আর কয়েক ঘণ্টা পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হবে।
আগামী চার বছর যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতিসহ বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণে কে করবে প্রভাব বিস্তার, এমন প্রশ্ন নিয়ে বিশ্ববাসীর নজর এখন এই নির্বাচনের দিকে।
ডেমোক্রেটিক পার্টির ‘গাধা’ আর রিপাবলিকান পার্টির ‘হাতি’ প্রতীকে এ ভোট-প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফল পেতে অবশ্য কয়েক দিন সময় লেগে যাবে। ঘটনাচক্রে তা একটু দীর্ঘও হতে পারে।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডনাল্ড ট্রাম্প।
এর মধ্যে রোববার (৩ নভেম্বর) মিশিগানে প্রচারের সময় গাজায় যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কমলা হ্যারিস। আরব-আমেরিকান ভোটারদের সমর্থন পেতেই তিনি এমন প্রতিশ্রুতি দেন।
কমলা বলেন, গাজায় মৃত্যু ও ধ্বংসের মাত্রা এবং লেবাননে বেসামরিক হতাহত ও বাস্তুচ্যুত পরিস্থিতির কারণে এ বছরটি কঠিন ছিল।
ক্ষমতায় এলে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
গাজা যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও ইসরায়েলের নিরাপত্তার কথাও উঠে আসে কমলার বক্তব্যে।
একই দিন পেনসিলভানিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনায় প্রচার চালান রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প।
জো বাইডেনের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, ব্যর্থতার জন্য ডেমোক্র্যাটদের লজ্জিত হওয়া উচিত।
রিপাবলিকান পার্টি জিতলে আগামী চার বছর স্বর্ণযুগে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ভোটের লড়াইটা তীব্র হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই লড়াইয়ে বিজয়ী কে হবেন তা জানতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে। তবে সব পূর্বাভাসই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় ও সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে জোর লড়াই হবে। কয়েকটি এলাকায় ব্যবধান খুবই কম হতে পারে। ফলে পুনরায় ভোট গণনারও প্রয়োজন পড়তে পারে। আর ভোটের ব্যবধান খুব কম হলে বা কোনো প্রার্থী নির্বাচনি জালিয়াতির অভিযোগ আনলে ফল ঘোষণায় আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
জরিপ যা বলছে
জাতীয়ভাবে ভোটারদের নিয়ে যেসব জরিপ হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে গড়ে ট্রাম্পের চেয়ে অল্প ব্যবধানে এগিয়ে আছেন কমলা। জুলাইয়ে কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী হওয়ার পর থেকে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন।
জাতীয়ভাবে যেসব জনমত জরিপ হয়েছে, তার গড় করে দেখা যাচ্ছে, রোববার পর্যন্ত কমলা হ্যারিসের পক্ষে সমর্থন ৪৮ শতাংশের। আর ট্রাম্পের সমর্থন ৪৭ শতাংশ।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হওয়ার পর নির্বাচনি প্রচার শুরুর প্রথম দিকের সপ্তাহগুলোতে কমলা হ্যারিসের দিকে সমর্থন বেশি ছিল। আগস্টের শেষে দেখা গিয়েছিল, ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় চার পয়েন্টে এগিয়ে কমলা।
সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের শুরুর দিক পর্যন্ত সেই অবস্থান ধরে রেখেছিলেন কমলা হ্যারিস, তবে শেষ কয়েক সপ্তাহে দেখা গেছে, জরিপে কমলার সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যবধান কমে এসেছে।
একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী গোটা দেশে কতটা জনপ্রিয়, তা জানার জন্য জাতীয়ভাবে করা জরিপগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্ত নির্বাচনে ফলাফল অনুমানের জন্য জাতীয় জরিপই সবচেয়ে ভালো উপায় নয়। এর কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মাধ্যমে। এ পদ্ধতিতে জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য পৃথক ইলেকটোরাল কলেজ ভোট বরাদ্দ থাকে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজের ভোট আছে ৫৩৮টি। এর মধ্যে ২৭০টি প্রয়োজন জয়ের জন্য। এক রাজ্যে যে প্রার্থী বেশি ভোট পাবেন, সব ইলেকটোরাল কলেজ ভোট তিনিই পাবেন।
নির্বাচনে চূড়ান্ত ফল নির্ধারণী দোদুল্যমান সাত রাজ্যে শেষ সময়ের জরিপে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে চমক দেখা গেছে। সোমবার ব্রাজিল-ভিত্তিক জরিপ সংস্থা অ্যাটলাস ইনটেলের জনমত জরিপের ফলে বলা হয়েছে, দোদুল্যমান সাত রাজ্যের সবক’টিতে কমলা হ্যারিসের চেয়ে এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও তাদের ব্যবধান একেবারে সামান্য।
রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ডেমোক্র্যাট দলীয় কমলা হ্যারিসের মাঝে ব্যাপক হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে অন্যান্য জনমত জরিপেও। অ্যাটলাস ইনটেলের জরিপে দেখা গেছে, দোদুল্যমান রাজ্য অ্যারিজোনায় জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং হ্যারিসের প্রতি ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন।
দোদুল্যমান আরেক রাজ্য নেভাদায় জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এবং ৪৬ শতাংশ হ্যারিসকে সমর্থন জানিয়েছেন। এ ছাড়া নর্থ ক্যারোলিনায় ট্রাম্প ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ জনসমর্থন।
অ্যাটলাস ইনটেলের জনমত জরিপ অনুযায়ী জর্জিয়া রাজ্যেও এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই রাজ্যে ৫০ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এবং ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান বলে জানিয়েছেন।
মিশিগানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং হ্যারিসের প্রতি ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন।
এছাড়া পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প ৪৯ দশমিক ৬ ও কমলা হ্যারিস ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং উইসকনসিনে ট্রাম্প ৪৯ দশমিক ৭ ও হ্যারিস ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছেন।
কমলার আলোচিত বক্তব্য
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা ১৩ মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ। এ বিষয়ে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তিনি তার ক্ষমতার সব কিছু করবেন। সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
ট্রাম্পের আলোচিত বক্তব্য
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সমালোচনা করে রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, নির্বাচিত হলে সীমান্ত খুলে দেবেন কমলা হ্যারিস, যাতে অভিবাসী, সংঘবদ্ধ গ্যাং ও অপরাধীরা অনুপ্রবেশ করতে পারে।
দেশটির নর্থ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের কিনস্টনে রিপাবলিকান পার্টির এক সমাবেশে এই মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, কমলা হ্যারিসের কোনো রূপকল্প নেই, কোনো ধারণা নেই এবং কোনো সমাধান নেই। তার একমাত্র বার্তা হলো বিভিন্ন সমস্যার জন্য তিনি নিজেকে দোষারোপ করছেন।
আর কে কে লড়ছেন এই নির্বাচনে?
যুক্তরাষ্ট্রে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া আরও চারজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রয়েছেন।
রবার্ট জুনিয়র কেনেডি
এবারের নির্বাচনে অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি রবার্ট কেনেডি জুনিয়র। তার পক্ষে এবারের নির্বাচনে ৫-৭ শতাংশ সমর্থন ছিল। কিন্তু গত আগস্ট মাসে তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। তবে কয়েকটি অঙ্গরাজ্য তার নাম ব্যালট থেকে সরাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ট্রাম্পের পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালানো কেনেডি নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবেন তা স্পষ্ট নয়।
কর্নেল ওয়েস্ট
গ্রিন পার্টির নেতা, বর্ণবাদবিরোধী ৭১ বছর বয়সী কর্নেল ওয়েস্ট একজন শিক্ষাবিদ। তিনি স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাইডেনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ ও ট্রাম্পকে ‘নব্য ফ্যাসিস্ট’ বলে মনে করেন কর্নেল ওয়েস্ট। তিনি ১২টিরও বেশি অঙ্গরাজ্যে লড়ছেন। তার সমর্থন অল্প হলেও ডেমোক্র্যাট শিবিরের জন্য তিনি বড় দুশ্চিন্তার নাম।
চেজ অলিভার
লিবার্টারিয়ান পার্টির নেতা চেজ অলিভার ২০২০ সালের নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সে সময় ১ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়েছিলেন। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের প্রায় সব কটিতেই লড়ছেন তিনি। তাকে এবারের নির্বাচনের সম্ভাব্য অঘটন সৃষ্টিকারী ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। সাবেক ডেমোক্র্যাট ৩৯ বছর বয়সী অলিভার মুক্তবাণিজ্য ও ছোট আকারের সরকার ব্যবস্থার পক্ষে প্রচার চালান।
জিল স্টেইন
বামপন্থী এ নেতা গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট। পেশায় চিকিৎসক ও পরিবেশকর্মী। বর্তমানে তার বয়স ৭৪ বছর। এর আগে ২০১২ ও ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ওই সময় তিনি যথাক্রমে দশমিক ৪ শতাংশ ও ১ শতাংশ করে ভোট পেয়েছিলেন।
শিকাগো শহরে জন্ম নেয়া জিল স্টেইন এবার ৪০টি অঙ্গরাজ্যে লড়ছেন। তাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথা ডেমোক্র্যাট শিবিরে। কারণ তিনি কমলা হ্যারিসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ভোট তার পক্ষে টানতে পারেন।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা সংঘাত বন্ধে সৌদি আরবে সোমবার অনুষ্ঠেয় আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন রাশিয়ার একজন আলোচক।
তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এ বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র পৃথকভাবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার উভয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
মস্কো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রস্তাবিত পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো। এর পরিবর্তে রাশিয়া শুধু জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর বিমান হামলা বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে।
সেই প্রস্তাব সত্ত্বেও উভয় পক্ষই আলোচনার আগে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া শহরে রাশিয়ার হামলায় একটি পরিবারের তিনজন নিহত হয়, যা ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা রবিবার ভোরে জানায়, রাশিয়া কিয়েভে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এগুলো ভবনগুলোতে আঘাত করেছে এবং আগুন লেগে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, শত্রুদের বিশাল আক্রমণে শহরের বেশ কয়েকটি জেলায় ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে এবং সাতজন আহত হয়েছেন।
সৌদি আরবে সোমবার ইউক্রেনীয় ও রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমেরিকান আলোচকরা আলাদাভাবে বৈঠক করবেন, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কিথ কেলগ হোটেলকক্ষের মধ্যে ’শাটল কূটনীতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন রাশিয়ার সিনেটর গ্রেগরি কারাসিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত কিছুটা অগ্রগতি আশা করছি।"
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে শুক্রবার বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত করার কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ঘিরে রোনেন বারের ব্যর্থতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইসরায়েল সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইএসএ পরিচালক রোনেন বারকে বরখাস্তে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোনেন বারের উত্তরসূরি নিযুক্ত হওয়ার পর অথবা ১০ এপ্রিলের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করবেন।
এর আগে গত রবিবার নেতানিয়াহু বলেন, তার ওপর আস্থার অভাব রয়েছে। তাকে এ পদে রাখা যাবে না। তাই বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বার ১৯৯৩ সালে শিন বেতে যোগ দিয়েছিলেন।
বারের মেয়াদ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরে পূর্ববর্তী ইসরায়েলি সরকার শিন বেতের প্রধান হিসেবে তাকে নিযুক্ত করেছিল। কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার এক বছর আগেই তাকে পদ থেকে বরখাস্ত করল।
ইসরায়েলে হামাসের হামলা চালানোর আগে থেকেই রোনেন বারের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। গত ৪ মার্চ হামাসের হামলার ওপর শিন বেতের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন প্রকাশের পর সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে।
আরও পড়ুন:মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) নির্দেশে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ম্যানিলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফিলিপাইন সরকার তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হংকং থেকে দেশে আসার পর আইসিসির নির্দেশে পুলিশ দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করেছে। অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে সাবেক এ প্রেসিডেন্টের চালানো অভিযানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে।
আইসিসি দুতার্তের শাসনামলে মাদক নির্মূলের নামে চালানো অভিযানে হত্যাকাণ্ডগুলোকে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে তদন্ত করছে। এর মধ্যে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ও দক্ষিণাঞ্চলের শহর দাভাওয়ের মেয়র থাকার সময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে ২০১৯ সালে ফিলিপাইনকে রোম সংবিধি থেকে প্রত্যাহার করে নেন দুতার্তে।
দুতার্তে প্রশাসন ২০২১ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত স্থগিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। আইসিসির আদালত হলো সর্বশেষ অবলম্বন।
আইসিসির আর বিচার করার এখতিয়ার নেই—এমন যুক্তি দিয়ে সে সময় তার প্রশাসন বলেছিল, ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে একই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
আরও পড়ুন:স্কটল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টার্নবেরি গলফ রিসোর্টে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরাতে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনপন্থি ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন‘ নামের একটি সংগঠন এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করে সংগঠনটি।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে জানানো হয়, ট্রাম্পের গাজা নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য ও পরিকল্পনার কারণে ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি মানুষ ও তাদের সমর্থকরা। এরই জেরে এ হামলা ঘটিয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সংগঠনের সদস্যরা।
টার্নবেরি রিসোর্টটি ভাঙচুর করার পাশাপাশি রিসোর্টের দেয়ালে লাল রং দিয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন গ্রাফিতি অংকন করা হয়েছে। রিসোর্টের সবুজ মাঠে লাল রং দিয়ে লেখা হয়েছে ‘গাজা বিক্রির জন্য নয়’।
সংগঠনটির কর্মীরা জানান, ট্রাম্প গাজাকে নিজের সম্পত্তির মতো মনে করে, যা খুশি তাই করতে পারে না। তারই প্রতিবাদ এটা।
তারা বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে চাই, আমাদের প্রতিরোধ থেকে তার নিজের সম্পত্তিও নিরাপদ নয়।’
ফিলিস্তিনিনের এই হামলাকে ট্রাম্প ‘শিশুসুলভ, অপরাধমূলক’ কার্যক্রম হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তার পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসবে না।
আরও পড়ুন:দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সমীকরণ ঢেলে সাজাতে উঠেপড়ে লেগেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ উদ্যোগ পৌঁছেছে ইরানের দ্বারপ্রান্তেও।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি পাঠিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আলোচনায় না বসলে সামরিক অভিযানের হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানের নেতাদের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির উদ্দেশে বলেছি, আশা করি আপনি আলোচনায় বসবেন। কারণ, এটি ইরানের জন্য ভালো হবে।’
একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানালে বিষয়টিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় তেহরানের কল্যাণে সমঝোতাই যুক্তিসঙ্গত হবে।
যদিও ট্রাম্পের এই দাবি অস্বীকার করেছে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন। তারা জানিয়েছে, এমন কোনো চিঠির বিষয়ে অবগত নয় তারা।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ট্রাম্পের চিটি পাঠানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
তিনি শুক্রবার এএফপিকে বলেন, শক্তি প্রয়োগ করলে তারা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না।
আরও পড়ুন:ইরান ও রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়াবে চীন।
নতুন টার্মিনাল ও জাহাজ চালু হওয়ায় মার্চ থেকে চীন তেল আমদানি বৃদ্ধি করবে বলে খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি সত্ত্বেও চীন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে ‘অয়েল প্রাইস’ নামের ওয়েবসাইট।
অয়েল প্রাইসের তথ্য অনুযায়ী, ইরান ও রাশিয়া থেকে চীনের তেল আমদানি দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওয়েবসাইটটির উদ্ধৃতি দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া শনিবার এ খবর জানায়।
কয়েকজন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে জানান, চীন তেল ট্যাংকারগুলোতে পরিবর্তন এনেছে যাতে সেগুলো আর নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকে। এর ফলে রাশিয়া এবং ইরানের সঙ্গে তেল বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারবে বেইজিং। ফলে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এই দুই দেশ থেকে চীন বেশি পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারবে। এ আমদানি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা চীনা তেল ট্যাংকারগুলো এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের চবাহার কাউন্টিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের সদরদপ্তরে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জয়শুল আজল।
স্থানীয় সময় শনিবার সকালে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আবাসন তৈরি এবং হাউজিং ইউনিট নির্মাণ করে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি এ খবর জানায়।
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের দপ্তরে সাউন্ড বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে।
প্রাদেশিক প্রসিকিউটর মেহদি শামসাবাদি জানান, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
তিনি জানান, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীগুলো এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বিস্ফোরণে ভবনটির একাংশের ক্ষতি হয়েছে।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশে বিগত বছরগুলোতে সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় অনেকবার সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। যেসব গোষ্ঠী এসব হামলা চালিয়েছে, তাদের সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পর্ক রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের তাফতান কাউন্টির গোহার কুহ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হন। ওই হামলারও দায় এ সংগঠন স্বীকার করে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য