পাকিস্তান ইতিহাস থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি মন্তব্য করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার বলেছেন, প্রতিবেশী দেশটি এখনও সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।
ভারতের লাদাখের কারগিল যুদ্ধ স্মৃতিসৌধে ১৯৯৯ সালের যুদ্ধে প্রাণ হারানো ভারতীয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মোদি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে পাকিস্তান পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছে। ইতিহাস থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি এটি (পাকিস্তান)।’
কারগিল যুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জন্য তাদের আত্মত্যাগ অমর হয়ে থাকবে। কারগিল বিজয় দিবস হিসেবে তাদের এ অবদানকে স্মরণ করা হবে।
কারগিলের হিমশীতল আবহাওয়ায় ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে প্রায় তিন মাস লড়াই চলে ভারতীয় সেনাদের। ওই বছরের ২৬ জুলাই ‘অপারেশন বিজয়’ অভিযানে জয় ঘোষণা করে ভারত।
দিনটিকে ‘কারগিল বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম রাষ্ট্রটি।
কারগিল স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে শিনকুন লা টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন মোদি। সব ঋতুতে হিমাচল প্রদেশের সঙ্গে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখকে যুক্ত করতে টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে যেকোনো বৈঠক আয়োজনের ক্ষেত্রে নিয়মিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠকের সম্ভাব্যতা নিয়ে এক সাংবাদিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে প্রক্রিয়া আছে, সে অনুযায়ী আমরা এগোব।’
তিনি বলেন, ‘এমন নয় যে তারা এক মাস আগে এ ধরনের বৈঠক চাইবে; বরং একটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘তারা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত নন যে মোদি ইউএনজিএতে (জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন) থাকবেন। আসলে তারা যদি দেখা করতে না চায়, তাহলে কিছু করার নেই।’
এর আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস দাবি করেছিল, চলতি সপ্তাহের শুরুতে বাংলাদেশ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি দলের ব্যাপারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রতিনিধি দলের সদস্য ১০ থেকে ১২ জনের বেশি হবে না।
কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তালিকার বাইরেও আরেকটি তালিকা রয়েছে বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যাচ্ছি।’
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে পা রাখবেন প্রধান উপদেষ্টা। ২৯ সেপ্টেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
আগামী ১০ সেপ্টেম্বর শুরু হবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশন। আর উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ বিতর্ক শুরু হবে ২৪ সেপ্টেম্বর।
এর আগে ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর সামিট অব দ্য ফিউচার অনুষ্ঠিত হবে।
এই সামিটে সব বয়সী নেতা, বিশেষজ্ঞ ও কর্মীরা একত্রিত হবেন। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা কীভাবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা আরও ভালোভাবে মেটাতে পারে, তা নিয়ে এতে আলোচনা হবে।
আরও পড়ুন:ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে নতুন করে সহিংসতায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন।
অল ইন্ডিয়া রেডিও শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ২২৯ কিলোমিটার পশ্চিমে জিরিবাম জেলার নুংচাপ্পি গ্রামে শনিবার ঘুমন্ত অবস্থায় এক বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করা হয়। পরে নুংচেপি এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে চারজন নিহত হয়।
এর আগে শুক্রবার বিষ্ণুপুর জেলার মৈরাং শহরে বোমা বিস্ফোরণে এক বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ছয়জন আহত হন।
বিপুলসংখ্যক মানুষ শুক্রবার রাতে একত্রিত হয়ে মণিপুর রাইফেলসের আলাদা দুটি ব্যাটালিয়ন ঘেরাও করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের চেষ্টা করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় সরকারি বাহিনী।
সুবিধাবঞ্চিত আর্থ-সামাজিক গোষ্ঠীগুলোর শিক্ষা ও সরকারি চাকরির জন্য যে তফসিলি জনগোষ্ঠীর মর্যাদা দেয়া হয়, সে তালিকায় মেইতেই সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে গত বছরের ৩ মে থেকে মণিপুরে বড় আকারের সহিংসতা শুরু হয়।
সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ২০০ জনেরও বেশি নিহত এবং ১ হাজার ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন। বাস্তুচ্যুত হন ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
সহিংসতার মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন থানা ও পুলিশের কাছ থেকে পাঁচ হাজারের বেশি অস্ত্র লুট হয়।
আরও পড়ুন:সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে বাংলাদেশিদের হত্যাকাণ্ডকে নির্মমতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
হত্যা কোনো সমাধান নয় উল্লেখ করে তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকায় রাষ্ট্রীয় বাসভবনে ভারতভিত্তিক সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে মতপার্থক্য নিরসনের চেষ্টা করবে। এটি বছরের পর বছর বিলম্বিত হলে কারও উদ্দেশ্য সাধন হবে না।
সীমান্ত হত্যার নিন্দা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, হত্যা কোনো সমাধান নয়।
তিনি বলেন, ‘কাউকে হত্যা করা কোনো সমাধান নয়। কারণ এটি মোকাবিলা করার আইনি উপায় রয়েছে। এটি পরিচালনা করার জন্য একটি স্থল প্রক্রিয়া এবং আইনি পদ্ধতি থাকতে হবে। এটা একতরফা ব্যাপার।
‘দেশ দখলের জন্য কেউ সীমান্ত অতিক্রম করছে না। যারা গুলি করে হত্যা করছে, তারা শুধুই নির্লজ্জ। এটা উদাসীনতা। এটা বন্ধ করতে হবে।’
দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টন সমস্যা অবশ্যই আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সমাধান করতে হবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের মতো অববাহিকার দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে, যা তারা সংরক্ষণ করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘এই ইস্যু (পানিবণ্টন) নিয়ে বসে এটা কোনো উদ্দেশ্য সাধন করছে না। কতটুকু পানি পাব জেনে যদি খুশি না হয়েও সই করি, তবুও ভালো হয়। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে সমস্যা সমাধানে যত দ্রুত সম্ভব চাপ দেবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন সরকার তা অনুসরণ করবে।
আরও পড়ুন:পানি আগ্রাসনের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন বিশিষ্টজনেরা। নদীর বাঁধ কেটে দিয়ে ফেনীসহ দেশের ১১টি জেলাকে বন্যায় ডুবিয়ে দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাবি তুলেছেন তারা।
শুক্রবার ফেনীর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘আমরা ফেনীবাসী’র ব্যানারে ‘স্ট্রাইক ফর ওয়াটার জাস্টিস’ কর্মসূচি থেকে এই দাবি জানানো হয়।
দেশের খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
কর্মসূচি থেকে ‘১১ দফা ফেনী ঘোষণা’তুলে ধরেন দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ফেনী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসাইন।
আয়োজক প্লাটফর্ম ‘আমরা ফেনীবাসীর অন্যতম উদ্যোক্তা বুরহান উদ্দিন ফয়সলের সঞ্চালনায় স্ট্রাইক কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ এজাজ, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বাপা যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, নারী নেত্রী নুর তানজিলা রহমান, ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম, দৈনিক ফেনীর সম্পাদক আরিফ রিজভী, ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক এমদাদ হোসাইন, কবি ও সমাজকর্মী ফজলুল হক, সমাজকর্মী আমের মক্কি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনী জেলার সমন্বয়ক আব্দুল আজিজ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ইমাম হোসেন, কবি ও সমাজকর্মী আলাউদ্দিন আদর।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে এসে এই কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানান জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভুইয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন আমরা ফেনীবাসী প্লাটফর্মের অন্যতম উদ্যোক্তা কেফায়েত শাকিল। অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আরেক উদ্যোক্তা আবদুল্লাহ হাসান।
অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এই বন্যা শুধুই প্রাকৃতিক নয়। ভারত কোনোভাবে এর দায় এড়াতে পারে না। এই বন্যায় ফেনীসহ ১১টি জেলার মানুষ মানসিক, শারীরিক ও আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি। একইসঙ্গে সব অভিন্ন নদীতে ড্যাম বা বাঁধ অপসারণের দাবি জানান এই বিশেষজ্ঞ।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ভারত চাইলেই যে এক দিনে বাঁধ কেটে বাংলাদেশের মানুষকে বিপদে ফেলে দিতে পারে এবারের বন্যা তার উদাহরণ। বাংলাদেশ ও ভারতের ৫৪টি অভিন্ন নদীতে ৬৮টি বাঁধ দিয়েছে ভারত। প্রতিটির হিসাব ভারতকে দিতে হবে।’
এই পানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ভারত দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও ফাঁরাক্কায় বাঁধ দিতে পারেনি। শেখ মুজিবের শাসনামলে ভারত এই বাঁধ দিতে সক্ষম হয়। ফেনী নদীর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে। এ দেশে দিল্লির আধিপত্যবাদের প্রোডাক্ট ছিলেন শেখ হাসিনা। দেশে উন্নয়নের বয়ান হাসিনার ছিল না, এটি ছিল মোদির শেখানো বুলি। উন্নয়নের নামে নদী ও পরিবেশ ধ্বংস করেছেন শেখ হাসিনা।’
মিহির বিশ্বাস বলেন, ‘ফেনীর মানুষ লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে জানে। ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও ফেনীবাসী হারবে না।’
ভারতকে পানি নিয়ে বৈষম্যহীন আচরণের আহ্বান জানান তিনি।
হুমায়ুন কবির সুমন বলেন, ‘দেশের এবারের বন্যা যতটা না প্রাকৃতিক তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। পানি আগ্রাসনের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিচার করতে হবে।’
সাংবাদিক নেতা এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ভারত শুধু পানি-সন্ত্রাস নয়, সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা, এ দেশের ভোটাধিকার হরণ ও বাণিজ্য আগ্রাসন চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন। আচরণ না পাল্টালে ভারতকে এর মূল্য দিতে হবে।’
‘১১ দফা ফেনী ঘোষণার মধ্যে রয়েছে-
১. আন্তঃসীমান্তীয় সব নদী থেকে ড্যাম/ব্যারেজ বা যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তা অপসারণ করতে হবে;
২. এবারের বন্যার জন্য ফেনীর পরশুরামে ভারতের ইচ্ছাকৃত বাঁধ কেটে দেয়া বহুলাংশে দায়ী। এজন্য জাতিসংঘের সহায়তায় ভারতকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে;
৩. মুহুরীর চরে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে ভারতের কেটে দেয়া সুরক্ষা বাঁধটি অবিলম্বে পুনর্নির্মাণ করতে হবে;
৪. বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে এবং ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে পানি উত্তোলন চলবে না;
৫. বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি নাগরিককে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে;
৬. কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি ও অন্যান্য ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ, প্রণোদনা এবং সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে;
৭. শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে অতিদ্রুত তা মেরামত করতে হবে;
৮. নদীভাঙন রোধে এখনি কার্যকর ব্যবস্থা চাই। মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণে কালবিলম্ব না করে পদক্ষেপ নিতে হবে;
৯. বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার পেছনে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনেরও দায় আছে। এজন্য দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। এবং বাংলাদেশ সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে;
১০. উন্নয়নের নামে জলাধারে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না। ভরাট করা খাল ও নদীর নাব্য ফিরিয়ে দিতে হবে। দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে;
১১. নদী ও পরিবেশ দূষণ রোধ এবং বনভূমি উজাড় বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা চাই।
‘স্ট্রাইক ফর ওয়াটার জাস্টিস’ কর্মসূচিতে স্থানীয় কিছু যুব সংগঠন অংশ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে ফেনী জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবার, ইয়ুথ নেট গ্লোবাল ফেনী শাখা, ইকো রেভ্যুলেশন, ফেনী ছাত্র ও যুব সমিতি, লস্করহাট ব্লাড ডোনেট অ্যাসোসিয়েশন, মির্জা ফাউন্ডেশন, মিশন গ্রিন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ), প্রয়াস, আমরাই আগামী ও ফেনী ফ্লাড রেসপন্স টিম।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে মতদ্বৈততা নিরসনের পথ খুঁজবে বলে প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
নিজ বাসভবনে ভারতভিত্তিক বার্তা সংস্থাটিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
সাক্ষাৎকারের এ অংশটি নিয়ে শুক্রবার খবর প্রকাশ করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এর আগে বৃহস্পতিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে পিটিআইয়ের কাছে ড. ইউনূসের করা মন্তব্য নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে ইউনূস পিটিআইকে বলেন, ‘এ ইস্যু (পানিবণ্টন) নিয়ে বসে থাকলে কোনো উদ্দেশ্য সাধন হবে না। আমি কী পরিমাণ পানি পাব সেটা জানার পর খুশি না হয়ে (চুক্তি) সই করাটাও অপেক্ষাকৃত ভালো। এ ইস্যুর সমাধান হতে হবে।’
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ২০১১ সালের ঢাকা সফরের সময় তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি সইয়ের কথা ছিল দুই দেশের, তবে সে সময় পশ্চিমবঙ্গে পানি স্বল্পতার কথা জানিয়ে চুক্তির বিরোধিতা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা সবাই চেয়েছিলাম এই চুক্তি সম্পন্ন করতে। এমনকি ভারত সরকারও এর জন্য প্রস্তুত ছিল।
‘যদিও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার সে জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমাদের এর নিষ্পত্তি করা দরকার।’
আরও পড়ুন:দুই দেশের মধ্যকার অস্বস্তি রোধে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চুপ থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ভারতভিত্তিক বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
রাষ্ট্রীয় বাসভবনে পিটিআইকে সাক্ষাৎকারটি দেন প্রধান উপদেষ্টা, যা বৃহস্পতিবার প্রকাশ হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। সেখান থেকে তার বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়।
ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ (সরকার) তাকে ফেরত চাওয়ার আগ পর্যন্ত ভারত যদি তাকে রাখতে চায়, শর্ত হবে যে, তাকে চুপ থাকতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, ভারতের সঙ্গে মজবুত সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশ, তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দলকে ইসলামপন্থি হিসেবে চিত্রিত করার পাশাপাশি শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশ হবে আফগানিস্তান, এমন বয়ান থেকে নয়া দিল্লিকে অবশ্যই সরে আসতে হবে।
শেখ হাসিনার বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘ভারতে তার (শেখ হাসিনা) অবস্থান নিয়ে কেউই সন্তুষ্ট নয়। কারণ আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে তাকে ফেরাতে চাই।
‘তিনি ভারতে আছেন এবং কথাও বলছেন, যেটি সমস্যাজনক। তিনি নীরব থাকলে আমরা এটি (তার ভারতে থাকার বিষয়টি) ভুলে যেতাম। তিনি (শেখ হাসিনা) নিজের জগৎ নিয়ে থাকলে লোকজনও সেটি ভুলে যেত, তবে তিনি ভারতে বসে কথা বলছেন এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন। এটি কেউই পছন্দ করছে না।’
আরও পড়ুন:সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে তাকে ভারত থেকে ফেরত চাওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এমন ঘটনায় ভারত বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে পারে।
লাইভ মিন্টের প্রতিবেদনে এমন তথ্যের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘রয়টার্স টেলিভিশনকে দেয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। তাই তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ফেরত চাওয়া হতে পারে।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘শেখ হাসিনার দিল্লিতে থাকা, ভারতে থাকা… প্রশ্ন আসে যে তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। এ নিয়ে উত্তর দেয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি আমি নই। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় থেকে যদি হাসিনাকে ফেরত চাইতে অনুরোধ আসে, তাহলে আমাদের ভারতের কাছে তাকে ফেরত চাইতে হবে।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে চাওয়া হলে ভারত বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে। আমি মনে করি ভারত সরকার এ সম্পর্কে জানে এবং আমি নিশ্চিত এ বিষয়টি তারা বিবেচনায় রাখবে।’
এ ছাড়া নিজ স্বার্থ বজায় রেখে বাংলাদেশ পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে চায় বলে জানিয়েছেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নীতি হলো জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে সব দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা। কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। লক্ষ্য হলো একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়া। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা।’
ছাত্র-জনতার তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতের দিল্লিতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন জায়গায় বেশকিছু হত্যা মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য