আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলের মাটিতে ইরান হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এক কূটনীতিক এ তথ্য জানিয়েছেন বলে শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কয়েকজন কর্মকর্তাসহ ১৩ জন নিহত হন।
ইসরায়েল ওই হামলার দায় স্বীকার না করলেও তেল আবিবকেই দায়ী করেছে ইরান। ওই হামলার উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে বলেও তেহরানের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। আইআরজিসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোহসেন রিজাইয়ের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে তাসনিম নিউজ।
এ বিষয়ে পূর্ণ ধারণা রাখা যুক্তরাষ্ট্রের এক কূটনীতিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, ‘ইসরায়েলের লক্ষ্য অন্যত্র থাকাকালে কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের মাটিতে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে পারে ইরান। আমাদের গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো অন্তত তাই ইঙ্গিত করছে।’
ওই কূটনীতিক জানান, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই হামলা চালাতে পারে ইরান। এ হামলা মোকাবিলায় নিজেদের ভূখণ্ডের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল।
তেহরানের প্রতিক্রিয়া
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে টাইমস অফ ইসরায়েলের খবরে বলা হয়, হামলার বিষয়ে তেহরান এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেনি বলে জানিয়েছেন ইরানের এক কর্মকর্তা।
আইআরজিসির এক উপদেষ্টার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সপ্তাহের শুরুতে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ইসরায়েলে হামলা চালাতে বেশ কয়েকটি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন আইআরজিসির কর্মকর্তারা। এর মধ্যে অত্যাধুনিক মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথাও উল্লেখ করেন তারা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পোস্টগুলোতেও ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে ইরানের হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে। এসব লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের দিমোনার পারমাণবিক স্থাপনা, হাইফার বিমানবন্দরের মতো স্থাপনা, তবে এসব পোস্টের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি টাইমস অফ ইসরায়েল।
সংবাদমাধ্যমটির খবরে উল্লেখ করা হয়, হামলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে, ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মতো কিছু করা হলে অবশ্যই তার পাল্টা জবাব দেবে তেল আবিব। এ ক্ষেত্রে দেশটি ইরানের কৌশলগত স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে।
প্রস্তুত ইসরায়েল
ইসরায়েল ও ইরানের চলমান উত্তেজনার মধ্যে বাগযুদ্ধ নতুন মাত্রা পায় বৃহস্পতিবার। ওই দিন ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘(ইরান থেকে) আগত সব ধরনের হামলা মোকাবিলায় আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
এর পরপরই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে একাধিকবার তেহরানকে এমন কিছু না করতে সতর্ক করা হয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যেকোনো হামলার জন্য পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করছে ইসরায়েল। আমরা প্রতি মুহূর্তে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
‘আমরা নিজেদের প্রতিরক্ষার পাশাপাশি পাল্টা আক্রমণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমাদের যেসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, তা দিয়েই শত্রুর মোকাবিলা করা হবে। তা ছাড়া আমাদের কৌশলগত মিত্ররাও এমন পরিস্থিতিতে আমাদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন।’
ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের
মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রল কমান্ডের জেনালের মাইকেল কুরিল্লা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলে পৌঁছান। সেখানে তিনি আইডিএফের চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেবির সঙ্গে নিরাপত্তাজনিত হুমকি ও তা মোকাবিলার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। ওই আলোচনার পরই আইডিএফের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে মিত্রদের কথা তুলে ধরে আইডিএফ।
ওই দিন রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়েভ গালান্ট। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে পেন্টাগনের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের ওপর ইরান ও এর আঞ্চলিক মিত্রদের ক্রমবর্ধমান হুমকিতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সুদৃঢ় সমর্থন দিয়ে যাবে।
‘ইরানি হামলা মোকাবিলায় মিস্টার গালান্ট যুক্তরাষ্ট্রকে গণনায় নিতে পারে। এ বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে’, উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
পরে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ‘আমরা (লয়েড) অস্টিনকে জানিয়েছি যে, ইরান সরাসরি ইসরায়েলে হামলা করলে আমরাও তাদের একইভাবে জবাব দেব।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচনাকালে অস্টিন গালান্টের কাছে অভিযোগ করেন, ১ এপ্রিলের ঘটনার বিষয়ে আগে থেকে পেন্টাগনকে কিছুই জানানো হয়নি।
এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ইরানকে বিরত রাখতে চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান
এদিকে ইসরায়েলে হামলায় নিরুৎসাহিত করার ব্যাপারে ইরানকে বোঝাতে বেইজিংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে ওই ফোনালাপে মধ্যপ্রাচ্যে ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ পালন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছেন চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই।
শুধু এ ফোনালাপ নয়, হামাসকে সহযোগিতা বন্ধের জন্য ইরানকে চাপ দিতে চীনকে প্রকাশ্যে বারবার অনুরোধ জানিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরে কূটনীতিকদের ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা
ক্রমবর্ধমান হামলার হুমকি থাকায় এরই মধ্যে নিজ দেশের কূটনীতিকদের ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কবার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তেল আবিব, জেরুজালেম এবং বির শেভা এলাকার বাইরে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
নাগরিকদের সতর্ক করেছে ফ্রান্সও
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজ দেশের নাগরিকদের ইরান, লেবানন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি অঞ্চল ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে ফ্রান্স।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্তেফান সেজোর্নের এক প্রতিনিধি শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে এএফপি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ইরানভিত্তিক ফরাসি কূটনীতিকদের আত্মীয়রা ফ্রান্সে ফিরে আসবেন। একই সঙ্গে ফ্রান্সের বেসামরিক নাগরিকদের ইরান, লেবানন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি অঞ্চল ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে।
উত্তেজনা কমাতে চাইলেও প্রতিশোধের বিষয়ে বদ্ধপরিকর ইরান
ওয়াশিংটনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে তেহরানের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করা হয়। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান এমন ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা (ইসরায়েলের হামলার) এমনভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে যাতে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।
সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় কোনো অবস্থাতেই তাড়াহুড়া করা হবে না বলে ইরানের সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ইরান ‘খুব স্পষ্ট’ করে বলেছে যে, দামেস্কে দূতাবাসে হামলার জবাব তারা অবশ্যই দেবে। সে ক্ষেত্রে তা যেন ‘নিয়ন্ত্রিত’ হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য আঞ্চলিক মিত্রদের ব্যবহার করা হতে পারে বলেও ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, এরই মধ্যে ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার মতো বিশ্ব মোড়লরাও ইরানকে সংযত হতে অনুরোধ জানিয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ইরান বলেছে, ইসরায়েলের হামলার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ব্যবস্থা নিলে প্রতিশোধের ‘আবশ্যকতা’ হয়তো এড়ানো যেত।
এ বিষয়ে এক্সে দেয়া পোস্টে জাতিসংঘে ইরানের মিশন লিখেছে, ‘নিরাপত্তা পরিষদ যদি (দামেস্কের কূটনৈতিক চত্বরে) আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলকে বিচারের মুখোমুখি করত, তাহলে ইরানের আর এই দুর্বৃত্তকে শাস্তি দেয়ার কথা চিন্তা করা লাগত না।’
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা সংঘাত বন্ধে সৌদি আরবে সোমবার অনুষ্ঠেয় আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন রাশিয়ার একজন আলোচক।
তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এ বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র পৃথকভাবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার উভয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
মস্কো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রস্তাবিত পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো। এর পরিবর্তে রাশিয়া শুধু জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর বিমান হামলা বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে।
সেই প্রস্তাব সত্ত্বেও উভয় পক্ষই আলোচনার আগে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া শহরে রাশিয়ার হামলায় একটি পরিবারের তিনজন নিহত হয়, যা ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা রবিবার ভোরে জানায়, রাশিয়া কিয়েভে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এগুলো ভবনগুলোতে আঘাত করেছে এবং আগুন লেগে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, শত্রুদের বিশাল আক্রমণে শহরের বেশ কয়েকটি জেলায় ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে এবং সাতজন আহত হয়েছেন।
সৌদি আরবে সোমবার ইউক্রেনীয় ও রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমেরিকান আলোচকরা আলাদাভাবে বৈঠক করবেন, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কিথ কেলগ হোটেলকক্ষের মধ্যে ’শাটল কূটনীতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন রাশিয়ার সিনেটর গ্রেগরি কারাসিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত কিছুটা অগ্রগতি আশা করছি।"
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে শুক্রবার বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত করার কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ঘিরে রোনেন বারের ব্যর্থতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইসরায়েল সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইএসএ পরিচালক রোনেন বারকে বরখাস্তে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোনেন বারের উত্তরসূরি নিযুক্ত হওয়ার পর অথবা ১০ এপ্রিলের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করবেন।
এর আগে গত রবিবার নেতানিয়াহু বলেন, তার ওপর আস্থার অভাব রয়েছে। তাকে এ পদে রাখা যাবে না। তাই বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বার ১৯৯৩ সালে শিন বেতে যোগ দিয়েছিলেন।
বারের মেয়াদ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরে পূর্ববর্তী ইসরায়েলি সরকার শিন বেতের প্রধান হিসেবে তাকে নিযুক্ত করেছিল। কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার এক বছর আগেই তাকে পদ থেকে বরখাস্ত করল।
ইসরায়েলে হামাসের হামলা চালানোর আগে থেকেই রোনেন বারের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। গত ৪ মার্চ হামাসের হামলার ওপর শিন বেতের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন প্রকাশের পর সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে।
আরও পড়ুন:মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) নির্দেশে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ম্যানিলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফিলিপাইন সরকার তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হংকং থেকে দেশে আসার পর আইসিসির নির্দেশে পুলিশ দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করেছে। অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে সাবেক এ প্রেসিডেন্টের চালানো অভিযানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে।
আইসিসি দুতার্তের শাসনামলে মাদক নির্মূলের নামে চালানো অভিযানে হত্যাকাণ্ডগুলোকে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে তদন্ত করছে। এর মধ্যে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ও দক্ষিণাঞ্চলের শহর দাভাওয়ের মেয়র থাকার সময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে ২০১৯ সালে ফিলিপাইনকে রোম সংবিধি থেকে প্রত্যাহার করে নেন দুতার্তে।
দুতার্তে প্রশাসন ২০২১ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত স্থগিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। আইসিসির আদালত হলো সর্বশেষ অবলম্বন।
আইসিসির আর বিচার করার এখতিয়ার নেই—এমন যুক্তি দিয়ে সে সময় তার প্রশাসন বলেছিল, ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে একই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
আরও পড়ুন:স্কটল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টার্নবেরি গলফ রিসোর্টে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরাতে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনপন্থি ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন‘ নামের একটি সংগঠন এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করে সংগঠনটি।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে জানানো হয়, ট্রাম্পের গাজা নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য ও পরিকল্পনার কারণে ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি মানুষ ও তাদের সমর্থকরা। এরই জেরে এ হামলা ঘটিয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সংগঠনের সদস্যরা।
টার্নবেরি রিসোর্টটি ভাঙচুর করার পাশাপাশি রিসোর্টের দেয়ালে লাল রং দিয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন গ্রাফিতি অংকন করা হয়েছে। রিসোর্টের সবুজ মাঠে লাল রং দিয়ে লেখা হয়েছে ‘গাজা বিক্রির জন্য নয়’।
সংগঠনটির কর্মীরা জানান, ট্রাম্প গাজাকে নিজের সম্পত্তির মতো মনে করে, যা খুশি তাই করতে পারে না। তারই প্রতিবাদ এটা।
তারা বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে চাই, আমাদের প্রতিরোধ থেকে তার নিজের সম্পত্তিও নিরাপদ নয়।’
ফিলিস্তিনিনের এই হামলাকে ট্রাম্প ‘শিশুসুলভ, অপরাধমূলক’ কার্যক্রম হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তার পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসবে না।
আরও পড়ুন:দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সমীকরণ ঢেলে সাজাতে উঠেপড়ে লেগেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ উদ্যোগ পৌঁছেছে ইরানের দ্বারপ্রান্তেও।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি পাঠিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আলোচনায় না বসলে সামরিক অভিযানের হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানের নেতাদের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির উদ্দেশে বলেছি, আশা করি আপনি আলোচনায় বসবেন। কারণ, এটি ইরানের জন্য ভালো হবে।’
একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানালে বিষয়টিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় তেহরানের কল্যাণে সমঝোতাই যুক্তিসঙ্গত হবে।
যদিও ট্রাম্পের এই দাবি অস্বীকার করেছে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন। তারা জানিয়েছে, এমন কোনো চিঠির বিষয়ে অবগত নয় তারা।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ট্রাম্পের চিটি পাঠানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
তিনি শুক্রবার এএফপিকে বলেন, শক্তি প্রয়োগ করলে তারা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না।
আরও পড়ুন:ইরান ও রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়াবে চীন।
নতুন টার্মিনাল ও জাহাজ চালু হওয়ায় মার্চ থেকে চীন তেল আমদানি বৃদ্ধি করবে বলে খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি সত্ত্বেও চীন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে ‘অয়েল প্রাইস’ নামের ওয়েবসাইট।
অয়েল প্রাইসের তথ্য অনুযায়ী, ইরান ও রাশিয়া থেকে চীনের তেল আমদানি দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওয়েবসাইটটির উদ্ধৃতি দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া শনিবার এ খবর জানায়।
কয়েকজন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে জানান, চীন তেল ট্যাংকারগুলোতে পরিবর্তন এনেছে যাতে সেগুলো আর নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকে। এর ফলে রাশিয়া এবং ইরানের সঙ্গে তেল বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারবে বেইজিং। ফলে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এই দুই দেশ থেকে চীন বেশি পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারবে। এ আমদানি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা চীনা তেল ট্যাংকারগুলো এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের চবাহার কাউন্টিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের সদরদপ্তরে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জয়শুল আজল।
স্থানীয় সময় শনিবার সকালে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আবাসন তৈরি এবং হাউজিং ইউনিট নির্মাণ করে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি এ খবর জানায়।
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের দপ্তরে সাউন্ড বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে।
প্রাদেশিক প্রসিকিউটর মেহদি শামসাবাদি জানান, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
তিনি জানান, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীগুলো এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বিস্ফোরণে ভবনটির একাংশের ক্ষতি হয়েছে।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশে বিগত বছরগুলোতে সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় অনেকবার সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। যেসব গোষ্ঠী এসব হামলা চালিয়েছে, তাদের সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পর্ক রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের তাফতান কাউন্টির গোহার কুহ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হন। ওই হামলারও দায় এ সংগঠন স্বীকার করে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য