নাইজারে গত সপ্তাহে হওয়া অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করেছেন পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষাপ্রধানরা।
এ পরিকল্পনায় কীভাবে ও কখন সেনা মোতায়েন করা হবে, তাও রয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইকনোমিক কমিউনিটি অফ ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইসিওডব্লিউএএস) বা ইকোওয়াসের রাজনীতি, শান্তি ও নিরাপত্তাবিষয়ক কমিশনার ফাতু মুসা শুক্রবার বলেন, সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন জোটের রাষ্ট্রপ্রধানরা।
নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজাতে তিন দিনের বৈঠক শেষে মুসাহ বলেন, সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় সব বিষয় (রসদ, কখন ও কীভাবে সেনা মোতায়েন হবে) নিয়ে বিশদ পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় এরই মধ্যে নাইজারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইকোওয়াস। জোটের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ার করে বলা হয়েছে, রোববারের মধ্যে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজুমের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে বল প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
১৫ সদস্যের জোটের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার নাইজারে প্রতিনিধি পাঠিয়ে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধানের’ পথ খোঁজা হয়, কিন্তু অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানিয়েছে, নাইজারের বিমানবন্দরে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইকোওয়াসের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে সংকট নিরসনের পথ খোলেনি।
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্তত ৩৪ লাখ শিশু মারাত্মক মহামারি রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ।
এক বিবৃতিতে সুদানে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট মঙ্গলবার জানান, ভারি বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে কলেরা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু জ্বর, হাম ও রুবেলার মতো রোগ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং আক্রান্ত রাজ্য ও এর বাইরে শিশুদের অবস্থা মারাত্মকভাবে খারাপ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, চলমান অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে টিকাদানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়া এবং স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি অবকাঠামো ধ্বংসের কারণে এ সংকট দেখা দিয়েছে। সুদানের অনেক শিশুর পুষ্টির অবস্থার অবনতি তাদের আরও বেশি ঝুঁকিতে ফেলেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইউনিসেফ গত ৯ সেপ্টেম্বর সুদানে ৪ লাখ ৪ হাজার ডোজ ওরাল কলেরা টিকা সরবরাহ করে। অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে সুদানে টিকা দেয়া ৮৫ শতাংশ থেকে প্রায় ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
এতে বলা হয়, সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোর ৭০ শতাংশের বেশি হাসপাতালেই কার্যকম বন্ধ রাখতে হয়েছে। কয়েক মাস ধরে বেতনও পাচ্ছেন না স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা।
গত বছরের এপ্রিলে সুদানের সশস্ত্র বাহিনী এসএএফ এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে লড়াই শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ১৬ হাজার ৬৫০ জন মারা গেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ সময় কলেরা, ম্যালেরিয়া, হাম ও ডেঙ্গু জ্বরের মতো মহামারি রোগ ছড়িয়ে পড়েছে, যেসব রোগের কারণেও অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
গত ১৭ আগস্ট দেশটিতে কলেরার প্রাদুর্ভাব ঘোষণা করেন সুদানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাইথাম মোহাম্মদ ইব্রাহিম। কলেরা ছড়িয়ে পড়ার জন্য সংঘাতের কারণে সৃষ্ট পরিবেশগত অবস্থার অবনতি এবং অপরিষ্কার পানির ব্যবহারকে দায়ী করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়টি মঙ্গলবার জানায়, গত ১৫ জুলাই থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে ৩২৮ জনের মৃত্যুসহ ১০ হাজার ২২ জন কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন:কেনিয়ার মধ্যাঞ্চলে একটি বোর্ডিং স্কুলের ছাত্রাবাসে আগুনে ১৭ শিক্ষার্থীর প্রাণহানি ও ১৩ জন গুরুতর আহত হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে আল জাজিরা।
স্থানীয় পুলিশের বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জানায়, নিয়েরি কাউন্টির হিলসাইড এনদারাশা একাডেমি নামের বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে আগুনে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। আহতদের একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আগুনে হতাহতদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে তাদের বেশির ভাগ শিশু বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রাথমিক স্কুলটিতে আট শর মতো শিক্ষার্থী আছে, যাদের বয়স পাঁচ থেকে ১২ বছর।
পুলিশের মুখপাত্র রেসিলা ওনিয়াঙ্গো জানান, বৃহস্পতিবার রাতের আগুনের কারণ জানতে তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নেয়া হবে।
তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা মরদেহগুলো এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, সেগুলো দেখে শনাক্তের উপায় নেই।
কেনিয়ার হট ৯৬ নামের এফএম রেডিওকে ওনিয়াঙ্গো জানান, আগুনে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ঘটনাস্থলে কাজ করছে সরকারের একটি দল।
পূর্ব আফ্রিকার দেশটির প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো আগুনে প্রাণহানির খবরে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে দুটি গাড়ির সংঘর্ষে ১৪ জন নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএনবি।
বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ভোর ছয়টার দিকে দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় ফুগানি গ্রামের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মালির পরিবহন ও অবকাঠামো মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, রাজধানী বামাকোর দিকে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রেইলার ট্রাকের সঙ্গে একটি গাড়ির সংঘর্ষ হয়। এতে হতাহতদের সবাইকে ফানা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইউএনবির খবরে আরও জানানো হয়, দুর্ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে মালির পরিবহন ও অবকাঠামো মন্ত্রণালয়।
সড়কের দুরাবস্থা ও নিম্নমানের যানবাহনের কারণে মালিতে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি বাঁধ ধসে কমপক্ষে ৬০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
সুদানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোববার রাতের বিবৃতির বরাত দিয়ে আল জাজিরার খবরে বলা হয়, পোর্ট সুদানের উত্তরে আরবাত বাঁধ ধসের ফলে বন্যার পানিতে চারজন নিহত হন; ভেসে যায় ঘরবাড়ি।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বন্যায় আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারে জনবল মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আল-তাঘির ও মেদামিকসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানায়, বাঁধ ধসে প্রাণহানি বেড়ে কমপক্ষে ৬০ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঁধ দুর্ঘটনায় অনেকেই নিখোঁজ হয়েছেন।
জাতিসংঘের ভাষ্য, ধসের ঘটনায় ২০টি গ্রাম ধ্বংস হয়েছে। একই সঙ্গে ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি।
আলি ইসা নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা আল জাজিরাকে জানান, বন্যার পানির কারণে লোকজনের গাড়িতে আটকা পড়ার বার্তা পেয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:নাইজেরিয়ার প্লাটো রাজ্যে দুই তলা স্কুলের ভবন ধসে ২২ জন নিহত হয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছে স্কাই নিউজ।
সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিল ১৫৪ জন মানুষ। তাদের মধ্যে প্রাণ হারানো ২২ জন বাদে বাকি সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের এক মুখপাত্রের বরাতে স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়, উদ্ধারকৃতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
নাইজেরিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এনইএমএ এক ফেসবুক পোস্টে জানায়, এখনও হাসপাতালে আছেন ৩০ জন।
সংস্থাটি আরও জানায়, উদ্ধার তৎপরতা শেষ হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল পরিষ্কার করা হয়েছে।
প্লাটো রাজ্যের জস উত্তর জেলার বুসা বুজি সম্প্রদায়ের সেন্ট অ্যাকাডেমির নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল দুই তলা স্কুল ভবনটি। স্কুলের কার্যক্রম চলাকালে ভবনটি ধসে পড়ে।
নিরাপত্তা তদারকিতে শৈথিল্য ও মানহীন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে নাইজেরিয়ায় প্রায়ই ভবন ধসে পড়ে।
আরও পড়ুন:কেনিয়ায় কর বৃদ্ধি করে নতুন আইন পাস করায় বিক্ষোভ শুরু করেছে দেশটির নাগরিকরা। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা পার্লামেন্ট ভবন ভাঙচুরের চেষ্টা চালালে পুলিশ তাদের ওপর গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন নিহত ও অসংখ্য বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার দেশটির রাজধানীতে এই বিক্ষোভ হয়। এসময় পার্লামেন্ট ভবনের একাংশে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই পার্লামেন্ট ভবনে ভাঙচুর শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। এরপরই পার্লামেন্টের ভেতর থেকে আগুনের শিখা দেখা যায়। তারপর গুলি, টিয়ার শেল ও জলকামান ছুড়তে শুরু করে পুলিশ।
পার্লামেন্টের বাইরে অন্তত ৫ বিক্ষোভকারীর মরদেহ দেখা গেছে বলে রয়টার্সকে জানান এক সাংবাদিক।
তবে এক চিকিৎসাকর্মী বলেছেন, পুলিশের গুলিতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। আরেক চিকিৎসাকর্মীর বরাতে সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
মূল্যস্ফীতির কারণে কেনিয়ায় দৈনন্দিন ব্যয় অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ফের কর বৃদ্ধি করায় ক্ষেপে গেছে দেশটির নাগরিকরা। প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর পদত্যাগ দাবিতে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।
নাইরোবি ছাড়া দেশটির অন্যান্য ছোটবড় শহরেও বিক্ষোভ চলছে। বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষও ঘটছে।
মঙ্গলবার কেনিয়ার পার্লামেন্টে কর বৃদ্ধির প্রস্তাব উঠলে সংসদ সদস্যরা তাতে অনুমোদন দেন। বিলে এখন দেশটির প্রেসিডেন্ট সই করলেই তা আইনে পরিণত হবে। তবে প্রেসিডেন্টের কোনো আপত্তি থাকলে তিনি তা ফেরত পাঠাতে পারেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শুক্রবার পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) নেতা সিরিল রামাফোসা।
রয়টার্স জানায়, এএনসি ও তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী শ্বেতাঙ্গদের নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স গতকাল জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনে সম্মত হয়। এর মধ্য দিয়ে টানা ৩০ বছর এএনসির শাসনের পর পরিবর্তন দেখা গেল দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার গঠন প্রক্রিয়ায়।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, শুরুতে ভাবা না গেলেও ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের সঙ্গে চুক্তির ফলে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ হলো রামাফোসার। পার্লামেন্টে ২৮৩ ভোটে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী লড়াইয়ের প্রাণপুরুষ নেলসন ম্যান্ডেলার অগ্রণী ভূমিকায় ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে এএনসির জয় ও জাতিবিদ্বেষের অবসানের পর দেশটিতে একেবারে বিপরীত অবস্থানে থাকা দুই দলের চুক্তি হলো।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর রামাফোসা বলেন, ‘মহান এ দেশের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আরও একবার বিশেষ সুবিধার ও আনন্দের হবে।’
পার্লামেন্টে দেয়া ওই বক্তব্যে নতুন সরকারকে ‘আশা ও অন্তর্ভুক্তির যুগ’ হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য