১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গাজায় হামাসের সশস্ত্র মিত্র গোষ্ঠী কাসাম ব্রিগেড ইসরায়েলের বড় মাথাব্যথার কারণ হিসেবে পরিণত হয়েছে। গত ৭ অক্টোবরও হামাসের পক্ষে ইসরায়েলে হামলা চালায় কাসাম ব্রিগেডর যোদ্ধারা। ওই হামলায় প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলের অন্তত ১৪০০ নাগরিক প্রাণ হারান। একই সঙ্গে দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে বন্দিও করে তারা।
এরপর গাজায় পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের অনবরত বোমা হামলায় ৭ হাজারের অধিক বেসামরিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে একটি বড় অংশই হচ্ছে নারী ও শিশু। ইসরায়েলের এই হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ।
২০০৫ সালে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর সেখানে এখন পর্যন্ত ছয়টি বড় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ২০১২ সালের বিমান হামলায় কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান আহমদ জাবারিকে হত্যা করে ইসরায়েল। সে সময় থেকেই ইসরায়েলের প্রতি সংগঠনটির ক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে চলেছে।
হামাসের সৃষ্টি যেভাবে
১৯৮৭ সালে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা হিসেবে শেখ আহমেদ ইয়াসিন ও তার সহযোগী আবদুল আজিজ আল-রানতিসি হামাস প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ২০১৭ সালে মুসলিম ব্রাদারহুড থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে হামাস।
হামাস-এর পূর্ণরূপ হলো হারাকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া বা ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন। হামাস শব্দের অর্থ উদ্যম।
প্রথম ইন্তিফাদার সময় ইসরায়েলি দখলদারত্বের বিরুদ্ধে যখন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে রাস্তায় নামে, সে সময় আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি। তবে ফিলিস্তিনিদের সেই বিক্ষোভের সশস্ত্র প্রতিবাদ জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। ওই ঘটনার সময় ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়ে, কেউ কেউ ছোট অস্ত্রও ব্যবহার করে।
১৯৬৭ সালে ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের পর এর বিরোধিতা ও ফিলিস্তিনকে দখলমুক্ত করতে সশস্ত্র প্রতিরোধের পক্ষে কাজ শুরু করে হামাস।
২০০৬ সালে সংগঠনটি গাজার সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে জিতলেও ক্ষমতাসীন ফাতাহ পার্টি কোনো সশস্ত্র সংগঠনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি ছিল না। ফলে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহর কাছ থেকে এক প্রকার ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় হামাস।
ওই ঘটনার পর ফিলিস্তিনের হামাস-শাসিত অঞ্চলে ভূমি, জল ও আকাশপথে অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল, যা এখনও কার্যকর। এর মাধ্যমে আসলে ফিলিস্তিনে কে বা কী যাবে বা আসবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। ওই অবরোধের কারণে জল-স্থল-আকাশ সবদিক থেকেই একটি উন্মুক্ত কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছে ফিলিস্তিন।
বর্তমানে হামাসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসিনের ঘনিষ্ঠ ইসমাইল হানিয়া।
কাসাম ব্রিগেড
১৯৮০ ও নব্বইয়ের দশকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাস যোদ্ধারা যেসব সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেগুলোকে কেন্দ্রীভূত ও একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার জন্য ১৯৯২ সালে সামরিক বিভাগ চালু করে সংগঠনটি। এই সংগঠনের নামই কাসাম ব্রিগেড।
ব্রিটিশ শাসনামলে ফিলিস্তিনের ইজেদ্দিন আল-কাসাম নামের এক মুসলিম ধর্ম প্রচারকের নামানুসারে সংগঠনটির নামকরণ করা হয়। ১৯৩০ সালে আল-কাসাম ‘ব্ল্যাক হ্যান্ড’ নামে ব্রিটিশ এবং ইহুদি আধিপত্যবাদ বিরোধী একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।
দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় থেকে কাসাম ব্রিগেড ইসরাইলের আক্রমণের প্রধান লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে। শক্তি-সামর্থ্যে পশ্চিমা বিশ্বের বহু রাষ্ট্রকে বিস্মিত করেছে এ সংগঠনটি। ইতোমধ্যে সংগঠনটিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও মিসর নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ব্রিগেড নেতা মোহাম্মদ দেইফকে ‘গ্লোবাল টেররিস্ট’ আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
কাসাম ব্রিগেড হামাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদিও তারা হামাসের অঙ্গ সংগঠন, তবুও তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে।
হামাসের বক্তব্য অনুসারে, ‘কাসাম ব্রিগেড একটি আলাদা সশস্ত্র সংগঠন এবং এর নিজস্ব নেতা রয়েছে। সংগঠনটি হামাসের আদেশ গ্রহণ করে না এবং নিজেদের তথ্য ও অগ্রগতির কথাও হামাস নেতাদের জানায় না।’
সংগঠনে যোদ্ধাদের পরিচিতি ও তাদের অবস্থান মৃত্যু পর্যন্ত গোপন থাকে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় তারা কালো মুখোশ পরে যার ওপর সবুজ বেল্ট থাকে।
কাসাম ব্রিগেড স্বাধীন শাখা হিসেবে কাজ করে, যে কারণে অনেক জ্যেষ্ঠ নেতারাও অন্য শাখার খবর জানেন না। এই শাখাটির নেতার মৃত্যুর হলে সংগঠনের সদস্যরা নিজেরাই নেতা নির্বাচন করে।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারত্ব নিরসনে মাহমুদ আব্বাস সরকার ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে ফাতাহ পার্টি। আর কাসাম ব্রিগেডের সহযোগিতায় বারবার ইসরায়েলি অত্যাচার রুখে দেয়ার কারণে ক্রমেই উপত্যকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে হামাস।
কাসাম ব্রিগেডের সামর্থ্য ও কর্মকাণ্ড
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর তথ্য অনুযায়ী, ওই ব্রিগেডে অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার যোদ্ধা রয়েছে।
২০০৫ সালে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের পর নিজেদের সামরিক শাখাগুলোতে আরও শক্তি বাড়াতে মনোযোগী হয়েছে হামাস। এ ব্যাপারে ইরানের কাছ থেকে হামাস আর্থিক সহায়তা পায় বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
সিআইএর তথ্য অনুসারে, স্থানীয়ভাবে কিছু অস্ত্র তৈরি করে থাকে কাসাম ব্রিগেড। এ ছাড়া চোরাচালানের মাধ্যমেও অস্ত্রের সরবরাহ হয় সংগঠনটিতে।
সম্প্রতি তারা নিজেদের অস্ত্রবহরে রকেট যুক্ত করেছে। এ ছাড়া হামলা ও তথ্য সংগ্রহের কাজে বর্তমানে ড্রোনও ব্যবহার করছে সংগঠনটি।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের ২০২১ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু ২০২১ সালেই হামাস, কাসাম ব্রিগেডসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনগুলো ইসরায়েলে ৪ হাজার চর শর বেশি রকেট হামলা চালিয়েছে।
কাসাম ব্রিগেডের ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), রকেট লঞ্চার, অ্যান্টিট্যাঙ্ক মিসাইল ও মর্টারের মতো সামরিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও সংগঠনটি গুপ্তচারণ করতে পছন্দ করে। চলাচলে তাদের প্রথম পছন্দ টানেল পথ, যাতে শত্রু সহজে তাদের শনাক্ত করতে না পারে।
৭ অক্টোবর যে কারণে হামাসের হামলা
আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইসরায়েলের আইন লঙ্ঘন ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ক্রমবর্ধমান বসতি উচ্ছেদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় বলে জানায় হামাস।
শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের জেলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য দরকষাকষি করতে কিছু ইসরায়েলিকে অপহরণ করেছে বলে বিবৃতিতে জানায় তারা।
গাজার অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অবস্থান কী
গাজায় চলমান সংকটে হামাসের প্রতিরোধ আরও শক্তিশালী করতে গাজার অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোও একযোগে কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
ফিলিস্তিনি ইসলামী জিহাদের ‘সারায়া আল-কুদস ব্রিগেড’ উপত্যকার প্রধান সংগঠনগুলোর একটি। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত সংগঠনটি ২৩ বার ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে।
এ ছাড়া আবু আলী মুস্তাফা ব্রিগেডের মাধ্যমে গাজায় সক্রিয় সামরিক উপস্থিতি রয়েছে ‘পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব ফিলিস্তিন’ নামের আরেকটি সংগঠনের। অফিশিয়াল টেলিগ্রাম বার্তার মাধ্যমে তারাও হামাসের আহ্বানে যোগ দিচ্ছে বলে খবরে জানা গেছে।
টানা হামলার শিকার গাজায় খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় সম্প্রতি মিসরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে কয়েকটি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকেছে উপত্যকায়, তবে জ্বালানি প্রবেশে ইসরায়েল অনুমতি না দেয়ায় ভয়াবহ বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে গাজা।
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গাজার সীমান্তের বড় অংশই ইসরায়েলের সঙ্গে, বাকিটা মিসরের সঙ্গে। এর দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ১০ কিলোমিটার। প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করছে গাজায়।
আরও পড়ুন:লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করা আরও ১২৩ অনিবন্ধিত বাংলাদেশি নাগরিককে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বাংলাদেশির সবাই বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে (ইউজেড ০২২২) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
উল্লেখ্য, প্রত্যাগতদের অধিকাংশই মানবপাচারের শিকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সমন্বিত উদ্যোগে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর প্রতিনিধিরা তাদের স্বাগত জানান ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশে অনিবন্ধিতভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। লিবিয়ায় অবস্থানকালে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।
সরকারি কর্মকর্তারা এসব অভিবাসীকে পরামর্শ দেন, যেন তারা অন্যদের এই ধরনের বিপজ্জনক ও অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেন এবং ভবিষ্যতে এমন যাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।
পুনর্বাসন সহায়তার অংশ হিসেবে আইওএম প্রত্যেককে নগদ ৬ হাজার টাকা, জরুরি খাদ্য সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক থাকা অন্যান্য বাংলাদেশির নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কাজ চলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা সংঘাত বন্ধে সৌদি আরবে সোমবার অনুষ্ঠেয় আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন রাশিয়ার একজন আলোচক।
তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এ বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র পৃথকভাবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার উভয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
মস্কো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রস্তাবিত পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো। এর পরিবর্তে রাশিয়া শুধু জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর বিমান হামলা বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে।
সেই প্রস্তাব সত্ত্বেও উভয় পক্ষই আলোচনার আগে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া শহরে রাশিয়ার হামলায় একটি পরিবারের তিনজন নিহত হয়, যা ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা রবিবার ভোরে জানায়, রাশিয়া কিয়েভে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এগুলো ভবনগুলোতে আঘাত করেছে এবং আগুন লেগে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, শত্রুদের বিশাল আক্রমণে শহরের বেশ কয়েকটি জেলায় ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে এবং সাতজন আহত হয়েছেন।
সৌদি আরবে সোমবার ইউক্রেনীয় ও রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমেরিকান আলোচকরা আলাদাভাবে বৈঠক করবেন, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কিথ কেলগ হোটেলকক্ষের মধ্যে ’শাটল কূটনীতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন রাশিয়ার সিনেটর গ্রেগরি কারাসিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত কিছুটা অগ্রগতি আশা করছি।"
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে শুক্রবার বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত করার কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ঘিরে রোনেন বারের ব্যর্থতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইসরায়েল সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইএসএ পরিচালক রোনেন বারকে বরখাস্তে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোনেন বারের উত্তরসূরি নিযুক্ত হওয়ার পর অথবা ১০ এপ্রিলের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করবেন।
এর আগে গত রবিবার নেতানিয়াহু বলেন, তার ওপর আস্থার অভাব রয়েছে। তাকে এ পদে রাখা যাবে না। তাই বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বার ১৯৯৩ সালে শিন বেতে যোগ দিয়েছিলেন।
বারের মেয়াদ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরে পূর্ববর্তী ইসরায়েলি সরকার শিন বেতের প্রধান হিসেবে তাকে নিযুক্ত করেছিল। কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার এক বছর আগেই তাকে পদ থেকে বরখাস্ত করল।
ইসরায়েলে হামাসের হামলা চালানোর আগে থেকেই রোনেন বারের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। গত ৪ মার্চ হামাসের হামলার ওপর শিন বেতের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন প্রকাশের পর সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে।
আরও পড়ুন:মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) নির্দেশে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ম্যানিলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফিলিপাইন সরকার তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হংকং থেকে দেশে আসার পর আইসিসির নির্দেশে পুলিশ দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করেছে। অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে সাবেক এ প্রেসিডেন্টের চালানো অভিযানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে।
আইসিসি দুতার্তের শাসনামলে মাদক নির্মূলের নামে চালানো অভিযানে হত্যাকাণ্ডগুলোকে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে তদন্ত করছে। এর মধ্যে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ও দক্ষিণাঞ্চলের শহর দাভাওয়ের মেয়র থাকার সময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে ২০১৯ সালে ফিলিপাইনকে রোম সংবিধি থেকে প্রত্যাহার করে নেন দুতার্তে।
দুতার্তে প্রশাসন ২০২১ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত স্থগিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। আইসিসির আদালত হলো সর্বশেষ অবলম্বন।
আইসিসির আর বিচার করার এখতিয়ার নেই—এমন যুক্তি দিয়ে সে সময় তার প্রশাসন বলেছিল, ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে একই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
আরও পড়ুন:স্কটল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টার্নবেরি গলফ রিসোর্টে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরাতে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনপন্থি ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন‘ নামের একটি সংগঠন এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করে সংগঠনটি।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে জানানো হয়, ট্রাম্পের গাজা নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য ও পরিকল্পনার কারণে ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি মানুষ ও তাদের সমর্থকরা। এরই জেরে এ হামলা ঘটিয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সংগঠনের সদস্যরা।
টার্নবেরি রিসোর্টটি ভাঙচুর করার পাশাপাশি রিসোর্টের দেয়ালে লাল রং দিয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন গ্রাফিতি অংকন করা হয়েছে। রিসোর্টের সবুজ মাঠে লাল রং দিয়ে লেখা হয়েছে ‘গাজা বিক্রির জন্য নয়’।
সংগঠনটির কর্মীরা জানান, ট্রাম্প গাজাকে নিজের সম্পত্তির মতো মনে করে, যা খুশি তাই করতে পারে না। তারই প্রতিবাদ এটা।
তারা বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে চাই, আমাদের প্রতিরোধ থেকে তার নিজের সম্পত্তিও নিরাপদ নয়।’
ফিলিস্তিনিনের এই হামলাকে ট্রাম্প ‘শিশুসুলভ, অপরাধমূলক’ কার্যক্রম হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তার পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসবে না।
আরও পড়ুন:দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সমীকরণ ঢেলে সাজাতে উঠেপড়ে লেগেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ উদ্যোগ পৌঁছেছে ইরানের দ্বারপ্রান্তেও।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি পাঠিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আলোচনায় না বসলে সামরিক অভিযানের হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানের নেতাদের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির উদ্দেশে বলেছি, আশা করি আপনি আলোচনায় বসবেন। কারণ, এটি ইরানের জন্য ভালো হবে।’
একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানালে বিষয়টিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় তেহরানের কল্যাণে সমঝোতাই যুক্তিসঙ্গত হবে।
যদিও ট্রাম্পের এই দাবি অস্বীকার করেছে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন। তারা জানিয়েছে, এমন কোনো চিঠির বিষয়ে অবগত নয় তারা।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ট্রাম্পের চিটি পাঠানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
তিনি শুক্রবার এএফপিকে বলেন, শক্তি প্রয়োগ করলে তারা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না।
আরও পড়ুন:ইরান ও রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়াবে চীন।
নতুন টার্মিনাল ও জাহাজ চালু হওয়ায় মার্চ থেকে চীন তেল আমদানি বৃদ্ধি করবে বলে খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি সত্ত্বেও চীন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে ‘অয়েল প্রাইস’ নামের ওয়েবসাইট।
অয়েল প্রাইসের তথ্য অনুযায়ী, ইরান ও রাশিয়া থেকে চীনের তেল আমদানি দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওয়েবসাইটটির উদ্ধৃতি দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া শনিবার এ খবর জানায়।
কয়েকজন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে জানান, চীন তেল ট্যাংকারগুলোতে পরিবর্তন এনেছে যাতে সেগুলো আর নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকে। এর ফলে রাশিয়া এবং ইরানের সঙ্গে তেল বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারবে বেইজিং। ফলে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এই দুই দেশ থেকে চীন বেশি পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারবে। এ আমদানি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা চীনা তেল ট্যাংকারগুলো এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য