ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় জোড়া বোমা হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর কেরমানে বুধবারের এ ঘটনায় আরও অন্তত ১৪১ জন আহত হয়েছেন। এখানে সোলাইমানির সমাধিস্থলের কাছে ওই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল।
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেরমানের জরুরি পরিষেবা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ সাবেরি।
এক বিবৃতিতে সাবেরি বলেন, ‘বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই ৭৩ জন নিহত হন। আর বোমায় গুরুতর আহতদের অধিকাংশই হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান। বর্তমানে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন আরও ১৪১ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।’
হামলার বিবরণ
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা জানায়, প্রথম বোমাটি বিস্ফোরিত হয় সোলাইমানির সমাধিস্থলের ৭০০ মিটার দূরে। একটি পুজো কারের ভেতর স্যুটকেসের মধ্যে রাখা ছিল বোমাটি। রিমোট কন্ট্রোলারের সাহায্যে সেটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ চ্যানেল আইআরআইবি-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ওয়াহিদি বলেন, ‘প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৩টার দিকে। বিস্ফোরণে আহতদের উদ্ধার করতে যখন সভায় উপস্থিতরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন, তখন অর্থাৎ ২০ মিনিট পর দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়। এটির প্রভাব ছিল ধ্বংসাত্মক।’
এখন পর্যন্ত নৃশংস এই বোমা হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনো পক্ষ বা সংগঠন।
বোমা বিস্ফোরণে হতাহত হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে ইরান।
হুঁশিয়ারি
ঘটনার পর ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি-ইজেই বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই নৃশংস ঘটনার হোতা ও বাস্তবায়নকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
সব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের ধরে আইনের হাতে তুলে দিতে ইরানের গোয়েন্দা বিভাগ, নিরাপত্তা বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আইআরজিসি যা বলছে
বোমা হামলার মতো ঘটনা ঘটিয়ে শত্রুরা ইরানের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগ করছে উল্লেখ করে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইআরজিসি কমান্ডার আহমেদ ওয়াহিদি।
তিনি বলেন, ‘শত্রুদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না।’
হামলা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে দাবি করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে তিনি বলেন, ‘পর্যালোচনা ও যাচাই করার পরই তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।’
নিহতের মধ্যে বেশকিছু শিশুও রয়েছে
ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোস্তফা খোশচেশম আল জাজিরাকে বলেন, ভয়াবহ এই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে বেশকিছু শিশুও রয়েছে।
হুতির সংহতি
জেনারেল সোলাইমানির শাহাদাৎ বার্ষিকীতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিন্দা এবং ইরানের প্রতি সংহতি জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি।
বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে দুর্বল করার মতো চেষ্টার সমস্ত অপরাধের সম্প্রসারণকে প্রতিনিধিত্ব করে এ হামলা। এ ঘটনার পর ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ঔদ্ধাত্যের মোকাবিলায় ইরানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছে হুতি।’
বিস্ফোরণের নৃশংসতা ও নিচতায় হতবাক পুতিন
জোড়া বিস্ফোরণের পর ইরানের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লেখা এক চিঠিতে পুতিন বলেছেন, ‘সমাধিস্থলে আসা বেসামরিক মানুষের ওপর এমন বর্বরোচিত হামলা চরম নিষ্ঠুরতার প্রকাশ।’
ঘটনাটিকে ‘মর্মান্তিক’ উল্লেখ করে এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।
তুরস্কের নিন্দা
নিষ্ঠুর এ হামলার ঘটনায় নিন্দাজ্ঞাপন করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘ইরানের কেরমান প্রদেশে চালানো জঘন্য সন্ত্রাসী হামলায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। যারা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আল্লাহ তাদের প্রতি রহম করুন। সেইসঙ্গে যারা আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
‘আমার বন্ধুত্বপরায়ণ ও ভ্রাতৃপ্রতিম ইরানি জনগণের প্রতি আমি সমবেদনা প্রকাশ করছি’, বলেন তিনি।
হিজবুল্লাহ নেতার সমবেদনা
বিস্ফোরণে নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহও।
বিবৃতিতে অপরাধীদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি নাসরুল্লাহ। তবে বলেছেন, ‘নিহতরা সোলেইমানির মতো সংগ্রামের একই পথে প্রাণ দিয়েছেন।’
হামলার নেপথ্যে কে?
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক হাসান আহমেদিয়ান হামলার ঘটনায় সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ইরানে এখন একটি প্রশ্নই সব মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। তা হলো- কে করল এমন কাজ?’
আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রেসিডেন্ট (ইব্রাহিম রাইসি) অবশ্যই এ ঘটনার নেপথ্যে থাকা কলাকুশলীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনবেন। তিনি হয়তো প্রতিশোধের কথাও বলবেন। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেল- কে বা কারা এটি ঘটাল?’
‘আইসিস সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটিয়েছে (ব্যাপক সংখ্যায় হত্যাকাণ্ড), তাতে তাদের দায় থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আবার ইসরায়েলও এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।’
এর ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেছেন, ‘তারা (ইসরায়েল) হয়তো এমন কিছু চায় যা ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে (সংঘাতে) টেনে আনবে।’
‘এগুলোই বাস্তবিক সম্ভাবনা’, বলেন এ অধ্যাপক।
মধ্যপ্রাচ্যে ঘনাচ্ছে আশঙ্কার মেঘ
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্যেই এবার উত্তেজনা ছড়াল ইরানে। গত সোমবার সিরিয়ার দামেস্ক উপকণ্ঠে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন আইআরজিসির আরও এক শীর্ষ নেতা সাইয়েদ রাজি মুসাভি।
মুসাভি আইরাজিসির শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানির ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর জ্যেষ্ঠ এ উপদেষ্টা ইরান ও সিরিয়ার মধ্যে সামরিক জোট সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন।
যদিও ওই ঘটনায় সে সময় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলকে দায়ী করে তাদের ওপর কঠিন প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করে হিজবুল্লাহ।
তার আগে ইরানের বিরুদ্ধে হামাসকে অর্থায়নের অভিযোগ আনে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিনের শাসকগোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ এনে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গত মাসে বলেছিলেন যে, তার দেশ একটি বহুমুখী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
‘ইরানসহ সাতটি দেশ থেকে ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ আসছে। আমরা এরই মধ্যে ছয়টি দেশকে জবাব দিয়েছি। বাকিদের বিষয়েও কাজ করছি’, সে সময় বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রও সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। গত মাসে একটি হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের তিন সেনা আহত হওয়ার পর দেশটির সেনাবাহিনী ইরান-সমর্থিত কাতাইব হিজবুল্লাহ ও ইরাকে তাদের ‘সহযোগী গোষ্ঠীর’ ওপর বিমান হামলা চালায়।
এ সমস্ত ঘটনার পর্যালোচনা করে আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেছেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে আঞ্চলিক উত্তেজনা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে ‘যুদ্ধের কালো মেঘ’ ঘনীভূত হচ্ছে, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
বিশারা বলেন, ‘এই অঞ্চলে এখন যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। এখানে অনেক বেশি হিংস্রতা, উত্তেজনা, আর দ্বন্দ্ব বেড়েছে; অনেকগুলো লড়াই চলমান। লোহিত সাগর, ইরান-ইরাকি সীমান্ত, ইয়েমেন থেকে উপসাগরীয় অঞ্চল সর্বত্র এখন যুদ্ধের চাপা দামামা বাজছে।’
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা সংঘাত বন্ধে সৌদি আরবে সোমবার অনুষ্ঠেয় আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন রাশিয়ার একজন আলোচক।
তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এ বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র পৃথকভাবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার উভয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
মস্কো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রস্তাবিত পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো। এর পরিবর্তে রাশিয়া শুধু জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর বিমান হামলা বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে।
সেই প্রস্তাব সত্ত্বেও উভয় পক্ষই আলোচনার আগে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া শহরে রাশিয়ার হামলায় একটি পরিবারের তিনজন নিহত হয়, যা ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা রবিবার ভোরে জানায়, রাশিয়া কিয়েভে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এগুলো ভবনগুলোতে আঘাত করেছে এবং আগুন লেগে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, শত্রুদের বিশাল আক্রমণে শহরের বেশ কয়েকটি জেলায় ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে এবং সাতজন আহত হয়েছেন।
সৌদি আরবে সোমবার ইউক্রেনীয় ও রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমেরিকান আলোচকরা আলাদাভাবে বৈঠক করবেন, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কিথ কেলগ হোটেলকক্ষের মধ্যে ’শাটল কূটনীতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন রাশিয়ার সিনেটর গ্রেগরি কারাসিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত কিছুটা অগ্রগতি আশা করছি।"
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে শুক্রবার বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত করার কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ঘিরে রোনেন বারের ব্যর্থতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইসরায়েল সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইএসএ পরিচালক রোনেন বারকে বরখাস্তে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোনেন বারের উত্তরসূরি নিযুক্ত হওয়ার পর অথবা ১০ এপ্রিলের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করবেন।
এর আগে গত রবিবার নেতানিয়াহু বলেন, তার ওপর আস্থার অভাব রয়েছে। তাকে এ পদে রাখা যাবে না। তাই বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বার ১৯৯৩ সালে শিন বেতে যোগ দিয়েছিলেন।
বারের মেয়াদ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরে পূর্ববর্তী ইসরায়েলি সরকার শিন বেতের প্রধান হিসেবে তাকে নিযুক্ত করেছিল। কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার এক বছর আগেই তাকে পদ থেকে বরখাস্ত করল।
ইসরায়েলে হামাসের হামলা চালানোর আগে থেকেই রোনেন বারের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। গত ৪ মার্চ হামাসের হামলার ওপর শিন বেতের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন প্রকাশের পর সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে।
আরও পড়ুন:মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) নির্দেশে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ম্যানিলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফিলিপাইন সরকার তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হংকং থেকে দেশে আসার পর আইসিসির নির্দেশে পুলিশ দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করেছে। অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে সাবেক এ প্রেসিডেন্টের চালানো অভিযানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে।
আইসিসি দুতার্তের শাসনামলে মাদক নির্মূলের নামে চালানো অভিযানে হত্যাকাণ্ডগুলোকে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে তদন্ত করছে। এর মধ্যে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ও দক্ষিণাঞ্চলের শহর দাভাওয়ের মেয়র থাকার সময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে ২০১৯ সালে ফিলিপাইনকে রোম সংবিধি থেকে প্রত্যাহার করে নেন দুতার্তে।
দুতার্তে প্রশাসন ২০২১ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত স্থগিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। আইসিসির আদালত হলো সর্বশেষ অবলম্বন।
আইসিসির আর বিচার করার এখতিয়ার নেই—এমন যুক্তি দিয়ে সে সময় তার প্রশাসন বলেছিল, ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে একই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
আরও পড়ুন:স্কটল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টার্নবেরি গলফ রিসোর্টে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরাতে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনপন্থি ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন‘ নামের একটি সংগঠন এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করে সংগঠনটি।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে জানানো হয়, ট্রাম্পের গাজা নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য ও পরিকল্পনার কারণে ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি মানুষ ও তাদের সমর্থকরা। এরই জেরে এ হামলা ঘটিয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সংগঠনের সদস্যরা।
টার্নবেরি রিসোর্টটি ভাঙচুর করার পাশাপাশি রিসোর্টের দেয়ালে লাল রং দিয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন গ্রাফিতি অংকন করা হয়েছে। রিসোর্টের সবুজ মাঠে লাল রং দিয়ে লেখা হয়েছে ‘গাজা বিক্রির জন্য নয়’।
সংগঠনটির কর্মীরা জানান, ট্রাম্প গাজাকে নিজের সম্পত্তির মতো মনে করে, যা খুশি তাই করতে পারে না। তারই প্রতিবাদ এটা।
তারা বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে চাই, আমাদের প্রতিরোধ থেকে তার নিজের সম্পত্তিও নিরাপদ নয়।’
ফিলিস্তিনিনের এই হামলাকে ট্রাম্প ‘শিশুসুলভ, অপরাধমূলক’ কার্যক্রম হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তার পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসবে না।
আরও পড়ুন:দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সমীকরণ ঢেলে সাজাতে উঠেপড়ে লেগেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ উদ্যোগ পৌঁছেছে ইরানের দ্বারপ্রান্তেও।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি পাঠিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আলোচনায় না বসলে সামরিক অভিযানের হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানের নেতাদের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির উদ্দেশে বলেছি, আশা করি আপনি আলোচনায় বসবেন। কারণ, এটি ইরানের জন্য ভালো হবে।’
একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানালে বিষয়টিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় তেহরানের কল্যাণে সমঝোতাই যুক্তিসঙ্গত হবে।
যদিও ট্রাম্পের এই দাবি অস্বীকার করেছে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন। তারা জানিয়েছে, এমন কোনো চিঠির বিষয়ে অবগত নয় তারা।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ট্রাম্পের চিটি পাঠানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
তিনি শুক্রবার এএফপিকে বলেন, শক্তি প্রয়োগ করলে তারা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না।
আরও পড়ুন:ইরান ও রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়াবে চীন।
নতুন টার্মিনাল ও জাহাজ চালু হওয়ায় মার্চ থেকে চীন তেল আমদানি বৃদ্ধি করবে বলে খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি সত্ত্বেও চীন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে ‘অয়েল প্রাইস’ নামের ওয়েবসাইট।
অয়েল প্রাইসের তথ্য অনুযায়ী, ইরান ও রাশিয়া থেকে চীনের তেল আমদানি দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওয়েবসাইটটির উদ্ধৃতি দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া শনিবার এ খবর জানায়।
কয়েকজন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে জানান, চীন তেল ট্যাংকারগুলোতে পরিবর্তন এনেছে যাতে সেগুলো আর নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকে। এর ফলে রাশিয়া এবং ইরানের সঙ্গে তেল বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারবে বেইজিং। ফলে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এই দুই দেশ থেকে চীন বেশি পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারবে। এ আমদানি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা চীনা তেল ট্যাংকারগুলো এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের চবাহার কাউন্টিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের সদরদপ্তরে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জয়শুল আজল।
স্থানীয় সময় শনিবার সকালে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আবাসন তৈরি এবং হাউজিং ইউনিট নির্মাণ করে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি এ খবর জানায়।
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের দপ্তরে সাউন্ড বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে।
প্রাদেশিক প্রসিকিউটর মেহদি শামসাবাদি জানান, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
তিনি জানান, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীগুলো এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বিস্ফোরণে ভবনটির একাংশের ক্ষতি হয়েছে।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশে বিগত বছরগুলোতে সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় অনেকবার সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। যেসব গোষ্ঠী এসব হামলা চালিয়েছে, তাদের সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পর্ক রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের তাফতান কাউন্টির গোহার কুহ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হন। ওই হামলারও দায় এ সংগঠন স্বীকার করে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য