সম্পর্ক মেরামতের ক্ষেত্রে সৌদি আরব ও ইরানের উন্নতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইসলামী প্রজাতন্ত্রটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদোল্লাহিয়ান।
সৌদি সফরে গিয়ে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এমন দাবি করেন ইরানের সর্বোচ্চ কূটনীতিক।
অতীত বিরোধ ভুলে সৌদির সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চাওয়া ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল রিয়াদে বৈঠক করেন সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সঙ্গে।
বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হোসেইন আমির-আবদোল্লাহিয়ান বলেন, ‘তেহরান ও সৌদির মধ্যকার সম্পর্ক সঠিক পথে আছি এবং আমরা উন্নতি দেখতে পাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, আলোচনা সফল হয়েছে।
সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় চলতি বছরের মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় চুক্তিতে সই করে ইরান ও সৌদি আরব। এরপর জুনে ইরানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সৌদির সর্বোচ্চ কূটনীতিক। এরই ধারাবাহিকতায় সৌদি সফরে যান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
চুক্তি অনুযায়ী তেহরান ও রিয়াদ কূটনৈতিক বিরোধ ভুলে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত হয়। গত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের দ্বন্দ্বে উপসাগরীয় অঞ্চল, ইয়েমেন, সিরিয়া ও লেবাননে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সৌদি আরব ২০১৬ সালে আলোচিত শিয়া ধর্মীয় নেতা নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলে তেহরানের সঙ্গে রিয়াদের বিরোধ চূড়ান্ত রূপ নেয়। এ ঘটনার জেরে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালালে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আরব রাষ্ট্রটি।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের গাজার নিয়ন্ত্রক দল হামাসের মধ্যে রোববার গ্রিনিচ মান সময় সাড়ে ৬টা থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা একটি চুক্তি অনুমোদন করায় গাজায় যুদ্ধবিরতির পথ প্রশস্ত হয়।
এ পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি সহজতর করা। একই সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে দুই পক্ষের মধ্যে চলা মারাত্মক ও সবচেয়ে বিধ্বংসী যুদ্ধ বন্ধ করা।
সীমিত আকারের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর পূর্ণ মন্ত্রিসভার বৈঠক করে সরকার যুদ্ধবিরতির সময় নিশ্চিত করে।
সাধারণত জরুরি অবস্থা দেখা না দিলে সীমিত নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় ইসরায়েলি সরকারের কার্যক্রম স্থগিত রাখ হয়।
মধ্যস্থতাকারী কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এ যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয় এবং গত বুধবার প্রাথমিকভাবে তা ঘোষণা করা হয়।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শেষ মুহূর্তের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে হামাসের জটিলতাকে দায়ী করে এটি চূড়ান্ত করতে আরও দেরি হরেন।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা শুক্রবার চুক্তিটি অনুমোদনের সুপারিশ করে এটি এগিয়ে নেয়।
চুক্তির প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে গাজায় আটক তিন ইসরায়েলি নারী ও ৯৫ ফিলিস্তিনি বন্দিকে রোববার মুক্তি দেওয়া হবে।
চ্যানেল১২-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৈঠকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর ইসরায়েলে বন্ধ থাকা অস্ত্র সরবরাহ শুরু হবে।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা যদি চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে না পারি, তবে যুদ্ধের জন্য আমাদের কাছে অতিরিক্ত সরঞ্জাম থাকবে না।’
এদিকে চুক্তি লঙ্ঘন না করতে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছেন ট্রাম্প।
দুই কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোট্রিচ এ চুক্তির বিরোধিতা করেছেন এবং চুক্তির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর গাজায় পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি দাবি করেন।
চুক্তি অনুযায়ী এ সময়ে হামাস প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে।
চুক্তির পূর্ণ শর্তাবলীর প্রতি তাদের অঙ্গীকার নিশ্চিত করার এক দিন পর শুক্রবার হামাস এ কথা জানায়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর একটি অভূতপূর্ব আন্তসীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় হামাসকে ধ্বংস করতে অভিযান শুরু করে। ইসরায়েলে হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। আর ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয়েছিল।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৬ হাজার ৮৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে ২৩ লাখ জনসংখ্যার বেশির ভাগই বাস্তুচ্যুত হন।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, মানুষ বিভিন্ন চাহিদার সহায়তা পেতে সংগ্রাম করছে। বিশেষ করে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও নিরাপদ আশ্রয়ের তীব্র ঘাটতি রয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর জিম্মি হওয়াদের মধ্যে ৯৪ জন এখনও হামাসের হাতে বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৪ জন বেঁচে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যুদ্ধের আগে অপহৃত চার ইসরায়েলি রয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
তার ভাষ্য, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের একটি ‘সামগ্রিক সমাধান’ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া চুক্তি সম্পর্কে পুতিন বলেন, ‘আমরা আশা করি এটি মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি এবং (মধ্যপ্রাচ্য) অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে।’
তিনি ক্রেমলিনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে আলোচনার সময় উল্লেখ করেন, ‘একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের একটি সামগ্রিক সমাধানের প্রচেষ্টা দুর্বল না করা গুরুত্বপূর্ণ।’
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এবং তার আসন্ন প্রশাসন চাপ সৃষ্টি না করলে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি কখনোই হতো না।
ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি রোববার থেকে কার্যকর হবে। এতে ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়ের সঙ্গে ইসরায়েলি জিম্মি বিনিময় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পরে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির শর্তাবলী চূড়ান্ত করা হবে।
দ্বিতীয় মেয়াদে অভিষেকের চার দিন আগে ট্রাম্প ড্যান বোঙ্গিনো শোতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফসহ তার দলের চাপ ছাড়া আলোচনা কখনোই চূড়ান্ত হতো না।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যদি এই চুক্তির সঙ্গে জড়িত না থাকতাম, তাহলে চুক্তি কখনোই হতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চুক্তির গতিপথ পরিবর্তন করেছি এবং তা দ্রুতই করেছি। সত্যি বলতে আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে এটা একটা ভালো কাজ।’
চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা শুক্রবার বৈঠকে বসবে। সোমবার ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেকের আগে রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে।
ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি চুক্তির কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিন্দা করেছেন এবং তাকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলেছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি কিছুই করেননি। আমি যদি এটা না করতাম বা আমরা যদি না জড়াতাম, তাহলে জিম্মিরা কখনোই বেরিয়ে আসতে পারত না।’
বাইডেন গত বছরের মে মাসে শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন, যা চলতি সপ্তাহে আলোর মুখ দেখবে।
আরও পড়ুন:বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরে গাজার বিধ্বস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনে কমপক্ষে ১০ বিলিয়ন (এক হাজার কোটি) ডলার বা আরও বেশি অর্থের প্রয়োজন হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাথমিক এ হিসাব বৃহস্পতিবার তুলে ধরা হয় বলে জানায় বার্তা সংস্থা এএফপি।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন সাংবাদিকদের বলেন, ‘গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে অনেক বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজার শুধু স্বাস্থ্য খাত পুনর্গঠনের জন্য আমার দলের প্রাথমিক অনুমান হলো প্রথম দেড় বছরের জন্য তিন বিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং তারপর পাঁচ থেকে সাত বছরের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।’
পিপারকর্ন বলেন, ‘আমরা সবাই ভালো করে জানি যে, গাজার ধ্বংসযজ্ঞ অকল্পনীয়। আমি আমার জীবনে বিশ্বের অন্য কোথাও এমন পরিস্থিতি দেখিনি।’
এদিকে ডব্লিওএইচওর প্রধান টেডরোস আধানম গেব্রিয়েসুস এরই মধ্যে বলেন, ‘গাজার ৯০ শতাংশ হাসপাতাল ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে।’
মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে বুধবার ঘোষণা করা হয় যে, ইসরাইল এবং হামাস অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। একে ‘সেরা খবর’ বলে উল্লেখ করেছেন ডব্লিউএইচওর প্রধান।
গেব্রিয়েসুস আশা প্রকাশ করেছেন, এ চুক্তি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটাবে।
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই এ খবরকে অত্যন্ত স্বস্তির সাথে স্বাগত জানাই। কিন্তু দুঃখও আছে যে, চুক্তিটি এত দেরিতে হতে যাচ্ছে যখন সংঘর্ষে হাজার হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছেন।'
মধ্যস্থতাকারীরা যদিও বলেছেন, চুক্তিটি ১৯ জানুয়ারি রোববার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলার পর গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। টানা ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে ইসরায়েলের হামলা। এরই মধ্যে হামলায় গাজায় ৪৬ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী গাজায় নিহত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার।
আরও পড়ুন:প্রায় ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা গাজা যুদ্ধে ইসরায়েল সামরিক লক্ষ্য অর্জনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খলিল আল-হাইয়া।
স্থানীয় সময় বুধবার ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পর্কে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন হামাস প্রতিনিধি দলে নেতৃত্বদানকারী খলিল।
খলিল আল-হাইয়া বলেন, যুদ্ধের সময় গাজায় দুর্ভোগের জন্য ইসরায়েলকে কখনও ‘ক্ষমা করবে না’ হামাস।
গাজা থেকে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফা এ খবর জানায়।
তিনি বলেন, ‘গাজার সব ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে প্রতিটি রক্তের ফোঁটা এবং প্রতিটি অশ্রু, বেদনা ও নিপীড়নের জন্য বলছি, আমরা ভুলব না এবং ক্ষমা করব না।’
ইসরায়েলি বাহিনী গাজা ভূখণ্ডে তাদের সামরিক লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মনে করেন হামাসের জ্যেষ্ঠ এ নেতা।
যুদ্ধবিরতিতে হামাসের সব শর্ত পূরণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জত আল-রিশেক।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের শুরুতে হামাস যে সমস্ত শর্ত দিয়েছিল, তা পূরণ করেই চুক্তি হয়েছে। শর্তগুলো ছিল ইসরায়েলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, বাস্তুচ্যুতদের বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া এবং গাজায় যুদ্ধের স্থায়ী অবসান।’
যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তের ব্যাপারটিকে ফিলিস্তিনি জনগণের ধৈর্যের ফল হিসেবে উল্লেখ করেছে হামাস।
সংগঠনটির ভাষ্য, ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি আমাদের মহান ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচল ধৈর্য এবং গাজা উপত্যকায় ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে আমাদের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের ফল। এটা আমাদের জনগণের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের পথকে প্রশস্ত করেছে।’
যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে মধ্যস্থতা করছে তিনটি দেশ কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল-থানি দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেন।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির যে চুক্তি হয়েছে, তা ১৯ জানুয়ারি, রোববার থেকে কার্যকর হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস, যাদের মধ্যে সব নারী, শিশু ও ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষরা রয়েছেন।
গাজার জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েল-গাজা সীমান্তের ৭০০ মিটারের বেশি দূরের এলাকায় ইসরায়েল তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে।
ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের গাজার উত্তরে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দেবে এবং প্রতিদিন ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেবে।
শর্ত পূরণ হলে চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে অবশিষ্ট সব জীবিত জিম্মিদের মুক্তি ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয় রয়েছে।
তৃতীয় ধাপে অবশিষ্ট মৃতদেহগুলোর ফেরত দেওয়া এবং গাজা পুনর্গঠনের কাজ শুরুর কথা রয়েছে। এ কাজ মিসর, কাতার ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।
আরও পড়ুন:মধ্য ইসরায়েলে মঙ্গলবার ভোরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা।
ওই সময় সতর্কতামূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সাইরেন বেজে উঠলে ইসরায়েলিরা বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন।
হামাসের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে যুদ্ধবিরতি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছানো সত্ত্বেও গাজা উপত্যকায় যখন ইসরায়েলি বাহিনী রাতভর ও মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালায়, ঠিক তখনই হুতিরা এ হামলা চালায়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে একাধিক বাধা দেওয়ার চেষ্টার কথা জানিয়ে বলেছে, ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘সম্ভবত প্রতিহত করা হয়েছিল’।
ক্ষেপণাস্ত্র বা এর ধ্বংসাবশেষ থেকে কেউ আহত হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা বিভাগ ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় কিছু লোক আহত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসরায়েলি আকাশসীমায় ঢোকার আগেই একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয় বলেও জানানো হয়।
ইয়েমেনের রাজধানী সানা নিয়ন্ত্রণকারী ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা গাজায় হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান সংঘর্ষের মধ্যে ইসরায়েল ও প্রায় ১০০টি বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। বিদ্রোহীরা এখনও সর্বশেষ হামলার দায় স্বীকার করেনি, যা তারা কখনও কখনও কয়েক ঘণ্টা বা দিন পরে করে।
মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় দুই নারী, তাদের চার সন্তান (এক মাস থেকে ৯ বছর বয়সী) এবং এক অনাগত শিশুসহ ছয়জন বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি নিহত হন।
দেইর আল-বালাহর আল আকসা মার্টিয়ারস হাসপাতাল লাশগুলো গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত ও ৮৯ জন আহত হয়েছেন।
এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৫৫০ জনে।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা ‘আনাদোলু’ রোববার এ খবর জানায়।
অবরুদ্ধ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় আরও ২৮ জন নিহত হয়। এর ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ হাজার ৫৫০ জনে দাঁড়িয়েছে।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত আগ্রাসনে ৮৯ জন আহত হয়, তবে অনেকে এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। কারণ, উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।
উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল প্রাণঘাতী হামলা অব্যাহত রেখেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য