সুযোগ সৃষ্টি হলে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) বৃহস্পতিবার সকালে জানায়, দ্বিতীয় দফায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ওভাল অফিসে ফিরে আসার জন্য ট্রাম্পকে নিজের এবং বাদশাহ সালমানের অভিনন্দনবার্তা পৌঁছে দেন তিনি।
বিন সালমান বলেন, সৌদি নেতারা আমেরিকার জনগণের আরও অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। ওই সময় ট্রাম্প বাদশাহ সালমান ও যুবরাজকে ধন্যবাদ জানান এবং উভয় দেশের সাধারণ স্বার্থে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
যুবরাজ এমবিএস ২০১৮ সালে বলেছিলেন, ‘অস্ত্র সরঞ্জামের একটি অংশ সৌদি আরবে তৈরি হবে। এ উদ্যোগ আমেরিকা ও সৌদি আরবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
‘উভয় দেশের জন্য ভালো বাণিজ্য, ভালো সুবিধা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসবে। পাশাপাশি এটি আমাদের নিরাপত্তাকে সহায়তা করবে।’
ট্রাম্পের নতুন মেয়াদেও নিজেদের মধ্যে এ সহযোগিতা ধরে রাখতে চান তিনি।
প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে তিনি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ এমবিএসের সঙ্গে রিয়াদে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তরবারি নৃত্য এবং বিমান বাহিনীর ফ্লাই পাস্টের মাধ্যমে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সে সময় সৌদি বাদশাহ দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘কলার অব আবদুল আজিজ আল সৌদ’-এ ভূষিত করেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে।
প্রথম দফার শাসনামলে সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও নিরাপত্তা অংশীদার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করা ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত ভবনের নিচ থেকে ২১২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানায়।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, উপত্যকায় ৫ হাজার নারী ও শিশুসহ ১৪ হাজার ২০০ মানুষ এখনও নিখোঁজ।
গাজা সীমান্তের কাছে গত বছরের ৭ অক্টোবর স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে কিব্বুৎজ এলাকার বাসিন্দাদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বেশ কিছু ইসরায়েলি বাসিন্দাকে হত্যা করেন এবং নারী-পুরুষ ও বয়োবৃদ্ধসহ প্রায় ২৪০ জনকে অপহরণ করেন। সে সময় থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
একই দিন ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেয় এবং উপত্যকায় বোমাবর্ষণ শুরু করে।
গত ১৫ জানুয়ারি মধ্যস্থতাকারীরা ঘোষণা দিয়েছিল, ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষ বন্দি বিনিময়ও করেছে।
হামাস যোদ্ধারা তিন ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলও ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দফায় ৪২ দিনে হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েল কয়েক শ ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দেবে। গত ১৯ জানুয়ারি রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারা বলেছেন, ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
দামেস্ক থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
শারা প্রশাসনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে তিনিই (ট্রাম্প) মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এবং এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার নেতা।
‘আমরা সংলাপ এবং বোঝাপড়ার ভিত্তিতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য উন্মুখ।’
শারার ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিদ্রোহী অভিযানের নেতৃত্ব দেয়।
১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ধ্বংসাত্মক সংঘাতের পর দেশ পুনর্গঠনে সহায়তা করার জন্য সিরিয়ার নতুন নেতারা আর্থিক সহায়তা চাইছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো এবং সিরিয়ার প্রতিবেশীরাও নতুন শাসকের প্রতি ‘সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা’ মোকাবিলার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে।
ওয়াশিংটন-সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) ২০১৯ সালে সিরিয়া থেকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর জিহাদিদের বিতাড়িত করার সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দেয় এবং হাজার হাজার সন্দেহভাজন জঙ্গি ও তাদের আত্মীয়দের বন্দি রাখা বেশ কিছু কারাগার ও শিবিরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
জিহাদি-বিরোধী জোটের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন বজায় রেখেছে।
আরও পড়ুন:গাজার নিয়ন্ত্রক দল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রথম দিনে কারাবন্দি ৯০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।
আল জাজিরা জানায়, স্থানীয় সময় রোববার রাত একটার দিকে কারামুক্ত হন এসব ফিলিস্তিনি। ওই সময় অশ্রুসিক্ত নয়নে, আলিঙ্গনে তাদের বরণ করেন অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিরা।
সংবাদমাধ্যমটির খবরে জানানো হয়, ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের এসব কারামুক্ত মানুষকে বরণ করতে আসেন তাদের স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সমর্থকরা।
মুক্ত ফিলিস্তিনিদের বহনকারী রেড ক্রসের বাস পশ্চিম তীরের রামাল্লায় পৌঁছালে তাদের স্বাগত জানান হাজারো জনতা। যদিও উদযাপনের অনুমতি ছিল না ইসরায়েলের তরফ থেকে।
ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৬৯ নারী এবং ২১ কিশোর রয়েছে, যাদের কারও কারও বয়স ১২ বছর। তাদের সবাই পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের বাসিন্দা।
ইসরায়েলের পাল্টা হামলা শুরুর ১৫ মাস পর রোববার যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়।
আল জাজিরা জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় মুক্তি প্রতীক্ষিত তিন জিম্মির তালিকা ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করে গাজার নিয়ন্ত্রক দল হামাস। এর পরই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, ইসরায়েল ও হামাস সম্মত যুদ্ধবিরতি স্থানীয় সময় রোববার বেলা সোয়া ১১টা থেকে কার্যকর হয়।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের পাল্টা হামলা শুরুর ১৫ মাস পর রোববার যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়।
আল জাজিরা জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় মুক্তি প্রতীক্ষিত তিন জিম্মির তালিকা ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করে গাজার নিয়ন্ত্রক দল হামাস। এর পরই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, ইসরায়েল ও হামাস সম্মত যুদ্ধবিরতি স্থানীয় সময় রোববার বেলা সোয়া ১১টা থেকে কার্যকর হবে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় আরও জানায়, রোববার বেলা দুইটার পর তিন জিম্মি মুক্ত হবেন। জীবিত আরও চার নারী জিম্মিকে সাত দিনের মধ্যে মুক্তি দেওয়া হবে।
আল জাজিরার খবরে উল্লেখ করা হয়, মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্র কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মাজেদ আল-আনসারি বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি কখন শুরু হবে, সে সংক্রান্ত খবরের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত করছি যে, আজ মুক্ত হতে যাওয়া তিন জিম্মির নাম ইসরায়েলি পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
চুক্তি অনুযায়ী, গ্রিনিচ মান সময় সাড়ে ছয়টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তার আগে নেতানিয়াহু বলেন, হামাস রোববার মুক্ত হতে চলা জিম্মিদের তালিকা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে না।
দুই পক্ষের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দিনে যুদ্ধ বন্ধের পাশাপাশি তিন ইসরায়েলি জিম্মি এবং ৯৫ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খৌদারি জানান, হাজারো ফিলিস্তিন এখন উত্তর গাজার জাবালিয়া এবং দক্ষিণ গাজার রাফাহর মতো এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যেগুলোতে এতদিন তাদের যেতে দেওয়া হয়নি।
যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে রোববার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৩৬ জন আহত হয় বলে জানায় উপত্যকার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ।
হামাসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলায় কমপক্ষে ১ হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি নিহত হন। ওই দিন জিম্মি করা হয় দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে।
ওই হামলার জবাবে একই দিন গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গত ১৫ মাস ধরে দেশটির হামলায় কমপক্ষে ৪৬ হাজার ৮৯৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও এক লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন আহত হয়।
আরও পড়ুন:ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের গাজার নিয়ন্ত্রক দল হামাসের মধ্যে রোববার গ্রিনিচ মান সময় সাড়ে ৬টা থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা একটি চুক্তি অনুমোদন করায় গাজায় যুদ্ধবিরতির পথ প্রশস্ত হয়।
এ পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি সহজতর করা। একই সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে দুই পক্ষের মধ্যে চলা মারাত্মক ও সবচেয়ে বিধ্বংসী যুদ্ধ বন্ধ করা।
সীমিত আকারের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর পূর্ণ মন্ত্রিসভার বৈঠক করে সরকার যুদ্ধবিরতির সময় নিশ্চিত করে।
সাধারণত জরুরি অবস্থা দেখা না দিলে সীমিত নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় ইসরায়েলি সরকারের কার্যক্রম স্থগিত রাখ হয়।
মধ্যস্থতাকারী কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এ যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয় এবং গত বুধবার প্রাথমিকভাবে তা ঘোষণা করা হয়।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শেষ মুহূর্তের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে হামাসের জটিলতাকে দায়ী করে এটি চূড়ান্ত করতে আরও দেরি হরেন।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা শুক্রবার চুক্তিটি অনুমোদনের সুপারিশ করে এটি এগিয়ে নেয়।
চুক্তির প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে গাজায় আটক তিন ইসরায়েলি নারী ও ৯৫ ফিলিস্তিনি বন্দিকে রোববার মুক্তি দেওয়া হবে।
চ্যানেল১২-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৈঠকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর ইসরায়েলে বন্ধ থাকা অস্ত্র সরবরাহ শুরু হবে।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা যদি চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে না পারি, তবে যুদ্ধের জন্য আমাদের কাছে অতিরিক্ত সরঞ্জাম থাকবে না।’
এদিকে চুক্তি লঙ্ঘন না করতে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছেন ট্রাম্প।
দুই কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোট্রিচ এ চুক্তির বিরোধিতা করেছেন এবং চুক্তির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর গাজায় পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি দাবি করেন।
চুক্তি অনুযায়ী এ সময়ে হামাস প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে।
চুক্তির পূর্ণ শর্তাবলীর প্রতি তাদের অঙ্গীকার নিশ্চিত করার এক দিন পর শুক্রবার হামাস এ কথা জানায়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর একটি অভূতপূর্ব আন্তসীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় হামাসকে ধ্বংস করতে অভিযান শুরু করে। ইসরায়েলে হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। আর ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয়েছিল।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৬ হাজার ৮৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে ২৩ লাখ জনসংখ্যার বেশির ভাগই বাস্তুচ্যুত হন।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, মানুষ বিভিন্ন চাহিদার সহায়তা পেতে সংগ্রাম করছে। বিশেষ করে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও নিরাপদ আশ্রয়ের তীব্র ঘাটতি রয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর জিম্মি হওয়াদের মধ্যে ৯৪ জন এখনও হামাসের হাতে বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৪ জন বেঁচে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যুদ্ধের আগে অপহৃত চার ইসরায়েলি রয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
তার ভাষ্য, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের একটি ‘সামগ্রিক সমাধান’ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া চুক্তি সম্পর্কে পুতিন বলেন, ‘আমরা আশা করি এটি মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি এবং (মধ্যপ্রাচ্য) অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে।’
তিনি ক্রেমলিনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে আলোচনার সময় উল্লেখ করেন, ‘একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের একটি সামগ্রিক সমাধানের প্রচেষ্টা দুর্বল না করা গুরুত্বপূর্ণ।’
মন্তব্য