ইম্মরটালিটি, দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিং-এর মতো বিখ্যাত উপন্যাসের লেখক চেক বংশোদ্ভূত মিলান কুন্ডেরা মারা গেছেন।
ফ্রান্সের প্যারিসে মঙ্গলবার তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান মোরাভিয়ান লাইব্রেরির (এমজেডকে) মুখপাত্র আনা ম্রাজোভা।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধাংশের জনপ্রিয় এ লেখকের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তিনি চেকস্লোভাকিয়ার ব্রানোতে ১৯২৯ সালের পয়লা এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন।
পরে ১৯৭৫ সালে ফ্রান্সে চলে আসেন। চেকস্লোভাকিয়ায় ১৯৬৮ সালের সোভিয়েত আক্রমণের সমালোচনা করে তিনি রাজনৈতিক তোপের মুখে পড়েন।
মিলান কুন্ডেরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করতেন না। তার মনোভাব ছিল, লেখকরা তাদের কাজের মাধ্যমেই সবার সঙ্গে কথা বলেন।
তার প্রথম উপন্যাসের নাম ‘দ্য জোক’। ১৯৬৭ সালে এটি প্রকাশিত হলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
ওই লেখায় তিনি কমিউনিস্ট শাসনের নিষ্ঠুর চিত্র তুলে ধরেন। এ উপন্যাসকেই তার নির্বাসিত হওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৮৭৬ সালে ফরাসি দৈনিক লে মন্ডেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত করে তার লেখার ভার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে প্রকৃত তাৎপর্য অস্পষ্ট হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মিলান কুন্ডেরা প্রধানত চেক ভাষার লেখক। তবে তিনি ফরাসি ভাষাতেও লিখেছেন।
তার রচনা মধ্যে The Unbearable Lightness of Being, Life Is Elsewhere, Immortality, Ignorance, The Festival of Insignificance অন্যতম।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা বিশ্বে নন্দিত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং একজন সাহসী রাজনৈতিক নেতা বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর লে মেরিডিয়েন হোটেলে বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিশিষ্ট লেখক ও রাজনৈতিক গবেষক ডা. আবুল হাসনাত মিল্টনের লেখা ‘শেখ হাসিনা: দ্য মেকিং অফ অ্যান এক্সট্রাঅর্ডিনারি সাউথ এশিয়ান লিডার’ (Sheikh Hasina: The making of an Extraordinary South Asian Leader) বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলম, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমপি প্রমুখ।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘আজকের এই অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচনের বিরল সুযোগ পেয়ে আমরা সবাই বেশ সম্মানিত। কেননা যার জীবনালেখ্য নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে, তিনি একজন অসাধারণ ও অমূল্য মানুষ। তিনি আর কেউ নন; আমাদের সবার প্রিয়, অতি পরিচিত, অতি আপন, দেশের মানুষের মধ্যমণি, নন্দিত প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি আমাদের দেশ পরিচালনার একজন যোগ্য ও সাহসী রাজনৈতিক নেতা। তিনি শুধু বাংলাদেশেরই অসাধারণ একজন নারী নন, তিনি অত্যন্ত সাহসী রাজনীতিবিদ। পাশাপাশি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আজ সমগ্র বিশ্বনেতার কাতারে নিজের অবস্থান সুসংহত করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সারা বিশ্বে তার সফল কর্মের জন্য নন্দিত। আমরা আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুধু জাতীয়ভাবে বিবেচনা করব না। তিনি আজ বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিচরণ করছেন তার সাহসী সব সিদ্ধান্তের কারণে।’
স্পিকার বলেন, ‘এই বইটিতে লেখক ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোটবেলা থেকে কীভাবে ধাপে ধাপে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অতিবাহিত করেছেন এবং কীভাবে একজন সফল রাজনৈতিক নেতা হয়েছেন- তার সঠিক তথ্য দারুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৭৫ সালের মতো একটি ঘটনা যার জীবনে ঘটেছে, শুধু তিনিই বলতে পারবেন তার প্রতি নির্মমতা কতটা গভীর এবং কতটা বেদনাদায়ক। তারপরও শেখ হাসিনা এগিয়ে গেছেন এবং দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।’
বঙ্গবন্ধুর মতোই বাংলার মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ‘দেশের মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালোবাসা অপার। তিনি ’৭৫-এর সেই বেদনাদায়ক অধ্যায়কে বুকে ধারণ করে, সেই নির্মমতাকে সঙ্গী করে দেশের হতদরিদ্র মানুষের জন্য তার বাবার অপূর্ণ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই জীবন উৎসর্গ করেছেন। এটিই তার জীবনের মূল লক্ষ্য। যে স্বপ্ন ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, তার সবই বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন তিনি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করবেন বলেই ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে আসেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করেন। দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে তিনি এ বাংলায় রাজনৈতিক সংগ্রাম করেছেন এবং আস্তে আস্তে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। মানুষের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি কাজ করেছেন এবং পরবর্তীতে দেশকে সাংবিধানিক ধারায় ফিরিয়ে এনেছেন। এই যে মহাকর্মযজ্ঞ এবং দেশের মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন মানুষ, তার সম্পর্কে জানার জন্য অবশ্যই এমন সব বই দরকার।’
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘এমন একটি বই সত্যিই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জাতীয় চেতনায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে ভূমিকা রাখবে। শুধু তাই নয়, ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন এ বইটির আগে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যে বইটি লিখেছেন, সেটির জন্যও তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। আমি বলব- দুটি বই-ই আমাদের জন্য অমূল্য রচনা। ইংরেজি ভাষাভাষী মানুষের জন্য বইগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সম্পদ হিসেবে আমাদের কাছে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
অনুষ্ঠানে বইটি লেখার স্মৃতিচারণ করে ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা এই বইটির আগে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি বই লেখার তাগিদ অনুভব করি। করোনাকালে আমার একজন পরিচিত মানুষ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন যে, তার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি বই উপহার দেবেন। কিন্তু কোনোভাবেই জাতির পিতার ওপর লেখা একটি ভালো ইংরেজি বই পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর আমি শেখ হাসিনার কাছে বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি বই লেখার অনুমতি চাই। সেটি আমি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর মাধ্যমে জানাই। এরপর নানাভাবে অনেকের সহযোগিতা পেয়ে বইটি লিখে ফেলি। ওই বই লিখতে গিয়ে আমি শেখ হাসিনাকে অন্যভাবে আবিষ্কার করি। তখনই আমি তার ওপর আরেকটি বই লেখার আগ্রহ প্রকাশ করি। সেটিও আমি যথারীতি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিনকে জানাই।
‘তখন প্রধানমন্ত্রী জানান, তাকে নিয়ে বই লেখা লাগবে না; তার বাবাকে নিয়ে আরও কাজ যেন করি। কিন্তু ওই বইটি লিখতে গিয়ে আমার কাছে প্রধানমন্ত্রীকে এত ঘটনাবহুল একজন মানুষ মনে হয়েছে, যা আমাকে বেশ আবেগতাড়িত করে। তাই আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি বই লেখার আগ্রহ প্রকাশ করি। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার একজন নেতা হিসেবে তিনি কাজ করছেন। এটি সারা বিশ্বকে জানাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বইটি লিখতে গিয়ে আমি শেখ হাসিনার বেশ সান্নিধ্য পেয়েছি। তিনি আমাকে বড় বোনের মতো স্নেহ দিয়েছেন, ছায়াও দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানের একটি বই করার জন্য যা যা প্রয়োজন আমি তাই করেছি।’
‘এটি শুধু একটি বই নয়। একজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জীবনে কী কী অধ্যায় পার করে আজকের জায়গায় এসেছেন, তার সবই জানা যাবে বইটি পড়লে। ১৯৭৫-এর পরবর্তী সময়ে একজন শেখ হাসিনা শুধু শোক নিরসনের মধ্য দিয়ে যাননি। তিনি সেই জীবনকে কীভাবে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে গেছেন এবং নিজেই নিজেকে কীভাবে তৈরি করেছেন- সব কথা আছে বইটিতে।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর থেকে শুরু করে আজকের দিনটি পর্যন্ত তার সমগ্র জীবন বইটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শুধু তাই নয়- একজন মানুষ হিসেবে শেখ হাসিনা কেমন, একজন মা হিসেবে, নেতা হিসেবে, এমনকি একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি কেমন- তার সবই আছে বইটিতে।’
‘Sheikh Hasina: The making of an Extraordinary South Asian Leader’ বই হাতে লেখকসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। ছবি: নিউজবাংলা
ডা. মিল্টন বলেন, ‘তাই আমার প্রত্যাশা- বইটি দেশ এবং দেশের বাইরের সব মানুষের কাছে পৌঁছুক। এত ঘটনাবহুল ও বেদনাবহুল একজন মানুষের রাজনৈতিক সংগ্রামটা কেমন- তা জানতে হলে বইটি পড়তে হবে।’
‘যে শেখ হাসিনাকে চেনেনি, শেখ হাসিনাকে জানেনি, সে আসলে হতভাগা। শেখ হাসিনাকে জানা মানেই আজকের বাংলাদেশ এবং আজকের রাজনীতিকে চমৎকারভাবে অধ্যয়ন করা।’
একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে কানাডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
কবি আসাদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। কবির জামাতা নাদিম ইকবাল তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া জমিদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৬০ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৬৩ সালে স্নাতক ও ১৯৬৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে আসাদ চৌধুরীর তার চাকরিজীবন শুরু করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন তিনি। পরে ঢাকায় স্থিত হওয়ার পর তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবাদিকতাও করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভয়েজ অব জার্মানির বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে দীর্ঘকাল চাকরির পর তিনি একাডেমির পরিচালক হিসেবে অবসর নেন।
আসাদ চৌধুরী ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন। তার কবিতা গীতিময় এবং ছন্দোদ্ভাসিত। তার ব্যঙ্গার্থক কবিতা ‘কোথায় পালালো সত্য’ একটি জনপ্রিয় পদ্য। সভ্যতার প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি গত কয়েক দশকে মানবিক মূল্যবোধের যে করুণ অধোগতি, তারই প্রেক্ষাপটে এ কবিতায় তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন:সব্যসাচী লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হকের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার সমাধিস্থলে স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়েছে।
সাত বছর ধরে সমাধিটি অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে ছিল।
কবির সপ্তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বুধবার জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, পৌরসভা, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাব, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংগঠন কবির সমাধিতে ফুলের মালা দেয়। পরে কবির সমাধিতে স্থায়ী কবরের নির্মাণকাজ উদ্বোধন ও তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
সৈয়দ হকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন আইনজীবী এস. এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘কুড়িগ্রামবাসীর প্রাণের দাবি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সমাধিতে দ্রুত সময়ে স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ শুরু হোক। কবরটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে। আমরা চাই তাকে নিয়ে দেশ-বিদেশের মানুষ গবেষণা করুক; একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি হোক।’
সমাধিস্থলে স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ উদ্বোধনকালে কবিপুত্র দ্বিতীয় সৈয়দ হক বলেন, ‘সাত বছর ধরে নকশা ও নানা জটিলতায় স্মৃতি কমপ্লেক্সের কাজ আটকে ছিল। আজ নতুন করে পারিবারিকভাবে বাবার কবরটি বেঁধে দেয়ার কাজ শুরু করা হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক। আমরা আশা করছি শিগগিরই স্মৃতি কমপ্লেক্স তৈরির কাজ শুরু করা হবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। আমরা যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি কাজ শুরু হয়ে যাবে।’
এ ছাড়াও সৈয়দ হকের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উদযাপনের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী ও ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার শতবর্ষ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
চবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘ধূমকেতু পত্রিকার শতবর্ষ: ফিরে দেখা’ শিরোনামে আয়োজিত সেমিনারটি সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
চবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম। আলোচক হিসবে ছিলেন চবি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহীবুল আজিজ ও দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক ছড়াকার রাশেদ রউফ।
প্রবন্ধে ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “সাংবাদিকতা এবং জনমত পরস্পর নির্ভরশীল। জনমত গঠনে সংবাদপত্র সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সত্য সংবাদ প্রকাশ, ন্যায় ও সত্যের জন্য অবিরাম সংগ্রাম করা, শাসক শ্রেণির নির্দেশের কাছে মাথা নত না করা, মেহনতি মানুষের জীবন-জীবিকার সংগ্রামের সমর্থনে দাঁড়ানো অত্যাচারিত-উৎপীড়িত মানুষের কণ্ঠে প্রতিরোধের ভাষা দেয়া, গণতন্ত্রের জন্য এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করা—এ সবই হচ্ছে সংবাদপত্রের সামাজিক দায়িত্ব। ঔপনিবেশিক শাসনামলে আজ থেকে ১০০ বছর পূর্বে ১৯২২ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ধূমকেতু’ সেই দায়িত্বই পালন করছিল।”
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনার নজরুলের মধ্যে কখনও আপস ভাব ছিল না। তারই বহিঃপ্রকাশ নজরুলের সাংবাদিক সত্তা এবং ধূমকেতুর সম্পাদনা। তিনি ধূমকেতুর সম্পাদকীয়তে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ভাব তুলে ধরেছেন। কলমের ধার দিয়ে শোষকদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রেখেছিলেন।’
শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নজরুলের চেতনা, কাজ নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। নজরুলকে যতই চর্চা করা হবে, ততই নতুন করে জানা যাবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ, ইতিহাস বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত। এসব বিভাগে আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী শিক্ষক আছেন। তারা তাদের শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেবেন।’
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য কবি মোহাম্মদ রফিককে নামাজে জানাজা শেষে বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টায় বৃষ্টির মধ্যে কবির নিজ হাতে বাবা-মায়ের নামে গড়া সামসু উদ্দিন-নাহার ট্রাস্টের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
কবির শেষ ইচ্ছা অনুসারে কোনো আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন জানানো ছাড়াই পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে জানাজায় এলাকাবাসীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
দেশবরেণ্য এই কবি এক সপ্তাহ আগে ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী-বৈটপুর গ্রামে অবস্থানকালে রোববার সকালে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে বরিশালে নেয়া হয়।
বরিশালের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বিভিন্ন পরীক্ষার পর কবির হার্টের সমস্যাসহ বেশকিছু শারীরিক জটিতলা ধরা পড়লে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন। সেখান থেকে সন্ধ্যায় কবিকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে মাদারীপুরের রাজৈরে রাত ১০টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মৃত্যুকালে কবি মোহাম্মদ রফিকের বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি দুই ছেলে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
কবির শেষ বিদায়ে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ, কবির বোন জামাই শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনুল হক, কবির বোন গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সেলিনা পারভীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সবিতা ইয়াসমিন, কবির ভাই প্রকৌশলী মো. শফিক, কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক ড. শুদ্ধস্বত্ত রফিক, লেখক অধ্যাপক প্রশান্ত মৃধাসহ কবির বিভিন্ন স্বজন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, উদ্দীপন বদর সামছু বিদ্যা নিকেতনসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গুণগ্রাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
ষাটের দশকে আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং আশির দশকে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ যুগিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন দেশবরেণ্য কবি মোহাম্মদ রফিক।
কবি মোহাম্মদ রফিক ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সামছুদ্দীন আহমদ এবং মা রেশাতুন নাহারের আট সন্তানের মধ্যে মোহাম্মদ রফিক ছিলেন সবার বড়। তার শৈশব কাটে বাগেরহাটে। মেট্রিক পাস করে ঢাকার নটরডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু পরে ঢাকা কলেজে মানবিক বিভাগে চলে যান।
১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স করেন মোহাম্মদ রফিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। পাকিস্তানের সামরিক আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিলে মাস্টার্স পরীক্ষার জন্য তিনি ছাড়া পান। ১৯৭১ সালে তিনি প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টরের কর্মকর্তা হিসেবে এবং পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি দীর্ঘ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৯ জুন তিনি অবসরে যান।
অবসরের পর কবি মোহাম্মদ রফিক রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বসবাস করতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগসহ বিভিন্ন শরীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
কবি মোহাম্মদ রফিক ঢাকায় থাকলেও এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পৈতৃক ভিটায় সব ভাইবোন মিলে সামছউদ্দীন নাহার ট্রাস্ট নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। কবি মোহাম্মদ রফিক সামছউদ্দীন নাহার ট্রাস্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আমৃত্যু ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন।
১৯৭০ সালে দেশবরেণ্য এই কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখী পূর্ণিমা’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধুলার সংসারে এই মাটি’।
মোহাম্মদ রফিক একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জেমকন সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন স্বীকৃতি ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘কপিলা’, ‘খোলা কবিতা, ‘গাওদিয়া’, ‘মানব পদাবলী’, ‘আত্মরক্ষার প্রতিবেদন’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
আজ ২২শে শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮২তম প্রয়াণ দিবস। মহাকালের চেনাপথ ধরে প্রতি বছর বাইশে শ্রাবণ আসে।
বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশনগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও নাটক প্রচার করছে। খবর বাসসের।
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষ দিনগুলোতে কখনও তিনি শয্যাশায়ী, কখনও মন্দের ভাল। শেষের দিকে ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই, শান্তিনিকেতনের আশ্রম বালক-বালিকাদের ভোরের সঙ্গীত অর্ঘ্য তিনি গ্রহণ করেন তার উদয়ন গৃহের পূবের জানলার কাছে বসে। উদয়নের প্রবেশদ্বার থেকে ছেলেমেয়েরা গেয়ে উঠেন কবিরই লেখা ‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার, আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল আজ’।
রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ‘রবীন্দ্র জীবন কথা’য় কবির মৃত্যু নিয়ে লিখেছেন, শান্তিনিকেতনে কবি এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেহ আর চলছিল না, চিকিৎসা ও সেবারও ত্রুটি নেই। অবশেষে ডাক্তাররা পরামর্শ করে ঠিক করলেন, অপারেশন ছাড়া উপায় নেই।
৯ শ্রাবণ (২৫ জুলাই) শান্তিনিকেতন থেকে কবিকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হলো। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে অনেক বছরের স্মৃতি জড়িত কবি কি বুঝতে পেরেছিলেন এই তার শেষ যাত্রা? যাবার সময় চোখে রুমাল দিচ্ছেন দেখা গেছে।
৩০ জুলাই জোড়াসাঁকোর বাড়িতে কবির শরীরে অস্ত্রোপচার হলো। তার কিছু পূর্বে শেষ কবিতা রচনা করেন ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি, বিচিত্র ছলনা জালে হে ছলনাময়ী।’
রবীন্দ্র জীবনী থেকে জানা যায়, মৃত্যুর মাত্র সাত দিন আগে পর্যন্তও কবি সৃষ্টিশীল ছিলেন। জোড়াসাঁকোতে রোগশয্যায় শুয়ে শুয়ে তিনি বলতেন রানী চন্দ লিখে নিতেন।
কবি বলে গেছেন, ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন কবিতাটি বলতে বলতে। দিনটা ছিল কবির শেষ বিদায়ের দিন কয়েক আগে চৌদ্দই শ্রাবণ। রানী চন্দ সেদিন সূত্রধরের মতো লিখেও নেন রবীন্দ্রনাথ উবাচ কবিতাটি ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি।’
চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করলেন তা নিস্ফল হয়। অবস্থা দ্রুত মন্দের দিকে যেতে লাগলো। তিনি জ্ঞান হারালেন। শেষ নিঃশ্বাস পড়ল রাখীপূর্ণিমার দিন, বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবণ, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে তখন দুপুর ১২টা বেজে ১০ মিনিট। অমৃত আলোকের নতুন দেশে চলে গেলেন কবি।
আরও পড়ুন:যেকোনো মেলাই আনন্দের আতিশয্য নিয়ে আসে। আর বইমেলা হলে তো কথাই নেই।
আমাদের বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা সময়ের দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বইমেলা। আমরা প্রতি বছর বই নিয়ে ছুটে চলি বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।
শুধু বাংলাদেশেই নয়; ভারতের কলকাতা, আগরতলা, আসামের শিলচর পর্যন্ত আমরা বইমেলায় অংশগ্রহণ করতে যাই। আবার আটলান্টিকের এ পাড়ে ‘লন্ডন বাংলা বইমেলা’, ওপাড়ে উত্তর আমেরিকার ‘নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা’। ‘টরন্টো বাংলা বইমেলায়’ও যাওয়া হয়।
এবারও ৩২তম নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলার আয়োজন করছে মুক্তধরা ফাউন্ডেশন। চার দিনব্যাপী এ বইমেলার উদ্বোধন করবেন জাতিসত্তার কবি ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা।
প্রকাশক হিসেবে সর্বপ্রথম আমেরিকার ভিসা পাই ২০১০ সালে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে মিল না থাকায় সেই বছর বইমেলায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি। ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত বইমেলায় অংশগ্রহণ করে আসছি।
জুন/জুলাই মাস এলেই নিউইয়র্কে শুরু হয়ে যায় বইমেলার গুঞ্জন। প্রকাশকরা মেলা শুরু হওয়ার দুই-চার দিন আগে থেকেই পৌঁছে যান নিউইয়র্ক শহরে। জেটল্যাগ কাটিয়ে ঘোরাঘুরি শেষে প্রস্তুতি নেয় মেলায় অংশগ্রহণের। এবারের মেলায় দুই বাংলা থেকে অংশগ্রহণ করবে প্রায় ২৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ‘বাতিঘর’, ‘বেঙ্গল পাবলিকেশন’, ‘নালন্দা’, ‘ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ’, ‘কবি প্রকাশনী’, ‘অনন্যা’, ‘অন্বয় প্রকাশনী’, ‘সাঁকোবাড়ি’ ও ‘কথাপ্রকাশ’।
আগে ছিল দুই দিনের বইমেলা। বইপ্রেমী মানুষের ব্যাপক চাহিদার কারণে এখন ৪ দিনের বইমেলা হয়। ১৪ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত এই মেলা চলবে।
প্রতিদিন মূল মঞ্চে থাকবে সেমিনার, আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত। ইতোমধ্যে আসা শুরু করেছেন অতিথিরা। আসছেন পশ্চিম বাংলা থেকে বাউল শিল্পী পবন দাস বাউল।
এই আয়োজন উপলক্ষে বিশ্বজিৎ সাহার মুক্তধারার বইয়ের দোকানে থাকছে প্রতিদিনই কোনো না কোনো আলোচনা সভা।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের বইমেলায় অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা একটু ব্যতিক্রম। আমরা যদি অমর একুশে বইমেলা অথবা কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলার সঙ্গে তুলনা করি, তবে বাংলা একাডেমির বইমেলার পর নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলার অবস্থান।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি বইপ্রেমীর প্রতি রইল আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন ও ভালোবাসা। বিশেষ করে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের নবনিযুক্ত সেক্রেটারি জেনারেল বিশ্বজিৎ সাহাকে ধন্যবাদ দিয়ে আর ছোট করব না। এবারের বইমেলা আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক, এই প্রত্যাশা রইল।
লেখক: প্রকাশক, নালন্দা
আরও পড়ুন:
মন্তব্য