জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় নতুন করে স্থান করে নিয়েছে সৌদি আরবের প্রত্নতত্ত্ব সমৃদ্ধ অঞ্চল আল-ফাও।
নতুন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে দেশটিতে ইউনেসকো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের সংখ্যা দাঁড়াল আটটি।
সৌদি আরবের ঐতিহ্য ও প্রাচীন ইতিহাস পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের সংস্কৃতির এক অসাধারণ মেলবন্ধন। বাণিজ্যপথ হিসেবে বরাবরই এ অঞ্চলটি যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে এসেছে। মানুষের হাজার বছরের আবাস রয়েছে এ প্রাচীন ভূমিতে।
সৌদির বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাচীন সভ্যতা সমৃদ্ধি লাভ করেছে, যার অনেক কিছুই এখনও অজানা। ওই অঞ্চলের বিশেষত্ব হলো সেটি এখনও অতীত দিয়ে অনেকটাই প্রভাবিত।
প্রত্নতত্ত্ব সমৃদ্ধ আল-ফাও অঞ্চল
আল-ফাও প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আবিষ্কারের অপেক্ষায় রহস্যঘেরা কারইয়াত আল-ফাউ শহরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে সেখানে। সৌদির কেন্দ্রস্থল আল-ফাও পঞ্চম শতাব্দীতে এসে রহস্যজনকভাবে পরিত্যক্ত হয়।
সৌদি আরবের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অসাধারণ ঐতিহাসিক নিদর্শন আল-ফাও। এখানে প্রায় ১২ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শেষ প্রাক-ইসলামিক যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত। এসব নিদর্শন প্রমাণ করে ছয় যে, হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে অন্তত তিনটি ভিন্ন জনগোষ্ঠীর বসতি ছিল।
যেভাবে যাওয়া যাবে আল-ফাও এলাকায়
আল ফাও প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল সৌদির রাজধানী রিয়াদ থেকে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এটি ওয়াদি আল-ডাওয়াসির থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে, এম্পটি কোয়ার্টারের উত্তর-পশ্চিমে এবং টুওয়াইক পর্বতমালার কাছে অবস্থিত।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যে আল-ফাও দর্শনীয় স্থান। আল-ফাওয়ের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে প্রাচীন বাণিজ্য কেন্দ্রের জীবনযাপনের ছোঁয়া রয়েছে। এর সৌন্দর্য কালের স্রোতে অপরিবর্তিত থেকে গেছে।
ভ্রমণপিপাসুরা সেখানে প্রতি পদক্ষেপেই ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে আবিষ্কার করতে পারবেন, যা ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় আল-ফাও এলাকা সংরক্ষণ ছিল যথেষ্ট দুরূহ। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার অত্যন্ত উন্নতির ফলে সহজেই পর্যটকরা তা ঘুরে আসতে পারবেন। একসময় সেখানে উট বা ঘোড়া ছাড়া যাওয়ার চিন্তাও করা যেত না।
রিয়াদ এবং জেদ্দা থেকে নাজরান বিমানবন্দরে নিয়মিত ফ্লাইট চলে। সড়কপথে নাজরান থেকে আল-ফাওয়ের দূরত্ব দুই ঘণ্টার। সৌদিয়া, ফ্লাইনাস ও ফ্লাইআইডিলের মতো বিমান সংস্থা নিয়মিত তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করে।
নাজরান থেকে আপনি একটি গাড়ি ভাড়া করতে পারেন অথবা আল-ফাওয়ের একটি ট্যাক্সি নিতে পারেন। আল-ওয়েফাক রেন্ট-এ-কার এবং লুমিরেন্টাল থেকেও আপনি গাড়ি ভাড়া করতে পারবেন।
থাকবেন কোথায়
আল-ফাওয়ের কাছে থাকার জন্য পাওয়া যাবে বেশ কিছু গেস্টহাউজ, যেগুলোতে স্থানীয় ঐতিহ্য, খাবার ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। আর যদি রিয়াদে থাকেন তবে, সে সুযোগে সৌদি রাজধানী এবং এর আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখতে পারেন।
‘দ্য সিটি অফ আর্থ’ নামে পরিচিত দিরিয়াহ ১৭২৭ সালে সৌদি রাজ্যের জন্মস্থান হিসেবে খ্যাত। এখানে আত তুরাইফের ইউনেসকো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যে তালিকাভুক্ত স্থান রয়েছে, যা সৌদি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
অত্যাধুনিক বুজাইরি টেরাসে বিভিন্ন দেশের রেস্তোরাঁ রয়েছে। চার তারকা রেস্তোরাঁগুলোতে সৌদি খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন সহজেই।
স্থানীয় ক্যাফেগুলোতে সৌদি কফির প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করতে ভুলবেন না।
রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে ‘দ্য এজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে বেড়িয়ে পড়তে পারেন। গাড়িতে গেলে এটি রাজধানী শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
রাজধানী রিয়াদে পছন্দসই বাজেটে নানা রকম ট্যুর প্যাকেজ ও আবাসিক হোটেলে থাকতে পারবেন। এখানে বিলাসবহুল থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে।
রিটজ-কার্লটন রিয়াদ, কিংডম সেন্টারের ফোর সিজন হোটেল রিয়াদ, র্যাডিসন ব্লুসহ আরও অনেক হোটেল রয়েছে, যেখানে একা কিংবা পরিবার নিয়ে নিরাপদে থাকা যাবে।
সহজ অনলাইন ই-ভিসা ব্যবস্থা
কিছুদিন আগেও সৌদি ভ্রমণ খুব সহজ ছিল না। এখন ৬৬টি দেশের নাগরিক ই-ভিসার মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করে দ্রুত ও সহজে ভিসা পেতে যান। জি-সি-সিভুক্ত দেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা শেনজেন ভিসাধারী এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাসিন্দারা তাৎক্ষণিক ই-ভিসা পেতে পারেন।
ভ্রমণের সময় যেকোনো সমস্যায়, ‘ভিজিট সৌদি’ ট্যুরিস্ট হেল্পলাইন ৯৩০ থাকবে আপনার পাশে।
আরও পড়ুন:লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কেন্দ্রস্থলের দুটি এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ওপর গুলিও চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বৃহস্পতিবার দেশটিতে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে থাকা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক আলোকচিত্রী জানান, এক বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে বৈরুতের মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এ বিমান হামলায় একটি আট তলা ভবন ধসে পড়ে এবং অন্যটির নিচ তলা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা এ হামলার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীতে ইসরায়েলি বিমান হামলা অনেক বেশি সাধারণ ঘটনা। এসব এলাকায় হিজবুল্লাহর অনেক সামরিক ঘাঁটি আছে।
হামলার পর হিজবুল্লাহর আল মানার টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, গোষ্ঠীটির শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওয়াফিক সাফাকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এতে বলা হয়, সাফা টার্গেট করা ভবনগুলোর কোনোটিতেই ছিলেন না।
হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে এক বছরের পাল্টাপাল্টি হামলা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেয়।
লেবাননজুড়ে ভারি হামলা চালানোর পাশাপাশি স্থল আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। অন্যদিকে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আরও জনবহুল এলাকায় রকেট হামলা বাড়িয়েছে হিজবুল্লাহ। এতে অল্প কিছু হতাহত হওয়াসহ দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
ইসরায়েলি বাহিনী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ওপর গুলি চালিয়ে দুজনকে আহত করে, যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক নিন্দার ঝড় তুলেছে।
এ ঘটনার পর ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
বৈরুতের মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলার
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাস আল-নাবা ও বুর্জ আবি হায়দার এলাকায় বৈরুতের দুটি স্থানের ধ্বংসস্তূপের কাছে অনেকগুলো অ্যাম্বুলেন্স ও বিপুলসংখ্যক মানুষকে জড়ো হতে দেখা যায়।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ ঘটনায় ২২ জন নিহত ও ১১৭ জন আহত হন, তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
সম্প্রতি বৈরুত সংলগ্ন এলাকায়, বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ শহরতলীতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নিহত হন।
২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর হামাস ও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলে রকেট হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ।
আরও পড়ুন:লেবাননের সীমান্ত এলাকার কাছে আরও চারটি শহরকে ‘বদ্ধ সামরিক অঞ্চল’ ঘোষণা করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
এসব এলাকায় স্থল অভিযান চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, রোশ হানিক্রা, শ্লোমি, হানিতা ও আরব আল-আরমশে এলাকায় ‘পরিস্থিতিগত মূল্যায়নের’ পর এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার রাত ১০টা থেকে এসব এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
এর আগে লেবাননের বেসামরিক নাগরিকদের সিডনের উত্তরে আওয়ালি নদী এবং রোশ হানিক্রার মধ্যবর্তী উপকূলীয় অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদ্রেই।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে লেবাননে ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১ হাজার ৭৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে নিহতের সংখ্যা ৪১ হাজার ৭৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। হামলায় আহত হয়েছে ৯৬ হাজার ৭৯৪ জন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় ৯৯ জন নিহত ও ১৬৯ জন আহত হয়।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বৃহস্পতিবার বলেন, গত দুই দিনে গাজায় তিনটি ইউএনআরডব্লিউএ স্কুল আক্রান্ত হয়েছে এবং কমপক্ষে ২১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘স্কুলগুলোতে ২০ হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কিছু স্কুলে একাধিকবার হামলা হয়েছে।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ১৪০টিরও বেশি ইউএনআরডব্লিউএ স্কুল হামলার শিকার হয়েছে বলে জানান তিনি।
লাজারিনি আরও বলেন, আগে স্কুলগুলো ছিল শিক্ষার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এখন তা অনেকের জন্য নরকে পরিণত হয়েছে।
স্কুলকে কেউ সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবে না। স্কুলগুলো কোনো টার্গেট নয়। এ বিষয়টি যুদ্ধের মৌলিক নিয়ম যা স্পষ্টভাবে এখানে উপেক্ষা করা হয়েছে।
দক্ষিণ ইসরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলা চালায় হামাস। ওই সময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। জিম্মি করে নেয়া হয় ২৫০ জনের মতো ইসরায়েলি।
ওই হামলার জবাবে গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে বড় আকারের অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
আরও পড়ুন:লেবাননের রাজধানী বৈরুতের প্রাণকেন্দ্রে বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে ইসরায়েলি বোমা হামলায় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, লেবানন সীমান্তে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে বছর ধরে চলা সংঘাতে ইসরায়েলি সেনারা সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার শিকার হওয়ার পর ওই হামলা চালায় তেল আবিব।
ইসরায়েলের ভাষ্য, বৈরুতে নিখুঁত বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটি।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানান, তারা বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।
অন্যদিকে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সংবাদমাধ্যমটিকে জানায়, মধ্যাঞ্চলীয় বাশুরা এলাকায় লেবাননের পার্লামেন্টের কাছে একটি ভবনকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল। লেবাননের প্রাণকেন্দ্রের এত গভীরে গত এক বছরে এটিই দেশটির প্রথম হামলা।
দক্ষিণ ইসরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজার শাসক দল হামাসের হামলার পর একই দিন ফিলিস্তিনের উপত্যকাটিতে পাল্টা হামলা শুরু করে তেল আবিব।
প্রায় এক বছর ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় সাড়ে ৪১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। হামাসের ওই হামলায় নিহত হয় এক হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদের কথা জানিয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকেই ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো শুরু করে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অবস্থান লক্ষ্য করে প্রায় বিরামহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এতে নতুন মাত্রা যোগ করে মঙ্গলবার তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।
লেবাননের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি সাতজন আহত হয়।
দেশটির বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, ভবনটির দ্বিতীয় তলায় জ্বলছে আগুন।
ছবিটির সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
লেবাননের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপশহর দাহিয়েহতেও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পাওয়া যায়, যে এলাকায় গত সপ্তাহে হামলায় প্রাণ হারান হিজবুল্লাহর প্রধান নাসরাল্লাহ। এলাকাটিতে বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ পাওয়া যায়।
এর আগে বুধবার দিনভর দক্ষিণাঞ্চলীয় উপশহরে ডজনের বেশি হামলা চালায় ইসরায়েল।
দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ ঘরবাড়ি ছেড়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে যাওয়া লেবাননের গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের পরবর্তী নোটিশের আগ পর্যন্ত না ফেরার অনুরোধ করেছে।
আরও পড়ুন:লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামগুলোর ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে’ স্থল অভিযান শুরু করার কথা জানিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধরত ইসরায়েল।
দেশটির সেনাবাহিনী মঙ্গলবার এ কথা জানায়।
হিজবুল্লাহ দেশটির সীমান্তে শত্রু সেনাদের লক্ষ্যবস্ত করার ঘোষণার পর ইসরায়েল এ স্থল অভিযান শুরু করে।
লেবাননের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, দক্ষিণ বৈরুতে ইসরায়েল অন্তত ছয় দফা হামলা চালায়।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, রাজধানী দামেস্কের আশপাশেও ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছে।
সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করেই ইসরায়েল এ হামলা চালায় এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, দক্ষিণ লেবাননের সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোয় হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযানও শুরু হয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এ অভিযানের অনুমতি দেয়।
সামরিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, এর মধ্য দিয়ে লেবাননে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের লড়াই নতুন মাত্রা পেয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার ইসরায়েলের স্থল অভিযানের বিরোধিতা করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।
হিজবুল্লাহ বলেছে, ইসরায়েলের স্থল হামলা মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত।
এদিকে সিরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা সানা বলেছে, দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাজধানী দামেস্ক এলাকায় তিন দফা হামলা প্রতিহত করেছে, তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
গত সপ্তাহে রাজধানী বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে জোরালো হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গত শুক্রবার বৈরুতের দক্ষিণে ইসরায়েল বোমা হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করে।
ইসরায়েলি হামলার কারণে লেবাননে এরই মধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে হিজবুল্লাহর সঙ্গে তেল আবিরের পুরোনো বিরোধ তীব্র রূপ নেয়।
হিজবুল্লাহ হামাসের সমর্থনে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছিল। ইসরায়েলও এসব হামলার পাল্টা জবাব দিয়ে আসছিল।
এমন বাস্তবতায় লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সাম্প্রতিক প্রস্তাবের ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি এবং লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলি হামলা থেকে ফিলিস্তিনের জনগণকে রক্ষায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ফিলিস্তিনে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়বদ্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৯তম অধিবেশনে শুক্রবার ভাষণ দেয়ার সময় তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ববাসীর উদ্বেগ এবং নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা থামছে না।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের বিদ্যমান বাস্তবতা কেবল আরব কিংবা মুসলমানদের জন্যই উদ্বেগজনক নয়, বরং তা সমগ্র মানবজাতির জন্যই উদ্বেগের। একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেক ফিলিস্তিনির জীবন অমূল্য।
‘ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ হচ্ছে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়বদ্ধ করতে হবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান নৃশংসতা, বিশেষত নারী এবং শিশুদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যে নিষ্ঠুরতা বিশ্ব দেখছে, তা থেকে নিস্তারের জন্য বাংলাদেশ অনতিবিলম্বে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিান ও ইসরায়েলের মধ্যে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি আনতে পারবে। তাই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর বাস্তবায়নের জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
শান্তিতে নোবেলজয়ী বলেন, গত আড়াই বছর ধরে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এই যুদ্ধের প্রভাব সর্বব্যাপী। এমনকি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব অনুভূত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাই উভয় পক্ষকেই সংলাপে বসে বিরোধ নিরসনের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের একের পর এক হামলায় বিধ্বস্ত লেবাননে গত ২৪ ঘণ্টায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ জনে। আহত হয়েছে ১৫৩ জন।
দেশটিতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০০ জনে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এ খবর জানায়।
এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নেতারা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেও তা মানছেন না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু; বরং আরও হামলার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
বৈরুত থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি শুক্রবার এসব তথ্য জানায়।
এক সপ্তাহ ধরে বিরতিহীন হামলা চলছে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে। প্রথমে নিয়ম করে দুই-একবার হামলা হলেও গত কয়েক দিনে বেড়েছে হামলার ভয়াবহতা।
নেতানিয়াহু প্রশাসন ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দমনের কথা বললেও প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক বেসামরিক নাগরিক।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযাযী, গত ২৪ ঘণ্টায় অনেক মানুষের প্রাণ গেছে ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলায়।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে হামলা। এতে প্রাণহানির সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য